15. দাস-দাসী মুক্ত করা

【1】

দাস-দাসী আযাদ করার ফযীলাত প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলিম কোন মুসলিমকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করবে ঐ দাসের প্রতিটি অঙ্গের মুক্তির বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রত্যেক অঙ্গকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন। [১৫২৬] আবূ উমামা (রাঃ) যে মুসলিম দু’জন মুসলিম মহিলাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দান করবে ঐ দু’জন মহিলার মুক্তির বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে তার মুক্তি লাভ হবে। ইমাম তিরমিয়ী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [১৫২৮] কা’ব ইবনু মুররা কোন মুসলিম নারী যদি কোন মুসলিম নারীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তবে এটা তার জাহান্নাম হতে মুক্তিলাভের কারণ হবে।

【2】

কোন কৃতদাস আযাদ করা সর্বোত্তম

আবু যার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন 'আমল উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বললেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য অধিক এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। [১৫২৯]

【3】

শরীকানা দাস-দাসীর মুক্তকারীর সম্পর্কে

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু (সে পরিমাণ অর্থ) না থাকলে তার পক্ষ হতে ততটুকুই মুক্ত হবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে। [১৫৩০] আবু হুরাইরা (রাঃ একাকী পূর্ণ আযাদ করতে সক্ষম না হলে মূল্য ধার্য করা হবে আর ‘মূল্য সংগ্রহের জন্য দাসের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলবে’। এতে তার উপরে কোন কঠোরতা আরোপ করা হবে না।[১৫৩১] বলা হয়ে থাকে যে, চেষ্টা করার জন্য যে বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে তা ‘মুদরাজ’ বা কোন রাবীর নিজস্ব বক্তব্য- হাদীসের অংশ নয়। প্রকৃত পক্ষে এটিও হাদীসেরই অংশ। [১৫৩২]

【4】

পিতাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার ফযীলাত

আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন পুত্র তার পিতার হাক্ব আদায় করতে সক্ষম হবে না, কিন্তু যদি পিতাকে গোলাম অবস্থায় পায় আর তাকে ক্রয় করে আযাদ করে (তবে তার পিতার হক পরিশোধ হতে পারে)। [১৫৩৩]

【5】

কোন ব্যক্তি মাহরামের মনিব হলে ঐমাহরাম দাস আযাদ বলে গণ্য হবে

সামুরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এমন কোন আত্মীয়ের (রক্ত সম্পর্কযুক্ত লোকের) মনিব হয় যাদের মধ্যে বিয়ে হারাম তবে সে (উক্ত গোলাম) আযাদ হয়ে যায়।একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ এটিকে মাওকুফ বলেছেন।[১৫৩৪]

【6】

মৃত্যুর সময় সকল দাসকে মুক্ত করার বিধান যখন ঐ দাসগুলোই তার একমাত্র সম্পদ

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) কোন এক ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তার ছয়টি দাস মুক্ত করে দেন। ঐ দাসগুলা ছাড়া তার আর কোন সম্পদ ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডেকে পাঠালেন ও তিন ভাগে বিভক্ত করে দিলেন। তার পর প্রত্যেক ভাগের উপর লটারি দিয়ে এর ভিত্তিতে দু’টো দাসকে মুক্ত করে দিলেন ও চারজনকে দাস করে রাখলেন। এবং তাকে (এদের মনিবকে) কঠোর কথা বললেন। [১৫৩৫]

【7】

যে ব্যক্তি স্বীয় দাসকে আযাদ করে দেয় এবং তাকে সেবা করার শর্ত করে

সাফীনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (নবীর সহধর্মিণী) উম্মে সালামাহ (রাঃ) এর দাস ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, আমি তোমাকে এর শর্তে আযাদ করে দিচ্ছি যে, তুমি তোমার জীবন কাল পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমত করবে।। [১৫৩৬]

【8】

ওয়ালা ( দাসত্ব মুক্তি সুত্রে উত্তরাধিকার ) ঐ ব্যক্তির সাবাস্ত হবে যে দাসকে আযাদ করে দেয়

আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (ওয়ালা দাসত্ব মুক্তিসুত্রে উত্তরাধিকার) ঐ ব্যক্তির জন্য সাব্যস্ত হবে যে দাসকে আযাদ করে দেয়। [১৫৩৭]

【9】

ওয়ালা’র বিধানাবলী

ইবনু উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ওয়ালা একটা বলিষ্ঠ সম্পর্ক যেমন রক্তের সম্পর্ক (ঘনিষ্ঠ ও স্হায়ী হয়ে থাকে)। অতএব তা বিক্রি করা যায় না, এবং দান করাও যায় না । [১৫৩৮]

【10】

মুদাব্বার , মুকাতাব , উম্মু ওয়ালাদের বর্ণনা

【11】

‘মুদাব্বার’ গোলাম বিক্রির বিধান

জাবির (রাঃ) আনসার গোত্রের এক লোক তার গোলামকে মুদাব্বির বানালো (মনিবের মৃত্যু হলে গোলাম মুক্ত হয়ে যাবে) । ঐ গোলাম ছাড়া তার আর কোন মাল ছিল না। খবরটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পৌছাল। তিনি বললেন, গোলামটিকে আমার নিকট হতে কে কিনে নেবে? নু’আয়ম ইবনু নাহহা (রাঃ) তাকে আটশ’ দিরহামের বিনিময়ে কিনে নিল। [১৫৩৯] বুখারীর শব্দে আছে, লোকটি তার দাস কে আযাদ করে দেয়ার পর অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়ে। নাসায়ীর বর্ণনায় আছে, লোকটির কর্জ ছিল। ফলে গোলামটি আটশত দিরহামের বিনিময়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিক্রয় করে তাকে দিয়ে বললেন, তুমি তোমার ঋণ পরিশোধ করে দাও ।

【12】

চুক্তিবদ্ধ দাসের কিছু পাওনা পরিশোধ করলে তার বিধান

আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুকাতাব গোলাম স্বীয় মুক্তির জন্য নির্ধারিত অর্থের মধ্যে একটা দিরহাম পরিশোধ করতে বাকী থাকা পর্যন্ত সে দাস (বলে গন্য হবে)। [১৫৪০]

【13】

চুক্তিবদ্ধ দাসের পাওনা পরিশোধের সামর্থ্য থাকলে তার হুকুম

উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের (মেয়ে জাতির বা নাবীর সহধর্মিণীদের) কারো যখন কোন মুকাতাব গোলাম থাকে আর সে গোলামের নিকটে চুক্তিকৃত টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকে তবে ঐরুপ গোলাম সে যেন পর্দা করে। [১৫৪১ ]

【14】

মুকাতাব দাসের রক্তপণ

ইবনু ‘আব্বাস নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুকাতাব গোলাম নিহত হলে তার দিয়াত (খুনের ক্ষতিপূরণ) যে পরিমাণ অংশ আযাদ ছিল সে পরিমাণের জন্য আযাদের রক্ত পণ দিতে হবে। আর যে অংশ দাস ছিল সে পরিমাণের জন্য গোলামের অনুরূপ রক্ত মূল্য (দিয়াত) দিতে হবে। [১৫৪২]

【15】

রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দাস-দাসী রেখে মৃত্যুবরণ করেনেনি

আমর ইবনুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইন্তিকালের সময় কোন দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা), কোন দিনার, কোন গোলাম বা কোন দাসী আর না কোন বস্তু রেখে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর একটা মাত্র সাদা রং-এর খচ্চর, যুদ্ধাস্ত্র ও কিছু জমিও ছিল যা সাদাকাহ করে রেখেছিলেন। [১৫৪৩]

【16】

উম্মুল ওয়ালাদ মনিবের মৃত্যুর পর আযাদ হয়ে যাবে [১৫৪৪]

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন , যে কোন দাসী তার মনিবের ঔরসজাত সন্তান প্রসব করবে সে তার মনিবের মৃত্যুর পর আযাদ হয়ে যাবে । একদল হাদীস বিশারদ এটিকে ‘উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত মাওকুফ হাদীস হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। [১৫৪৫]

【17】

মুকাতাব দাস-দাসীকে সহযোগিতা করার ফযীলত

সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদ (দ্বীনের পথের সংগ্রামী)–কে সাহায্য করবে বা কোন ঋণী ব্যক্তিকে (যার সাংসারিক অভাব-অনটনের কারনে ঋণ হয়েছে) বা মুকাতাব দাস বা দাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য করবে, তাকে আল্লাহ ছায়াহীন ক্বিয়ামাতের কঠিন দিনে ছায়া প্রদান করবেন। [১৫৪৬]