42. শরাবের বর্ণনা অধ্যায়

【1】

মদ্য পানের শাস্তি

সায়িব ইব্নু ইয়াযীদ (র) তাঁকে সংবাদ দেয়া হয়েছে, উমার (রা) তাদের কাছে এসে বললেন, আমি অমুকের (উমার-তনয় উবায়দুল্লাহর) মুখ হতে মদের গন্ধ পেলাম। সে বলে, আমি আঙ্গুরের রস পান করেছি। আমি বললাম, যদি তাতে মাদকতা থাকে তা হলে শাস্তি দিব। অতঃপর উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) তাকে পূর্ণ শাস্তি প্রদান করলেন। [১] (ইমাম বুখারী মুয়াল্লাক সনদে বর্ণনা করেন ৭/১৩৯, এবং আল্লামা হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) সাওর ইবনু যাইদ (র) উমার (রা) মদ্য পানের শাস্তির ব্যাপারে সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। আলী (রা) বললেন, আমার মতে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত লাগান যেতে পারে। কেননা মানুষ মদ্য পান করে মাতাল হবে আর মাতাল হলে অকথ্য কথা বলবে। অতঃপর উমার (রা) মদ্য পানের শাস্তি আশি বেত্রাঘাত নির্ধারিত করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী ইব্নু শিহাবকে প্রশ্ন করা হল, যদি কোন দাস মদ্য পান করে, তবে তার শাস্তি কি ? তিনি বললেন, আমি জানি মদ্য পানে দাসের শাস্তি স্বাধীন লোকের অর্ধেক। আর উমার ইব্নু খাত্তাব, উসমান ইব্নু আফফান ও আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) মদ্য পানের জন্য নিজেদের দাসদেরকে অর্ধেক শাস্তি দিয়েছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব বলতেন, হদ্দ বা নির্ধারিত শাস্তি ব্যতীত এমন কোন গুনাহ নেই যা আল্লাহ্ ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে, যে মদের মধ্যে মাদকতা রয়েছে, তা পানকারী মাতাল হোক বা না হোক তার জন্য শাস্তি আবশ্যক।

【2】

যে পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করা নিষেধ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন যুদ্ধে ভাষণ দান করছিলেন। আমিও তা শ্রবণের নিমিত্তে সেই দিকে রওয়ানা হলাম। কিন্তু আমার তথায় উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই তিনি ভাষণ শেষ করে ফেললেন। আমি অন্যান্য লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন? তারা বলল, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাউয়ের খোল এবং বাহিরে আলকাতরা মাখা পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ, মুসলিম ১৯৯৭, মুলত হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছে) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাউয়ের খোল ও বহিরাংশে আলকাতরা মাখা পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ৫৫৮৭, মুসলিম ১৯৯২)

【3】

যে দুই বস্তু মিলিয়ে নাবীয বানান নিষিদ্ধ

আতা ইব্নু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁচা ও পাকা খেজুর একত্রে ভিজিয়ে রাখতে এবং আঙ্গুর ও খেজুর একত্রে ভিজিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা এতে সত্বর মাদকতা আসার সন্দেহ রয়েছে। (বুখারী ৫৬০, মুসলিম ১৯৮৬, জাবের (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবূ কাতাদা আনসারী রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুর ও খেজুর মিলিয়ে নাবীয তৈরি করে পান করতে নিষেধ করেছেন এবং কাঁচা ও পাকা খেজুর মিলিয়ে নাবীয তৈরী করে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ৫৬০২, মুসলিম ১৯৮৮) মালিক (র) বলেন, আমাদের এতদঞ্চলের আলিমগণ ইহাকে মাকরূহ্ মনে করেন। কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা নিষেধ করেছেন।

【4】

মদ্য পান হারাম হওয়া

উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মধু দ্বারা প্রস্তুত নাবীয সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, যে পানীয় মাদকতা আনয়ন করে তাই হারাম। (বুখারী ৫৫৮৬, মুসলিম ২০০১) আতা ইব্নু ইয়াসার (রা) গুবায়রা (জোয়ার হতে প্রস্তুত) শরাব সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, উহাতে কোন উপকারিতা নেই। তিনি উহা পান করতে নিষেধ করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ্য পান করবে, অতঃপর তাওবা না করবে, সেই ব্যক্তি আখেরাতের শরাব হতে বঞ্চিত থাকবে। (বুখারী ৫৫৭৫, মুসলিম ২০০৩)

【5】

মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে

যায়দ ইব্নু আসলাম (রা) ইব্নু ও‘য়ালা মিসরী তিনি আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রা)-কে আঙ্গুরের রস সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলেন। ইব্নু আব্বাস (রা) বললেন, এক ব্যক্তি উপটৌকনস্বরূপ এক মুশক মদ্য রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করেছিলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জান না, আল্লাহ্ ইহা হারাম করেছেন? সে ব্যক্তি বলল, আমার তো তা জানা ছিল না। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি চুপি চুপি কি যেন তার কানে বলল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বললে? সে বলল, আমি তাকে উহা বিক্রয় করতে বললাম। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যিনি উহা পান করা হারাম করেছেন, তিনি উহা বিক্রয় করাও হারাম করেছেন। এতদশ্রবণে ঐ ব্যক্তি মুশকের মুখ খুলে দিল আর সমস্ত শরাব বয়ে গেল। (সহীহ, মুসলিম ১৫৪৩) আনাস ইব্নু মালিক (র) তিনি বলেন, আমি আবূ উবায়দা ইব্নু জাররাহ, আবূ তালহা আনসারী ও উবাই ইব্নু কা‘বকে তাজা খেজুরের শরাব পান করাতাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি এসে বলল, শরাব হারাম হয়ে গিয়েছে। এটা শুনে আবূ তালহা বললেন, আনাস, উঠে গিয়ে ঐ সমস্ত ঘটি ভেঙ্গে ফেল। আমি উঠে মিহরাস [১] (দ্বারা সমস্ত ঘটি ভেঙ্গে ফেললাম। (বুখারী ৫৫৮২, মুসলিম ১৯৮০) মাহমুদ ইব্নু লবীদ আনসারী (র) উমার (রা) যখন শাম দেশে আগমন করলেন, তখন শামের বাসিন্দার মধ্যে কেউ তাঁর নিকট শাম দেশের মহামারী ও আবহাওয়া সম্বন্ধে অভিযোগ করল এবং বলল, এখানে শরাব পান করা ছাড়া স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না। উমার (রা) বললেন তোমরা মধু পান কর। তারা বলল, মধুও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে না। এমন সময় এক ব্যক্তি বলল, আমি আপনার জন্য এমন এমনভাবে শরাব তৈরি করব যাতে মাদকতা থাকবে না। তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তারা উহাকে এমনভাবে বানাল যে, উহার দুই-তৃতীয়াংশ শুকিয়ে এক-তৃতীয়াংশ বাকী রইল। অতঃপর উহা উমার (রা)-এর কাছে নিয়ে এল। তিনি তাতে আঙ্গুল দিয়ে দেখলেন, উহা চপ চপ করছে! তিনি বললেন, এই রস তো উটের রসের মতোই হল। তিনি উহা পান করবার অনুমতি দান করলেন। উবাদাহ ইব্নু সামিত (রা) বলেন, আল্লাহর কসম আপনি তো তা হালাল করে দিলেন। উমার (রা) বললেন, না, আল্লাহ্‌র কসম! হে আল্লাহ, আমি কখনও ঐ বস্তু হালাল করিনি, যা আপনি হারাম করেছেন, আর না এমন বস্তু হারাম করেছি, যা আপনি হালাল করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) তাঁর নিকট ইরাকের লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আমরা খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান ক্রয় করে থাকি। আর উহার শরাব বানিয়ে বিক্রয় করে থাকি। আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) বললেন, আমি আল্লাহকে ও তাঁর ফিরিশতাগণকে আর যে জিন ও মানুষ শুনছে, তাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তোমাদেরকে উহা বিক্রয় করার, খরিদ করার, প্রস্তুত করার, পান করার ও কাউকে পান করাবার অনুমতি দিচ্ছি না। কেননা শরাব নাপাক ও শয়তানী কাজ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)