1. ঈমান (বিশ্বাস)

【1】

প্রথম অনুচ্ছেদ

إِيْمَانِ (ঈমা-ন)-এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা, সত্যায়ন করা ইত্যাদি। এর শার‘ঈ অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীদের মতে : নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় বিস্তারিত এবং সংক্ষিপ্ত যে বিধানাবলী নিয়ে এসেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন দলীল না থাকলেও চূড়ান্তভাবে তাকে সত্যায়ন করা। ঈমানটি তাদের নিকট যৌগিক কোন বিষয় নয় বরং এটি (بَسِيْطٌ) বাসীত্ব (একক) যা পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে কম-বেশি গ্রহণ করে না। (অর্থাৎ- ঈমান কোন সৎকাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না এবং পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায় না)। মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করা। জিহবার স্বীকৃতি ঈমানের কোন রুকনও না, শর্তও না। ফলে হানাফীদের মতো তারাও ‘আমালকে ঈমানের প্রকৃত অর্থের বহির্ভূত গণ্য করেছে এবং ঈমানের আংশিকতাকে অস্বীকার করেছে। তবে হানাফীরা এর (‘আমালের) প্রতি গুরুত্বারোপ, এর প্রতি উদ্বুদ্ধ এবং ঈমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিকে একটি কারণ হিসেবে গণ্য করলেও মুরজিয়ারা এটিকে সমূলে ধ্বংস করে বলেছে ‘আমালের কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করলেই পরিত্রাণ মিলবে তাতে যে যত অপরাধই করুক না কেন। কার্রামিয়্যাহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র উচ্চারণ করা। ফলে তাদের নিকট নাজাতের জন্য মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট, চাই সত্যায়ন পাওয়া যাক বা না যাক। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদসহ জমহূর ‘উলামাগণের মতে : ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, জিহবায় উচ্চারণ করা এবং রুকনসমূহের প্রতি ‘আমাল করা। তাদের নিকট ঈমান একটি যৌগিক বিষয় যা কমে এবং বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এটিই হলো সর্বাধিক সঠিক অভিমত। মু‘তাযিলাহ্ এবং খারিজীগণের নিকট ঈমানের সংজ্ঞা জমহূরের মতই তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য হলো ঈমানের সকল অংশকে জমহূর সমান হিসেবে গণ্য করেননি। ফলে তাদের নিকট ‘আমালসমূহ যেমন সলাতের ওয়াজিব বিষয়গুলো তার রুকনের মতো নয়। অতএব ‘আমাল না থাকলে কোন ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডী থেকে বের না হয়ে তার মধ্যেই থাকবে এবং ‘আমাল পরিত্যাগকারী অনুরূপ কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে জড়িত ব্যক্তি ফাসিক্ব-মু’মিন থাকবে সে কাফির হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে কারো মাঝে যদি শুধু তাসদীক না পাওয়া যায় তাহলে সে মুনাফিক্ব আর ইক্বরার বা স্বীকৃতি না পাওয়া গেলে কাফির। কিন্তু যদি শুধুমাত্র ‘আমালগত ত্রুটি থাকে তাহলে সে ফাসিক্ব যে জাহান্নামে চিরদিন অবস্থান করা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর খারিজী এবং মু‘তাজিলীরা যৌগিক ঈমানের সকল অংশকে সমান হিসেবে গণ্য করে এভাবে যে, ঈমানের কিছু অংশ বাদ পড়লে সমস্তটাই বাদ বলে পরিগণিত হবে। আর ‘আমালটি তাদের নিকট ঈমানের একটি রুকন যেমনটি সলাতের বিভিন্ন রুকন রয়েছে। তাই ‘আমাল পরিত্যাগকারী তাদের নিকট ঈমান বহির্ভূত লোক। খারিজীদের মতে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি অনুরূপ ‘আমাল পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির যে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে। আর মু‘তাজিলাদের মতে সে মু’মিনও নয় কাফিরও নয় বরং তাকে ফাসিক্ব বলা হবে যে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তাঁর নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সস্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সস্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থ প্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। [১] ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি দরবারে আত্মপ্রকাশ করলেন। ধবধবে সাদা তাঁর পোশাক। চুল তাঁর কুচকুচে কালো। না ছিল তাঁর মধ্যে সফর করে আসার কোন চিহ্ন, আর না আমাদের কেউ তাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি এসেই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসে পড়লেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুর সাথে তাঁর হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। তাঁর দু’হাত তাঁর দুই উরুর উপর রেখে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলুন অর্থাৎ ইসলাম কি? উত্তরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ইসলাম হচ্ছে- তুমি সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রসূল, সলাত ক্বায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহর হাজ্জ করবে যদি সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে।” আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।” আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম একদিকে তিনি রসূলকে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করলেন, আবার অপরদিকে রসূলের বক্তব্যকে (বিজ্ঞের ন্যায়) সঠিক বলে সমর্থনও করলেন। এরপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন।” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেন, ঈমান হচ্ছেঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা, তাঁর মালায়িকাহ্, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ এবং পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এছাড়া তাক্বদীরের উপর অর্থাৎ জীবন ও জগতে কল্যাণ-অকল্যাণ যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় হচ্ছে- এ কথার উপর বিশ্বাস করা। উত্তর শুনে আগন্তুক বললেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন”। অতঃপর তিনি আবার বললেন, “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইহসান হচ্ছে, “তুমি এমনভাবে আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো। আর তুমি যদি তাঁকে না-ও দেখো, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন”। আগন্তুক এবার বললেন, “আমাকে ক্বিয়ামাত সম্পর্কে বলুন।” উত্তরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানেন না।” আগন্তুক বললেন, “তবে ক্বিয়ামাতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন।” নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ক্বিয়ামাতের নিদর্শন হল, দাসী তাঁর আপন মনীবকে প্রসব করবে, তুমি আরো দেখতে পাবে- খালি পায়ের উলঙ্গ-কাঙ্গাল মেষ চালকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করবে।” ‘উমার (রাঃ) বললেন, অতঃপর আগন্তুক চলে গেলে আমি কিছুক্ষণ সেখানেই অবস্থান করলাম। পরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘উমার! প্রশ্নকারী আগন্তুক কে চিনতে পেরেছো?” আমি বললাম, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, “ইনি হচ্ছেন জিবরীল (‘আলাহিসসালাম)। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন”। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতেও সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। তা হচ্ছে- যখন উলঙ্গ কাঙ্গাল এবং মূক ও বধিরগণকে অর্থাৎ অযোগ্য লোকদেরকে দেশের রাজা বা শাসক হতে দেখবে। সে পাঁচটি বিষয় ক্বিয়ামাতের আলামাতের অন্তর্গত, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তারপর তিনি প্রমাণ হিসেবে কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ্‌ ক্বিয়ামাত সম্পর্কে ভাল জানেন কবে তা সংঘটিত হবে? কিভাবে হবে? বৃষ্টি তিনিই বর্ষিয়ে থাকেন” – (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১:৩৪)। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ পালন করা এবং রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হল “আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই”- এ ঘোষণা দেয়া। সাধারণ শাখা হল, কষ্টদায়ক কোন বস্তুকে পথ থেকে অপসারিত করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গ মুসলিম সে ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির হল সে ব্যক্তি যে সে সকল কাজ পরিত্যাগ করেছে যেসব কাজ করতে আল্লাহ্‌ বারণ করেছেন। হাদীসের শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর। আর মুসলিম এ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করল, মুসলিমদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যার জিহবা ও হাত (’র অনিষ্ট) হতে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ (প্রকৃত) মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোকের মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ ঘটে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে। (১) তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল কিছু হতে অধিক প্রিয়। (২) যে লোক কোন মানুষকে কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই ভালবাসে। (৩) যে লোক কুফরী হতে নাজাতপ্রাপ্ত হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর পুনরায় কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে এত অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। [১] ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে প্রতিপালকের হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম! এ উম্মাতের যে কেউই চাই ইয়াহূদী হোক বা খ্রীষ্টান, আমার রিসলাত ও নাবূওয়াত মেনে না নিবে ও আমার প্রেরিত শারী‘আতের উপর ঈমান না এনেই মৃত্যুবরণ করবে, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামী।[১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন লোকের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। প্রথমতঃ যে আহলি কিতাব নিজের নাবীর প্রতি ঈমান এনেছে আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিও ঈমান এনেছে। দ্বিতীয়তঃ যে ক্রীতদাস যথানিয়মে আল্লাহর হাক্ব আদায় করেছে পুনরায় নিজের মুনীবের হাক্বও আদায় করেছে। তৃতীয়তঃ যার তত্ত্বাবধানে ক্রীতদাসী ছিল, সে তার সঙ্গে সহবাস করেছে, তাকে উত্তমরূপে আদব-কায়দাও শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিয়ে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর পক্ষ হতে আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা এ কথা স্বীকার করে সাক্ষ্য না দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই, আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রসূল এবং সলাত আদায় করবে ও যাকাত আদায় করবে– ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। যখন তারা এরূপ কাজ করবে আমার পক্ষ হতে তাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে। কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী কেউ যদি কোন দন্ড পাওয়ার উপযোগী কোন অপরাধ করে, তবে সে দন্ড তার উপর কার্যকর হবে। তারপর তার অদৃশ্য বিষয়ের (অন্তর সম্পর্কে) হিসাব ও বিচার আল্লাহর উপর ন্যস্ত। [১] তবে সহীহ মুসলিমে “কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী” বাক্যটি উল্লেখ করেননি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সলাত আদায় করে, আমাদের ক্বা’বাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করে, আমাদের যাবাহকৃত পশুর গোশত খায়, সে এমন মুসলিম যার জন্য (জান-মাল, ইজ্জাত-সম্ভ্রম রক্ষায়) আল্লাহ ও রসূলের ওয়া’দা রয়েছে। তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক (বেদুঈন) লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটা কাজের সন্ধান দিন যা করলে আমি সহজে জান্নাতে পৌছাতে পারি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর ‘ইবাদাত করতে থাকবে, তাঁর সাথে কাউকে শারীক করবে না, ফারয সলাত ক্বায়িম করবে, ফারয যাকাত আদায় করবে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করবে। এ কথা শুনে লোকটি বলল, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে! আমি এর থেকে বেশিও করব না, কমও করব না। সে লোক যখন চলে গেল তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেউ যদি জান্নাতী কোন লোককে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এ লোককে দেখে। [১] সুফ্ইয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ আস্ সাক্বাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি চূড়ান্ত কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে আপনার পরে– অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘আপনি ছাড়া’ আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি’- তুমি এ কথা বল এবং এ ঘোষণায় দৃঢ় থাক। [১] লহাহ্ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একজন নাজদবাসী লোক এলোমেলো কেশে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসল। আমরা তার ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু বেশ দূরে থাকার কারণে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুব নিকটে এসে পৌঁছল। সে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল (ইসলাম কি?)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করা। তখন সে লোকটি বলল, এছাড়া কি আর কোন সলাত আমার উপর ফারয? তিনি বললেন, না। তবে তুমি নাফল সলাত আদায় করতে পারো। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে। সে ব্যক্তি বলল, এছাড়া কি আর কোন সিয়াম আমার উপর ফারয? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। তবে ইচ্ছামাফিক (নাফল) সিয়াম পালন করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতের কথা বর্ণনা করলেন। পুনরায় সে লোকটি বলল, এছাড়া কি আর কোন সদাক্বাহ আমার উপর ফারয? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, কিন্তু স্বেচ্ছায় দান করার ইখতিয়ার রয়েছে। অতঃপর লোকটি এ কথা বলতে বলতে চলে গেল– আল্লাহর কসম, এর উপর আমি কিছু বেশিও করব না এবং কমও করব না। (এটা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লোকটি যদি তার কথায় সত্য বলে থাকে, তাহলে (জাহান্নাম হতে) সাফল্য লাভ করল। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল ক্বায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে পৌঁছলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কোন গোত্রের লোক (বা কোন প্রতিনিধি দল? লোকেরা জবাব দিল, এরা রবী‘আহ্ গোত্রের লোক। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, গোত্র বা প্রতিনিধি দলকে মুবারকবাদ! অপমান ও অনুতাপবিহীন অবস্থায় আগত প্রতিনিধি দলকে মুবারাকবাদ! প্রতিনিধি দল আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার ও আমাদের মধ্যে কাফির যুদ্ধবাজ মুযার বংশ অন্তরায়স্বরূপ থাকায় হারাম মাস ব্যতীত অন্য মাসে আপনার নিকট আসতে পারি না। তাই আপনি হাক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী এমন কিছু পরিষ্কার নির্দেশ দিন যা আমরা মেনে চলব এবং যাদেরকে দেশে রেখে এসেছি তাদেরকে গিয়ে বলতে পারব। যা দ্বারা আমরা (সহজে) জান্নাতে যেতে পারি। এর সাথে তারা (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) পানীয় বস্তু (পান পাত্র) সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিলেন আর চারটি কাজ হতে নিষেধ করলেন। (প্রথমে) তিনি তাদেরকে এক আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনার আদেশ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি, তা কি তোমরা জান? তারা জবাবে বলল, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলই অধিক ভাল জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রসূল- এ সাক্ষ্য দেয়া। (২) সলাত ক্বায়িম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। এবং (৪) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। এরপর (চারটি কাজ ছাড়াও) গনীমতের (জিহাদলব্ধ মালের) ‘খুমুস’ এক-পঞ্চমাংশ দেয়ার হুকুম দিলেন। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি (মদের) পানপাত্র ব্যবহার নিষেধ করলেন। এগুলো হলঃ হানতাম (নিকেল করা সবুজ পাত্র), দুব্বা (কদুর খোল দ্বারা প্রস্ততকৃত পাত্রবিশেষ) নাকীর (গাছের বা কাঠের পাত্রবিশেষ), মুয়াফফাত (তৈলাক্ত পাত্রবিশেষ)। (এ জাতীয় পাত্রে তৎকালীন সময়ে মদ ব্যবহার করা হত) তিনি আরো বললেন, এ সকল কথা ভালভাবে স্মরণ রাখবে। যাদের দেশ ছেড়ে এসেছো তাদেরকেও বলবে। [১] ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে ঘিরে একদল সহাবী বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমার হাতে এ কথার বাই’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শারীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার (যিনা) করবে না, নিজেদের সন্তানাদি (অভাবের দরুন) হত্যা করবে না। কারো প্রতি (যিনার) মিথ্যা অপবাদ দিবে না। শারী’আতসম্মত কোন বিষয়ে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করতে পারবে, তাদের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে পুরষ্কার রয়েছে। অপরদিকে যে লোক (শির্ক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্যে দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ্ তা ঢেকে রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্যে দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহ্‌র মর্যির উপর নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন। বর্ণনাকারী (‘উবাদাহ্) বলেন, আমরা এ সকল শর্তানুযায়ী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর হাতে বায়’আত করলাম। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদুল ফিত্র কিংবা কুরবানীর ঈদের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে গেলেন এবং নারীদের নিকট পৌঁছলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে নারী সমাজ! তোমরা দান-সদাক্বাহ্ কর। কেননা আমাকে অবগত করানো হয়েছে যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী সমাজেরই হবে”। (এ কথা শুনে) তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এর কারণ কি? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা অধিক মাত্রায় অভিসম্পাত করে থাক এবং নিজ স্বামীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে থাক। বুদ্ধি ও দীনদারীতে দুর্বল হবার পরও বিচক্ষণ ও সচেতন পুরুষদের বেওকুফ বানিয়ে দেবার জন্য তোমাদের চেয়ে অধিক পারঙ্গম আমি আর কাউকে দেখিনি”। (এ কথা শুনে) নারীরা আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের কী দুর্বলতা রয়েছে? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “একজন নারীর সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়”? তারা বলল, জি হাঁ! নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এটাই হল নারীদের বুদ্ধিমত্তার দুর্বলতা। আর নারীরা মাসিক ঋতু অবস্থায় সালাত দায় করতে ও সিয়াম পালন করতে পারে না। এটা কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বলেন, হাঁ তা-ই। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “এটাই হল তাদের দ্বীনের দুর্বলতা”। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে মিত্যাবাদী বানাচ্ছে, অথচ এটা তাদের জন্য অনুচিত। সে আমায় মন্দ বলছে অথচ এটাও তাদের পক্ষে সমীচীন নয়। আমাকে মিথ্যা বলার অর্থ হল- তারা বলে, এমনভাবে আল্লাহ্ আমাকে (আখিরাতে) অবশ্যই সৃষ্টি করতে পারবেন না ঠিক যেভাবে আল্লাহ্ আমাকে প্রথম (এ দুনিয়ায়) সৃষ্টি করেছেন। অথচ আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার তুলনায় অধিকতর সহজ নয় কি? আর আমার ব্যাপারে মন্দ বলার অর্থ হল, তারা বলে, আল্লাহ্ নিজের পুত্র বানিয়েছেন, অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও কেউ জন্ম দেইনি, আর কেউ আমার সমকক্ষও নয়। [১] ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আর তাদের আমাকে মন্দ বলার অর্থ হলঃ তারা বলে, আল্লাহ্‌র সন্তান আছে, অথচ আমি স্ত্রী ও পুত্র হতে পবিত্র। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আদাম সন্তান আমাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা যুগ বা কালকে গালি দেয়, অথচ আমিই দাহ্র অর্থাৎ যুগ বা কাল। আমার হাতেই (কালের পরিবর্তনের) ক্ষমতা। দিন-রাত্রির পরিবর্তন আমিই করে থাকি। [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কষ্টদায়ক কোন বিষয় শুনেও সবর করার ক্ষমতা আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কারো নেই। মানুষেরা তাঁর সন্তান আছে বলে দাবি করে। (এরপরও তিনি মানুষের ওপর কোন প্রতিশোধ গ্রহণ না করে), বরং তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদেরকে জীবিকা দান করে থাকেন। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক ভ্রমণে গাধার উপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পেছনে আরোহণ করলাম। আমার আর তাঁর মধ্যে হাওদার পেছন দিকের হেলানো কাঠ ছাড়া আর কোন ব্যবধান ছিল না। তিনি বললেন, হে মু’আয! বান্দাদের উপর আল্লাহ্‌র কি হাক্ব এবং আল্লাহ্‌র উপর বান্দার কি হাক্ব, তুমি কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও আল্লাহ্‌র রসূলই এ ব্যাপারে অধিক অবগত। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বান্দাদের উপর আল্লাহ্‌র হাক্ব হল, তারা আল্লাহ্‌র ‘ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শারীক করবে না। আর আল্লাহ্‌র উপর বান্দার হাক্ব হল, যারা আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শারীক করেনি, আল্লাহ্ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে আমি কি এ সুসংবাদ মানুষদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি বললেন, লোকদেরকে এ সুসংবাদ দিও না। কারণ তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। [১] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনের উপর বসা ছিলেন এবং তাঁর পেছনে মু’আয (রাঃ) আরোহণ করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! তিনি (মু’আয) বললেন, আমি উপস্থিত আছি, হে আল্লাহ্‌র রসূল! রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, হে মু‘আয! মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি উপস্থিত আছি। তৃতীয়বার আবার রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মু’আয! মু’আয (রাঃ) বললেন, আমি উপস্থিত আছি। এভাবে মু’আযকে তিনবার ডাকলেন এবং (মু’আয) তিনবারই তাঁর উত্তর দিলেন। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্‌র যে বান্দা খাঁটি মনে এ ঘোষণা দিবে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। তখন মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ সুসংবাদটি কি আমি লোকদেরকে জানিয়ে দিব? তারা যাতে এ খোশখবরী শুনলে খুশী হয়? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। [আনাস (রাঃ) বলেন] মু’আয শুধুমাত্র হাদীস গোপন করার অপরাধে অপরাধী হওয়ার ভয়েই মৃত্যুকালে এ হাদীসটি প্রকাশ করে গিয়েছেন। [১] আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (একবার) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে পৌঁছলাম। তিনি একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়েছিলেন। আমি ফেরত চলে এলাম। অতঃপর পুনরায় তাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি জেগে ছিলেন। তিনি (আমাকে দেখে) বললেন, যে ব্যক্তি (অন্তরের সাথে) ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে আর এ বিশ্বাসের উপর তার মৃত্যু হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, সে চুরি ও ব্যভিচার (এর মত বড় গুনাহ) করে থাকে তবুও? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে চুরি ও ব্যভিচার করলেও। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, চুরি ও ব্যভিচার করার পরও? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ, চুরি ও ব্যভিচারের ন্যায় গুনাহ করলেও। আবূ যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন যখনই আবূ যার (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন (গৌরবের সাথে) এ শেষ বাক্যটি ‘আবূ যার-এর নাক ধুলায় মলিন হলেও’ অবশ্যই বর্ণনা করতেন। [১] উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক (অন্তরের সাথে) এ ঘোষণা দিবে, “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শারীক নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই রসূল এবং বিবি মারইয়াম-এর ছেলেও [‘ঈসা (আঃ)] আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই রসূল, তাঁর বান্দীর সন্তান ও আল্লাহর কালিমা- যা তিনি মারইয়াম-এর প্রতি প্রেরণ করেছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ‘রূহ’, আর জান্নাত-জাহান্নাম সত্য- তার ‘আমাল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ তা’আলা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [১] ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার দিকে আপনার হাত প্রসারিত করে দিন আমি আপনার কাছে ইসলাম গ্রহণের বায়’আত করব। তিনি (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত প্রসারিত করে দিলেন, কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তখন তিনি (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (অবাক হয়ে) বললেন, তোমার কি হল হে ‘আমর! আমি বললাম, আমার কিছু শর্ত আছে। তিনি (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কি শর্ত? আমি বললাম, আমি চাই আমার (পূর্বের কৃ্ত) গুনাহ যেন মাফ করে দেয়া হয়। তখন তিনি (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমর! তুমি কি জান না ‘ইসলাম গ্রহণ’ পূর্বেকার সকল গুনাহ বিনাশ করে দেয়। হিজরত সে সকল গুনাহ মাফ করে দেয় যা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে। এমনিভাবে হাজ্জও তার পূর্বের সকল গুনাহ নষ্ট করে দেয়? [৪৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে দু’টি হাদীস, প্রথমটি তিনি (সাল্লালাহূ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমি শারীককারীদের শিরক হতে মুক্ত। .... দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ‘অহংকার আমার চাদর’- ইনশা’আল্লাহ তা’আলা রিয়ার অনুচ্ছেদে শীঘ্রই তা বর্ণনা করব। [১]

【2】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ‘আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে (সহজে) জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, কিন্তু যার পক্ষে আল্লাহ এটা সহজ করে দেন, তার পক্ষে এটা খুবই সহজ। তা হচ্ছে, আল্লাহর ‘ইবাদত করবে, কাউকে তাঁর সাথে শারীক করবে না। নিয়মিত সলাত ক্বায়িম করবে, যাকাত দিবে, রমযানের সিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ করবে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মু‘আয! আমি কি তোমাকে কল্যাণকর দরজাসমূহ বলে দিব না? (জেনে রেখ) সিয়াম (কুপ্রবৃত্তির মুকাবিলায়) ঢালস্বরূপ। দান-সদাক্বাহ্ গুনাহকে নির্মূল করে দেয়। যেমনিভাবে পানি আগুনকে ঠান্ডা করে দেয়। এভাবে মানুষের মধ্য-রাত্রির (তাহাজ্জুদের) সলাত (আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ শেষ হয়ে যায়)। অতঃপর (তার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করলেন : “সৎ মু’মিনদের পাঁজর বিছানা থেকে আলাদা থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা ত্যাগ করে ‘ইবাদত রত থাকে) আর নিজেদের পরওয়ারদিগারকে আশা- নিরাশার স্বরে ডাকতে খাকে। যে সম্পদ আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে। কোন মানুষই জানে না, এ সৎ মু’মিনদের চোখ ঠান্ডা করার জন্য কি জিনিস লুক্কায়িত রাখা হয়েছে। এটা হল তাদের কৃত সৎ ‘আমালের পুরস্কার”- (সূরাহ্ সাজদাহ্ ৩২ : ১৬-১৭)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব না, (দ্বীনের) কাজের খুঁটি স্তম্ভ কি এবং তার উচ্চশিখরই বা কি? আমি বললাম, হাঁ, বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল! তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দ্বীনের (সমস্ত কাজের) আসল হচ্ছে ইসলাম (অর্থাৎ কালিমা)। আর তার স্তম্ভ হল সলাত, আর উচ্চশিখর হচ্ছে জিহাদ। অতঃপর তিনি তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এ সকলের মূল বলে দিব না? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর নাবী! অবশ্যই তা বলে দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জিহ্বা ধরে বললেন, এটাকে সংযত রাখ। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল। আমরা মুখ দ্বারা যা বলি, এ সম্পর্কেও কি (পরকালে) আমাদের জবাহদিহির সম্মুখীন হতে হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সর্বনাশ, কি বললে হে মু‘আয! (জেনে রেখ কিয়ামতের দিন) মানুষকে মুখের উপর অথবা নাকের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। তার কারণ মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অসংযত কথা। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান- খয়রাত করে আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান- খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে। [১] মু‘আয ইবনু আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এতে বর্ণিত হয়েছে, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিয়েছে। [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ‘আমলের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা, আর আল্লাহর জন্যই কারো সাথে ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করা। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সেই ব্যক্তি মুসলিম যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত ও পরিপূর্ণ) মু’মিন সে ব্যক্তি যার থেকে মানুষ নিজের জীবন ও সম্পদকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে মনে করে। [১] ফাযালাহ্ (রাঃ) ইমাম বায়হাক্বী তাঁর শু’আবূল ঈমান গ্রন্থে ফাযালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন তাতে এ শব্দগুলো বেশি রযেছে : “আর প্রকৃত মুজাহিদ হল সে, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজের নাফসের সাথে জিহাদ করে এবং (প্রকৃত) মুহাজির সে ব্যক্তি, যে সকল অপরাধ ও গুনাহ বর্জন করে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ খুৎবাহ্ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে, যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়া’দা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই। (বায়হাক্বী-এর শু’আবূল ঈমান)[১]

【3】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল, আল্লাহ (তাঁর অনুগ্রহে) তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি (খাঁটি মনে) এ বিশ্বাস নিয়ে মারা যাবে যে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। [১] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দু’টি বিষয় দু‘টি জিনিসকে (জান্নাত ও জাহান্নামকে) অনিবার্য করে দেয়। এক সহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ দু‘টি বিষয় কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করে মৃত্যুবরণ করেছে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা কয়েকজন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঘিরে বসা ছিলাম। আমাদের সাথে আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) ও ছিলেন। হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্য হতে উঠে চলে গেলেন এবং এত বিলম্ব করলেন যাতে আমরা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। না জানি আমাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবার কোন বিপদে পড়লেন কিনা। এতে আমরা ঘাবড়িয়ে গেলাম এবং উঠে বের হয়ে পড়লাম। অবশ্য সকলের মধ্যে আমিই প্রথম ভীত হয়ে পড়েছিলাম। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্ধানে আমি সকলের আগে বের হলাম। এমনকি খুঁজতে খুঁজতে আমি বানী নাজ্জার গোত্রের জনৈক আনসারীর প্রাচীরবেষ্টিত বাগানের নিকট পৌছলাম। ভিতরে প্রবেশ করার জন্য তার চারদিকে দরজা খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি, বাইরের একটি কূপ হতে একটি ছোট নালা এসে বাগানের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, আমি জড়োসড়ো হয়ে তাতে প্রবেশ করলাম এবং ধীরে ধীরে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যেয়ে পৌছলাম। তিনি (আমাকে তাঁর সামনে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে) বললেন, আবূ হুরায়রাহ্ নাকি! আমি বললাম, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, কি ব্যাপার? (তুমি এখানে?) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন, হঠাৎ উঠে চলে আসলেন। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে আপনাকে ফিরে আসতে না দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। (আল্লাহ্ না করুন) আমাদের হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনি কোনরূপ বিপদের সম্মুখীন হলেন কিনা। এজন্য আমরা সকলেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং সকলের মধ্যে আমিই প্রথম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। অতঃপর (আপনাকে খোঁজ করতে করতে) এ বাগানের দিকে আসি এবং শিয়ালের ন্যায় খুব সরু হয়ে বাগানে প্রবেশ করি। আর অন্যান্যরাও (আপনার জন্য) আমার পেছনে আসছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জুতাদ্বয় আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! আমার জুতা দু‘টি সাথে নিয়ে যাও! (তুমি আমার কাছে এসেছিলে লোকেরা যেন বুঝতে পারে তার নিদর্শনস্বরূপ) আর বাগানের বাইরে যাদের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাদের মধ্যে যারা সত্য দৃঢ় মনে ‘আক্বীদার সাথে এ ঘোষণা দিবে, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই”, তাদেরকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, (রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিদর্শন নিয়ে বাইরে আসলে) প্রথমেই ‘উমার-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আবূ হুরায়রাহ্! এ জুতা দুটি কার ? আমি বললাম, এ জুতা দুটি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ জুতা দুটি আমার কাছে দিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি সত্য দৃঢ় মনে ‘আক্বীদার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, “আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই”, আমি যেন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেই। এ কথা শুনা মাত্রই ‘উমার আমার বুকের উপর এমন ঘুষি মারলেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে গেলাম। অতঃপর ‘উমার আমাকে বললেন, ফিরে যাও, হে আবূ হুরায়রাহ্! তাই আমি কাঁদতে কাঁদতে রসুলের কাছে ফিরে এলাম। (আমার মনে ‘উমারের ভয় ছিল) পিছন ফিরে দেখি ‘উমার আমার সাথে এসে পৌছেছেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কাঁদতে দেখে) জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘উমার! এমন করলে কেন? ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আপনি আপনার জুতা দু’টি দিয়ে আবূ হুরায়রাহ কে পাঠিয়েছেন এ বলে, যে ব্যক্তি অন্তরের স্থির বিশ্বাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই, তাকে যেন সে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়? রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ। ‘উমার বললেন, (হে আল্লাহর রসূল! অনুগ্রহ করে) এরূপ বলবেন না। আমার আশঙ্কা হয় (এ কথা শুনে) পরবর্তী লোকেরা এর উপর নির্ভর করে বসবে (‘আমাল’ করা ছেড়ে দিবে)। সুতরাং তাদেরকে যথাযথভাবে ‘আমাল করতে দিন। এ কথা শুনে রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঠিক আছে! তাদেরকে ‘আমাল করতে দাও। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : জান্নাতের চাবি হচ্ছে “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই” বলে (অন্তরের সাথে) সাক্ষ্য দেয়া। [১] ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইন্তিকাল হলো, (তাঁর ইন্তিকালে শোকাহত হয়ে) তাঁর সহাবীগণের মধ্যে কতক লোক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি সহাবীগণের কারো কারো মনে নানারূপ সন্দেহ-সংশয় দেখা দেয়। (তাঁর ইন্তিকালের পর এ দ্বীন টিকে থাকবে কি?) ‘উসমান (রাঃ) বলেন, আমিও তাদের অন্যতম ছিলাম। এমতাবস্থায় আমি বসেছিলাম আর ‘উমার আমার পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং আমাকে সালামও দিলেন, অথচ আমি তা টেরও পেলাম না। ‘উমার গিয়ে আমার বিরুদ্ধে আবূ বাকরের কাছে অভিযোগ পেশ করলেন। অতঃপর তাঁরা দু‘জন আমার নিকট আসলেন এবং উভয়ে আমাকে সালাম করলেন। অতঃপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, তোমার ভাই ‘উমারের সালামের জবাব কেন দিলে না? আমি বললাম, আমি তো এরূপ করিনি। (‘উমার আমার কাছে এসেছেন ও সালাম দিয়েছেন আর আমি উত্তর দেইনি, এমন তো হতে পারে না)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তুমি এরূপ করেছো। ‘উসমান বললেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি মোটেই বুঝতে পারিনি আপনি কখন এখান দিয়ে গেছেন ও আমাকে সালাম করেছেন। (কথোপকথন শুনে) আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘উসমান সত্যই বলেছেন। নিশ্চয়ই আপনাকে কোন দুশ্চিন্তাই হয়তো বিরত রেখেছিল। তখন আমি বললাম, জি, হতে পারে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে (ব্যাপারটা) কি? আমি বললাম, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রসূলকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন অথচ আমরা তাঁকে একটি বিষয় (মনের অযথা খটকা) হতে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, (চিন্তার কোন বিষয় নয়) আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। (এটা শুনে) আমি আবূ বাকরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনিই এ রকম কাজের যোগ্য ব্যক্তি। তারপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমি রসূলকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বিষয়টি হতে মুক্তির উপায় কি? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাবে বললেন, যে লোক সে কালিমা গ্রহণ করল, যা আমি আমার চাচা (আবূ তালিব)-কে বলেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তার জন্য এটাই হল মুক্তির মাধ্যম। [১] মিক্বদাদ [ইবনু আস্ওয়াদ] (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, এ জমিনের উপর এমন কোন মাটির অথবা পশমের ঘর (তাঁবু) বাকী থাকবে না, যে ঘরে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইসলামের বাণী পৌছিয়ে দিবেন না। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে আর লাঞ্ছিতের ঘরে লাঞ্ছনার সাথে তা পৌছাবেন। আল্লাহ্ তাআলা যাদেরকে সম্মানিত করবেন তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম কবূলের উপযুক্ত করে মর্যাদাবান ও গৌরবময় করে দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাদের আল্লাহ্ তাআলা লাঞ্ছিত করবেন এবং তারা এ কালিমার প্রতি অনুগত হবার জন্য বাধ্য হবে। (মিক্বদাদ বলেন, এটা শুনে) আমি বললাম, তখন তো সমগ্র বিশ্বে আল্লাহরই দ্বীন (প্রতিষ্ঠিত) হয়ে যাবে। (অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপরই ইসলাম বিজয়ী হবে)। [১] ওয়াহব ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তাকে জিজ্ঞেস করা হল, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” (আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই)-এ বাক্য কি জান্নাতের চাবি নয়? ওয়াহব বললেন, নিশ্চয় (এটা চাবি)। কিন্তু প্রত্যেক চাবির মধ্যেই দাঁত থাকে। তুমি যদি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও তবেই তো তোমার জন্য (জান্নাতের দরজা) খুলে দেয়া হবে, অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ উত্তমভাবে (সত্য ও খালিস মনে) মুসলিম হয়, তখন তার জন্য প্রত্যেক সৎ কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। আর তার অসৎ কাজ-যা সে করে থাকে, তার অনুরূপই (মাত্র এক গুণই গুনাহ) ‘আমালনামায় লেখা হয়, যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর দরবারে পৌঁছায়। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! ঈমান কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন তোমাকে নেক (সৎ) কাজ আনন্দ দিবে ও খারাপ (অসৎ) কাজ পীড়া দিবে, তখন তুমি মু’মিন। আবার সে লোকটি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! খারাপ (অসৎ) কাজ কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন কোন কাজ করতে তোমার মনে দ্বিধা ও সন্দেহের উদ্রেক করে (তখন মনে করবে এটা গুনাহের কাজ), তখন তা ছেড়ে দিবে। [১] আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ দীনে (ইসলামের দা’ওয়াতের ব্যাপারে একেবারে প্রথমদিকে) আপনার সাথে আর কারা ছিলেন? রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আযাদ ব্যক্তি (আবূ বাকর) ও একজন গোলাম (বিলাল)। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, ইসলাম (তার নিদর্শন) কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মার্জিত কথাবার্তা বলা ও (অভুক্তকে) আহার করানো। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঈমান (তার পরিচয়) কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (গুনাহের কাজ হতে) ধৈর্য ধরা ও দান করা। তিনি (আমর) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার হাত ও জিহ্বার অনিষ্ট হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (আমর বলেন) আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কোন ঈমান (ঈমানের কোন শাখা) উত্তম? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সৎস্বভাব। আমর বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সলাতে কোন্ জিনিস উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে ক্বিয়াম করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন হিজরত উত্তম। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ্ যা অপছন্দ করে তুমি এমন কাজ ছেড়ে দিবে। আমি বললাম, কোন জিহাদ উত্তম ? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার ঘোড়ার হাত-পা কর্তিত এবং নিজের রক্ত নির্গত হয়েছে (অর্থাৎ সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যার ঘোড়া যুদ্ধে মারা যায় এবং সেও শাহীদ হয়)। আমি বললাম, সর্বোত্তম কোন্ সময়? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, শেষ রাতের মধ্যভাগ। (আহমাদ ১৮৯৪২)[১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক না করে, (দৈনিক) পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করে তাঁর কাছে পৌঁছাবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি এ সুসংবাদ তাদেরকে জানিয়ে দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (না) তাদেরকে ‘আমাল করতে দাও। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) একদা তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, উত্তম ঈমান সম্পর্কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কাউকে তুমি ভালবাসলে আল্লাহর ওয়াস্তেই ভালবাসবে। অপরদিকে শত্রুতা করলে তাও আল্লাহর ওয়াস্তেই করবে এবং নিজের জিহ্বাকে (খালিস মনে) আল্লাহর যিক্‌রে মশগুল রাখবে। তিনি (মু’আয) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এছাড়া আমি আর কি করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অপরের জন্য সে-ই জিনিস পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ কর। আর অপরের জন্যও তা অপছন্দ করবে যা নিজের জন্য অপছন্দ করে থাকো (অর্থাৎ সকলেরই কল্যাণ কামনা করবে)। [১]

【4】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলও, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক বড় গুনাহ কোন্‌টা? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করা। অতঃপর পুনরায় সে জিজ্ঞেস করলো, তারপর কোন্‌টা? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে- এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। পুনরায় প্রশ্ন করলো, তারপর কোন্‌টা? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা। তিনি [ইব্‌নু মাসঊদ(রাঃ)] বলেছেন, এর সমর্থনে আল্লাহ তা’আলা (কুরআনে) অবতীর্ণ করলেন: “তারাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বূদ হিসেবে গণ্য করে না,আল্লাহ যাদের হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, আইনের বিধান ছাড়া তাদের (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে এগুলো করে সে শাস্তির সাক্ষাৎ লাভ করবে”।– (সূরাহ আল ফুরকান ২৫ : ৬৮)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কাউকে আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা, মিথ্যা শপথ করা বড় গুনাহ। [১] আর আনাস (রাঃ) -এর বর্ণনায় ‘মিথ্যা শপথ’-এর পরিবর্তে “মিথ্যা সাক্ষ্য” দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয় কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪) সূদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা। (৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন তার আর ঈমান থাক না। যখন ডাকাত এভাবে ডাকাতি করে যে, যখন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। এভাবে কেউ যখন গনীমাতের মালে খিয়ানাত করে, তখন তার ঈমান থাক না। অতএব সাবধান! (এসব গুনাহ হতে দূরে থাকবে)। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনায় এটাও আছে, হত্যাকারী যখন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, সে সময়ও তার ঈমান থাকে না। ‘ইকরিমাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কিরূপ ঈমান তার থেকে বের করে নেয়া হবে? তিনি বললেন, এভাবে (এ কথা বলে) তিনি তার হাতের অঙ্গুলিসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে, পরে তা পৃথক করে নিলেন। অতঃপর সে যদি তাওবাহ্‌ করে, তাহলে পুনরায় ঈমান তার মধ্যে এভাবে ফিরে আসবে- এ কথা বলে পুনরায় তিনি দুই হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। আর আবূ ‘আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মু’মিন থাকে না। অর্থাৎ সে প্রকৃত বা পূর্ণ মু’মিন থাকে না কিংবা তার ঈমানের নূর থাকে না। এটা বুখারীর বর্ণনার হুবহু শব্দাবলী। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুনাফিক্বের নিদর্শন তিনটি- (১) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; (২) যখন ওয়া’দা করে, তা ভঙ্গ করে এবং (৩) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয়, তার খিয়ানাত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে। ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় আরো আছে, চাই সে সলাত আদায় করুক ও সিয়াম পালন করুক এবং দাবী করে সে মুসলিম। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে- (১) যখন তার নিকট কোন আমানাত রাখা হয় সে তা খিয়ানাত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়া’দা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত সে বকরীর ন্যায়, যে দুই ছাগপালের মধ্যে থেকে (নরের খোঁজে) একবার এ পালে ঝুঁকে আর একবার ঐ পালের দিকে দৌড়ায়। [১]

【5】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

সাফ্‌ওয়ান ইবনু ‘আস্‌সাল (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহূদী তার সঙ্গীকে বলল, এসো, আমাকে এ নাবী লোকটির নিকট নিয়ে চল। সঙ্গী বলল, তাঁকে ‘নাবী’ বলবে না, কারণ সে যদি তা শুনে তাহলে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। অতঃপর তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলো এবং তাঁকে (মূসার) নয়টি স্পষ্ট হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করবে না, (২) চুরি করবে না, (৩) ব্যভিচার করবে না, (৪) [শারী’আতের অনুমতি ব্যতিরেকে) কউকে হত্যা করবে না যা আল্লাহ হারাম করেছেন, (৫) (মিথ্যে অপবাদ দিয়ে) কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করবার জন্য আদালতের নিকট নিয়ে যাবে না, (৬) যাদু করবে না, (৭) সুদ খাবে না, (৮) কোন সতী-সাধ্বীর উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ দিবে না, (৯) জিহাদকালে ময়দান তেকে পিঠ ফিরিয়ে পলায়নের উদ্দেশে আসবে না। আর হে ইয়াহূদীরা! তোমাদের জন্য শনিবারের ব্যাপারে আল্লাহ হুকুমের সীমালঙ্ঘন করো না। বর্ণনাকারী (সাফওয়ান) বললেন, তার উভয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুই হাতে-পায়ে চুম্বন করল এবং বলল : আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই আপনি আল্লাহর নাবী! নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার অনুসরণের পথে তোমাদের বাধা কী? তারা বলল, (সত্যি কথা হল) দাঊদ (আঃ) আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিলেন যে, নাবী সবসময় যেন তার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। সুতরাং আমাদের ভয় হয়, যদি আমরা আপনার অনুসারী হই তাহলে ইয়াহূদীরা আমাদেরকে হত্যা করবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিনটি বিষয় ঈমানের মূল ভিত্তি বা স্তম্ভ। (১) যে ব্যক্তি ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ স্বীকার করে নেয়, তার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকা; কোন গুনাহের দরুন তাকে কাফির বলে মনে করবে না এবং কোন ‘আমালের কারণে তাকে ইসলাম হতে খারিজ মনে করবে না (যে পর্যন্ত না তার দ্বারা সুস্পষ্ট কোন কুফ্‌রী কাজ করা হয়)। (২) যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে নাবী করে পাঠিয়েছেন, সেদিন থেকে এ উম্মাতের শেষ দিকের লোকেরা দাজ্জালের সাথে জিহাদ করা পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত অবধি) চলতে থাকবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অবিচার অথবা কোন সুবিচারী বাদশার ইনসাফ এ জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন কোন বান্দা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার থেকে (তার অন্তর থেকে) ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা তার মাথার উপর ছায়ার ন্যায় অবস্থিত থাকে। অতঃপর যখন সে এ অসৎকাজ থেকে বিরত হয় তখন ঈমান তার নিকট প্রত্যাবর্তন করে। [১]

【6】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দশটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত বা উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি মাতা-পিতা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন বা ধন সম্পদ ছেড়ে দেয়ার হুকুমও দেয়। (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে কথনও কোন ফার্‌য সলাত ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফারয্‌ সলাত পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তা’আলা তার থেকে দায়িত্ব উঠিয়ে নেন। (৪) মদ পান হতে বিরত থাকবে। কেননা তা সকল অশ্লীলতার মূল। (৫) সাবধান! আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাক, কেননা নাফরমানী দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ অবধারিত হয়ে যায়। (৬) জিহাদ হতে কখনো পালিয়ে যাবে না, যদিও সকল লোক মারা যায়। (৭) যখন মানুষের মধ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানেই রয়েছ, তখন সেখানে তুমি অবস্থান করবে (পলায়নপর হবে না)। (৮) শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে (কার্পণ্য করে তাদের কষ্ট দিবে না)। (৯) পরিবারের লোকেদেরকে আদাব-কায়দা শিক্ষার জন্য কক্ষনও শাসন হতে বিরত থাকবে না এবং (১০) আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে। [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নিফাক্বের হুকুম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগেই ছিল। বর্তমানে হয় তা কুফ্‌রী, না হয় ঈমান। [১]

【7】

প্রথম অনুচ্ছেদ

وَسْوَسَةٌ (ওয়াস্ওয়াসাহ্) বলা হয় অস্পষ্ট বা গুপ্ত আওয়াজকে। কারো কারো মতে অন্তরে যেসব চিন্তার উদয় ঘটে তা-ই ওয়াস্ওয়াসাহ্, যদি সেগুলো পাপ এবং নিকৃষ্ট কাজের দিকে আহবান করে। আর যদি আল্লাহর আনুগত্যমূলক বা সন্তোষজনক চরিত্রের দিকে আহবান করে তাহলে তাকে ইলহাম বলা হয়। তবে وَسْوَسَةٌ হলো দ্বিধাযুক্ত একটি বিষয় যা কারো কাছে স্থির হয় না। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমার উম্মাতের অন্তরে যে ওয়াসওয়াসাহ্‌ বা খট্‌কার উদয় হয়, আল্লাহ তা’আলা তা মাফ করে দিবেন, যতক্ষণ না তারা তা কার্যে রূপায়ণ করে অথবা তা মুখে প্রকাশ করে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতক সহাবা তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কেউ তার মনে কোন কোন সময় এমন কিছু কথা (সংশয়) অনুভব করে যা মুখে ব্যক্ত করাও আমাদের মধ্যে কেউ তা গুরুতর অপরাধ মনে করে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তা এমন গুরুতর বলে মনে কর? সহাবীগণ বললেন, হাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই হল স্বচ্ছ ঈমান। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : শয়তান তোমাদের মধ্যে কারো কারো নিকটে আসে এবং (বিভিন্ন ব্যাপারে) প্রশ্ন করে, এটা কে সৃষ্টি করেছে? ঐটা কে সৃষ্টি করেছে? এমনটি অবশেষে এটাও বলে বসে যে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? শয়তান যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে, তখন তার উচিত আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা যাতে সে এ ধারণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সব সময় মানুষ (বিভিন্ন ব্যাপারে) পরস্পর কথোপকথন করতে থাকে। পরিশেষে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছে যে, এসব মাখলূক্ব তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে কে? তাই যে ব্যক্তির মনে এ জাতীয় খট্‌কা, সংশয়, সন্দেহের উদয় হয় সে যেন বলে উঠে, আমি আল্লাহর প্রতি ও আল্লাহর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সাথে তার একটি জিন্‌ (শায়ত্বন) ও একজন মালাক (ফেরেশতা) সঙ্গী হিসেবে নিযুক্ত করে দেয়া হয়নি। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাথেও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার সাথেও, তবে আল্লাহ তা’আলা আমাকে জিন্‌ শাইত্বনের ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। ফলে সে আমার অনুগত হয়েছে। ফলে সে কক্ষনও আমাকে কল্যাণকর কাজ ব্যতীত কোন পরামর্শ দেয় না। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মানুষের মধ্যে শয়তান (তার) শিরা-উপশিরায় রক্তের মধ্যে বিচরণ করে থাকে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আদাম সন্তানের মধ্যে এমন কেউ নেই যার জন্মলগ্নে শয়তান তাকে স্পর্শ করেনি। আর এ কারণেই সন্তান জন্মকালে চিৎকার দিয়ে উঠে। শুধুমাত্র মারইয়াম ও তাঁর পুত্র [‘ঈসা আঃ] এর ব্যতিক্রম (তাদের শয়তান স্পর্শ করতে পারেনি)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : জন্মের সময় শিশু এজন্য চিৎকার করে যে, শয়তান তাকে খোঁচা মারে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ইবলীস (শায়ত্বন) সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শায়ত্বনই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনাহ্‌ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছো। বর্ণনাকারী আ’মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, “অতঃপর ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে”। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, জাযীরাতুল ‘আরাব-এর মুসল্লীরা তার ‘ইবাদাত করবে, তবে সে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদ-বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির ব্যাপারে নিরাশ হয়নি। [১]

【8】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে এসে বলল,হে আল্লাহর রসূল! আমি মনে এমন কুধারণা পাই যা মুখে প্রকাশ অপেক্ষা আগুনে জ্বলে কয়লা হয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া যে, আল্লাহ (তোমার) এ বিষয়কে কল্পনার সীমা পর্যন্তই রেখে দিয়েছেন। [১] ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সকল মানুষের ওপরই শায়ত্বনের একটি ছোঁয়া রয়েছে এবং একইভাবে মালায়িকারও (ফেরেশতাদেরও) একটি ছোঁয়া আছে। শায়ত্বনের ছোঁয়া হল, সে মানুষকে মন্দ কাজের দিকে উস্কে দেয়, আর সত্যকে মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। অপরদিকে মালায়িকার ছোঁয়া হল, তারা মানুষকে কল্যাণের দিকে উৎসাহিত করে, আর সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। সুতরাং যে লোক মালায়িকার উৎসাহ-উদ্দীপনার অবস্থা নিজের মধ্যে দেখতে পায়, তখন তার মনে করতে হবে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হচ্ছে, আর এ কারণে সে যেন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থা অর্থাৎ শায়ত্বনের ওয়াস্‌ওয়াসাহ্‌ পায় সে যেন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমর্থনে (কুরআনের আয়াতটি) পাঠ করলেন (অনুবাদ) : “শায়ত্বন তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখিয়ে থাকে এবং অশ্লীলতার আদেশ করে থাকে”- (সূরাহ বাক্বারাহ্‌ ২ : ২৬৮)। এ হাদীসটি তিরমিযী নকল করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মানুষেরা তো (প্রথম সৃষ্টি জগত ইত্যাদি সম্পর্কে) পরস্পরের প্রতি প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনটি সর্বশেষে এ প্রশ্নও করবে, সমস্ত মাখলূক্বাতকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন তারা এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তখন তোমরা বলবে : আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি আর কেউ তাকে জন্ম দেননি। তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। অতঃপর (শাইত্বনের উদ্দেশে) তিনবার নিজের বাম দিকে থু থু ফেলবে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাবে। [১] (মিশকাতের লেখক বলেন) ‘উমার ইবনু আহ্‌ওয়াস-এর হাদীস ‘খুতবাতু ইয়াওমিন্‌ নাহ্‌র’ অধ্যায়ে বর্ণনা করবে ইন্‌শাআল্লাহ তা’আলা।

【9】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মানুষ পরস্পরে সর্বদা প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনকি একসময় এ প্রশ্নও করবে যে, যখন প্রত্যেক জিনিসকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সৃষ্টি করল কে? [১] আর মুসলিমের বর্ণনায় আছে, তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : আপনার উম্মাতেরা, প্রশ্ন করতে থাকবে, এটা কী? আর এটা কিভাবে হল? পরিশেষে এ ধরনের প্রশ্নও করে বসবে যে, যদি সমস্ত মাখলূক্বকে আল্লাহ সৃষ্টি করেন, তবে মহান আল্লাহ তা’আলাকে সৃষ্টি করেছেন কে? [2] ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! শয়তান আমার সলাত ও কিরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সে আমার মনে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করে দেয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঐটা একটা শয়তান যাকে ‘খানযাব’ বা ‘খিনযাব’ বলা হয়। যখন তোমার (মনে) তার উপস্থিতি অনুভব করবে, তখন তা হতে তুমি আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থু থু ফেলবে। [‘উসমান (রাঃ) বলেন] আমি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ অনুযায়ী] এরূপ করলে আল্লাহ তা’আলা আমার নিকট হতে শয়তান দূর করে দেন। [১] ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, সলাতে আমি নানা ধরনের (ভুলের) সন্দেহের মধ্যে পড়ি। এটা আমার খুব বেশি হয়। তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন, (এটা শাইত্বনের কাজ, এ রকম ধারণার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করো না) তুমি তোমার সলাত পূর্ণ করতে থাকবে। কেননা সে (শায়ত্বন) তোমার কাছ থেকে দূর হবে না- যে পর্যন্ত না তুমি তোমার সলাত পূর্ণ কর এবং মনে কর যে, আমি আমার সলাত পূর্ণ করতে পারিনি। [১]

【10】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে মাখলূক্বের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, (তখন আল্লাহ্‌র ‘আরশ (সিংহাসন) পানির উপর ছিল। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : প্রত্যেকটি জিনিসই আল্লাহর ক্বাদ্‌র (তাক্বদীর) অনুযায়ী রয়েছে, এমনকি নির্বুদ্ধিতা ও বিচক্ষণতাও। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (আলমে আরওয়াহ্‌ বা রুহ জগতে) আদাম ও মূসা (আঃ) পরস্পর তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হলেন। এ তর্কে আদাম (আঃ) মূসার উপর জয়ী হলেন। মূসা (আঃ) বললেন, আপনি তো সে আদাম, যাঁকে আল্লাহ (বিনা পিতা-মাতায়) তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে তাঁর রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। মালায়িকার দ্বারা আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং আপনাকে তাঁর চিরস্থায়ী জান্নাতে স্থান করে দিয়েছিলেন। অতঃপর আপনি আপনার স্বীয় ত্রুটির কারণে মানবজাতিকে জমিনে নামিয়ে দিয়েছেন। আদাম (আঃ) (প্রত্যুত্তরে) বললেন, তুমি তো সে মূসা যাঁকে আল্লাহ তা’আলা নবূওয়াতের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তোমাকে তাওরাত দান করেছেন, যাতে সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। অধিকন্তু তিনি তোমাকে গোপন কথা দ্বারাও নৈকট্য দান করেছেন। আল্লাহ আমার সৃষ্টির কত বছর পূর্বে তাওরাত লিখে রেখেছিলেন তুমি কি জান? মূসা (আঃ) বললেন, চল্লিশ বছর পূর্বে। তখন আদাম (আঃ) বললেন, তুমি কি তাওরাতে (এ শব্দগুলো লিখিত) পাওনি যে, আদাম তাঁর প্রতিপালকের নাফরমানী করেছে এরং পথভ্রষ্ট হয়েছে? (সূরাহ্‌ ত্ব-হা ২০ : ১২১) মূসা (আঃ) (উত্তর) দিলেন, হাঁ, পেয়েছি। তখন আদাম (আঃ) বললেন, তারপর তুমি আমাকে আমার ‘আমালের জন্য তিরস্কার করছ কেন, যা আমার সৃষ্টিরও চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ আমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুতরাং আদাম (আঃ) মূসা (আঃ)-এর উপর জয়ী হলেন। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্ম হয় এভাবে যে, তার মায়ের পেটে (প্রথমে তার মূল উপাদান) শুক্ররূপে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাল জমাট রক্তপিণ্ডরূপ ধারণ করে। তারপর পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিণ্ডের রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা একজন মালাককে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠান। সে মালাক লিখেন তার- (১) ‘আমাল [সে কি কি ‘আমাল করবে], (২) তার মৃত্যু, (৩) তার রিয্‌ক ও (৪) তার নেককার বা দুর্ভাগা হওয়ার বিষয় আল্লাহ্‌র হুকুমে তার তাক্বদীরে লিখে দেন, তারপর তন্মধ্যে রূহ্‌ প্রবেশ করান। অতঃপর সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের ‘আমাল করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাক্বদীরের লিখা তার সামনে আসে। আর তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত ‘আমাল করতে শুরু করে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার প্রতি সে লেখা (তাক্বদীর) সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করতে শুরু করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। [১] সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন বান্দা জাহান্নামীদের ‘আমাল করতে থাকবে, অথচ সে জান্নাতী। এভাবে কোন জান্নাতীদের ‘আমাল করবে অথচ করবে অথচ সে জাহান্নামী। কেননা মানুষের ‘আমাল নির্ভর করে ‘খাওয়া-তীম’ বা সর্বশেষ আ’মালের উপর। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা একজন আনসারীর বাচ্চার জানাযার সলাত আদায়ের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ডাকা হল। আমি (‘আয়িশাহ্‌) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ বাচ্চার কি সৌভাগ্য, সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে একটি চড়ুই। সে তো কোন গুনাহ করেনি বা গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে না হে ‘আয়িশাহ্‌! আল্লাহ তা’আলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, যখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। এভাবে জাহান্নামের জন্যও একদল লোক সৃষ্টি করে রেখেছেন অথচ তখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার অবস্থান জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে লিখে রাখেননি। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি আমাদের তাক্বদীরের লেখার উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দিব না ? নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (না, বরং) আমল করে যেতে থাক। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান তাকে আল্লাহ সৌভাগ্যের কাজ করার জন্য সহজ ব্যবস্থা করে দিবেন। আর সে ব্যক্তি দুর্ভাগা হবে যার জন্য দুর্ভাগ্যের কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কুরআনের এ আয়াতটি) পাঠ করলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (সময় ও অর্থ) ব্যয় করেছে, আল্লাহকে ভয় করেছে, হাক্ব কথাকে (দ্বীনকে) সমর্থন জানিয়েছে"- সূরাহ্ আল লায়ল ৫-৬ নং আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মহান আল্লাহ তা'আলা আদাম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হল দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। [১] কিন্তু সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, আদাম সস্তানের জন্য তাকদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হল চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। [2] ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) মুযায়নাহ গোত্রের দুই লোক রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি মনে করেন, মানুষ এখন (দুনিয়াতে) যা ‘আমাল (ভাল-মন্দ) করছে এবং ‘আমাল করার চেষ্টায় রত আছে, তা আগেই তাদের জন্য তাকদীরে লিখে রাখা হয়েছিল ? নাকি পরে যখন তাদের নিকট তাদের নাবী শারী'আহ (দলীল-প্রমাণ) নিয়ে এসেছেন এবং তাদের নিকট তার দলীল-প্রমাণ প্রকটিত হয়েছে, তখন তারা তা করছে ? উত্তরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, বরং পূর্বেই তাদের জন্য তাক্বদীরে এসব নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও ঠিক হয়ে রয়েছে। এ কথার সমর্থনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন (অনুবাদ): “প্রাণের কসম (মানুষের)! এবং যিনি তাকে সুন্দরভাবে গঠন করেছেন এবং তাকে (পূর্বেই) ভাল ও মন্দের জ্ঞান দিয়েছেন"- (সূরাহ আল লায়ল ৯২ঃ ৭-৮)।” [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন যুবক মানুষ। তাই আমি আমার সম্পর্কে ব্যভিচারের জড়িয়ে পড়ার আশংকা করছি। অথচ কোন নারীকে বিবাহ করার (আর্থিক) সঙ্গতিও আমার নেই। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) যেন খাসী হবার অনুমতিই প্রার্থনা করছিলেন। আবূ হুরায়রাহ বলেন, এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যুত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। আমি আবারও অনুরূপ প্রশ্ন করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। সুতরাং আমি ঐরূপ প্রশ্ন করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি চতুর্থবার সেরূপ প্রশ্ন করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ! তোমার জন্য যা ঘটবার আছে তা আগে থেকেই তোমার ভাগ্যে নির্ধারিত হওয়ার মাধ্যমে কলম শুকিয়ে গেছে। এখন তুমি এটা জেনে খাসীও হতে পার বা এমন ইচ্ছা পরিত্যাগও করতে পার। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সমস্ত অন্তর আল্লাহ্‌র আঙ্গুলসমূহের দুই আঙ্গুলের মধ্যে একটি অন্তরের ন্যায় অবস্থিত। তিনি নিজের আঙ্গুলগুলোর দ্বারা তা যেভাবে ইচ্ছা ঘুরিয়ে থাকেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহ্‌! আমাদের অন্তরকে তোমার ‘ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও।” [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবী) “আল্লাহ্‌র ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।” (সূরা আর রূম ৩০ : ৩০)। [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি বিষয়সহ আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং তিনি বললেন, (১) আল্লাহ্‌ তা‘আলা কক্ষনো ঘুমান না। (২) ঘুমানো তাঁর পক্ষে সাজেও না। (৩) তিনি দাঁড়িপাল্লা উঁচু-নিচু করেন (সৃষ্টির রিয্‌ক ও ‘আমাল প্রভৃতি নির্ধারিত করে থাকেন)। (৪) রাতের ‘আমাল দিনের ‘আমালের পূর্বে, আর দিনের ‘আমাল রাতের ‘আমলের পূর্বেই তাঁর নিকটে পৌঁছানো হয় এবং (৫) তাঁর (এবং সৃষ্টিজগতের মধ্যে) পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। যদি তিনি এ পর্দা সরিয়ে দিতেন, তবে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত সব কিছুকেই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার হাত সদাসর্বদা পূর্ণ। অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারীর মতো দান কখনও তা কমাতে পারে না। তোমরা কি দেখছো না, তিনি যখন থেকে এ আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে কতই না দান করে আসছেন। অথচ তাঁর হাতে যা ছিল তার থেকে কিছুই কমায়নি। তাঁর ‘আর্‌শ (প্রথমে) পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে দাঁড়িপাল্লা। তিনি এ দাঁড়িপাল্লাকে উঁচু বা নিচু করে থাকেন। [১] সহীহ্‌ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্‌ দক্ষিণ (ডান) হাত সদা পরিপূর্ণ। আর ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ্‌র হাত পরিপূর্ণ, দিন-রাতের মধ্যে সর্বদা দানকারী কোন কিছুই এতে কমাতে পারে না। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফির-মুশরিকদের শিশু-সস্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (মৃত্যুর পর তাদের স্থান কোথায় জান্নাতে, না জাহান্নামে)? জবাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে ভাল জানেন, তারা (জীবিত থাকলে) কি আমাল করত। [১]

【11】

দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ

উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম যে বস্তুটি সৃষ্টি করেছিলেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ্‌ বললেন, কদ্‌র (তাক্বদীর) সম্পর্কে লিখ । সুতরাং কলম- যা ছিল ও ভবিষ্যতে যা হবে, সবকিছুই লিখে ফেলল। তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি সানাদ হিসেবে গারীব। [১] মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলঃ “(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদাম সস্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সস্তানদেরকে বের করলেন” (সূরাহ্‌ আল আ‘রাফ ৭: ১৭২) (...আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদামের পিঠে হাত বুললেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সস্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ‘আমাল করবে। একজন সহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাহলে ‘আমালের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন আল্লাহ্‌ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই হাতে দু’টি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং (সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে) বললেন, তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টি কি? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কিন্তু আপনি যদি আমাদের অবহিত করতেন। তিনি তাঁর ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার ডান হাতে কিতাবটি হচ্ছে আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে একটি কিতাব। এতে সকল জান্নাতীদের নাম, তাদের পিতাদের নাম ও বংশ-পরম্পরার নাম রয়েছে এবং এদের সর্বশেষ ব্যক্তির নামের পর সর্বমোট যোগ করা হয়েছে। অতঃপর এতে আর কক্ষনো (কোন নাম) বৃদ্ধিও হবে না কমতিও করা হবে না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাম হাতের কিতাবের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটাও আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে একটি কিতাব। এ কিতাবে জাহান্নামীদের নাম আছে, তাদের বাপ-দাদাদের নাম আছে এবং তাদের বংশ-পরম্পরার নামও রয়েছে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ ব্যক্তির নাম লিখে মোট যোগ করা হয়েছে। তাই এতে (আর কোন নাম কখনো) বৃদ্ধিও করা যাবে না কমানোও যাবে না। তাঁর এ বর্ণনা শুনার পর সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এসব ব্যপার যদি আগে থেকে চূড়ান্ত হয়েই থাকে (অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি তাকদীরের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ হয়েছে) তবে ‘আমাল করার প্রয়োজন কী? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাক্ব পথে থেকে দৃঢ়ভাবে ‘আমাল করতে থাক এবং আল্লাহ্‌র নৈকট্যার্জনের চেষ্টা কর। কেননা জান্নাতবাসীদের শেষ ‘আমাল (জান্নাত প্রাপ্তির ন্যায়) জান্নাতীদেরই কাজ হবে। (পূর্বে) দুনিয়ার জীবনে সে যা-ই করুক। আর জাহান্নামবাসীদের পরিসমাপ্তি জাহান্নামে যাবার ন্যায় ‘আমালের দ্বারা শেষ হবে। তার (জীবনের) আমাল যাই হোক। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই হাতে ইশারা করে কিতাব দু‘টিকে পেছনের দিকে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমাদের রব বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেখেছেন। একদল জান্নাতে যাবে আর অপর একদল জাহান্নামে যাবে- (সূরাহ্‌ আশ শুরা ৪২ : ৭)। [১] আবূ খুযামাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা (রোগমুক্তির জন্য) যেসব তন্ত্রমন্ত্র পাঠ করি বা ঔষধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আমরা আত্নরক্ষা করতে যে কোন উপায়ে চেষ্টা করি- এ সকল কি তাক্বদীরকে কিছু পরিবর্তন করতে পারে? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ সকল কাজও আল্লাহ্‌র (পূর্বে নির্ধারিত) তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা তাক্বদীর সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত ছিলাম। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে উপস্থিত হন। তিনি এটা দেখে এতো রাগ করলেন যে, রাগে তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল, মনে হচ্ছিল যেন তাঁর চেহারা মুবারকে আনারের (ডালিমের) রস নিংড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কি (তর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য) নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা এজন্য কি রসূল বানিয়ে তোমাদের নিকট আমাকে পাঠানো হয়েছে? (জেনে রাখ!) তোমাদের পূর্বে অনেক লোকেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে তখনই ধ্বংস হয়েছে, যখনই তারা এ বিষয় নিয়ে বাক-বিতন্ডা করেছে। আমি তোমাদেরকে কসম করে বলছি, আবারও কসম করে বলছি- সাবধান! এ বিষয় নিয়ে তোমরা কক্ষনো তর্কে জড়িয়ে যেয়ো না। [১] আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) ইবনু মাজাহ্ও এ অর্থের একটি হাদীস ‘আম্‌র ইবনু শু‘আয়ব হতে বর্ণনা করেছেন, যা তিনি তার পিতা, তার পিতা তার দাদার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ্‌ তা‘আলা আদাম (আঃ)-কে এক মুঠো মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি সমগ্র ভূপৃষ্ঠ হতে নিয়েছিলেন। তাই আদাম সন্তানগণ (বিভিন্ন মাটির রং অনুযায়ী বিভিন্ন আকৃতিতে) কেউ লাল বর্ণের, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ মধ্যবর্তী বর্ণের হয়েছে। এরূপে কেউ কোমল মেজাজের, কেউ কঠোর হয়, কেউ সৎ ও কেউ অসৎ প্রকৃতির হয়ে থাকে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর সৃষ্ট জীবকে অন্ধকারে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি তাদের প্রতি স্বীয় নূর (জ্যোতি) নিক্ষেপ করেন। সুতরাং যার কাছে তাঁর এ নূর পৌঁছেছে, সে সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে। আর যার কাছে তাঁর এ নূর পৌঁছেনি, সে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। তাই আমি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলি: আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও ইচ্ছা অনুযায়ী যা হওয়ার তা-ই হয়ে কলম শুকিয়ে গেছে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায় সময়ই এ দু‘আ করতেন: “হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ্‌! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ রাখ”। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র নাবী! আমরা আপনার উপর এবং আপনি যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন তার উপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে আশংকা করেন? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেননা ‘ক্বলব’ আল্লাহ্‌র দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে)। তিনি যেভাবে চান সেভাবে অন্তরকে (ঘুরিয়ে) থাকেন। [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌র হাতে (মানুষের) ‘ক্বলব’ বা মন, যেমন কোন তৃণশূণ্য মাঠে একটি পালক, যাকে বাতাসের গতি বুকে-পিঠে (এদিক-সেদিক) ঘুরিয়ে থাকে। [১] (আহমাদ ২৭৮৫৯) আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন বান্দা মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এ চারটি বিষয়ের উপর ঈমান না আনে: (১) সে সাক্ষী দিবে আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই, (২) নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহ্‌র রসূল, আল্লাহ্‌ আমাকে দীনে হাক্ব সহকারে পাঠিয়েছেন, (৩) মৃত্যু ও মৃত্যুর পরে হাশরের মাঠে পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাস রাখবে এবং (৪) তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখবে। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার উম্মাতের মধ্যে দু’রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই। তারা হলো: (১) মুর্জিয়াহ্ ও (২) ক্বদারিয়্যাহ্। তিরমিযী বলেছেন: হাদীসটি হাসান গরীব। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মাতের মধ্যেও ‘খাস্‌ফ’ (জমিন ধ্বসিয়ে বা অদৃশ্য করে দেয়া) এবং ‘মাস্‌খ’ (চেহারা বা আকার পরিবর্তন করে দেয়ার) মত শাস্তি হবে। তবে এ শাস্তি তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাসকারীদের মধ্যেই হবে। আবূ দাঊদ, ইমাম তিরমিযীও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বদারিয়্যাগণ হচ্ছে এ উম্মাতের মাজুসী। অতঃপর তারা যদি অসুস্থ হয়, তাদেরকে দেখতে যাবে না, আর যদি মারা যায়, তবে তাদের জানাযায় উপস্থিত হয়ো না। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা ক্বদারিয়্যাদের সাথে উঠা-বসা করো না এবং তাদেরকে হাকিম বা বিচারক নিযুক্ত করো না। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ছয় রকম মানুষের প্রতি আমি লা‘নাত (অভিশাপ) করি এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তাদের প্রতি অভিশপ্ত করেছেন। আর প্রত্যেক নাবীর দু‘আই কবুল হয়ে থাকে। (১) যারা আল্লাহ্‌র কিতাবের মধ্যে সংযোজন; (২) যে ব্যক্তি তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; (৩) যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে জোর-জবরে ক্ষমতা দখল করে, আল্লাহ্‌ যাদেরকে অপমানিত লাঞ্ছিত করেছেন (কাফির-মুশরিক-ফাসিক্ব) তাদের যেন সে মর্যাদা দান করতে পারে এবং আল্লাহ্‌ যাকে সম্মানিত করেছেন (মু‘মিন দীনদার) তাদের যেন অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে পারে; (৪) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র হারামে (মাক্কায়) এমন সীমালঙ্ঘন করে, যা আল্লাহ্‌ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন; (৫) যে ব্যক্তি আমার আহলে বায়ত-এর (অসম্মান করা এবং তাদের কষ্ট দেয়া) আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন তা হালাল মনে করে এবং (৬) যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত (নিয়ম-কানুন) পরিত্যাগ করে। [১] মাত্বার ইবনু ‘উকামিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার নির্ধারিত কোন জায়গায় মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তখন সে জায়গায় তার যাওয়ার জন্য একটি প্রয়োজনও তৈরি করে দেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) আমাল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ অনেক ভাল জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ‘আমাল করত। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারাও তাদের বাপদাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ‘আমাল ছাড়াই? উত্তরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ‘আমাল করত, আল্লাহ্‌ খুব ভাল জানেন। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত ক্ববর দেয় এবং যে মেয়েকে ক্ববর দেয়া হয়, উভয়ই জাহান্নামী। [১]

【12】

তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ

আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌ তা'আলা পাঁচটি বিষয়ে তাঁর সৃষ্টজীবের জন্য চূড়ান্তভাবে (তাক্বদীরে) লিখে দিয়ে নির্ধারিত করে রেখেছেন: (১) তার আয়ুষ্কাল (জীবনকাল), (২) তার ‘আমাল (কর্ম), (৩) তার অবস্থান বা মৃত্যুস্থান, (৪) তার চলাফেরা (গতিবিধি) এবং (৫) এবং তার রিয্‌ক্ব (জীবিকা)। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি তাক্বদীর বিষয়ে আলোচনা করবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অপরদিকে যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোন আলোচনা করবে না, তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে না। [১] ইবনু আদ্ দায়লামী (রহঃ) তিনি বলেন, সহাবী উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর নিকট পৌছে আমি তাকে বললাম, তাক্বদীর সম্পর্কে আমার মনে একটি সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তাই আপনি আমাকে কিছু হাদীস শুনান যাতে আল্লাহ্‌র মেহেরবানীতে আমার মন থেকে (তাক্বদীর সম্পর্কে) এসব সন্দেহ-সংশয় দূরিভূত হয়। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা যদি সমস্ত আকাশবাসী ও দুনিয়াবাসীকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন, তবে তা দিতে পারেন। এতে আল্লাহ্‌ যালিম বলে সাব্যস্ত হবেন না। পক্ষান্তরে তিনি যদি তাঁর সৃষ্টজীবের সকলের প্রতিই রহমাত করেন, তবে তাঁর এ রাহমাত তাদের জন্য সকল ‘আমাল হতে উত্তম হবে। সুতরাং তুমি যদি উহুদ পাহাড়সম স্বর্ণও আল্লাহ্‌র পথে দান কর, তোমার থেকে তিনি তা গ্রহণ করবেন না, যে পর্যন্ত তুমি তাক্বদীরে বিশ্বাস না করবে এবং যা তোমার ভাগ্যে ঘটেছে তা তোমার কাছ থেকে কক্ষনো দূরে চলে যাবে না- এ কথাও তুমি বিশ্বাস না করবে, আর যা এড়িয়ে গেছে তা কক্ষনো তোমার নিকট আর আসবে না- এ বিশ্বাস স্থাপন করা ব্যতীত যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে অবশ্যই তুমি জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ইবনু আদ্‌ দায়লামী বলেন, উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর এ বর্ণনা শুনে আমি সহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে এ কথাই প্রত্যুত্তর করলেন। তারপর সহাবী হুযায়ফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ)-এর নিকট যেয়েও জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে একই প্রত্যুত্তর করলেন। এরপর যায়দ ইবনু সবিত (রাঃ)-এর কাছে আসলাম। তিনি স্বয়ং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম করেই আমাকে একই ধরনের কথা বললেন। [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক সহাবী ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, অমুক লোক আপনাকে সালাম দিয়েছে। উত্তরে ইবনু উমার বললেন, আমি শুনেছি, সে নাকি দ্বীনের মধ্যে নতুন মত তৈরি করেছে (অর্থাৎ তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাস করছে)। যদি প্রকৃতপক্ষে সে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করে থাকে, তাহলে আমার পক্ষ হতে তাকে কোন সালাম পৌছাবে না। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাতের অথবা এ উম্মাতের মধ্যে জমিনে ধ্বসে যাওয়া, চেহারা বিকৃত রূপ ধারণ করা, শিলা পাথর বর্ষণের মতো আল্লাহ্‌র কঠিন আযাব পতিত হবে, তাদের উপর যারা তাক্বদীরের প্রতি অস্বীকারকারী হবে। ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ ও গরীব। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট খাদীজাহ্ (রাঃ) তাঁর (পূর্ব স্বামীর) দু’টি সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যারা জাহিলিয়্যাতের যুগে মারা গেছে (তারা কোথায় জান্নাতী, না জাহান্নামী)। উত্তরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা উভয়ে জাহান্নামী। আলী (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যখন সন্তানদের জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে বর্ণনা দেন তখন) খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর চেহারায় বিষন্ন ও অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যদি তাদের অবস্থান বা অবস্থা দেখতে, তবে তুমি নিশ্চয়ই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে। অতঃপর খাদীজাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আপনার ঔরসে আমার যেসব সন্তান জন্মগ্রহণ করে মারা গেছে (কাসিম ও ‘আবদুল্লাহ, তাদের কী হবে)? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা জান্নাতে অবস্থান করছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মু’মিনগণ ও তাদের সন্তান-সন্ততিরা জান্নাতে এবং মুশরিক ও তাদের সন্তানাদিরা জাহান্নামে যাবে। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন (অনুবাদ): “যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তানরা যারা তাদের অনুসরণ করেছে, [ আমি তাদের সন্তানদেরকে (জান্নাতে) ওদের সাথে রাখবো ]”- (সূরাহ্ আত্ তূর ৫২: ২১)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা যখন আদাম (আঃ) –কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁর পিঠের উপর হাত বুলালেন। এতে তাঁর পিঠ হতে তাঁর সমস্ত সন্তান জীবন্ত বেড়িয়ে পড়ল যা ক্বিয়ামাত অবধি তিনি সৃষ্টি করবেন। তন্মধ্যে প্রত্যেকের দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। অতঃপর সকলকে আদাম (আঃ)-এর সামনে পেশ করলেন। (এদেরকে দেখে) আদাম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! এরা কারা ? (প্রত্যুত্তরে) রব বললেন, এরা সব তোমার সন্তান। এমন সময় আদাম (আঃ) তাঁদের একজনকে দেখলেন, তাকে তার খুব ভাল লাগল। তাঁর দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! এ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, (তোমার সন্তান) দাঊদ (আঃ)। তিনি (আদাম) বললেন, হে প্রভু! তার বয়স কত নির্ধারণ করেছেন? তিনি বললেন, ষাট বছর। তিনি (আদাম) বলেন, হে প্রভু! (অনুগ্রহ করে) আমার বয়স থেকে তাঁকে আরো চল্লিশ বছর দান করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আদাম (আঃ)-এর বয়স ফুরিয়ে গেলে এবং ঐ চল্লিশ বছর বাকী থাকতে মালাকুল মাওত এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন। আদাম (আঃ) তাঁকে বললেন, এখনো তো আমার বয়স চল্লিশ বছর বাকী আছে। মালাকুল মাওত বললেন, আপনি কি আপনার বয়সের চল্লিশ বছর আপনার সন্তান দাঊদ (আঃ)-কে দান করেননি? আদাম (আঃ) তা অস্বীকার করেন। তাই তাঁর সন্তানরাও অস্বীকার করেন। অতঃপর আদাম (আঃ) (তার ওয়াদা) ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি (নিষিদ্ধ) গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। তাই তাঁর সন্তানরাও ভুলে যায়। আদাম (আঃ)-এর ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল, আর এ কারণেই এই ত্রুটি-বিচ্যুতি সন্তানদের দ্বারাও হয়ে থাকে। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সৃষ্টির প্রাক্কালে আল্লাহ্‌ তা’আলা যখন আদাম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর কাঁধের উপর তাঁর হাত মারলেন। এতে ক্ষুদ্র পিঁপড়ার দলের ন্যায় সুন্দর ঝকঝকে একদল আদাম সন্তান বেরিয়ে আসল। তিনি আবার তাঁর বাম কাঁধের উপর হাত মারলেন এবং কয়লার ন্যায় কালো অপর একদল আদাম সন্তান বেরিয়ে আসল। তারপর আল্লাহ্‌ তা’আলা আদাম (আঃ)-এর ডান দিকের সন্তানদের ইঙ্গিত করে বললেন, এ দল জান্নাতী। এতে আমি কারো পরোয়া করি না। অতঃপর আবার তিনি বাম দিকের আদাম সন্তানদের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এ দল জাহান্নামী। এ সম্পর্কেও আমি কারো পরোয়া করি না। [১] (তাবি’ঈ) আবূ নাযরাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণের মধ্যে আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ (মৃত্যুশয্যায়) দেখতে আসলেন। তিনি তখন ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কান্নাকাটি করছেন কেন? আপনাকে কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে, তোমার গোঁফ খাটো করবে। আর সব সময় এভাবে গোঁফকে খাটো রাখবে, যে পর্যন্ত আমার সাথে (জান্নাতে) দেখা না হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথাও বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা স্বীয় ডান হাতে এক মুঠি (লোক) নিয়ে বলেছেন, এরা এর (জান্নাতের) জন্য এবং অপর (এক বাম) হাতের তালুতে এক মুঠি (লোক) নিয়ে বলেছেন, এরা এর (জাহান্নামের) জন্য। আর এ ব্যাপারে আমি কারো পরোয়া করি না। এ কথা বলে তিনি [‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] বললেন, আমি জানি না, কোন হাতের মুঠির মধ্যে আমি আছি। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা ‘আরাফার মাঠের সন্নিকটে না‘মান নামে এক জায়গায় আদাম (আঃ)-এর মেরুদণ্ড হতে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ করিয়ে ছিলেন। তিনি আদাম (আঃ)-এর মেরুদন্ড হতে তাঁর প্রত্যেক সন্তানকে বের করেছিলেন। এ সকলকে পিঁপড়ার মত আদাম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাদের সম্মুখপানে কথা বলেছিলেন, “আমি কি তোমাদের ‘প্রভু’ নই? আদাম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের ‘প্রতিপালক’। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম যাতে তোমরা কিয়ামাতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী (পিতৃ-পুরুষ)-গণ যা করেছে সে ‘আমালের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে”- (সূরাহ্ আরাফ ১৭২-১৭৩)। [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি এ আয়াতের “তোমাদের রব যখন বাণী আদামের মেরুদণ্ড থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন”- (সুরাহ্ আ’রাফ ৭: ১৭২-১৭৩) এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আদাম সন্তানদের একত্রিত করলেন। তাদেরকে বিভিন্ন রকম করে গড়ার মনস্থ করলেন,এরপর তাদের আকার-আকৃতি দান করলেন। তারপর কথা বলার শক্তি দিলেন। এবার তারা কথা বলতে লাগল। অতঃপর তাদের কাছ থেকে ওয়া‘দা-অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন এবং তাদের নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’ ? আদাম সন্তানগণ বলল, হ্যাঁ, (নিশ্চয়ই আপনি আমাদের রব)। তারপর আল্লাহ্‌ তা‘আলা বললেন, আমি তোমাদের এ কথার উপর সাত আসমান ও সাত জমিনকে তোমাদের সম্মুখে সাক্ষী করছি এবং তোমাদের পিতা আদামকেও সাক্ষী বানাচ্ছি। তোমরা যেন ক্বিয়ামাতের দিন এ কথা বলার সুযোগ না পাও যে, আমরা তো এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তাই এখন তোমরা ভাল করে জেনে নাও, আমি ছাড়া তোমাদের কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি ছাড়া তোমাদের কোন প্রতিপালকও নেই। সুতরাং (সাবধান) আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। আমি শীঘ্রই তোমাদের কাছে আমার রসূলগণকে প্রেরণ করব, যারা তোমাদেরকে আমার ওয়া‘দা-অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তোমাদের উপর আমি আমার কিতাবসমূহ নাযিল করব। তখন এ কথা শুনে আদাম সন্তান বলল, আমরা এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব ও আমাদের ইলাহ। তুমি ছাড়া আমাদের কোন রব নেই এবং তুমি ছাড়া আমাদের কোন ইলাহ নেই। বস্তুত আদাম সন্তানদের সকলে এ কথা স্বীকার করে নিল। আদাম (আঃ)-কে তাদের উপর উঠিয়ে ধরা হল। তিনি সকলকে প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন, তাঁর সন্তানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্রও আছে, সুন্দর-অসুন্দরও আছে, (এটা দেখে) তিনি বললেন, হে রব! তুমি তোমার বান্দাদের সকলকে যদি এক সমান করে বানাতে? আল্লাহ্‌ তা‘আলা বললেন, আমি চাই আমার বান্দারা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার মধ্যে থাকুক। এরপর আদাম (আঃ) নাবীদেরকে দেখলেন, তারা সকলেই যেন চেরাগের ন্যায়-তাদের উপর আলো ঝলমল করছিল। তাদের কাছ থেকে বিশেষ করে নাবূওয়াতের ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিশেষ শপথও নেয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলছেন (অনুবাদ): “আমি নাবীদের নিকট হতে যখন তাদের ওয়া‘দা অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম এবং আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), নূহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ), ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) হতেও (অঙ্গীকার ও ওয়া‘দা) নেয়া হয়েছে”- (সূরাহ্ আহযাব ৩৩: ৭)। তিনি [উবাই (রাঃ)] বলেন, এ রূহ্‌দের মধ্যে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম-এর রূহ্‌ (আত্না)-ও ছিল। অতঃপর আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ রূহ্‌কেই মারইয়াম (আঃ)-এর প্রতি প্রেরণ করেছেন। উবাই বলেছেন, এ রূহ্‌ মারইয়াম (আঃ)-এর মুখ দিয়ে (তাঁর পেটে) প্রবেশ করেছে। [১] (আহ্‌মাদ) আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসেছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যখন শুনবে যে, কোন পাহাড় তার নিজের জায়গা থেকে সরে গেছে তাতে তোমরা বিশ্বাস করতে পার। কিন্তু যখন শুনবে যে, কোন মানুষের (সৃষ্টিগত) স্বভাব-চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না। কেননা মানুষ সেদিকে প্রত্যাবর্তন করবে যার উপর তার সৃষ্টি হয়েছে। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম হে, আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি যে বিষ মিশানো ছাগলের গোশ্‌ত খেয়েছিলেন, তার বিষক্রিয়ার কারণে প্রতি বছরই আপনি এত কষ্ট অনুভব করছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রতি বছরই আমার যে যন্ত্রনা বা অসুখ হয়, এটা আমার (নির্ধারিত) তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, অথচ তখন আদাম (আঃ) ভূগর্ভেই ছিলেন। [১]

【13】

প্রথম অনুচ্ছেদ

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে যখন ক্ববরে জিজ্ঞেস করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই এবং নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রসূল। “যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অটল ও অবিচল রাখেন”-(সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪:২৭)। আল্লাহ্‌র এ বাণীর অর্থ হল এটাই। অপর এক বর্ণনায় আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ইউসাব্বিতুল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানু বিল ক্বাওলিস্ সাবিতি”- এ আয়াত ক্ববরের আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ক্ববরে মৃতকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে ? সে বলে, আমার রব মহান আল্লাহ্‌ তা‘আলা। আর আমার নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন ক্ববরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্নীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। তার নিকটে (ক্ববরে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পৌছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি দুনিয়াতে এই ব্যক্তির [ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ] ব্যাপারে কী জান? এ প্রশ্নের উত্তরে মু’মিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমার সে ঠিকানা (জাহান্নাম) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম) একই সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? তখন সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হয়, তুমি বিবেক বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহ্‌র কুরআন) পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে সে তখন উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চীৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ সকলেই শুনতে পায়। [১] (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হিঃ বুখারী ১৩৭৪, মুসলিম ২৮৭০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, (ক্ববরে) তাকে সকাল-সন্ধ্যায় তার (ভবিষ্যৎ) অবস্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী, তার অবস্থান জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে তার অবস্থান জাহান্নাম দেখানো হয়। আর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার প্রকৃত অবস্থান। অতঃপর ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে উঠিয়ে সেখানে প্রেরন করবেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহূদী নারী তাঁর কাছে এলো। সে ক্ববরের ‘আযাব প্রসঙ্গ উঠাল এবং বলল, হে ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ)! আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে ক্ববরের আযাব থেকে মুক্তি দিন। অতঃপর ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কবরের ‘আযাবের সত্যতা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, কবরের আযাব সত্য। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি কক্ষনো এমন দেখিনি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেছেন অথচ কবরের আযাব হতে আল্লাহ্‌র নিকট মুক্তির দু‘আ করেন নি। [১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী নাজ্জার গোত্রের একটি বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি লাফিয়ে উঠলো এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রায় মাটিতে ফেলে দেবার উপক্রম করলো। দেখা গেল, সামনে পাঁচ-ছয়টি ক্ববর রয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ক্ববরবাসীদের কে চিনে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কবে মারা গেছে? সে বলল শিরকের যুগে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ উম্মাত তথা ক্ববরবাসীরা তাদের ক্ববরে পরীক্ষায় পড়েছে (শাস্তির কবলে পড়েছে)। তোমারা মানুষ কে ভয়ে ক্ববর দেয়া ছেড়ে দিবে (এ আশংকা না থাকলে) আমি আল্লাহ্‌র কাছে দু‘আ করতাম, তিনি যেন তোমাদের কেও ক্ববরের আযাব শুনান, যে ক্ববরের আযাব আমি শুনতে পাচ্ছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা সকলে জাহান্নামের আযাব হতে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাও। সকলে একত্রে বলল, আমরা জাহান্নামের আযাব হতে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ক্ববরের আযাব হতে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাও। তারা সকলে একত্রে বললেন, আমরা ক্ববরের আযাব হতে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিত্‌নাহ্‌ হতে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাও। তখন সকলে একত্রে বললেন, আমরা সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিত্‌নাহ্‌ হতে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা দাজ্জালের সকল ফিত্‌নাহ্‌ হতে আশ্রয় চাও। সকলে বললেন, আমরা দাজ্জালের ফিত্‌নাহ্‌ হতেও আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাই। [১]

【14】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃতকে যখন ক্ববরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখ বিশিষ্ট দু‘জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার ও অপরজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রাসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যাক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারনা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক (ফেরেশতা) দুজন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার ক্ববরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যাবস্থা করে দেওয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন ক্ববরবাসী বলবে, (না) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতাগন) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাকো, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনা। অতঃপর সে ক্বিয়ামাতের দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম। কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্‌ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিন কে বলা হবে তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমন ভাবে চেপে যাবে, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে আযাব ভোগ করতে থাকবে যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত দিবসে) আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে ক্ববর থেকে না উঠান। [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ববরে মৃত ব্যাক্তির (মু’মিনের) নিকট দু‘জন মালাক আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ্‌ তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার রব কে?” সে উত্তরে বলে, “আমার রব হলেন আল্লাহ্‌।” তারপর মালায়িকাহ্‌ জিজ্ঞেস করেন, “তোমার দ্বীন কি?” সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, “আমার দ্বীন হল ইসলাম।” আবার মালায়িকাহ্‌ জিজ্ঞেস করেন, “তোমাদের নিকট আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?” সে বলে, “তিনি হলেন আল্লাহ্‌র রসূল [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)]।” তারপর মালায়িকাহ্‌ তাকে জিজ্ঞেস করেন, “এ কথা তোমাকে কে বলেছে?” সে বলে, আমি আল্লাহ্‌র কিতাব পড়েছি এবং তাঁর উপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এটাই হল আল্লাহ্‌ তা‘আলার এ বানীর ব্যাখ্যা: “আল্লাহ্‌ তা‘আলা সেসব লোকদেরকে (দ্বীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে…… আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরাহ্‌ ইবরাহীম ১৪: ২৭)। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আকাশমণ্ডলী থেকে একজন আহ্বানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তাঁর জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফলে তাঁর দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তাঁর ক্ববরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “তারপর তার রূহ্‌কে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দু‘জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার রব কে?। তখন সে উত্তরে বলে, “হায়! হায়!! আমি তো কিছুই জানি না।” তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, “তোমার দ্বীন কি?” সে বলে হায়! হায়!! তাও তো আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করেন, “এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল?” সে বলে হায়! হায়!! এটাও তো জানি না।” তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক প্রিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার ক্ববরকে তার জন্য সংকুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটিতে মিশে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জিন্‌ ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলুকই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ্‌ ফেরত দেয়া হবে (এভাবে অনবরত চলতে থাকবে)। [১] উসমান (রাঃ) তিনি যখন কোন ক্ববরের নিকট দাঁড়াতেন, কেঁদে দিতেন, (আল্লাহ্‌র ভয়ে চোখের পানিতে) তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হল, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরন হলে, আপনি কাঁদেন না। আর আপনি এ জায়গায় (ক্ববরস্থানে) দাঁড়িয়ে কাঁদছেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আখিরাতের মঞ্জীলসমূহের মধ্যে ক্ববর হল প্রথম মঞ্জীল। কেউ যদি এই মঞ্জীলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মঞ্জীলসমূহ অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মঞ্জীলে মুক্তি লাভ করতে পারল না, তার জন্য পরবর্তী মঞ্জীলসমূহ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি [‘উসমান (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাও বলেছেন, ক্ববর থেকে বেশি কঠিন কোন ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কক্ষনো দেখিনি। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইয়্যিতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে ক্ববরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা কর ও দু‘আ কর, যেন তাকে এখন (মালায়িকার প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। [১] আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাফিরদের জন্য তাদের ক্ববরে নিরানব্বইটি সাপ নির্ধারণ করা হয়। এ সাপগুলো তাকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে। যদি তার কোন একটি সাপ জমিনে নিঃশ্বাস ফেলে, তবে এ জমিনে আর কোন ঘাস-তৃণলতা জন্মাবে না। তিরমিযীও এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি নিরানব্বইটির স্থানে সত্তরের উল্লেখ করেছেন। [১]

【15】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তার জানাযায় হাযির হলাম। জানাযার সলাত আদায় করে যখন তাকে ক্ববরে রাখা হল ও মাটি সমান করে দেয়া হল, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে (দীর্ঘক্ষণ) আল্লাহ্‌র তাসবীহ পাঠ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে অনেক সময় তাসবীহ পড়লাম। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর বললেন। আমরাও (তাঁর সাথে) তাকবীর বললাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কেন এভাবে তাসবীহ পড়লেন ও তাকবীর বললেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, এ নেক ব্যাক্তির ক্ববর খুব সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল (তাই আমি তাসবীহ ও তাকবীর পড়লাম)। এতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দিলেন। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই [সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ)] সে ব্যক্তি যার মৃত্যুতে ‘আর্‌শও কেঁপেছিল (তার পবিত্র রূহ্‌ ‘আর্‌শে পৌঁছলে ‘আর্‌শের নিকটতম মালায়িকাহ্‌ খুশীতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল) এবং আসমানের দরজা খুলে দিয়েছিল। তার জানাযায় সত্তর হাজার মালাক উপস্থিত হয়েছিলো। অথচ তার ক্ববর সংকীর্ণ হয়েছিলো। [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু‘আর বারাকাতে] পরে তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিলো। [১] আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে নাসীহাত করার জন্য দাঁড়ালেন এবং ক্ববরের ফিত্‌নাহ সম্পর্কে বর্ণনা করলেন। মানুষ ক্ববরে যে ফিতনার সম্মুখীন হয় তা শুনে লোকজন ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। ইমাম বুখারী এ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম নাসায়ীর বর্ণনায় আরো রয়েছে: (ক্ববরের ফিতনার কথা শুনে ভয়ে ভীত বিহ্বল হয়ে) মুসলিমরা চীৎকারের কারণে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (মুখ খেকে বের হওয়া) কথাগুলো বুঝতে পারিনি। চীৎকার বন্ধ হবার পর অবস্থা শাস্ত হলে আমি আমার নিকটে বসা এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌ তোমায় কল্যাণ দান করুন, শেষের দিকে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছেন? সে ব্যক্তি উত্তরে বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উপর এ ওয়াহী এসেছে যে, তোমাদেরকে ক্ববরে ফিতনায় ফেলা হবে। আর এ ফিতনাহ্ দাজ্জালের ফিতনার মতো হবে। [১] জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন (মু’মিন) মৃতকে ক্ববরে দাফন করা হয়, তার নিকট মনে হয় যেন সূর্য ডুবছে। তখন সে হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসে এবং বলে যে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি সলাত আদায় করে নেই। (সলাতের প্রতি একাগ্রতার কারণে এরূপ বলবে)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: মৃত যখন ক্ববরের ভিতরে পৌঁছে, তখন (নেক) বান্দা ক্ববরের ভিতর ভয়-ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্ত হয়ে উঠে বসে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কোন্‌ দীনে ছিলে? তখন সে বলে, আমি দ্বীন ইসলামে ছিলাম। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কে? সে বলে, এ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আল্লাহ্‌র রসূল। আল্লাহ্‌র নিকট হতে আমাদের কাছে (হিদায়াতের জন্য) স্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছেন এবং আমরাও তাঁকে (পরিপূর্ণ) বিশ্বাস করেছি। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহ্‌কে কক্ষনো দেখেছ কি? সে উত্তরে বলে, দুনিয়াতে আল্লাহ্‌কে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। সে সেদিকে তাকায় এবং দেখে, আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তখন তাকে বলা হয়, দেখ! তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে আল্লাহ্‌ হিফাযাত করেছেন। তারপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। এখন সে জান্নাতের শোভা সৌন্দর্য ও এর ভোগ-বিলাসের প্রতি তাকায়। তাকে তখন বলা হয়, এটা তোমার (প্রকৃত) স্থান। কেননা তুমি দুনিয়ায় ঈমানের সাথে ছিলে, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছ। ইন্‌শা-আল্লাহ্‌, ঈমানের সাথেই তুমি ক্বিয়ামাতের দিন উঠবে। অপরদিকে বদকার বান্দা তার ক্ববরের মধ্যে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কোন্‌ দীনে ছিলে? উত্তরে সে বলবে, আমি তো কিছুই জানি না। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি [মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] কে? উত্তরে সে বলবে, আমি মানুষদেরকে যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হবে। এ পথ দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও এতে যা (সুখ-শাস্তির উপায়-উপকরণ, সাজ-সরঞ্জাম) রয়েছে তা দেখবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দাও যেসব জিনিস হতে আল্লাহ্‌ তোমাকে ফিরিয়ে রেখেছেন। তারপর তার জন্য আর একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর সে সেদিকে দেখবে। আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তাকে তখন বলা হবে, এটা তোমার (প্রকৃত) অবস্থান। তুমি সন্দেহের উপরেই ছিলে, সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। ইন্‌শা-আল্লাহ্‌, এ সন্দেহের উপরই ক্বিয়ামাত দিবসে তোমাকে উঠানো হবে। [১]

【16】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম)[১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ্‌ তা‘আলার কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল দীনে (মনগড়াভাবে) নতুন জিনিস সৃষ্টি করা এবং (এ রকম) সব নতুন সৃষ্টিই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত। (১) যে ব্যক্তি মাক্কার হারাম এলাকার মধ্যে নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ করে। (২) যে ব্যক্তি ইসলামে থেকে (ইসলাম-পূর্ব) জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি অনুকরণ করে। (৩) যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে শুধু অন্যায়ভাবে (রক্তপাতের উদ্দেশ্যে) কোন লোকের রক্তপাত ঘটায়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে যাবে, যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যারা আমার আনুগত্য স্বীকার করেছে তারা জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হলো সে-ই (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেল (অতএব সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে)। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা একদল মালাক (ফেরেশতা) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুয়েছিলেন। মালয়িকাহ্‌ (ফেরেশতাগণ) পরস্পরে বলাবলি করলেন, তোমাদের সাথী [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সম্পর্কে একটি উদাহরণ রয়েছে। তাঁর সামনেই উদাহরণটি বলো। তখন একজন বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন। আবার একজন বললেন, তাঁর চোখ ঘুমালেও তাঁর মন সর্বদা জাগ্রত। তাঁর উদাহরণ হলে সে ব্যক্তির ন্যায়, যিনি একটি ঘর বানিয়েছেন। অতঃপর মানুষকে আহার করানোর জন্য দস্তরখান বিছালেন, তারপর মানুষকে ডাকবার জন্য আহ্বায়ক পাঠালেন। যারা আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল তারা ঘরে প্রবেশ করল এবং খাবারও খেল। আর যারা আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না, তারা না ঘরে প্রবেশ করতে পারল আর না খাবারও পেল। এসব কথা শুনে তারা (মালায়িকাহ্‌) পরস্পর বললেন, এ কথাটার তাৎপর্য বর্ণনা কর যাতে তিনি কথাটা বুঝতে পারেন। এবারও কেউ বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে। আর কেউ বললেন, তাঁর চোখ ঘুমিয়ে থাকলেও অন্তর জেগে আছে। তারা বললেন, ‘ঘরটি’ হল জান্নাত আর আহ্বায়ক হলেন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর ও মেহমানদারী প্রস্তুতকারী হলেন আল্লাহ্‌ তা‘আলা)। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবাধ্য হল সে আল্লাহ্‌র অবাধ্য হল। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন মানুষের মধ্যে (মুসলিম ও কাফিরের) পার্থক্য নিধারণকারী মানদণ্ড। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘ইবাদাতের অবস্থা জানার জন্য তাঁর স্ত্রীগণের নিকট এলে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘ইবাদাতের খবর শুনে তারা যেন তাঁর ইবাদাতকে কম মনে করলেন এবং পরস্পর আলাপ করলেন: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা কোথায়, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর আগের-পরের (গোটা জীবনের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কিন্তু সারা রাত সলাত আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে পড়লেন এবং বললেন, তোমরা কী ধরনের কথাবর্তা বলছিলে? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী পরহেয করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেই। রাতে সলাত আদায় করি আবার ঘুমিয়েও থাকে। আমি বিয়েও করি। সুতরাং এটাই আমার সুন্নাত (পথ), যে ব্যক্তি আমার পথ থেকে বিমূখ হবে সে আমার (উম্মাতের) মধ্যে গণ হবে না। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাজ করলেন (অর্থাৎ সফরে সিয়াম ভঙ্গ করলেন), অন্যদেরকেও তা করার জন্য অনুমতি দিলেন। কিন্তু কতক লোক তা থেকে বিরত থাকল (অর্থাৎ সিয়াম ভাঙ্গল না)। এ সংবাদ শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বাহ্‌ দিলেন, হাম্‌দ-সানা পড়ার পর বললেন, লোকদের কী হল? তারা এমন কাজ হতে বিরত থাকছে যা আমি করছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) তাদের চেয়ে অধিক জানি ও তাদের চেয়ে বেশী ভয় করি। (সুতরাং আমি যে কাজ করতে দ্বিধাবোধ করি না, তারা তা করতে ইতঃস্তত করবে কেন?)। [১] রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সময় মাদীনায় (হিজরত করে) আসলেন, সে সময় মাদীনার লোকেরা খেজুর গাছে তা‘বীর করতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এরূপ করছ কেন? মাদীনাবাসী উত্তর দিল, আমরা বরাবরই এমনি করে আসছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মনে হয় তোমরা এমন না করলেই ভাল হত। তাই মাদীনাবাসীরা এ কাজ করা পরিত্যাগ করল। কিন্তু ফসল (এ বছর) কম হল। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কানে গেলে তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ। তাই আমি যখন তোমাদেরকে দ্বীন সম্পর্কে কোন বিষয়ে নির্দেশ দেই, তখন তোমরা অবশ্যই আমার কথা শুনবে। আর আমি যখন নিজের মতানুসারে দুনিয়ার বিষয় সম্পর্কে তোমাদেরকে কিছু বলব তখন মনে করবে, আমি একজন মানুষ (তাই দুনিয়ার ব্যাপারে আমারও ভুল হতে পারে)। [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার এবং যে ব্যাপারটি দিয়ে আল্লাহ্‌ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল, যেমন- এক ব্যক্তি তার জাতির নিকট এসে বলল, হে আমার জাতি! আমি আমার এ দুই চোখে শত্রু বাহিনী দেখে এসেছি। আমি হচ্ছি তোমাদের একজন নাঙ্গা (নিঃস্বার্থ) সাবধানকারী। অতএব তোমরা শীঘ্রই তোমাদের মুক্তির পথ খোঁজ কর (তাহলে মুক্তি পাবে)। একথা শুনে জাতির একদল লোক তার কথা (বিশ্বাস করে) মেনে নিল। রাতেই তারা (শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য) ধীরে-সুস্থে চলে গেল এবং তারা মুক্তি পেল। জাতির অপর একদল তাঁকে মিথ্যুক মনে করল (তাই ভোর পর্যন্ত নিজেদের স্থানেই রয়ে গেল)। ভোরে অতর্কিতে শত্রু সৈন্য এসে তাদের উপর আপতিত হল এবং তাদেরকে সমূলে ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দিল। এই হল সে ব্যক্তির উদাহরণ- যে আমার কথা স্বীকার করেছে, আমি যা এনেছি তার অনুসরণ করেছে। আর সে ব্যক্তির উদাহরণ- যে আমার কথা মানেনি ও আমি যে সত্য নিয়ে (দীন ও শারী‘আত) তাদের নিকট এসেছি, তাকে তারা মিথ্যা মনে করেছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার উদাহরণ হল সে ব্যক্তির ন্যয় যে আগুন জ্বালাল এবং আগুন যখন তার চারদিক আলোকিত করল, তখন পতঙ্গসমূহ ও পোকা-মাকড় দলে দলে প্রজ্জ্বলিত আগুনে এসে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে লাগল, আর আগুন প্রজ্জ্বলনকারী সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু তারা বাধা উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়তেই থাকল। ঠিক তদ্রূপ আমিও (হে মানবজাতি!) তোমাদেরকে পেছন থেকে তোমাদের কোমর ধরে আগুন হতে (বাঁচাবার জন্য) টানছি। আর তোমরা সে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। ইমাম বুখারী এরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমও সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনের সাথে এ পর্যন্ত একই রূপ বর্ণনা করেছেন। তবে শেষের দিকে কিছু বাড়িয়ে এরূপ বলেছেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটাই হল আমার ও তোমাদের উদাহরণ। আমি কোমর ধরে তোমাদেরকে আগুন থেকে (বাঁচানোর জন্য) টানছি ও বলছি, এসো আমার দিকে, আগুন থেকে দূরে থাক; এসো আমার দিকে, আগুন থেকে দূরে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্‌ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল জমিনে মুষলধারে বৃষ্টি, যা কোন ভূখণ্ডে পড়েছে। সে ভূখণ্ডের একাংশ উৎকৃষ্ট, যা বৃষ্টিকে চুষে নিয়েছে এবং প্রচুর উদ্ভিদ, গাছ-গাছালি ও ঘাস জন্ম দিয়েছে। আর অপর অংশ ছিল কঠিন ও গভীর, যা পানি (শোষণ না করে) আটকিয়ে রেখেছে। যার দ্বারা মানুষের উপকার সাধন করেছে। লোকেরা তা পান করেছে, অন্যকে পান করিয়েছে এবং তার দ্বারা ক্ষেত-খামারে কৃষি কাজ করেছে। আর কিছু বৃষ্টি ভূমির সমতল ও কঠিন জায়গায় পড়েছে, যা পানি আটকিয়ে রাখেনি বা শোষণ করেনি অথবা গাছপালা জন্মায়নি। এটা হল সে ব্যক্তির উদাহরণ যে আল্লাহ্‌র দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে ও (মানুষকে) শিক্ষা দিয়েছে। আর সে ব্যক্তির উদাহরণ, যে এর দিকে মাথা তুলেও তাকায়নি এবং আল্লাহ্‌র যে হিদায়াত দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা কবূলও করেনি। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন- “তিনি তোমার উপর এ কিতাব নাযিল করেছেন, যার কতক আয়াত মুহকাম” হতে “আর বোধশক্তি সম্পন্নরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা লাভ করে না” পর্যন্ত- (সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরাম ৩:৭)। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যে সময় তুমি দেখবে, মুসলিমের বর্ণনায় আছে, ‘যখন তোমরা দেখ যে, লোকেরা কুরআনের ‘মুতাশাবিহ’ আয়াতের অনুসরণ করছে (তখন মনে করবে), এরাই সে সকল লোক আল্লাহ্‌ তা’আলা (বাঁকা হৃদয়ের লোক বলে) যাদের উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাদের থেকে সতর্ক থাকবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন দুপুর বেলায় আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে পৌঁছলাম। (‘আবদুল্লাহ বলেন,) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন দু’জন লোকের স্বর শুনলেন। তারা একটি (মুতাশাবিহ) আয়াতের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক করছিল (অর্থাৎ আয়াতের অর্থ নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন, তখন তাঁর চেহারায় রাগের ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের আগের লোকেরা আল্লাহ্‌র কিতাব নিয়ে মতভেদ করার দরুনই ধ্বংস হয়েছে। [১] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুসলিমদের মধ্যে সে-ই সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধী, যে ব্যক্তি এমন কোন বিষয়ে (নাবীকে) প্রশ্ন করেছে, যা মানুষের জন্য পূর্বে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার দরুন হারাম হয়ে গছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: শেষ যামানায় এমন মিথ্যুক দাজ্জাল লোক হবে, যারা তোমাদের কাছে এমন সব (মনগড়া) হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে যা তোমরা শুনোনি, তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেননি। অতএব সাবধান! তাদের থেকে দূরে থাকবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে বা বিপদে ফেলতে না পারে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আহলে কিতাবগণ তাওরাত কিতাব হিব্রু ভাষায় পাঠ করত (এটা ইয়াহূদীদের ভাষা ছিল)। আর মুসলিমদেরকে তা আরবী ভাসায় বুঝাত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাদের ব্যাপারে সহাবীগণকে) বললেন, তোমরা আহলে কিতাবদেরকে সমর্থনও করো না, আবার মিথ্যা প্রতিপন্নও করো না। সুতরাং তোমরা তাদের বলবে, “আমরা আল্লাহ্‌র ওপর ঈমান এনেছি, আর যা আমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২: ১৩৬) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ্‌ তা‘আলা এমন কোন নাবীকে তাঁর উম্মাতের মধ্যে পাঠাননি, যাঁর উম্মাতের মধ্যে কোন সাহায্যকারী বা সহাবীর দল ওই উম্মাতে ছিল না। এ তারা সুন্নাতের পথ অনুসরণ করেছে, তার হুকুম-আহকাম মেনে চলেছে। তারপর এমন লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হল, যারা অন্যদেরকে যা বলত নিজেরা তা করত না। আর তারা সে সব কাজ করত যার আদেশ (শারী‘আতে) তাদেরকে দেয়া হয়নি। (আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন কতিপয় লোক থাকতে পারে)। তাই যে নিজের হাত দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সে (পূর্ণ) মু’মিন। আর যে মুখের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মু’মিন। আর যে অন্তর দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মু’মিন। আর এরপর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের দিকে আহ্বান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে আহ্বান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এটা অনুসারীদের গুনাহ্‌কে একটুও কমাবে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলাম আগন্তুকের (অপরিচিতের) ন্যায় (স্বল্প সংখ্যক লোকের মাধ্যমে অপরিচিত ও নিঃসঙ্গ অবস্থায়) শুরু হয়েছে এবং তা পরিশেষে ঐ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে, যেভাবে শুরু হয়েছে। তাই আগন্তুকের (ঈমানদার লোকদের) জন্য সুসংবাদ। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইসলাম মাদীনার দিকে এভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ (পরিশেষে) তার গর্তে ফিরে আসে- (বুখারী ও মুসলিম)। [১] আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) এর হাদীস “যারূনী মা-ত্বরাক্‌তুকুম” কিতাবুল মানাসিকে এবং মু’আবিয়াহ্‌ এবং জাবির (রাঃ) এর হাদীস দু’টি “লা- ইয়াযা-লু মিন উম্মাতী” এবং “লা- ইয়াযা-লু ত্ব-য়িফাতুম্‌ মিন উম্মাতী”। আমরা শীঘ্রই “সাওয়া-বি হা-যিহিল উম্মাতি” অধ্যায়ে বর্ণনা করব ইনশা-আল্লাহ্‌।

【17】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

রবী‘আহ্ আল জুরাশী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বপ্নে কতক মালাক দেখানো হল এবং মালাক তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আপনার চোখ ঘুমিয়ে থাকুক, কান শুনতে থাকুক এবং অন্তর বুঝতে থাকুক। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার চোখ দু’টি ঘুমাল, আমার কান দু’টি শুনল এবং আমার অন্তর বুঝল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তখন আমাকে (অর্থাৎ দৃষ্টান্ত স্বরূপ) বলা হল, যেন একজন মহৎ ব্যক্তি একটি ঘর তৈরি করলেন এবং এতে দা’ওয়াতের ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর (লোকেদের আহ্বানের জন্য) একজন আহ্বানকারীকে পাঠালেন। অতঃপর যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারল এবং খেতেও পারল। আর গৃহস্বামীও তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। অপরদিকে যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না, সে ঘরেও ঢুকল না, খেতেও পারল না এবং গৃহস্বামীও তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। অতঃপর মালায়িকাহ্‌ (এর ব্যাখ্যারূপে) বললেন, এ দৃষ্টান্তের গৃহস্বামী হলেন আল্লাহ্‌, আহ্বানকারী হলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ঘর হল ইসলাম এবং খাবারের স্থান হল জান্নাত। [১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি তোমাদের কাউকেও যেন এরূপ অবস্থায় না দেখি যে, সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার নির্দেশাবলীর কোন একটি পৌঁছবে, যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা কোন বিষয় নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানি না, যা কিছু আমি আল্লাহ্‌র কিতাবে পাব তার অনুসরণ করব। [১] মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সাবধান! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ জিনিসও। জেনে রেখ, শীঘ্রই এমন এক সময় এসে যাবে, যখন কোন উদরভর্তি বড় লোক তার গদিতে বসে বলবে, তোমরা কেবল এ কুরআনকেই গ্রহণ করবে। এতে যা হালাল পাবে তাকেই হালাল জানবে এবং যা এতে হারাম পাবে তাকেই হারাম মনে করবে। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা হারাম বলেছেন, তা আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন তারই অনুরূপ। তাই জেনে রেখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং শিকারী দাঁতওয়ালা কোন হিংস্র পশুও হালাল নয়। এমতাবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের কোন হারানো বস্তুও তোমাদের জন্য হালাল নয়, তবে সে যদি সেটির মুখাপেক্ষী না হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে, তাদের উচিত ঐ লোকের মেহমানদারি করা। যদি তারা তার মেহমানদারি না করে তবে সে জোরপূর্বক তাদের নিকট থেকে তার মেহমানদারির সম-পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার রাখবে। (অথচ কুরআনে এ সকল বিষয়ের উল্লেখ নেই)। [১] ‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বাহ্‌ দিতে উঠে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি নিজের গদিতে ঠেস দিয়ে বসে এ কথা মনে করে যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা যা কিছু এ কুরআনে হারাম করেছেন তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? জেনে রেখ, আল্লাহ্‌র কসম! নিঃসন্দেহে আমি নির্দেশ করেছি, আমি উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, আর এর পরিমাণ কুরআনের হুকুমের সমান, বরং এর চেয়ে অধিক হবে। তোমরা মনে রাখবে যে, অনুমতি ব্যতীত আহলে কিতাব যিম্মীদের বাসগৃহে প্রবেশ করা, তাদের নারীদের প্রহার করা এবং তাদের ফসল বা শস্য খাওয়াকেও আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করেননি, যদি তারা তাদের উপর ধার্যকৃত কর আদায় করে দেয় (এসব বিষয় কুরআনে নেই, আমার দ্বারাই আল্লাহ্‌ এসব হারাম করেছেন)। [১] ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে গেলেন। আমাদের উদ্দেশ্যে এমন মর্মস্পর্শী নাসীহাত করলেন যাতে আমাদের চোখ গড়িয়ে পানি বইতে লাগল। অন্তরে ভয় সৃষ্টি হল মনে হচ্ছিল বুঝি উপদেশ দানকারীর যেন জীবনের এটাই শেষ উপদেশ। এক ব্যক্তি আবেদন করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভয় করার, (ইমাম বা নেতার) আদেশ শোনার ও (তার) অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে (নেতা ইমাম) হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার (বিদ‘আত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই [বা কাজ শারী‘আতে আবিষ্কার করা যা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সহাবীগণ করেননি তা] বিদ‘আত এবং প্রত্যেকটা বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। কিন্তু এ বর্ণনায় তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ সলাত আদায়ের কথা উল্লেখ করেননি। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে) একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহ্‌র পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহ্বান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন : “নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের অনুসরণ করে চলো...” (সূরাহ্‌ আন’আম ৬:১৬৩) আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনা দ্বীন ও শরী‘আতের অধীন না হবে-(শারহে সুন্নাহ)। ইমাম নাবাবী তার “আরবা‘ঈন” গ্রন্থে বলেছেন, এটা একটা সহীহ হাদীস। আমরা কিতাবুল হুজ্জাত-এ হাদীসটি সহীহ সানাদসহ বর্ণনা করিছে। [১] বিলাল ইবনু হারিস আল মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার কোন একটি সুন্নাতকে যিন্দা করেছে, যে সুন্নাত আমার পরে ছেড়ে দেয়া হয়ছিল, তার এত সাওয়াব হবে যত সাওয়াব এ সুন্নাত ‘আমালকারীদের হবে, কিন্তু সুন্নাতের উপর ‘আমালকারীদের সাওয়াবে কোন অংশ হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর নতুন (বিদ‘আত) পথ সৃষ্টি করবে, যাতে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল রাযী-খুশী নন, তার জন্য সে সকল লোকের গুনাহ চাপিয়ে দেয়া হবে, যারা তার সাথে ‘আমাল করবে, অথচ তাদের গুনাহের কোন অংশ হ্রাস করবে না। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এ বর্ণনাটিকে ইবনু মাজাহ (রহঃ) কাসীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র থেকে, তিনি তার পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। আমর ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: নিঃসন্দেহে দ্বীন (ইসলাম) হিজাযের দিকে এমনভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ (পরিশেষে) তার গর্তের দিকে ফিরে আসে এবং দ্বীন হিজাযেই আশ্রয় নিবে যেভাবে পার্বত্য মেঘ পর্বত-শিখরে আশ্রয় নিয়ে থাকে। দ্বীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর (গরীবীর) ন্যায় যাত্রা শুরু করেছে, আবার তা ফিরে আসবে যেভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব অপিরিচিতের জন্য সুসংবাদ রয়েছে, তারা ঐসব লোক যারা আমার পর লোকদের দ্বারা নষ্ট করা সুন্নাতকে পূণঃ জারী করে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতের উপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বানী ইসরাঈলের উপর এসেছিল। যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ঠিক সমান হয়। এমনটি বানী ইসরাঈলের মধ্যে যদি কেউ তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে কুকর্ম করে থাকে, তাহলে আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন লোক হবে যারা অনুরূপ কাজ করবে আর বানী ইসরাঈল ৭২ ফিরক্বায় (দলে) বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মাত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকবে। [১] মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) আহ্‌মাদ ও আবূ দাঊদে মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) হতে (কিছু পার্থক্যের সাথে) বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামে যাবে। আর একটি দল জান্নাতে যাবে। আর সে দলটি হচ্ছে জামা‘আত। আর আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েকটি দলের উদ্ভব হবে যাদের শরীরে এমন কুপ্রবৃত্তি (বিদ‘আত) ছড়াবে যেমনভাবে জলাতংক রোগ রোগীর সমগ্র শরীরে সঞ্চারণ করে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকি থাকে না, যাতে তা সঞ্চার করে না। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমার গোটা উম্মাতকে; অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করবেন না। আল্লাহ্‌ তা‘আলার হাত (রহমাত ও সাহায্য) জামা‘আতের উপর রয়েছে। যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অবশেষে ) জাহান্নামে যাবে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বৃহত্তম দলের অনুসরণ কর। কেননা, যে ব্যক্তি দল থেকে আলাদা হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (পরিশেষে) জাহান্নামে যাবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন: হে বৎস! তুমি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে কাটাতে পার তাহলে তাই কর। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শাহীদের সাওয়াব রয়েছে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহূদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভালো মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইয়াহূদী ও নাসারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি (তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে) এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি হালাল (রিয্‌ক্ব) খাবে, সুন্নাতের উপর ‘আমাল করবে এবং যার অনিষ্ট থকে মানুষ নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে যাবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ ধরনের লোক তো আজকাল অগণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (ইনশা-আল্লাহ্‌) আমার পরবর্তী যুগেও এ ধরনের লোক থাকবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা এমন যুগে আছ, যে যুগে তোমাদের কেউ তার উপর নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশও ছেড়ে দিলে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর এমন এক যুগ আসবে, যখন কেউ যদি তার প্রতি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশের উপরও ‘আমাল করে সে পরিত্রাণ পাবে। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হিদায়াত প্রাপ্তির এবং হিদায়াতের উপর ক্বায়িম থাকার পর কোন জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় না, কিন্তু যখন তারা ধর্মীয় বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করলেন (অর্থ): “তারা বাক-বিতণ্ডা করার উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার নিকট তা উত্থাপন করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে বাক-বিতণ্ডাকারী লোক”- (সূরাহ্‌ যুখরুফ ৪৩:৫৮)। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন: তোমরা নিজেদের নাফ্‌সের (আত্মার) উপর ইচ্ছা করে কঠোরতা করো না। কেননা পরবর্তীতে আল্লাহ্‌ না আবার তোমাদের উপর কঠোরতা চাপিয়ে দেন। পূর্বেও একটি জাতি (বানী ইসরাঈল) নিজেদের উপর কঠোরতা অবলম্বন করেছিল। তাই আল্লাহ্‌ তা‘আলাও তাদের উপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দিলেন। গির্জায় ও ধর্মশালায় যে লোকগুলো আছে, এরা তাদেই উত্তরাধিকারী। (কুরআনে উল্লেখ আছে) “তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ‘রাহ্‌বানিয়্যাত’ বা বৈরাগ্যবাদ-কে আবিষ্কার করেছিল। আমি তাদের উপর নির্ধারণ করিনি”- (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭:২৭)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কুরআন পাঁচটি বিষয়সহ নাযিল হয়েছে: (১) হালাল (২) হারাম (৩) মুহ্‌কাম (৪) মুতাশাবিহ ও (৫) আমসাল (উপদেশপূর্ণ ঘটনা)। সুতরাং তোমরা হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম মনে করবে। মুহকামের উপর ‘আমাল করবে, মুতাশাবিহের সাথে ঈমান পোষণ করবে। আর আমসাল (উপদেশপূর্ণ কাহিনী) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এটা মাসাবীহের বাক্য বিন্যাস। কিন্তু বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে এরূপ বর্ণনা করেছেন: তোমরা হালালের উপর ‘আমাল কর, হারাম থেকে বেঁচে থাক এবং মুহকামের অনুসরণ কর। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: শারী‘আতের বিষয় তিন প্রকার: (১) এমন বিষয়, যার হিদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার। তাই এ নির্দেশ মেনে চল। (২) সে বিষয়, যার ভ্রষ্টতাও স্পষ্ট, সুতরাং তা পরিহার কর এবং (৩) এ বিষয়, যা মতভেদপূর্ণ তা মহান আল্লাহ্‌র হাতে ছেড়ে দাও। [১]

【18】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মেষপালের ক্ষেত্রে নেকড়ে বাঘের ন্যায় শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। পালের যে মেষটি দল হতে আলাদা হয়ে যায় অথবা যেটি খাবারের সন্ধানে দূরে সরে পড়ে অথবা যেটি অলসতাবশতঃ এক কিনারায় পড়ে থাকে, নেকড়ে সেটিকে শিকার করে নিয়ে যায়। সুতরাং সাবধান! তোমরা কক্ষণও (দল ছেড়ে) গিরিপথে চলে যাবে না, আর জামা‘আতবদ্ধ হয়ে (মুসলিম) জনগণের সাথে থাকবে। [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি জামা‘আত (দল) হতে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি (বন্ধন) তার গলা হতে খুলে ফেলেছে। [১] মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহ্‌র কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (ইমাম মালিক মুওয়াত্তায় বর্ণনা করেছেন)। [১] গুযায়ফ ইবনু আল হারিস আস্ সুমালী (রাঃ) তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখনই কোন জাতি একটি বিদ‘আত সৃষ্টি করেছে, তখনই সমপরিমাণ সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নাতের উপর ‘আমাল করা (সু্ন্নাত যত ক্ষুদ্রই হোক), একটি বিদ‘আত সৃষ্টি করা অপেক্ষা উত্তম। [১] হাসসান (ইবনু ‘আতিয়্যাহ্) (রহঃ) তিন বলেন, কোন জাতি যখনই দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ‘আত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদের থেকে সে পরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। ক্বিয়ামাত পর্যন্ত এ সুন্নাত আর তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। [১] ইব্রাহীম ইবনু মায়সারাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতীকে সম্মান দেখাল, সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করল। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কিতাবের শিক্ষা লাভ করল, অতঃপর এ কিতাবের মধ্যে যা আছে তা অনুসরণ করল, আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ ব্যক্তিকে পৃথিবীতে পথভ্রষ্টতা হতে বাঁচিয়ে রাখবেন এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তাকে নিকৃষ্ট হিসাবের কষ্ট হতে রক্ষা রকবেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে- তিনি বলেছেন, যে আল্লাহ্‌ তা‘আলার কিতাবের অনুসরণ করবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতেও হতভাগ্য হবে না। অতঃপর এ কথার প্রমাণ স্বরূপ তিনি তিলাওয়াত করলেন: (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আমার হিদায়াত গ্রহণ করল, সে (দুনিয়াতে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালেও) ভাগ্যাহত হবে না”- (সূরাহ্ ত্ব-হা ২০ : ১২৩) [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তা হল একটি সরল সঠিক পথ আছে, এর দু’দিকে দু’টি দেয়াল। এসব দেয়ালে খোলা দরজা রয়েছে এবং সে সব দরজায় পর্দা ঝুলানো রয়েছে। আর রাস্তার মাথায় একজন আহ্বায়ক, যে (লোকদেরকে) আহ্বান করছে, এসো সোজা রাস্তা দিয়ে চলে যাও। ভুল ও বাঁকা পথে যাবে না। আর এ আহ্বানকারীর একটু আগে আছেন আর একজন আহ্বানকারী। যখনই কোন বান্দা সে দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখনই সে তাকে ডেকে বলেন, সর্বনাশ! এ দরজা খুলো না। যদি তুমি এটা খুলো তাহলে ভিতরে ঢুকে যাবে (প্রবেশ করলেই পথভ্রষ্ট হবে)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাখ্যা করলেনঃ সঠিক সরল পথের অর্থ হচ্ছে ‘ইসলাম’ (সে পথ জান্নাতে চলে যায়)। আর খোলা দরজার অর্থ হল, ঐ সব জিনিস আল্লাহ্‌ তা‘আলা যা হারাম করেছেন এবং দরজার মধ্যে ঝুলানো পর্দার অর্থ হল আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সীমাসমূহ। রাস্তার মাথায় আহ্বায়ক হচ্ছে কুরআন। আর তার সামনের আহ্বায়ক হচ্ছে নাসীহাতকারী মালাক, যা প্রত্যেক মু‘মিনের অন্তরে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে বিদ্যমান। [১] নাও্ওয়াস ইবনু সাম্‘আন (রাঃ) ইমাম তিরমিযীও একই সহাবী থেকে এটি বর্ণনা করেছেন, তবে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্তাকারে। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্‌ অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দ্বীনের ব্যাপারে) ফিত্নাহ হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক দিয়ে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রসূলের সাথী ও দ্বীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ কর এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আকঁড়ে ধর। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটা হল তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। এরপর ‘উমার (রাঃ) তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। (এদিকে রাগে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা বিবর্ণ হতে লাগল। আবূ বাক্র (রাঃ) বললেন, ‘উমার! তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবর্ণ চেহারা মুবারক দেখছো না? ‘উমার (রাঃ) রসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ্য করে) বললেন, আমি আল্লাহ্‌র গযব ও তাঁর রসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ‘রব’ হিসেবে আল্লাহ্‌ তা‘আলার উপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের উপর এবং নাবী হিসেবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর সন্তুষ্ট আছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আল্লাহ্‌র কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি (তাওরাতের নাবী স্বয়ং) মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে থাকতেন আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা (আঃ) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবূওয়াতের যুগ পেতেন, তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার কথা আল্লাহ্‌র কথাকে রহিত করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্‌র কথা আমার কথাকে রহিত করে। এছাড়া কুরআনের একঅংশ অপরাংশকে রহিত করে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার কোন হাদীস অপর হাদীসকে রহিত করে; যেমন কুরআনের কোন অংশ অপর অংশকে রহিত করে। [১] আবূ সা‘লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা কিছু জিনিসকে ফার্য হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন, সেগুলো ছেড়ে দিবে না। তিনি কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন সে (হারাম) কাজগুলো করবে না। আর কতকগুলো (জিনিসের) সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন, সেগুলোর সীমালঙ্ঘন করবে না। আর কিছু বিষয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নীরব রয়েছেন, সে সকল বিষয়ে বিতর্ক-বাহাসে লিপ্ত হবে না। উপরের তিনটি হাদীসই দারাকুত্বনী বর্ণনা করেছেন। [১]