45. বিভিন্ন প্রকারের মাস‘আলা সম্বলিত অধ্যায়

【1】

মদীনা ও মদীনাবাসীদের জন্য দু‘আ

আনাস ইব্নু মালিক (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ! মদীনাবাসীদের মাপযন্ত্রে বরকত দান কর। আর তাদের সা’ ও মুদে বরকত দাও। (বুখারী ২১৩০, মুসলিম ১৩৬৮) আবূ হুরায়রা (রা) যখন কেউ বাগান হতে প্রথম ফল আনত, তখন তা প্রথমত রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে নিয়ে আসত। তিনি উহা নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ্, আমাদের ফলে বরকত দান করুন। আমাদের শহরে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা আপনার বন্ধু ও নবী ইব্রাহীম (আ) মক্কার জন্য দু’আ করেছিলেন। আমি আপনার বান্দা ও নাবী হিসেবে আপনার কাছে মদীনার জন্য দু‘আ করছি। দু‘আর শেষে তিনি সকলের চাইতে ছোট যে ছেলেকে তথায় পেতেন, তাকে ডেকে উহা তাকে দিয়ে দিতেন। (সহীহ, মুসলিম ১৩৭৩)

【2】

মদীনায় অবস্থান এবং তথা হতে প্রস্থান

যুবাইর ইব্নুল আওয়াম (রা)-এর মুক্ত দাস ইউহান্নাস ফিতনার সময়ে আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় তাঁর এক দাসী এসে সালাম দিয়ে তাকে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান, আমি মদীনা ছেড়ে চলে যেতে চাই। কেননা এইখানে অভাব-অনটনে কষ্ট পাচ্ছি। ইব্নু উমার (রা) তাকে বললেন, হতভাগ্য! বস। আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেছিলেন, যে ব্যক্তি মদীনার অভাব-অনটন ও কষ্ট সহ্য করবে, আমি কিয়ামতে তার সাক্ষী হব অথবা তার জন্য সুপারিশ করব। (সহীহ, মুসলিম ১৩৭৭) জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ (রা) এক গ্রাম্য ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তার ইসলাম গ্রহণের বায়‘আত করল, মদীনায় তার জ্বর আসতে লাগল। সে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলতে লাগল, হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনি আমার বায়‘আত ভঙ্গ করে দিন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অস্বীকার করলেন। সে পুনরায় এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র নবী, আমার বায়‘আত ভঙ্গ করে দিন। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্বীকার করা সত্ত্বেও সে মদীনা হতে বের হয়ে পড়ল। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মদীনা লোহার ভাট্টির [১] মতো, উহা ময়লা বাহির করে খাঁটি সোনা বানিয়ে দেয়। (বুখারী ১৮৮৩, মুসলিম ১৩৮৩) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে আমাকে এমন লোকালয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে যা অন্যান্য লোকালয়কে খেয়ে ফেলবে। লোকে তাকে ইয়াস্রাব বলে থাকে আর উহা হল মদীনা। উহা মন্দ লোকদের বের করে দেয়, যেমন লোহার ভাট্টি লোহার ময়লা বের করে দেয়। [১] (বুখারী ১৮৭১, মুসলিম ১৩৮২) উরওয়া ইব্নু যুবাইর (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন, যদি কোন ব্যক্তি মদীনার প্রতি ঘৃণা করে তথা হতে বের হয়ে পড়ে, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা উহাতে তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ব্যক্তি দান করে থাকেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সুফিয়ান ইব্নু আবূ যুহায়র (রা) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন ইয়ামান বিজিত হবে। তথা হতে লোক সফর করে মদীনায় আগমন করবে। তারা নিজেদের বাড়িঘর এবং যা তাদের ইচ্ছা হবে মদীনা হতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা তা বুঝতে পারত! শাম বিজিত হবে, তথা হতে কিছু লোক মদীনায় আগমন করবে এবং নিজেদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের কথা মান্য করব্‌ তাদেরকে মদীনা হতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা তা বুঝতে পারত! ইরাক বিজিত হবে। তথা হতে কিছু সংখ্যক লোক সফর করে মদীনা আগমন করবে এবং তাদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের কথা মান্য করবে তাদেরকে মদীনা হতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা জানতে পারত! (ইয়ামেন, শাম ও ইরাক বিজিত হওয়ার পর অনেকে তথাকার সুন্দর আবহাওয়া ও জিনিসপত্র সস্তা দেখে নিজেদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের সহিত যেতে ইচ্ছা করেছিল তাদেরকে মদীনা হতে নিয়ে গেল এবং তথায় যেয়ে বসতি ঠিক করল। অতঃপর নানা ফিত্না-ফাসাদে আক্রান্ত হল।) (সহীহ, বুখারী ১৮৭৫, মুসলিম ১৩৮৮) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতি উত্তম অবস্থায় মদীনাকে ত্যাগ করা হবে, এমন কি তথায় কুকুর ও ব্যাঘ্র আসবে এবং মসজিদের খুঁটি ও মিম্বরে পেশাব করবে। সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! ঐ সময় মদীনার ফলমূল কে ভোগ করবে? তিনি বললেন, ক্ষুধার্ত জন্তুরা ও পশু পাখিরা। [১] (বুখারী ১৮৭৪, মুসলিম ১৩৮৯) মালিক (র) উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) যখন মদীনা হতে যাচ্ছিলেন, তখন মদীনার প্রতি লক্ষ্য করে স্বীয় দাস মুযাহিমকে বলছিলেন, হয়ত তুমি ও আমি যে সমস্ত লোকের মধ্যে গণ্য হব, যাদেরকে মদীনা বের করে দিবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

মদীনা শরীফের হরম হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা

আনাস ইব্নু মালিক (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হল তখন তিনি বললেন, এই পাহাড় আমাদের ভালবাসে। হে আল্লাহ্! ইব্রাহীম (আ) মক্কাকে হারাম করেছেন, আমি মদীনার উভয় কঙ্করময়ের মধ্যস্থলকে হারাম করিতেছি। (বুখারী ৩৩৬৭, মুসলিম ১৩৬৫) আবূ হুরায়রা (রা) তিনি বলতেন যদি আমি মদীনায় হরিণ চরিতে দেখি, তা হলে উহাকে কখনও তাড়া করব না। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনার উভয় দিকের মধ্যবর্তী অংশ হেরেম। (বুখারী ১৮৭৩, মুসলিম ১৩৭২) আবূ আয়্যূব আনসারী তিনি দেখলেন, কয়েকটি ছেলে একটি শিয়ালকে ঘিরে রেখেছে। তিনি ছেলেদেরকে তাড়িয়ে শিয়ালটিকে ছাড়িয়ে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আবূ আয়্যূব ইহাও বলেছেন, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হেরেমেও কি এইরূপ কার্য হচ্ছে ? এক ব্যক্তি তিনি বলেন, আমার কাছে যায়দ ইব্নু সাবিত (রা) আগমন করলেন, তখন আমি আসওয়াফে (মদীনার একটি গ্রাম) একটি পাখি ধরেছিলাম। তিনি আমার হাত হতে উহা নিয়ে ছেড়ে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【4】

মদীনার মহামারী সম্বন্ধে বর্ণনা

উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা) যখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এলেন, তখন আবূ বাকর ও বেলালের (রা) জ্বর আসতে শুরু করল। আয়িশা (রা) বলেন, আমি উভয়ের কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আব্বা আপনার অবস্থা কিরূপ ? হে বেলাল! আপনার অবস্থা কিরূপ ? আয়িশা (রা) বলেন, আবূ বাক্রের যখন জ্বর আসত, তিনি বলতেন, كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ “প্রত্যেকে নিজের পরিজনের মধ্যে প্রভাত করে আর মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও তার অতি নিকটে থাকে” আর যখন বেলালের জ্বর হত, তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে এই কবিতা পড়তেন, أَلَا لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجِنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ হায় যদি আমি জানতে পারতাম যে, কখনও আমি এক রাত্রির জন্যও মক্কার উপত্যকায় রাত্রি যাপন করতে পারব। আর আমার চতুষ্পার্শ্বে ইয্খির ও জলিল নামক ঘাস থাকবে। আর পুনরায় কখনও মাজিন্না কুয়ার নিকট যেতে পারব, আর পুনরায় কখনও শামা ও তফীল পাহাড় আমার দৃষ্টিগোচর হবে। আয়িশা (রা) বলেন, আমি ইহা শুনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি দু‘আ করলেন, اللهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ হে আল্লাহ্! আমাদের মনে মদীনার মুহব্বত এইরূপ করে দিন, যেরূপ মক্কার মুহব্বত রয়েছে, বরং উহা হতেও প্রগাঢ় ভালবাসা। আর মদীনাকে স্বাস্থ্যকর করে দিন। উহার সা‘ ও মুদ্দে বরকত দিন, উহার জ্বর অন্যত্র নিয়ে যান এবং উহার জ্বরকে জুহফাতে সরিয়ে দিন। [১] আয়িশা (রা) আমির ইব্নু ফুহাইরা বলতেন, আমি মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুকে দেখেছি, যারা ভীরু তাদের মৃত্যু উপর হতে অবতরণ করে। (বুখারী ৩৯২৬, মুসলিম ১৩৭৫, আর ইয়াহইয়াহ কর্তৃক আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত অংশটুকু, মুনকাতে) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনার দ্বারে ফিরিশতা মোতায়েন রয়েছে। উহাতে কখনও মহামারী দেখা দিবে না আর দাজ্জালও প্রবেশ করবে না। (বুখারী ১৮৮০, মুসলিম ১৩৭৯)

【5】

মদীনা হতে ইহুদীদের বহিষ্কার

উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ কথা যা বলেছেন তাতে ছিল, قَاتَلَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ لَا يَبْقَيَنَّ دِينَانِ بِأَرْضِ الْعَرَبِ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা ইহুদী ও নাসারাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা নিজেদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আরবের মাটিতে দুই ধর্ম একত্র হতে পারবে না। (বুখারী ৪৩৬, ৪৩৭, মুসলিম ৫২৯, ইমাম মুসলিম হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) (তারা কবরকে কেবলা বানিয়ে ঐদিকে নামায আদায় করত অর্থাৎ কবরকে সিজদা করত। ইসলামে এটা হারাম। প্রথম চার খলীফার যুগে আরব হতে সমস্ত কাফিরকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আজ পর্যন্ত তথায় কেবল ইসলাম ধর্মই বিরাজমান) ইবনু শিহাব রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনায় দুই ধর্ম একত্র হতে পারে না। (বুখারী ৩১৬৮, ইমাম মুসলিম ৫২৯, হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)\ মালিক (র) বলেন, ইব্নু শিহাব (রা) বলেছেন, উমার (রা) এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছেন যে, ইহা সত্যই রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, অতঃপর তিনি তথা ইহুদীদেরকে খায়বর হতে বের করে দিয়েছিলেন। মালিক (র) উমার (রা) ফিদক ও নাজরান হতেও ইহুদী বিতাড়িত করেছিলেন। খায়বরের ইহুদীদের না কোন জায়গা ছিল, না কোন বাগান ছিল। ফিদকের ইহুদীদের স্থাবর সম্পত্তির অর্ধেক ছিল এবং অর্ধেক ফল ছিল। কেননা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে এ মর্মে চুক্তি করে ছিলেন। উমার (রা) অর্ধেক ফল ও স্থাবর সম্পত্তির দাম নির্ধারিত করে উহা তাদেরকে দিয়ে দেন এবং তাদেরকে তথা হতে বহিষ্কার করেছিলেন।

【6】

মদীনার ফযীলত

উরওয়া ইব্নু যুবায়র (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাহাড় দেখে বলেছেন, এই পাহাড় আমাদের এবং আমরা এই পাহাড়কে ভালবাসি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইব্নু কাসিম (র) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা)-এর মুক্ত দাস আসলাম বলেছেন, তিনি মক্কার রাস্তায় আবদুল্লাহ ইব্নু আয়াশ আল-মাখযুরীর সহিত সাক্ষাৎ করতে যেয়ে তাঁর সম্মুখে নাবীয দেখতে পেলেন। আসলাম বললেন, এই পানীয়কে উমার (রা) খুব পছন্দ করেন। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু আয়াশ (রা) একটি বড় পেয়ালা ভরে উমার (রা)-এর সম্মুখে রাখলেন। তিনি উহা উঠিয়ে পান করতে ইচ্ছা করলেন। অতঃপর মাথা তুলে বললেন, ‘এই পানীয় খুব ভাল’ এটা বলে তিনি উহা পান করলেন। অতঃপর যে তাঁর ডানদিকে ছিল তাকে দান করলেন। যখন আবদুল্লাহ্ ইব্নু আয়াশ প্রস্থান করতে উদ্যত হলেন তখন উমার (রা) তাঁকে ডেকে বললেন, তুমি কি বল যে, মদীনা হতে মক্কা ভাল। আবদুল্লাহ্ বললেন, মক্কায় আল্লাহ্‌র হেরেম এবং উহা শান্তির স্থান আর সেখানে তাঁর ঘর রয়েছে। উমার (রা) বললেন, আমি আল্লাহ্‌র ঘর ও হেরেম সম্বন্ধে কিছু বলিতেছি না। উমার (রা) আবারও আবদুল্লাহকে তদ্রুপ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঐ একই উত্তর দিলেন। উমার (রা) তখন আবার বললেন, আল্লাহ্‌র ‘হেরেম’ এবং তাঁর গৃহ সম্বন্ধে কিছুই বলিতেছি না। অতঃপর তিনি চলে গেলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【7】

মহামারীর বর্ণনা

আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রা) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) শাম দেশের দিকে যাত্রা করলেন। যখন তিনি সুরগ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন বড় বড় সেনাপতি তাঁর সাথে মিলিত হলেন, যেমন আবূ উবায়দা ইব্নুল জাররাহ ও তাঁর সঙ্গিগণ। ঐ সেনাপতিগণ বললেন, আজকাল শাম দেশে মহামারী বিস্তার লাভ করেছে। ইবনু আব্বাস বললেন, নেতৃস্থানীয় মুহাজিরদেরকে ডেকে আন, যাঁরা প্রথমে হিজরত করেছেন। তাঁদেরকে ডেকে আনা হল। উমার (রা) তাঁদের সাথে শাম দেশের মহামারী সম্বন্ধে পরামর্শ করলেন। তাঁদের কেউ মন্তব্য করলেন, আপনি কাজের জন্য বের হয়েছেন এখন প্রত্যাবর্তন করা সমীচীন হবে না। কেউ বললেন, আপনার সাথে অন্যান্য লোকও রয়েছে আর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীও রয়েছেন। তাদেরকে এই মহামারীতে নিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। উমার (রা) তাঁদেরকে বিদায় দিলেন। অতঃপর বললেন, যাও আনসারদেরকে ডেকে আন! অতঃপর ইব্নু আব্বাস আনসারদেরকে ডেকে আনলেন। উমার (রা) তাঁদের সহিত পরামর্শ করলেন। তাঁরাও মুহাজিরদের মতো মত প্রকাশ করলেন। উমার (রা) তাঁদেরকেও বিদায় দিলেন। অতঃপর বললেন, যাও কুরাইশ সর্দারদেরকে ডেকে আন। যাঁরা মক্কা বিজয়ের পর হিজরত করেছেন, আমি কুরাইশের বয়োবৃদ্ধদের ডেকে আনলাম। তাঁদের দুইজনের মধ্যেও কোন মতবিরোধ হল না, বরং সকলেই এক বাক্যে বললেন, আমাদের মতে আপনার ফিরে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। লোকদেরকে মহামারীতে নিয়ে যাওয়া সমীচীন মনে হচ্ছে না। অতঃপর উমার (রা) ঘোষণা করে দিলেন, সকাল বেলায় আমরা ফিরে যাব। সকাল বেলা সকলেই সওয়ার হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে এল। সে সময় আবূ উবায়দা (রা) বললেন, কি হল, আল্লাহ্‌র তকদীর (নির্ধারিত বিধান) হতে পালিয়ে যাচ্ছেন ? উমার (রা) বললেন, যদি এই কথা অন্য কেউ বলত। হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ্‌র তকদীর হতে আল্লাহ্‌র তকদীরের প্রতি পলায়ন করছি। যদি তোমার নিকট উট থাকে আর তুমি দুই দিক ঘেরাও করা মাঠে নিয়ে যাও, যার একদিক শস্য শ্যামল থাকে আর অন্যদিক শুষ্ক ও খালি থাকে। যদি তুমি উটকে শ্যামল দিকে চরাও তখনও তুমি উহা আল্লাহ্‌র তাকদীরেই উহাকে চরালে আর যদি শুষ্ক ভূমিতে চরাও তবুও আল্লাহ্‌র তাকদীরেই চরালে। এই সময়ে আবদুর রহমান ইব্নু আউফ (রা) এসে পড়লেন। তিনি কোথাও কোন কাজে গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, আমার এই ব্যাপারে জানা আছে। আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যদি তুমি কোন স্থানে মহামারীর কথা শুনতে পাও তবে তথায় গমন করো না। আর যদি কোন স্থানে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানে থাক তবে তথা হতে পলাইও না। ইব্নু আব্বাস (রা) বলেন, এটা শুনে উমার (রা) আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং তথা হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। (বুখারী ৫৭২৯, মুসলিম ২২১৯) সা‘দ ইব্নু আবূ ওয়াক্কাস (রা) উসামা ইব্নু যায়দের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মহামারী সম্বন্ধে কি শুনেছ ? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মহামারী এক প্রকার আযাব, যা বনী ইসরাইলের এক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠানো হয়েছিল অথবা তোমাদের পূর্বেকার লোকদের প্রতি পাঠানো হয়েছিল। যখন তোমরা কোন স্থানে মহামারীর কথা শোন, তথায় যেও না, আর যদি কোথাও মহামারী সংক্রামিত হয়ে পড়ে আর তথায় থাক, তবে তথা হতে পলায়ন করো না। আবূ নায্র বলেন, পলায়নের ইচ্ছায় বের হইও না। (বুখারী ৩৪৭৩, মুসলিম ২২২৮) আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আমির ইব্নু রবী‘আ (রা) উমার (রা) শাম দেশের দিকে রওয়ানা হলেন, যখন সুরগ নামক স্থানে পৌঁছালেন, তখন জানতে পারলেন, শাম দেশে মহামারী বিস্তার লাভ করেছে। অতঃপর আব্দুর রহমান ইবনু ‘আউফ (রা) তাঁকে অবহিত করলেন যে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন কোন স্থানে মহামারীর কথা জানবে সেখানে আগমন করবেন না। আর যখন কোন স্থানে অবস্থান কালে সেখানে মহামারী শুরু হয় তখন তোমরা পলায়ন করার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হবে না। (বুখারী ৫৭৩০, মুসলিম ২২১৯) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ উমার ইবনু খাত্তাব (রা) আবদুর রহমান ইবনু আউফ-এর কথায় সুরগ হতে ফিরে এলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) উমার (রা) বলেছেন, রুক্বার একটি ঘর আমার নিকট শাম দেশের দশটি ঘর হতে উৎকৃষ্ট। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ইহা এইজন্য যে, রুকবা স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল, সেখানে লোকেরা দীর্ঘায়ু লাভ করত, আর শামে প্রায়ই মহামারী দেখা দিত।