16. দণ্ডবিধি অধ্যায়

【1】

প্রাণ-হত্যা

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন (মানবিক অধিকারের বিষয়) সর্বপ্রথমে লোকেদের মধ্যে যে বিচার করা হবে তা রক্ত সম্পর্কিত হবে।” (বুখারী ৬৮৬৪, মুসলিম ৪৪৭৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।” (মুসলিম ৬৭০৬) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) ইবনে উমার (রাঃ) আমরা বিদায়ী হজ্জ্বের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। এমতবস্থায় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। আর আমরা জানতাম না যে, বিদায়ী হজ্জ কী? পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর কানা দাজ্জালের কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, “আল্লাহ যে নবীই পাঠিয়েছেন, তিনি নিজ জাতিকে তার ব্যাপারে ভয় দেখিয়েছেন। নূহ ও তাঁর পরে আগমনকারী নবীগণ তার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যদি সে তোমাদের মধ্যে বের হয়, তবে তার অবস্থা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না। তোমাদের কাছে এ কথা গোপন নয় যে, তোমাদের প্রভু কানা নয়, আর দাজ্জাল কানা হবে। তার ডান চোখ কানা হবে, তার চোখটি যেন (গুচ্ছ থেকে) ভেসে ওঠা আঙ্গুর। সতর্ক হয়ে যাও, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি তোমাদের রক্ত ও মাল হারাম করে দিয়েছেন; যেমন তোমাদের এদিন হারাম তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে। শোনো! আমি কি (আল্লাহর পয়গাম) পৌঁছে দিয়েছি?” সাহাবীগণ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন,) তোমাদের জন্য বিনাশ অথবা আফশোস। দেখো, তোমরা আমার পর এমন কাফের হয়ে যেয়ো না যে, তোমরা এক অপরের গর্দান মারবে।” (বুখারী ৪৪০২, কিছু অংশ মুসলিম ২৩৪) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন (মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী) যিম্মী (অথবা সন্ধিচুক্তির পর বিপক্ষের কাউকে) হত্যা করবে সে ব্যক্তি জান্নাতের সুবাসও পাবে না। অথচ তার সুবাস ৪০ বছরে অতিক্রম্য দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।” (বুখারী ৩১৬৬, ৬৯১৪, ইবনে মাজাহ ২৬৮৬) ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মু’মিন ব্যক্তি তার দ্বীনের প্রশস্ততায় থাকে; যতক্ষণ না সে অবৈধ রক্তপাতে লিপ্ত হয়।” (আহমাদ ৫৬৮১, বুখারী ৬৮৬২) আবূ বাকরাহ নুফাই বিন হারেষ ষাক্বাফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যখন দু’জন মুসলমান তরবারি নিয়ে আপোসে লড়াই করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই দোযখে যাবে।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! হত্যাকারীর দোযখে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কি?’ তিনি বললেন, “সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল।” (বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, মুসলিম ৭৪৩৪) অন্য এক বর্ণনায় আছে, إِذَا الْمُسْلِمَانِ حَمَلَ أَحَدُهُمَا عَلَى أَخِيهِ السِّلاَحَ فَهُمَا فِى جُرُفِ جَهَنَّمَ فَإِذَا قَتَلَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ دَخَلاَهَا جَمِيعًا “দুইজন মুসলিম যখন একে অপরের উপর অস্ত্র চালনা করে, তখন তারা দোযখের কিনারায় অবস্থান করে। অতঃপর যখন তাদের একজন অপরজনকে হত্যা করে, তখন উভয়েই দোযখে যায়।” (মুসলিম ৭৪৩৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সাতটি ধ্বংসকারী কর্ম হতে দূরে থাক।”সকলে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তা কী কী?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর সাথে শির্ক করা, যাদু করা, ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সূদ খাওয়া, এতীমের মাল ভক্ষণ করা, (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী উদাসীনা মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক দেওয়া।” (বুখারী ২৭৬৬, মুসলিম ২৭২, আবূ দাউদ ২৮৭৬, নাসাঈ ৩৬৭১) মুআবিয়া (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুশরিক হয়ে মারা যায় অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, সে ব্যক্তির পাপ ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির পাপকে আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন।” (আহমাদ ১৬৯০৭, নাসাঈ ৩৯৮৪, হাকেম ৮০৩১-৮০৩২, আবূ দাউদ ৪২৭২ আবূ দারদা হতে, সহীহুল জামে’ ৪৫২৪) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “একজন মুসলিমকে খুন করার চাইতে জগৎ ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অধিক সহজ।” (তিরমিযী ১৩৯৫, নাসাঈ ৩৯৮৭) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন খুন হয়ে নিহত ব্যক্তি তার খুনীকে তার মাথা ও কপালের চুল ধরে উপস্থিত করবে। আর সে সময় তার শিরাগুলো থেকে রক্তের ফিনকি ছুটবে। সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি একে জিজ্ঞাসা করুন, ও কেন আমাকে খুন করেছে?’ পরিশেষে সে তাকে আরশের নিকটবর্তী করবে।” (তিরমিযী ৩০২৯, নাসাঈ ৪০০৫, ইবনে মাজাহ ২৬২১, সহীহুল জামে’৮০৩১) উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে হত্যা করে তা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করবে সে ব্যক্তির নফল, ফরয কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করবেন না।”(আবূ দাঊদ ৪২৭২, সহীহুল জামে’ ৬৪৫৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের প্রতি কোন লৌহদন্ড (লোহার অস্ত্র) দ্বারা ইঙ্গিত করে সে ব্যক্তিকে ফিরিশতাবর্গ অভিশাপ করেন; যদিও সে তার নিজের সহোদর ভাই হোক না কেন।” (অর্থাৎ, তাকে মারার ইচ্ছা না থাকলেও ইঙ্গিত করে ভয় দেখানো গোনাহর কাজ।) (মুসলিম ২৬১৬) জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “(মরণের পর) মানুষের যে অংশটি সবার আগে পঁচে দুর্গন্ধময় হবে তা হল তার পেট। সুতরাং যে ব্যক্তি সক্ষম যে, সে কেবল হালাল ছাড়া অন্য কিছু (হারাম) ভক্ষণ করবে না, সে যেন তা-ই করে। আর যে ব্যক্তি সক্ষম যে, সে আঁজলা পরিমাণ খুন বহিয়ে তার ও জান্নাতের মাঝে কোন অন্তরায় সৃষ্টি করবে না, সেও যেন তা-ই করে।” (বুখারী ৭১৫২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে বের হয়ে এবং জামাআত থেকে পৃথক হয়ে মারা যাবে সে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের মরণ মরবে। যে ব্যক্তি অন্ধ ফিতনার পতাকাতলে (হক-নাহক না জেনেই) যুদ্ধ করবে, অন্ধ পক্ষপাতিত্ব বা গোঁড়ামির ফলে ক্রুদ্ধ হবে অথবা অন্ধ পক্ষপাতিত্বের প্রতি আহবান করবে অথবা অন্ধ পক্ষপাতিত্বকে সাহায্য করবে, অতঃপর সে খুন হলে তার খুন জাহেলিয়াতের খুন। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে তরবারি বের করে ভালো-মন্দ সকল মানুষকে হত্যা করবে এবং তার মুমিনকেও হত্যা করতে ছাড়বে না, চুক্তিবদ্ধ মানুষের চুক্তিও পূরণ করবে না, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলভুক্ত নই।” (আহমাদ ৭৯৪৪, মুসলিম ৪৮৯২) আমর বিন শুআইব আমর বিন শুআইব নিজ পিতা ও তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ আযযা অজাল্লার সবচেয়ে বেশি অবাধ্য মানুষ সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর হারাম-সীমানার ভিতরে খুন করেছে অথবা যে তার খুনী নয়, তাকে খুন করেছে অথবা জাহেলী যুগের খুনের বদলা নিতে খুন করেছে।” (আহমাদ ৬৭৫৭, আঃ রাযযাক ৯১৮৮)

【2】

ব্যভিচার

আব্দুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আরবের মরণ! আরবের মরণ! আমি তোমাদের উপর আমার সবচেয়ে অধিক যে জিনিসের ভয় হয়, তা হল ব্যভিচার ও গুপ্ত কুপ্রবৃত্তি।” (ত্বাবারানী, সঃ তারগীব ২৩৯০) আবূ বারযাহ আসলামী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি তোমাদের জন্য যে সকল জিনিস ভয় করি, তার মধ্যে অন্যতম হল তোমাদের উদর ও যৌন-সংক্রান্ত ভ্রষ্টকারী কুপ্রবৃত্তি এবং ভ্রষ্টকারী ফিতনা।” (আহমাদ ১৯৭৭২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের ব্যভিচারের অংশ লিখে দিয়েছেন, যা সে অবশ্যই পেয়ে থাকবে। সুতরাং চক্ষুর ব্যভিচার দর্শন, জিহ্বার ব্যভিচার হল কথন, মন আশা ও কামনা করে এবং জননেন্দ্রিয় তা সত্যায়ন অথবা মিথ্যায়ন করে। (বুখারী ৬২৪৩, ৬৬১২, মুসলিম ৬৯২৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে ব্যভিচার করতে পারে না। কোন চোর যখন চুরি করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে চুরি করতে পারে না এবং কোন মদ্যপায়ী যখন মদ্যপান করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে মদ্যপান করতে পারে না।” (বুখারী ২৪৭৫, মুসলিম ২১১, আসহাবে সুনান) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (বুখারী ৬৪৭৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান)এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৪০৯, হাসান) আবু হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর (ঐ) ছায়া ভিন্ন অন্য কোন ছায়া থাকবে না; তন্মধ্যে--- একজন সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্তা সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।” (বুখারী ৬৬০, মুসলিম ২৪২৭) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে (বানী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, ‘এহেন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ কর।’সুতরাং তারা স্ব স্ব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে) দু’আ করতে লাগল। তাদের মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার ছিল এক চাচাতো বোন। সে ছিল আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়া। একদিন আমি তার সাথে ব্যভিচার করতে চাইলে সে সম্মত হল না। অতঃপর এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে বাধ্য হয়ে সে আমার নিকট এল। আমি তাকে একশত বিশ দীনার এই শর্তে দিলাম যে, সে আমাকে তার দেহ সমর্পণ করে দেবে। একদা সে তাই করল। অতঃপর যখন আমি তাকে আমার আয়ত্তে পেলাম (অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, অতঃপর আমি যখন তার দুই পায়ের ফাঁকে বসলাম) তখন সে আমাকে বলল, ‘আল্লাহকে ভয় কর। আর অবৈধভাবে তুমি আমার কৌমার্য নষ্ট করে দিও না।’এই কথা শুনামাত্র আমি তার সাথে যৌন-মিলন করতে দ্বিধাবোধ করলাম। আমি তাকে ছেড়ে সরে গেলাম অথচ সে আমার নিকট একান্ত প্রিয়পাত্রী ছিল। আর যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে প্রদান করেছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ গো! যদি তুমি জান যে, আমি একাজ কেবলমাত্র তোমার সন্তুষ্টিলাভের আশায় করেছি তাহলে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা হতে আমাদেরকে রক্ষা কর। এরপর পাথরটি (একটু) সরে গেল।---” (বুখারী ২২৭২, মুসলিম ২৭৪৩) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তিন ব্যক্তি ছাড়া ‘আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল’এ কথায় সাক্ষ্যদাতা কোন মুসলিমের খুন (কারো জন্য) বৈধ নয়; বিবাহিত ব্যভিচারী, খুনের বদলে হত্যাযোগ্য খুনী এবং দ্বীন ও জামাআত ত্যাগী।” (বুখারী ৬৮৭৮, মুসলিম ৪৪৬৮-৪৪৭০ আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আমি (অথবা এক ব্যক্তি) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কী?’ উত্তরে তিনি বললেন, “এই যে, তুমি তাঁর কোন শরীক নির্ধারণ কর---অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” আমি বললাম, ‘এটা তো বিরাট! অতঃপর কোন্ পাপ?’ তিনি বললেন, “এই যে, তোমার সাথে খাবে---এই ভয়ে তোমার নিজ সন্তানকে হত্যা করা।” আমি বললাম, ‘অতঃপর কোন পাপ?’ তিনি বললেন, “প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচার করা।” আর এ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا - يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا অর্থাৎ, (আল্লাহর বান্দারা) আল্লাহর সঙ্গে কোন উপাস্যকে অংশী করে না, আল্লাহ যাকে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হত্যা নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এ সব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন ওদের আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে তারা হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে। (সূরা ফুরকান ৬৮-৬৯) (বুখারী ৪৪৭৭, ৭৫৩২ প্রভৃতি, মুসলিম ২৬৭-২৬৮, তিরমিযী, নাসাঈ) সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) নিবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক স্বপ্নের বর্ণনায় বলেন, “---সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং (তন্দুর) চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ রয়েছে। আর নীচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার করে উঠছে। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ ফেরেশতারা আমাকে বললেন, ‘চলুন, চলুন।’অতঃপর তাঁরা বললেন, ‘যে সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা (তন্দুর) চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে, তারা হল ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।” (বুখারী ১৩৮৬) বুরাইদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যখনই কোন জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোন জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে, তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোন জাতি যাকাৎ-দানে বিরত হয়, তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” (হাকেম ২৫৭৭, বাইহাকী ৬৬২৫, ১৯৩২৩, বাযযার ৩২৯৯, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৭) আবু হুরাইরা (রাঃ) আমি শুনেছি, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ক্রীতদাসী ব্যভিচার করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তাকে কশাঘাতের দন্ড দেবে এবং ভর্ৎসনা করবে না। দ্বিতীয়বার ব্যভিচার করলে তাকে অনুরূপ দন্ড দেবে এবং ভর্ৎসনা করবে না। তৃতীয়বার ব্যভিচার করলে একটি চুলের রশির বিনিময়েও তাকে বিক্রয় করে দেবে।”(বুখারী ২১৫২,২১৫৩, মুসলিম ৪৫৪২-৪৫৪৪) আবূ উমামা (রাঃ) একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ রসূল! আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!’ এ কথা শুনে লোকেরা তাকে ধমক দিয়ে বলল, ‘থামো, থামো! (এ কী বলছ তুমি?)’ কিন্তু মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, “আমার কাছে এসো।” সে তাঁর কাছে এসে বসলে তিনি তাঁকে বললেন, “তুমি কি নিজ মায়ের জন্য তা পছন্দ কর?” সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’ তিনি বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো তাদের মায়েদের জন্য তা পছন্দ করে না।” অতঃপর তিনি বললেন, “তাহলে তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ কর?” সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’ তিনি বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো তাদের মেয়েদের জন্য তা পছন্দ করে না।” অতঃপর তিনি বললেন, “তাহলে তুমি কি তোমার বোনের জন্য তা পছন্দ কর?” সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’ তিনি বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো তাদের বোনেদের জন্য তা পছন্দ করে না।” অতঃপর তিনি বললেন, “তাহলে তুমি কি তোমার ফুফুর জন্য তা পছন্দ কর?” সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’ তিনি বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো তাদের ফুফুদের জন্য তা পছন্দ করে না।” অতঃপর তিনি বললেন, “তাহলে তুমি কি তোমার খালার জন্য তা পছন্দ কর?” সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’ তিনি বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো তাদের খালাদের জন্য তা পছন্দ করে না।” অতঃপর তিনি তার বুকে হাত রাখলেন এবং তার জন্য দু’আ করে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ওর গোনাহ মাফ করে দাও, ওর হৃদয়কে পবিত্র করে দাও এবং ওকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সেই যুবক আর ব্যভিচারের দিকে ভ্রক্ষেপও করেনি। (আহমাদ ২২২১১, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৭৯, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৫৪১৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৭০)

【3】

বিকৃত যৌনাচার

জাবের (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “নিঃসন্দেহে আমি আমার উম্মতের উপর যে পাপাচারের সবচেয়ে অধিক আশঙ্কা করি তা হল, লূত নবী (আঃ) এর উম্মতের কর্ম।” (সমলিঙ্গি ব্যভিচার বা পুরুষে-পুরুষে যৌন-মিলন।) (আহমাদ ১৫০৯৩, তিরমিযী ১৪৫৭, ইবনে মাজাহ ২৫৬৩, হাকেম ৪/৩৫৭, সহীহুল জামে’১৫৫২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা যে ব্যক্তিকে লূত নবীর উম্মতের মত সমকামে লিপ্ত পাবে, সে ব্যক্তি ও তার সহকর্মীকে হত্যা করে ফেলো।” (আহমাদ ২৭৩২, আবূ দাউদ ৪৪৬৪, তিরমিযী ১৪৫৬, ইবনে মাজাহ ২৫৬১, বাইহাকী ১৭৪৭৫, সহীহুল জামে’ ৬৫৮৯) উক্ত ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তিকে কোন পশু-সঙ্গমে লিপ্ত পাবে, সে ব্যক্তি ও সে পশুকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে।”(তিরমিযী ১৪৫৫, ইবনে মাজাহ ২৫৬৪, হাকেম ৮০৪৯, বাইহাক্বী ১৭৪৯১, ১৭৪৯২, সহীহুল জামে’৬৫৮৮) উক্ত ইবনে আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ আযযা অজাল্ল্ (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে চেয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর পায়খানা-দ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী ১১৬৫, নাসাঈর কুবরা ৯০০১, ইবনে হিব্বান ৪৪১৮, সহীহুল জামে’৭৮০১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গণকের নিকট উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।”(অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস ও অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এ সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।) (আহমাদ ৯২৯০, আবূ দাঊদ ৩৯০৬, তিরমিযী ১৩৫, ইবনে মাজাহ ৬৩৯, বাইহাক্বী ১৪৫০৪)

【4】

চুরি-ডাকাতি

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ চোরকে অভিশপ্ত করুন; সে ডিম (অথবা হেলমেট) চুরি করে, ফলে তার হাত কাটা যায় এবং রশি চুরি করে, ফলে তার হাত কাটা যায়।”(বুখারী ৬৭৮৩, ৬৭৯৯, মুসলিম ৪৫০৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে ব্যভিচার করতে পারে না। কোন চোর যখন চুরি করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে চুরি করতে পারে না এবং কোন মদ্যপায়ী যখন মদ্যপান করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে মদ্যপান করতে পারে না।” (বুখারী ২৪৭৫, মুসলিম ২১১, আসহাবে সুনান) জাবের (রাঃ) “--- এমনকি (সূর্য-গ্রহণের নামায পড়ার সময়) জাহান্নামে আমি এক মাথা বাঁকানো লাঠি-ওয়ালাকেও দেখলাম, সে তার নাড়িভুঁড়ি টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে; যে তার ঐ লাঠি দিয়ে হাজীদের সামান চুরি করত। লাঠির ঐ বাঁক দিয়ে সামান টেনে নিত। অতঃপর কেউ তা টের পেলে বলত, আমার লাঠিতে আপনা-আপনিই ফেঁসে গেছে, আর কেউ টের না পেলে সামানটি নিয়ে চলে যেত। (মুসলিম ২১৪০) আয়েশা (রাঃ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে (এক উচ্চবংশীয়া) মাখযূমী মহিলা লোকের কাছে জিনিস ধার নিত, অতঃপর তা অস্বীকার করত। এই শ্রেণীর চুরি করার ফলে ধরা পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। তাকে নিয়ে তার আত্মীয়-স্বজন সহ কুরাইশ বংশের লোকেরা বড় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। (তার হাত যাতে কাটা না হয় সেই চেষ্টায়) তারা বলাবলি করল, ‘ওর ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে কে কথা বলবে?’ পরিশেষে তারা বলল, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রিয়পাত্র উসামাহ বিন যায়দ ছাড়া আর কে (এ ব্যাপারে) তাঁর সাথে কথা বলার দুঃসাহস করবে?’ সুতরাং (তাদের অনুরোধ মতে) উসামাহ তাঁর সাথে কথা বললেন (এবং ঐ মহিলার হাত যাতে কাটা না যায় সে ব্যাপারে সুপারিশ করলেন)। এর ফলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে উসামাহ! তুমি কি আল্লাহর দন্ডবিধিসমূহের এক দন্ডবিধি (কায়েম না হওয়ার) ব্যাপারে সুপারিশ করছ?!” অতঃপর তিনি দন্ডায়মান হয়ে ভাষণে বললেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে কোন উচ্চবংশীয় (বা ধনী) লোক চুরি করলে তারা তাকে (দন্ড না দিয়ে) ছেড়ে দিত। আর কোন (নিম্মবংশীয়, গরীব বা) দুর্বল লোক চুরি করলে তারা তার উপর দন্ডবিধি প্রয়োগ করত। পক্ষান্তরে আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা যদি চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।” (বুখারী ৩৪৭৫, ৬৭৮৮, মুসলিম ৪৫০৫-৪৫০৭, আসহাবে সুনান) মুস্তাওরিদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অসীলা বানিয়ে (তার কোন ক্ষতি সাধন করে অথবা তাকে কষ্ট দিয়ে) এক গ্রাসও কিছু ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে অনুরূপ গ্রাস জাহান্নাম থেকে ভক্ষণ করাবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অসীলা বানিয়ে (তার কোন ক্ষতি সাধন করে অথবা তাকে কষ্ট দিয়ে) একটি কাপড় পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে অনুরূপ কাপড় জাহান্নাম থেকে পরিধান করাবেন। ---।” (আহমাদ ১৮০১১, আবূ দাঊদ ৪৮৮৩, হাকেম ৭১৬৬, সহীহুল জামে’৬০৮৩) ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন অপরের পশু তার বিনা অনুমতিতে অবশ্যই না দোহায়। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে, তার খাদ্য ও পানীয়র পাত্র ভেঙ্গে দেওয়া হোক এবং খাবারগুলো ছড়িয়ে পড়ুক? লোকেদের পশুর স্তন তো তাদের খাবার সঞ্চয় করে রাখে। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন অপরের পশু তার বিনা অনুমতিতে অবশ্যই না দোহায়।” (বুখারী ২৪৩৫, মুসলিম ৪৬০৮) এক আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ছিনিয়ে নেওয়া মাল মৃত প্রাণী অপেক্ষা অধিক পবিত্র নয়।” (আবূ দাঊদ ২৭০৭, সহীহুল জামে’১৯৮৬)

【5】

মদ্যপান

ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মদ হল যাবতীয় অশ্লীলতার প্রধান এবং সবচেয়ে বড় পাপ। যে ব্যক্তি তা পান করল, সে যেন নিজ মা, খালা ও ফুফুর সাথে ব্যভিচার করল!” (ত্বাবারানী, সঃ জামে’৩৩৪৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে ব্যভিচার করতে পারে না। কোন চোর যখন চুরি করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে চুরি করতে পারে না এবং কোন মদ্যপায়ী যখন মদ্যপান করে, তখন মু’মিন থাকা অবস্থায় সে মদ্যপান করতে পারে না।” (বুখারী ২৪৭৫, মুসলিম ২১১, আসহাবে সুনান) ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মদ পানকারীকে, মদ পরিবেশনকারীকে, তার ক্রেতা ও বিক্রেতাকে, তার প্রস্তুতকারককে, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে, তার বাহককে ও যার জন্য বহন করা হয় তাকে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।” (আবূ দাউদ ৩৬৭৪, ইবনে মাজাহ ৩৩৮০) ইবনে মাজার বর্ণনায় আছে, “তার মূল্য ভক্ষণকারীও (অভিশপ্ত)।” (সহীহুল জামে’ ৫০৯১) আনাস বিন মালিক (রাঃ) “মদের সাথে সর্ম্পৃক্ত দশ প্রকার মানুষের উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন। তার প্রস্তুরকারীর উপর, যে প্রস্তুত করায় তার উপর, তার পানকারীর উপর, যে তা বয়ে নিয়ে যায় তার উপর, যার জন্য বয়ে নিয়ে যায় তার উপর, যে পান করায় তার উপর, যে তা বিক্রি করে তার উপর, যে (বিক্রি করে) তার অর্থ খায় তার উপর এবং যে ক্রয় করে ও যার জন্য ক্রয় করা হয় তাদের উপর।” (সুনানে তিরমিযী ১২৯৫, ইবনে মাজাহ ৩৩৮১, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ১৩৫৫) ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “প্রত্যেক প্রমত্ততা (জ্ঞানশূন্যতা) আনয়নকারী বস্তুই হল মদ এবং প্রত্যেক প্রমত্ততা আনয়নকারী বস্তুই হল হারাম। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করতে করতে তাতে অভ্যাসী হয়ে মারা যায়, সে ব্যক্তি আখেরাতে (জান্নাতে পবিত্র) মদ পান করতে পাবে না।” (বেহেশ্তে যেতে পারবে না।) (বুখারী ৫৫৭৫, মুসলিম ৫৩৩৬ প্রমুখ জাবের (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে বস্তুর বেশী পরিমাণ মাদকতা আনে তার অল্প পরিমাণও হারাম।” (আহমাদ ১৪৭০৩, আবূ দাঊদ ৩৬৮৩, তিরমিযী ১৮৬৫, ইবনে মাজাহ ৩৩৯৩, সহীহুল জামে’৫৫৩০) আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন যে, “তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না -যদিও (এ ব্যাপারে) তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নামায ত্যাগ করে, তার উপর থেকে (আল্লাহর) দায়িত্ব উঠে যায়। আর মদ পান করো না, কারণ মদ হল প্রত্যেক অমঙ্গলের (পাপাচারের) চাবিকাঠি।” (ইবনে মাজাহ ৪০৩৪, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩২৫৯) আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মদ যাবতীয় নোংরামির মূল। যে কেউ তা পান করবে, তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। যে ব্যক্তি তার মূত্রথলিতে ঐ মদের কিছু পরিমাণ রাখা অবস্থায় মারা যাবে, তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে এবং যে কেউ তা নিজ পেটে রেখে মারা যাবে, সে জাহেলী যুগের মরণ মরবে।” (ত্বাবারানী ১৫৪৩, দারাক্বুত্বনী ৪/২৪৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৬৯৫) উসমান বিন আফফান (রাঃ) “তোমরা মদ থেকে দূরে থাকো। কারণ তা হল সকল নোংরা কাজের প্রধান। তোমাদের পূর্বযুগে একটি লোক ছিল, যে সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করত এবং লোকজন থেকে দূরে থাকত। এক ভ্রষ্ট মেয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলল। সে এক সময় তার দাসী দ্বারা কোন ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়ার নাম করে তাকে ডেকে পাঠাল। সে দাসীর সাথে এসে তার বাড়িতে প্রবেশ করল। এক একটা দরজা পার হতে তা বন্ধ করা হল। অবশেষে এক সুন্দরী মহিলার নিকট পৌঁছল। তার সাথে ছিল একটি কিশোর ও মদের পাত্র। মেয়েটি বলল, ‘আমি আসলে তোমাকে কোন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাইনি। আমি তোমাকে ডেকেছি আমার সাথে মিলন করার জন্য অথবা এই কিশোরকে খুন করার জন্য অথবা এই মদ পান করার জন্য। তাতে যদি তুমি অস্বীকার কর, তাহলে আমি চিৎকার করে তোমার নামে অপবাদ দিয়ে তোমাকে লাঞ্ছিত করব।’ সুতরাং সে যখন নিরুপায় অবস্থা দেখল, তখন মদপানকে হাল্কা মনে করল। বলল, ‘ঠিক আছে, আমাকে এক গ্লাস মদ দাও।’ সে তা পান করল। কিন্তু সে দ্বিতীয় গ্লাস চাইল। অতঃপর নেশায় চুর হলে সে মেয়েটির সাথে ব্যভিচার করল এবং সবশেষে কিশোরটিকেও খুন করে বসল। সুতরাং তোমরা মদপান থেকে দূরে থাকো। যেহেতু বান্দার মধ্যে মদ ও ঈমান কখনই একত্র হতে পারে না। আর হলে অদূর ভবিষ্যতে একটি তার সঙ্গীকে বহিষ্কার করে দেয়।” (নাসাঈ ৫৬৬৬, বাইহাক্বী ১৭১১৬) জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইয়ামানের এক শহর জাইশান থেকে (মদীনায়) আগমন করল। সে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তার দেশের লোকেরা পান করে এমন ভুট্টা থেকে প্রস্তুত ‘মিযর’ নামক এক পানীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তা কি মাদকতা আনে?” লোকটি বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “প্রত্যেক মাদকতা আনয়নকারী বস্তু মাত্রই হারাম। আর যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্য সেবন করবে তার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি আছে যে, তাকে তিনি ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ত্বীনাতুল খাবাল কী জিনিস?’ তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ।” (মুসলিম ৫৩৩৫, নাসাঈ ৫৭০৯) ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি মদ পান করবে, সে ব্যক্তির ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এরপর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে পুনরায় পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। যদি এর পরেও সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করে নেবেন। অন্যথা যদি সে তৃতীয়বার পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এর পরেও যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করে নেবেন। অন্যথা যদি সে চতুর্থবার তা পান করে, তাহলে অনুরূপ তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। কিন্তু এরপরে সে যদি তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন না, তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন এবং (পরকালে) তাকে ‘খাবাল নদী’ থেকে পানীয় পান করাবেন।” ইবনে উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আবূ আব্দুর রহমান! ‘খাবাল-নদী’ কী?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তা হল জাহান্নামবাসীদের পুঁজ দ্বারা প্রবাহিত (জাহান্নামের) এক নদী।’ (তিরমিযী ১৮৬২, হাকেম ৪/১৪৬, নাসাঈ, সহীহুল জামে’৬৩১২-৬৩১৩) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি মদ্যপানে অভ্যাস থাকা অবস্থায় মারা যাবে, সে ব্যক্তি মূর্তিপূজকের মতো (পাপী) হয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (ত্বাবারানীর কাবীর ১২২৫৮, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৭৭) ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “---আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না; পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।” (আহমাদ ৬১৮০, নাসাঈর কুবরা ২৩৪৩, হাকেম ২৫৬২, সহীহুল জামে’৩০৭১) অন্য বর্ণনায় আছে, ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمْ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخُبْثَ “তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। অব্যাহতভাবে মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যজন এবং এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।” (আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩) আবূ মালিক আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের একদল লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা অবশ্যই পান করবে।” (আহমাদ ২২৯০০, আবূ দাঊদ ৩৬৯০, সহীহুল জামে ৫৪৫৩)

【6】

ইসলামী দন্ড বিধান প্রয়োগ না করার জন্য সুপারিশ করা হারাম

মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِئَةَ جَلْدَةٍ وَلاَ تَأخُذْكُمْ بِهِمَا رَأفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ ﴾ অর্থাৎ, ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, এদের প্রত্যেককে একশো করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করার সময় তাদের প্রতি কোন দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে; যদি (সত্যিকারে) তোমরা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান এনে থাক। (সূরা নূর ২) আয়েশা (রাঃ) চুরির অপরাধে অপরাধিণী মাখযূম গোত্রের একজন মহিলার ব্যাপার কুরাইশ বংশের লোকেদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। সাহাবীগণ বললেন, ‘ওর ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে কে কথা বলতে পারবে?’ তাঁরা বললেন, ‘রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রিয়পাত্র উসামা ইবনে যায়েদ ছাড়া কেউ এ সাহস পাবে না।’সুতরাং উসামা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বলে উঠলেন, “তুমি আল্লাহর এক দন্ডবিধান (প্রয়োগ না করার) ব্যাপারে সুপারিশ করছ?” পরক্ষণেই তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিলেন এবং বললেন, “(হে লোক সকল!) নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা এ জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, যখন তাদের কোন সম্মানিত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত, তাহলে অবশ্যই আমি তার হাতও কেটে দিতাম।” (বুখারী ৩৪৭৫, মুসলিম ৪৫০৫) অন্য এক বর্ণনায় আছে, (উসামার সুপারিশে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেহারা রঙিন (লাল) হয়ে গেল। তিনি বললেন, “তুমি কি আল্লাহর এক দন্ডবিধান (কায়েম না করার) ব্যাপারে সুপারিশ করছ?!” উসামা বললেন, ‘আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, হে আল্লাহর রসূল!’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদেশ দিলে ঐ মহিলার হাত কেটে দেওয়া হল।’ (বুখারী ৪৩০৪, মুসলিম ৪৫০৬) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহর ‘হদ্দ্’ (দন্ডবিধি) সমূহ হতে কোন ‘হদ্দ্’কায়েম করাতে বাধা সৃষ্টি করল, সে ব্যক্তি নিশ্চয় আল্লাহ আযযা অজাল্লার বিরোধিতা করল।”(আবূ দাউদ ৩৫৯৯, হাকেম ২/২৭, ত্বাবারানী ১৩২৫৪, বাইহাকী ১১৭৭৩, সহীহুল জামে ৬১৯৬) ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “---আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত (খুনী দ্বারা) খুন হবে, সেই খুনীকে খুনের বদলে খুন করা হবে। অতঃপর যে ব্যক্তি খুনী ও দন্ডের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিশাপ।” (আবূ দাঊদ ৪৫৯৩, সহীহ নাসাঈ ৪৪৫৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ২১৩১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যায়ে নিজ গোত্রকে সহযোগিতা করে (সর্বনাশিতায়) সে ব্যক্তির উদাহরণ সেই উটের মত যে কোন কুয়াতে পড়ে যায়। অতঃপর তাকে তার লেজ ধরে তোলার অপচেষ্টা করা হয়। (যা অসম্ভব।)” (আহমাদ ৩৮০১, আবূ দাউদ ৫১১৯, হাকেম ৭২৭৫, ইবনে হিব্বান ৫৯৪২, বাইহাক্বী ২১৬০৮, সহীহুল জামে’ ৬৫৭৫, ৫৮৩৮)