3. হায়িয

【1】

লুঙ্গির উপর হায়িযওয়ালী নারীর সাথে শরীর মেশানো।

আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ হায়য অবস্থায় থাকলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে মিশামিশি করতে চাইলে তাকে প্রবল হায়যে ইযার পরার নির্দেশ দিতেন। তারপর তার সাথে মিশামিশি করতেন। তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেনঃ তোমাদের মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত কাম-প্রবৃত্তি দমন করার শক্তি রাখে কে? (বুখারী পর্ব ৬ : /৫ হাঃ ৩০২, মুসলিম ৩/১, হাঃ ২৯৩) মায়মূনাহ (রাঃ) মায়মূনাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন স্ত্রীর সাথে হায়য অবস্থায় মিশামিশি করতে চাইলে তাকে ইযার পরতে বলতেন। শায়বনী(রহ.) হতে সুফিয়ান (রহ.) এ বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬ : /৫ হাঃ ৩০৩, মুসলিম ৩/১, হাঃ ২৯৪)

【2】

একই লেপের তলে হায়িযওয়ালী নারীর সাথে শয়ন।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়য দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়যের কাপড় পরে নিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কি নিফাস দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, ‘হাঁ’। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর সঙ্গে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম। (বুখারী পর্ব ৬ : /২২ হাঃ ২৯৮, মুসলিম ৩/২, হাঃ ২৯৬) উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ........ আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র হতে পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করতাম। (বুখারী পর্ব ৬ : /২১ হাঃ ৩২২, মুসলিম ৩/২, হাঃ ২৯৬)

【3】

হায়িযওয়ালী নারী তার স্বামীর মাথা ধুয়ে দিতে এবং মাথার চুল আঁচড়ে দিতে পারবে।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ই‘তিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না। (বুখারী পর্ব ৩০ : /৩ হাঃ ২৪৮, মুসলিম ৩/৯ হাঃ ৩১৬) আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হায়য অবস্থায় আমার সাথে মিশামিশি করতেন। আর তিনি ই‘তিকাফরত অবস্থায় মাসজিদ হতে তাঁর মাথা বের করে দিতেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম। (বুখারী পর্ব ৩৩ : /৪ হাঃ ৩০১, মুসলিম ৩/ হাঃ ৩১৬) আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি ঋতুবতী ছিলাম। (বুখারী পর্ব ৬ : /৩ হাঃ ২৯৭, মুসলিম ৩/৩, হাঃ ৩০১)

【4】

মযী প্রসঙ্গে

মুহাম্মদ ইব্‌নুল হানফিয়্যাহ (রহ.) মুহাম্মদ ইব্‌নুল হানফিয়্যাহ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হতো। কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তাই আমি মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেনঃ এতে শুধু উযূ করতে হয়। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৪ হাঃ ১৭৮, মুসলিম ৩/৪ হাঃ ৩০৩) --- ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হতো। কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তাই আমি মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেনঃ এতে শুধু উযূ করতে হয়। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৪ হাঃ ১৭৮, মুসলিম ৩/৪ হাঃ ৩০৩)

【5】

জুনুবী ব্যক্তির ঘুমিয়ে থাকা বৈধ তবে তার জন্য উযূ করা মুস্তাহাব।

‘আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছে করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে সলাতের উযূর মত উযূ করতেন। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৭ হাঃ ২৮৮, মুসলিম ৩/৬, হাঃ ৩০৫) উমার ইব্‌নু’ল-খাত্তাব (রাঃ) ‘উমার ইব্‌নু’ল-খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমাদের কেউ জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ, উযূ করে নিয়ে জানাবাতের অবস্থায়ও ঘুমাতে পারে। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৬ হাঃ ২৮৭, মুসলিম ৩/৬, হাঃ ৩০৬) আবদুল্লাহ ইব্‌নু উমর (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, রাতে কোন সময় তাঁর গোসল ফার্‌য হয় (তখন কী করতে হবে?) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, উযূ করবে, লজ্জাস্থান ধুয়ে নিবে, তারপর ঘুমাবে। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৭ হাঃ ২৯০, মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৭) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন। বুখারী পর্ব ৫ : /৩৪ হাঃ ২৮৪, মুসলিম ৩/৬, হাঃ ৩০৯)

【6】

মনী নির্গত হওয়ার দরুন নারীর উপর গোসল করা ওয়াজিব।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উম্মু সুলায়মান (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে।’ তখন উম্মু সালমা (লজ্জায়) তার মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাদের সন্তান তাদের আকৃতি পায় কিভাবে? (বুখারী পর্ব ৩ : /৫০ হাঃ ১৩০, মুসলিম ৩/৭, হাঃ ৩১৩)

【7】

ফরয গোসলের বর্ণনা।

আয়িশাহ (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সলাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (বুখারী পর্ব ৫ : /১ হাঃ ২৪৮, মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬) মায়মূনাহ (রাঃ) মায়মূনাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য গোসলের পানি ঢেলে রাখলাম। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত ধুলেন। অতঃপর তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করলেন এবং মাটিতে তাঁর হাত ঘষলেন। পরে তা ধুয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তারপর তাঁর চেহারা ধুলেন এবং মাথার উপর পানি ঢাললেন। পরে ঐ স্থান হতে সরে গিয়ে দু’ পা ধুলেন। অবশেষে তাঁকে একটি রুমাল দেয়া হল, কিন্তু তিনি তা দিয়ে শরীর মুছলেন না। (বুখারী পর্ব ৫ : /৭ হাঃ ২৫৯, মুসলিম ৩/৯ হাঃ ৩১৭) ‘আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর এক আঁজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন। দু’হাতে মাথায় পানি ঢালতেন। (বুখারী পর্ব ৫ : /৬ হাঃ ২৫৮, মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৮)

【8】

ফরয গোসলে কী পরিমাণ পানি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।

আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র (কাদাহ) হতে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (বুখারী পর্ব ৫ : /২ হাঃ ২৫০, মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩১৯) আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁর ভাই তাঁকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোসল সম্পর্র্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি প্রায় এক সা‘আ এর সমপরিমাণ এক পাত্র আনালেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং স্বীয় মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল। (বুখারী পর্ব ৫ : /৩ হাঃ ২৫১, মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩২০) আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সা‘ (৪ মুদ) হতে পাঁচ মুদ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং উযু করতেন এক মুদ দিয়ে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৪৭ হাঃ ২০১, মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩২৫)

【9】

মাথায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে তিনবার পানি বইয়ে দেয়া মুস্তাহাব।

জুবায়র ইব্‌নু মুত‘ইম (রাঃ) জুবায়র ইব্‌নু মুত‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তিনবার আমার মাথায় পানি ঢালি। এই ব’লে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইঙ্গিত করেন। (বুখারী পর্ব ৫ : /৪ হাঃ ২৫৪, মুসলিম ৩/১১, হাঃ ৩২৭) আবূ জা‘ফর (রহ.) আবূ জা‘ফর (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি ও তাঁর পিতা, জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর নিকট ছিলেন। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, এক সা‘আ তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়। জাবির (রাঃ) বললেনঃ তোমার চেয়ে অধিক চুল যাঁর মাথায় ছিল এবং তোমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন [আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট ছিল। অতঃপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামত করেন। (বুখারী পর্ব ৫ : /৩ হাঃ ২৫২, মুসলিম ৩/১১, হাঃ ৩২৯)

【10】

হায়িয থেকে পবিত্রতা অর্জনকারিণী নারীর জন্য রক্ত মাখা গুপ্তাঙ্গে কস্তুরী মিশ্রিত নেকড়া দ্বারা মুছে ফেলা মুস্তাহাব।

আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈকা মহিলা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হায়যের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি তাকে গোসলের নিয়ম বলে দিলেন যে, এক টুকরা কস্তুরী লাগানো নেকড়া নিয়ে পবিত্রতা হাসিল কর। মহিলা বললেনঃ কিভাবে পবিত্রতা হাসিল করব? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা দিয়ে পবিত্রতা হাসিল কর। মহিলা (তৃতীয়বার) বললেনঃ কিভাবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে তুমি পবিত্রতা হাসিল কর। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি তাকে টেনে আমার নিকট নিয়ে আসলাম এবং বললামঃ তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন বিশেষভাবে মুছে ফেল। (বুখারী পর্ব ৬ : /১৩ হাঃ ৩১৪, মুসলিম ৩/১৩, হাঃ ৩৩২)

【11】

ইস্তিহাযা পীড়িত নারীর গোসল ও সলাত।

আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ফাতিমাহ বিনতু আবূ হুবায়শ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন রক্ত-প্রদর রোগগ্রস্তা (ইস্তিহাযাহ) মহিলা। আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। এমতাবস্থায় আমি কি সলাত পরিত্যাগ করবো?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, এতো শিরা হতে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। তাই যখন তোমার হায়য আসবে তখন সলাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সলাত আদায় করবে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬৩ হাঃ ২২৮, মুসলিম ৩/১৪, হাঃ ৩৩৩) আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) সাত বছর পর্যন্ত ইস্তিহাযায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি তাঁকে গোসলের নির্দেশ দিলেন এবং বললেনঃ এটা রগ থেকে বের হওয়া রক্ত। অতঃপর উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) প্রতি সলাতের জন্য গোসল করতেন। (বুখারী পর্ব ৬ : /২৬ হাঃ ৩২৭, মুসলিম ৩/১৪, হাঃ ৩৩৪)

【12】

সলাত ছাড়া হায়িযওয়ালী নারীর উপর সওম কাযা করা ওয়াজিব।

আয়িশাহ (রাঃ) জনৈকা মহিলা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বললেনঃ হায়যকালীন কাযা সলাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে আমাদের জন্য চলবে কি-না? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেনঃ তুমি কি হারূরিয়্যাহ? (খারিজীদের একদল) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ঋতুবতী হতাম কিন্তু তিনি আমাদের সলাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেনঃ আমরা তা কাযা করতাম না। (বুখারী পর্ব ৬ : /২০ হাঃ ৩২১, মুসলিম ৩/১৫, হাঃ ৩৩৫)

【13】

গোসলকারী কাপড় ইত্যাদি দ্বারা পর্দা করবে।

উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি ফত্হে মক্কার বছর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম প্রদান করলাম। তিনি জানতে চাইলেনঃ এ কে? আমি বললামঃ আমি উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মু হানী! গোসল শেষ করে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। সলাত সমাধা করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই [‘আলী ইব্‌নু আবূ তালিব (রাঃ)] এক ব্যক্তিকে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। সে ব্যক্তিটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে উম্মু হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মু হানী (রাঃ) বলেনঃ এ সময় ছিল চাশতের ওয়াক্ত। (বুখারী পর্ব ৮ : /৪ হাঃ ৩৫৭, মুসলিম ৩/১৬, হাঃ ৩৩৬)

【14】

নির্জনে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়িয।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহ্‌র কসম, মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “পাথর! আমার কাপড় দাও,” “পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহ্‌র কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্‌র কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল। (বুখারী পর্ব ৫ : /২০ হাঃ ২৭৮, মুসলিম ৩/১৮, হাঃ ৩৩৯)

【15】

ভালভাবে সতর ঢাকার ব্যাপারে সতর্কতা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কা‘বার (মেরামতের) জন্যে পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরিধানে ছিল লুঙ্গি। তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ ভাতিজা! তুমি লুঙ্গি খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হ’ত। জাবির (রাঃ) বলেনঃ তিনি লুঙ্গি খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনো নগ্ন অবস্থায় দেখা যায়নি। (বুখারী পর্ব ৮ : /৮ হাঃ ৩৬৪, মুসলিম ৩/১৯, হাঃ ৩৪০)

【16】

মনী নির্গত হলে গোসল অপরিহার্য (যা পরবর্তী অধ্যায়ে উল্লেখিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে)।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর নিকট লোক পাঠালেন। তিনি আসলেন। তখন তাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা ঝরছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়া করতে বাধ্য করেছি।’ তিনি বললেন, ‘জী।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যখন তাড়াহুড়ার কারণে মনী বের না হবে (অথবা বললেন), মনীর অভাবজনিত কারণে তা বের না হবে তখন উযূ করে নিবে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৪ হাঃ ১৮০, মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৫) উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া আল্লাহর রাসূল! স্ত্রীর সাথে সংগত হলে যদি বীর্য বের না হয় (তার হুকুম কী?) তিনি বললেনঃ স্ত্রী থেকে যা লেগেছে তা ধুয়ে উযূ করবে ও সালাত আদায় করবে। আবূ আব্দুল্লাহ [বুখারী (রহ.)] বলেনঃ গোসল করাই শ্রেয়। আর তা-ই সর্বশেষ হুকুম। আমি এই শেষের হাদীসটি বর্ণনা করেছি মতভেদ থাকার কারণে। কিন্তু পানি (গোসল) অধিক পবিত্রকারী। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৯ হাঃ ২৯৩, মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৬) যায়দ ইব্‌নু খালিদ (রাঃ) যায়দ ইব্‌নু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইব্‌নু ‘আফফান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কেউ যদি স্ত্রী সহবাস করে, কিন্তু মনী (বীর্য) বের না হয় (তবে তার হুকুম কী)? ‘উসমান (রাঃ) বললেনঃ ‘সে সলাতের ন্যায় উযূ করে নেবে এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি এ কথা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৪ হাঃ ১৭৯, মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৭)

【17】

(মনী নির্গত হলে গোসল ফরয) এটি রহিত; দু’ যৌনাঙ্গের মিলনের দ্বারা গোসল ওয়াজিব।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সংগত হলে, তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৮ হাঃ ২৯১, মুসলিম ৩/২২, হাঃ ৩৪৮)

【18】

আগুনে রান্না করা খাবার খেলে পুনরায় উযূ করতে হবে না।

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর কাঁধের গোশত খেলেন। অতঃপর সলাত আদায় করলেন, কিন্তু উযূ করলেন না। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫০ হাঃ ২০৭, মুসলিম ৩/২৪, হাঃ ৩৫৪) আমর বিন উমাইয়াহ (রাঃ) আমর বিন উমাইয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি বকরীর কাঁধের গোশ্‌ত কেটে খেতে দেখলেন। এ সময় সলাতের জন্য আহ্বান হল। তিনি ছুরিটি ফেলে দিলেন, অতঃপর সলাত আদায় করলেন; কিন্তু উযূ করলেন না। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫০ হাঃ ২০৮, মুসলিম ৩/২৪, হাঃ ৩৫৫) উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ (রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট (বকরীর) কাঁধের গোশত খেলেন, অতঃপর সলাত আদায় করলেন অথচ অযূ করলেন না। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫১ হাঃ ২১০, মুসলিম ৩/২৪, হাঃ ৩৫৬) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করলেন। অতঃপর কুলি করলেন এবং বললেনঃ ‘এতে রয়েছে তৈলাক্ত বস্তু’। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫২ হাঃ ২১১, মুসলিম ৩/২৪, হাঃ ৩৫৮)

【19】

যে ব্যক্তি উযূ আছে বলে দৃঢ় বিশ্বাসী অতঃপর সে হাদাসের দ্বারা উযূ ভঙ্গের সন্দেহে পতিত হয় সে পুনরায় উযূ না করেই সলাত আদায় করে তার প্রমাণ।

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম আল-আনসারী (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম আল-আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হল যে, তার মনে হয়েছিল যেন সলাতের মধ্যে কিছু হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ সে যেন ফিরে না যায়, যতক্ষণ না শব্দ শোনে বা দুর্গন্ধ পায়। (বুখারী পর্ব ৪ : /৪ হাঃ ১৩৭, মুসলিম ৩/২৬, হাঃ ৩৬১)

【20】

দাবাগাতের মাধ্যমে মৃত জন্তুর চামড়া পবিত্রকরণ।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মায়মূনা (রাঃ) কর্তৃক আযাদকৃত জনৈকা দাসীকে সদাকাহস্বরূপ প্রদত্ত একটি বকরীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন? তারা বললেনঃ এটা তো মৃত। তিনি বললেন, এটা কেবল ভক্ষণ হারাম করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৬১ হাঃ ১৪৯২, মুসলিম ৩/২৭, হাঃ ৩৬৩)

【21】

তায়াম্মুম।

আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন সফরে বের হয়েছিলাম যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেনঃ ‘আয়িশাহ কী করেছেন আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাঁদের সাথেও পানি নেই। আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন, তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঊরুর উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছ! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। এবং তাদের সাথেও পানি নেই। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহ্‌র ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার ঊরুর উপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন। উসায়্দ ইব্‌নু হুযায়্‌র (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বকরের পরিবারবর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ তারপর আমি যে উটে ছিলাম তাকে দাঁড় করালে দেখি আমার হারখানা তার নীচে পড়ে আছে। (বুখারী পর্ব ৭ : /১ হাঃ ৩৩৪, মুসলিম ৩/২৮, হাঃ ৩৬৭) শাক্বীক (রহ.) শাক্বীক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ (ইব্‌নু মাস‘ঊদ) ও আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। আবূ মূসা (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বললেনঃ কোন ব্যক্তি জুনুবী হলে সে যদি এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তা হলে কি সে তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করবে না? শাক্বীক (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ একমাস পানি না পেলেও সে তায়াম্মুম করবে না। তখন তাঁকে আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে সুরা মায়িদার এ আয়াত সম্পর্কে কী করবেন যে, “পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে”- (আল-মায়িদাহঃ ৬)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জবাব দিলেন মানুষকে সেই অনুমতি দিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে যে, সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই লোকেরা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। আমি বললামঃ আপনারা এ জন্যেই কি তা অপছন্দ করেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ আপনি কি ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-এর সম্মুখে ‘আম্মার (রাঃ)-এর এ কথা শোনেননি যে, আমাকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা প্রয়োজনে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সফরে আমি জুনুবী হয়ে পড়লাম এবং পানি পেলাম না। এজন্য আমি জন্তুর মত মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট ছিল- এই ব’লে তিনি দু’ হাত মাটিতে মারলেন, তারপর তা ঝেড়ে নিলেন এবং তা দিয়ে তিনি বাম হাতে ডান হাতের পিঠ মাসহ করলেন কিংবা রাবী বলেছেন, বাম হাতের পিঠ ডান হাতে মাসহ করলেন। তারপর হাত দু’টো দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল মাসহ করলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ আপনি দেখেন নি যে, ‘উমার (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হননি? (বুখারী পর্ব ৭ : /৮ হাঃ ৩৪৭, মুসলিম ৩/২৮, হাঃ ৩৬৮) আম্মার (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে জানতে চাইলঃ একবার আমার গোসলের দরকার হল অথচ আমি পানি পেলাম না। তখন ‘আম্মার ইব্‌নু ইয়াসার (রাঃ) ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনার কি সেই ঘটনা মনে আছে যে, একদা আমরা দু’জন সফরে ছিলাম এবং দু’জনেরই গোসলের প্রয়োজন দেখা দিল। আপনি তো সলাত আদায় করলেন না। আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সলাত আদায় করলাম। তারপর আমি ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য তো একটুকুই যথেষ্ট ছিল এ ব’লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ হাত মাটিতে মারলেন এবং দু’হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসহ করলেন।* (বুখারী পর্ব ৭ : /৪ হাঃ ৩৩৮, মুসলিম ৩/২৮, হাঃ ৩৬৮) আবূ জুহাইম আল-আনসারী (রাঃ) আবূ জুহাইম আল-আনসারী (রাঃ) ‘উমাইর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর গোলাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার কাছে অবস্থিত ‘বি’রে জামাল’ হতে আসছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাত হলো। লোকটি তাঁকে সালাম করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব না দিয়ে দেয়ালের নিকট অগ্রসর হয়ে তাতে (হাত মেরে) নিজের চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসহ করে নিলেন, তারপর সালামের জবাব দিলেন। (বুখারী পর্ব ৭ : /৩ হাঃ ৩৩৭, মুসলিম ৩/২৮, হাঃ ৩৬৯)

【22】

মুসলিম অপবিত্র হয় না এর দলীল।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার সাথে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাত হলো, তখন আমি জুনুবী ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তাঁর সাথে চললাম। এক স্থানে তিনি বসে পড়লেন। তখন আমি সরে পড়ে বাসস্থানে এসে গোসল করলাম। আবার তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আবূ হুরায়রাহ্! কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে (ঘটনা) বললাম। তখন তিনি বললেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ! মু’মিন অপবিত্র হয় না’। (বুখারী পর্ব ৫ : /২৪ হাঃ ২৮৫, মুসলিম ৩/২৯ হাঃ ৩৭১)

【23】

যখন পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন কী বলবে।

আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে যেতেন তখন বলতেন, اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ “হে আল্লাহ্! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।)” (বুখারী পর্ব ৪ : /৯ হাঃ ১৪২, মুসলিম ৩/৪২, হাঃ ৩৭৫)

【24】

উপবিষ্ট অবস্থায় ঘুমালে উযূ ভঙ্গ হয় না তার প্রমাণ।

আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেছে তখনও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের এক পাশে এক ব্যক্তির সাথে একান্তে কথা বলছিলেন, অবশেষে যখন লোকদের ঘুম আসছিল তখন তিনি সলাতে দাঁড়ালেন।* (বুখারী পর্ব ১০ : /২৭ হাঃ ৬৪২, মুসলিম ৩/৩৩, হাঃ ৩৭৬)