8. জামা’আতে নামায আদায় করা

【1】

একা একা নামায আদায়ের তুলনায় জামা’আতে নামায আদায়ের ফযীলত

রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা নামায আদায় অপেক্ষা জামা’আতে নামায আদায় করায় সাতাইশ গুণ ফযীলত বেশি। (বুখারী ৬৪৫, মুসলিম ৬৫০) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের একজনের একা একা নামায আদায় হতে জামা’আতে নামায আদায় করা পঁচিশ গুণ উত্তম। (বুখারী ৬৪৮, মুসলিম ৬৪৯) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি মনস্থ করেছি কিছু কাঠ যোগাড় করার নির্দেশ প্রদান করি। তারপর নামাযের জন্য আযান বলার হুকুম করি। তারপর নামাযের জন্য আযান দেওয়া হোক। পরে কোন একজনকে (নামাযে) ইমামতি করার জন্য ঠিক করে দেই। তারপর যেসব লোক নামাযের জন্য বের হয়নি তাদের কাছে যাই ও তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেই। আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি তাদের এক ব্যক্তি জানতে পারত যে, ভাল মোটা হাড্ডি জুটিবে অথবা দুটি ভাল ক্ষুর পাবে তবে সে অবশ্য ইশার নামাযে হাজির হত। (বুখারী ৬৪৪, মুসলিম ৬৫১) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) নামাযের মধ্যে তোমাদের গৃহের নামাযই উত্তম, কেবল ফরয নামায ব্যতীত। (বুখারী ৭৩১, মুসলিম ৭৮১)

【2】

ইশা ও ফজর-এর নামায

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের আর মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য হল ইশা ও ফজরের নামাযে উপস্থিত হওয়া। তারা ঐ দুই নামাযে উপস্থিত হতে পারে না অথবা অনুরূপ কোন বাক্য বলেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি যখন কোন পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন রাস্তায় কাঁটাযুক্ত (বৃক্ষের) শাখা দেখতে পেয়ে সে তা তুলে ফেলল। আল্লাহ তা’আলা তার এই কাজটি গ্রহণ করলেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। [রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরও বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার (১) প্লেগাক্রান্ত (বা মহামারীতে মৃত), (২) পেটের পীড়ায় মৃত, (৩) যে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছে, (৪) ভূমিকম্পে কিছু চাপা পড়ে যার মৃত্যু হয়েছে এবং (৫) আল্লাহর পথে যে ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন। (বুখারী ৬৫২, মুসলিম ৪৩৭) আবূ বাকর ইবনু সুলায়মান ইবনু আবি হাস্মা (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একদিন ইবনু উবন আবি হাসমাকে ফজরের নামাযে উপস্থিত পাননি। উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বাজারের দিকে গেলেন। আর সুলায়মানের বাসগৃহ বাজার ও মসজিদের মাঝপথে অবস্থিত। তিনি সুলায়মানের মা ‘শিফা’-এর কাছে গেলেন। তারপর তাঁকে বললেন, আমি ফজরের নামাযে সুলায়মানকে দেখলাম না যে? তিনি (উত্তরে) বললেন, সে রাত্রে জেগে থেকে নামায আদায় করেছিল, পরে ঘুমিয়ে পড়েছে। (এটা শুনে) উমার (রাঃ) বললেন, ফজরের নামাযের জামা’আতে হাজির হওয়া আমার কাছে সারারাত (নফল) নামায আদায় হতে পছন্দনীয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু আবি আমরাহ আনসারী (র) হতে বর্ণিত; উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) একবার ইশার নামাযে এলেন এবং মসজিদে অল্প মুসল্লি দেখতে পেলেন। তারপর তিনি অধিক লোক আসার অপেক্ষায় মসজিদের শেষভাগে শুলেন। অতঃপর তাঁর নিকট ইবনু আবি আমরা এলেন এবং তাঁর কাছে বসলেন। তিনি জানতে চাইলেন তুমি কে? তিনি পরিচয় দিলেন। আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি পরিমাণ কুরআন কণ্ঠস্থ করেছ? তিনি তা জানালেন। তারপর উসমান (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি ইশার নামাযে উপস্থিত হয়, সে যেন অর্ধরাত্র নামায আদায় করল, আর যে ফজরের নামায আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি নামায আদায় করল। (সহীহ, ইমাম মুসলিম মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন ৬৫৬)

【3】

ইমামের সাথে নামায পুনরায় আদায় করা

বুসর ইবনু মিহজান (র) তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মজলিসে ছিলেন। তখন নামাযের আযান দেয়া হল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস হতে উঠলেন এবং নামায আদায় করলেন। (নামাযের পর) পুনরায় মজলিসে ফিরলেন। মিহজান (কিন্তু) তাঁর জায়গায় বসে রইলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে প্রশ্ন করলেন লোকের সাথে নামায আদায় করতে কোন জিনিস তোমাকে বারণ করল? তুমি কি মুসলিম নও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ (আমি মুসলিম), তবে আমি আমার ঘরে নামায আদায় করে এসেছি। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি নামায (ঘরে) আদায় করে থাকলেও যখন (মসজিদে) আস তখন লোকের সাথে নতুন করে নামায আদায় করবে। (সহীহ, নাসাঈ ৮৫৭, হাদীসটিকে আল্লামা আলবানী সহীহ বলেছেন আস সিলসিলা আস সহীহা, ১৩৩৭) নাফি’ (র) এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল আমি ঘরে নামায আদায় করি, যদি পরে ইমামের সাথে নামায পাই, তবে কি আমি পুনরায় তাঁর সাথে নামায আদায় করব? (জবাবে) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাকে বললেন, হ্যাঁ। সে ব্যক্তি বলল, কোন নামাযকে আমি (ফরয) গণ্য করব? ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, এটা কি আমার বলার বিষয়? সে হল আল্লাহর ব্যাপার, তিনি যে নামাযকে (ফরয) গণ্য করতে পারেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) জনৈক ব্যক্তি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন আমি ঘরে নামায আদায় করি, পরে যদি মসজিদে এসে ইমামকে নামাযে পাই তবে আমি কি তাঁর সাথে নামায আদায় করব? সাঈদ (র) বললেন, হ্যাঁ। সে ব্যক্তি তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলেন উভয় নামাযের কোনটিকে আমি (ফরয) নামায গণ্য করি? সাঈদ (র) তাঁকে বললেন, তা কি তুমি করবে? তা তো আল্লাহর কাজ। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) আমি আমার ঘরে নামায আদায় করি, তারপর মসজিদে আসি, তখন যদি ইমামকে নামাযে পাই তবে কি আমি তাঁর সাথে নামায আদায় করব? আবূ আইয়ূব (রাঃ) বললেন, তুমি তাঁর সাথে নামায আদায় কর, কেননা যে ব্যক্তি এইরূপ করবে সে জামা’আতের সওয়াব অথবা জামা’আতের তুল্য সওয়াব পাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব এবং ফজরের নামায আদায় করে, অতঃপর ঐ নামাযদ্বয় ইমামের সাথে পায়, তবে সে নামায (ইমামের সাথে) পুনরায় তাকে আদায় করতে হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি নামায ঘরে আদায় করেছে, তার ইমামের সাথে (পুনরায়) নামায আদায় করাতে কোন ক্ষতি নেই্ তবে মাগরিবের নামায এর ব্যতিক্রম, কারণ মাগরিবের নামায পুনরায় আদায় করলে জোড় নামায হয়ে যাবে।

【4】

জামা’আতের নামাযে পালনীয় বিধি

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেহ (ইমাম নিযুক্ত হয়ে) লোকদের নামায আদায় করালে, সে যেন নামায সংক্ষিপ্ত আদায় করে, কেননা তাদের মধ্যে আছে রুগ্ন, দুর্বল ও বৃদ্ধ ব্যক্তি। আর কোন ব্যক্তি একা নামায আদায় করলে সে যত ইচ্ছা লম্বা করতে পারবে। (বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭) নাফি’ (র) আমি (পাঞ্জেগানা) নামাযসমূহের কোন এক নামাযে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ)-এর পেছনে দাঁড়িয়েছিলাম। তাঁর সাথে আমি ভিন্ন আর কেহ ছিল না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) পেছনে হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) এক ব্যক্তি আকিক নামক স্থানে লোকের ইমামতি করত। উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) লোক পাঠিয়ে তাকে ইমামতি করতে নিষেধ করলেন। মালিক (র) বললেন, তাকে তিনি নিষেধ করেন এই কারণে যে, তার পিতার পরিচয় ছিল না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

ইমামের বসে নামায আদায় করা

আনাস ইবনু মালিক (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ঘোড়ায় আরোহণ করেছিলেন। অতঃপর ঘোড়া হতে পড়ে তাঁর ডান পার্শ্বের (কিছু অংশ) ছিড়ে গিয়েছিল। ফলে (পাঞ্জেগানা) নামাযসমূহের কোন এক নামায তিনি বসে আদায় করেছেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে নামায আদায় করছিলাম। নামায শেষে তিনি বললেন, অনুসরণের জন্যই ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে। কাজেই ইমাম দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায আদায় কর, ইমাম রুকূতে গেলে তোমরাও রুকূতে যাও, ইমাম মাথা উঠালে তোমরাও মাথা তোল। ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলেন, তোমরা বল رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ আর ইমাম বসে নামায আদায় করলে তোমরা সকলেই বসে নামায আদায় কর। (বুখারী ৬৮৯, মুসলিম ৪১১) আয়েশা (রাঃ) রালুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) বসে নমায আদায় করছিলেন, তাঁর পেছনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলেন। তিনি তাঁদের বসে আদায়ের জন্য ইশারা করলেন। যখন (নামায শেষ করে) ফিরলেন তিনি বললেন, ইমাম অবশ্য অনুসরণ করার জন্যই নিযুক্ত করা হয়েছে। তাই ইমাম রুকূ করলে তোমরাও রুকূ কর, ইমাম উঠলে তোমরাও উঠ, আর ইমাম বসে নামায আদায় করলে তোমরাও সকলে বসে নামায আদায় কর। (বুখারী ৬৮৮, মুসলিম ৪১২) উরওয়া (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসুস্থাবস্থায় ঘর হতে বের হলেন এবং মসজিদে আসলেন। আবূ বাকর (রাঃ)-কে লোকের ইমামতি করতে দেখলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে আবূ বাকর (রাঃ) পিছু হটতে চেষ্টা করলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি ইশারা করলেন তুমি যেভাবে আছ সেভাবে থাক। অতঃপর তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর পার্শ্বে বসলেন। আবূ বাকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযকে অনুসরণ করে নামায আদায় করতেছিলেন, আর অন্য মুসল্লিগণ নামায আদায় করছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)-এর নামাযকে অনুসরণ করে। (বুখারী ৬৮৩, মুসলিম ৪১৮)

【6】

বসে নামায আদায়কারীর নামাযের তুলনায় দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর নামাযের ফযীলত

‘আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো নামায যা সে বসা অবস্থায় আদায় করেছে (সওয়াবের বেলায়) তার দাঁড়িয়ে আদায় কৃত নামাযের অর্ধেকের সমতুল্য। (সহীহ, মুসলিম ৭১৮) ‘আস (রাঃ) আমরা যখন মদীনায় এলাম তখন মদীনার মহামারীরূপী প্রচণ্ড জ্বর আমাদেরও আক্রমণ করে বসল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের কাছে এলেন, তখন তাঁরা (সাহাবীগণ) তাঁদের নফল নামায বসে আদায় করতেছিলেন। (এটা দেখে) তিনি ইরশাদ করলেন বসে নামায আদায়কারীর নামায (সওয়াবের বেলায়) দাঁড়িয়ে আদায়কারীর নামাযের অর্ধেকের সমতুল্য। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【7】

বসে নামায আদায়

হাফসা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও নফল নামায বসে আদায় করতে দেখিনি। কিন্তু তাঁর ওফাতের মাত্র এক বৎসর পূর্ব হতে তিনি নফল নামায বসে আদায় করতেন এবং তরতীবের (স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে পাঠ করা) সাথে সূরা তিলাওয়াত করতেন। ফলে (পঠিত) সূরা অনেক বড় মনে হত সে সূরা হতে যে সূরা (প্রকৃতপক্ষে) এ সূরা হতে লম্বা। (সহীহ, মুসলিম ৭৩৩) আয়েশা (রাঃ) ; তিনি বলেছেন, বয়স বেশি না হওয়া পর্যন্ত তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাত্রের নামায (তাহাজ্জুদ) বসে আদায় করতে দেখেননি। (বয়ঃবৃদ্ধির পর) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে নামায আদায় করতেন। তবে যখন রুকূ করতে মনস্থ করতেন, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তারপর অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন, তারপর রুকূ করতেন। (বুখারী ১১১৮, মুসলিম ৭৩১) আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে নামায আদায় করতেন। তিনি বসা অবস্থায়ই কিরা’আত (কুরআন পাঠ) করতেন। যখন তাঁর ত্রিশ-চল্লিশ আয়াতের মত পড়া অবশিষ্ট থাকত তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন, তারপর দাঁড়ানো অবস্থায়ই কিরা’আত পাঠ করতেন, অতঃপর রুকূ ও সিজদা করতেন। দ্বিতীয় রাক’আতেও তিনি অনুরূপ করতেন। (বুখারী ১১১৯, মুসলিম ৭৩১) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) ও সাঈদ্ ইবনু মুসায়্যাব (র) তাঁরা দু’জনেই নফল নামায বসে আদায় করতেন ইহতিবা-এর অবস্থায়। (ইহতিবা হল দুই হাঁটুকে পেটের সাথে লাগিয়ে হাত দিয়ে বেড়ি করে বসা।) (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【8】

সালাতুল বুসতা

আয়েশা (রাঃ) আমাকে আয়েশা (রাঃ) তাঁর জন্য একটি মুসহাফ (কুরআন শরীফ) লেখার নির্দেশ দিলেন। এটাও বললেন, যখন তুমি [১] حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ এই আয়াতে পৌঁছাবে, তখন আমাকে জানাবে। আমি যখন উক্ত আয়াতে পৌঁছালাম তাঁকে খবর দিলাম। তিনি তারপর এভাবে লিখালেন, حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَصَلَاةِ الْعَصْرِ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ অতঃপর তিনি বললেন, আমি এটা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি। (সহীহ, মুসলিম ৬২৯) নাফি’ (র) আমি হাফসা (রাঃ)-এর জন্য মুসহাফ (কুরআন) লিখতাম, তিনি আমাকে বললেন, যখন তুমি حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ এ আয়াতে পৌঁছাও, তখন আমাকে খবর দিও। আমি ঐ আয়াতে পৌঁছালে তাঁকে জানালাম; তখন তিনি আমার দ্বারা (এইরূপ) লিখালেন حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَصَلَاةِ الْعَصْرِ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ. (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু ইয়ারবু মাখযুমী (র) আমি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, সালাতুল বুস’তা (মধ্যবর্তী নামায) হল যোহরের নামায। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আলী ইবনু আবি তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁরা দু’জনে বলতেন, সালাতুল বুস'তা হল ফজরের নামায। ইয়াহইয়া (র) বললেন, মালিক (র) বলেছেন, এ বিষয়ে অন্যান্য উক্তির মধ্যে আমার নিকট আলী ইবনু আবি তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (র)-এর উক্তিই পছন্দনীয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【9】

এক কাপড়ে নামায আদায়ের অনুমতি

উমার ইবনু আবি সালমা (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মু সালমা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করতে দেখেছেন, তিনি তখন চাদরের বাম প্রান্তকে বাম বগলের নিচের দিক দিয়ে তুলে ডান কাঁধের উপর রাখতেন এবং চাদরের ডান প্রান্তকে ডান বগলের নিচের দিকে দিয়ে তুলে বাম কাঁধের উপর রাখতেন, তাতে চাদরের দুই প্রান্ত দুই কাঁধের উপর পড়ে থাকত। (বুখারী ৩৫৬, মুসলিম ৫১৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) জনৈক প্রশ্নকারী এক কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করা যায় কিনা সে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিল; রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কি দু’টি করে কাপড় আছে? (বুখারী, ৩৫৮, মুসলিম ৫১৫) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছে কোন ব্যক্তি এক কাপড়ে নামায আদায় করতে পারে কি? তিনি (উত্তরে) বললেন, হ্যাঁ। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হল আপনি কি এটা করেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এক কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করি, অথচ আমার অনেক কাপড় আলনায় রাখা থাকে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এককাপড়ে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, অত্র হাদীসের বক্তব্য অন্যান্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।) রবী’আ ইবনু আবি আবদুর রহমান (র) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাযম একটি মাত্র কোর্তা পরিধান করে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই কাপড় যার না থাকে সে এক কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করবে এবং উপরে নিচে মুড়ি দিয়ে নিবে। আর কাপড় ছোট হলে লুঙ্গির মত পরিধান করবে। (সহীহ, বুখারী ৩৬১) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক কোর্তা পরিধান করে নামায আদায় করে, তাঁর জন্য আমার মতে এটা ভাল যে, তার উভয় গর্দানে কোন কাপড় অথবা পাগড়ির কিছু অংশ রেখে দেবে।

【10】

মেয়েদের জন্য জামা ও ওড়না পরিধান করে নামায আদায়ের অনুমতি

মালিক (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) কামিজ ও সরবন্দ পরিধান করে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মাদ ইবনু যায়দের মাতা (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মে সালমা (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করেন, মেয়েরা কি কি কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করবে? তিনি বলেছেন, যা উভয় পায়ের উপরিভাগ আবৃত করে ফেলে, এইরূপ পূর্ণ জামা ও সরবন্দ পরিধান করে নামায আদায় করবে। (যঈফ, মারফু, ইমাম আবূ দাঊদ মারফু সনদে বর্ণনা করেন ৬৩৯, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন সহীহ ও যঈফ সুনানে আবূ দাঊদ) মায়মূনা (রাঃ)-এর পালক সন্তান উবায়দুল্লাহ খাওলানী (র) মায়মূনা (রাঃ) জামা ও সরবন্দ পরিধান করে নামায আদায় করতেন। অথচ তাঁর গায়ে ইযার থাকত না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর নিকট জনৈক মহিলা এই মর্মে ফতওয়া জিজ্ঞেস করল যদি কোমরবন্দ বাঁধতে অসুবিধা হয়, তবে আমি শুধু জামা ও সরবন্দ পরিধান করেও নামায আদায় করতে পারি কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি জামা পূর্ণাঙ্গ হয় (অর্থাৎ পা ঢেকে যায়)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)