28. বিবাহ

【1】

বিবাহ সম্পর্কিত অধ্যায়

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (সহীহ, বুখারী ৫১৪৪) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (বুখারী ৫১৪৪, মুসলিম ১৪১৩) আবদুর রহমান ইবনু কাসেম (র) তিনি বলতেন, “আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর ব্যাখ্যা এই কোন পুরুষ কর্তৃক কোন মহিলাকে তার স্বামীর ওফাতের ইদ্দত পালনের সময়ে এইরূপ বলা “তুমি আমার নিকট সম্মানিত”, “আমি তোমাকে পছন্দ করি”, “আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই তোমার জন্য মংগল ও জীবিকা প্রেরণ করবেন।” আরও এই জাতীয় উক্তি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【2】

কুমারী ও তালাকপ্রাপ্ত এবং বিধবা হতে বিবাহের সম্মতি নেয়ার বিধান

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আইয়্যেম [১] তার ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হকদার এবং কুমারীর বিবাহের ব্যাপারে তার অনুমতি নিতে হবে। চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি। (সহীহ, মুসলিম ১৪২১) মালিক (র) অভিভাবক বা উক্ত পরিবারের বুদ্ধিমান ব্যক্তি অথবা রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি ব্যতীত কোন মহিলাকে যেন বিবাহ দেওয়া না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ (র) ও সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) তাঁরা উভয়ে নিজেদের কুমারী কন্যাদেরকে তাদের অনুমতি না নিয়ে বিবাহ দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : কুমারীদের বিবাহের ব্যাপারে আমাদের নিকটও ইহা পছন্দনীয়। মালিক (র) বলেন : স্বামীর গৃহে না আসা (স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন না করা) এবং তার যোগ্যতার যাচাই না হওয়া পর্যন্ত কুমারী মেয়ে তার সম্পদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী হয় না। মালিক (র) কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র)-ও সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (র) তাঁরা সকলেই কুমারীর ব্যাপারে বলতেন, তার পিতা তার অনুমতি না চেয়ে তাকে বিবাহ দিলে সে বিবাহ প্রযোজ্য হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

মহর ও উপঢৌকন

সাহ্ল ইবনু সা’দ সায়িদী (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একজন মহিলা এসে বললঃ ইয়া রসূলুল্লাহ ! আমি আমার সত্তাকে আপনার জন্য হিবা (দান) করলাম। ইহা বলার পর সে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। অতঃপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল : ইয়া রসূলুল্লাহ ! আপনার প্রয়োজন না থাকলে এই মহিলাকে আমার নিকট বিবাহ দিন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এই মহিলাকে মোহরানা বাবদ দিবার মত তোমার কাছে কিছু আছে কি ? লোকটি বলল : আমার নিকট আমার এই তাহ্বন্দ্ (পরিচ্ছেদ-লুঙ্গী অথবা পায়জামা) ব্যতীত আর কিছু নেই। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এই তাহ্বন্দ্ উহাকে প্রদান করলে তোমার নিকট কোন পরিচ্ছেদ থাকবে না। তাই তুমি অন্য কিছু তালাশ কর। সে ব্যক্তি বলল : আমি কিছু পাব না। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি একটি লোহার আংটিও পাও কিনা দেখ। সে তালাশ করল। কিন্তু কিছুই পেল না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : কুরআনের কিছু অংশ তোমার জানা আছে কি? সে সূরার নাম উল্লেখ করে বলল : অমুক অমুক সূরা আমার কণ্ঠস্থ আছে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কুরআন শরীফের যে কয়টি সূরা তোমার কণ্ঠস্থ আছে সেইগুলির বিনিময়ে এই মহিলাকে আমি তোমার নিকট বিবাহ দিলাম। অর্থাৎ এ সূরাগুলো তুমি তাকে শিখিয়ে দিবে। (বুখারী ৫১৩৪, মুসলিম ১৪২৫) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করল যে মহিলার পাগলামী, কুষ্ঠ ও শ্বেত রোগ রয়েছে, উক্ত ব্যক্তি সে মহিলার সাথে সহবাস করলে সে মহিলা পূর্ণ মোহরানার হকদার হবে এবং উক্ত মহিলার অভিভাবকের উপর সেই মোহরানার অর্থ দণ্ড বর্তাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : যদি উক্ত মহিলার অভিভাবক, যে তাকে বিবাহ দিয়েছে তার পিতা বা ভাই অথবা এমন কোন আত্মীয় হয়, যে মহিলার রোগের খবর জানে, তবে তার স্বামীকে মোহরানার অর্থ ফেরৎ দিতে হবে। পক্ষান্তরে যদি উক্ত মহিলার অভিভাবক তার চাচাত ভাই অথবা তার আযাদকৃত গোলাম অথবা তার গোত্রের অন্য কোন লোক হয়, যার সম্পর্কে ধারণা করা যায় যে, সে তার রোগের খবর জানে না। তবে তার উপর অর্থদন্ড বর্তাবে না। উক্ত মহিলা মোহরানার নিম্নতম পরিমাণ অর্থ রেখে মোহরানার অবশিষ্ট অংশ স্বামীকে ফেরৎ দিবে। নাফি’ (র) উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর কন্যা আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর পুত্রের স্ত্রী ছিলেন এবং তার মাতা ছিলেন যাইদ ইবনু খাত্তাব (রা)-এর কন্যা। তাঁর সাথে তলব সহবাসের পূর্বে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হল। অথচ তাঁর মহর ধার্যকৃত ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর মাতা মোহরানা করলেন। আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) বললেন : তিনি মহর পাবেন না। যদি তাঁর পাওনা থাকত, তবে আমরা অবশ্যই দিতাম এবং তার হক আদায় করতে কোন প্রকার ক্রটি করতাম না। কন্যার মাতা এই কথা মানলেন না। যাইদ ইব্নু সাবিত (রা) তাদের উভয়ের মীমাংসাকারী নিযুক্ত হলেন। তিনি রায় দিলেন যে, কন্যা মোহরানা পাবেন না। তিনি স্বামীর সম্পদে উত্তরাধিকারিণী হবেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)- উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) তাঁর খিলাফতকালে জনৈক কর্মকর্তার নিকট এই মর্মে পত্র লিখলেন যে, বিবাহ প্রদানকারী তিনি পিতা হোক বা অন্য কেউ স্বামীর নিকট হতে কোন প্রকার উপঢৌকন বা সম্মানীর শর্ত করে থাকলে স্ত্রী দাবী করলে সে তা পাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) সেই মহিলা সম্পর্কে বলেন, যে মহিলাকে তার পিতা বিবাহ দিয়েছে এবং কন্যার মোহরানাতে কন্যার পিতা নিজের জন্য কিছু উপঢৌকনের শর্ত করেছে। তবে যেসব শর্তে বিবাহ সংঘটিত হয়েছে, সেই সব প্রাপ্য হবে কন্যার, যদি সে দাবি করে। আর যদি তার স্বামী সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দেয় তবে শর্তকৃত উপঢৌকন স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে না। মালিক (র) বলেন : যে ব্যক্তি তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্রকে বিবাহ দেয়, যে পুত্র কোন সম্পদের মালিক নয়। বিবাহ অনুষ্ঠানে যদি সে পুত্র সম্পদের মালিক না থাকে তবে মহর ওয়াজিব হবে তার পিতার উপর। আর যদি পুত্র সম্পদের মালিক থাকে তবে পিতা স্বয়ং মহর-এর দায়িত্ব গ্রহণ না করে থাকে তবে পুত্রের সম্পদ হতে মহর আদায় করতে হবে। কেননা পুত্র পিতার কর্তৃত্বাধীন থাকলে এবং পুত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে এই বিবাহ পুত্রের জন্য অপরিহার্য হবে। মালিক (র) বলেন : কোন ব্যক্তি সহবাসের পূর্বে তার কুমারী স্ত্রীকে তালাক দিল। কন্যার পিতা তার কন্যার অর্ধেক মহর মাফ করে দিল। কন্যার পিতা যে পরিমাণ মহর মাফ করে দিল সে পরিমাণ মহর না দেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হবে। মালিক (র) বলেন, উপরিউক্ত মাস‘আলার দলীল এই যে, আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেছে, إِلَّا أَنْ يَعْفُوْنَ “যদি না স্ত্রী মাফ করে দেয়।” এতে ঐ সকল স্ত্রীলোকের কথা বলা হয়েছে যাদের সাথে তাদের স্বামীগণ সহবাস করেছে। أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ. “অথবা যার হাতে বিবাহ বন্ধন রয়েছে সে মাফ করে দেয়।” [১] আয়াতে উল্লেখিত, “যার হাতে বিবাহ বন্ধন রয়েছে” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুমারী কন্যার পিতা এবং ক্রীতদাসীর মালিক যাদের হাতে বিবাহ বন্ধনের অধিকার রয়েছে।” মালিক (র) বলেন : এই বিষয়ে আমি এইরূপই শুনেছি এবং আমাদের মদীনাবাসীর আমলও অনুরূপ। মালিক (র) বলেন, ইহুদী অথবা খ্রিস্টান মহিলা ইহুদী অথবা খ্রিস্টান স্বামীর বিবাহ বন্ধনে থাকলে এবং ইহুদী অথবা খ্রিস্টান মহিলা স্বামীর সহিত সহবাসের পূর্বে মুসলমান হলে তবে মহর তাদের প্রাপ্য হবে না। মালিক (র) বলেন : দীনার-এর এক-চতুর্থাংশের কম পরিমাণ মহর-এর বিনিময়ে মহিলাকে বিবাহ দেওয়া আমি বৈধ মনে করি না। এই পরিমাণই হচ্ছে সর্বনিম্ন পরিমাণ যাতে চোরের হাত কাটা হয়।

【4】

পর্দা টাঙানো

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) ফায়সালা দিয়েছেন যে, কোন মহিলাকে কোন পুরুষ বিবাহ করলে এবং বিবাহের পর (স্বামী স্ত্রী গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর) পর্দা টাঙ্গান হলে তবে স্বামীর উপর মহর ওয়াজিব হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকট প্রবেশ করার পর পর্দা টাঙ্গানো হলে তার মহরানা ওয়াজিব হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলতেন : কোন ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর সহিত স্ত্রীর গৃহে মিলিত হলে সঙ্গম সম্পর্কে স্বামীর কথাই সত্য বলে গণ্য হবে। আর যদি স্ত্রী স্বামীর গৃহে আগমন করে এবং মিলিত হয় সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীর কথাই গ্রাহ্য করা হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : আমি মনে করি, উহা হচ্ছে স্পর্শ করার ব্যাপার স্বামী স্ত্রীর গৃহে তার সাথে মিলিত হলে তবে স্ত্রী যদি বলে, “সে আমাকে স্পর্শ (সহবাস) করেছে” আর স্বামী বলে, “আমি তাকে স্পর্শ করিনি।” এমতাবস্থায় স্বামীর দাবী বিশ্বাসযোগ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রী স্বামীর গৃহে মিলিত হয়, অতঃপর (সহবাসের ব্যাপারে) স্বামী দাবি করে, “আমি তাকে স্পর্শ করিনি।” স্ত্রী দাবি করে, “আমাকে সে স্পর্শ করেছে।” এই ক্ষেত্রে স্ত্রীর দাবি বিশ্বাসযোগ্য হবে।

【5】

আইয়্যেম ও বাকেরা-এর নিকট অবস্থান করা

আবদুর রহমান ইব্নু হারিস ইব্নু হিশাম মাখযুমী (র) রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উম্মুল মু’মিনীন) উম্মে সালামাহ্ (রা)-কে বিবাহ করেন এবং উম্মে সালামাই (রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রাত্রি যাপন করে) ফজর করলেন। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন : “তোমার স্বামীর নিকট তোমার মর্যাদা কম নয়। তুমি ইচ্ছা করলে আমি তোমার নিকট এক সপ্তাহ অবস্থান করব এবং অন্যান্য স্ত্রীর নিকটও এক এক সপ্তাহ করে অবস্থান করব। আর যদি তুমি ইচ্ছা কর আমি তোমার নিকট তিনদিন অবস্থান করব আর অন্যান্য স্ত্রীর নিকট পর্যায়ক্রমে অবস্থান করব। উম্মে সালামাহ্ (রা) বললেন : আমার নিকট তিনদিন অবস্থান করুন। (সহীহ, মুসলিম ১৪৬০) হুমাইদ তাবীল (র) আনাস ইব্নু মালিক (রা) বলতেন : (অবস্থানের হক) কুমারীর জন্য সাত দিন, আর অকুমারীর জন্য তিন দিন। মালিক (র) বলেন, মদীনাবাসীদের আমলও অনুরূপ। (বুখারী ৫২১৩, মুসলিম ১৪৬১) মালিক (র) বলেন : নতুন স্ত্রী ব্যতীত যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকে, তবে যে স্ত্রীকে (সদ্য) বিবাহ করেছে সেই স্ত্রীর (নির্দিষ্ট বিশেষ) দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে উভয়ের মধ্যে সমান সমান পালা ভাগ করবে। আর (সদ্য) বিবাহিতা স্ত্রীর নিকট যে কয়দিন অবস্থান করেছে পালা বণ্টনের মধ্যে সেই দিনগুলো হিসাব করা হবে না।

【6】

বিবাহে যে সকল শর্ত বৈধ নয়

মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র)-কে প্রশ্ন করা হল : কোন স্ত্রীলোক স্বামীর উপর এই শর্ত আরোপ করেছে যে, স্বামী তাকে নিজ শহর হতে বাহির করবে না। উত্তরে সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব বললেন : স্বামী ইচ্ছা করলে উহাকে তার শহরের বাইরে নিতে পারবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : এই ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত এই, যদি বিবাহ বন্ধন স্থির করার সময় পুরুষ মহিলার জন্য এই শর্ত মেনে নেয়, “আমি তোমার উপর অন্য বিবাহ করব না এবং কোন ক্রীতদাসীও রাখব না” এরূপ শর্ত অর্থহীন। কিন্তু এরূপ করলে স্ত্রীর তালাক এবং ক্রীতদাসীর আযাদ হওয়ার কথা যুক্ত করা হয়, তবে সে শর্ত স্বামীর উপর ওয়াযিব হবে এবং (শর্ত লঙ্ঘন করলে) তালাক ও আযাদী প্রযোজ্য হবে।

【7】

মুহাল্লিল [১] -এর বিবাহ এবং এই জাতীয় অন্যান্য বিবাহ

যুবাইর ইব্নু আবদুর রহমান ইব্নু যুবাইর (র) রিফা’আ ইবনু সিমওয়াল (র) তাঁর স্ত্রী তামীমা বিন্তে ওয়াহ্ব-কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে তিন তালাক দিলেন। অতঃপর তামীমা আবদুর রহমান ইব্ন যুবাইরকে বিবাহ করলেন। কিন্তু তাঁর সাথে মিলিত হতে বিপত্তি [২] ঘটল যদ্দরুন আবদুর রহমান তাঁকে স্পর্শ করতে পারল না। তাই তিনি তামীমাকে ত্যাগ করলেন। অতঃপর রিফা’আ তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করলেন। এই রিফা’আ তার প্রথম স্বামী যিনি তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন। রিফা’আ এই বিষয়টি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উত্থাপন করলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামীমাকে বিবাহ করতে তাঁকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, لَا تَحِلُّ لَكَ حَتَّى تَذُوقَ الْعُسَيْلَةَ ‘(অন্য স্বামী) সহবাস না করা পর্যন্ত তামীমা তোমার জন্য হালাল হবে না।” (বুখারী ৫৭৯২, মুসলিম ৪১৩৩) আয়িশা (রা) তাঁর নিকট প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। তারপর তাকে অন্য এক ব্যক্তি বিবাহ করেছে। কিন্তু সে তাকে স্পর্শ (সহবাস) করার পূর্বেই তালাক দিয়েছে। এই অবস্থাতে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে পুনরায় বিবাহ করা বৈধ হবে কি? আয়িশা (রা) বললেন : না, তাকে স্পর্শ (সহবাস) না করা পর্যন্ত বৈধ হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, কাশেম ইব্নু মুহাম্মাদ (র)-কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিল, এর পর অন্য এক ব্যক্তি তাকে বিবাহ করল। স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই সে ব্যক্তির মৃত্যু হল। এইরূপ অবস্থাতে তার প্রথম স্বামীর পক্ষে তাকে পুনরায় গ্রহণ করা হালাল হবে কি? কাশেম ইব্নু মুহাম্মাদ বললেন : প্রথম স্বামীর পক্ষে সেই স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা হালাল হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : পূর্ব স্বামী যে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে সেই স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হালাল করার উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি বিবাহ করবে তার সেই বিবাহ ভেঙ্গে দেয়া হবে। এবং (হালাল করার নিয়ত ছাড়া) নূতনভাবে দ্বিতীয়বার বিবাহ করবে। কিন্তু (উপরিউক্ত অবৈধ বিবাহে) যদি সে স্ত্রীর সহিত সহবাস করে থাকে তবে স্ত্রী মহর পাবে।

【8】

যে মহিলাকে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ করা বৈধ নয়

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে এবং কোন নারীকে তার খালার সাথে বিবাহে একত্র করা যাবে না [অর্থাৎ একই পুরুষ এইরূপ দুই নারীকে এক সঙ্গে দুই স্ত্রীরূপে গ্রহণ করবে না]। (বুখারী ৫১০৯, মুসলিম ১৪০৮) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) বলতেন : কোন নারীকে তার ফুফু কিংবা খালার সঙ্গে একই পুরুষের স্ত্রী হতে নিষেধ করতে হবে। আরো নিষেধ করা হবে, কোন ব্যক্তিকে এমন দাসীর সহিত সহবাস করা হতে, যে দাসীর গর্ভে অন্য পক্ষের সন্তান রয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【9】

আপন স্ত্রীর জননীর সাথে বিবাহ বৈধ না হওয়া

ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র) যাইদ ইব্নু সাবিত (রা)-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি একজন মহিলাকে বিবাহ করেছে। অতঃপর তার সাথে সহবাস করার পূর্বে উহাকে তালাক দিয়েছে। উক্ত ব্যক্তির জন্য সে মহিলার মাতাকে বিবাহ করা বৈধ হবে কি? উত্তরে যাইদ ইব্নু সাবিত (রা) বললেন : না, বৈধ হবে না। কারণ জননীর ব্যাপারে (কুরআনুল করীমে) কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং শর্ত রয়েছে স্ত্রীর সৎ কন্যাদের ব্যাপারে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) একাধিক শায়খ হতে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইব্নু মাসউদ (রা)-এর নিকট কুফাতে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হল, কোন মহিলার কন্যাকে বিবাহ করার পর উহার সহিত সহবাস না করা হলে, সেই কন্যার মাতাকে বিবাহ করা যাবে কিনা ? তিনি এই বিবাহের ব্যাপারে অনুমতি দিলেন। অতঃপর ইব্নু মাসঊদ (রা) যখন মদীনাতে আগমন করলেন তখন তিনি এই বিষয়ে (অন্যান্য সাহাবীর নিকট) জিজ্ঞেস করলেন। তাঁকে বলা হল যে, তিনি (কুফাতে) যেরূপ বলেছেন আসল ব্যাপার সেরূপ নয়। (শর্ত আরোপ করা হয়েছে কেবলমাত্র পোষ্য কন্যাদের ব্যাপারে।) তারপর ইব্নু মাসঊদ কুফাতে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং নিজ গৃহে না গিয়ে যে ব্যক্তিকে এরূপ ফতোয়া দিয়েছিলেন সে ব্যক্তির নিকট গমন করলেন। অতঃপর সে ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে, অতঃপর সেই মহিলার মাতাকেও বিবাহ করেছে এবং তার (স্ত্রীর মাতার) সহিত সহবাস করেছে, সেই ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে। সে স্ত্রী ও স্ত্রীর মাতা উভয়কে পরিত্যাগ করবে। উভয়ে তার জন্য সর্বদা হারাম হবে। ইহা তখন হবে যখন সে স্ত্রীর মাতার সহিত সহবাস করে। আর যদি সহবাস না করে থাকে তবে তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হইবে না। (কেবলমাত্র) স্ত্রীর মাতাকে পরিত্যাগ করবে। মালিক (র) বলেন : যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর সেই স্ত্রীর মাতাকেও বিবাহ করে এবং তার সাথে সহবাস করে, সে ব্যক্তির জন্য তার স্ত্রীর মাতা কখনো হালাল হবে না। আর হালাল হবে না তার ছেলের জন্য এবং হালাল হবে না তার পিতার জন্য। আর সে ব্যক্তির জন্য উহার কন্যাও হালাল হবে না এবং তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন : ব্যভিচার ইহার কোনটিকেই হারাম করবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন : وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ “তোমাদের স্ত্রীগণের মাতাগণও তোমাদের জন্য হারাম।” উক্ত আয়াতে বিবাহের কারণে (স্ত্রীর মাতাকে) হারাম করা হয়েছে। ব্যভিচারের দ্বারা হারাম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়নি। ফলে যে কোন বিবাহ হালাল পন্থায় অনুষ্ঠিত হবে এবং স্বামী স্ত্রীর সহিত মিলিত হবে। সেই বিবাহ হালাল বিবাহের মত গণ্য হবে। এটাই আমি শুনেছি। মদীনাবাসীদের নিকট ইহাই গৃহীত মত।

【10】

যে মহিলার সহিত অবৈধ পন্থায় সহবাস করা হয়েছে সে মহিলার মাতাকে বিবাহ করা

قَالَ مَالِك فِي الرَّجُلِ يَزْنِي بِالْمَرْأَةِ فَيُقَامُ عَلَيْهِ الْحَدُّ فِيهَا إِنَّهُ يَنْكِحُ ابْنَتَهَا وَيَنْكِحُهَا ابْنُهُ إِنْ شَاءَ وَذَلِكَ أَنَّهُ أَصَابَهَا حَرَامًا وَإِنَّمَا الَّذِي حَرَّمَ اللهُ مَا أُصِيبَ بِالْحَلَالِ أَوْ عَلَى وَجْهِ الشُّبْهَةِ بِالنِّكَاحِ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى { وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ مِنْ النِّسَاءِ } قَالَ مَالِك فَلَوْ أَنَّ رَجُلًا نَكَحَ امْرَأَةً فِي عِدَّتِهَا نِكَاحًا حَلَالًا فَأَصَابَهَا حَرُمَتْ عَلَى ابْنِهِ أَنْ يَتَزَوَّجَهَا وَذَلِكَ أَنَّ أَبَاهُ نَكَحَهَا عَلَى وَجْهِ الْحَلَالِ لَا يُقَامُ عَلَيْهِ فِيهِ الْحَدُّ وَيُلْحَقُ بِهِ الْوَلَدُ الَّذِي يُولَدُ فِيهِ بِأَبِيْهِ وَكَمَا حَرُمَتْ عَلَى ابْنِهِ أَنْ يَتَزَوَّجَهَا حِينَ تَزَوَّجَهَا أَبُوهُ فِي عِدَّتِهَا وَأَصَابَهَا فَكَذَلِكَ يَحْرُمُ عَلَى الْأَبِ ابْنَتُهَا إِذَا هُوَ أَصَابَ أُمَّهَا. মালিক (র) বলেন : যে ব্যক্তি কোন নারীর সহিত ব্যভিচার করেছে সেই কারণে সে ব্যক্তির উপর (শরীয়তের বিধান মতে) শাস্তিও প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই ব্যক্তি সেই মহিলার কন্যাকে বিবাহ করতে পারবে এবং সে ব্যক্তি যার সাথে ব্যভিচার করেছে ইচ্ছা করলে সে মহিলার সাথে তার পুত্রের বিবাহ দিতে পারবে। ইহা এইজন্য যে, উক্ত ব্যক্তি এই মহিলার সহিত হারাম পন্থায় সহবাস করেছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যে মহিলার কন্যার বিবাহকে হারাম করেছেন তা হল সেই মহিলা যার সাথে হালাল পন্থায় অথবা সন্দেহযুক্ত বিবাহ বন্ধনে মিলিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন : وَلَا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُمْ مِنْ النِّسَاءِ ‘যে সকল স্ত্রীলোককে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ বিবাহ করেছে তোমরা সে সকল স্ত্রীলোকদের বিবাহ করো না।” (সূরা: আন-নিসা, ২২) মালিক (র) বলেন : যদি কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে তার ইদ্দতের সময়ে বৈধ বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করল এবং তার সাথে সহবাসও করল, তবে তার ছেলের জন্য সে মহিলাকে বিবাহ করা হারাম হবে। ইহা এই জন্য যে, তার পিতা সেই মহিলাকে হালাল পন্থায় বিবাহ করেছে যাতে তার উপর কোন প্রকার শাস্তি প্রয়োগ করা হয় না। এই বিবাহে যে সন্তান জন্ম লাভ করবে সে সন্তানও তার পিতার বলে গণ্য হবে। তদ্রূপ পুত্রের জন্য উক্ত মহিলাকে বিবাহ করা হারাম, যে মহিলার সাথে তার পিতা উহার ইদ্দতের সময় বিবাহ করেছে ও তার সাথে সহবাস করেছে। তদ্রূপ পিতার জন্যও উক্ত স্ত্রীলোকের কন্যাকে বিবাহ করা হারাম যে কন্যার মাতার সহিত সে সহবাস করেছে।

【11】

বিভিন্ন অবৈধ বিবাহ

আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকাহ শিগারকে নিষিদ্ধ করেছেন। শিগার হচ্ছে : কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে এই শর্তে অন্যের নিকট বিবাহ দিচ্ছে যে, কন্যার জামাতা ব্যক্তিটি তার আপন কন্যাকে ঐ ব্যক্তির নিকট (যার কন্যাকে সে নিজে বিবাহ করেছে তার নিকট অর্থাৎ শ্বশুরের নিকট) বিবাহ দিবে। আর এতদুভয়ের মধ্যে কোন মহরও ধার্য করা হয়নি। (বুখারী ৫১১২, মুসলিম ১৪১৫) ইয়াযিদ ইব্নু জারিয়াহ আনসারী (রা) তিনি যখন অকুমারী (সাইয়্যিব) ছিলেন তখন তার পিতা তাকে বিবাহ দিলেন। তিনি এ বিবাহকে পছন্দ করলেন না। তাই তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে এলেন (এবং তাঁর অসন্তুষ্টির কথা জানালেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই বিবাহকে রদ করে দিলেন। (সহীহ, বুখারী ৫১৩৮) আবূ যুবাইর মাক্কী (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট এমন একটি বিবাহের ঘটনা উপস্থিত করা হল, যে বিবাহে একজন পুরুষ ও একজন নারী ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী ছিল না। তিনি বললেন : এটা গোপন বিবাহ। আমি একে জায়েয বলি না। যদি আমার এ সিদ্ধান্ত আমি পূর্বে প্রকাশ করতাম তবে আমি তোমাকে শাস্তি দিতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) তুলায়হা আসদিয়া রুশাইদ ছাক্বাফী (রা)-এর স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাঁকে তালাক দিলেন। তারপর তুলায়হা ইদ্দতের ভিতরে বিবাহ করলেন। এই কারণে উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাকে এবং তার স্বামীকে কয়েকটি চাবুক মারলেন এবং উভয়কে পৃথক করে দিলেন। তারপর উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন : যে স্ত্রীলোক ইদ্দতের ভিতর বিবাহ করিয়াছে, বিবাহকারী তার সেই স্বামী যদি তার সাথে সহবাস না করে থাকে তবে উভয়কে পৃথক করে দেয়া হবে। তারপর স্ত্রীলোকটি প্রথম স্বামীর পক্ষের অসম্পূর্ণ ইদ্দত পূর্ণ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী স্বাভাবিক নিয়মে বিবাহের প্রস্তাবকারীগণের মধ্যে একজন প্রস্তাবকারী হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি তার সাথে সহবাস করে থাকে তবে উভয়কে পৃথক করা হবে। তারপর প্রথম স্বামীর (পক্ষের) অবশিষ্ট ইদ্দত পূর্ণ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় স্বামীর ইদ্দত পূর্ণ করবে। আর তাঁরা (দ্বিতীয় স্বামী ও স্ত্রী) উভয়ে আর কখনো মিলিত হতে পারবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলেছেন : সেই স্ত্রীলোক মহর-এর হকদার হবে। কারণ তার সঙ্গে (বিবাহের মাধ্যমে) সহবাস করা হয়েছে। মালিক (র) বলেন : আমাদের সিদ্ধান্ত হল, স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, এমন স্বাধীন নারী চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। আর তার হায়েযের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় গর্ভধারণের আশংকা দেখা দিলে সে নারী সন্দেহমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করবে না।

【12】

আযাদ স্ত্রীর উপর দাসীকে বিবাহ করা

মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তির নিকট আযাদ স্ত্রী ছিল, এমতাবস্থায় সে দাসীকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করল। উত্তরে তারা উভয়ে বললেন : আযাদ স্ত্রী [১] ও দাসীকে স্ত্রী হিসাবে একত্র করাকে আমরা পছন্দ করি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) তিনি বলতেন, আযাদ স্ত্রী থাকতে তাহার অনুমতি ব্যতীত দাসী বিবাহ করা যাবে না, আযাদ স্ত্রী অনুমতি দিলে তিনি বন্টনে দুই-তৃতীয়াংশের অধিকার লাভ করবেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : কোন আযাদ ব্যক্তির উচিত নয় ক্রীত দাসীকে বিবাহ করা, যদি আযাদ মহিলাকে বিবাহ করার সামর্থ্য সে ব্যক্তির থাকে। আর সামর্থ্য না থাকলেও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা না হলে দাসী মহিলাকে বিবাহ করবে না। ইহা এইজন্য যে, কুরআনুল করীমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمْ الْمُؤْمِنَاتِ “তোমাদের মধ্যে কারো স্বাধীনা বিশ্বাসী নারী বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত বিশ্বাসী যুবতী বিবাহ করবে।” (সূরা: আন-নিসা, ২৫) আরও ইরশাদ করেছেন ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ مِنْكُمْ “তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে ইহা তাদের জন্য।” (সূরা: আন-নিসা, ২৫) মালিক (র) বলেন, ‘আনাতের অর্থ ব্যভিচার।

【13】

যে ব্যক্তি এমন মহিলার মালিক হয় পূর্বে যে মহিলা তার স্ত্রী ছিল এবং তাকে তালাক দিয়েছে এ সম্পর্কে হুকুম

যাইদ ইবনু সাবিত (রা) যে ব্যক্তি দাসী স্ত্রীকে (তার স্ত্রী থাকা অবস্থায়) তিন তালাক প্রদান করে, পরে সে উহাকে ক্রয় করে নেয়; সেই দাসী সে ব্যক্তির জন্য হালাল হবে না, যাবৎ সে দাসী (ইদ্দতের পর) অন্য স্বামীকে বিবাহ না করে। (অর্থাৎ প্রথমাবস্থায় সে অন্যের দাসী ও তার স্ত্রী ছিল। পরে সে তালাক দিয়ে উহাকে ক্রয় করে নেয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যাব ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র)-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি তার এক ক্রীতদাসের নিকট তার দাসীকে বিবাহ দিয়েছে। অতঃপর ক্রীতদাস (স্বামী) উহাকে তিন তালাক দিয়েছে। তারপর সেই দাসীকে তার কর্তা হিবা (দান) করলেন তালাকদাতা ক্রীতদাসের নিকট। তবে দাসীর স্বত্বাধিকারী হওয়ার কারণে এই দাসী সেই ক্রীতদাসের জন্য হালাল হবে কি? তাঁরা উভয়ে বললেন : না, যাবত স্ত্রীলোকটি অন্য স্বামী গ্রহণ না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইবনু শিহাব যুহরী (র)-কে প্রশ্ন করলেন এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যার অধীনে (বিবাহ সূত্রে) অন্যের ক্রীতদাসী ছিল, পরে সে উহাকে ক্রয় করেছে। (ক্রয় করার পূর্বে) সে উহাকে এক তালাক দিয়েছিল। (এখন তার জন্য উক্ত স্ত্রীলোকটি হালাল হবে কি?) ইবনু শিহাব (র) বললেন : (মিলকে ইয়ামীন) ক্রয়ের মাধ্যমে দাসদাসীর স্বত্বাধিকারী হওয়ার দ্বারা সেই দাসী উক্ত ব্যক্তির জন্য হালাল হবে তিন তালাক না দেওয়া পর্যন্ত। আর যদি দিয়ে থাকে তবে তার জন্য উক্ত দাসী মিলকে ইয়ামীনের দ্বারা হালাল হবে না, যাবৎ সে স্ত্রীলোকটি অন্য স্বামী গ্রহণ না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : যে ব্যক্তি (অন্যের) ক্রীতদাসীকে বিবাহ করে এবং তার সন্তান জন্মে। অতঃপর সেই দাসীকে সে ক্রয় করে। সন্তান হওয়ার দরুন এই ক্রীতদাসী তার উম্মে ওয়ালাদ [১] হবে না। কারণ সে অন্যের ক্রীতদাসী। তবে উহাকে ক্রয় করার পর তার (এই) মালিকের স্বত্বাধিকারে থাকাকালীন সেই ক্রীতদাসী সন্তান জন্ম দিলে উম্মে ওয়ালাদ হবে। মালিক (র) বলেন : যদি উক্ত ক্রীতদাসকে ক্রয় করে এবং সেই দাসী তার দ্বারা অন্তঃসত্বা হয়। অতঃপর তারই স্বত্বাধিকারে থাকাকালীন সে সন্তান জন্ম দেয় তবে আমাদের মতে গর্ভ ধারণের কারণে এই দাসী উম্মে ওয়ালাদ বলে গণ্য হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

【14】

ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে দুই বোনের সাথে মিলিত হওয়া এবং স্ত্রী ও তার কন্যার সাথে একত্রে মিলিত হওয়া হারাম

উবায়দুল্লাহ্ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উৎবা ইবনু মাসঊদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে প্রশ্ন করা হল এমন স্ত্রীলোক ও তার কন্যা সম্পর্কে যাদের উভয়কে ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে পর্যায়ক্রমে সহবাস করা হয়েছে। উমার (রা) বললেন : উভয়কে একত্র করে পর্যায়ক্রমে সহবাস করাকে আমি পছন্দ করি না। তিনি এইরূপ করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) কাবীসা ইবনু যুয়াইব (র) এক ব্যক্তি উসমান ইবনু আফ্ফান (রা)-কে এমন দুই বোন সম্পর্কে প্রশ্ন করল যে দুই বোনের ক্রয়সূত্রে (কেউ) মালিক হয়েছে। এমতাবস্থায় উভয়ের সঙ্গে সংগত হওয়া যাবে কি? উসমান (রা) বললেন : উভয়ের সঙ্গে সংগত হওয়া (কুরআনুল) এক আয়াত অনুযায়ী হালাল করা হয়েছে। আবার অন্য আয়াত অনুযায়ী একে হারাম করা হয়েছে। তাই আমি একে (দুই বোনের সঙ্গে একত্রে সংগত হওয়া) পছন্দ করি না। প্রশ্নকারী ব্যক্তি তাঁর নিকট হতে প্রস্থান করার পর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য একজন সাহাবীর সঙ্গে সাক্ষাত হল। তখন সে এই বিষয়ে তাঁর নিকট প্রশ্ন করল। তিনি বললেন : লোকের উপর যদি আমার অধিকার থাকত তবে কাউকেও এইরূপ করতে পাইলে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) বলেন : আমি মনে করি এই সাহাবী আলী ইবনু আবূ তালিব (রা)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : যুবাইর ইবনু আউয়াম (রা) হতেও অনুরূপ রেওয়ায়ত তাঁর নিকট পৌঁছেছে। মালিক (র) জনৈক ব্যক্তির নিকট এক ক্রীতদাসী আছে। সে উহার সহিত সংগত হয়ে থাকে। অতঃপর সেই দাসীর বোনের সহিত সংগত হতে ইচ্ছা করল। ইহা সে ব্যক্তির জন্য হালাল হবে না যাবৎ এর বোন তার জন্য হারাম না হয়; (পূর্ববর্তী বোনকে) অন্যের নিকট বিবাহ দেওয়ার ফলে অথবা আযাদ করে দিয়ে অথবা এই ধরনের অন্য কোন উপায়ে কিংবা এই দাসীকে তার ক্রীতদাস অথবা অন্য কারো নিকট বিবাহ দেওয়ার ফলে।

【15】

পিতার দাসীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ হওয়া

মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাঁর পুত্রকে একটি দাসী দান করলেন। এবং বলে দিলেন : তুমি একে স্পর্শ (সহবাস) করো না। কারণ আমি উহার পর্দা উন্মোচন করেছি (অর্থাৎ সহবাস করেছি)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু মুজাব্বার [১] (র) বলেন : মালিক ইবনু আব্দুল্লাহ (র) তাঁর এক পুত্রকে একটি দাসী দান করলেন এবং তিনি পুত্রকে বলে দিলেন, তুমি এর নিকট গমন (সহবাস) করো না, কারণ আমি উহার সাথে সংগত হওয়ার ইচ্ছা করেছি। সুতরাং আমি তোমাকে উহার সহিত মিলিত হওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রা) আবূ নাহ্শল ইব্নু আসওয়াদ, কাসেম ইব্নু মুহাম্মাদ (র)-কে বললেন : আমার এক দাসীকে চাঁদনী রাতে পরিচ্ছেদ খোলা অবস্থায় দেখেছি। সংগত হওয়ার উদ্দেশ্যে কোন পুরুষ তার স্ত্রীর নিকট যেভাবে বসে আমিও উহার নিকট সেইরূপ বসলাম। সে দাসী বলল : আমি ঋতুমতী। এটা শুনে আমি তার সাথে সংগত হলাম না। এখন আমি উহাকে সহবাসের জন্য আমার পুত্রকে দান করতে চাই কিন্তু কাসেম তাঁকে এইরূপ করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবরাহীম ইব্নু আবি ‘আবলা (র) আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ান তাঁর এক সঙ্গীকে একটি দাসী দান করলেন। তারপর তাঁর নিকট উহার অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি বললেন [১] : আমি উহা আমার পুত্রকে দান করতে ইচ্ছা করেছি। সে উহার সহিত এমন এমন (অর্থাৎ সহবাস) করবে। আবদুল মালিক বললেন : মারওয়ান তোমার তুলনায় অধিক সাবধানী ছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রকে একটি দাসী দান করলেন। অতঃপর বলে দিলেন : তুমি এর নিকট গমন (সহবাস) করো না। কারণ, আমি উহার হাটু অনাবৃত অবস্থায় দেখেছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【16】

কিতাবীগণের দাসীকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ

قَالَ مَالِك لَا يَحِلُّ نِكَاحُ أَمَةٍ يَهُودِيَّةٍ وَلَا نَصْرَانِيَّةٍ لِأَنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ فِي كِتَابِهِ { وَالْمُحْصَنَاتُ مِنْ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنْ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ } فَهُنَّ الْحَرَائِرُ مِنْ الْيَهُودِيَّاتِ وَالنَّصْرَانِيَّاتِ وَقَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى { وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمْ الْمُؤْمِنَاتِ } فَهُنَّ الْإِمَاءُ الْمُؤْمِنَاتُ قَالَ مَالِك فَإِنَّمَا أَحَلَّ اللهُ فِيمَا نُرَى نِكَاحَ الْإِمَاءِ الْمُؤْمِنَاتِ وَلَمْ يُحْلِلْ نِكَاحَ إِمَاءِ أَهْلِ الْكِتَابِ الْيَهُودِيَّةِ وَالنَّصْرَانِيَّةِ قَالَ مَالِك وَالْأَمَةُ الْيَهُودِيَّةُ وَالنَّصْرَانِيَّةُ تَحِلُّ لِسَيِّدِهَا بِمِلْكِ الْيَمِيْنِ، ১৯৮৪-وَلَا يَحِلُّ وَطْءُ أَمَةٍ مَجُوسِيَّةٍ بِمِلْكِ الْيَمِيْنِ. মালিক (র) বলেনঃ ইয়াহুদী এবং খ্রীষ্টান ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা হালাল নহে। কারণ আল্লাহ তাআলা কিতাবে ইরশাদ করিয়াছেনঃ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنْ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنْ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ “এবং মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পুর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে, তাহাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল।” আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেনঃ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلًا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمْ الْمُؤْمِنَاتِ “তোমাদের মধ্যে কাহারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিবাহের সামর্থ না থাকিলে তোমরা তোমাদের অধিকারভূক্ত ঈমানদার নারী বিবাহ করিবে। (৪ : ২৫) ইহারা হইলেন মুমিনা ক্রীতদাসিগণ। মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে মুমিন ক্রীতদাসিগণকেই আল্লাহ তা’আলা হালাল করিয়াছেন। যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে (ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান) তাহাদের ক্রীতদাসিগণকে (আল্লাহ তা’আলা) হালাল করেন নাই। মালিক (র) বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান ক্রীতদাসিগণের খরিদসূত্রে মালিক হলে তবে মালিকদের জন্য উহারা হালাল হবে। মালিক (র) বলেন, ক্রয়সূত্রে মালিক হলেও অগ্নিপূজারী দাসীর সাথে সহবাস করা হালাল নয়।

【17】

সাধবী [১] -এর বর্ণনা

ইবনু শিহাব (র) সা‘ঈদ ইবনু মাসায়্যাব (র) বলেন : কুরআনের আয়াতে উল্লিখিত الْمُحْصَنَاتُ مِنْ النِّسَاءِ সাধ্বী রমণিগণ “এরা হলেন ঐ সকল নারী যাদের স্বামী আছে।” এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইব্নু শিহাব (র) ও কাসেম ইব্নু মুহাম্মাদ (র) তারা উভয়ে বলতেন : স্বাধীন ব্যক্তি কোন দাসীকে বিবাহ করলে, অতঃপর উহার সহিত সহবাস করলে এর দ্বারা সে মুহসান বলে গণ্য হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমি যে সকল বিজ্ঞজনের সাক্ষাত পেয়েছি তারা বলতেন : ক্রীতদাসী স্বাধীন ব্যক্তিকে মুহসান [১] করে যদি সে উহাকে বিবাহ করে এবং তার সাথে সংগত হয়। মালিক (র) বলেন : ক্রীতদাস স্বাধীন মহিলাকে মুহসান বানায় যদি সে উহাকে বিবাহ করে এবং তার সাথে সংগত হয়। কিন্তু স্বাধীনা নারী ক্রীতদাসকে তদ্রূপ করে না। কিন্তু ক্রীতদাস তার স্বামী যদি তাকে আযাদ করে দেয় এবং স্বাধীন হওয়ার পর স্বামী যদি তাকে আযাদ করে দেয় এবং স্বাধীন হওয়ার পর স্বামী হিসাবে সে তার সাথে সহবাস করে তবে সে মুহসান হবে। আর যদি মুক্ত হওয়ার পূর্বে সে স্ত্রীকে পৃথক করে দেয় তবে সে মুহসান হবে না যাবৎ মুক্ত হওয়ার পর উহাকে বিবাহ না করে এবং উহার সহিত সংগত না হয়। মালিক (র) বলেন : যে ক্রীতদাসী স্বাধীন ব্যক্তির স্ত্রীরূপে রয়েছে তার মুক্ত হওয়ার পূর্বে স্বামী তাকে তালাক দিলে উক্ত বিবাহ সে ক্রীতদাসীকে মুহসানা করবে না। অবশ্য মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে বিবাহ করে তার সাথে সংগত হলে সে মুহসানা (সধবা) হবে। মালিক (র) বলেন : ক্রীতদাসী যদি আযাদ ব্যক্তির স্ত্রী হয় এবং তার নিকট থাকাকালীন তৎকর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়ার পুর্বে সে দাসত্ব হতে মুক্ত হয় তবে সে মুহসানার (সধবা) অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ব্যাপারে শর্ত এই যে, উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী থাকা অবস্থায় সে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং এর পর তার স্বামী তার সাথে সহবাস করে। মালিক (র) বলেন : খ্রিস্টান ও ইহুদী স্বাধীনা নারী এবং মুসলিম ক্রীতদাসী এই তিনজনের একজনকে যদি কোন আযাদ মুসলিম ব্যক্তি বিবাহ করে এবং তার সাথে সংগত হয় তবে সে স্ত্রী লোক মুহসানা (সাধবা) হবে।

【18】

মুত‘আ [১] বিবাহ

আলী ইব্নু আবূ তালিব (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর দিবসে মুত’আ বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি গৃহপালিত গাধার গোশ্ত আহার করতেও নিষেধ করেছেন। (বুখারী ৪২১৬, মুসলিম ১৪০৭) খাওলা বিন্তে হাকিম (রা) রবি’আ ইব্নু উমাইয়া (রা) এক মুওয়াল্লাদ [১] নারীকে মুত’আ বিবাহ করেন এবং সে নারী গর্ভবতী হয়। উমার ইব্নু খাত্তাব এটা শুনে ঘাবড়ে গেলেন এবং আপন চাদর টানতে টানতে বের হলেন। অতঃপর তিনি বললেন : মুত’আ নিষিদ্ধ। লোকদের মধ্যে যদি এ বিষয়ে আমি পূর্বে ঘোষণা করতাম তবে এই (মুত‘আর কারণে) ব্যভিচারীর প্রতি রজম (প্রস্তর নিক্ষেপ) করতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【19】

ক্রীতদাসের বিবাহ

মালিক (র) তিনি রবী‘আ ইব্নু আবদুর রহমান (র)-কে বলতে শুনেছেন, ক্রীতদাস চারটি বিবাহ করতে পারে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : এ বিষয়ে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই উত্তম। মালিক (র) বলেন : ক্রীতদাসের বিবাহ এবং মুহাল্লিল-এর বিবাহের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ ক্রীতদাসের মালিক যদি বিবাহের অনুমতি দেয় তবে তার বিবাহ বৈধ হবে। আর যদি মালিক তার বিবাহের অনুমতি না দেয় তবে তাদের উভয়কে (স্বামী ও স্ত্রী) পৃথক করে দেয়া হবে। পক্ষান্তরে মুহাল্লিল ও তার স্ত্রীকে সর্বাবস্থায় পৃথক করে দেওয়া হবে যদি সে হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে থাকে। মালিক (র) বলেনঃ কোন ক্রীতদাসের স্ত্রী যদি তার মালিক হয়, অথবা স্বামী স্ত্রীর মালিক হয় এমতাবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীর অথবা স্ত্রী তার স্বামীর মালিক হওয়ার ফলে তালাক ছাড়াই তাদের বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি তারা উভয়ে নূতন বিবাহের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে তবে তাদের পূর্ববর্তী পৃথকীকরণ তালাক বলে গণ্য হবে না। মালিক (র) বলেন : ক্রীতদাসের স্ত্রী যদি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দেয় এমতাবস্থায় যে, সে তার মালিক হয়েছে, তখন স্ত্রী (বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে) ইদ্দতের মধ্যে রয়েছে, তবে তারা উভয়ে নূতন বিবাহ ছাড়া একে অপরের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে না। (অর্থাৎ নূতনভাবে বিবাহ করতে হবে)।

【20】

মুশরিক স্বামীর পূর্বে তার স্ত্রী মুসলমান হলে তাদের বিবাহ সম্পর্কিত হুকুম

মালিক (র) ইবনু শিহাব (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে স্ত্রীলোকেরা তাঁদের নিজের শহরে থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন। তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করতে পারতেন না। তাঁরা মুসলমান হতেন অথচ তাঁদের স্বামীগণ কাফির রয়েছে। এইরূপ স্ত্রীলোকের মধ্যে ছিলেন ওলীদ ইবনু মুগীরার কন্যা। তিনি সাফওয়ান ইবনু উমাইয়ার স্ত্রী ছিলেন, মক্কা বিজয়ের সময় তিনি মুসলমান হলেন। আর তাঁর স্বামী সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া ইসলাম কবুল না করে পলায়ন করলেন। সাফওয়ানকে নিরাপত্তা প্রদানের প্রতীক স্বরূপ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র চাদরসহ সফওয়ানের চাচাতো ভাই ওহাব ইবনু উমায়রকে প্রেরণ করলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করলেন এবং তাঁর নিকট আসতে বললেন, যদি সে খুশীতে মুসলমান হয়, তবে উহা গ্রহণ করা হবে, নতুবা তাকে দুই মাস সময় দেয়া হবে। সাফওয়ান রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাদর নিয়ে আগমন করল এবং লোক সম্মুখে চিৎকার করে বলল, হে মুহাম্মদ, এই যে ওহাব ইবনে উমায়র, সে আপনার চাদর নিয়ে আমার কাছে গিয়েছিল এবং সে বলেছে, আপনি আমাকে আপনার নিকট আসতে আহ্বান জানিয়েছেন, আমি যদি খুশীতে মুসলমান হই, উহা গ্রহণ করা হবে। নতুবা আপনি আমাকে দুই মাস সময় দিবেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আবূ ওহাব; (ইহা সাফওয়ানের কুনিয়াত), তুমি (উটের পিঠ হতে) অবতরণ কর। সাফওয়ান বলল, না নামিব না। আল্লাহর কসম, যাবৎ আপনি ব্যাখ্যা না করবেন (ইহা সত্য কিনা)। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : বরং তোমাকে চার মাস সময় দেয়া হবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের হাওয়াযিন গোত্রের দিকে (অভিযান) বের হলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ানের দিকে লোক প্রেরণ করলেন তার নিকট যে সকল আসবাব ও যুদ্ধাস্ত্র ছিল সেগুলি (আরিয়ত) ধারস্বরূপ দেয়ার জন্য। সাফওয়ান বললেন, বাধ্যতামূলক না স্বেচ্ছায়? তিনি [রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, (বাধ্যতামূলক নয়) বরং খুশীতে। সে তার নিকট যা ছিল আসবাব ও যুদ্ধাস্ত্র রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিল। অতঃপর (মক্কা হতে) হুনায়ন-এর দিকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বাহির হল। সে তখনও কাফির। তারপর হুনায়ন ও তায়েফ-এর অভিযানে শরীক হল, সে তখনও কাফির আর তার স্ত্রী মুসলমান। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ও তার স্ত্রীকে পৃথক করেননি। পরে সাফওয়ান মুসলমান হলেন। তার স্ত্রীকে তাহার কাছে রাখা হল সেই (আগের) বিবাহে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইবনু শিহাব (র) তিনি বলেছে : সাফওয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও তার স্ত্রীর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মধ্যে ব্যবধান ছিল অন্ততঃ দুই মাসের। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইব্নু শিহাব (র) বলেন : কোন স্ত্রীলোক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করলে এবং তার স্বামী কাফের অবস্থায় দারুল কুফর থাকলে তবে তাঁর হিজরত তাঁর ও তাঁর স্বামীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করবে। তবে যদি তাঁর স্বামী ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে হিজরত করে। (এমতাবস্থায় স্ত্রী তারই থাকবে)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) হারিস ইবনু হিশামের কন্যা উম্মে হাকীম ইকরাম ইবনু আবূ জাহলের স্ত্রী ছিল। উম্মে হাকীম মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম ধর্ম কবূল করেন। তার স্বামী ইকরামা ইবনু আবূ জাহল ইসলাম গ্রহণ না করে পলায়ন করে ইয়ামনের দিকে চলে যায়। উম্মে হাকীম ইয়ামনে গিয়ে তার স্বামীর নিকট উপস্থিত হন এবং তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানান। ইকরামা ইসলাম কবূল করেন এবং মক্কা বিজয়ের বৎসর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে আনন্দে এত দ্রুত উঠলেন যে, তাঁর পবিত্র দেহ তখন চাদরে আবৃত রইল না। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইকরামার বায়‘আত গ্রহণ করলেন এবং স্বামী স্ত্রী উভয়ের পূর্ব বিবাহ বহাল রাখলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : স্ত্রীর পূর্বে কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে অতঃপর স্ত্রীকে ইসলামের দিকে আহ্বান করলে সে যদি মুসলমান না হয় তবে উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করিতেছেন : وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ . তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখ না। (সূরা: মুমতাহিনাহ, ১০)

【21】

ওয়ালিমা

আনাস ইবনু মালিক (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ (রা) উপস্থিত হলেন। তাঁর (দেহে ও বস্ত্রে) হলুদ বর্ণের সুগন্ধ দ্রব্যের চিহ্ন ছিল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আউফ তাকে জানালেন যে, তিনি জনৈক আনসার মেয়েলোককে বিবাহ করেছেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন : তুমি উহাকে কত মহর প্রদান করেছে ? তিনি বললেন : এক খেজুরের বীচি পরিমাণ স্বর্ণ। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ওয়ালীমা [১] কর একটি বকরী দিয়ে হলেও। (বুখারী ৫১৫৩, মুসলিম ১৪২৭) ইয়াহইয়া (রা) আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এমনও) ওয়ালীমা করতেন যে, যাতে রুটি ও গোশ্ত থাকত না। (সহীহ, ইবনু মাজাহ ১৯১০, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে ইবনু মাজাহ] তবে ইমাম কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কাউকে ওয়ালীমায় দাওয়াত করা হলে সে যেন উহাতে অংশগ্রহণ করে। (বুখারী ৫১৭৩, মুসলিম ১৪২৯) আ’রাজ (রা) আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন : সর্বাপেক্ষা মন্দ আহার হচ্ছে সেই ওয়ালীমার আহার, যেই ওয়ালীমাতে ধনী লোকদের দাওয়াত দেয়া হয় এবং মিসকিনদেরকে দাওয়াত হতে বাদ দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করে না, সে অবশ্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল। (বুখারী ৫১৭৭, মুসলিম ১৪৩২) ইসহাক ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবি তালহা (র) আনাস ইবনু মালিক (রা)-কে বলতে শুনেছেন জনৈক দরজী এক প্রকারের খাদ্য প্রস্তুত করে উহা আহারের জন্য রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত করলেন। আনাস (রা) বলেন : সেই দাওয়াতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম। তাঁর নিকট পেশ করা হল যবের রুটি ও ঝোল, যাতে কদু ছিল। আনাস বলেন : আমি পেয়ালার আশপাশ হতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কদু অনুসন্ধান করতে দেখলাম। সেই দিন হতে আমি সর্বদা কদুকে পছন্দ করি। (বুখারী ৫৩৭৯, মুসলিম ২০৪১)

【22】

বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়

যায়দ ইবনু আসলাম (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করলে অথবা দাসী ক্রয় করলে তবে উহার ললাট (কপালের উপরের চুল) ধরে বরকতের দু’আ করবে। আর উট ক্রয় করলে তবে উহার কোহান (উটের পিঠের কুঁজ)-এর উপরিভাগ ধরে অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় চাইবে। (হাসান, আবূ দাঊদ ২১৬০, ইবনু মাজাহ ১৯১৮, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন [সহীহ আল জামে ৩৬০] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবূয-যুবায়র মক্কী (র) এক ব্যক্তি অন্য এক লোকের নিকট ভগ্নীর বিবাহের পয়গাম দিয়েছে। সেই ব্যক্তির নিকট কেউ উল্লেখ করল যে, উক্ত স্ত্রীলোক ব্যভিচার করেছে। উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট এই সংবাদ পৌঁছালে তিনি সেই লোককে মারলেন অথবা মারতে উদ্যত হলেন। অতঃপর বললেন : তোমার এই খবর বলার কি প্রয়োজন ছিল? (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) রবী’আ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ এবং উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) তাঁরা উভয়ে বলতেন : যে ব্যক্তির চারজন স্ত্রী রয়েছে এবং সে উহাদের একজনকে তালাক আল-বাত্তা (তিন তালাক) প্রদান করেছে। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে বিবাহ করতে পারবে। (তালাকপ্রাপ্তা) স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) রবী’আ ইবনু আবদুর রহমান (র) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ এবং উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) তাঁরা উভয়ে ওয়ালীদ ইবনু আবদুল মালিকের নিকট যে বৎসর তিনি মদীনাতে আগমন করেছিলেন সেই বৎসর অনুরূপ ফতওয়া দিয়েছেন। তবে কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ এই প্রসঙ্গে স্ত্রীকে (একত্রে না দিয়ে) বিভিন্ন মজলিসে তিন তালাক দেওয়ার কথা তাঁর নিকট উল্লেখ করেছেন। সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) তিন (প্রকার) বস্তুতে বিদ্রূপ নাই । (১) নিকাহ, (২) তালাক, (৩) মুক্তি প্রদন। (সহীহ মারফু, হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন, ইমাম আবূ দাঊদ মারফু সনদে বর্ণনা করেন ২১৯৪, তিরমিযী ১১৮৪, ইবনু মাজাহ ২০৩৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে ৩০২৭]) রাফি’ ইবনু খাদীজ (র) তিনি মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা আনসারীর কন্যাকে বিবাহ করেন। সে তাঁর স্ত্রীরূপে থাকতেই বৃদ্ধা হয়। রাফি’ সেই বৃদ্ধা স্ত্রীর বর্তমানে আর একজন যুবতীকে বিবাহ করেন এবং পূর্ব স্ত্রী অপেক্ষা যুবতী স্ত্রীর দিকে অধিক ঝুকে পড়েন। বয়োপ্রাপ্তা স্ত্রী তাঁর নিকট তালাক কামনা করেন আল্লাহর কসম দিয়ে। তিনি স্ত্রীকে এক তালাক দিলেন। অতঃপর তাকে অবকাশ দিয়ে রাখলেন। যখন ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার সময় সন্নিকট হল তার দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন। কিন্তু তিনি পুনরায় যুবতী স্ত্রীর দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন। ফলে প্রথম স্ত্রী কসম দিয়ে তালাক কামনা করেন। আবার তাকে এক তালাক দিলেন। ইদ্দত যাওয়ার পূর্বে আবার প্রত্যাবর্তন করলেন (অর্থাৎ পুনরায় স্ত্রীর ন্যায় গ্রহণ করলেন)। অতঃপর পুনরায় যুবতী স্ত্রীর দিকে বেশি ঝুকে পড়েন। ফলে প্রথমা স্ত্রী আল্লাহর কসম দিয়ে আবার তালাক কামনা করে। তখন তিনি বললেন : চিন্তা করে দেখ, এখন মাত্র আর এক তালাক অবশিষ্ট আছে। যুবতী স্ত্রীর দিকে মনোযোগ বেশি থাকবে তা তুমি লক্ষ্য করেছো। এই অবস্থার উপর ইচ্ছা করলে থাকতে পার। আর ইচ্ছা হলে বিবাহ বিচ্ছেদও করতে পার। স্ত্রী উত্তর দিল : আমাকে এভাবেই থাকতে দাও; ফলে তাকে এইরূপে রাখা হয়। রাফি উহাতে কোন ক্ষতি মনে করতেন না। যখন সে (স্ত্রী) স্বেচ্ছায় এই অবস্থায় থাকতে রাজী হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)