1. উত্তম চরিত্র, অনুকম্পা ও (আত্মীয়তার) সম্পর্ক বজায় রাখা প্রসংগ

【1】

উত্তম চরিত্র, অনুকম্পা ও (আত্মীয়তার) সম্পর্ক বজায় রাখা প্রসংগ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুবায়ের ও আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)- এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রচনা করে দেন। (আস্‌-সহীহাহ-৩১৬৬) হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ মাসউদ বদরী (রাঃ) আবূ মাসউদ বদরী (রাঃ) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণিত। পূর্ববর্তী নাবুওয়াতের বাণীসমূহ হতে মানুষেরা সর্বশেষ যা পেয়েছে তা হলো যখন তোমার লজ্জা-শরম নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই কর। (আস-সহীহাহ-৬৮৪) হাদীসটি সহীহ্‌। কা’ব ইবনু উজহার (রাঃ) নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা’বকে দেখতে না পেয়ে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীগণ বললেন, তিনি অসুস্থ। অতঃপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হেঁটে তার নিকট গেলেন। যখন তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছলেন, তখন বললেনঃ হে কা’ব! সুসংবাদ গ্রহণ কর। (তা শুনে) তার মা বললেন, হে কাব! তোমার জন্য জান্নাতের অভিনন্দন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর (ফায়সালার) ব্যাপারে এই তাড়াহুড়াকারিণী কে? সে (কা’ব) বলল,ইয়া রাসুলুল্লাহ! উনি আমার ‘মা’। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে কা’বের মা! তুমি কিভাবে জানবে? হয়ত কা’ব এমন উক্তি করেছে যা তার জন্য সমীচীন ছিল না। অথবা এমন ব্যাপারে নীরব ছিল যা তার জন্য ক্ষতির কারণ হত না। (আস্‌-সহীহাহ-৩১০৩) হাদীসটি হাসান। আয়িশা (রাঃ) নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ অতি ঝগড়াটে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তি। (আস্‌ সহীহাহ-৩৯৭০) হাদীসটি সহীহ্‌। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা জান (চোগলখুরী) কী? তারা (সাহাবীগণ) বললেনঃ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলই (তা) সঠিকভাবে অবগত রয়েছেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ (তা হলো) বিশৃংখলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যের নিকট লাগানো। (আস্‌-সহীহাহ-৮৪৫) হাদীসটি হাসান। মুহাম্মাদ ইবনু জিহাদাহ মুহাম্মাদ ইবনু জিহাদাহ বনী আনবারের এর বন্ধুর নিকট থেকে বর্ণনা করেন। আর তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাঁর উপাধি ছিল, আবুল মুনতাফিক। তিনি বলেন, আমি মক্কায় গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে (সাহাবীগণ) বললেনঃ তিনি আরাফায় অবস্থান করছেন। আমি সেখানে গেলাম। অতঃপর তাঁর নিকট যেতে চাইলে সাহাবীগণ আমাকে বাধা প্রদান করলেন। (এটা দেখে) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও (আসতে দাও)। তখন আমি তাঁর নিকটে গেলাম। (আলোচনার পর) যখন তাঁর উট ও আমার উটের ঘাড় পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে লাগল। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে আল্লাহর আযাব থেকে দূরে রাখবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (উত্তরে) তিনি বললেনঃ (ক) আল্লাহর ইবাদাত করো (কোন কোন বর্ণনায় (আরবি)এর স্থানে (আরবি) ব্যবহার হয়েছে।) তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। (খ) ফরজ সালাতসমূহ আদায কর। (গ) ফরজ যাকাত আদায কর। (ঘ) রামাযানের রোজা পালন কর। (ঙ) হাজ্জ ও উমরাহ পালন কর। (চ) মানুষের সাথে ঐরূপ আচরণ কর, যেমন আচরণ তাদের নিকট থেকে তুমি পেতে পছন্দ কর। একইভাবে তাদের সাথে এরূপ আচরণ পরিহার কর; যেরূপ আচরণ তাদের পক্ষ থেকে তুমি অপছন্দ করে থাক। (আস্‌-সহীহাহ- ৩৫০৮) হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হলো, সর্বোত্তম মানব কে? তিনি বললেনঃ যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু (সেই সর্বোত্তম মানব)। সাহাবীগণ বললেন, আমরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করিনি। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, সর্বোত্তম মানব ইউসুফ আলাইহিস সালাম যিনি আল্লাহর নাবী, আবার নাবীর পুত্র অনুরুপভাবে তাঁর পিতাও নাবীর পুত্র। তাঁর দাদা আবার খালিলুল্লাহ [ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম] -এর পুত্র। সাহাবীগণ আরজ করলেন, আমরা এ ব্যাপারেও প্রশ্ন করিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে আরবের সম্ভ্রান্তদের (মর্যাদার উৎস বা আকর) সম্পর্কে জানতে চাও? মানুষ সম্ভ্রান্ত (মর্যাদার আকর) জাহেলী যুগের সম্ভ্রান্তগণ ইসলামী যুগেও সম্ভ্রান্ত যদি তারা বিদ্যায় অগ্রগামী হয় (অর্থাৎ, ঈলম ও ‘আমালে প্রাবল্যতা লাভ করে)। (আস্‌-সহীহাহ/৩৯৯৬) হাদীসটি সহীহ্‌। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; তোমরা আল্লাহেক ভয় কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। (আস্‌-সহীহাহ- ৭৬৯) হাদীসটি যঈফ। আবূ দারদা (রাঃ) আবূ দারদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, মিযানে (কিয়ামাত দিবসে পাপ-পুণ্য মাপার পাল্লায়) সর্বাপেক্ষা ভারী বস্তু হলো, উত্তম চরিত্র। (আস্‌-সহীহাহ-৮৭৬) হাদীসটি সহীহ্‌। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এক সাহাবী এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললেন, আমাকে এমন কতিপয় বাক্য সম্পর্কে অবহিত করুন যে অনুযায়ী আমি জীবন-যাপন করতে পারি। অধিক কিছু বলবেন না, যার দরুণ আমি তা ভুলে যাই। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ কর। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করলে (আবার উক্ত বাক্যের প্রার্থনা করলে) তিনি বললেন, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ কর। (আস্‌-সহীহাহ- ৮৮৪) হাদীসটি সহীহ্‌। রবিয়াহ আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর খিদমাত করতাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে একখণ্ড জমি প্রদান করেন এবং আবূ বকর (রাঃ)-কে একখণ্ড জমি প্রদান করেন। এক ফলবান খেজুর গাছ নিয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। আবূ বাকার বলেন, গাছটি আমার সীমানাতে রয়েছে। আর আমি বললাম, গাছটি বরং আমার সীমানায় পড়েছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা (বাদানুবাদ) চলল। আবূ বকর (রাঃ) আমাকে এমন কথা বললেন, যা আমার অপছন্দ হল এবং তিনি লজ্জিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে রাবিয়াহ আমার প্রতি ঐরূপ কথা (যেমন আমি বলেছি) ফিরিয়ে দাও, যেন তা বদলা (প্রতিশোধ) হয়ে যায়। আমি বললাম, আমি এমন করব না (অর্থাৎ, ঐরূপ কথা বলব না)। আবু বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তা বল। অন্যথায় আমি তোমার বিপক্ষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহায্য নিব। আমি বললাম, আমি তা করব না। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) জমি ছেড়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁর পিছনে পিছনে চললাম। তখন আসলাম গোত্রের মানুষজন আসলো। তারা বলল, আল্লাহ্‌ তায়ালা আবূ বকর (রাঃ)-এর উপরে রহম করুন। তিনি [আবূ বকর (রাঃ)] কোন ব্যাপারে আপনার বিপক্ষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহায্য প্রার্থনা করছে। আর তিনি আপনাকে কী বলেছে? আমি বললাম, আপনারা জানেন না ইনি কে? (অর্থাৎ তাঁর মর্যাদা কত অধিক) ইনি আবূ বাকার সিদ্দীক। তিনি দুজনের দ্বিতীয়জন (অর্থাৎ হিজরাতকালে রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর গুহায় অবস্থানকালের সঙ্গী) তিনি মুসলমানদের মর্যাদাবান ব্যক্তি। তোমরা তার বিপক্ষে আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে সাবধান হও! তিনি দেখলে রাগান্বিত হবেন (অর্থাৎ, তোমরা আমাকে সাহায্য করা হতে বিরত থাক) এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকটে গেলে তিনিও তাঁর রাগের দরুণ রাগান্বিত হবেন। আর তাঁদের রাগান্বিত হওয়ার কারণে আল্লাহ্‌ তায়ালাও রাগান্বিত হবেন। ফলে রাবিয়াহ ধ্বংস হবে। তারা (গোত্রের লোকেরা) বলল, আপনি আমাদের কী করতে বলছেন? তিনি (রাবিয়াহ) বললেন, তোমরা ফিরে যাও। আবু বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকটে গেলেন। আমি একাকী তাঁর পিছু পিছু চলতে লাগলাম। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে ঘটনাটি আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার দিকে মাথা উঠিয়ে বললেন, হে রাবিয়াহ! তোমার ও তোমার বন্ধুর কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমন এমন হয়েছে। তিনি (আবূ বাকার) আমাকে এমন এক কথা বলেছেন যা আমি অপছন্দ করি। তিনি আমাকেও ঐরূপ কথা বলতে বলেন, যেন তা বদলা (প্রতিশোধ) হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঠিক আছে। তুমি তার প্রতিশোধ নিও না বরং তুমি বল, হে আবূ বাকার! আল্লাহ্‌ তোমাকে ক্ষমা করুন। হে আবূ বাকার আল্লাহ্‌ তোমাকে ক্ষমা করুন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। (আস্‌-সহীহাহ- ৩২৫৮) হাদীসটি সহীহ্‌। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- কে প্রশ্ন করা হলো, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেনঃ সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী (-ই সর্বোত্তম ব্যক্তি)। (আস্‌-সহীহাহ-১৮৩৭) হাদীসটি যঈফ। উসামা ইবনু শারীক (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এমনভাবে বসে ছিলাম মনে হয় আমাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। আমাদের কেউই কোন কথা বলছিল না। হঠাৎ কিছু মানুষ এলো এবং বলল, আল্লাহর নিকট কোন্‌ বান্দা সবচেয়ে প্রিয়? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে সবচেয়ে বেশি চরিত্রবান (সে-ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় বান্দা)। (আস্‌-সহীহাহ- ৪৩২) হাদীসটি সহীহ্‌। হাসান হাসান থেকে মুরসাল সানাদে বর্ণিত; তোমরা জিহ্বা সংযত কর। হে মুয়াজ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। জিহ্বাই মানুষকে অধোমুখী করে। (অর্থাৎ জিহ্বা তথা বাকচারিতার দরুণই মানুষ অধিকাংশ সময় বিপদে পড়ে)। (আস্‌-সহীহাহ- ১১২২) হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) যখন তোমাদের খাদেম (কর্মচারী বা সেবক) তোমাদের কারোর জন্য খাবার নিয়ে আসে, যে (খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে আগুনের) তাপ ও কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করেছে। তাকে (খাওয়ার জন্য) সাথে বসাবে; যদি সে অস্বীকৃতি প্রদর্শন করে (অর্থাৎ খেতে না চায় তবে) তার হাতে এক লোকমা (গ্রাস) দিবে। (আস্‌-সহীহাহ-১২৮৫) হাদীসটি সহীহ্‌। আলী ইবনু হুসাইন আলী ইবনু হুসাইন থেকে মারফূ (মুরসাল) সানাদে বর্ণিত। যখন তোমাদের কেউ তার ভাইকে আল্লাহ্‌র জন্য ভালবাসে তখন সে যেন তাকে বলে দেয় (অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার ভালবাসার বিষয় তাকে জানাতে হবে।) কারণ তা হৃদ্যতার জন্য উত্তম এবং বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উপযোগী। (আস্‌-সহীহাহ- ১১৯৯) হাদীসটি মুরসাল। ‘আয়িশা (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে মারফু’ সূত্রে বর্ণিত; যখন আল্লাহ তায়ালা কোন গৃহবাসীর মঙ্গল চান তখন তাদের মধ্যে হৃদ্যতা সৃষ্টি করে দেন। (আস-সহীহাহ- ১২১৯) হাদীসটি সহীহ। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেনঃ (ক) যখন কিয়ামাত নিকটবতী (আসন্ন) হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। (খ) তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সত্যবাদীই অতিসত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে। (গ) মুসলিমের স্বপ্ন নবুওতের ছয়চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) আরো) বলেন, (ঘ) স্বপ্ন তিন প্রকার। প্রথমতঃ শুভ স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ। দ্বিতীয়তঃ শাইত্বানের পক্ষ হতে পেরেশনীমূলক স্বপ্ন। তৃতীয়তঃ মানুষের কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। (অর্থাৎ, সে দিনে বা জাগ্রত অবস্থায় যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা-ই দেখে।) (ঙ) যখন তোমাদের কেউ স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখে; তখন সে যেন তা কারো নিকট বর্ণনা না করে এবং দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে থাকে। (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) ) বলেন, (চ) আমি স্বপ্নে বেড়ি (অর্থাৎ পায়ে বেড়ি পরানো)-কে পছন্দ করি এবং শৃঙ্খল (অর্থাৎ গলায় শৃঙ্খল বা বেড়ি পরানো কিংবা হাতকড়া)-কে অপছন্দ করি। (পায়ের) বেড়ি দ্বীনের উপর অটল থাকা বুঝায়। (আস-সহীহাহ-৩০১৪) হাদীসটি সহীহ। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; যখন তোমাদের কারো খাদেম (সেবক) তার নিকট খাবার নিয়ে আসে- যে (আগুনের) গরম ও (কাজের) কষ্ট সহ্য করেছে। যদি তার সাথে খেতে না বস তবে যেন তার খাবার হতে এক লোকমা (গ্রাস) হলেও তাকে (খাদেমকে) দেয়। (আস-সহীহাহ- ১০৪৩) হাদীসটি সহীহ। আবূ বাকরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: যখন কোন মুসলিম তার (অপর মুসলিম) ভাইয়ের উপর (তাকে হত্যার উদেশে) তরবারী উত্তোলন করবে; তখন ফেরেশতারা তরবারী কোষাবদ্ধ না করা পর্যন্ত তার উপর অভিসম্পাত করতে থাকে। (অর্থাৎ, হত্যার বাসনা ত্যাগপূর্বক তরবারী খাপে না রাখা পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার উপর লানাত করতে থাকে)। (আস-সহীহাহ-৩৯৭৩) হাদীসটি হাসান। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেন: যখন তোমরা সন্দেহ পোষণ কর তখন তোমরা তাতে অটল থেকো না। যখন হিংসা করবে, তখন সীমাতিক্রম করবে না। যখন কিছু অশুভ মনে করবে তখন তা সম্পাদন করবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে। যখন ওজন করবে তখন (পাল্লা) হেলিয়ে দিবে (অর্থাৎ বেশি দিবে)। (আস-সহীহাহ-৩৯৪২) হাদিসটি যঈফুন জিদ্দান। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; যখন কোন ব্যক্তি ক্রুব্ধ হয় তখন যদি সে (আউযুবিল্লাহ) বলে তবে তার ক্ৰোধ প্রশমিত হয়ে যাবে। (আস-সহীহাহ-১৩৭৬) হাদীসটি সহীহ । বর্ণনাকারী আবদাতা ইবনু আবূ লিবাবাহ মুজাহিদ থেকে এবং তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তার হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করে তখন তাদের অঙ্গুলিসমূহ হতে গুনাহ এমনভাবে ঝরতে থাকে যেমন শীতকালে গাছ থেকে পাতা ঝরতে থাকে। আবদাহ বলেন, আমি মুজাহিদকে বললাম, এটা তো খুবই সহজ ব্যাপার। মুজাহিদ বললেন, এমন বলো না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবে (কুরআন মাজীদে) বলেনঃ যদি আপনি তাদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করতেন তথাপি তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হতেন না। বরং আল্লাহ তা’আলা তাদের মাঝে হৃদ্যতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা-আল-আনফাল-৬৩ আয়াত) তখন আমি ইলমের (বিদ্যার) গভীরতা অন্যান্যদের তুলনায় অনুভব করলাম। (আস-সহীহাহ-২০০৪) হাদীসটি সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমার বাবা হাজ্জ পালন না করেই মৃত্যুবরণ করেছে। আমি কি তার পক্ষ হতে হাজ্জ করতে পারব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কী বল, যদি তোমার বাবার উপর কোন ঋণ থাকত তা তুমি পরিশোধ করতে না? সে বলল, হ্যা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেন, কাজেই তুমি তোমার বাবার পক্ষ হতে হাজ্জ পালন কর। (আস-সহীহাহ-৩০৪৭) হাদিসটি সহীহ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) মৃত্যু শয্যায় বলেন, তোমাদের আত্মীয়দের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। তোমাদের আত্মীয়দের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। (অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো তা ছিন্ন করো না)। (আস-সহীহাহ-১৫৩৮,৭৩৬) হাদীসটি সহীহ । আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে মারফু’ সূত্রে বর্ণিত; তোমরা (মানুষের উপর) অনুগ্রহ কর (তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে) তোমাদের অনুগ্রহ করা হবে। তোমরা (মানুষকে) ক্ষমা কর (তবে) আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন। ধ্বংস কৰ্কশভাষীদের জন্য (অর্থাৎ কঠোরভাষী যারা তাদের জন্য মঙ্গল নেই) এবং ধ্বংস ঐ সকল দৃঢ়পদ ব্যক্তির জন্য যারা জেনে-শুনে স্বীয় (মন্দ) কর্মসমূহের উপর অটল থাকে। (আস-সহীহাহ-৪৮২) হাদীসটি সহীহ। ইয়াযিদ ইবনু জারিয়াহ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বিদায় হাজ্জের দিন বলেছেন, তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো। তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো, তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো। (অর্থাৎ, তাদের অধিকার আদায় করো, তাদের প্রতি অত্যাচার কর না এবং আল্লাহকে ভয় কর) তোমরা যা খাও তাদেরও তা খাওয়াও, তোমরা যা পর তাদেরও তা পরাও। যদি তারা কোন অপরাধ করে যা তোমরা ক্ষমা করতে ইচ্ছা কর না। তবে আল্লাহর বান্দাদের বিক্রয় করবে। তাদের কষ্ট দিবে না। (আস-সহীহাহ- ৭৪০) হাদিসটি সহীহ। উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা লজা পোষণ করে থাক । আল্লাহ তা’আলা সত্য বলতে লজ্জাপোষণ করেন না। তোমরা স্ত্রীদের পায়ুপথ ব্যবহার করো না। (আস-সহীহাহ-৩৩৭৭) হাদীসটি সহীহ। আব্বাস (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; তুমি নম্রতা প্রদর্শন কর তোমার প্রতি নম্রতা প্ৰদৰ্শন করা হবে। (আস-সহীহাহ-১৪৫৬) হাদিসটি সহীহ। উবাদাহ (রাঃ) উবাদাহ (রাঃ) থেকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দিলে আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (ক) যখন তোমরা কথা বলবে সত্য বলবে; (খ) ওয়াদা করলে তা পালন করবে; (গ) আমানত গ্ৰহণ করলে তা আদায় করবে; (ঘ) লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে; (ঙ) দৃষ্টি অবনত রাখবে এবং হাতকে (অন্যায় কর্ম থেকে) সংযত রাখবে। (আস-সহীহাহ- ১৪৭০) হাদীসটি হাসান। হামযাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হামযাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি (ইবনু উমার) বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিল যাকে আমি ভালবাসতাম। উমার (রাঃ) তাঁকে অপছন্দ করতেন। উমার (রাঃ) বললেন, তাকে তালাক দাও। আমি অস্বীকৃতি জানালাম। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম)-কে তা অবগত করলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পিতার আনুগত্য কর এবং তাকে তালাক দাও। (আস-সহীহাহ-৯১৯) হাদিসটি হাসান। আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) মুয়াজ ইবনু জাবাল (রাঃ) সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম)-কে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। তিনি বললেন, হে আল্লাহর নাবী। আরো অধিক কিছু বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেনঃ যখন (কোন) মন্দ কর্ম করবে তখন (তার পরিবর্তে) সৎ কাজ করবে। তিনি (মুয়াজ ইবনু জাবাল) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আরো অধিক কিছু নসীহত করুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেনঃ (এগুলোর উপর) দৃঢ়পদ (অটল) থাক এবং তোমার আচরণ উত্তম কর। (আস-সহীহাহ- ১২২৮) হাদীসটি হাসান । ইসহাক ইবনু সাঈদ (রহঃ) তিনি বলেন: আমাকে আমার পিতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন: তিনি [ইবনু আব্বাস (রাঃ)] অনেক দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়তার সম্পর্ক তার সাথে আবিষ্কার করলেন এবং তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের বংশ পরম্পরা জেনে রেখ। আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় রেখ। কারণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক যখন ছিন্ন হয় তখন তা যতই নিকটবর্তী হোক না কেন, নিকটবর্তী থাকে না। আর যখন সম্পর্ক স্থাপিত হয় তখন তা যত দূরবর্তীরই হোক না কেন, দূর থাকে না। (আস-সহীহাহ-২৭৭) হাদিসটি সহীহ। আব্বাস ইবনু জুলাইদ আল হাজরী (রাঃ) তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনু আমরকে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খাদেমকে কতবার ক্ষমা করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব থাকলেন। অতঃপর লোকটি আবারো ঐ বাক্যটি পুনরাবৃত্তি করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার যখন প্রশ্ন করা হল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: দৈনিক সত্তরবার তাকে ক্ষমা কর। (আস-সহীহাহ-৪৮৮) হাদীসটি হাসান। মুয়াজ ইবনু জাবাল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে (প্রতিনিধি হিসেবে) এক গোত্রের প্রতি প্রেরণ করছিলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: সালামের প্রসার ঘটাবে এবং খাবার বিতরণ করবে (অর্থাৎ মানুষদের আহার করাবে) তোমার পরিবারের লোকদের ব্যাপারে যেমন লজ্জাপোষণ করা তদ্রূপ আল্লাহর ব্যাপারে লজ্জাপোষণ করবে। যখন কোন ত্রুটি কর তখন (তার বিনিময়ে) সৎ কাজ করবে। যতটুকু সম্ভব তোমার আচরণ উত্তম করবে। (আস-সহীহাহ-৩৫৫৯) হাদিসটি হাসান লিগাইরিহী। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; সার্বোত্তম আমাল হলো তোমার ভাইয়ের সাথে তুমি প্রফুল্লচিত্তে সাক্ষাৎ করবে এবং তার ঋণ পরিশোধ করবে এবং তাকে রুটি (আহাৰ্যদ্রব্য) খাওয়াবে। (আস-সহীহাহ-১৪৯৪) হাদীসটি হাসান । আব্দুল্লাহ ইবনু আমর আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; সর্বোত্তম সাদাকা হল, পরস্পরের মাঝে সমঝোতা করা। (আস্‌-সহীহাহ-২৬৩৯) হাদিসটি হাসান লিগাইরিহী। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; আরবদের একে অন্যকে সফরের সময় সেবা (খেদমত) করত। আবূ বকর ও উমর (রাঃ)- এর সাথে এক ব্যক্তি ছিল যিনি তাদের খেদমত করত। তারা উভয়ে ঘুমিয়েছিল। অতঃপর তারা জাগ্রত হলেন। (কিন্তু খাদেম) তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেনি (বরং সে ঘুমিয়েছিল) তাদের একজন অন্যকে বলছিল, এ (খাদেম) তোমাদের নবীর ঘুমের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করেছে (অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, তোমাদের গৃহের ঘুমের সাথে সাদৃশ্যতা রেখেছে)। অতঃপর তারা তাকে (খাদেমকে) জাগিয়ে দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট গিয়ে তাঁকে বল, যে আবূ বাকার ও উমার (রাঃ) আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং আপনার কাছে তরকারী (অর্থাৎ খাবার) চেয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদের সালাম জানাবে এবং বলবে যে, তারা উভয়েই খাবার গ্রহণ করেছে। (এ কথা শুনে) তারা ঘাবড়িয়ে গেলেন এবং (উভয়েই) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকট খাদেমকে খাবার চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। আপনি বলেছেন যে, আমরা খাবার খেয়েছি। তো আমরা কী দিয়ে খাবার খেলাম? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোশ্‌ত দিয়ে। আল্লাহর শপথ! আমি তার গোশ্‌ত তোমাদের নখের মধ্যে দেখছি। তারা [আবূ বাকার ও উমার (রাঃ)] বললেন, আমাদের ক্ষমা করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তোমাদের ক্ষমা করবে। (আস্‌-সহীহাহ-২৬০৮) হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হয়ে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার ঐ ব্যক্তি; যে তাদের মধ্যে চরিত্রগত দিক দিয়ে সবচেয়ে উত্তম, নম্র স্বভাবী, অতিথিপরায়ণগণ, যারা (অন্যকে) ভালবাসে এবং (অন্যের) ভালবাসা পায়। ঐ ব্যক্তিদের মাঝে কল্যাণ নেই- যারা অন্যকে ভালবাসে না এবং (অন্যের) ভালবাসা পায় না। (আস্‌-সহীহাহ- ৭৫১) হাদীসটি হাসান। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে ভাল। (আস্‌-সহীহাহ-২৮৪) হাদীসটি হাসান। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদের ঐ ব্যক্তির সংবাদ দিব না? যে (জাহান্নামের) আগুনের জন্য হারাম অথবা যার জন্য (জাহান্নামের) আগুন হারাম?(রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন) প্রত্যেক হিতৈষী, নম্র ও শান্তের জন্য (জাহান্নামের আগুন হারাম)। (আস্‌-সহীহাহ-৯৩৮) হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত; আমি কি তোমাদের ঐ সাদাকার প্রতি পথনির্দেশ করব না! আল্লাহ তাআলা যার পাত্রকে ভালবাসেন? (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই উত্তর দিয়ে বলেন) মানুষের মাঝে সমঝোতা (সন্ধি স্থাপন) করবে। কারণ, তা এমন এক সাদাকা আল্লাহ তায়ালা তাঁর পাত্রকে পছন্দ করেন। (আস্‌-সহীহাহ-২৬৪৪) হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। আনাস (রাঃ) নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা পাথর বহন করছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ লোকগুলো কী করছে? তারা (সাহাবীগণ) বললেন, তারা পাথর বহন করছে এর দ্বারা তারা বীরত্ব প্রদর্শন করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাদের ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ দান করব না! যে এদের চেয়ে অধিক বীরত্বের অধিকারী? অথবা এরূপ কোন বাক্য বলেছেন। (উত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানান) যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (সে-ই সবচেয়ে বড় বীর-বাহাদুর) অপর এক বর্ণনায় এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা (পরস্পরে) কুস্তিতে মত্ত ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ কী? তারা (সাহাবীগণ) বললেন, এ অমুক কুস্তিগীর। তার সাথে যে কুস্তিতে লড়ে সে-ই ভুপাতিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাদের ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ দিব না? যে তার (ঐ কুস্তিগীরের) চেয়ে অধিক শক্তিশালী? (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাবে বলেন) ঐ ব্যক্তি যার উপর অন্য ব্যক্তি অত্যাচার করেছে অতঃপর সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে সে তার শত্রুর উপর বিজয়ী হয়েছে এবং তার শাইত্বনের উপর বিজয়ী হয়েছে এবং তার বন্ধুর শাইত্বনের উপরও বিজয়ী হয়েছে। (আস্‌-সহীহাহ-৩২৯৫) হাদীসটি হাসান। ইয়াজ ইবনু হিমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন তাঁর ভাষণে বললেনঃ জেনে রেখ! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আদেশ করেছে আমি যেন তোমাদের ঐসকল বিষয় শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না। ঐসকল বিষয় হতে যা আজ আমাকে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। (আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ) আমি বান্দাহ্‌কে যেসকল সম্পদ দান করেছি তা সবই হালাল। আমি আমার বান্দাদের সকলকে একশ্বরবাদে (অর্থাৎ হিদায়তের উপর) সৃষ্টি করেছি। (অতঃপর) শাইত্বান তাদের কাছে আগমন করে এবং তাদের স্বীয় (মূল) ধর্ম হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমি (তাদের) মানুষদের জন্য যা হালাল করেছি সে (শাইত্বান) তাদের জন্য তা হারাম করে দেয়। আমি তাদের আদেশ করেছি যে, তারা আমার সাথে ঐসকল বস্তুকে শরীক করেছে যে ব্যাপারে আমি কোন প্রমাণ নাযিল করিনি। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীবাসীর প্রতি দৃষ্টি দেন এবং আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেন। তবে আহলে কিতাবদের অবশিষ্টদের (অপছন্দ করেননি) এবং তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) (আমাকে) বলেনঃ আমি তোমাকে (পৃথিবীতে) প্রেরণ করেছি যে, তোমাকে পরীক্ষা করব এবং তোমার দ্বারা (অন্যকে) পরীক্ষা করব। তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাকে পানি ধ্বংস করতে পারবে না। জাগ্রত ও ঘুমন্ত ব্যক্তি তা পাঠ করবে। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আদেশ দিয়েছেন যে, আমি কুরাইশদের জ্বালিয়ে দিব। আমি বললাম, হে আমার রব! (যখন আমি তাদের জ্বালাতে যাব) তখন তারা আমার মাথা পিষে ফেলবে এবং তারা তা আটা বানিয়ে ফেলবে। তিনি (আল্লাহ) বলেন, তাদের বের করে দাও যেমন তারা তোমাকে (দেশ থেকে) বের করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; আমি তোমাকে সাহায্য করব। তুমি ব্যয় (আল্লাহর পথে খরচ) কর। সত্বর আমি তোমাকে খরচে সাহায্য করব। (তাদের বিপক্ষে) বাহিনী প্রেরণ কর আমি (তোমার) পাঁচগুণ (বাহিনী) প্রেরণ করব। যারা তোমার অনুগত তাদের সাথে নিয়ে তোমার অবাধ্যদের বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও। তিনি বলেন, জান্নাতের বাসিন্দা তিন প্রকার- (ক) ক্ষমতার অধিকারী, ন্যায়পরায়ণ, দানবীর ও (আল্লাহর পক্ষ হতে) সাহায্যপ্রাপ্ত। (খ) দয়ালু ব্যক্তি- প্রত্যেক নিকটাত্মীয় ও মুসলিমের প্রতি সুহৃদয়বান ব্যক্তি ও (গ) সচ্চরিত্র (দানবান) ও পরিবার-পরিজনের অধিকারী। আর জাহান্নামের অধিবাসী পাঁচ প্রকার- (ক) ঐ দুর্বল ব্যক্তি; যার কোন জ্ঞান নেই। যারা তোমাদের (সমাজের) মধ্যে অনুগত (অর্থাৎ অন্যের আনুগত্যকারী) পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদের ধার ধারে না। (খ) ঐ খিয়ানাতকারী যার লোভ-লালসা গোপন হয় না (মিটে না) যদি সামান্য বস্তু (আমানাত হিসেবে) রাখা হয় তথাপি সে খিয়ানত করে। (গ) এবং ঐ ব্যক্তি যে সকাল-সন্ধ্যায় (সদা-সর্বদা) তোমার পরিবার-পরিজন অর্থ-সম্পদের (যাবতীয়) ব্যাপারে তোমাকে ধোঁকা দেয়। (ঘ) আর তিনি কৃপণতা কিংবা মিথ্যাবাদীতার কথা উল্লেখ করেন (অর্থাৎ বখীল ও মিথ্যুকদের জাহান্নামীদের মধ্যে গণ্য করেছে)। (ঙ) এবং অসচ্চরিত্রের অধিকারী অশ্রাব্যভাষী। আল্লাহ তায়ালা আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও একজন অন্যজনের উপর যেন গর্ব না করে এবং একে অন্যের প্রতি অত্যাচার না করে। (আস্‌-সহীহাহ-৩৫৫৯) হাদীসটি সহীহ্‌। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি কি তোমাদের অবহিত করব না? (আরবী) (আল-আজহ) কী? (তিনি জবাবে বলেনঃ) তা হলো, মানুষের ভাল-মন্দ কথা নিয়ে চোগলখুরী করা। অপর রিওয়ায়াতে এসেছে, চোগলখুরী তা-ই যা মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃস্টি করে। (আস্‌-সহীহাহ-৮৪৬)। হাদীসটি সহীহ্‌। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদে (নাববীতে) প্রবেশ করেন। সেখানে আনসারী রমনীগণ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ওয়াজ করলেন ও উপদেশ দিলেন এবং তাদের সাদাকা করার জন্য আদেশ করলেন; যদিও তা তাদের অলংকার দ্বারা হয়। অতঃপর তিনি (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) বললেন, সাবধান থাকবে কোন মহিলা গোত্রকে (অন্যদের) তার স্বামীর সাথে একাকীত্বে যা হয় তার সংবাদ দান করতে সাবধান! কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে একাকীত্বে তাদের মধ্যে যা হয়েছে তার খবর গোত্রকে (অন্যান্যদের) জানানোর ব্যাপারে (অর্থাৎ, এব্যাপারে কিছু বলা যাবে না)। অতঃপর এক মহিলা তাদের মধ্য হতে দাঁড়াল যার গালে ফোড়া (ব্রণ জাতীয় রোগ) ছিল। সে বলল, আল্লাহর শপথ! পুরুষেরা এরূপ করে থাকে (অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীর একান্তের কথা অন্যদের বলে থাকে)। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) বললেনঃ তোমরা এমন করো না। আমি তোমাদের জানাবো না ঐরূপ করার উদাহরণ কী? (উদাহরণ হলো) সে শাইত্বানের মত যে এক স্ত্রী শাইত্বানের সাথে রাস্তায় সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে আর মানুষজন তা দেখছে। (আস্‌-সহীহাহ-৩১৫৩) হাদীসটি হাসান। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনি নাজ্জার গোত্রের এক মহল্লার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন অকস্মাৎ কিছু কিশোরী দফ (এক প্রকার ছোট্ট ঢোল) বাজাচ্ছিল। তারা (কবিতাকারে) বলছিল- আমরা বনী নাজ্জারের কিশোরী, কতই না উত্তম, আমাদের প্রতিবেশী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা’আলা জানেন আমার হৃদয় তোমাদের ভালবাসে। (আস-সহীহা-৩১৫৪) হাদীছটি সহীহ। আব্দুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমি তখন বালক ছিলাম। (অর্থাৎ, ছোট ছিলাম) আমি খেলাধুলা করতে যাচ্ছিলাম তখন আমার আম্মা আমাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! এদিকে এসো, তোমাকে কিছু দিব। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি তাকে কী দেয়ার ইচ্ছা করেছ? সে বলল, আমি তাকে খেজুর দিব। তিনি (বর্ননাকারী) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার জন্য (আমালনামায়) একটি মিথ্যা (বলার পাপ) লেখা হত। (আস-সহীহাহ-৭৪৮) হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (মাক্কা) বিজয়ের দিন তার কান কাটা উটে চড়ে (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করেন এবং তাঁর লাঠি দিয়ে পাথর স্পর্শ করেন (অর্থাৎ, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন) মাসজিদে উট বসাতে না পেরে (অর্থাৎ, বসানোর স্থান না থাকায়) উট বাতনে ওয়াদীতে যান এবং সেখঅনে উট বসানো হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার প্রসংশা জ্ঞাপন করেন এবং ছানা পড়েন। এরপর বলেন, হে লোকসকল! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জাহেলী যুগের গৌরব-অহংকার দূর করে দিয়েছেন। মানুষ দু’শ্রেনীর- (ক) সৎ, পরহেজগার ও আল্লাহর পছন্দনীয়। (খ) এবং অসৎ, হতভাগ্য ও আল্লাহর অপছন্দনীয়। অতঃপর তিলাওয়াত করেন- (আরবী) অর্থাৎ, হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের (কাউকে) পুরুষ (আবার কাউকে) মহিলা হিসেবে সৃষ্টি করেছি। তোমাদের বিভিন্ন গোত্র ও দলে বিভক্ত করেছি। যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। এক পর্যায়ে আয়াতটি পড়েন। অতঃপর বলেন, আমি (এ বক্তব্য) বললাম এবং আমার জন্য ও তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (আস-ছহীহাহ-২৮০৩) হাদীসটি সহীহ। বিশর ইবনু আকরবাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কোন এক যুদ্ধে (গিয়ে) আমার বাবা শাহাদাতবরন করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার পাশ দিযে যাচ্ছিলেন আর আমি তখন কাদঁতে ছিলাম। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, চুপ হও (শান্ত থাক) তুমি কি খুশি হবে না যদি আমি তোমার পিতা হই আর আয়েশা তোমার মা হন? (আস-সহীহাহ-৩২৪৯) হাদীসটি হাসান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক সারিয়া (ছোট সৈন্যবাহিনী) প্রেরণ করেন। তারা গানীমাত লাভ করে এবং তাদের মধ্যে (গানীমতের বস্তুর মধ্যে) এক ব্যক্তি ছিল। সে তাদের বলল, আমি তাদের সদস্য নই। আমি এক মহিলার প্রেমে পড়েছি ফলে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। আপনারা আমাকে সুযোগ দেন আমি তাকে একনজর দেখব। এরপর আমার সাথে আপনাদের যা মনে চায় তাই করুন। তারা দেখতে পেল, এক দীর্ঘকায় গৌরবর্ন রমনী সে (লোকটি) তাকে (মহিলাকে) বলল- যদি আমি তোমার অনুগামী হতাম তবে তোমার সাথে অবস্থান করতাম অলংকারে ঝলমলে, কিংবা তোমাকে পেতাম গলায় রশি বদ্ধাবস্থায়। প্রেমিকের কি অধিকার নেই যে (প্রেমিকাকে) শান্তি ও মিলনের প্রাপ্য দিবে। (রমণীটি) বলল: হ্যা, আমাকে আমি তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম। অতঃপর তারা (সৈন্যবাহিনী) অগ্রসর হয়ে তার গর্দান কেটে ফেলে। অতঃপর মহিলাটি তার নিকট এসে উচ্চ আওয়াজে চিৎকার করে মৃত্যুবরন করে। যখন তারা (সৈন্যবাহিনী) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম)-এর নিকট আসে তখন তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করানো হয়। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে কি কোন দয়ালু ব্যাক্তি ছিল না? (আস-সহীহাহ-১৫৯৪) হাদীসটি হাসান। সা’দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যেদিন মাক্কা বিজয় হয় আব্দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু আবূ সরাহ উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর নিকট আত্মগোপন করেছিল। তিনি [উসমান (রাঃ)] তাকে নিয়ে আসলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) এর নিকট দাঁড় করিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আব্দুল্লাহকে বাইআত করান। অতঃপর তিনি তার দিকে মাথা উঠালেন। অতঃপর তার দিকে তিনবার দৃষ্টিপাত করলেন। প্রত্যেকবার তিনি (বাইআত করতে) অস্বীকৃতি জানান। তৃতীয়বারের পরে তাকে বাইআত করান। অতঃপর সাহাবীদের নিকট আসলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কি কোন সঠিক পথপ্রাপ্ত ব্যক্তি নেই, যে এই ব্যক্তির নিকট দাঁড়িয়ে যখন আমাকে দেখেছে যে, আমি তাকে বাইআত করা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছি? তখন তাকে হত্যা করবে? তারা (সাহাবীগন) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার মনের কথা আমরা জানতে পারিনি। কেন আপনি চোখ দিয়ে আমাদের দিকে ইশারা করলেন না? তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন নবীর জন্য সমীচীন নয় যে, তার চোখের খিয়ানত থাকবে। (অর্থাৎ, আড়চোখে কিছু বলবে) (আস-সহীহাহ-১৭২৩) হাদীসটি সহীহ। আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সাতটি কাজ করতে আদেশ করেছেন। (ক) আমাকে দরিদ্রদের ভালবাসতে এবং তাদের সহাবস্থান করতে আদেশ করেছেন। (খ) আমার চেয়ে নিম্নস্তরের ব্যক্তিদের প্রতি তাকাতে আর আমার আমার চেয়ে উচ্চস্তরের ব্যক্তিদের প্রতি না তাকাতে আদেশ করেছেন। (গ) আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন যদিও তা (আত্মীয়তা) শীতল হয়ে যায়। (অর্থাৎ, তারা তেমন গুরুত্ব না দেয়)। (ঘ) আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি যেন কারো কাছে কিছু না চাই। (ঙ) আমাকে সত্য বলতে আদেশ করেছন, যদিও তা তিক্ত হয়। (চ) এবং আমাকে আদেশ করেছেন, আমি যেন আল্লাহর পথে কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনাকে পরওয়া না করি। (ছ) আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি যেন অধিক হারে বলি- (লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) কারণ, এ বাক্যগুলো আরশের খনি হতে নেয়া হয়েছে। অপর এক রিওয়ায়াতে এসেছে, কারণ এই বাক্যটি জান্নাতের খনিসমূহ হতে একটি খনি। (আস-সহঅহাহ-২১৬৬) হাদীসটি সহীহ। আবূ যার (রাঃ) আবূ যার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমাদের ভাইগণ (দাস-দাসীগন) তোমাদের উপহার স্বরূপ। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। যার অধীনে তার ভাই থাকবে তাকে যেন সে তা-ই খাওয়ায় যা সে খায়। আর তাকে তা-ই পরায় যা সে পরে। তাদের সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দিও না। যদি তাকে এমন কাজ করতে দাও যা তার সাধ্যাতীত তবে তাকে সাহায্য কর। (আস-সহীহাহ- ২৮৪২) হাদীসটি সহীহ। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার; যে তাদের মধ্যে সর্বাধিক চরিত্রবান। উত্তম চরিত্র অবশ্যই সালাত ও সাওমের মর্যাদায় পৌঁছে যাবে। (অর্থাৎ, উত্তম চরিত্রের মর্যাদা সালাত ও সাওমের তুলনায় নগন্য নয়।) (আস-সহীহাহ-১৫৯০) হাদীসটি সহীহ। ইয়াজ ইবনু হিমার ইয়াজ ইবনু হিমার নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি (নাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার কাছে ওহী প্রেরন করেছেন যে, তোমরা নম্রতা অবলম্বন কর। একজন যেন অন্যজনের উপর গর্ব-অহংকার না করে এবং একে অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার না করে। (আস- সহীহাহ- ৫৭০) হাদীসটি সহীহ। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা দয়ালু। দয়ালু ও উন্নত চরিত্রবান ব্যক্তিকে তিনি ভালবাসেন আর অনর্থক উক্তিকারীকে (বাচালকে) অপছন্দ করেন। (আস-সহীহাহ- ১৩৭৮) হাদীসটি সহীহ। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেন তখন দয়া আল্লাহ তা’আলার পাশে অবস্থান করতে থাকে। (অতঃপর তিনি বলেন থেমে যাও) দয়া বলল, এই স্থানটি বিচ্ছিন্নতা হতে (আপনার নিকট প্রার্থিত) আশ্রয়ের স্থান। তিনি (আল্লাহ তা’আলা) বললেন, হ্যা। তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সম্পর্ক গড়ে তুলবে আমি তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলব। আর তোমার সাথে যে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তার থেকে তোমার সম্পর্ক আমি ছিন্ন করব? সে (দয়া) বলল, (অবশ্যই) হ্যা, হে আমার প্রভু। তিনি বলেন, তা-ই (তোমার জন্য)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা যদি চাও তবে পাঠ কর- (আরবী) তোমরা কি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে (সত্য হতে ফিরে যাবে) যে, যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? (তবে জেনে রেখ) ঐ সকল ব্যক্তিদের আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা কুরআন অনুধাবন করে না নাকি তাদের অন্তরে মোহর মারা হয়েছে? (আস-সহীহাহ- ২৭৪১) হাদীসটি সহীহ। বর্ণনাকারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমার মিথ্যা ক্ষমা করে দিয়েছেন- (আরবি)-কে সত্যপ্রতিপন্ন করার কারণে। আনাস, ইবনু উমার, ইবনু আব্বাস ও হাসান বসরী (রহঃ)-এর মুরসাল সূত্রে হাদীস বর্নিত হয়েছে। এই হাদীসের শব্দগুলো আনাস (রাঃ)-এর হাদীছ থেকে নেয়া হয়েছে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলেনঃ হে অমুক! তুমি এমন কাজ করছ? সে বলল, না। ঐ সত্তার শপথ! “যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।” নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতেন যে, সে ঐ কাজটি করেছে। তখন তিনি তাকে বলেছেন... অতঃপর তা (হাদীছটি) উল্লেখ করেন। (আস-সহীহাহ- ৩০৬৪) হাদীসটি সহীহ। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্র বন্টন করে দিয়েছেন। যেমন তিনি তোমাদের মাঝে রিজিক বন্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা যাকে ভালাবাসেন তাকে দুনিয়া দিয়ে থাকেন, আবার যাকে অপছন্দ করেন তাকেও দিয়ে থাকেন। (অর্থাৎ, ভাল-মন্দ নির্বিশেষে সকলকে তিনি পার্থিব সম্পদ দিয়ে থাকেন।) আর তিনি ঐ ব্যক্তিকেই ঈমান দিয়ে থাকেন যাকে তিনি ভালবাসেন। যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ খরচ হওয়ার ভয়ে কৃপনতা করে, দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পায় এবং রাতে সফর করতে আশংকা করে তবে সে যেন অধিক হারে পাঠ করে “সুবহানআল্লাহ” “ওয়াল হামদুলিল্লাহ” “ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”। (আস-সহীহাহ- ২৭১৪) হাদীসটি সহীহ।