2. পবিত্রতা অর্জন

【1】

অযূর পদ্ধতি

ইয়াহইয়া মাযনী (র)- রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ওযূ করতেন আপনি আমাকে দেখাতে পারেন কি? আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ পারি। তারপর তিনি পানি আনাইলেন এবং তাঁর হাতের উপর পানি ঢাললেন। তিনি দুই দুইবার তাঁর উভয় হাত ধুইলেন, তারপর কুলি করলেন ও নাক পরিষ্কার করলেন তিনবার। তারপর মুখমণ্ডলকে তিনবার ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধুলেন দুই দুইবার। পরে দুই হাত দ্বারা শির মাসেহ করলেন, দু হাত দিয়ে সম্মুখ হতে আরম্ভ করে পিছনের দিকে নিলেন এবং পিছনের দিক হতে আরম্ভ করে সামনের দিকে আনলেন। মাসেহ আরম্ভ করলেন মাথার সামনের দিক হতে। অতঃপর উভয় হাত মাথার পিছনের দিকে নিয়া গেলেন। তারপর উভয় হাত ফিরালেন এবং যে স্থান হতে শুরু করেছিলেন, পুরনায় সেই স্থানেই ফিরিয়ে আনলেন। তারপর তাঁর দুই পা ধুলেন। (বুখারী ১৮৫, মুসলিম ২৩৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ওযূ করে, তখন সে যেন তার নাকে পানি দেয়, তারপর নাক পরিষ্কার করে, আর যে কুলুখ গ্রহণ করে সে যেন বেজোড় কুলুখ নেয়। (বুখারী ১৬২, মুসলিম ২৩৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ওযূ করে সে যেন নাক পরিষ্কার করে আর যে কুলুখ নেয় সে বেজোড় নেবে। (বুখারী ১৬১, মুসলিম ২৩৭) ইয়াহইয়া (রাঃ) আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, এক আজলা পানি দ্বারা যে কুলিও করে এবং নাকও পরিষ্কার করে, তার এইরূপ করাতে কোন ক্ষতি নাই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)- নাবী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) উপস্থিত হলেন, যেদিন সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) ইন্তিকাল করেন সেদিন। তারপর তিনি ওযূর পানি চাইলেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁকে বললেন, পূর্ণভাবে ওযূ কর, কারণ আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنْ النَّارِ “পায়ের গিটসমূহের জন্য ধ্বংস নরকাগ্নির। [১] (সহীহ, মুসলিম ২৪০, আয়েশা (রাঃ) থেকে বরাতে বর্ণনা করেন, ইমাম মালিক (রঃ) যে সনদে বর্ণনা করেন সনদটি মুনকাতে মূলত হাদীসটি মুত্তাফাক আলাইহি। বুখারী ৬০, মুসলিম ২৪১) আবদুর রহমান (র) তিনি শুনেছেন উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) পানি দ্বারা তাঁর ইযারে’র (পায়জামা বা লুঙ্গী) নিচে ধুতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)- প্রশ্ন করা হল এমন এক লোক সম্পর্কে যে ওযূ করেছে এবং ভুলে কুলি করার আগে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলেছে অথবা মুখমণ্ডল ধোয়ার আগে ধুয়েছে দুই হাত। তিনি (উত্তরে) বললেন, কুলি করার আগে যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল ধুয়েছে সে কুলি করে নিবে এবং পুনরায় আর মুখমণ্ডল ধুবে না। আর যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল ধোয়ার পূর্বে তাঁর হস্তদ্বয় ধুয়েছে সে মুখমণ্ডল ধুবে এবং পুনর্বার উভয় হাত ধুবে, যেন হস্তদ্বয় ধোয়ার কাজ মুখমণ্ডল ধোয়ার পরে হয়। তবে উহা তখন করবে যখন সে ওযূর স্থানে অথবা উহার নিকটবর্তী স্থানে থাকে। মালিক (র) এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি ভুলবশত কুলি করেনি অথবা নাক পরিষ্কার করেনি, এই অবস্থায় সে নামায আদায় করেছে। উত্তরে তিনি বললেন, সে লোকের পক্ষে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে না। সে পরে অন্য নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে তবে কুলি করিয়া লইবে এবং নাক পরিষ্কার করবে। [১]

【2】

ঘুম হতে জেগে ওযূ করে নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ঘুম হতে জেগে উঠলে ওযূর পাত্রে হাত দেওয়ার আগে তাঁর হাত ধুয়ে নিবে, কেননা তার জানানাই তার হাত কোথায় রাত্রি যাপন করেছে। (বুখারী ১৬২, মুসলিম ২৭৮) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তোমাদের কেউ কোন বস্তুর সাথে ঠেস দিয়ে ঘুমালে ওযূ করবে। যায়দ ইবনু আসলাম (রা) এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ}. এটা সে সময়, যখন শয্যা অর্থাৎ নিদ্রা হতে তোমরা ওঠ। (হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আমাদের ফয়সালা এই নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে, শরীর হতে খুন নির্গত হলে এবং পুঁজ বহির্গত হলে ওযূ করতে হবে না। হাদস যাহাতে ওযূ নষ্ট হয়, এর কারণে অযূ করতে হবে; যা বের হয় গুহ্যদ্বার অথবা জননেন্দ্রীয় হতে অথবা নিদ্রার কারণে। নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; ইবনু উমার (রাঃ) বসা অবস্থায় ঘুমাতেন। অতঃপর ওযূ না করে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

ওযূর জন্য পবিত্র পানি ব্যবহার করা

মুগীরা ইবনু আবী বুরদা (র) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন ঃ এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সাগরে আরোহণ করি (নৌকা বা জাহাজে আরোহণ করি) আর আমাদের সাথে অল্প পানি নিয়ে যাই। যদি আমরা সে পানি দিয়ে ওযূ করি তবে আমরা পিপাসিত থাকব। তাই সমুদ্রের পানি দিয়ে আমরা ওযূ করব কি? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন সাগরের পানি অতি পবিত্র। এর মৃত জীব হালাল। (সহীহ আবূ দাউদ ৮৩, তিরমিযী ৬৯, নাসাঈ ৩৩২, ইবনু মাজাহ ৩৮৬, আহমাদ ৭২৩২, আলবানী সহীহ বলেছেন) কাব্শাহ্ বিনতে কাব ইবনু মালিক (র) আবূ কাতাদা (রাঃ) তাঁর কাছে এলেন। কাব্সা তাঁর জন্য ওযূর পানি ঢালতেছিলেন। এমন সময় একটি বিড়াল উহা হতে পানি পানের জন্য এল। আবূ কাতাদা পানির পাত্র এর জন্য কাত করলেন, বিড়াল পানি পান করল। কাবসা বলেন, তিনি আমাকে দেখলেন আমি খুব বিস্ময়ের সাথে তাঁর দিকে দেখতেছি। তাই তিনি বললেন, হে ভাতিজী! তুমি কি আশ্চর্যবোধ করতেছ? আমি (উত্তরে) বললাম হ্যাঁ। তারপর তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়, এটা তোমাদের আশেপাশে যাঁরা অধিক ঘোরাফেরা করে, তাদের অন্তর্ভুক্ত। মালিক (র) বলেন, বিড়ালের মুখে নাজাসত (নাপাকী) না থাকলে উহার মুখ (পাত্রে) দেয়াতে কোন ক্ষতি নেই। (সহীহ, আবূ দাউদ ৭৫, তিরমিযী ৯২, নাসাঈ ৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৬৭, আহমাদ ২২৫৮১, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ জামে ২৪৩৭) ইয়াহইয়া ইবনু আবদুর রহমান ইবনু হাতিব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এক কাফেলার সাথে বের হলেন। কাফেলায় ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ)-ও শরীক ছিলেন। তাঁরা একটি জলাধারের কাছে অবতরণ করলেন। জলাধারের মালিককে ‘আমর ইবনু ‘আস বললেন, হে জলাধারের মালিক! আপনার জলাধারে চতুষ্পদ জন্তু অবতরণ করে কি? উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জলাধারের মালিককে বললেন, আপনি (এই বিষয়ে) আমাদেরকে খবর দিবেন না। কারণ আমরা চতুষ্পদ জন্তুসমূহের নিকট বিচরণ করি এবং তারাও আমাদের কাছে বিচরণ করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে নারী-পুরুষ একসাথে ওযূ করতেন। (সহীহ, বুখারী ১৯৩)

【4】

যাতে ওযূ ওয়াজিব হয় না

ইবরাহীম ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ (র)- উম্মে ওয়ালাদ (তাঁর নাম হুমায়দা বলা হয়েছে) হতে বর্ণিত; তিনি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মে-সালমা (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করলেন আমি একজন স্ত্রীলোক। আমি আমার কাপড়ের ঝুল লম্বা রাখি আর আমি কোন কোন সময় চলাফেরা করি আবর্জনাযুক্ত স্থান দিয়ে। উম্মে-সালমা (রা) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কাপড়ের ঝুলকে আবর্জনাযুক্ত রাস্তার পরবর্তী স্থান পবিত্র করে দেবে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৩৮৩, তিরমিযী ১৪৩, ইবনু মাজাহ ৫৩১, আহমাদ ২৬৫৩১, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত ৫০৪) মালিক (র) তিনি রবী’আ ইবনু আবদুর রহমানকে কয়েকবার উদর হতে পানি বমি করতে দেখেছেন, তখন তিনি ছিলেন মসজিদে। তিনি অতঃপর নামায আদায় করা পর্যন্ত মসজিদ হতে বেরও হতেন না এবং ওযূও করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হয়েছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি খাদ্যবস্তু বমি করেছে, তার জন্য ওযূ ওয়াজিব হবে কি? তিনি বললেন, তার জন্য ওযূ ওয়াজিব নহে, এর জন্য সে কুলি করবে এবং তার মুখ ধুবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ-এর এক (মৃত) পুত্রকে হানূত (এক প্রকারের খোশবু, যা মৃত ব্যক্তিকে লাগানোর জন্য তৈরি করা হয়।) লাগালেন এবং তাঁর লাশ বহন করলেন, অতঃপর ওযূ না করে মসজিদে প্রবেশ করে তিনি নামায আদায় করলেন। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল, বমি করলে ওযূ করতে হবে কি? তিনি বললেন, না। তবে এর জন্য কুলি করবে এবং তাঁর মুখ ধুবে। তার উপর ওযূ ওয়াজিব নয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

আগুনে জ্বাল দেওয়া বস্তু খেয়ে ওযূ না করা

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগের কাঁধের গোশত আহার করার পর ওযূ না করে নামায আদায় করলেন। (বুখারী ২০৭, ২০৮, মুসলিম ৩৫৪) সুওয়ায়দ ইবনু নুমান (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বরের যুদ্ধের বছর, বের হলেন। যখন তাঁরা সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছালেন সেটা খায়বরের ঢালু অংশে অবস্থিত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তথায়) অবতরণ করলেন, তারপর আসর নামায আদায় করলেন। অতঃপর সফরে খাওয়ার জন্য রাখা খাদ্যবস্তু এবং উহার পাত্রসমূহ আনতে বললেন, তাঁর নিকট ছাতু ছাড়া অন্য কিছু উপস্থিত করা হল না। তিনি নির্দেশ দিলেন, উহা গুলান হল, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেলেন, আমরাও খেলাম। অতঃপর মাগরিবের নামাযের জন্য উঠিলেন এবং কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম। তারপর তিনি নামায আদায় করলেন, অথচ আর ওযূ করলেন না। (সহীহ, বুখারী ২০৯, ৪১৯৫) রবী’আ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হুদায়র (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে সন্ধ্যাকালীন খাবার খেলেন, তারপর নামায আদায় করলেন আর অযূ করলেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) রুটি-গোশত খেলেন, তারপর কুলি করলেন, উভয় হাত ধুলেন এবং হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন, তারপর নামায আদায় করলেন অথচ পুনরায় ওযূ করলেন না। و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ كَانَا لَا يَتَوَضَّآَنِ مِمَّا مَسَّتْ النَّارُ. মালিক (র) বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে, আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আগুনে জ্বাল দেওয়া খাদ্যবস্তু খেয়ে অযূ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়াহ ইবনু সাঈদ (র) আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রবী’আ (র)-এর কাছে একটি প্রশ্ন করলেন এমন এক লোক সম্পর্কে, যে নামাযের জন্য ওযূ করে আগুনে রন্ধন করা খাদ্যবস্ত খেল, সে কি ওযূ করবে? তিনি বললেন, আমার পিতাকে দেখেছি তিনি এইরূপ রান্না করা খাদ্য খেতেন কিন্তু ওযূ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ নুয়াইম ওহাব ইবনু কায়সান (র) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন আমি আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি গোশ্ত খেলেন, অতঃপর নামায আদায় করলেন অথচ ওযূ করলেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (খানার জন্য) দাওয়াত করা হল, তাঁর সামনে রুটি-গোশত পেশ করা হল। তিনি উহা হতে খেলেন, তারপর ওযূ করলেন ও নামায আদায় করলেন। অতঃপর সেই খাদ্যের অবশিষ্ট তাঁর কাছে আনা হল। তিনি তা হতে খেলেন, তারপর নামায আদায় করলেন, আর ওযূ করলেন না। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৯১, তিরমিযী ৮০, হাদীসটিকে আলবানী সহীহ বলেছেন জাবির বিন আব্দুল্লাহ এর সনদে, সহীহ এবং যঈফ সুনান আবূ দাঊদ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) ইরাক হতে আগমন করলেন। তাঁর কাছে আবূ তালহা ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এলেন। আগুনে রান্না করা হয়েছে এমন খাদ্য তাঁদের দু’জনের কাছে পরিবেশন করা হল। সকলে উহা হতে আহার করলেন, অতঃপর আনাস (রাঃ) উঠলেন এবং ওযূ করলেন। (এটা দেখে) আবূ তালহা ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন, হে আনাস! এটা কি? এটা কি ইরাকী আমল? আনাস (রা) বললেন, আমি যদি এটা না করতাম (তবে ভাল হত)। আবূ তালহা ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) উঠলেন এবং নামায আদায় করলেন, তাঁরা ওযূ করলেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【6】

ওযূ সম্পর্কীয় বিবিধ হাদীস

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রঃ) ‘ইস্তিতাবা’ [১] সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কি তিনটি পাথরও পায় না (যদ্দারা সে পবিত্রতা লাভ করতে সক্ষম হয়)? (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪০, আয়েশা (রাঃ) বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) কবরস্থানের দিকে গেলেন। তিনি সেখানে পৌঁছার পর বললেন, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ. “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মু’মিন সম্প্রদায়ের বাসস্থানে (অর্থাৎ কবরস্থানে) বসবাসকারিগণ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব, ইনশাআল্লাহ।” আমার আকাঙ্ক্ষা, যদি আমার ভাইদেরকে দেখতাম! তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার ভাই নই কি? তিনি বললেন, তোমরা আমার আসহাব, আমার ভাই তাঁরা যাঁরা এখনও (ইহজগতে) আসেননি। আমি তাঁদের অগ্রদূত হব হাওযের কাছে। তাঁরা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা আপনার পরে আগমন করবে আপনি তাঁদের পরিচয় পাবেন কিভাবে? তিনি বললেন, তোমরা আমাকে বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির কাছে পায়ে ও ললাটে সাদা চিহ্নযুক্ত ঘোড়া থাকে এবং সেগুলি গাঢ় কাল রং-এর ঘোড়ার সাথে একত্র থাকে, তবে সেই ব্যক্তি কি তার (সাদা চিহ্নযুক্ত) ঘোড়া চিনতে পারবে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! চিনতে পারবে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতকে আমি চিনতে পারব। কারণ তাঁরা ওযূর কারণে রোজ কিয়ামতে জ্যোতির্ময় চেহারা এবং জ্যোতির্ময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হবে। আমি হাওযে তাঁদের অগ্রদূত থাকব। দলভ্রষ্ট উটকে যেভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, আমার হাওয হতে কাউকেও তদ্রুপ তাড়িয়ে দেওয়া হলে আমি তাকে আহ্বান করব, أَلَا هَلُمَّ أَلَا هَلُمَّ أَلَا هَلُمَّ ‘ওহে, (আমার নিকট) আস, (আমার নিকট) আস, (আমার নিকট) আস।’ তারপর আমাকে বলা হবে, এরা (আপনার সুন্নতকে) আপনার পরে পরিবর্তন করেছে। আমি বলব, فَسُحْقًا فَسُحْقًا فَسُحْقًا -‘তবে দূর হও, দূর হও, দূর হও।’ (সহীহ, মুসলিম ২৪৯, মূলত হাদীসটি মুত্তাফাক আলাইহ) হুমরান (রাঃ) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) (একদা) বৈঠকখানায় বসলেন। মুয়াযযিন এসে তাঁকে আসরের নামাযের সংবাদ দিলেন। তিনি পানি আনালেন, তারপর ওযূ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে একটি হাদীস বয়ান করব। কিতাবুল্লাহর (কুরআনের) একটি আয়াত যদি না থাকত তবে আমি তোমাদের নিকট হাদীস বয়ান করতাম না। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি ওযূ করে আর সে তার ওযূকে উত্তমরূপে সমাধা করার পর নামায পরে তার (পাপ) মার্জনা করা হবে অর্থাৎ পরবর্তী নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত অর্থাৎ পরবর্তী নামায আদায় করলেই এই মার্জনা পাওয়া যাবে। মালিক (র) বলেছেন, আমার ধারণা, উসমান (রাঃ) যেই আয়াতের কথা বলেছেন তা এই أَقِمْ الصَّلَاةَ طَرَفَيْ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنْ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ (বুখারী ১৬০, মুসলিম ২২৭) আবদুল্লাহ সুনাবিহী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিন বান্দা যখন ওযূ করে এবং কুলি করে, তাঁর মুখ হতে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। সে যখন মুখমণ্ডল ধোয় তাঁর মুখমণ্ডল হতে তখন পাপসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি চক্ষুদ্বয়ের পালকের নিচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে তাঁর উভয় হাত ধোয় তখন পাপসমূহ হস্তদ্বয় হতে বের হয়ে যায়; এমনকি তাঁর উভয় হাতের নখসমূহের নিচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তাঁর মাথা মাসেহ করে তাঁর পাপসমূহ তখন তাঁর মাথা হতে বের হয়ে যায়; এমনকি তাঁর উভয় কান হতেও বেরিয়ে যায়। যখন সে তাঁর উভয় পা ধোয় তখন পাপসমূহ তাঁর উভয় পা হতে বেরিয়ে যায়; এমনকি তাঁর উভয় পায়ের সকল নখের নিচ হতেও গুনাহ বেরিয়ে যায়। তিনি (রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর সেই ব্যক্তির মসজিদে গমন এবং নামায আদায় করা তাঁর জন্য নফল (অতিরিক্ত সওয়াবের বস্তু)-স্বরূপ হয়। (সহীহ, নাসাঈ ১০৩, ইবনু মাজাহ ২৮২, আলবানী সহীহ জামে গ্রন্থে ৪৪৯, সহীহ বলেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মু’মিন বান্দা অযূ করে এবং তাঁর মুখমণ্ডল ধোয় তখন তাঁর মুখমণ্ডল হতে সকল গুনাহ যা দেখার কারণে অর্জিত হয়েছে, বাহির হয়ে যায়; পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ কাতরার (ফোঁটা) সঙ্গে অথবা (এর সমার্থবোধক) অনুরূপ কোন বাক্য। তারপর যখন সে তাঁর উভয় হাত ধোয় তখন তাঁর হস্তদ্বয় হতে হস্তদ্বয় দ্বারা অর্জিত সকল পাপ বেরিয়ে যায়। পানির সঙ্গে অথবা (বলেছেন) পানির শেষ কাতরার সঙ্গে; এমনকি সে যাবতীয় পাপ হতে পবিত্র হয়ে যায়। (সহীহ, মুসলিম ২৪৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন সময় দেখলাম যখন আসরের নামাযের সময় নিকটবর্তী। লোকজন ওযূর জন্য পানি খোঁজ করলেন, কিন্তু তাঁরা পানি পেলেন না। পরে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পাত্রে কিছু পানি আনা হল, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত সেই পাত্রে রাখলেন। তারপর লোকজনকে উহা হতে ওযূ করার নির্দেশ দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অঙ্গুলিসমূহের নিচ হতে পানি নির্গত হতে দেখলাম, লোকজন ওযূ করলেন। এমনকি তাঁদের (দলের) সর্বশেষ ব্যক্তিও ওযূ করলেন। (বুখারী ১৬৯, মুসলিম ২৭৭৯) নু’আয়ম ইবনু আবদুল্লাহ মুজমির (র) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে এবং তাঁর ওযূকে উত্তমরূপে সম্পাদন করেছে, অতঃপর নামাযের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সে নামাযে থাকবে (সওয়াবের দিক দিয়া নামাযে বলে গণ্য হবে) যতক্ষণ নামাযের নিয়ত রাখবে এবং তাঁর জন্য প্রতিটি প্রথম পদ উত্তোলনে একটি করে সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে, আর প্রতিটি দ্বিতীয় পদ উত্তোলনের পরিবর্তে তাঁর পাপ মোচন করে দেওয়া হবে। তাই তোমাদের কেউ ইকামত শুনতে পেলে দৌড়াবে না, কারণ তোমাদের মধ্যে সেই লোকই বেশি সওয়াবের অধিকারী যার ঘর মসজিদ হতে বেশি দূরে। শ্রোতারা বললেন, এইরূপ কেন, হে আবূ হুরায়রা? তিনি বললেন, পদক্ষেপের আধিক্যের কারণে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে হাদীসটি মারফু হাদীসের ন্যায় করেন অন্যান্য অধ্যায়ে এর সমর্থনে মারফু হাদীস রয়েছে) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে প্রশ্ন করা হল, মল-মূত্র ত্যাগের কারণে পানি দ্বারা ইস্তিন্জা (মল-মূত্র ত্যাগের পর বিশেষ স্থান ধৌত করা) করা সম্পর্কে। সাঈদ (র) বললেন, ইহা অবশ্য মেয়েদের ইস্তিন্জা। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো পাত্র হতে কুকুর আহার করলে, তবে অবশ্যই সেটাকে সাতবার ধুবে। (বুখারী ১৭২, মুসলিম ২৭৯) মালিক (র) তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে শরীয়ত তোমাদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে তার উপর তোমরা দৃঢ়তার সাথে থাক, পূর্ণ ইস্তিকামাত বা দৃঢ়তার সামর্থ্য তো তোমাদের নেই। তাই আমল করতে থাক। তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হলো নামায। মু’মিন ব্যতীত অন্য কেউ ওযূর যথাযোগ্য হিফাযত (পূর্ণঙ্গভাবে ওযূ করার প্রতি লক্ষ্য রাখার নাম মুহাফিযাত) করে না। (সহীহ, সাওবান (রাঃ) থেকে ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেন ২৭৭, আল্লামা আলবানী সহীহ আল জামে গ্রন্থে ৯৫২ সহীহ বলেছেন)

【7】

মাথা ও দুই কান মাসেহ-এর বর্ণনা

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর উভয় কানের জন্য দুই আঙ্গুল দ্বারা পানি নিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)-কে মসহ আলাল ইসাবাহ (পাগড়ির উপর হাত বুলাইয়া যাওয়া) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেন, না, (এটা যথেষ্ট নয়) যতক্ষণ পানি দ্বারা চুল মাসেহ করা না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তার পিতা উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (র) পাগড়ি খুলে ফেলতেন এবং পানি দ্বারা মাথা মাসেহ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) যখন তিনি বালক তখন আবূ উবায়দার কন্যা, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর স্ত্রী, সফিয়্যাকে তাঁর ওড়না নামিয়ে পানি দিয়ে মাথা মাসেহ করতে দেখেছেন। ইয়াহইয়া (র) বলেন, পাগড়ি ও ওড়নার উপর মাসেহ করা সম্পর্কে মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, কোন পুরুষ কোন নারীর পক্ষে (যথাক্রমে) পাগড়ি কিংবা ওড়নার উপর মাসেহ করা জায়েয নয়। তারা দু’জনেই তাদের মাথা মাসেহ করবে। মালিক (র)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে কিন্তু মাথা মাসেহ করতে ভুলে গিয়েছে, (এই অবস্থায়) তাঁর ওযূর অঙ্গসমূহ শুকিয়ে গিয়েছে, এখন সে কি করবে? তিনি উত্তরে বললেন, আমার মতে সে তাঁর মাথা মাসেহ করবে। আর যদি সে (মাসেহ ব্যতীত) অযূ দ্বারা নামায আদায় করে থাকে তবে সে নামায নতুন করে আদায় করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【8】

পদাবরণী বা মোজা মাসেহ

মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) তাবুকের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসাব-পায়খানার প্রয়োজনে বাহিরে গেলেন। মুগীরা বলেন, আমি পানি নিয়ে তাঁর সাথে চললাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার প্রয়োজন পূর্ণ করে) আসলেন, আমি তাঁর হস্তদ্বয়ের উপর পানি ঢাললাম, তিনি তাঁর মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তাঁর হস্তদ্বয় জুব্বার আস্তিন হতে বের করতে চেষ্টা করলেন। জুব্বার আস্তিনের সংকীর্ণতার দরুন তিনি (বাহির করতে) সক্ষম হলেন না। তাই জুব্বার নিচ দিয়ে উভয় হাত বের করলেন, তারপর দুই হাত ধুলেন, মাথা মাসেহ করলেন এবং মোজার উপর মাসেহ করলেন। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন, তখন আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) (লোকের) ইমামতি করতেছিলেন, তিনি এক রাকাত সমাপ্তও করেন। যেই এক রাকাত তাঁদের অবশিষ্ট ছিল, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সাথে সেই রাকাত আদায় করলেন। লোকজন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে (তাঁর অনুপস্থিতিতে নামায শুরু করায় বেআদবী হয়েছে ভেবে) ঘাবড়ে গেলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামায শেষে বললেন, তোমরা ভাল করেছ। (বুখারী ১৮২, মুসলিম ২৭৪) সা’দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) যখন কূফার আমীর ছিলেন তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কূফায় সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর কাছে এলেন এবং তাঁকে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখলেন। ইবনু উমার (রাঃ) তার এই মাসেহ্-এর প্রতি অস্বীকৃতি জানালেন। সা’দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনার পিতার কাছে গেলে এটা তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) (মদীনায়) আগমন করলেন; কিন্তু তাঁর পিতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে ভুলে গেলেন। সা’দ পরে (মদীনায়) আসলেন এবং ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন আপনার পিতার কাছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন কি? তিনি বললেন, না। অতঃপর আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, যদি মোজাদ্বয়ের মধ্যে তোমার উভয় পা পবিত্র অবস্থায় (ওযূর পরে) ঢুকাও তবে (পুনরায় ওযূর সময়) তুমি মোজার উপর মাসেহ কর। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমাদের এক ব্যক্তি পায়খানা প্রসাব হতে আসিলে তার জন্যও কি এই হুকুম? উমার (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসলে তার জন্যও এই হুকুম। (সহীহ, বুখারী ২০২) নাফি’ (রঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বাজারে (প্রস্রাবের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে) প্রস্রাব করলেন। তারপর অযূ করলেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল ও উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মাসেহ করলেন। তারপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করার পর তাঁকে জানাযার নামায আদায় করাবার জন্য আহ্বান করা হল, তিনি মোজার উপর মাসেহ করলেন, তারপর জানাযার নামায আদায় করিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সা’ঈদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু রুকাইশ আশআরী (র) আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ ক)-কে দেখেছি, তিনি কোবা আসলেন, তারপর প্রস্রাব করলেন। অতঃপর তাঁর কাছে পানি আনা হলে তিনি অযূ করলেন, মুখমণ্ডল ধুলেন, দু’হাত ধুলেন কনুই পর্যন্ত, মাথা মাসেহ করলেন, আর মোজার উপর মাসেহ করলেন, তারপর মসজিদে এলেন এবং নামায আদায় করলেন। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি ওযূ করেছে নামাযের ওযূর মত, অতঃপর তার মোজা পরিধান করেছে। সে ব্যক্তি নতুন করে ওযূ করবে কি? তিনি বললেন সে মোজা খুলে নিবে। তারপর ওযূ করবে এবং দু’পা ধুবে। যে ব্যক্তি উভয় পা মোজায় ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় দাখিল করেছে, সে ব্যক্তি মোজায় মাসেহ করতে পারবে। আর যে ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় উভয় পা মোজায় দাখিল করে নি সে মোজা মাসেহ করবে না। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে তার পরিধানে মোজা থাকা অবস্থায়, কিন্তু সে মোজায় মাসেহ করতে ভুলে গিয়েছে। (এই অবস্থায়) তার ওযূ (ওযূর অঙ্গসমূহ) শুকিয়ে গিয়েছে এবং সে নামায আদায় করেছে (তার হুকুম কি?)। তিনি বললেন, সেই ব্যক্তি মোজার উপর মাসেহ করবে এবং নামায নতুন করে আদায় করবে, ওযূ পুনরায় করতে হবে না। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে তার দুই পা (প্রথম) ধুয়েছে, তারপর মোজা পরেছে, অতঃপর ওযূ শুরু করেছে। তিনি বললেন, সে মোজা খুলে ফেলবে, তারপর ওযূ করবে এবং (যথারীতি) উভয় পা ধুবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【9】

মোজা মাসেহ-এর নিয়ম

হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তিনি তাঁর পিতাকে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছেন। তিনি মোজা মাসেহ করার সময় এর অতিরিক্ত কিছু করতেন না; মোজার উপরের অংশে মাসেহ করতেন, তলদেশ মাসেহ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইবনু শিহাব (র)-কে প্রশ্ন করলেন মোজা মাসেহ কিভাবে সম্পাদন করতে হয় ইবনু শিহাব তাঁর এক হাত মোজার নিচে দাখিল করলেন এবং অপর হাত মোজার উপর স্থাপন করলেন। অতঃপর উভয় হাত মাসেহ-এর জন্য চালিত করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, মোজা মাসেহ-এর ব্যাপারে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে ইবনু শিহাবের মতামত আমার কাছে সবচাইতে পছন্দনীয়।

【10】

নাক দিয়ে রক্ত ঝরা ও বমি সম্পর্কীয় বর্ণনা

নাফি’ (র) যখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর নাক দিয়ে রক্ত বের হত, তখন তিনি নামায হতে ফিরে যেতেন। অতঃপর ওযূ করতেন এবং পুনরায় এসে অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন, আর তিনি (এই অবস্থায়) কথা বলতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নাক দিয়া রক্ত নির্গত হলে তিনি বের হতেন এবং রক্ত পরিষ্কার করতেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করে নামায যতটুকু আদায় করেছেন উহার (উপর ভিত্তি করিয়া) অবশিষ্ট নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াযিদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুসাইত লাইসী (র) তিনি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে দেখেছেন, তিনি যখন নামায আদায় করতেছিলেন তখন তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বের হল। তিনি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্মী উম্মু সালমার ঘরে এলেন। তাঁর জন্য পানি আনা হল, তিনি ওযূ করলেন, তারপর ফিরে গেলেন এবং নামায যতটুকু বাকি ছিল তা আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【11】

নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হলে কি করতে হয় তার বর্ণনা

আবদুর রহমান ইবনু হারমালা আসলামী (র) আমি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে দেখেছি। নাকসীরের কারণে তাঁর নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল, এমনকি তাঁর নাক হতে বের হওয়া রক্তের দ্বারা তাঁর আঙ্গুল রঞ্জিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি নামায আদায় করলেন অথচ অযূ করলেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু মুজাব্বার (র) তিনি সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র)-কে দেখেছেন, তাঁর নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, এমনকি (সেই রক্তে) তাঁর আঙুলসমূহ লাল হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি নাক মোচড়ালেন, তারপর নামায আদায় করলেন, অথচ অযূ করলেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【12】

জখম অথবা নাক হতে প্রবাহিত রক্ত প্রবল হলে কি করতে হবে

মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (র) যে রাত্রে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই রাত্রে জনৈক ব্যক্তি (কোন কোন বর্ণনায় বোঝা যায় যে, প্রবেশকারী সেই ব্যক্তি ছিলেন স্বয়ং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা।) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর কাছে আসল। উমার (রাঃ)-কে ফজরের নামাযের জন্য জাগানো হল। উমার (রাঃ) বললেন হ্যাঁ, আমি এই অবস্থায়ও নামায আদায় করি। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোন স্থান নেই। অতঃপর উমার (রাঃ) নামায আদায় করলেন অথচ তাঁর জখম হতে তখন রক্ত বের হচ্ছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলেন, নাকসীরের কারণে যে ব্যক্তির রক্ত প্রবল হয়েছে এবং তার রক্ত পড়া বন্ধ হয় নি সে ব্যক্তি প্রসঙ্গে তোমাদের মতামত কি? ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) বলেন, অতঃপর সাঈদ্ ইবনু মুসায়্যাব (র) বললেন, আমার মতে সে মাথার দ্বারা কেবল ইশারা করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই বিষয়ে আমি যা কিছু শুনেছি তন্মধ্যে এটাই আমার কাছে উত্তম।

【13】

মযী (বের হওয়া)-এর কারণে ওযূ

মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) মিকদাদকে নির্দেশ দিলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর পক্ষে প্রশ্ন করার জন্য। প্রশ্নটি হলো এই যে ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর কাছে যাওয়ায় তার লিঙ্গাগ্রে মযী (তরল পদার্থ, শুক্র নয়) বের হয়েছে, সে ব্যক্তির প্রতি কি ওযূ ওয়াজিব হবে? আলী (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা যেহেতু আমার স্ত্রী সেহেতু তাঁকে এই ধরনের প্রশ্ন করতে আমি লজ্জাবোধ করি। মিকদাদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপরিউক্ত প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমাদের কেউ অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হলে সে নিজের লজ্জাস্থান পানি দ্বারা ধুবে, তারপর নামাযের ওযূর মত করে ওযূ করবে। (বুখারী ১৩২, মুসলিম, ইবনু আব্বাস ও মিকদাদ (রঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন ৩০৩) আসলাম (রাঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, আমার ভিতর হতে উহা মুক্তাদানার মত নির্গত হতে আমি অনুভব করি। তোমাদের কেউ এই অবস্থায় পরলে সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং নামাযের ওযূর মত ওযূ করবে। তিনি (উমার) এটা দ্বারা মযীর বিষয় বলতে চেয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) জুনদাব (র) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে মযী বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, তুমি উহা প্রাপ্ত হলে তোমার লজ্জাস্থানকে ধুয়ে নাও এবং নামাযের ওযূর মত ওযূ কর। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【14】

মযী নির্গত হওয়ার কারণে ওযূ না করার অনুমতি

ইয়াহইয়া ইব্নু সাঈদ (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করতে সে বলল, আমি নামায আদায় রত অবস্থায় আর্দ্রতা অনুভব করি। তবে আমি কি (নামায ছেড়ে) ফিরে যাব? সাঈদ বললেন, আমার রানের উপর দিয়ে ভেসে পড়লেও আমি আমার নামায শেষ না করে ফিরব না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালত ইবনু যুবায়দ (র) আমি সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র)-কে আর্দ্রতা বিষয়ে প্রশ্ন করলাম; যা আমি অনুভব করি অর্থাৎ মনে সন্দেহ জাগে হয়তো আর্দ্রতা আছে। তিনি বললেন, তোমার কাপড়ের (লুঙ্গি অথবা পায়জামার) নিচে পানি ছিটিয়ে দাও। তারপর ঐ চিন্তা ছেড়ে দাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【15】

লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করা

আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাযম (র) তিনি উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র)-কে বলতে শুনেছেন আমি মারওয়ান ইবনু হাকাম (র)-এর নিকট গেলাম, আমরা দু’জনে ওযূ কিসে ওয়াজিব হয় সে বিষয়ে আলোচনা করলাম। মারওয়ান বললেন, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করতে হবে। উরওয়াহ বললেন, আমি তো এটা জানি না। মারওয়ান বললেন, বুসরা বিনত সফওয়ান (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন তোমাদের কোন ব্যক্তি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করবে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৮১, তিরমিযী ৮২, নাসাঈ ১৬৩, ইবনু মাজাহ ৪৭৯, আহমাদ ২৭৩৩৪, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সিলসিলা সহীহাহ ১২৩৫]) মুস’আব ইবনু সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (র) আমি সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর জন্য কুরআন মাজীদ হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলাম (যেন তিনি তিলাওয়াত করতে পারেন), আমি নিজের শরীর চুলকালাম। সা’দ বললেন, সম্ভবত তুমি তোমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছ। আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি উঠ এবং ওযূ কর; অতঃপর আমি উঠলাম এবং ওযূ করে আবার ফিরে এলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, তোমাদের কেউ যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, তবে সে ওযূ করবে, কারণ তার উপর ওযূ ওয়াজিব হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) যে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছে তার উপর ওযূ ওয়াজিব হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি গোসল করতেন, তারপর ওযূ করতেন। আমি বললাম আব্বাজান! গোসল আপনার ওযূর জন্য কি যথেষ্ট হয় না? (অর্থাৎ গোসল দ্বারা ওযূর কাজ হয়ে যায় না?) তিনি বললেন, হ্যাঁ, যথেষ্ট হয়। কিন্তু আমি কোন কোন সময় লজ্জাস্থান স্পর্শ করি। তাই আমি ওযূ করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) আমি এক সফরে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে দেখলাম সূর্য উদয়ের পর ওযূ করলেন, তারপর নামায আদায় করলেন। আমি তাঁকে বললাম (আজকের দিন ব্যতীত) আপনি এই নামায কখনও এই সময়ে আদায় করেন না। তখন তিনি বললেন, আমি ফজরের নামাযের জন্য ওযূ করার পর আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছি। অতঃপর আমি ওযূ করতে ভুলে গিয়েছি। তাই আমি অযূ করলাম এবং পুনরায় নামায আদায় করলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【16】

স্বামী কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বনের কারণে ওযূ করা

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) স্বামী কর্তৃক আপন স্ত্রীকে চুম্বন এবং তাঁকে হাতে ছোঁয়া মুলামাসাত এর অন্তর্ভুক্ত। যে নিজের স্ত্রীকে চুম্বন করে অথবা তাকে হাত দ্বারা স্পর্শ করে তার উপর ওযূ ওয়াজিব হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলতেন, পুরুষ নিজের স্ত্রীকে চুমা খাইলে তার ওযূ ওয়াজিব হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রা) ইবনু শিহাব (র) বলতেন, পুরুষ কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বনের কারণে ওযূ করতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【17】

জানাবত-এর গোসলের বর্ণনা

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবত [১]-এর গোসল করতেন, সর্বপ্রথম দু’ হাত ধুতেন। অতঃপর নামাযের ওযূর মত ওযূ করতেন। তারপর আঙুলসমূহ পানিতে দাখিল করতেন, আঙুল দ্বারা চুলের গোড়ায় খিলাল করতেন। অতঃপর উভয় হাত দিয়ে তিন আঁজলা পানি তাঁর মাথায় ঢালতেন। অতঃপর সর্বশরীরে পানি ঢালতেন। (বুখারী ২৪৮, মুসলিম ৩১৬) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি পাত্র হতে, যাতে দুই অথবা তিন সা’ (প্রায় চার অথবা ছয় সের পরিমাণ) পানি ধরত, জানাবতের গোসল করতেন। (বুখারী ২৫০, মুসলিম ৩১৯) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) যখন জানাবতের গোসল করতেন, তিনি সর্বপ্রথম ডান হাতে পানি ঢালতেন এবং উহাকে ধুতেন, অতঃপর লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর কুলি করতেন এবং নাক পরিষ্কার করতেন। তারপর মুখমণ্ডল ধুতেন এবং উভয় চক্ষুতে পানি ছিটা দিতেন। অতঃপর পুনরায় ডান হাত, তারপর বাম হাত ও মাথা ধুতেন। তারপর (পূর্ণাঙ্গ) গোসল করতেন এবং তাঁর (দেহের) উপর পানি ঢেলে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-কে মেয়েদের জানাবতের গোসল বিষয়ে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেন, স্ত্রীলোক তার মাথায় তিন চুল্লু পানি ঢালবে এবং দু’হাত দিয়ে মাথা (মাথার চুল) কচলাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【18】

দুই লজ্জাস্থানের স্পর্শে গোসল ওয়াজিব হওয়া

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব, উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) ও নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়েশা (রাঃ) বলতেন, যখন (পুরুষের) লজ্জাস্থান (স্ত্রীর) লজ্জাস্থান স্পর্শ করল তখন অবশ্য গোসল ওয়াজিব হয়ে গেল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (র) আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্মী আয়েশা (রাঃ)- কে প্রশ্ন করলাম, কোন কাজ গোসলকে ওয়াজিব করে? তিনি বললেন, হে আবূ সালমা! তুমি জান, তোমার দৃষ্টান্ত কি? তোমার দৃষ্টান্ত হতেছে মুরগীর বাচ্চার মত [১], যে মোরগকে যখন ডাক দিতে শোনে, তখন সেও মোরগের সহিত ডাক দেয়। শোন, (পুরুষের) লজ্জাস্থান (স্ত্রীর) লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হবে। (সহীহ, তিরমিযী ১০৮, আল্লামা আলবানী সহীহ আল জামে ৪৭৫, সহীহ বলেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের মতানৈক্য আমার কাছে খুব ভারী ও কষ্টদায়ক হয়েছে এবং তা এমন একটি বিষয় যা আপনার কাছে উল্লেখ করা আমি মহাব্যাপার মনে করি। ‘আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বললেন, কি বিষয় উহা? তুমি যে বিষয় তোমার মাতার কাছে প্রশ্ন করতে পার, সে বিষয়ে আমার কাছেও প্রশ্ন করতে পার। তারপর আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, কোন লোক তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর সে ক্লান্ত হয়েছে কিন্তু বীর্য নির্গত হয়নি। সে কি করবে? তিনি বললেন, (পুরুষের) লজ্জাস্থান (স্ত্রীলোকের) লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হবে। আবূ মূসা (রা) বললেন, আপনাকে জিজ্ঞেস করার পর আমি এই বিষয়ে অন্য করো কাছে আর কখনও জিজ্ঞেস করব না। (সহীহ [মারফু] ইমাম মুসলিম মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন ৩৪৯) মাহমুদ ইবনু লবীদ আনসারী (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করলেন, সেই লোক সম্পর্কে যে লোক নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে, তারপর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, বীর্য বের হয়নি। তিনি বললেন, সে গোসল করবে। মাহমুদ (রাঃ) বললেন, উবাই ইবনু কা’ব (রা) গোসল (এই অবস্থায়) জরুরী মনে করতেন না। যায়দ (রাঃ) বললেন, মৃত্যুর পূর্বে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এই মত প্রত্যাহার করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, (পুরুষের) লজ্জাস্থান স্ত্রীলোকের লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【19】

জুনুব ব্যক্তির ওযূ করা গোসলের পূর্বে নিদ্রা অথবা খাদ্য গ্রহণ করতে ইচ্ছা করলে

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) উল্লেখ করলেন; রাত্রিতে তাঁর জানাবত অর্থাৎ অপবিত্রতা হয় (স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সহবাসের দরুন) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি ওযূ কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল, তারপর ঘুমাও। (বুখারী ২৯০, মুসলিম ৩০৬) আয়েশা (রাঃ) তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাস করলে, অতঃপর গোসলের পূর্বে ঘুমাতে ইচ্ছা করলে সে নামাযের ওযূর মত ওযূ না করে ঘুমাবে না। (বুখারী ২৮৮, মুসলিম ৩০৫) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) জানাবত অবস্থায় ঘুমাতে অথবা আহার করতে ইচ্ছা করলে তিনি মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুতেন এবং মাথা মাসেহ করতেন। তারপর আহার করতেন অথবা ঘুমাতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【20】

জুনুব ব্যক্তির জানাবত মনে না থাকার কারণে নামায আদায় করলে সে নামায নতুন করে আদায় করা এবং গোসল করা ও কাপড় ধোয়া

ইসমাঈল ইবনু আবি হাকীম (র) ‘আতা ইবনু ইয়াসার (র) তাঁকে বলেছেন, কোন এক নামাযে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। অতঃপর হাত দিয়ে তাঁদের (নামাযে শরীক উপস্থিত সাহাবীদের) দিকে ইশারা করলেন, তোমরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। অতঃপর ফিরে এলেন (এমন অবস্থায় যে), তাঁর (পবিত্র) দেহের উপর পানির আলামত বিদ্যমান ছিল। (বুখারী ২৭৫, মুসলিম ৬০৫, আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন, আর ইমাম মালিক (রঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) যায়ায়দ ইবনু সালত (র) আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে বের হলাম জুরুফ-এর (মদীনা হতে তিন মাইল দূরের একটি পল্লী) দিকে। তাঁর স্বপ্নদোষ হল এবং তিনি গোসল না করে (ভুলে) নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, কসম আল্লাহর! আমার মনে হয়, আমার অবশ্য ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) হয়েছে অথচ আমি খবর রাখি না এবং আমি গোসল না করে নামায আদায় করেছি। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং কাপড়ে যা চিহ্ন দেখলেন তা ধুলেন, যেখানে চিহ্ন নেই সেখানে পানি ছিটা দিলেন। তারপর আযান ও ইকামত বললেন। অতঃপর দিনের প্রথম অংশের সূর্য উচ্চতায় পৌঁছার পর নামায আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) দিনের প্রথমাংশে জুরুফ নামক স্থানে অবস্থিত তাঁর জমির দিকে গমন করলেন। তিনি তাঁর কাপড়ে স্বপ্নদোষের আলামত দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, যখন হতে লোকের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, তখন হতে আমি ইহতিলামে লিপ্ত হয়েছি। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং তাঁর কাপড়ে স্বপ্নদোষের যা আলামত দেখলেন তা ধুলেন। তারপর সূর্য উঠার পর তিনি নামায আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) লোকের সাথে (জামাতে) ফজরের নামায আদায় করলেন, অতঃপর সকালবেলা ‘জুরুফ’-এ অবস্থিত তাঁর জমির দিকে গমন করলেন। তারপর তাঁর কাপড়ে ইহতিলামের চিহ্ন দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, আমরা চর্বি (চর্বিযুক্ত খাদ্যদ্রব্য) যখন হতে আহার করতেছি তখন হতে আমাদের শিরাসমূহ কোমল হয়েছে। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং কাপড় হতে ইহতিলাম (এর চিহ্ন) ধুয়ে ফেললেন এবং নামায নতুন করে আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু আবদুর রহমান (র) তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর সঙ্গে ‘উমরাহ’ করলেন একই কাফেলায় ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ)-ও ছিলেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কোন পানির (কূপের) নিকটবর্তী এক রাস্তার পাশে রাত্রের শেষাংশে অবতরণ করলেন। উমার (রাঃ)-এর ইহতিলাম হল। (এইদিকে) ফজর হতে লাগল কিন্তু কাফেলার সাথে পানি পাওয়া গেল না। তিনি সওয়ার হয়ে পানির কাছে এলেন। অতঃপর তিনি ইহতিলামের যা চিহ্ন দেখলেন তা ধুতে লাগলেন, তখন ফরসা হয়ে গিয়েছে। ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি ভোর করলেন অথচ আমাদের সাথে কাপড় রয়েছে। আপনি আপনার কাপড় রেখে দিন, (পরে) ধোয়া হবে। উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ইবনুল ‘আস! আশ্চর্য তোমার প্রতি! তোমার যদিও অনেক বস্ত্র আছে, কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট কি তদ্রুপ আছে? আল্লাহর কসম, আমি যদি এটা করি তবে এটা সুন্নাতে পরিণত হবে। আমি বরং যা আলামত দেখব তাই ধুব, আর যা দেখা না যায় তাতে পানি ছিটিয়ে দেব। মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি তার কাপড়ে ইহতিলামের আলামত দেখতে পায়, কোন সময় ইহতিলাম হয়েছে সে তা জানে না, স্বপ্নে যা দেখেছে তার স্মরণ নাই, তবে সে সদ্য যে নিদ্রা হতে জেগেছে তাতে (ইহতিলাম হয়েছে বলে গণ্য করে) গোসল করবে। যদি সে এই নিদ্রার পর নামায আদায় করে থাকে তবে সে নামায নতুন করে আদায় করবে। কারণ লোকের (অনেক সময়) ইহ্তিলাম হয় কিন্তু কোন কিছু (স্বপ্নে) দেখ না, আবার কোন সময় স্বপ্ন দেখে কিন্তু ইহতিলাম হয় না। তাই কাপড়ে যদি পানি দেখে (ইহতিলাম স্মরণ না থাকলেও) তবে তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে। কারণ উমার ইবনু খাত্তাব (রা) এই ঘটনায় শেষ বারের নিদ্রা হতে জাগ্রত হবার পর যে নামায আদায় করেছিলেন তিনি সেই নামায নতুন করে আদায় করেছেন, এর পূর্ববর্তী নামায অর্থাৎ ঐ নিদ্রার পূর্বের নামায তিনি কাযা করেননি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【21】

পুরুষের মত স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা

উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উম্মু সুলায়ম বিনতে মিলহান (রাঃ) বললেন, স্ত্রীলোক স্বপ্নে দেখলে যেমন দেখে থাকে পুরুষ (সেই) স্ত্রীলোক গোসল করবে কি? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, হ্যাঁ, সে গোসল করবে। ‘আয়েশা (রাঃ) তাঁকে (উম্মু সুলায়মকে) বললেন, উঃ তোমার সর্বনাশ হোক! স্ত্রীলোকও কি তা দেখে? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে [আয়েশা (রা)-কে] বললেন, تَرِبَتْ يَمِينُكِ তোমার ডান হাত ধুলিধূসরিত হোক’। (স্ত্রীলোকের তা না হলে) তবে (সন্তান-এর মধ্যে মায়ের) সাদৃশ্য আসে কোথা হতে? (সহীহ, মুসলিম ৩১১) উম্মু সালমা (রাঃ) আবূ তালহা আনসারী (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মু সুলায়ম রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হলেন এবং আরজ করলেন হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ হক কথা বলতে লজ্জা করেন না, স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে কি? হযরত বললেন, হ্যাঁ, পানি দেখলে। (বুখারী ১৩০, মুসলিম ৩১৩)

【22】

জানাবত গোসলের বিবিধ হুকুম

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, স্ত্রীলোকের গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করাতে কোন সমস্যা নাই (অর্থাৎ এটা জায়েয) যদি স্ত্রীলোক ঋতুমতী অথবা জুনুবী না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) পরিধানের কাপড়ে ঘর্মাক্ত হতেন অথচ তখন তিনি জুনুবী। অতঃপর সেই কাপড়েই গোসলের পর তিনি নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর বাঁদিগণ তাঁর পা দুটো ধুয়ে দিত এবং তাঁকে খুমরা ছোট মুসল্লা বা জায়নামায প্রদান করত, অথচ তারা তখন ঋতুমতী। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী ও বাঁদী রয়েছে, সে ব্যক্তি গোসলের পূর্বে সকলের (স্ত্রী ও বাঁদীগণের) সাথে সহবাস করতে পারবে কি? (উত্তরে) তিনি বললেন, জানাবতের গোসলের পূর্বে বাঁদীর সাথে সহবাস করা দোষের বিষয় নয় (অর্থাৎ এটা জায়েয)। কিন্তু স্বাধীন স্ত্রীগণের ব্যাপারে মাস’আলা এই কোন ব্যক্তির পক্ষে নিজের স্ত্রীর (অধিকারের) দিনে (নিজের) আর এক স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া মাকরূহ। তবে কোন লোকের জন্য (তাঁর) এক বাঁদীর সাথে সহবাস করে অতঃপর আর এক বাঁদীর সাথে জুনুব থাকা অবস্থায় মিলিত হওয়া দোষের ব্যাপার নয়। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক জুনুবী ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তির জন্য পানি রাখা হয়েছে যা হতে সে ব্যক্তি ফরয গোসল করবে, তারপর সে ভুলবশত সেই পানিতে তার আঙ্গুল দাখিল করেছে যাতে ঠাণ্ডা ও গরমের (মাত্রা) নির্ণয় করতে পারে। (উত্তরে) মালিক (র) বলেন, তার আঙুলসমূহে কোন নাপাকী না পৌঁছে থাকেলে তবে তার এই কাজে পানি নাপাক হবে বলে আমি মনে করি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【23】

তাইয়াম্মুম

আয়েশা (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে গেলাম। যখন আমরা বায়দা অথবা (তিনি বলেছেন) যাতুল-জাইশ (নামক স্থান)-এ পৌঁছালাম, তখন আমার একটি মালা হারিয়ে গেল। সেটা খোঁজার জন্য রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখানে) অবস্থান করলেন এবং লোকজনও তাঁর সাথে অবস্থান করলেন। তাঁরা কোন পানির (কৃপ বা নহর) কাছে ছিলেন না এবং তাঁদের সাথেও পানি ছিল না। লোকজন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে আসলেন এবং ঘটনা বিবৃত করলেন। তাঁরা বললেন, ‘আয়েশা (রা) কি করেন তা কি আপনি জানেন না? (তিনি) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং অন্য লোকদেরকে অবস্থানে বাধ্য করেন। অথচ তাঁরা পানির কাছে নাই এবং তাঁদের সাথে পানিও নাই। ‘আয়েশা (রাঃ) বলেন, তারপর আবূ বাকর (রাঃ) আমার কাছে এলেন। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (পবিত্র) শির আমার উরুর উপর স্থাপন করে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি (আবূ বাকর (রাঃ)) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং লোকদেরকে তুমি আটকে রেখেছ। অথচ তাঁরা পানির পাশে নাই এবং তাঁদের সাথে পানিও নাই। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তারপর আবূ বাকর (রাঃ) আমার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করলেন এবং আমাকে তিরস্কার করলেন। আর তাঁর হাত দিয়ে আমার কোমরে খোঁচা মারতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (পবিত্র) শির আমার উরুর উপর স্থাপিত থাকার কারণে আমি (খোঁচা মারা সত্ত্বেও) নড়াচড়া করছিলাম না। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লেন এমন কি এই পানিহীন অবস্থায় ভোর হল। তারপর আল্লাহ তা’আলা তাইয়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন। তারপর তাঁরা সকলে তাইয়াম্মুম করলেন। উসায়দ ইবনু হূযায়র (রাঃ) বললেন হে আবূ বাকরের পরিজন! এটা (অর্থাৎ তাইয়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হওয়া) আপনাদের প্রথম বরকত নয়। (অর্থাৎ মুসলিমগণ আপনাদের দ্বারা নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। ‘আয়েশা (রাঃ) বললেন, তারপর আমি যে উটের উপর আরোহণ করেছিলাম উহাকে তুললাম এবং উহার নিচে মালা পেলাম। মালিক (র)-কে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি উপস্থিত নামাযের জন্য তাইয়াম্মুম করেছ। অতঃপর পরবর্তী নামাযের সময় হলো, ঐ লোক কি সেই নামাযের জন্য (পুনরায়) তাইয়াম্মুম করবে, না সেই (পূর্ববর্তী) তাইয়াম্মুম তাঁর জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, প্রত্যেক (ফরয) নামাযের জন্য তাইয়াম্মুম করবে। কারণ (সময় উপস্থিত হলে) প্রত্যেক নামাযের জন্য পানির খোঁজ করা তার ওয়াজিব। যে ব্যক্তি পানির খোঁজ করল কিন্তু পানি পেল না সে তাইয়াম্মুম করবে। মালিক (র)-কে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল এমন, যে ব্যক্তি তাইয়াম্মুম করেছে এবং তার সাথিগণ যারা ওযূ করেন সে তাদের ইমামতি করতে পারবে কি? (উত্তরে) তিনি বললেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ ইমামতি করলে তা আমার কাছে পছন্দনীয়, আর যদি সে তাদের ইমামতি করে থাকে, তবে তাতেও আমি কোন দোষ দেখি না। মালিক (র) বলেছেন, এক ব্যক্তি পানি না পেয়ে তাইয়াম্মুম করেছে, তারপর সে নামাযে দাঁড়িয়েছে এবং তাকবীর বলে নামায শুরু করেছে। অতঃপর একজন লোক পানিসহ তার কাছে আসলো। তিনি বললেন, সে নামায ছাড়বে না, বরং তাইয়াম্মুম দ্বারা সেই নামায পূর্ণ করবে এবং আগামী নামাযের জন্য ওযূ করবে। মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযের (প্রস্তুতির) জন্য দাঁড়িয়েছে: কিন্তু সে পানি না পেয়ে আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক তাইয়াম্মুমের আমল করেছে তবে সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর আনুগত্যই করেছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পানি পেয়েছে (ও ওযূ করেছে) তা (উপরিউক্ত তাইয়াম্মুমকারী) অপেক্ষা সেই ব্যক্তি বেশি পবিত্র ও নামাযের পূর্ণতাকারী বলে গণ্য হবে না; কারণ তারা দু’জনেই নির্দেশপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেকে মহিমান্বিত আল্লাহর পক্ষ হতে যা নির্দেশ পেয়েছে সেই মুতাবিক আমল করেছে। যে ব্যক্তি পানি পেয়েছে সে ব্যক্তির আমল হল ওযূ, যেমন আল্লাহ তা’আলা তাকে নির্দেশ করেন, আর যে ব্যক্তি নামায শুরুর পূর্বে পানি পায়নি সে ব্যক্তির জন্য (নির্দেশ) হল তাইয়াম্মুম। মালিক (র) বলেছেন, জুনুবী ব্যক্তি তাইয়াম্মুম করবে এবং কুরআন হতে তার নির্ধারিত অংশ তিলাওয়াত করবে এবং নফল নামায আদায় করবে যতক্ষণ পর্যন্ত পানি না পায়। তবে এটা সেই স্থানের জন্য যে স্থানে তার জন্য তাইয়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় বৈধ। (বুখারী ৩৩৪, মুসলিম ৩৬৭)

【24】

তাইয়াম্মুমের কার্যাবলি

নাফি’ (র) তিনি স্বয়ং এবং আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) যাত্রা শুরু করলেন। জুরুফ হতে তাঁরা দু’জনে মিরবাদ নামক স্থানে পৌঁছার পর আবদুল্লাহ (রাঃ) অবতরণ করলেন এবং পবিত্র মাটি দ্বারা তাইয়াম্মুম করলেনতাঁর মুখমণ্ডল ও হাতদুটি কনুই পর্যন্ত মাসেহ করলেন। অতঃপর নামায আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) তাইয়াম্মুমে দু’হাতের উভয় কনুই পর্যন্তমাসেহ করতেন। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল তাইয়াম্মুম কিভাবে এবং (দু’হাতে তাইয়াম্মুম করার সময়) কোন স্থান পর্যন্ত তা পৌঁছাবে? তিনি (উত্তরে) বললেন, একবার মাটিতে হাত রাখবে মুখমণ্ডলের নিমিত্তে আর একবার রাখবে হস্তদ্বয়ের জন্য এবং দু’হাত উভয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【25】

জুনুবী ব্যক্তির তাইয়াম্মুম

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)- যে তাইয়াম্মুম করার পর পানি পেয়েছে। সাঈদ (র) উত্তরে বললেন, পানি পেলে আগামী নামাযের জন্য তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, এমন এক ব্যক্তি যার ইহতিলাম হয়েছে অথচ সে মুসাফির। কেবল ওযূর পরিমাণ পানি ছাড়া তার কাছে আর পানি নাই এবং পানি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বে সে পিপাসিত হবে না। তিনি বললেন, সেই পানি দ্বারা সে তার লজ্জাস্থান এবং যে স্থানে নাপাকী লেগেছে তা ধুবে। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক পবিত্র মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করবে। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক জুনুবী ব্যক্তি প্রসঙ্গে যে তাইয়াম্মুম করতে ইচ্ছা করেছে; কিন্তু সে লবণাক্ত মাটি ছাড়া অন্য মাটি পেল না। তবে সে কি লবণাক্ত মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করবে? আরও প্রশ্ন করা হল লবণাক্ত মাটিতে নামায আদায় কি মাকরূহ? (উত্তরে) মালিক (র) বললেন, লবণাক্ত মাটিতে নামায আদায় এবং লবণাক্ত মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করাতে কোন দোষ নেই। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا “তোমরা পবিত্র মাটির দ্বারা তাইয়াম্মুম কর” (সূরা আল-মায়িদাহ, ৬)। ফলে যে কোন পবিত্র মাটি তাইয়াম্মুমের উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। লবণাক্ত হোক অথবা না হোক।

【26】

স্ত্রী ঋতুমতী থাকলে স্বামীর জন্য তার কতটুকু হালাল হবে

যায়দ ইবনু আসলাম (র) একজন সাহাবী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রশ্ন করলেন আমার স্ত্রী ঋতুমতী থাকলে আমার জন্য তার কতটুকু হালাল? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন স্ত্রীলোক তার ইযার (পায়জামা বা পরনের জন্য কাপড়) শক্ত করে বাঁধবে। অতঃপর তোমার জন্য তার উপরের অংশ দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে এই হাদীসের সমর্থনে অনেক হাদীস রয়েছে) রবি’আ ইবনু আবি আবদির রহমান (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক চাদরে (আবৃত অবস্থায়) শায়িতা ছিলেন। তখন ‘আয়েশা (রা) তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তোমার কি ঘটেছে? সম্ভবত তোমার নিফাস অর্থাৎ হায়েয হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি তোমার ইযার (পায়জামা) শক্ত কিরে বাঁধ, তারপর তোমার বিছানায় প্রত্যাবর্তন কর। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, উল্লেখ্য যে, বুখারী ও মুসলিমে উক্ত ঘটনাটি উম্মে সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ উমার (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে লোক পাঠালেন এই প্রশ্ন করার জন্য, স্ত্রী ঋতুমতী হলে স্বামী সেই স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে কি? তিনি বললেন (স্ত্রী) তার নিচের অংশে ইযার (পরিধানের কাপড়) শক্ত করে বাঁধবে, অতঃপর স্বামী ইচ্ছা করলে তার সাথে মিলিত হবে (কিন্তু সহবাস হতে বিরত থাকবে, এজন্যই ইযার শক্ত করে বাঁধতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল ঋতুমতী স্ত্রীলোক প্রসঙ্গে, সে গোসলের পূর্বে পবিত্রতা লক্ষ করলে তার স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে কি? তাঁরা (দু’জনে) বললেন, গোসল না করা পর্যন্ত পারবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【27】

ঋতুমতীর পবিত্রতা

মার্জানা তিনি বলেন, (ঋতুমতী) স্ত্রীলোকেরা ‘আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট ঝোলা বা ডিব্বা পাঠাতেন, যাতে নেকড়া বা তুলা থাকত। তাতে পাণ্ডুবর্ণ ঋতুর রক্ত লেগে থাকত। তারা এই অবস্থায় নামায আদায় প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাইতেন। তিনি [‘আয়েশা (রাঃ)] তাঁদেরকে বলতেন, তাড়াহুড়া করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ সাদা (বর্ণ) দেখতে না পাও। তিনি এটা দ্বারা ঋতু হতে পবিত্রতা বুঝাতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)- তাঁর কাছে খবর এসেছে যে, স্ত্রীলোকেরা (মধ্য রাত্রে) চেরাগ তলব করতেন, তাঁরা (ঋতু হতে) পবিত্রতা লক্ষ করতেন। তিনি (যায়দের কন্যা) এর জন্য তাঁদের নিন্দা করতেন এবং বলতেন, সাহাবীয়া মেয়েরা (রাঃ) এটা করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)- (ঋতুমতী স্ত্রীলোকের ব্যাপারে) প্রশ্ন করা হল যে স্ত্রীলোক শুচিতাপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু পানি পায় না, সে তাইয়াম্মুম করবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই তাইয়াম্মুম করবে। কারণ তাঁর দৃষ্টান্ত জুনুবীর মত (জুনুবী ব্যক্তি), যখন পানি না পায় তখন তাইয়াম্মুম করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【28】

ঋতু সম্পর্কীয় বিবিধ হুকুম

মালিক (র) তিনি জ্ঞাত হয়েছেন যে, যে গর্ভবতী স্ত্রীলোক রক্ত দেখতে পায় তার সম্পর্কে নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, সে নামায আদায় করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) শিহাব (র)-কে প্রশ্ন করেন, যে গর্ভবতী স্ত্রীলোক রক্ত দেখতে পায় সে কি করবে? তিনি বললেন, সে নামায হতে বিরত থাকবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, উক্ত হুকুম আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত। আয়েশা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শির (মুবারক)-এ চিরুনি করতাম, অথচ তখন আমি ছিলাম ঋতুমতী। (সহীহ, বুখারী ২৯৫) আসমা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) জনৈক স্ত্রীলোক রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন আমাদের মধ্যে একজনের কাপড়ে ঋতুস্রাবের রক্ত লাগলে সে কি করবে? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কোন স্ত্রীলোকের কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে তা খুচিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর সে কাপড়ে নামায আদায় করবে। (বুখারী ৩০৭, মুসলিম ২৯১)

【29】

মুস্তাহাযা

আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা বিনত আবি হুবাইসা (রাঃ) বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি পবিত্র হই না (অর্থাৎ রক্তস্রাব বন্ধ হয় না।) আমি নামায আদায় করব কি? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, এটা একটি রোগ (শিরামাত্র), হায়েয নহে। তাই যখন হায়েয আরম্ভ হয় তখন নামায ছেড়ে দাও। হায়েযের (দিবসের) দিন অতিবাহিত হলে তুমি তোমার রক্ত ধুয়ে ফেল, তারপর নামায আদায় কর। (বুখারী ২২৮, মুসলিম ৩৩৩) উম্মু-সালমা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা স্ত্রীলোকের (রক্তস্রাব বন্ধ হত না), রক্ত প্রবাহিত হত। তাঁর সম্পর্কে উম্মু-সালমা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়ার) যে রোগে সে আক্রান্ত হয়েছে, সেই রোগ হওয়ার পূর্বে তার কত দিন কত রাত প্রতি মাসে হায়েয আসত সে উহার প্রতি লক্ষ রাখবে। মাসের সেই কদিন ও রাত্রিতে সে নামায আদায় করবে না। অতঃপর সেই কদিন অতিবাহিত হলে সে গোসল করবে, তারপর লজ্জাস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে নিবে, তারপর নামায আদায় করবে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৭৪, নাসাঈ ২০৮, ইবনু মাজাহ ৬২৩, আহমাদ ২৬৭৫৯, আল্লামা আলবানী সহীহ আল জামে ৫০৭৬-তে হাদসিটি সহীহ বলেছেন) যায়নাব বিনতি আবি সালমা (রাঃ) তিনি আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফের স্ত্রী (উম্মু হাবিবা) যায়নাব বিনত জাহশকে দেখেছেন, তাঁর রক্তস্রাব বন্ধ হত না, তিনি গোসল করে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) কা’কা’ ইবনু হাকিম (র) এবং যায়দ ইবনু আসলাম (র) তাঁরা দু’জনে সুমাইকে সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-এর নিকট পাঠালেন মুস্তাহাযা (স্ত্রীলোকে) গোসল কিভাবে করবে এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে। তিনি বললেন, এক যোহর হতে অপর যোহর পর্যন্ত গোসল করবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযূ করবে। আর যদি রক্ত তাঁর উপর প্রাধান্য পায় (অর্থাৎ অধিক হয়) তবে (রক্ত প্রবাহের স্থানে) কাপড় বাঁধবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা বলেছেন, মুস্তাহাযার জন্য একবার গোসল করা ব্যতীত অন্য কিছু ওয়াজিব নয়, অতঃপর প্রত্যেক (ফরয) নামাযের জন্য সে ওযূ করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হল মুস্তাহাযা নামায আদায়ের পর তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করা বৈধ, অনুরূপই নিফাসওয়ালীর (সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে।) হুকুম। রক্ত স্ত্রীলোকদিগকে (নামায, রোযা ও স্বামীর মিলন হতে) যতদিন বাধা দিয়ে রাখে তার শেষ সীমায় উপনীত হওয়ার পরও যদি সে রক্ত দেখতে পায় তবে তখন তার স্বামী তাঁর সাথে মিলিত হতে পারবে, কারণ সে স্ত্রীলোক মুস্তাহাযা স্ত্রীলোকের মত। মালিক (র) বলেন, হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা হতে মুস্তাহাযা সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণনা করেন, তদনুযায়ী এই বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত করেছি। এই বিষয়ে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই আমার মনঃপূত।

【30】

দুগ্ধপোষ্য বালকের প্রস্রাব সম্পর্কীয় আহকাম

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে একটি শিশুকে আনা হল। সে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি তলব করলেন এবং প্রস্রাব লাগা কাপড়ের উপর পানি ঢেলে দিলেন। (বুখারী ২২২, মুসলিম ১০১) -কায়স বিনত মিহসান (রা) দুগ্ধ ছাড়া অন্য খাদ্য এখনও গ্রহণ করেনি তাঁর এমন এক ছোট শিশুকে সাথে নিয়ে তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই শিশুকে আপন কোলে বসালেন। সে তাঁর কাপড়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি তলব করলেন এবং কাপড়ে পানি ছিটালেন, উহাকে ধুলেন না। (বুখারী ২২৩, মুসলিম ২৮৬)

【31】

দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা

ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) জনৈক বেদুইন মসজিদে প্রবেশ করল, সে প্রস্রাব করার উদ্দেশ্যে লজ্জাস্থান হতে (কাপড়) খুলল। লোকজন তাকে ধমকাতে লাগলেন, এতে লোকের স্বর উচ্চ হল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তাঁরা সেই লোকটিকে ছেড়ে দিলেন। সে প্রস্রাব করল। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক ডোল পানি আনতে বললেন। তারপর উক্ত স্থানে পানি ঢালা হল। (বুখারী ২২১, মুসলিম ২৮৪, উল্লেখ্য যে, ইমাম মালিক কর্তৃক হাদীসটি (মুরসাল) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখেছি। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল প্রস্রাব-পায়খানা হতে লজ্জাস্থান ধৌত করা সম্পর্কে কোন বর্ণনা এসেছে কি? তিনি বলিলেন, আমি জ্ঞাত হয়েছি, পূর্বের লোকদের (আনসারদের) মধ্য হতে কিছুসংখ্যক লোক মলত্যাগের পর মলদ্বার ধৌত করতেন, আর আমি প্রস্রাব করার পর লজ্জাস্থান ধৌত করা পছন্দ করি।

【32】

মিসওয়াকের আহকাম

ইবনু সাব্বাক (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম’আসমূহের কোন এক জুম’আয় ইরশাদ করেন ‘হে মুসলিম সম্প্রদায় এটা একটি দিবস, যাকে আল্লাহ ঈদস্বরূপ নির্দিষ্ট করেন। তাই তোমরা গোসল কর, আর যার নিকট সুগন্ধ দ্রব্য থাকে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য। (হাসান, ইবনু মাজাহ ১০৯৮, আল্লামা আলবানী সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৭০৭, গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন। ইমাম মালিক কর্তক বর্ণিত সনদে ===== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমার উম্মতের উপর কঠিন হওয়ার আশংকা না করিতাম, তবে তাহাদিগকে বাধ্যতামূলকভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী ৮৮৭, মুসলিম ২৫২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি উম্মতের উপর কঠিন হওয়ার আশংকা না করতেন, তবে তাদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। (হাদীসটি মারফু তবে উল্লেখিত সনদে নয় বরং অন্য সনদে)