48. পোশাক-পরিচ্ছদ অধ্যায়

【1】

সৌন্দর্যের জন্য কাপড় পরিধান করা

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ আনসারী (রা) তিনি বলেন, আমরা বনী আনমার যুদ্ধের [১] জন্য রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রওয়ানা হলাম। জাবির (রা) বলেন, আমরা একটি বৃক্ষের নিচে অবস্থান করিতেছিলাম। হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা গেল। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্! ছায়ায় আসুন। তিনি এসে ছায়ায় দাঁড়ালেন। আমি আমার টুকরির কাছে যেয়ে উহাতে (কিছু খাদ্য) অনুসন্ধান করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত উহাতে একটি কাকড়ি পাওয়া গেল। আমি উহাকে কেটে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত করলাম। তিনি বললেন, ইহা কোথা হতে এল ? জাবির বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমরা একে মদীনা হতে নিয়ে যাত্রা করেছিলাম। জাবির বলেন, আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, যার কাছে আমরা সফরের মালপত্র দিয়েছিলাম। সে ব্যক্তি আমাদের জন্তুগুলো চরাত। যখন সে আমাদের জন্তুগুলো চরাতে যেতে লাগল, তখন তার গায়ের দুটি পুরান ছেঁড়া চাদর ছিল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা দেখে বললেন, এই ব্যক্তির নিকট কি অন্য কোন কাপড় নেই? জাবির বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার কাছে এটা ব্যতীত আরও কাপড় রয়েছে, যা সে পুটলি বেঁধে রেখেছে! উহা আমি তাকে পরতে দিয়েছিলাম। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ঐ কাপড় পরিধান করতে বল। আমি তাকে ডেকে উহা পরিধান করতে বললে সে তা বের করে পরিধান করল। যখন সে আবার যাচ্ছিল তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার কি হয়েছিল যে, কাপড় থাকতে সে তা পরিধান করল না ? আল্লাহ্ তার গর্দান মারুক! এখন কি তাকে আগের চাইতে ভাল দেখায় না ? সে ব্যক্তি এটা শুনতে পেয়ে বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্‌র রাস্তায় কি আমার গর্দান মারা যাবে? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ্‌র রাস্তায়। পরে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়ে গেল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উমার (রা) আমি ক্কারীগণকে (কুরআনের আলিমগণ) শুভ্র পোশাকে দেখতে পছন্দ করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উমার (রা) যখন তোমাদেরকে আল্লাহ্ সচ্ছলতা দান করবেন, তখন তোমরাও নিজের উপর সচ্ছলতার নিদর্শন দেখাও। নিজেদের পোশাক তৈরি করে নাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【2】

রঙিন কাপড় ও স্বর্ণ ব্যবহার প্রসঙ্গ

নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) গেরুয়া ও যাফরানী রঙে রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমার মতে শিশুদেরকে স্বর্ণ পরানো মাকরূহ্। কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমার কাছে এই খবর পৌঁছেছে যে, তিনি সোনার আংটি পরতে নিষেধ করেছেন। পুরুষ ও ছেলের জন্য সোনা ব্যবহার করা মাকরূহ্ মনে করি। যুরকানী বলেন, বড়দের জন্য সোনা ব্যবহার করা মাকরূহ্ তাহরীমী এবং ছোটদের জন্য মাকরূহ্ তানযীহী। বাচ্চাদেরকে রৌপ্যের অলঙ্কার পরানোও অনেকের মতে মাকরূহ্, আবার কারো মতে বৈধ। মালিক (র) বলেন, আমি পুরুষদের জন্য ঘরে ও ঘরের আশেপাশে কুসুম রঙের রঞ্জিত চাদর গায়ে দেয়া হারাম মনে করি না। কিন্তু আমার মতে না পরাই ভাল, ইহা ব্যতীত অন্য পোশাক পরিধান করাই পছন্দনীয়।

【3】

পশমী ও রেশমী কাপড় প্রসঙ্গ

উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবাইর (রা)-কে একটি কাপড় পরিয়েছেন, যা নিজেও পরিধান করতেন, তার কিনারাতে রেশম ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【4】

মহিলাদের জন্য কোন্ কোন্ কাপড় নিষেধ

আলকামা ইব্নু আবি আলকামা (র)-এর জননী (মারজানা) তিনি বলেন, হাফসা বিন্তে আবদুর রহমান (রা) একটি মিহিন ওড়না পরে উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা)-এর কাছে গেলে আয়িশা (রা) তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং মোটা কাপড়ের একটি ওড়না তাঁকে পরিয়ে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) তিনি বলেন, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গিনী [১] এবং পুরুষদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারিনী স্ত্রীলোকগণ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ ঐ সুগন্ধ পাঁচশত বৎসরের দূরত্ব হতে অনুভূত হয়। (সহীহ মারফু, মুসলিম ২১২৮) ইবনু শিহাব (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাত্রে জাগরিত হলেন এবং আকাশের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এই রাত্রে কত ধনাগার খুলে দিয়েছেন এবং কত ফিতনা অবতীর্ণ করেছেন। পৃথিবীতে অনেক কাপড় পরিধানকারিণী স্ত্রীলোক পরকালে উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। [১] যারা কক্ষে রয়েছে তাদেরকে জাগিয়ে দাও (অর্থাৎ ইবাদতের জন্য)। (সহীহ, ইমাম বুখারী উম্মে সালামাহ হতে বর্ণনা করেন ১১৫, তবে ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

পুরুষদের পরিধেয় কাপড় পায়ের টাকনুর নিচে ঝোলানো প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বভরে স্বীয় কাপড় টাখনুর নিচে লটকায়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টি করবেন না, যে ব্যক্তি অহঙ্কার করে নিজের কাপড় লটকায়। (সহীহ, মুসলিম ৫৭৮৮) ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টি করবেন না, যে অহঙ্কার করে নিজের কাপড় নিচের দিকে লটকে দেয়। (বুখারী ৫৭৮৩, মুসলিম ২০৮৫) আবদুর রহমান ইব্নু ইয়াকুব (র) আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রা)-কে লুঙ্গির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, আমার জানা আছে, আমি বলিতেছি। আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মু‘মিনের লুঙ্গি তার পায়ের নলার মাঝ বরাবর থাকবে, তবে তা টাখনু এবং পায়ের নলার মাঝামাঝির মধ্যে থাকলে কোন ক্ষতি নেই টাখনু ঢেকে পরলে ঐ ব্যক্তির প্রতি কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা রহমতের দৃষ্টি করবেন না। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪০৯৩, ইবনু মাজাহ ৩৫৭৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত ৪৩৩১)

【6】

স্ত্রীলোকের কাপড় লটকান প্রসঙ্গ

বর্ণণাকারী উম্মুল মু‘মিনীন উম্মু সালমা (রা) যখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লুঙ্গি লটকানোর কথা জিজ্ঞেস করতে যেয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! নারীগণ কিরূপে কাপড় পরিধান করবে ? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা টাখনু হতে এক বিঘত নিচু রেখে পারবে। উম্মু সালমা বললেন, এতে তো খুলে যাবে। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এক হাত নিচু রাখবে, এর অতিরিক্ত নয়। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪১১৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ])

【7】

জুতা পরিধান করা প্রসঙ্গ

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান যেন একটি জুতা পরিধান করে না হাঁটে। হয় উভয় জুতা পরিধান করবে, না হয় উভয় জুতা খুলে রাখবে। (বুখারী ৫৮৫৫, মুসলিম ২০৯৭) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মুসলমান জুতা পরতে ইচ্ছা করে, তখন যেন সে ডান পা প্রথমে পরিধান করে। আর যখন জুতা খোলে, তখন যেন বাম পা হতে খোলে। জুতা পরিধান করতে ডান পা প্রথমে হবে, আর জুতা খুলতে ডান পা শেষে হবে। (সহীহ, বুখারী ৫৮৫৬) কা‘ব আহবার (র) এক ব্যক্তি নিজের জুতা খুলল। কা‘ব তাকে বলল, তুমি তোমার জুতা কেন খুলে ফেলেছ ? হয়ত তুমি, فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى “আমি তোমার প্রভু। তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। কেননা তুমি ‘তুয়া’ নামক পবিত্র ভূমিতে আছ।” এই আয়াত দেখে জুতা খুলেছ। অতঃপর কা’ব বললেন, তোমার জানা আছে কি মূসা (আ)-এর জুতা কিসের ছিল ? মালিক (র) বললেন, আমার জানা নেই, ঐ ব্যক্তি কি উত্তর দিয়েছিল। অতঃপর কা‘ব বললেন, উহা মৃত গাধার চামড়া দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটিতে ইসরাঈলী বর্ণনা রয়েছে)

【8】

কাপড় পরিধান প্রসঙ্গ

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই প্রকার পোশাক এবং দুই প্রকার বিক্রয় হতে নিষেধ করেছেন। মুলামাসাহ ও মুনাবাযাহ ধরনের বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর মানুষের এমনভাবে বসা, যাতে তার হাঁটু খাড়া থাকে এবং তার লজ্জাস্থানের উপর কোন কাপড় না থাকে, এই প্রকার বসা নিষেধ। আর এক কাপড় দ্বারা সমস্ত শরীর ঢাকতে নিষেধ করেছেন যাতে এক অংশ খোলা থাকে। (সহীহ, বুখারী ৫৮২১) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) উমার (রা) একখানা রেশমী কাপড় মসজিদের সম্মুখে বিক্রি হতে দেখলেন। তিনি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! যদি আপনি এই রেশমী কাপড়খানা খরিদ করে নিতেন, তা হলে শুক্রবারে উহা পরিধান করতে পারতেন অথবা কোন বৈদেশিক দূত এলে তা পরতে পারতেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহা ঐ ব্যক্তিই পরিধান করবে, পরকালে যার কোন অংশ থাকবে না। পরে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ঐরূপ আরও কাপড় এলে তিনি তা হতে একখানা কাপড় উমার (রা)-কে দান করলেন। উমার (রা) বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে এ কাপড় দিলেন অথচ ‘উতারদের কাপড় সম্বন্ধে যা বলেছেন, তা দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, ঐ ধরনের কাপড় পরিধানকারীর জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে উহা পরতে দেইনি। অতঃপর উমার (রা) ঐ কাপড় স্বীয় এক কাফির ভাই, যে ছিল মক্কায়, তাকে দান করে দিলেন। (বুখারী ৮৮৬, মুসলিম ২০৬৮) আনাস ইবনু মালিক (রা) আমি উমার (রা)-কে দেখেছি তখন তিনি মদীনাতে আমীরুল মু‘মিনীন ছিলেন। আর তখন তাঁর জামায় স্কন্ধের মধ্যস্থলে পর পর তিনটি তালি লাগানো ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)