35. শুফ্’আ

【1】

কোন্ জিনিসের মধ্যে শুফ’‘আ চলে

সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) ও আবূ সালাম ইব্নু আবদুর রহমান (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ জিনিসের মধ্যে শুফ‘আর ফায়সালা করেছেন যা শরীকদের মধ্যে বন্টন হয়নি। সুতরাং যখন তাদের মধ্যে সীমা নির্ধারিত হয়ে যাবে তখন আর তাতে শুফ্‘আ চলবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই মাসআলাতে কোন মতবিরোধ নেই এবং আমার মতও এটাই। বর্ণণাকারী সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল শুফ‘আ [১] সম্বন্ধে, উহার কি কোন নিয়ম আছে? উত্তরে তিনি বললেন, শুফ‘আ ঘর ও জমির মধ্যে হয় এবং একমাত্র শরীকগণই তা পায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (র) হতেও এইরূপ বর্ণিত আছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন যদি কোন ব্যক্তি কয়েকজন একযোগে মালিক এমন কোন জমির এক অংশ কোন জন্তু অথবা গোলামের পরিবর্তে কিংবা এই ধরনের কোন মালের (যেমন জিনিসপত্র) পরিবর্তে খরিদ করে, অতঃপর শরীকদার নিজ শুফ‘আ নেয়ার জন্য আসে কিন্তু এই সময়ে ঐ গোলাম অথবা দাসী মারা গিয়ে থাকে এবং তাদের মূল্য কত ছিল কেউ জানে না। কিন্তু খরিদ্দার বলে যে, তার মূল্য একশত দীনার ছিল এবং শুফ‘আ দাবিদার পঞ্চাশ দীনার বলে, তবে খরিদ্দার বলে যে, তার মূল্য একশত দীনার ছিল এবং শুফ‘আ দাবিদার পঞ্চাশ দীনার বলে, তবে খরিদ্দার হতে এই ব্যাপারে কসম (শপথ) গ্রহণ করা হবে যে, উহার মূল্য একশত দীনার ছিল। তার পর শুফ‘আ দাবিদারের ইচ্ছা হলে উহা গ্রহণও করতে পারে অথবা দাবি ছেড়েও দিতে পারবে। কিন্তু যদি শুফ‘আর দাবিদারের ইচ্ছা হলে উহা গ্রহণও করতে পারে অথবা দাবি ছেড়েও দিতে পারবে। কিন্তু যদি শুফ‘আর দাবিদার তার দাবির সপক্ষে প্রমাণ করে যে, উক্ত দাস দাসীর মূল্য খরিদ্দার যা বলে তা হতে কম ছিল, তবে তার কথা মানতে হবে। মালিক (র) বলেন যদি কেউ একযোগে কয়েক ব্যক্তি মালিক এমন ঘর অথবা জমির নিজ অংশ দান করে দেয় কিন্তু যাকে দান করা হয়েছে সে দানকারীকে তার মূল্য দিয়ে দেয়, তবে শুফ‘আর দাবি করার অধিকার শরীকদারদের থাকবে এবং গ্রহীতাকে টাকা-পয়সা ফেরত দিয়ে তা নিবার ইখতিয়ার শরীকদারদের থাকবে, দীনার অথবা দিরহাম যা দিয়ে হোক মূল্য শোধ করবে। মালিক (র) বলেন যে, যদি কেউ তার সঙ্গে অন্যেরাও মালিক এমন ঘর অথবা জমি হেবা (দান) করে এবং এখনও কোন বিনিময় গ্রহণ করেনি এবং বিনিময় তলবও করেনি, এমন সময় শরীকদার যদি চায় যে, উহার বিনিময় দিয়ে দখল করবে তবে উহার বিনিময় প্রদান না করে দখল করা জায়েয হবে না। যদি বিনিময় দিয়ে দেয় তবে উহা শুফ‘আ দাবিকারীর জন্য বৈধ হবে এই শর্তে যে, পূর্ণ মূল্য সে দিয়ে দিবে ও দখল নিবে। মালিক (র) বলেন যে, শুফ‘আর দাবিদার যদি জমির বেচাকেনার সময় অনুপস্থিত থাকে তবে তার শুফ‘আর অধিকার বাতিল হবে না, যদিও সে অনেক দিন গায়েব থাকে। আর গায়েব থাকার কোন সীমা আমাদের নিকট নাই যে, এতদিন গায়েব থাকলে শুফ‘আর অধিকার থাকবে না। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তির কয়েকজন সন্তান ওয়ারিসসূত্রে কোন জমির মালিক হল, তার পর তাদের কারো সন্তান জন্ম হওয়ার পর সে মারা গেল এবং তার এক সন্তান মৃত পিতার প্রাপ্য অংশ বিক্রয় করতে চায়, তবে বিক্রেতার ভাই তার চাচার চাইতে শুফ‘আর অধিকার বেশি রাখে। মালিক (র) বলেন যে, আমাদের নিকটও হুকুম অনুরূপ। মালিক (র) বলেন যদি শুফ‘আর শরীকদারদের মধ্যে কয়েকজন দাবি করে তবে বিক্রীত সম্পদ হতে প্রত্যেক হিস্যা (অংশ) অনুযায়ী নিবে। যদি কম হয় কমই নেবে আর বেশি হলে বেশিই নেবে। এটা তখনই করবে যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে, অথবা একজন তার সঙ্গীর নিকট হতে তার হিস্যা খরিদ করে কোন শরীকদারকে বলবে যে, আমি আমার হিস্যা পরিমাণ শুফ‘আ নিব। অতঃপর খরিদ্দার বলবে যে, তুমি যদি চাও তবে সবটুকুরই শুফ‘আ নিয়ে যাও, আমি তোমাকে সবই দিয়ে দিচ্ছি। কিংবা শুফ‘আর দাবিও পরিহার কর। এই অবস্থায় শুফ‘আর দাবিদারের উচিত পূর্ণ হিস্যা খরিদ্দার হতে খরিদ করে নেয় অথবা শুফ‘আর দাবি পরিত্যাগ করা। যদি পূর্ণ নিতে চায় তবে সে বেশি হকদার, অন্যথায় সে হকদার হবে না। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি কিছু জমি খরিদ করল, অতঃপর উহা আবাদ করল ও তাতে ঘর নির্মাণ করল অথবা কূপ খনন করল। তার পর এক ব্যক্তি এসে হক দাবি করল এবং শুফ‘আর মাধ্যমে উহা নেয়ার ইচ্ছা করল, তবে তার শুফ‘আ দাবির কোন অধিকার নেই যতক্ষণ বানানো ঘর অথবা কূপ খননের মূল্য আদায় না করে। যদি তার মূল্য আদায় করে দেয় তবে তার শুফ‘আর দাবি গ্রাহ্য হবে। অন্যথায় তার কোন শুফ‘আর দাবি চলবে না। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি শরীকের ঘর অথবা জমি বিক্রয় করে জানতে পারল যে, শুফ‘আর দাবিদার শুফ‘আ দাবি করবে। তাই ক্রেতা মূল্যের ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নিতে চাইল এবং বিক্রেতাও তাই করল। তাতে শুফ‘আর দাবিদারের শুফ‘আ নষ্ট হবে না। এই ব্যাপারে শুফ‘আর দাবিদারই শুফ‘আর অধিকারী, যে মূল্যে বিক্রয় করেছে তা আদায় করার পর। মালিক (র) বলেন যদি কেউ শরীকী ঘর অথবা জমির এক অংশ ও ১টি জন্তু এবং কিছু জিনিসপত্র একই বৈঠকে আফদে (দাম) খরিদ করে, অতঃপর শুফ‘আ দাবিকারীর শুফ‘আ দাবি করে, শুধু ঘরের অথবা জমিতে, কিন্তু খরিদ্দার বলে যে, আমি যা খরিদ করেছি সকলই নিয়ে যাও, কারণ আমি সবই খরিদ করেছি। তখন শুফ‘আর দাবিদার জমি ও ঘরেরই শুফ‘আ নিবে, তার হিস্যা যতদূর আসে। তখন ঐ পূর্বের মূল্যের হিসাবে প্রত্যেকটি জিনিসের মূল্য ধরতে হবে পৃথকভাবে। অতঃপর শুফ‘আ নিয়ে যাবে ঐ খরিদকৃত আসল দামের হিসাবে, যা হয় তা দিয়ে। জন্তু ও জিনিসপত্র কোনটাই নেবে না, কিন্তু সে যদি ইচ্ছা করে সবগুলো নিয়ে যায় তবে উহাও জায়েয। মালিক (র) বলেন শরীকী জমির এক অংশ কেউ বিক্রয় করল, অতঃপর যাদের শুফ‘আর অধিকার আছে তাদের কেউ খরিদ্দারের পক্ষে দাবি প্রত্যাখ্যান করল কিন্তু তাদের আর কেউ তা দাবি করে বসল, এই অবস্থায় খরিদ্দারের পূর্ণ অংশ তার নিতে হবে। এটা হবে না যে, সে তার ভাগের অংশই নিবে এবং বাকী অংশ ছেড়ে দিবে। মালিক (র) বলেন যদি অনেকেই মালিক এমন একটি ঘরের কোন এক শরীক তার অংশ বিক্রয় করল। একজন শরীক ছাড়া আর সকলেই অনুপস্থিত। অতঃপর সেই উপস্থিত শরীককে এই মর্মে জিজ্ঞেস করা হবে যে, শুফ‘আর দাবিতে আপনি এটা নিয়ে যান অথবা ছেড়ে দেন; সে বলল, আমি আমার অংশ নিচ্ছি এবং অন্য শরীকদের অংশ ছেড়ে দিচ্ছি, তারা হাযির হওয়ার পর যদি তাদের অংশ তারা নেয় তবে তো ভাল, না হয় আমি সবটুকু নিব। এই পন্থা জায়েয নয়, হয়ত সে পূর্ণ হিস্যা নেবে, না হয় পূর্ণ দাবি ছেড়ে দেবে। অতঃপর যদি অন্যান্য শরীকগণ আসে তবে তার নিকট হতে তারা অংশ নিবে অথবা ছেড়ে দেবে। আর উক্ত ব্যক্তি যদি তা গ্রহণই না করে তবে তার আর শুফ‘আর অধিকার থাকবে না।

【2】

যে সকল জিনিসের মধ্যে শুফ‘আ চলে না

উসমান ইব্নু আফ্ফান (রা) জমির সীমানা নির্ধারিত হয়ে গেলে তখন আর উহাতে শুফ‘আ চলে না এবং কূপের মধ্যেও শুফ‘আ চলে না, আর চলবে না নর খেজুর গাছেও। মালিক (র) বলেন যে, আমাদের নিকট এই হুকুমই গ্রহণযোগ্য। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন পথের মধ্যে শুফ‘আ চলবে না, তা বন্টনের যোগ্য হোক অথবা বন্টনের যোগ্য নাই হোক। মালিক (র) বলেন আমাদের কাছে ঘরের বারান্দায়ও শুফ‘আ চলবে না, তা বন্টনের উপযোগী হোক বা না হোক। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ অনেকে মালিক এমন কোন জমির কোন অংশ খেয়ারের শর্তে খরিদ করে এবং বিক্রেতার শরীকদারগণ ইচ্ছা করল যে, তাদের শরীকদার যা বিক্রয় করেছে তা শুফ‘আর মাধ্যমে নিয়ে নিবে, খরিদ্দারের ইখতিয়ার পূর্ণ হবার পূর্বে এইরূপ ক্ষেত্রে তাদের জন্য শুফ‘আ জায়েয হবে না। যতক্ষণ খরিদ্দারের খরিদ পাকাপোক্ত না হয়, অতঃপর যদি তার খরিদ পাকাপোক্ত হয় তবেই তাদের জন্য শুফ‘আ জায়েয হবে। মালিক (র) বলেন যদি এক ব্যক্তি একটি জমি খরিদ করে অনেক দিন পর্যন্ত নিজ দখলে রাখে। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে তার মীরাসের দাবি করে শুফ‘আর অধিকার দাবি করল। যদি তার মীরাসের হক প্রমাণিত হয় তবে তার জন্য শুফ‘আর দাবি থাকবে। এই সময় যা উৎপন্ন হয়েছে তা খরিদ্দারের থাকবে, যে দিন হতে দ্বিতীয় জনের হক প্রতিষ্ঠিত হয় সেই দিন পর্যন্ত। কেননা যদি জমি বন্যায় নষ্ট হয়ে যেতে তবে সে তারই অধীনে থাকব। আর যদি অনেক দিন চলে যায় অথবা সাক্ষী কিংবা বিক্রেতা ও ক্রেতা মারা যায় অথবা তারা জীবিতই, কিন্তু বেচাকেনার মূল্য অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার কারণে ভুলে গিয়েছে এই অবস্থায় তার শুফ‘আ চলবে না। কিন্তু তার (মীরাসের) হক পাবে যা প্রমাণিত হয়। আর যদি ব্যাপার অন্য রকম হয় যেমন বেশি দিন অতিবাহিত হয়নি কিন্তু বিক্রেতা বিক্রয়কে এইজন্য গোপন করিতেছে যেন প্রতিবেশী শুফ‘আর দাবি না করতে পারে; তবে আসল জমির দাম যাচাই করে দেখতে হবে, তার দাম কত। অতঃপর জমি যদি আরো বেড়ে থাকে- যেমন ঘরবাড়ি বাগ-বাগিচা তবে তার মূল্য আদায় করে প্রতিবেশী শুফ‘আর দাবিতে নিয়ে নিবে। মালিক (র) বলেন জীবিতদের সম্পত্তির নয়, মৃত ব্যক্তিদের সম্পত্তিতেও শুফ‘আ চলবে। কিন্তু যদি অংশীদাররা অংশ বন্টন করে নেয় এবং বিক্রয় করে ফেলে তবে আর শুফ‘আ চলবে না। মালিক (র) বলেন আমার মতে গোলাম, বাঁদী, উট, গরু, বকরী ও জীব-জন্তুতে এবং কাপড়-চোপড় ও কূপে যার আশেপাশে জমি নাই শুফ‘আর দাবি চলবে না, কেননা শুফ‘আ তো ঐখানেই হয়ে থাকে যেখানে সীমানা নির্ধারিত করা যায়। সুতরাং যেখানে ভাগবাটোয়ারা চলে না সেখানে শুফ‘আও চলবে না। মালিক (র) বলেন যদি কেউ এমন জমি খরিদ করে যেখানে মানুষের শুফ‘আর অধিকার চলে, তবে তার উচিত সে যেন সমস্ত প্রতিবেশীকে বিচারকের নিকট নিয়ে যায় এবং বলে যে, হয়তো তোমরা নিয়ে যাও অথবা শুফ‘আর দাবি পরিত্যাগ কর। আর সে যদি সকল প্রতিবেশীকে নিয়ে যায়নি কিন্তু বেচাকেনার বিষয় (সময় মতো) সকল প্রতিবেশীই খবর পেয়েছিল এবং এতদসত্ত্বেও অনেক দিন পর্যন্ত শুফ‘আর দাবি করেনি, অতঃপর শুফ‘আর দাবি করলে তাদের দাবি অগ্রাহ্য হবে।