42. স্বপ্ন

【1】

স্বপ্ন

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হয়, আর মন্দ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে খারাপ মনে হয়, তা হলে সে যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে যেন তিনবার থুথু ফেলে এবং এর অনিষ্ট থেকে পানাহ চায়। কেননা, তা হলে এ তার কোন ক্ষতি করবে না। (বুখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৫৭৪৭; মুসলিম পর্ব ৪২/ হাঃ ২২৬১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন ক্বিয়ামাত নিকটবর্তী হয়ে যাবে তখন মু’মিনের স্বপ্ন খুব কমই অবাস্তবায়িত থাকবে। আর মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৭০১৭; মুসলিম পর্ব ৪২/ হাঃ ২২৬৩) ‘উবাদাহ ইব্‌নু সামিত (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৯৮৭; মুসলিম পর্ব ৪২/ হাঃ ২২৬৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৬৯৯৪; মুসলিম ৪২ হাঃ ২২৬৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৯৮৮; মুসলিম পর্ব ৪২/ হাঃ ২২৬৩)

【2】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ যে স্বপ্নে আমাকে দেখল সে প্রকৃতপক্ষেই আমাকে দেখল।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখবে সে অচিরেই জাগ্রতাবস্থায়ও আমাকে দেখবে। কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৬৯৯৩; মুসলিম ৪২/১, হাঃ ২২৬৬)

【3】

স্বপ্নের ব্যাখ্যা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমি গত রাতে স্বপ্নে একখণ্ড মেঘ দেখতে পেলাম, যা থেকে ঘি ও মধু ঝরছে। আমি লোকদেরকে দেখলাম তারা তা থেকে তুলে নিচ্ছে। কেউ অধিক পরিমাণ আবার কেউ কম পরিমাণ। আর দেখলাম, একটা রশি যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত মিলে রয়েছে। আমি দেখলাম আপনি তা ধরে উপরে চড়ছেন। তারপর অপর এক ব্যক্তি তা ধরল ও এর সাহায্যে উপরে উঠে গেল। এরপর আরেক জন তা ধরে এর দ্বারা উপরে উঠে গেল। এরপর আরেকজন তা ধরল। কিন্তু তা ছিঁড়ে গেল। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেল। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার প্রতি আমার পিতা কুরবান হোক! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করার সুযোগ দিবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এর ব্যাখ্যা প্রদান কর। আবূ বকর বললেন, মেঘের ব্যাখ্যা হল ইসলাম। আর তার থেকে যে ঘি ও মধু ঝরছে তা হল কুরআন যার সুমিষ্টতা ঝরছে। কুরআন থেকে কেউ অধিক আহরণ করছে, আর কেউ কম। আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশিটি হচ্ছে ঐ হক (মহা সত্য) যার উপর আপনি প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। আপনি তা ধরবেন, আর আল্লাহ্ আপনাকে উচ্চে আরোহণ করাবেন। আপনার পরে আরেকজন তা ধরবে। ফলে এর দ্বারা সে উচ্চে আরোহণ করবে। অতঃপর আরেকজন তা ধরে এর মাধ্যমে সে উচ্চে আরোহণ করবে। এরপর আরেকজন তা ধরবে। কিন্তু তা ছিঁড়ে যাবে। পুনরায় তা জোড়া লেগে যাবে, ফলে সে এর দ্বারা উচ্চে আরোহণ করবে। হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমার পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। আমাকে বলুন, আমি ঠিক বলেছি, না ভুল? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কিছু তো ঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্‌র কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন যা আমি ভুল করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কসম দিও না। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৭০৪৬; মুসলিম ৪২/৩, হাঃ ২২৬৯)

【4】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্ন।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি (স্বপ্নে) দেখলাম যে, আমি মিসওয়াক করছি। আমার নিকট দু’ ব্যক্তি এলেন। একজন অপরজন হতে বয়সে বড়। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে কনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মিসওয়াক দিতে গেলে আমাকে বলা হলো, ‘বড়কে দাও’। তখন আমি তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দিলাম। আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, ‘নু‘আয়ম, ইবনুল মুবারাক সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৭৪ হাদীস নং ২৪৬; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭১) আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মাক্কাহ হতে হিজরাত করে এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে বহু খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হবে। স্থানটি মাদীনাহ ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াস্‌রিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তলোয়ার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রাংশ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের যে বিপদ ঘটেছিল এটা তা-ই। অতঃপর দ্বিতীয় বার তলোয়ারটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন সেটি আগের চেয়েও আরো উত্তম হয়ে গেল। এটা হল যে, আল্লাহ্ মুসলিমগণকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দিবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম একটি গরু এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ্ যা করেন সবই ভাল। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল-আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে ঐ সকল কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরস্কার যা আল্লাহ্ আমাদেরকে বদর দিবসের পর দান করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬২২; মুসলিম ৪২/৪ হাঃ ২২৭২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার মিথ্যুক মুসাইলামাহ (মাদীনায়) এসেছিল। সে বলতে লাগল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আমাকে তাঁর পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান তাহলে আমি তাঁর অনুগত হয়ে যাব। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ এসেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত ইবনু কাইস ইবনু সাম্মাসকে সঙ্গে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মুসাইলামাহ তার সঙ্গী-সাথীদের মাঝে ছিল, এই অবস্থায় তিনি তার কাছে পৌঁছলেন। তিনি বললেন, যদি তুমি আমার কাছে এ ডালটিও চাও তবে তাও আমি তোমাকে দেব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহ্‌র নির্দেশ কক্ষনো লঙ্ঘিত হবে না। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত আমার পক্ষ থেকে তোমাকে জবাব দেবে। এরপর তিনি তার নিকট হতে চলে আসলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি “আমি তোমাকে তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমন আমাকে দেখানো হয়েছিল”- এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৪৩৭৩-৪৩৭৪; মুসলিম ৪২/৪ হাঃ ২২৭৩)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম, তখন স্বপ্নে দেখলাম, আমার দু’হাতে স্বর্ণের দু’টি কঙ্কন। কঙ্কন দু’টি আমাকে চিন্তিত করল। তখন ঘুমের মধ্যেই আমার প্রতি ওয়াহী করা হল, কাকন দু’টিতে ফুঁ দাও। আমি সে দু’টিতে ফুঁ দিলে তা উড়ে গেল। আমি এর ব্যাখ্যা করেছি, দু’জন মিথ্যাচারী (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা আমার পরে বের হবে। তাদের একজন ‘আনসী, অন্যজন মুসাইলামাহ। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৪৩৭৪; মুসলিম ৪২/৪ ২২৭৩) সামুরাহ ইব্‌নু জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের বেলায় আল্লাহ্‌র ইচ্ছা, তারা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চলতে লাগলাম। আমরা কাত হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। দেখলাম, অপর এক ব্যক্তি তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পতিত হচ্ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা পুনরায় নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা পূর্বের মত পুনরায় ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার অনুরূপ আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহান্নাল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমণ্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র, চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। আওফ (রহ.) বলেন, আবূ রাজা (রহ.) কোন কোন সময় ‘ইয়যুশারশিরু’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইয়াশুক্কু’ শব্দ বলতেন। এরপর ঐ লোকটি শায়িত ব্যক্তির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও করে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি পূর্বের মত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে। তিনি [রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেনঃ আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলা সদৃশ একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি রয়েছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতারকাটা ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছে, যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। তথায় এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে; আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক কুশ্রী বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চতুর্দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ লোকটি কে? তারা বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে উপনীত হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চতুষ্পার্শ্বে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত অধিক আর কখনো আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এর ওপরে চড়ুন। আমরা ওপরে চড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা উপনীত হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন তথায় আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক সাক্ষাৎ করল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক সুন্দর মনে হয়। আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল। যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক কুশ্রী মনে হয়। তিনি বলেন, সাথীদ্বয় ওদেরকে বলল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল সুপ্রশস্ত প্রবহমান নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তাদের এ কুশ্রীতা দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্থান। তিনি বলেন, আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ রয়েছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা আপনার বাসগৃহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ্ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এতে প্রবেশ করি। তারা বলল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়। তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কী? তারা আমাকে বলল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তি যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফার্‌য সালাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে। আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত, এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল। সে হল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন কোন মিথ্যা বলে যা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল। আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর। আর ঐ কুশ্রী ব্যক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চতুষ্পার্শ্বে দৌড়াচ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশ্তা। আর এ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (‘আ.)। আর তাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিত্রাত (স্বভাবধর্মের) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। আর ঐসব লোক যাদের অর্ধেকাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধেকাংশ অতি কুশ্রী তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় প্রকারের কাজ মিশ্রিতভাবে করেছে। আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৯১ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৭০৪৭; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭৫)