6. সালামের আদব

【1】

সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ

আল্লাহ বলেছেন, (আরবী) অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” (সূরা নূর ৬১ আয়াত) তিনি অন্য জায়গায় বলেন, (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।” (সূরা নিসা ৮৬ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন, (আরবী) অর্থাৎ “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ‘সালাম।’” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৫ আয়াত) আব্দুল্লাহ ইবনে আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ যে ফিরিশ্‌তামন্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা অরাহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ‘অরাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশী বললেন।’’ আবূ উমারা বারা ইবনে আযেব (রাঃ) তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেনঃ (১) রোগী দেখতে যাওয়া, (২) জানাযার অনুসরণ করা, (৩) হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেওয়া, (৪) দুর্বলকে সাহায্য করা, (৫) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা, (৬) সালাম প্রচার করা, এবং (৭) শপথকারীর শপথ পুরা করা।’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’ আবূ ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা‘ব তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে আসতেন এবং সকালে তাঁর সঙ্গে বাজার যেতেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন, তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতে বললেন। আমি বললাম, ‘আপনি বাজার গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচা-কেনার জন্য কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন না, তার দর-দাম জানতে চান না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান, এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেই জন্য) তিনি বললেন, ‘ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে যাই; যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দিই।’

【2】

সালাম দেওয়ার পদ্ধতি

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য দশটি নেকী।’’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য বিশটি নেকী।’’ তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘এই জিব্রীল আলাইহিস সালাম তোমাকে সালাম পেশ করছেন।’’ তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ‘অআলাইহিস সালামু অরাহ্‌মাতুল্লাহি অবারাকাতুহ। আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তখন তা তিনবার বলতেন; যাতে তাঁর কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন। মিক্বদাদ (রাঃ) তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদীসে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, তাতে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদেরকে শুনাতেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর অভ্যাসমত) এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। আসমা বিনতে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথমে সালাম করে।’’ আবূ জুরাই হুজাইমী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কেননা, ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদেরকে জানানো অভিবাদন বাক্য।’’ (আবু দাঊদ,তিরমিযী হাসান সহীহ, ইতোপূর্বে সম্পূর্ণ হাদীসটি ৮০০ নম্বরে গত হয়েছে।)

【3】

সালামের বিভিন্ন আদব-কায়দা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’’ আবূ উমামাহ সুদাই ইবনে আজলান বাহেলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম করে।’’ (আবূ দাঊদ উত্তম সূত্রে)

【4】

দ্বিতীয়বার সত্বর সাক্ষাৎ হলেও পুনরায় সালাম দেওয়া মুস্তাহাব, যেমন কোথাও প্রবেশ করার পর বের হয়ে গিয়ে পুনরায় তৎক্ষণাৎ সেখানে প্রবেশ করলে কিংবা দু’জনের মাঝে কোন গাছ তথা অনুরূপ কোন জিনিসের আড়াল হলে, তারপর আবার দেখা হলে পুনরায় সালাম দেওয়া মুস্তাহাব

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নামায ভুলকারীর হাদীসে এসেছে যে, সে ব্যক্তি এসে নামায পড়ল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ‘‘ফিরে যাও, এবং নামায পড়। কেননা, তোমার নামায পড়া হয়নি।’’ কাজেই সে ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল। তারপর পুনরায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। এভাবে সে তিনবার করল। উক্ত রাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের দু’জনের মাঝে গাছ বা দেওয়াল অথবা পাথর আড়াল হয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন আবার সালাম দেয়।’’

【5】

নিজ গৃহে প্রবেশ করার সময় সালাম দেওয়া উত্তম

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বৎস! তোমার বাড়িতে যখন তুমি প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও, তাহলে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য তা বরকতময় হবে।’’

【6】

শিশুদেরকে সালাম করা প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) তিনি কতিপয় শিশুর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।’

【7】

নারী-পুরুষের পারস্পরিক সালাম

সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এক মহিলা ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে আমাদের একটি বুড়ি ছিল। সে বীট (কেটে) হাঁড়িতে রেখে তাতে কিছু যব দানা পিষে মিশ্রণ করত। অতঃপর আমরা যখন জুমআর নামায পড়ে ফিরে আসতাম, তখন তাকে সালাম দিতাম। আর সে আমাদের জন্য তা পেশ করত।’ উম্মে হানী ফাখেতাহ বিনতে আবী ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের দিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাজির হলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন। ফাতেমা তাঁকে একটি কাপড় দিয়ে আড়াল করছিলেন। আমি (তাঁকে) সালাম দিলাম।...’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আসমা বিনতে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, ‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের) একদল মহিলার নিকট অতিক্রম করার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন।

【8】

অমুসলিমকে আগে সালাম দেওয়া হারাম এবং তাদের সালামের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। কোন সভায় যদি মুসলিম-অমুসলিম সমবেত থাকে, তাহলে তাদের (মুসলিমদের)কে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো।’’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিতাবধারীরা (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।’’ উসামা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সভা অতিক্রম করেন, যার মধ্যে মুসলিম, মুশরিক (মূর্তিপূজক) ও ইয়াহুদীর সমাগম ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সালাম করলেন।

【9】

সভা থেকে উঠে যাবার সময়ও সাথীদেরকে ত্যাগ করে যাবার পূর্বে সালাম দেওয়া উত্তম

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ সভায় পৌঁছবে তখন সালাম দেবে। আর যখন সভা ছেড়ে চলে যাবে, তখনও সালাম দেবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালাম অপেক্ষা বেশী উত্তম নয়।’’

【10】

বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি গ্রহণ ও তার আদব-কায়দা

মহান আল্লাহ বলেন, (আরবী) অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত) তিনি আরো বলেন, (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মত (সর্বদা) অনুমতি প্রার্থনা করে।” (সূরা নূর ৫৯ আয়াত) আবূ মূসা আশ্আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অনুমতি তিনবার নেওয়া চায়। যদি তোমাকে অনুমতি দেয় (তাহলে ভিতরে প্রবেশ করবে) নচেৎ ফিরে যাবে।’’ সাহ্‌ল ইবনে সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দৃষ্টির কারণেই তো (প্রবেশ) অনুমতির বিধান করা হয়েছে।’’ (অর্থাৎ দৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ঐ নির্দেশ।) (বুখারী ও মুসলিম) রিব্‌য়ী ইবনে হিরাশ (রাঃ) তিনি বলেন বনু ‘আমেরের একটা লোক আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, সে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (প্রবেশ) অনুমতি চাইল। তখন তিনি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং সে নিবেদন করল, ‘আমি কি প্রবেশ করব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খাদেমকে বললেন, ‘বাইরে গিয়ে এই লোকটিকে অনুমতি গ্রহণের পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং তাকে বল, তুমি বল ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ সুতরাং লোকটা ঐ কথা শুনতে পেয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে প্রবেশ করল। (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) কিল্‌দাহ ইবনে হাম্বাল রাদিয়াল্লাহু তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁর কাছে বিনা সালামে প্রবেশ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ফিরে যাও এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি ভিতরে আসব কি?’’

【11】

অনুমতি প্রার্থীর জন্য এটা সুন্নত যে, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কে? তখন সে নিজের পরিচিত নাম বা উপনাম ব্যক্ত করবে। আর উত্তরে ‘আমি’ বা অনুরূপ শব্দ বলা অপছন্দনীয়

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘.... অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে নিকটবর্তী (প্রথম) আসমানে চড়লেন এবং তার (দরজা) খোলার আবেদন করলেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনি কে?’ জিবরীল বললেন, ‘জিবরীল।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনার সাথে কে?’ তিনি বললেন, ‘মুহাম্মাদ।’ (এভাবে) তৃতীয়, চতুর্থ তথা বাকি সব আসমানে প্রত্যেক প্রবেশ-দ্বারে জিজ্ঞাসা করা হল ‘আপনি কে?’ আর জিবরীল উত্তর দিলেন, ‘জিবরীল।’ আবূ যার্র (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক রাতে আমি বের হলাম। হঠাৎ (দেখলাম,) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই পায়ে হেঁটে চলেছেন। আমি চাঁদের ছায়াতে চলতে লাগলাম। তিনি (পিছনে) ফিরে তাকালে আমাকে দেখে ফেললেন এবং বললেন, ‘‘কে তুমি?’’ আমি বললাম, ‘আবূ যার্র।’ উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হলাম, তখন তিনি গোসল করছিলেন। আর (তাঁর মেয়ে) ফাতেমা তাঁকে কাপড় দিয়ে আড়াল করছিলেন। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘কে তুমি?’’ আমি বললাম, ‘আমি উম্মে হানী।’ জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি বললেন, ‘‘কে?’’ আমি বললাম, ‘আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি, আমি।’’ যেন তিনি কথাটিকে অপছন্দ করলেন।

【12】

যে হাঁচি দিবে সে আলহামদু লিল্লাহ বললে তার উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। নচেৎ তা অপছন্দনীয়। হাঁচির উত্তর দেওয়া, হাঁচি ও হাই তোলা সম্পর্কিত আদব-কায়দা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি ভালবাসেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন হাঁচবে এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়বে তখন প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার উচিত হবে যে, সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। আর হাই তোলার ব্যাপারটা এই যে, তা হচ্ছে শয়তানের পক্ষ থেকে (আলস্য ও ক্লান্তির লক্ষণ)। অতএব কেউ যখন হাই তুলবে তখন সে যেন যথাসাধ্য তা রোধ করে। কেননা, যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে, তখন শয়তান তা দেখে হাসে।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাঁচবে, তখন সে যেন বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহ।’ (তা শুনে) তার ভাই বা সাথীর বলা উচিত, ‘য়্যারহামুকাল্লাহ।’ সুতরাং যখন জবাবে ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলবে, তখন যে (হাঁচি দিয়েছে) সে বলবে, ‘য়্যাহদীকুমুকাল্লাহু অ য়্যুস্‌লিহু বালাকুম।’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সুপথ দেখান ও তোমাদের অন্তর সংশোধন করে দেন।)’’ আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাঁচবে এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে, তখন তার উত্তর দাও। যদি সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ না বলে, তাহলে তার উত্তর দিয়ো না।’’ আনাস (রাঃ) দু’জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে হাঁচল। তিনি তাদের মধ্যে একজনের উত্তর দিলেন। আর দ্বিতীয় জনের উত্তর দিলেন না। যে ব্যক্তির উত্তর দিলেন না সে বলল, ‘অমুক ব্যক্তি হাঁচল তো তার উত্তর দিলেন, আর আমি হাঁচলাম, কিন্তু আপনি আমার উত্তর দিলেন না!?’ তিনি বললেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়েছে। আর তুমি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়নি তাই।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচতেন তখন নিজ হাত অথবা কাপড় মুখে রাখতেন এবং তার মাধ্যমে শব্দ কম করতেন।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে কৃত্রিমভাবে হাঁচতো এই আশায় যে, তিনি তাদের জন্য ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন) বলবেন। কিন্তু তিনি (তাদের হাঁচির জবাবে) বলতেন, ‘য়্যাহদীকুমুল্লাহু অয়্যুসলিহু বালাকুম’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সৎপথগামী করুন ও তোমাদের অন্তরসমূহকে সংশোধন করে দেন।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাই তুলবে, তখন সে যেন আপন হাত দিয়ে নিজ মুখ চেপে ধরে রাখে। কেননা, শয়তান (মুখে) প্রবেশ করে থাকে।’’

【13】

সাক্ষাৎকালীন আদব

আবূল খাত্ত্বাব ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে কি মুসাফাহা (করমর্দন) করার প্রথা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ইয়ামানবাসীরা আগমন করল, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে উঠলেন, ‘‘ইয়ামানবাসীরা তোমাদের নিকট আগমন করেছে।’’ (আনাস বলেন,) এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা আনয়ন করেছিল। বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জন মুসলিম সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলেই একে অপর থেকে পৃথক হবার পূর্বেই তাদের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়।’’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একটা লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য থেকে কোন লোক তার ভাইয়ের সাথে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথা নত করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ সাফওয়ান ইবনু আসসাল (রাঃ) এক ইয়াহূদী তার সাথীকে বললঃ এসো আমরা এই নাবীর নিকট যাই। ফলে তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল এবং তাঁকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। হাদীসের বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, তারপর তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ও পায়ে চুমা দিল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি নিঃসন্দেহে আপনি নাবী। এ হাদীস ইমাম তিরমিযী প্রমুখ সহীহ সানাদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী ও অন্যরা সহীহ সনদে) (ইমাম নাবাবী বলেনঃ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী প্রমুখ বিভিন্ন সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছি: ইমাম তিরমিযী এবং অন্য কারো নিকট একটি সনদ ব্যতীত দ্বিতীয় কোন সনদ নেই। তা সত্ত্বেও এ সনদে আব্দুল্লাহ্ ইবনু সালেমাহ্ আলমুরাদী রয়েছেন যার সম্পর্কে মতভেদ করা হয়েছে। তিনিই হচ্ছেন ‘জুনবী ব্যক্তি কর্তৃক কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ’ মর্মে বর্ণিত হাদীস আলী (রাযি) হতে বর্ণনাকারী। তাকে মুহাক্কিক হাফিযগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। যেমনটি লেখক নিজেই বলেছেন। যারা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন তাদের মধ্যে ইমাম আহমাদ, শাফে‘ঈ, বুখারী প্রমুখ রয়েছেন। যেমনটি ‘‘য‘ঈফু আবী দাঊদ’’ গ্রন্থে (নং ৩০) বিস্তারিত দেখবেন। আল্লামাহ্ যাইলা‘ঈ ‘‘নাসবুর রায়া’’ গ্রন্থে (৪/২৫৮) ইমাম নাসাঈর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ইমাম তিরমিযীর হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার। তিনি আরো বলেনঃ মুনযেরী বলেনঃ সম্ভত তার মুনকার সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কথা রয়েছে। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি তাতে বলেছেন, অতঃপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন দিলাম। হাদীসটি আবূ দাউদ বর্ণনা করেছেন। যঈফ। (এ নম্বরের হাদীসটি দুর্বল।) আয়িশাহ (রাঃ) যাইদ ইবনু হারিসা (রাঃ) মদীনায় এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। যাইদ (দেখা করার জন্য) তাঁর কাছে এলেন এবং দরজায় টোকা মারলেন। নিজের কাপড় টানতে টানতে উঠে গিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমা দিলেন। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন) আবূ যার্র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘কোন পুণ্য কাজকে তুমি অবশ্যই তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করার পুণ্যই হোক না কেন।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী (রাঃ)-কে চুম্বন দিলেন। (তা দেখে) আক্বরা’ ইবনে হাবেস বলে উঠল, ‘আমার তো দশটি সন্তান আছে, তাদের মধ্যে কাউকে আমি চুমা দিইনি।’ (তা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’