43. ফাযায়েল

【1】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মু’জিযাসমূহ।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি খুঁজতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু পানি আনা হল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করতে বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উপচে পড়ছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তার দ্বারা উযূ করল। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ১৬৯; মুসলিম ৪৩/৩, হাঃ ২২৭৯) আবূ হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবূকের যুদ্ধে শরীক হয়েছি। যখন তিনি ওয়াদিউল কূরা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন এক মহিলা তার নিজের বাগানে উপস্থিত ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা এই বাগানের ফলগুলোর পরিমাণ আন্দাজ কর। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে দশ ওয়াসাক পরিমাণ আন্দাজ করলেন। অতঃপর মহিলাকে বললেনঃ উৎপন্ন ফলের হিসাব রেখ। আমরা তাবূক পৌছলে, তিনি বললেনঃ সাবধান! আজ রাতে প্রবল ঝড় প্রবাহিত হবে। কাজেই কেউ যেন দাঁড়িয়ে না থাকে এবং প্রত্যেকেই যেন তার উট বেঁধে রাখে। তখন আমরা নিজ নিজ উট বেঁধে নিলাম। প্রবল ঝড় হতে লাগল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে ত্বাই নামক পর্বতে নিক্ষেপ করল। আয়লা নগরীর শাসনকর্তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্যে একটি সাদা খচ্চর এবং একটি চাদর হাদিয়া দিলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সেখানকার শাসনকর্তারূপে বহাল থাকার লিখিত নির্দেশ দিলেন। (ফেরার পথে) ওয়াদিউল কুরা পৌঁছে সেই মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার বাগানে কি পরিমাণ ফল হয়েছে? মহিলা বলল, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুমিত পরিমাণ দশ ওয়াসাকই হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি দ্রুত মাদীনায় পৌছাতে ইচ্ছুক। তোমরা কেউ আমার সাথে দ্রুত যেতে চাইলে দ্রুত কর। অতঃপর যখন তিনি মাদীনা দেখতে পেলেন তখন বললেনঃ এটা ত্বাবাহ (মাদীনার অপর নাম)। এরপর যখন তিনি উহুদ পর্বত দেখতে পেলেনঃ এই পর্বত আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। আনসারদের সর্বোত্তম গোত্রটি সম্পর্কে আমি তোমাদের খবর দিব কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ বনু নাজ্জার গোত্র, অতঃপর বনু ‘আবদুল আশহাল গোত্র, এরপর বনু সা’ইয়ীদা গোত্র অথবা বনু হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্র। আনসারদের সকল গোত্রেই কল্যাণ রয়েছে। [আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন,] আমরা সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন আবূ উসায়দ (রাঃ) বলেন, আপনি কি শুনেননি যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদেরকে সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন? তা শুনে সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, হে আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আনসার গোত্রগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সকলের শেষ স্তরে স্থান দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটা কি তোমাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, তোমরাও শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছ? (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ১৪৮১ ও পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৭৯১; মুসলিম ৪৩/৩ হাঃ নং ১৩৯২)

【2】

আল্লাহ তা‘আলার উপর তাঁর ভরসা এবং মানুষের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তা‘আলার তাঁকে হিফাযাত করণ।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যোগদান করেছি। কাঁটা গাছে ভরা উপত্যকায় প্রচণ্ড গরম লাগলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি গাছের নিচে অবতরণ করে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং তরবারিখানা লটকিয়ে রাখেন। সাহাবীগণ সকলেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য ছড়িয়ে পড়লেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, হঠাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাঁর নিকট গিয়ে দেখলাম, এক গ্রাম্য আরব তাঁর সামনে বসে আছে। তিনি বললেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। এমন সময় সে আমার কাছে এসে আমার তরবারিখানা নিয়ে উঁচিয়ে ধরল। এতে আমি জেগে গিয়ে দেখলাম, সে খোলা তরবারি হাতে আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে, এখন তোমাকে আমার থেকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এতে সে তরবারিখানা খাপে ঢুকিয়ে বসে পড়ে। এ-ই সেই লোক। বর্ণনাকারী জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৪১৩৯; মুসলিম ৪৩/৪ হাঃ ৮৪৩)

【3】

“হিদায়াত ও ইল্ম” যা নিয়ে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পাঠানো হয়েছে তার দৃষ্টান্তের বর্ণনা।

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল ; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহ্‌র যে হিদায়ত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না। অন্য বর্ণনায় আছেঃ তিনি হলেন এমন ভূমির মত যার উপর পানি জমে থাকে। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৭৯; মুসলিম ৪৩/৫ হাঃ ২২৮২)

【4】

উম্মাতের উপর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দয়াদ্রতা ও যা তাদের ক্ষতি সাধন করবে তা থেকে স্পষ্ট সতর্কীকরণ।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের দৃষ্টান্ত এমন ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চতুর্দিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রাণী যেগুলো আগুনে পড়ে, তারা তাতে পড়তে লাগলো। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য টানতে লাগলো। কিন্তু তারা আগুনে পুড়ে মরলো। তদ্রুপ আমি তোমাদের কোমর ধরে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করি অথচ তারা তাতেই প্রবেশ করছে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৬৪৮৩; মুসলিম ৪৩/৬, হাঃ ২২৮৪)

【5】

তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ নবী হওয়ার বর্ণনা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এমন, এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল, তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমিই সে ইট। আর আমিই সর্বশেষ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩৫৩৫; মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন আমার ও অন্যান্য নবীগণের অবস্থা এমন, যেন কেউ একটি গৃহ নির্মাণ করলো আর একটি ইটের স্থান শূন্য রেখে নির্মাণ কাজ শেষ করে গৃহটিকে সুসজ্জিত করে নিল। জনগণ মুগ্ধ হল এবং তারা বলাবলি করতে লাগল, যদি একটি ইটের জায়গাটুকু খালি রাখা না হত। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩৫৩৪; মুসলিম ৪৩/৭ হাঃ ২২৮৭)

【6】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য “হাওজ” এর প্রমাণ ও তার বৈশিষ্ট্য।

জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৯; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৮৯) সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়া হবে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৩; মুসলিম ৪৩/৯ হাঃ ২২৯১) আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তখন বলব যে এরা তো আমারই উম্মাত। তখন বলা হবে, তুমি তো জান না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন তখন আমি বলব, দূর হও! আমার পরে যারা দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছ তারা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে দূর হও। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮৪; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯০, ২২৯১) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাউয (হাউয কাউসার) এক মাসের দূরত্ব সমান (বড়) হবে। তার পানি দুধের চেয়ে শুভ্র, তার ঘ্রাণ মিশ্‌ক-এর চেয়ে সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলি হবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৯;) আসমা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি হাউযের ধারে থাকব। তোমাদের মাঝ থেকে যারা আমার কাছে আসবে আমি তাদেরকে দেখতে পাব। কিছু লোককে আমার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার লোক, এরা আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, তুমি কি জান তোমার পরে এরা কী সব করেছে? আল্লাহ্‌র কসম! এরা দ্বীন থেকে সর্বদাই পশ্চাদমুখী হয়েছিল। তখন ইব্‌নু আবূ মুলায়কা বললেন, হে আল্লাহ্! দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা থেকে অথবা দ্বীনের ব্যাপারে ফিত্নায় পতিত হওয়া থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯৩; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৩) ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আট বছর পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে) এমনভবে দু‘আ করলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দু‘আ করেন। তারপর তিনি (ফিরে এসে) মিম্বারে উঠে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমিই তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর হাউযে কাউসারের ধারে তোমাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটবে। আমার এ স্থান থেকেই আমি হাউযে কাউসার দেখতে পাচ্ছি। তোমরা শির্‌কে জড়িয়ে যাবে আমি এ ভয় করি না। তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, তোমরা দুনিয়ায় সুখ-শান্তি লাভে প্রতিযোগিতা করবে। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪০৪২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৬) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউয-এর কাছে গিয়ে পৌঁছব। আর (ঐ সময়) তোমাদের কতিপয় লোককে নিঃসন্দেহে আমার সামনে উঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদেরকে পৃথক করে নেয়া হবে। তখন আমি আরয করব, প্রভু হে! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কী কীর্তি করেছে তাতো তুমি জান না। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৬; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৭) হারিসাহ ইব্‌নু ওয়াহ্ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাউযে কাউসারের আলোচনা করতে শুনেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ হাউযে কাউসার মাদীনাহ এবং সান‘আ নামক স্থানের মধ্যকার দূরত্বের মতো। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯১; মুসলিম ৪৩/৯ হাঃ ২২৯৮) বর্ণনাকারী তখন মুসতাওরিদ তাঁকে বললেন যে, ‘আল আওয়ানী’ যে বলেছেন তা কি তুমি শুননি? তিনি বললেন, না। মুসতাওরিদ বললেন, এর পাত্রগুলো তারকারাজির মত পরিলক্ষিত হবে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৯২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৮) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের সামনে আমার হাউয এর দূরত্ব হবে এতটুকু যতটুকু দূরত্ব জাররা ও আযরুহ্ নামক স্থানদ্বয়ের মাঝে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৭৭; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২২৯৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি নিশ্চয়ই (কিয়ামাতের দিন) আমার হাউয (কাউসার) হতে কিছু লোকদেরকে এমনভাবে তাড়াব, যেমন অপরিচিত উট হাউয হতে তাড়ানো হয়। (বুখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ২৩৬৭; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০২) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাউযের পরিমাণ হল ইয়ামানের আয়লা ও সান‘আ নামক স্থানদ্বয়ের দূরত্বের সমান আর তার পানপাত্র সমূহ আকাশের তারকারাজির সংখ্যাতুল্য। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮০; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০৩) আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের কতিপয় লোক হাউযের কাছে আসবে। তাদেরকে আমি চিনে নিব। আমার সামনে থেকে তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা আমার উম্মাত। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি জান না তোমার পরে এরা কী সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৫৩ হাদীস নং ৬৫৮২; মুসলিম ৪৩/৯, হাঃ ২৩০৪)

【7】

উহূদের যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষে জিব্‌রীল ও মীকাঈল (‘আ.)-এর যুদ্ধ করার বর্ণনা।

সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমি আরো দু’ ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষে তুমুল যুদ্ধ করছে। আমি তাদেরকে আগেও দেখিনি আর পরেও দেখিনি। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৪০৫৪; মুসলিম ৪৩/১০, হাঃ ২৩০৬)

【8】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বীরত্ব ও যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনের বর্ণনা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল লোকের চেয়ে সুশ্রী ও সাহসী ছিলেন। এক রাতে মাদীনার লোকেরা ভীত হয়ে শব্দের দিকে বের হলো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের কারণ অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবূ ত্বলহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার ছিলেন এবং তাঁর কাঁধে তরবারী ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। অতঃপর তিনি বললেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বললেন, এটি সমুদ্র। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৮২ হাদীস নং ২৯০৮; মুসলিম ৪৩/১১ হাঃ ২৩০৭)

【9】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রহমতের বায়ু অপেক্ষা মানুষদের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রামাযানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাঈল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রামাযানের প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আ.) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রহমতের বায়ু অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। (বুখারী পর্ব ১ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৬; মুসলিম ৪৩/১২ হাঃ ৩২০৮)

【10】

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দশ বছর পর্যন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উঃ শব্দ বলেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৬০৩৮; মুসলিম ৪৩/১৩, হাঃ ২৩০৯) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করলেন, তখন আবূ ত্বলহা (রাঃ) আমার হাতে ধরে আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আনাস একজন হুঁশিয়ার ছেলে। সে যেন আপনার খেদমত করে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি মুকীম এবং সফরকালে তাঁর খেদমত করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! যে কাজ আমি করে নিয়েছি এর জন্য তিনি আমাকে কোন দিন এ কথা বলেননি, এটা এরূপ কেন করেছ? আর যে কাজ আমি করিনি এর জন্যও এ কথা বলেননি, এটা এরূপ কেন করনি? (বুখারী পর্ব ৮৭ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬৯১১; মুসলিম ৪৩/১৩ হাঃ ২৩০৯)

【11】

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনও ‘না’ বলেননি এবং তাঁর অত্যধিক দানের বর্ণনা।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন কোন জিনিসই চাওয়া হয়নি, যার উত্তরে তিনি ‘না’ বলেছেন। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৬০৩৪; মুসলিম ৪৩/১৪ হাঃ ২৩১১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যদি বাহরাইনের মাল এসে যায় তাহলে আমি তোমাকে এতো এতো দিব। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত পর্যন্ত বাহরাইনের মাল এসে পৌঁছায়নি। পরে যখন বাহরাইনের মাল পৌঁছল, আবূ বকর (রাঃ)-এর আদেশে ঘোষণা করা হল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যার অনুকূলে কোন প্রতিশ্রতি বা ঋণ রয়েছে সে যেন আমার নিকট আসে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এতো এতো দিবেন বলেছিলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) আমাকে এক অঞ্জলি ভরে দিলেন, আমি তা গণনা করলাম এতে পাঁচ শ’ ছিল। তারপর তিনি বললেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে যাও। (বুখারী পর্ব ৩৯ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২২৯৬; মুসলিম ৪৩/১৪, হাঃ ২৩১৪)

【12】

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিশু ও অনাথদের প্রতি অত্যধিক দয়া এবং তাঁর বিনয় ও অন্যান্য সদ্ গুণাবলী।

‘আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আবূ সায়ফ্ কর্মকারের নিকট গেলাম। তিনি ছিলেন (নবী-তনয়) ইব্রাহীম (রাঃ)-এর দুধ সম্পর্কীয় পিতা। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইব্রাহীম (রাঃ)-কে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন এবং নাকে-মুখে লাগালেন। অতঃপর (আরেক বার) আমরা তার (আবূ সায়ফ্-এর) বাড়িতে গেলাম। তখন ইব্রাহীম (রাঃ) মুমূর্ষু অবস্থায়। এতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উভয় চক্ষু হতে অশ্র ঝরতে লাগল। তখন ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু ‘আওফ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আর আপনিও? (ক্রন্দন করছেন?) তখন তিনি বললেনঃ অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হৃদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তা-ই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন।(১) আর হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকসন্তপ্ত।(২) (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ১৩০৩; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৫) ১। হাদীসটি হতে বিপদে অশ্র ঝরানো আর মহান আল্লাহর নাফরমানী প্রকাশক শব্দাবলী বাদ দিয়ে মুখে শোক প্রকাশ করার অনুমতি পাওয়া যায়, পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নাফরমানী হয় কিংবা তাক্বদীরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশক শব্দাবলী পরিত্যাগ করার তাকীদ দেয়া হয়। ২। এ ধরনের বাকরীতি বিভিন্ন ভাষায় বিদ্যমান আছে। সুতরাং আরবীতে তো থাকবেই। বিধায় মৃত ব্যক্তিকে সংশোধন করার দলীল হিসাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীটি ব্যবহার করার কোনই অবকাশ নেই। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললো- আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার উপর (তা ফিরিয়ে দেয়ার) অধিকার রাখি? (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৫৯৯৮; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার হাসান ইবনু ‘আলীকে চুম্বন করেন। ঐ সময় তাঁর নিকট আক্‌রা‘ ইবনু হাবিস তামীমী (রাঃ) বসা ছিলেন। আক্‌রা‘ ইবনু হাবিস (রাঃ) বললেনঃ আমার দশটি পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন করিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে তাকালেন, তারপর বললেনঃ যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৫৯৯৭; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৮) জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (স্রষ্টার পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হবে না। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬০১৩; মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৯)

【13】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬২; মুসলিম ৪৩/১৬ হাঃ ২৩২০) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৫৯; মুসলিম ৪৩/১৬ হাঃ ২৩২১)

【14】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নারীদের প্রতি করুণা এবং উটের আরোহী মহিলা হলে উট চালককে ধীরে উট চালনার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ দান।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সফরে ছিলাম। তাঁর সঙ্গে তখন আনজাশাহ নামের এক কালো গোলাম ছিল। সে পুঁথি গাইছিল। রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ ওহে আনজাশাহ! তোমার সর্বনাশ। তুমি উটটিকে কাঁচপাত্র সদৃশ সওয়ারীদের নিয়ে ধীরে চালাও। (বুখারী, পর্ব ৭৮ : আদব-আচার, অধ্যায় ৯৫, হাদিস ৬১৬১; মুসলিম পর্ব ৪৩ : ফাযায়েল অধ্যায় ১৮, হাদিস ২৩২৩)

【15】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা, বৈধ কাজের মধ্যে সহজটিকে গ্রহণ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রতিশোধ নেয়া যখন তাঁর (আল্লাহ্‌র) হুকুমের অমর্যাদা করা হয়।

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখনই দু’টি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহ না হত। গুনাহ হতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহ্‌র সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারী, পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬০; মুসলিম পর্ব ৪৩; ফাযায়েল অধ্যায় ২০;হাঃ ২৩২৭

【16】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুঘ্রাণ, তাঁর কোমলতা ও তাঁর স্পর্শের কল্যাণময়তা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোন নরম ও গরদকেও আমি স্পর্শ করি নি। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক সুঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬১; মুসলিম পর্ব ৪৩;)

【17】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘামের সুগন্ধি এবং তদ্‌দ্বারা বারাকাত গ্রহণ।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা করতেন। এরপর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি তাঁর শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করতেন এবং তা একটা শিশির মধ্যে জমাতেন এবং পরে ‘সুক্ক’ নামীয় সুগন্ধির মধ্যে মিশাতেন। রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক-এর ওফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে, তিনি আমাকে অসিয়ত করলেনঃ যেন ঐ সুক্ক থেকে কিছুটা তাঁর সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং তা তাঁর সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬২৮১)

【18】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়ার এমনকি শীতকালেও ঘর্মাক্ত হয়ে যাওয়া।

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) হারিস ইব্‌নু হিশাম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার নিকট ওয়াহী কিরূপে আসে?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ [কোন কোন সময় তা ঘণ্টা বাজার মত আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয় এবং তা শেষ হতেই ফেরেশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই, আবার কখনো ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই।] ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তীব্র শীতের সময় ওয়াহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওয়াহী শেষ হলেই তাঁর ললাট হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (বুখারী পর্ব ১ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২; মুসলিম ৪৩/২৩, হাঃ ২৩৩৩)

【19】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শারীরিক আকৃতি এবং তিনি মানুষদের মধ্যে সর্বোত্তম অবয়বের অধিকারী ছিলেন।

বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থল প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দু’ কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে বেশি সুন্দর আমি কখনো কাউকে দেখিনি। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৫১; মুসলিম ৪৩/২৫ হাঃ ২৩৩৭) বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ৩৫৪৯; মুসলিম ৪৩/২৫ হাঃ২৩৩৭)

【20】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুলের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা।

ক্বাতাদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল মধ্যম ধরনের ছিল- না একেবারে সোজা লম্বা, না অতি কোঁকড়ান। আর তা ছিল দু’কান ও দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত। (বুখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ৫৯০৫; মুসলিম ৪৩/২৬ হাঃ২৩৩৮) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল (কখনও কখনও) কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হতো। (বুখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ৫৯০৩ ; মুসলিম ৪৩/২৬, হাঃ ২৩৩৮)

【21】

তাঁর বার্ধক্যের বর্ণনা।

মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি খিযাব লাগিয়েছেন? তিনি বললেনঃ বার্ধক্য তাঁকে অতি সামান্যই পেয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৭৭ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৫৮৯৪; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ ২৩৩৮) আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি আর তাঁর নীচ ঠোঁটের নিম্নভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৫; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ ২৩৪২) আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি। হাসান ইব্‌নু ‘আলী (রাঃ) ছিলেন তাঁরই সদৃশ। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৪; মুসলিম ৪৩/২৯ হাঃ২৩৪২)

【22】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুয়াতের মোহর, তার বর্ণনা এবং তা শরীরের কোন্ স্থানে ছিল তার প্রমাণ।

সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) আমার খালা আমাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার ভাগিনা অসুস্থ’। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং বরকতের দু‘আ করলেন। অতঃপর উযূ করলেন। আমি তাঁর উযুর (অবশিষ্ট) পানি পান করলাম। তারপর তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তখন আমি তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থলে নুবূওয়াতের মোহর দেখতে পেলাম। তা ছিল পর্দার ঘুণ্টির মত। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ১৯০; মুসলিম ৪৩/৩০, হাঃ ২৩৪৫)

【23】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈশিষ্ট্য এবং তাঁকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিসাবে প্রেরণ এবং তাঁর বয়স।

রাবী‘আহ ইব্‌নু আবূ ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বর্ণনা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন- বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলে না। তাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। মাথার চুল কোঁকড়ানোও ছিল না, আবার একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়। প্রথম দশ বছর মাক্কায় অবস্থানকালে ওয়াহী যথারীতি নাযিল হতে থাকে। অতঃপর দশ বছর মাদীনায় কাটান। অতঃপর তাঁর মৃত্যুর সময় তখন তাঁর মাথা ও দাড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিল না। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৪৭; মুসলিম ৪৩/৩১ হাঃ ২৩৩৮)

【24】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের দিন তাঁর বয়স কত ছিল।

আয়িশাহ (রাঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু হয় তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৫৩৬; মুসলিম ৪৩/৩২ হাঃ ২৩৪৯)

【25】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত দিন মাক্কাহ ও মাদীনায় অবস্থান করেন?

ইব্‌নু ‘আব্বাস(রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় তের বছর কাটান। তিনি তিষট্টি বছর বয়সে মারা যান। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৩৯০৩, ৩৮৫১; মুসলিম পর্ব ৪৩ হাদীস নং ২৩৪৯) (আ.প্র. ৩৬১৬, ই.ফা. ৩৬২০)

【26】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামসমূহ।

যুবায়র ইব্‌নু মুত‘ঈম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার পাঁচটি (প্রসিদ্ধ) নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহ্মাদ, আমি আল-মাহী, আমার দ্বারা আল্লাহ্ কুফর ও র্শিককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি আল-হাশির, আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হবে। আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষ আগমনকারী)। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৫৩২; মুসলিম ৪৩/৩৪ হাঃ ২৩৫৪)

【27】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জ্ঞান ও অধিক আল্লাহ ভীতি।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে কোন কাজ করলেন এবং অন্যদের তা করার অনুমতি দিলেন। তথাপি একদল লোক তা থেকে বিরত রইল। এ খবর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহ্‌র প্রশংসার পর বললেনঃ কিছু লোকের কী হয়েছে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌র সম্পর্কে তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং আমি তাঁকে তাদের চেয়ে অনেক অধিক ভয় করি। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৬১০১; মুসলিম ৪৩/৩৫, হাঃ ২৩৫৬)

【28】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র অনুসরণের অপরিহার্যতা।

‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, এক আনসারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে যুবাইর (রাঃ)-এর সঙ্গে হাররার নালার পানির ব্যাপারে ঝগড়া করল যে পানি দ্বারা খেজুর বাগান সিঞ্চন করত। আনসারী বলল, নালার পানি ছেড়ে দিন, যাতে তা (প্রবাহিত থাকে) কিন্তু যুবাইর (রাঃ) তা দিতে অস্বীকার করেন। তারা দু’জনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবাইর(রাঃ)-কে বললেন, হে যুবাইর! তোমার যমীনে (প্রথমে) সিঞ্চন করে নাও। এরপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দাও। এতে আনসারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, সে তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারায় অসন্তুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন, হে যুবাইর! তুমি নিজের জমি সিঞ্চন কর। এরপর পানি আটকে রাখ, যাতে তা বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে। (বুখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ২৩৫৯; মুসলিম ৪৩/৩৬ হাঃ ২৩৫৭) যুবাইর (রাঃ) আমার ধারণা এ আয়াতটি এ সম্পর্কে নাযিল হয়েছেঃ “তোমার রবের কসম, তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার আপনার উপর অর্পণ না করে” (আন-নিসা ৬৫)। (বুখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ২৩৬০; মুসলিম ৪৩/৩৬ হাঃ ২৩৫৭)

【29】

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মর্যাদা দেয়া, তাঁকে বিনা প্রয়োজনে এবং বিষয়ের সাথে সম্পর্কহীন ও অবাস্তব ইত্যাদি প্রশ্ন করা পরিত্যাগ করা।

সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় অপরাধী সেই ব্যক্তি যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা পূর্বে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্নের কারণে তা হারাম হয়ে গেছে। (বুখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৭২৮৯; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৫৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একটি খুতবা দিলেন যেমনটি আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বললেন, “আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং অধিক অধিক করে কাঁদতে”। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) নিজ নিজ চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কাঁদতে শুরু করলেন, এরপর এক ব্যক্তি (‘আবদুল্লাহ ইবনু হুযাইফাহ বা অন্য কেউ) বলল, আমার পিতা কে? রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “অমুক”। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (আরবী) [বুখারী পর্ব ৬৫ সূরা (৫) আল-মায়িদাহ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৪৬২১; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৯] আনাস (রাঃ) একবার লোকজন রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নানা প্রশ্ন করতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করতে তাঁকে বিরক্ত করে ফেললো। এতে তিনি রাগ করলেন এবং মিম্বারে আরোহণ করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করবে আমি তোমাদের সব প্রশ্নেরই বর্ণনা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছেন। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সঙ্গে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলোঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাইফাহ। তখন ‘উমার (রাঃ) বলতে লাগলেনঃ আমরা আল্লাহ্‌কে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিত্‌না থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তখন রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনও দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের সূরত আমাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দু’টি এ দেয়ালের পেছনেই অবস্থিত। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৬৩৬২; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৯) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। প্রশ্নের সংখ্যা অধিক হয়ে যাওয়ায় তখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদেরকে বললেনঃ ‘তোমরা আমার নিকট যা ইচ্ছে প্রশ্ন কর।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ ‘তোমার পিতা হুযাফাহ।’ আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ ‘তোমার পিতা হল শায়বার দাস সালিম।’ তখন ‘উমার(রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার অবস্থা দেখে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট তাওবাহ করছি।’ (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৯২; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৬০)

【30】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি তাকানোর ফাযীলাত এবং সেজন্য আকাঙক্ষা করা।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, তোমাদের নিকট এমন যুগ আসবে যখন তোমাদের পরিবার-পরিজনরা, ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার চেয়েও আমার সাক্ষাৎ পাওয়া তার নিকট অত্যন্ত প্রিয় বলে গণ্য করবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৫৮৯; মুসলিম ৪৩/৩৯ হাদীস নং ২৫২৬)

【31】

ঈসা (‘আ.)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ‘ঈসার অধিক ঘনিষ্ঠ। আর নবীগণ পরস্পর আল্লাতী ভাই। আমার ও তার মাঝখানে কোন নবী নেই। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৪২; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদাম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারইয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) (‘আ.) এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ বলেন, [“হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।] (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৩৪৩১; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘ঈসা (‘আ.) এক লোককে চুরি করতে দেখলেন, তখন তিনি বললেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলল, কক্ষণও নয়। সেই সত্তার কসম! যিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। তখন ‘ঈসা (‘আ.) বললেন, আমি আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনেছি আর আমি আমার দু’চোখ অবিশ্বাস করলাম। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৪৪; মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৮)

【32】

ইব্রাহীম খালীল (‘আ.)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নবী ইব্‌রাহীম (‘আ.) সূত্রধরদের অস্ত্র দিয়ে নিজের খাতনা করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল আশি বছর। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৬; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ২৩৭০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইব্‌রাহীম (‘আ.) তাঁর অন্তরের প্রশান্তির জন্য মৃতকে কিভাবে জীবিত করা হবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, একে যদি “শক” বলে অভিহিত করা হয় তবে এরূপ “শক” এর ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম (‘আ.)-এর চেয়ে অধিক উপযোগী। যখন ইবরাহীম (‘আ.) বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন, হাঁ, তা সত্ত্বেও যাতে আমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে (আল-বাকারাহঃ ২৬০)। অতঃপর [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লূত (‘আ.)-এর ঘটনা উল্লেখ করে বললেন।) আল্লাহ লূত (‘আ.)-এর প্রতি রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন আর আমি যদি কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকতাম যত দীর্ঘ সময় ইউসুফ (‘আ.) কারাগারে ছিলেন তবে তার (বাদশাহ্র) ডাকে সাড়া দিতাম। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৩৭২; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ১৫১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবরাহীম (‘আ.) তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা বলেননি। তন্মধ্যে দু’বার ছিল আল্লাহ্‌র ব্যাপারে। তার উক্তি “আমি অসুস্থ”-(সূরাহ আস্সাফফাত ৩৭/৮৯) এবং তাঁর অন্য এক উক্তি “বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি- (সূরাহ আম্বিয়া ২১/৬৩)। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি [ইবরাহীম (‘আ.)] এবং সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। তখন তাকে খবর দেয়া হল যে, এ এলাকায় এক ব্যক্তি এসেছে। তার সঙ্গে একজন সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আছে। তখন সে তাঁর নিকট লোক পাঠাল। সে তাঁকে নারীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, এ নারীটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটি আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট আসলেন এবং বললেন, হে সারা! তুমি আর আমি ব্যতীত পৃথিবীর উপর আর কোন মু’মিন নেই। এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আমি তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। অতঃপর সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো। তিনি যখন তার নিকট প্রবেশ করলেন এবং রাজা তাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তখন সারা আল্লাহর নিকট দু‘আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর দ্বিতীয়বার তাঁকে ধরতে চাইল। এবার সে পূর্বের মত বা তার চেয়ে কঠিনভাবে পাকড়াও হল। এবারও সে বলল, আল্লাহর নিকট আমার জন্য দু‘আ কর। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আবারও তিনি দু‘আ করলেন, ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর রাজা তার এক দারোয়ানকে ডাকল। সে তাকে বলল, তুমি তো আমার নিকট কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। অতঃপর রাজা সারার খিদমতের জন্য হা-যারাকে দান করল। অতঃপর তিনি (সারা) তাঁর (ইবরাহীম) নিকট আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বললেন, কী ঘটেছে? তখন সারা বললেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর সে হা-যারাকে খিদমতের জন্য দান করেছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আকাশের পানির ছেলেরা! হা-যারাই তোমাদের আদি মাতা। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৮; মুসলিম ৪৩/৪১ হাঃ ২৩৭১)

【33】

মূসা (‘আ.)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা (‘আ.) একাকী গোসল করতেন। এতে বানী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহ্‌র কসম, মুসা (‘আ.) ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা (‘আ.) একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (‘আ.) ‘পাথর! আমার কাপড় দাও,” “পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বানী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহ্‌র কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (‘আ.) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্‌র কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল। (বুখারী পর্ব ৫ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ২৭৮; মুসলিম ৪৩/৪২, হাঃ ৩৩৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা (‘আ.)-এর নিকট পাঠানো হল। তিনি তাঁর নিকট আসলে, মূসা (‘আ.) তাঁকে চপেটাঘাত করলেন। (যার ফলে তাঁর চোখ বেরিয়ে গেল।) তখন মালাকুল মাওত তাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ্ তাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করলেন, আবার গিয়ে তাঁকে বল, তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাঁর হাত রাখবেন, তখন তাঁর হাত যতটুকু আবৃত করবে, তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হবে। মূসা (‘আ.) এ শুনে বললেন, হে আমার রব! অতঃপর কী হবে? আল্লাহ্ বললেনঃ অতঃপর মৃত্যু। মূসা (‘আ.) বললেন, তা হলে এখনই হোক। তখন তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতদূর যায় বাইতুল মাক্বদিসের ততটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে নিবেদন করলেন। রাবী বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি সেখানে থাকলে অবশ্যই পথের পাশে লাল বালুর টিলার নিকটে তাঁর ক্ববর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম। (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৬৮ হাদীস নং ১৩৩৯; মুসলিম ৪৩/৪২ হাঃ ২৩৭২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি একে অপরকে গালি দিয়েছিল। তাদের একজন ছিল মুসলিম, অন্যজন ইয়াহূদী। মুসলিম লোকটি বলল, তাঁর কসম, যিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত প্রদান করেছেন। আর ইয়াহূদী লোকটি বলল, সে সত্তার কসম, যিনি মূসা (‘আ.)-কে সমস্ত জগতের মধ্যে ফাযীলাত দান করেছেন। এ সময় মুসলিম ব্যক্তি নিজের হাত উঠিয়ে ইয়াহূদীর মুখে চড় মারল। এতে ইয়াহূদী ব্যক্তিটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে তার এবং মুসলিম ব্যক্তিটির মধ্যে যা ঘটেছিল, তা তাঁকে অবহিত করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমাকে মূসা (‘আ.)-এর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিও না। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তাদের সাথে আমিও বেহুঁশ হয়ে পড়ব। তারপর সকলের আগে আমার হুঁশ আসবে, তখন (দেখতে পাব) মূসা (‘আ) আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানি না, তিনি বেহুঁশ হয়ে আমার আগে হুঁশে এসেছেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা যাঁদেরকে বেহুঁশ হওয়া হতে রেহাই দিয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন। (বুখারী পর্ব ৪৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪১১; মুসলিম ৪৩ অধ্যায়, হাঃ ২৩৭৩) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় এক ইয়াহূদী এসে বলল, হে আবুল কাসিম! আপনার এক সাহাবী আমার মুখে আঘাত করেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? সে বলল, একজন আনসারী। তিনি বললেন, তাকে ডাক। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ওকে মেরেছ? সে বলল, আমি তাকে বাজারে শপথ করে বলতে শুনেছিঃ শপথ তাঁর, যিনি মূসা (‘আ.)-কে সকল মানুষের উপর ফযীলত দিয়েছেন। আমি বললাম, হে খবীস! বল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরও কি? এতে আমার রাগ এসে গিয়েছিল, তাই আমি তার মুখের উপর আঘাত করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নবীদের একজনকে অপরজনের উপর ফযীলত দিও না। কারণ, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর জমিন ফাটবে এবং যারাই উঠবে, আমিই হব তাদের মধ্যে প্রথম। তখন দেখতে পাব মূসা (‘আ) আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, তিনিও বেহুঁশ লোকদের মধ্যে ছিলেন, না তাঁর পূর্বেকার (তুর পাহাড়ের) বেহুঁশীই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৪৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪১২; মুসলিম ৪৩/৪২, হাঃ ২৩৭৪)

【34】

ইউনুস (‘আ.)-এর বর্ণনা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ ‘আমি ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে উত্তম’ এ কথা কারো বলা উচিত নয়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন বান্দার জন্যই এ কথা বলা সমীচীন নয় যে, আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইব্‌নু মাত্তার থেকে উত্তম। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৩৪১৬; মুসলিম পর্ব ৪৩ হাঃ ২৩৭৩) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যক্তির এ কথা বলা ঠিক হবে না যে, আমি (নবী) ইউনুস ইব্‌নু মাত্তার চেয়ে উত্তম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলতে গিয়ে ইউনুস (‘আ.)-এর পিতার নাম উল্লেখ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৩৩৯৫; মুসলিম অধ্যায় ৪৩ হাদীস ২৩৭৭)

【35】

ইউসুফ (‘আ.)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষের মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে অধিক মুত্তাকী। তখন তারা বলল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বললেন, তা হলে আল্লাহর নবী ইউসুফ, যিনি আল্লাহর নবী’র পুত্র, আল্লাহর নবী’র পৌত্র এবং আল্লাহর খলীল-এর প্রপৌত্র। তারা বলল, আমরা আপনাকে এ ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বললেন, তা হলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছ? জাহিলী যুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যক্তি যদি তাঁরা ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন করেন। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৩৫৩; মুসলিম ৪৩/৪৪ হাঃ ২৩৭৮)

【36】

খাজির (‘আ.)-এর মর্যাদা।

সা‘ঈদ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা (‘আ.) [যিনি খাযির (‘আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে) তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ মূসা (‘আ.) একদা বনী ইসলাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি বললেন, ‘আমি সবচেয়ে জ্ঞানী।’ মহান আল্লাহ্ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্‌মকে আল্লাহ্‌র নিকট সোপর্দ করেন নি। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর নিকট এ ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তার সাক্ষাৎ পাব?’ তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। অতঃপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। অতঃপর তিনি ইউশা ‘ইব্ন নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি থলে হতে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা (‘আ.) ও তাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। অতঃপর তাঁরা তাদের বাকীদিন ও রাতভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা (‘আ.) তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে খুবই ক্লান্ত, আর মূসা (‘আ.)-কে যে স্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর সাথী তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম?’ মূসা (‘আ.) বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম।’ অতঃপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের নিকট পৌঁছে দেখতে গেলেন, এক ব্যক্তি (বর্ণনাকারী বলেন,) কাপড় মুড়ি দিয়ে আছেন। মূসা (‘আ.) তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেন, এ দেশে সালাম কোথা হতে আসল! তিনি বললেন, ‘আমি মূসা।’ খাযির প্রশ্ন করলেন, ‘বনী ইসরাঈলের মূসা (‘আ.)?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি?’ খাযির বললেন, “তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। হে মূসা (‘আ.)! আল্লাহ্‌র ইল্‌মের মধ্যে আমি এমন এক ইলম নিয়ে আছি যা তিনি কেবল আমাকেই শিখিয়েছেন, যা তুমি জান না। আর তুমি এমন ইলমের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিখিয়েছেন, তা আমি জানি না।” ‘মূসা (‘আ.) বললেন, “আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। অতঃপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতোমধ্যে তাঁদের নিকট দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সাথে তাদের তুলে নেয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে একবার কি দুবার সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির বললেন, ‘হে মূসা (‘আ.)! আমার এবং তোমার জ্ঞান (সব মিলেও) আল্লাহ্‌র জ্ঞানের তুলনায় চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে তার চেয়েও কম।’ অতঃপর খাযির নৌকার তক্তাগুলোর মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা (‘আ.) বললেন, এরা আমাদের বিনা ভাড়ায় আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন?’ খাযির বললেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না?” মূসা (‘আ.) বললেন, ‘আমার ত্রুটির জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোর হবেন না।’ বর্ণনাকারী বলেন, এটা মূসা (‘আ.)-এর প্রথমবারের ভুল। অতঃপর তাঁরা দুজন (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন। মূসা (‘আ.) বললেন, ‘আপনি হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন?’ খাযির বললেন “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না?” ইব্ন ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে অধিক জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইলেন কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর সেখানে তাঁরা এক ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম এমন একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি দাঁড় করে দিলেন। মূসা (‘আ.) বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য মজুরী নিতে পারতেন।’ তিনি বললেন, ‘এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মূসার ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ১২২; মুসলিম ৪৩/৪৬, হাঃ ২৩৮০)