47. ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায়

【1】

কুরআনের মুতাশাবিহ বাণী অনুসন্ধান করা নিষেধ এবং যারা তা করে তাদের প্রতি সতর্কতা এবং কুরআনে ইখতিলাফ করা নিষেধ।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতটি ......... “তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন। এগুলো কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলো রূপক; যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশে যা রূপক তার অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তাঁরা বলেনঃ আমরা এতে ঈমান এনেছি, এসবই আমাদের প্রভুর তরফ থেকে এসেছে। জ্ঞানবানরা ব্যতীত কেউ নাসীহাত গ্রহণ করে না” (সূরাহ আলু ইমরান ৩/৭)। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করলেনঃ ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবাহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৫৪৭; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৬৫) জুনদাব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবাদাত মনের চাহিদার অনুকুল হয় তিলাওয়াত করতে থাক এবং তাতে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে পড়া ত্যাগ কর। (বুখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ৩৭ হাদীস নং ৫০৬১; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ১ হাঃ ২৬৬৭)

【2】

খুবই ঝগড়াটে প্রসঙ্গে।

‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সেই লোক সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত, যে অতি ঝগড়াটে। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ২৪৫৭; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ২ হাঃ ২৬৬৮)

【3】

ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের রীতি-প্রথার অনুসরণ করা।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি যব-এর গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেনঃ আর কারা? (বুখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৭৩২০; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ৩, হাঃ ২৬৬৯)

【4】

শেষ যামানায় ইল উঠে যাওয়া ও বিলুপ্ত হওয়া এবং মূর্খতা ও ফিতনা প্রকাশ পাওয়া।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, কিয়ামাতের কিছু ‘আলামত হলঃ ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৮০; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৬৭১) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই ক্বিয়ামাতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ইল্-ম উঠিয়ে নেয়া হবে। সে সময় ‘হারজ্’ ব্যাপকতর হবে। আর ‘হারজ্’ হল (মানুষ) হত্যা। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৭০৬২-৭০৬৩; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৬৭২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সময় নিকটবর্তী হতে থাকবে, আর ‘আমাল হ্রাস পেতে থাকবে, কার্পণ্য ছড়িয়ে দেয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সহাবা-ই-কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন হত্যা, হত্যা। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৭০৬১; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ৪ হাঃ ১৫৭) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর ইব্‌নুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ‘ইলম উঠিয়ে নেন না, কিন্তু দ্বীনের আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার ভয় করি। যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মুর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাদের জিজ্ঞেস করা হলে না জানলেও ফাতাওয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ১০০; মুসলিম ৪৭ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৬৭৩)