54. ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি গ্রহণ বিষয়ক অধ্যায়

【1】

ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি প্রসঙ্গ

আতা ইব্নু ইয়াসার (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি ঘরে প্রবেশ করার জন্য আমার আম্মার কাছে অনুমতি চাইব কি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমি তো তাঁর সাথে একই ঘরে থাকি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অনুমতি নিয়ে যাও। লোকটি আবার বলল, আমি তো তাঁর সাথে একই ঘরে থাকি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অনুমতি নিয়ে যাও। তুমি কি তোমার আম্মাকে উলঙ্গ দেখতে চাও? লোকটি বলল, না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে অনুমতি নিয়ে যাও। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিনবার অনুমতি নিতে হয়। অতঃপর অনুমতি হলে প্রবেশ করবে, অন্যথায় ফিরে যাবে। (এই হাদীসের তাহকীক পরে আসবে ইনশাআল্লাহ...) রবীয়া ইব্নু আবদুর রহমান (রহঃ) এবং আরো অনেক আলিম আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করার জন্য তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনবারেও অনুমতি না পেয়ে তিনি ফিরে গেলেন। উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে (আবূ মূসাকে) ডেকে আনবার জন্য তাঁর পিছনে লোক প্রেরণ করলেন। অতঃপর তিনি আসার পর উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ঘরে প্রবেশ করলে না কেন? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তিনবার অনুমতি চাইতে হয়। অনুমতি দিলে প্রবেশ কর, অন্যথায় ফিরে যাও। অতঃপর উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তুমি ছাড়া এই হাদীস আর কেউ শ্রবণ করেছে কি? যে শ্রবণ করেছে তাকে নিয়ে আস। যদি তুমি তা না কর, তবে আমি তোমাকে শাস্তি দিব। অবশেষে আবূ মূসা বের হয়ে এলেন এমন এক মসজিদে যেখানে অনেক লোক বসা আছে। এরা সকলেই আনসারগণের এক মজলিসে বসেছিল। সেখানে যেয়ে (আবূ মূসা আশ‘আরী) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন যে, (ঘরে প্রবেশ করার জন্য) তিনবার অনুমতি চাইতে হয়। অনুমতি পেলে প্রবেশ করবে অন্যথায় ফিরে যাবে। আমি উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এই হাদীস বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, এই হাদীস অন্য কেউ শ্রবণ করলে তাকে নিয়ে আস নতুবা আমি তোমাকে শাস্তি দিব। অতএব তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এই হাদীস শ্রবণ করে থাক, তবে (মেহেরবানী করে) আমার সঙ্গে আস। (উপস্থিত) সকলেই আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বলল, তুমি যাও। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁদের মধ্যে বয়সে সকলের ছোট ছিলেন। অতঃপর আবূ সাঈদ (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সঙ্গে উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত হাদীস বর্ণনা করলেন। অতঃপর উমার (রাঃ) আবূ মূসা আশ‘আরীকে বললেন, আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে মনে করি না। তবে আমার ভয় ছিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসের সাথে কেউ অন্য কোন কথা সংযোজন করবে। [১] (বুখারী ২০৬২, মুসলিম ২১৫৩)

【2】

হাঁচির জওয়াব দান প্রসঙ্গ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকর (রাঃ) নিজের পিতার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, যদি কেউ হাঁচি দেয়, তবে তাকে (উহার) জওয়াব দাও (অর্থাৎ হাঁচির পর সে যখন “আলহামদুলিল্লাহ্” বলবে, তোমরা তখন “ইয়ারহামুকুমুল্লাহ্” বলবে। সে আবার হাঁচি দিলে, তবে জওয়াব দিবে। আবার হাঁচি দিলে জওয়াব দিবে। আবার হাঁচি দিলে বলবে যে, তোমার সর্দি হয়েছে। আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়বারের পর, নাকি চতুর্থবারের পর এই কথা বলতে হুকুম করেছেন তা আমার ভাল স্মরণ নাই। (হাসান, আবূ দাঊদ ৫০৩৪, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সহীহ আল জামে ৩৭১৫] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) নাফি‘ (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর হাঁচি এলে (তাঁর আলহামদুলিল্লাহর জওয়াবে) কেউ “ইয়ারহামুকাল্লাহ্” বললে তিনি “ইয়ারহামুনাল্লাহু ওয়া ইয়্যাকুম ওয়া ইয়াগফিরু লানা ওয়ালাকুম يَرْحَمُنَا اللهُ وَإِيَّاكُمْ وَيَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ বলতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

ছবি ও মূর্তি প্রসঙ্গ

শেফা (রহঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম রাফি‘ ইব্নু ইসহাক (রহঃ) আমি ও আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ তালহা (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে যিনি অসুস্থ ছিলেন দেখতে গেলাম। অতঃপর আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন যে, যেই ঘরে ছবি কিংবা মূর্তি থাকে, সেই ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উবায়দুল্লাহ্ ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু উতবা ইব্নু মাসঊদ (রহঃ) তিনি আবূ তালহা আনসারী (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন (তিনি অসুস্থ ছিলেন)। সেখানে সহল ইব্নু হুনাইফকেও দেখতে পেলেন। আবূ তালহা একজনকে ডেকে আমার (পায়ের) নিচ হতে শতরঞ্জী তুলে নিতে নির্দেশ দিলেন। সহল ইব্নু হানীফ বললেন, কেন তুলে নিচ্ছ? আবূ তালহা বললেন, এইজন্য যে, এতে ছবি রয়েছে আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছবি সম্বন্ধে যা বলেছেন উহা আপনার জানা আছে। সহল বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহা কি বলেননি যে, কাপড়ে অঙ্কিত হলে কোন অসুবিধা নেই। আবূ তালহা বললেন, হ্যাঁ, বলেছেন। তবে আমি যেকোন রকমের ছবি হতে বেঁচে থাকতে চাই। (সহীহ, বুখারী ৫৯৫৮) নবী-পত্নী আয়িশা (রাঃ) তিনি একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি অঙ্কিত ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাহির হতে আগমন করে ঘরে প্রবেশ করার সময়) যখন তা দেখলেন, তখন ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা মুবারকে উহার অপছন্দ হওয়ার লক্ষণ দেখলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আল্লাহ্ ও তার রাসূলের কাছে তাওবা করছি; আমি অপরাধ করেছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইহা কি রকম গদি? আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, এই গদিটি আমি আপনার জন্য ক্রয় করেছি যে, আপনি উহার উপর বসবেন এবং উহাতে হেলান দিবেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ছবি অঙ্কনকারীকে রোজ হাশরে আযাব দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে যে, তোমরা যা সৃষ্টি করেছ, উহাকে জীবিত কর (অর্থাৎ উহাতে প্রাণ সঞ্চার কর)। অতঃপর তিনি বললেন, যে ঘরে ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (বুখারী ২১০৫, মুসলিম ২১০৭)

【4】

সান্ডার (গুইসাপের) গোশত খাওয়া প্রসঙ্গ

সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মায়মুনা বিন্ত হারিস (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি সান্ডার (গুইসাপের) সাদা গোশত দেখতে পেলেন। তাঁর সঙ্গে আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রাঃ) ও খালিদ ইব্নু ওলীদ (রাঃ) ছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট এই গোশত কোথা হতে এল? মায়মুনা (রাঃ) উত্তর দিলেন, আমার ভগ্নি হুযায়লা বিনতে হারিস (রাঃ) আমার নিকট হাদিয়া পাঠিয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে বললেন, তোমরা খাও। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি খাবেন না? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার কাছে আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে কেউ না কেউ আগমন করেন। (এতে এক প্রকার গন্ধ আছে, ফলে আগমনকারীর কষ্ট হবে; তাই আমি খাব না।) মায়মুনা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনাকে দুধ পান করাব কি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দুধ পান করে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এই দুধ তোমার নিকট কোথা হতে এল? মায়মুনা (রাঃ) বললেন, আমার ভগ্নি হুযায়লা আমার কাছে হাদিয়া পাঠিয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি তোমার সেই দাসী তোমার ভগ্নিকে দিয়ে দাও যাকে আযাদ করা সম্বন্ধে তুমি আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিলে, আত্মীয়তার খাতির কর এবং সেই দাসী তার ছাগল চরাবে, তা হলে উহা তোমার জন্য খুবই উত্তম হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) খালিদ ইব্নু ওলীদ ইব্নু মুগীরা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহিত নবী করীম রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে গমন করলেন। সেখানে একটি ভুনা সান্ডা আনয়ন করা হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহা খাওয়ার জন্য সেই দিকে হাত বাড়ালেন। তখন মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে আগত মহিলাদের মধ্যে কেউ বলল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানিয়ে দাও যে, তিনি যা খেতে চাচ্ছেন, উহা কিসের গোশত। তখন তাঁকে বলা হল যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ইহা সান্ডার গোশত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত তুলে নিলেন (এবং খেলেন না)। আমি (খালিদ) জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! ইহা কি হারাম? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। তবে যেহেতু আমাদের দেশে ইহা হয় না, তাই আমার পছন্দ হচ্ছে না। খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি উহা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খেলাম, আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখছিলেন। [১] (বুখারী ৫৩৯১, মুসলিম ১৯৪৬) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আহ্বান করে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সান্ডার গোশত সম্বন্ধে আপনি কি বলেন? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি উহা খাই না, তবে হারামও বলি না। (বুখারী ৫৫৩৬, মুসলিম ১৯৪৩)

【5】

কুকুর (পালন) প্রসঙ্গ

বর্ণণাকারী সুফিয়ান ইব্নু আবূ যুহাইর [১] (রাঃ) মসজিদে নববীর দরজায় মানুষের নিকট হাদীস বয়ান করছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কুকুর পালে, (তার এই কুকুর পালন) খেত-খামার ও ছাগলের হিফাজতের জন্য না হয়, তা হলে তার নেক আমল হতে প্রতিদিন এক কীরাত সমান কমতে থাকবে। সুফিয়ানের নিকট হাদীসের রাবী সায়েব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই হাদীস রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এই মসজিদের পরওয়ারদিগারের কসম! আমি নিশ্চয়ই শ্রবণ করেছি। (বুখারী ২৩২৩, মুসলিম ১৫৭৬) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি শিকার অথবা খেত-খামারের হিফাজতের উদ্দেশ্য ব্যতীত কুকুর (অনর্থক) পালন করে তবে তার নেক আমল হতে প্রতিদিন দুই কীরাত সমান ক্ষতি হবে (কমে যাবে)। (বুখারী ৫৪৮১, মুসলিম ১৫৭৪) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী ৩৩২৩, মুসলিম ৪০৯৯)

【6】

ছাগল (পালন) প্রসঙ্গ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কুফরীর গোড়া হল পূর্বদিকে। মরুবাসী বেদুইন ঘোড়া ও উটওয়ালাদের মধ্যে অহঙ্কার আছে যাদের আওয়াজ বড় (কর্কশ)। আর নম্রতা ও শান্তি ছাগলওয়ালাদের মধ্যে আছে। (বুখারী ৩৩০১, মুসলিম ৫২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, অদূর ভবিষ্যতে কয়েকটি ছাগলই মুসলমানদের উত্তম মাল (বলে বিবেচিত) হবে। তারা ফিতনা-ফাসাদ হতে নিজেদের দ্বীন রক্ষা করার নিমিত্তে পর্বতের চুড়ায় চলে যাবে অথবা কোন উপত্যকায় গিয়ে আশ্রয় নিবে। (সহীহ, বুখারী ১৯) ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে তোমরা কোন পশুর দুধ দোহন করবে না। তোমাদের কেউ ইহা পছন্দ করবে কি, কেউ তার ঘরে প্রবেশ করে তার সিন্দুক ভেঙ্গে তার সম্পদ ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাবে? (অর্থাৎ কখনও পছন্দ করবে না) পশুর (দুধের) উহার মালিকের খাবারের সিন্দুক (বা গোলা)। সুতরাং মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ কারো জানোয়ারের দুধ দোহন করবে না। (বুখারী ২৪৩৫, মুসলিম ১৭২৬) মালিক (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন কোন নবী নাই যিনি ছাগল চড়াননি। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনিও কি (চড়িয়েছেন?) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (হ্যাঁ) আমিও (চড়িয়েছি)। (সহীহ, বুখারী ২২৬২, আর ইমাম মালিক এর নিকট হাদীসটি পৌঁছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন)

【7】

ঘীতে ইঁদুর পতিত হলে কি করা হবে, নামাযের সময় খাবার এলে আগে খাবে

নাফি‘ (রাঃ) ইব্নু উমার (রাঃ)-এর কাছে রাতের খাবার পেশ করা হত। তিনি তার ঘরে বসে ইমামের (ইশার নামাযের) কিরাত শ্রবণ করতেন। কিন্তু যতক্ষণ তৃপ্ত হয়ে না খেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত (নামাযের জন্য) তাড়াহুড়া করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী মায়মুনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হল যে, ঘীতে ইঁদুর পতিত হলে কি করতে হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উহা বাইরে ফেলে দাও এবং উহার আশেপাশের ঘীও ফেলে দাও। [১] (সহীহ, বুখারী ৫৫৪০)

【8】

অশুভ হতে বেঁচে থাকা প্রসঙ্গ

সহল ইব্নু সা‘দ সা‘য়েদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি অশুভ বলতে কিছু হত, তবে ঘোড়া, স্ত্রীলোক ও ঘর (এই তিন বস্তু)-এ হতে। (বুখারী ২৫৮৯, মুসলিম ২২২৬) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘর, স্ত্রীলোক ও ঘোড়া (অর্থাৎ এই তিন বস্তুতে) অশুভ বিষয় আছে। (বুখারী ৫০৯৩, মুসলিম ২২২৫) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! একটি ঘরে আমরা বাস করছিলাম। (পরিবারে) আমরা সংখ্যায় অধিক ছিলাম এবং মালও ছিল বিপুল। এখন জনসংখ্যা কমে গিয়েছে (অর্থাৎ অনেকেই মারা গিয়েছে) এবং মালও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেই ঘরকে তুমি ছেড়ে দাও উহা খারাপ। (হাসান, আবূ দাঊদ ৩২৯৪, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, [সিলসিলাহ সহীহা ৭৯০] ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)

【9】

খারাপ নাম সম্পর্কীয় বয়ান

ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি দুধেল উষ্ট্রীর দিকে ইশারা করে বললেন, এই উষ্ট্রীর দুধ কে দোহন করবে? অতঃপর এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? লোকটি বলল, মুরবা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বস। (তিনি লোকটির নাম খারাপ মনে করলেন। কারণ মুররা শব্দের অর্থ হল তিক্ত)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার জিজ্ঞেস করলেন, কে দুধ দোহন করবে? (অপর) এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? লোকটি বলল, হারব। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বস। আবার বললেন, এই উষ্ট্রীর দুধ কে দোহন করবে? (আর) এক ব্যক্তি দাঁড়াল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? লোকটি বলল, ইয়া‘ঈশ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যাও, দুধ দোহন কর। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (রহঃ) উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? লোকটি বলল, জামরা (এর অর্থ আগুনের কয়লা বা অঙ্গার)। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতার নাম কি? লোকটি বলল, শিহাব (অগ্নিশিখা)। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন্ গোত্রের? লোকটি বলল, হুরাকা গোত্রের (জ্বলন্ত)। আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় বাস কর? লোকটি বলল, হাররাতুন্নারে (দোযখের গরমে)। আবার জিজ্ঞেস করলেন, সেই স্থানটা কোথায়? লোকটি বলল, যাতে লাযা (লাযা নামক দোযখে)। উমার (রাঃ) বললেনঃ যাও, গিয়ে তোমার খবর নাও, তারা সকলেই জ্বলে গিয়েছে। লোকটি গিয়ে দেখল যে, সত্যই উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) যা বলেছেন, তাই হয়েছে (অর্থাৎ সকলেই জ্বলে গিয়েছে)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【10】

সিঙ্গা লাগানো ও উহার পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে

আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ তায়েবার হাতে সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন এবং তাকে (আবূ তায়েবাকে) পারিশ্রমিকস্বরূপ এক সা‘ আড়াই কেজী খেজুর দেবার জন্য বলেছিলেন এবং তার মালিকদেরকে তার কর [১] কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দান করলেন। (সহীহ, বুখারী ২১০২) মালিক (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি কোন ঔষধ সত্যই রোগ নিবারণে সক্ষম হত, তবে নিশ্চয়ই উহা হত “সিঙ্গা”। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইব্নু মুহাইয়েসা আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাজ্জামের (যে সিঙ্গা লাগানোর কাজ করে তার) পারিশ্রমিক নিজের খরচের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি চাইলেন? অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহা নিষেধ করলেন। ইব্নু মুহাইয়েসা অব্যাহত ভাবে অনুমতি চাইতে থাকলেন। অবশেষে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার (আবূ তায়েবার) আয় তুমি তোমার উটের ও গোলাম-দাসীর খোরাকে খরচ কর। (সহীহ, তিরমিযী ১২৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৬৬, তিনি ইবনু মুহায়ইছাহ তার পিতা থেকে মুত্তাসিল সনদ বর্ণনা করেন আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সিলসিলা সহীহা ৪০০০] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীটি মুরসাল)

【11】

পূর্বদিক প্রসঙ্গ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বদিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, ফিৎনা এইদিকে, ফিৎনা এইদিকে যেই দিকে শয়তানের শিং বাহির হয়। (বুখারী ৩২৭৯, মুসলিম ২৯০৫) মালিক (রহঃ) উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) ইরাক গমন করতে ইচ্ছা করলেন। আহবার তাঁকে বললেন, ইয়া আমীরুল মু‘মিনীন! আপনি সেই দিকে গমন করবেন না। কারণ সেই দেশে নয়-দশমাংশ যাদু আছে, সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির জ্বিন আছে এবং সেখানে এক প্রকারের (মারাত্মক) রোগ আছে যার কোন চিকিৎসা (ঔষধ) নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【12】

সর্প মেরে ফেলা সম্পর্কিত মাসাইল

আবূ লুবাবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত সর্প ঘরে বাস করে উহাদেরকে মারতে (হত্যা করতে) নিষেধ করেছেন। [১] (বুখারী ৪০১৭, মুসলিম ২২৩৩) আয়িশা (রাঃ) কর্তৃক আযাদকৃত বাঁদী সায়েবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই সমস্ত সর্পকে মারতে নিষেধ করেছেন, যা ঘরে বাস করে। তবে যুত্তুফয়াতাইন ও আবতর জাতীয় সর্প মারতে নিষেধ করেননি। কেননা এই দুই প্রকার সর্প চক্ষু নষ্ট করে এবং মহিলাদের গর্ভ নষ্ট করে। [১] (বুখারী ৩৩০৮, মুসলিম ২২৩২, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) হিশামের আযাদকৃত গোলাম আবূ সায়েব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি নামায পড়তেছিলেন। আমি তাঁর নামায হতে অবসর হবার অপেক্ষায় বসে রইলাম। তিনি যখন নামায শেষ করলেন তখন আমি তাঁর ঘরের চৌকির নিচে কোন কিছুর নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম যে, উহা একটি সাপ। আমি উহাকে মারতে উদ্যত হলাম। আবূ সাঈদ (রাঃ) আমাকে ইশারা করলেন যে বস (অর্থাৎ মেরো না)। অতঃপর তিনি (আমার দিকে) ফিরে ঘরের একটি কামরার দিকে ইশারা করে বললেন ঐ ঘরটি দেখছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সেই ঘরে জনৈক যুবক বাস করত, নতুন বিবাহ করেছিল। সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে খন্দকের যুদ্ধে গমন করেছিল। এর পর হঠাৎ এক সময় সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে একটু অনুমতি দান করুন, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে একটু কথা বলে আসি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দান করলেন এবং বললেন, যুদ্ধাস্ত্র সঙ্গে রাখ। কেননা বনু কুরায়যার আশঙ্কা রয়েছে (বনু কুরায়যা সেই ইহুদী গোত্র, যারা খন্দকের যুদ্ধের সময় ওয়াদা ভঙ্গ করে মক্কাবাসীদের সঙ্গে মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল)। যুবকটি অস্ত্রসহ রওয়ানা হয়ে গেল। ঘরে পৌঁছে সে তার স্ত্রীকে ঘরের দুই দরজার মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়ানো দেখতে পেল। স্ত্রীকে এই অবস্থায় দেখে সে রাগান্বিত হল এবং বর্শা দিয়ে স্ত্রীকে আঘাত করতে উদ্যত হল। স্ত্রী বলল, (আমাকে মারতে এত) তাড়াহুড়া করো না, বরং আগে ঘরের ভিতরে যেয়ে দেখ। অতঃপর সে ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখল যে, কুগুলী পাকিয়ে একটি সাপ তার বিছানায় শুয়ে আছে। সে বর্শা দিয়ে সাপটিকে গেঁথে ফেলল এবং বর্শাসহ বাহিরে এসে উহা বাড়ীর মধ্যেই দাঁড় করিয়ে রাখল। সাপটি বর্শার ফলায় পেঁচাচ্ছিল, আর তখনই যুবকটি মারা গেল। তবে ইহা জানা যায়নি যে, যুবকটি আগে মারা গেল, না সাপটি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উক্ত ঘটনা বিবৃত করা হলে পরে তিনি বললেন, মদীনায় জ্বিন ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতএব তোমরা যদি সাপ দেখ তবে তিনদিন পর্যন্ত তাকে সতর্ক কর। তারপরেও যদি তাকে দেখ, তবে তাকে হত্যা কর। কেননা সে শয়তান। (সহীহ, মুসলিম ২২৩৬)

【13】

সফরের দু‘আ প্রসঙ্গ

মালিক (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের উদ্দেশ্যে রেকাবে পা রাখার প্রাক্কালে এই দু‘আ করতেন بِاسْمِ اللهِ اللهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللهُمَّ ازْوِ لَنَا الْأَرْضَ وَهَوِّنْ عَلَيْنَا السَّفَرَ اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَمِنْ كَآبَةِ الْمُنْقَلَبِ وَمِنْ سُوءِ الْمَنْظَرِ فِي الْمَالِ وَالْأَهْلِ আমি আল্লাহর নামে সফর শুরু করিতেছি। হে আল্লাহ্! আমার সফরের সাথী আমার পরিবারের জন্য আমার স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ! আমার গন্তব্যস্থল নিকটে করে দাও, আমার সফর সহজ করে দাও। হে আল্লাহ! আমি সফরের কষ্ট এবং সফর হতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরবার এবং মাল ও পরিবারের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ, মুসলিম ১৩৪২, তিনি ইবনু মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি তার নিকট পৌঁছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন।) ৩৫و حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ الثِّقَةِ عِنْدَهُ عَنْ يَعْقُوبَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْأَشَجِّ عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ خَوْلَةَ بِنْت حَكِيمٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ نَزَلَ مَنْزِلًا فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ فَإِنَّهُ لَنْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ খাওলা বিনতে হাকীম (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি কোন মুসাফির কোন স্থানে অবতরণ করে তবে সে যেন এই দু‘আ পাঠ করে أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (‘আমি সৃষ্টির আনিষ্ট হতে আল্লাহ্‌র পূর্ণ কলেমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা করছি’) তা হলে সেখান হতে প্রস্থান করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। (সহীহ, মুসলিম ২৭০৮)

【14】

নারী ও পুরুষের জন্য একা সফর করার নিষেধাজ্ঞা

আমর ইব্নু শু‘আইব তার পিতার সূত্রে তার দাদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একা সফরকারী শয়তান, দুইজন একত্রে সফরকারীর দুইজনই শয়তান আর তিনজন হল একটি সফরকারী দল। (হাসান, আবূ দাঊদ ২৬০৭, তিরমিযী ১৬৭৪, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সিলসিলা সহীহা ৬২]) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শয়তান একজন কিংবা দুইজনকে ক্ষতি করবার ইচ্ছা করে। তিনজন হলে ইচ্ছা করে না (কারণ তিনজন হলে জমা‘আত হয়, আর কোন জমা’আতে সে ক্ষতি করতে পারে না)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যেই স্ত্রীলোক আল্লাহ্ ও শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে, তার জন্য মাহরাম [১] ব্যতীত একাকী একদিন ও একরাতের দূরত্ব পরিমাণ সফর করা হালাল নয়। (বুখারী ১০৮৮, মুসলিম ১৩৩৯)

【15】

সফরের আহকাম

খালিদ ইব্নু মা‘দান (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বিনম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন, নম্রতায় আনন্দিত হন এবং নম্রতায় সাহায্য করেন, যা কঠোরতায় করেন না। যখন তোমরা এই সব বাকশক্তিহীন সওয়ারীর উপর আরোহণ কর, তখন উহাকে সাধারণ মঞ্জিলে নামাও (অর্থাৎ স্বাভাবিক দূরত্বের অধিক চালিয়ে উহাকে অধিক কষ্ট দিও না)। যেখানে বিশ্রাম করবে, সেখানকার জায়গা যদি পরিষ্কার হয় এবং ঘাস না থাকে তবে শীঘ্রই সেখান হতে উহাকে বাহির করে নিয়ে যাও নতুবা উহার হাড় শুকিয়ে যাবে। (অর্থাৎ ঘাসপাতাহীন জায়গায় বিলম্ব করলে উহারা না খেয়ে শুকিয়ে যাবে। ফলে হাঁটতে পারবে না)। আর তোমাদের জন্য রাত্রে ভ্রমণ করাই উচিত। কারণ রাত্রে যেই পরিমাণ পথ অতিক্রম করা যায় দিনে তা হয় না। রাত্রে যদি কোন স্থানে অবস্থান কর, তবে পথে অবস্থান করো না। কেননা সেখানে জীবজন্তু চলাফেরা করে এবং সাপ বাস করে। (হাদীসের শেষাংশ ইমাম মুসলিম আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ১৯২৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সফর হল আযাবের এক অংশ। ইহা মানুষকে পানাহার ও নিদ্রায় বাধা দান করে। তোমাদের কেউ যদি কোন প্রয়োজনে সফরে গমন করে, তবে কাজ হয়ে গেলেই যেন সে পরিবারের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (বুখারী ১৮০৪, মুসলিম ১৯২৭)

【16】

দাসদাসীর সহিত নম্র ব্যবহার প্রসঙ্গ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দাসদাসীকে ঠিকমত খাদ্য ও পোশাক দিতে হবে। তা দ্বারা এমন কোন কাজ নেয়া যবে না, যা ক্ষমতাবহির্ভূত (অর্থাৎ তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ সে করবে, সাধ্যাতীত কাজ দেয়া বৈধ নয়)। (সহীহ, মুসলিম ১৬৬২) মালিক (রহঃ) উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) প্রতি শনিবারে মদীনার পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহে গমন করতেন (এবং বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ ইত্যাদি অনুসন্ধান করতেন)। যদি কোন গোলামকে এমন কাজ করতে দেখতেন যা তার শক্তির বাইরে হত, তবে তিনি উহা কম করে দিতেন (অর্থাৎ কাজ কমিয়ে গোলামের বোঝা হালকা করে দিতেন)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক ইব্নু আবী ‘আমির আসবাহী (রাঃ) উসমান ইব্নু আফফান (রাঃ)-এর নিকট হতে শ্রবণ করেছেন, তিনি খুৎবায় বলেছেন, যেই সমস্ত দাসী হস্তশিল্পী নয়, তাদেরকে আয়-রোজগারে বাধ্য করো না। কেননা তোমরা তাদেরকে রোজগার করতে বাধ্য করলে তারা হারাম পদ্ধতিতে যিনার মাধ্যমে রোজগার করবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক গোলামদেরকেও রোজগারের জন্য বাধ্য করো না। কেননা তোমরা তাদেরকে রোজগার করতে বাধ্য করলে তারা বাধ্য হয়ে চুরি করবে। আল্লাহ্ যখন তোমাদেরকে ঠিকমত রুজি দান করছেন, তখন তোমরাও তাদের মাফ করে দাও, যেমন আল্লাহ্ তোমাদের মাফ করেছেন। তোমাদের উচিত যা হালাল (পাক) তাই গ্রহণ করা। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【17】

দাসদাসী ও তাদের দান করা প্রসঙ্গ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, গোলাম যদি তার মালিকের মঙ্গল কামনা করে এবং রীতিমত আল্লাহ্‌র ইবাদত করে, তবে তার দ্বিগুণ সাওয়াব হবে। (বুখারী ২৫৪৬, মুসলিম ১৬৬৪) মালিক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর একজন দাসী ছিল। সে নিজে আযাদ মহিলাদের মতো সেজেছিল। উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) তাকে আযাদ মহিলার মতো সাজতে দেখে তাঁর কন্যা (উম্মুল মু‘মিনীন) হাফসা (রাঃ)-এর নিকট যেয়ে বললেন, আমি তোমার ভ্রাতার দাসীকে দেখলাম যে, সে আযাদ মহিলাদের মতো সাজসজ্জা করে লোকজনের মধ্যে চলাফেরা করছে। উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) একে খারাপ মনে করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)