30. বিচার-ফায়সালা

【1】

শপথ করার দায়িত্ব বাদীর।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) দু’জন মহিলা একটি ঘর কিংবা একটি কক্ষে সেলাই করছিল। হাতের তালুতে সুই বিদ্ধ হয়ে তাদের একজন বেরিয়ে পড়ল এবং অপরজনের বিরুদ্ধে সুই ফুটিয়ে দেয়ার অভিযোগ করল। এই ব্যাপারটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি শুধুমাত্র দাবীর উপর ভিত্তি করে মানুষের দাবী পূরণ করা হয়, তাহলে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা থাকবে না। সুতরাং তোমরা বিবাদীদের আল্লাহ্‌র নামে শপথ করাও এবং এ আয়াত তার সম্মুখে পাঠ কর। এরপর তারা তাকে শপথ করাল এবং সে নিজ দোষ স্বীকার করল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শপথ বিবাদীকে করতে হবে। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৪৫৫২; মুসলিম ৩০/১, হাঃ ১৭১১)

【2】

বাহ্যিক অবস্থার ভিত্তিতে ফায়সালা এবং যে ব্যক্তি তার যক্তি প্রদর্শনে বাকপটু।

সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন তিনি তাঁর ঘরের দরজার নিকটে ঝগড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন। [তাঁর -এর কাছে বিচার চাওয়া হল] তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ। আমার কাছে (কোন কোন সময়) ঝগড়াকারীরা আসে। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটু। তখন আমি মনে করি যে, সে সত্য বলেছে। তাই আমি তার পক্ষে রায় দেই। বিচারে যদি আমি ভুলবশত অন্য কোন মুসলিমের হক তাকে দিয়ে থাকি, তবে তা দোযখের টুকরা। এখন সে তা গ্রহণ করুক বা ত্যাগ করুক। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ২৪৫৮; মুসলিম ৩০/৩, হাঃ ১৭১৩)

【3】

হিন্দার ফায়সালা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) হিন্‌দা বিন্‌ত উত্‌বা (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ লোক। আমাকে এত পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হতে পারে যতক্ষণ না আমি তার অজান্তে মাল থেকে কিছু নিই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে যা যথেষ্ট হয় তা তুমি নিতে পার। (বুখারী পর্ব ৬৯ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৫৩৬৪, ২২১১; মুসলিম ৩০/৪, হাঃ-১৭১৪) আয়িশাহ (রাঃ) উতবাহ্‌র মেয়ে হিন্দ (রাঃ) এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এক সময় আমার মনের অবস্থা পৃথিবীর বুকে কোন পরিবারকে লাঞ্ছিত হতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারকে অপমানিত দেখার চেয়ে অধিক কাঙিক্ষত ছিল না। কিন্তু এখন আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে দুনিয়ার বুকে কোন পরিবারকে সম্মানিত হতে দেখা আমার নিকট আপনার পরিবারকে সম্মানিত দেখার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তারপর সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। যদি তার মাল আমি ছেলে-মেয়েদের জন্য ব্যয় করি তবে তাতে কি আমার কিছু হবে? তিনি বললেন, না, যদি যথাযথ ব্যয় করা হয়। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৮২৬; মুসলিম ৩০/৪, হাঃ নং ১৭১৪)

【4】

বিনা প্রয়োজনে অধিক প্রশ্ন করা, গরীব ও অন্যান্যদের অধিকার আদায় না করা এবং হক্বদার না হয়ে কোন কিছু চাওয়া নিষিদ্ধ।

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা। (বুখারী পর্ব ৪৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ২৪০৮; মুসলিম ৩০/৫, হাঃ ৫৯৩)

【5】

বিচারকের সওয়াব যখন সে সঠিক ফায়সালায় পৌঁছতে আপ্রাণ চেষ্টা করে- তার ফায়সালা ঠিক হোক বা ভুল হোক।

‘আম্‌র ইব্‌নু ‘আস তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, কোন বিচারক ইজ্‌তিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর যদি কোন বিচারক ইজ্‌তিহাদে ভুল করেন তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। (বুখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৭৩৫২; মুসলিম ৩০/৬, হাঃ ১৭১৬)

【6】

রাগান্বিত অবস্থায় বিচারকের বিচার করা অপছন্দনীয়।

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন যে, আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তাঁর ছেলেকে লিখে পাঠালেন- সে সময় তিনি সিজিস্তানে অবস্থানরত ছিলেন যে, তুমি রাগের অবস্থায় বিবদমান দু’ব্যক্তির মাঝে ফায়সালা করো না। কেননা, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বিচারক রাগের অবস্থায় দু’জনের মধ্যে বিচার করবে না। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৭১৫৮; মুসলিম ৩০/৭, হাঃ ১৭১৭)

【7】

বাতিল রায় ও নব-আবিষ্কৃত বিষয়াবলী প্রত্যাখ্যান করা।

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এ শরীয়াতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা বাতিল।’ (বুখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৬৯৭; মুসলিম ৩০/৮ হাঃ ১৭১৮)

【8】

মুজতাহিদগণের মতভেদ প্রসঙ্গে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সাথে দু’টি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সঙ্গের একজন মহিলা বললো, “তোমার ছেলেটিই বাঘে নিয়ে গেছে।” অন্য মহিলাটি বললো, “না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে।” অতঃপর উভয় মহিলাই দাঊদ (‘আ.)-এর নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। অতঃপর তারা উভয়ে বেরিয়ে দাউদ (‘আ.)-এর পুত্র সুলায়মান (‘আ.)-এর নিকট দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা দু’জনে তাঁকে ব্যাপারটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকট একখানা ছোরা নিয়ে আস। আমি ছেলেটিকে দু’ টুক্‌রা করে তাদের দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। তখন তিনি ছেলেটি সম্পর্কে অল্প বয়স্কা মহিলাটির অনুকূলে রায় দিলেন। (বুখারী, পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ৩৪২৭; মুসলিম ৩০/১০ হাঃ ১৭২০)

【9】

দু’দলের ঝগড়া বিচারক কর্তৃক মীমাংসা করে দেয়া মুস্তাহাব।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক লোক অপর লোক হতে একখণ্ড জমি ক্রয় করেছিল। ক্রেতা খরিদকৃত জমিতে একটা স্বর্ণ ভর্তি ঘড়া পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলল, কারণ আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি এবং এতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করে দিয়েছি। অতঃপর তারা উভয়ই অপর এক লোকের কাছে এর মীমাংসা চাইল। তিনি বললেন, তোমাদের কি ছেলে-মেয়ে আছে? একজন বলল, আমার একটি ছেলে আছে। অন্য লোকটি বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বললেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সঙ্গে বিবাহ দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং বাকী অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪হাদীস নং ৩৪৭২; মুসলিম ৩০/১১ হাঃ ১৭২১)