4. পর্ব-৪ঃ সলাত

【1】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ হতে অপর জুমু’আহ পর্যন্ত এবং এক রমযান হতে আরেক রমযান পর্যন্ত সব গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়, যদি কাবীরাহ গুনাহ সমূহ বেঁচে থাকা হয়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে ) বললেন, আচ্ছা বল তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগ্ণ উত্তরে বললেন, না কোন ময়লা থাকতে পারে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাসমূহ আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দেন । [১] ‘আবদুল্লাহ (বিন মাস’উদ) (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল । তারপর সে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি বলল। এ সময়ে আল্লাহ্‌ ওয়াহী নাযিল করেনঃ “সালাত ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে । নিশ্চয় নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়” (সুরাহ হূদ ১১:১১৪) । [১] আনাস (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! আমি ‘হাদ্দ’ যোগ্য-এর কাজ (অপরাধ) করে ফেলেছি। আমার উপর তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরং সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। লোকটিও রসূলের সাথে সলাত আদায় করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করলে লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদ্দ-এর কাজ করেছি। আমার উপর আল্লাহর কিতাবের নির্দিষ্ট হাদ্দ জারী করুন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সলাত আদায় করনি। লোকটি বলল, হ্যাঁ, করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (এ সলাতের মাধ্যমে) আল্লাহ তোমার গুনাহ বা হাদ্দ মাফ করে দিয়েছেন। [১] [‘আবদুল্লাহ (রাঃ)] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ কাজ (‘আমাল) আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? তিনি( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সঠিক সময়ে সলাত আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। রাবী [ইবনু মাস’উদ(রহঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এসব উত্তর দিলেন। আমি যদি আরও জিজ্ঞেস করতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আরও কথা বলতেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল সলাত পরিত্যাগ করা। [১]

【2】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফারয্ করেছেন। যে ব্যক্তি এ সলাতের জন্য ভালভাবে উযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [৫৮৩] মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের উপর ফারয্ করা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় কর, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা মাসটির সিয়াম (রোযা) পালন কর, আদায় কর তোমাদের ধন- সম্পদের যাকাত এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের অনুগত্য কর। তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [১] আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌছবে তখন তাদেরকে সলাত আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সলাত আদায় করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দিবে। [১] শারহে সুন্নাহ- তে এভাবে রয়েছে। সাবরাহ্ ইবনু মা‘বাদ (রহঃ) কিন্তু মাসাবীহ-তে সাবরাহ্ বিন মা’বাদ হতে বর্ণিত হয়েছে। বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হল সলাত। অতএব যে সলাত পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করল (অর্থাৎ কাফির হয়ে যাবে)। [১]

【3】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মাদীনার উপকন্ঠে এক মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর সব রসাস্বাদন করেছি। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত, তাই আমার প্রতি এ অপরাধের কারণে যা শাস্তি বিধান করার তা আপনি করুন। ‘উমার (রহঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ ঢেকে রেখেছিলেন। তুমি নিজেও তা ঢেকে রাখতে (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে, তবে তা উত্তম হত)। বর্ণনাকারী (‘আবদুল্লাহ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথার কোন উত্তর দিলেন না। তাই লোকটি উঠে চলে যেতে লাগল। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেন- (অর্থ) “সলাত কায়িম কর দিনের দু’অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ বদ কাজকে দূর করে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারী জন্য এটা একটা উপদেশ”- (সূরাহ্ হূদঃ ১১:১১৪) । এ সময়ে উপস্থিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর নাবী ! এ হুকুম কি বিশেষভাবে তার জন্য। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, না, বরং সকল মানুষের জন্যই। [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, এক শীতের সময়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল । তিনি একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। আবূ যার (রহঃ) বলেন, তখন তিনি আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সলাতে আদায় করে, আর জ়ীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। [১] যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্‌) ক্ষমা করে দিবেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সলাত সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন: যে ব্যক্তি সলাতের হিফাযাত করবে, তা ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের হিফাযাত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। ক্বিয়ামাতের দিন সে কারূন, ফির‘আওন, হামান ও উবাই বিন খালাফ-এর সাথে থাকবে। [১] আবদুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ সলাত ছাড়া অন্য কোন ‘আমাল পরিত্যাগ করাকে কুফ্‌রী বলে মনে করতেন না। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন : (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করবে না, যদিও তোমাকে খন্ড-বিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়, (২) ইচ্ছা করে কোন ফার্‌য সলাত ত্যাগ করবে না’। যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফার্‌য সলাত ত্যাগ করবে তার উপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে, (৩) মদ পান করবে না। কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। [১]

【4】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ‘আস্‌রের সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ‘আস্‌রের সলাতের ওয়াক্ত যুহরের সলাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ‘ইশার সলাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সলাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফাজরের সলাতের ওয়াক্ত ফা্‌জর অর্থাৎ সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সলাত হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের দু’শিং-এর মধ্য দিয়ে। [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, আমাদের সাথে এ দু’ দিন সলাত আদায় কর। প্রথমদিন সূর্য ঢলে পড়লে তিনি বিলাল (রাঃ)-কে হুকুম দিলেন আযান দিতে। বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। এরপর তিনি নির্দেশ দিলে বিলাল (রাঃ) যুহরের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর (‘আস্‌রের সময়) তিনি বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ‘আস্‌রের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। তখনও সূর্য বেশ উঁচুতে ও পরিষ্কার সাদা। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি মাগরিবের ইক্বামাত দিলেন। তখন সূর্য দেখা যাচ্ছে না। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ‘ইশার সলাতের ইক্বামাত দিলেন, যখন মাত্র লালিমা অদৃশ্য হল। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ফাজরের সলাতের ইক্বামাত দিলেন। তখন ঊষা (সুবহে সাদিক) দেখা দিয়েছে। যখন দ্বিতীয় দিন এলো তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, যুহরের সলাত ঠান্ডা পড়া পর্যন্ত দেরী করতে। বিলাল দেরী করলেন। রোদের তাপ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত দেরী করলেন। তারপর ‘আস্‌রের সলাত আদায় করলেন। সূর্য তখন উঁচুতে অবস্থিত, কিন্তু সলাতে পূর্বের দিনের চেয়ে বেশী দেরী করলেন। মাগরিবের সলাত আদায় করলেন লালিমা অদৃশ্য হবার কিছুক্ষণ আগে। আর এ দিন ‘ইশার সলাত আদায় করলেন রাতের এক তৃতীয়াংশ শেষ হবার পর। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করলেন বেশ পরিষ্কার হওয়ার পর। সবশেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এই যে আমি। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সলাত আদায় করার ওয়াক্ত হল, তোমরা যা (দু’ সীমা) দেখলে তার মধ্যস্থলে। [১]

【5】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা‘বার কাছে দু’বার আমার সলাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সলাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ‘আস্‌রের সলাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হল। মাগরিবের সলাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ‘ইশার সলাত আদায় করালেন যখন ‘শাফাক্ব অস্ত হল। ফাজরের সলাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়। দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ‘আস্‌রের সলাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সলাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ‘ইশার সলাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নাবীগণের সলাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সলাতের ওয়াক্ত। [১]

【6】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, খলীফা ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) একদিন ‘আস্‌রের সলাত দেরীতে পড়ালেন। ‘উরওয়াহ্‌ (ইবনু যুবায়র) (রহঃ) খলীফাকে বললেন, সাবধান! জিবরীল নাযিল হয়েছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আদায় করিয়েছিলেন (ইমামাত করেছিলেন)। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয বললেন, দেখ ‘উরওয়াহ্‌! তুমি কি বলছ? উত্তরে ‘উরওয়াহ্‌ বললেন, আমি বাশীর ইবনু আবী মাস‘ঊদ হতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। জিবরীল (আঃ) অবতীর্ণ হলেন। আমার ইমামাত করলেন। আমি তাঁর সাথে সলাত (যুহর) আদায় করলাম। তারপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (‘আস্‌র) । আবার তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (মাগরিব)। এরপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (‘ইশা)। অতঃপর তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম (ফাজর)। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের আঙ্গুল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত হিসাব করছিলেন। [১] খলীফাহ্ ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি তার শাসনকর্তাদের কাছে লিখলেন, আমার কাছে আপনাদের সকল কাজের মধ্যে সলাতই হল সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যে এর যথাযথ হিফাযাত করেছে ও তা রক্ষা করেছে, সে তার দীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা বিনষ্ট করেছে সে তা ছাড়া অপরগুলোর পক্ষে আরো বেশী বিনষ্টকারী প্রমাণিত হবে। অতঃপর তিনি লিখলেন, যুহরের সলাত আদায় করবে ছায়া এক বাহু ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে ছায়া এক মিসাল হওয়া পর্যন্ত (ছায়া আসলী বাদ দিয়ে)। সূর্য উপরে পরিষ্কার সাদা থাকা অবস্থায় ‘আসরের সলাত আদায় করবে, যাতে একজন আরোহী সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দু’ বা তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করে যেতে পারে। মাগরিবের সলাত আদায় করবে সূর্য অস্ত যাবার পরপর। ‘ইশার সলাত আদায় করবে ‘শাফাক্ব’ দূর হয়ে যাবার পর থেকে শুরু করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তার চোখ না ঘুমাক যে এর আগে ঘুমাবে (তিনবার বললেন)। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করবে যখন তারাসমূহ পরিষ্কার হয় ও চকমক করে। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, গরমকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুহরের সলাতের (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হতে পাঁচ ক্বদম, আর শীতকালে পাঁচ হতে সাত ক্বদম। [১]

【7】

প্রথম অনুচ্ছেদ

সাইয়্যার ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও আমার আব্বা আবূ বারযাহ্ আল আসলামী (রাঃ)- এর নিকট গেলাম। আমার আব্বা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাত কিভাবে আদায় করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, যুহরের সলাত- যে সলাতকে তোমরা প্রথম সলাত বল, সূর্য ঢলে পড়লেই পড়তেন। ‘আসরের সলাত আদায় করতেন এমন সময়, যার পর আমাদের কেউ মাদীনার শেষ প্রান্তে তার বাড়ীতে ফিরতে পারতেন, অথচ সূর্য তখনও পরিষ্কার থাকত। বর্ণনাকারী বলেন, মাগরিবের সলাত সম্পর্কে কী বলেছেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ‘ইশার সলাত, যাকে তোমরা ‘আতামাহ্’ বল, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেরী করে পড়তেই ভালবাসেন এবং ‘ইশার সলাতের আগে ঘুম যাওয়া বা সলাতের পরে কথা বলাকে পছন্দ করতেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত শেষ করতেন, যখন কেউ নিজের সঙ্গে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত এবং এ সময় ষাট হতে একশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। [৫৯৯] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতেও দ্বিধা করতেন না এবং ‘ইশার সলাতের আগে ঘুম যাওয়া ও পরে কথা বলাকে আপছন্দ করতেন। [2] মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনুল হাসান ইবনু ‘আলী তিনি বলেন, আম্র জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুপুর ঢলে গেলে যুহরের সলাত আদায় করতেন। ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, তখনও সূর্যের দীপ্তি থাকত। মাগরিবের সলাত আদায় করতেন সূর্য অস্ত যেতেই। আর ‘ইশার সলাত, যখন লোক অনেক হত এবং তাড়াতাড়ি পড়তেন। আর লোকজন কম হলে দেরী করতেন এবং অন্ধকার থাকতে ফাজরের সলাত আদায় করতেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে যুহরের সলাত আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সাজদাহ্ করতাম। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন গরমের প্রকোপ বেড়ে যাবে, ঠান্ডা সময়ে সলাত (যুহর) আদায় করবে। [১] আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যুহরের সলাত ঠান্ডা সময়ে আদায় করবে। (অর্থাৎ আবূ হুরায়রাহর বর্ণনায় (আরবী) শব্দ ব্যবহার হয়েছে আর আবূ সা‘ঈদের বর্ণনায় (আরবী) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে) কারন গরমের প্রকোপ জাহান্নামের ভাপ। জাহান্নাম আপন প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করে বলেছিল, হে আমার আল্লাহ! (গরমের তীব্রতায়) আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার। এক নিঃশ্বাস শীতকালে, আর এক নিঃশ্বাস গরমকালে। এজন্যই তোমরা গরমকালে তাপের তীব্রতা বেশী পাও। আর শীতকালে শীতের প্রচন্ডতা বেশী। [১] বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা গরমের যে প্রচন্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাাসের কারনেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারনেই। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের সলাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরের আকাশে ও উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। আর কেউ আওয়ালীর দিকে (মাদীনার উপকন্ঠে) গিয়ে পুনরায় আসার পরেও সূর্য উপরেই থাকত। এসব আওয়ালীর কোন কোনটি মাদীনাহ্ হতে চার মাইল বা এর কাছাকাছি দূরত্বের ছিল। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এটা (আসরের সলাত দেরী করে আদায়) মুনাফিক্বের সলাত। তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের হলদে রং এবং শায়ত্বনের দু’ শিং- এর মধ্যস্থলে গেলে (সূর্যাস্থের সময়ে) তারা তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির ‘আসরের সলাত ছুটে গেল তার গোটা পরিবার ও ধন সম্পদ যেন উজার হয়ে গেল। [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি ‘আসরের সলাত ছেড়ে দিল সে তার ‘আমল বিনষ্ট করল। [১] রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। সলাত শেষ করে আমাদের কেউ তার তীর পড়ার স্থান (পর্যন্ত) দেখতে পেত। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, সহাবীগণ ‘ইশার’ সলাত আদায় করতেন ‘শাফাক্ব’ অদৃশ্য হবার পর হতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত আদায় করতেন। যে সব স্ত্রীলোক চাদর গায়ে মুড়িয়ে সলাত আদায় করতে আসতেন, অন্ধকারের দরুন তাদের চেনা যেত না। [১] ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) (সিয়াম পালনের জন্য) সাহ্‌রী খেলেন। সাহ্‌রী শেষ করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফাজরের) সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সলাত আদায় করলেন। আমরা ‘আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, এ দু’জনের খাবার পর সলাত শুরু করার আগে কী পরিমাণ সময়ের বিরতি ছিল? তিনি উত্তরে বলেন, এ পরিমাণ বিরতির সময় ছিল যাতে একজন পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে। [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, সে সময় তুমি কী করবে যখন তোমাদের উপর শাসকবৃন্দ এমন হবে, যারা সলাতের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা তা সঠিক সময় হতে পিছিয়ে দিবে? আমি বললাম, আপনি কী আমাকে নির্দেশ দেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ সময়ে তুমি তোমার সলাতকে সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে পাও, আবার আদায় করবে। আর এ সলাত তোমার জন্য নাফ্‌ল হিসেবে গন্য হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ফাজরের সলাতের এক রাক্‌’আত পেল, সে ফাজরের সলাত পেয়ে গেল। এভাবে যে সূর্যাস্তের পূর্বে ‘আস্‌র সলাতের এক রাক্‌’আত পেল, সে ‘আস্‌রের সলাত পেলো। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সূর্যাস্তের আগে ‘আসরের সলাতের এক সাজদাহ্‌ (রাক্‌’আত) পেলে সে যেন তার সলাত পূর্ণ করে। এমনিভাবে ফাজরের সলাত সূর্যোদয়ের আগে এক সাজদাহ্‌ (রাক্‌’আত) পেলে সেও যেন তার সলাত পূর্ণ করে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্‌ফারাহ্‌ হলো যখনই তা স্মরণ হবে সলাত আদায় করে নিবে। [১] অন্য বর্ণনায় আছে, ঐ সলাত আদায় করে নেয়া ছাড়া তার কোন প্রতিকারই নেই। [2] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সলাত আদায় করতে না পারলে তা দোষ নেই। দোষ হল জেগে থেকেও সলাত আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমার স্মরণে সলাত আদায় কর” – (সূরাহ্‌ ত্ব-হা – ২০:১৪)। [১]

【8】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আলী! তিনটি বিষয়ে দেরী করবে নাঃ (১) সলাতের সময় হয়ে গেলে আদায় করতে দেরী করবে না। (২) জানাযাহ্‌ উপস্থিত হয়ে গেলে তাতেও দেরী করবে না। (৩) স্বামীবিহীন নারীর উপযুক্ত বর পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে দিতেও দেরী করবে না। [১] (‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত প্রথম সময়ে আদায় করা আল্লাহকে খুশি করা এবং শেষ সময়ে আদায় করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার শামিল। (অর্থাৎ গুনাহ হতে বেঁচে থাকা) [১] উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (‘আমাল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। [১] ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার আল ‘উমারী ছাড়া আর কারো নিকট হতে বর্ণিত হয়নি। তিনিও মুহাদ্দিসগণের নিকট সবল নন। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সলাতকে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। [১] আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাত সর্বদাই কল্যাণ লাভ করবে, অথবা তিনি বলেছেন, ফিতরাত-এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যদি তারা তারকারাজি উজ্জ্বল হয়ে উঠা পর্যন্ত মাগরিবের সলাতকে বিলম্বিত না করে। [১] আব্বাস (রাঃ) দারিমী এ হাদীস ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে মনে না করলে তাদেরকে ‘ইশার সলাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে আদায়ের নির্দেশ দিতাম। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এ সলাত (অর্থাৎ ‘ইশার সলাত) দেরী করে আদায় করবে। কারণ এ সলাতের মাধ্যমে অন্যসব উম্মাতের উপর তোমাদের বেশী মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তোমাদের আগের কোন উম্মাত এ সলাত আদায় করেনি। [১] নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি খুব ভালভাবে জানি তোমাদের এ সলাতের, অর্থাৎ শেষ সলাত ‘ইশার ওয়াক্ত সম্পর্কে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয়বার (তৃতীয় রাতের) চাঁদ অস্ত যাবার পর এ সলাত আদায় করতেন। [১] রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ফাজরের সলাত ফর্সা আলোতে আদায় কর। কারণ ফর্সা আলোতে সলাত আদায় করলে অনেক বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়। [১]

【9】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ‘আসরের সলাত আদায় করার পর উট যাবাহ করতাম। এ উট ছাড়িয়ে দশ ভাগ করা হত, তারপর রান্না করা হত। আর আমরা রান্না করা এ গোশত সূর্যাস্তের আগে খেতাম। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক রাতে শেষ ‘ইশার সলাতের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপেক্ষা করছিলাম। তিনি এমন সময় বের হলেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত অথবা এরও কিছু পর। আমরা জানি না, পরিবারের কোন কাজে তিনি ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, নাকি অন্য কিছু। তিনি বের হয়ে বললেন, তোমরা এমন একটি সলাতের অপেক্ষা করছ, যার জন্য অন্য ধর্মের লোকেরা অপেক্ষা করে না। আমরা উম্মাতের জন্য কঠিন হবে মনে না করলে তাদের নিয়ে এ সলাত আমি এ সময়েই আদায় করতাম। এরপর তিনি মুয়াযযিনকে নির্দেশ দিলে সে ইক্বামাত দিল। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করালেন। [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের সলাতের মতই সলাত আদায় করতেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'ইশার সলাত তোমাদের চাইতে কিছু দেরীতে আদায় করতেন এবং সংক্ষেপ করতেন। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একরাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করলাম। (সেদিন) তিনি অর্ধেক রাত পর্যন্ত মাসজিদে এলেন না। [তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে] আমাদের বললেন, তোমরা তোমাদের নিজ নিজ জায়গায় বসে থাক। তাই আমরা বসে রইলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অন্যান্য লোক সলাত আদায় করেছে। বিছানায় চলে গেছে। আর জেনে রেখো, তোমরা যতক্ষণ সলাতের অপেক্ষা করবে, সময় সলাত(রত থাকা) গণ্য হবে। আমি যদি বুড়ো, দুর্বল ও অসুস্থদের দিকে লক্ষ্য না রাখতাম তাহলে সর্বদা এ সলাত অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতাম। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতকে তোমাদের চেয়ে বেশী আগে ভাগে আদায় করতেন। আর তোমারা 'আসরের সলাত তাঁর চেয়ে বেশী আগে আদায় কর। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যুহরের সলাত) গরমকালে ঠান্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন। [১] উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন: আমার পর শীঘ্রই তোমাদের উপর এমন সব প্রশাসক নিযুক্ত হবে যাদেরকে নানা কাজ ওয়াক্তমত সলাত আদায়ে বিরত রাখবে, এমনকি তার ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব (সে সময়) তোমরা তোমাদের সলাত ওয়াক্তমত আদায় করতে থাকবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তারপর আমি কি তাদের সাথে এ সলাত আবার আদায় করব? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। [১] ক্ববীসাহ্ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার পর তোমাদের উপর এমন সব শাসক নিযুক্ত হবে, যারা সলাতকে পিছিয়ে ফেলবে। যা তোমাদের জন্য কল্যাণ হলেও তাদের জন্য অকল্যাণ ডেকে আনবে। তাই যতদিন তারা ক্বিবলাহ্ হিসাবে (ক্বা'বা-কে)মেনে নিবে ততদিন তাদের পিছনে তোমরা সলাত আদায় করতে থাকবে। [১] (তাবি'ঈ) 'উবায়দুল্লাহ ইবনু 'আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ) তিনি খলীফা 'উসমান (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তিনি নিজ ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। তাকে তিনি বললেন, আপনিই জনগনের ইমাম। কিন্তু আপনার উপর এ বিপদ আপতিত যা আপনি দেখছেন। এ সময় বিদ্রোহী নেতা (ইবনু বিশর) আমাদের সলাতে ইমামাত করছে। এতে আমরা গুনাহ মনে করছি। তখন তিনি ['উসমান (রাঃ)] বললেন, মানুষ যেসব কাজ করে, এসবের মধ্যে সলাত হচ্ছে সর্বোত্তম। অতএব মানুষ যখন ভাল কাজ করবে, তাদের সাথে শারীক হবে। যখন মন্দ কাজ করবে, তাদের এ মন্দ কাজ হতে দূরে সরে থাকবে। [১]

【10】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উমারাহ্ ইবনু রুআয়বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি: এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে সলাত আদায় করেছে, অর্থাৎ ফাজর ও 'আসরের সলাত। [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা সময়ের সলাত (অর্থাৎ ফাজর ও 'আসর) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফাজর ও 'আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সলাত আদায় করছিল। [১] জুনদুব আল ক্বসরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত আদায় করল সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকল। অতএব আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে (নিশ্চিত) ধরতে পারবেনই। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন। [১] আর মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় (আরবি) পরিবর্তে (আরবি) রয়েছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সলাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করত। আর যদি জানত সলাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সলাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করত। যদি জানত ‘ইশা ও ফাজরের সলাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে হাযির হবার চেষ্টা করত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিক্বদের জন্য ‘ইশা ও ফাজরের সলাতের চেয়ে ভারী আর কোন সলাত নেই। যদি এ দুই সলাতের মধ্যে কি রয়েছে, তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সলাতে আসত। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘ইশার সলাত জামা‘আতে সাথে আদায় করেছে, সে যেন অর্ধেক রাত সলাতরত থেকেছে। আর যে ব্যক্তি ফাজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করেছে, সে যেন পুরো রাত সলাত আদায় করেছে। [১] (‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বেদুইনরা যেন তোমাদের মাগরিবের সলাতের নামকরণে তোমাদের উপর বিজয়ী হতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, বেদুইনরা এ সলাতকে ‘ইশা বলত। [১] (‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বেদুইনরা যেন তোমাদের ‘ইশার সলাতের নামকরণেরও তোমাদের উপর জয়ী হতে না পারে। এটা আল্লাহর কিতাবে ‘ইশা। তা পড়া হয় তাদের উষ্ট্রী দুধ দোহনের সময়। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খন্দাক্বের যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, কাফিররা আমাদেরকে ‘মধ্যবর্তী সলাত’ অর্থাৎ ‘আস্‌রের সলাত আদায় করা থেকে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘর আর ক্ববরগুলো আগুন দিয়ে ভরে দিন। [১]

【11】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ইবনু মাস্‘ঊদ ও সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (উস্‌ত্বা- সলাত) মধ্যবর্তী সলাত হচ্ছ ‘আস্‌রের সলাত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আল্লাহর বাণী (আরবী) “ফাজ্‌রের ক্বিরাআতে (সলাতে) উপস্থিত হয়”- (সূরাহ্‌ ইসরা ১৭ : ৭৮) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এতে উপস্থিত হয় রাতের ও দিনের মালায়িকাহ্। [১]

【12】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উভয়ে বলেন, ‘উস্‌ত্বা সলাত’ (মধ্যবর্তী সলাত) যুহরের সলাত। ইমাম মালিক (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে এবং ইমাম তিরমিযী উভয় হতে মু’আল্লাক্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত আগে আগে আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন সলাত আদায় করতেন না যা তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের জন্য যুহরের চেয়ে কষ্টসাধ্য ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হল : [আরবী] “তোমরা সব সলাতের, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সলাতের হিফাযাত করবে”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২: ২৩৮)। তিনি [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] বলেন,যুহরের সলাতের আগেও দু’টি সলাত (‘ইশা ও ফাজ্‌র) আছে। আর পরেও দু’টি সলাত (‘আস্‌র ও মাগরিব) আছে। [১] আলী ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইমাম মালিক-এর নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে পৌছেছে যে, ‘আলী ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন : ‘সলাতুল উস্‌ত্বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ফাজ্‌রের সলাত। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিরমিযী ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু ‘উমার হতে মু’আল্লাক্ব হিসবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে লোক ভোরে ফাজ্‌রের সলাত আদায়ের জন্য গেল সে লোক ঈমানের পতাকা উড়িয়ে গেল। আর যে লোক ভোরে বাজারের দিকে গেল সে লোক ইবলীসের (শায়ত্বনের) পতাকা উড়িয়ে গেল। [১]

【13】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (সলাতে শারীক হবার জন্য ঘোষণা প্রসঙ্গে) আগুন জ্বালানো ও শিঙ্গায় ফুঁক দেবার প্রস্তাব হল। এটাকে কেউ কেউ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথা বলে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে নির্দেশ দিলেন আযান জোড়া শব্দে ও ইক্বামাত বেজোড় শব্দে দেয়ার জন্য। হাদীস বর্ণনাকারী ইসমা’ঈল বলেন, আমি আবূ আইয়ূব আনসারীকে (ইক্বামাত বেজোড় দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তবে “ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্‌ ছাড়া” (অর্থাৎ- ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্‌’ জোড় বলতে হবে।) [১] আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং আমাকে আযান শিখিয়েছেন। তিনি আযানে বললেন, বল : (১) আল্ল-হু আকবার, (২) আল্ল-হু আকবার, (৩) আল্ল-হু আকবার, (৪) আল্ল-হু আকবার; (১) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (২) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (১)আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তারপর (তিনি) বললেন, তুমি আবার বল, (১) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (২) আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, (১) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (১) হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ, (২) হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ, (১) হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ, (২) হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ। (১) আল্ল-হু আকবার, (২) আল্ল-হু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। [১]

【14】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় আযানের বাক্য দু’ দু’বার ও ইক্বামাতের বাক্য এক একবার ছিল। কিন্ত ‘‘ক্বদ ক্ব-মাতিস্‌ সলা-হ্‌” কে মুয়ায্‌যিন দু’বার করে বলতেন। [১] আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উনিশ বাক্যে আযান আর সতের বাক্যে ইক্বামাত শিক্ষা দিয়েছেন। [১] আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি [আবূ মাহযূরাহ্‌ রাঃ] বলেন, (আমার কথা শুনে) তিনি আমার অথবা এবং বললেন, বল : আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার,আল্ল-হু আকবার, আল্ল-হু আকবার। এ বাক্যগুলো তুমি খুব উচ্চৈঃস্বরে বলবে। এরপর তুমি নিম্নস্বরে বলবে,আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ এবং আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তুমি পুনরায় উচ্চৈঃস্বরে শাহাদাত বাক্য বলবে : আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, হাইয়্যা ‘আলাস্‌ সলা-হ্‌, হাইয়্যা ‘আলাস্‌ সলা-হ্‌; হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ। এ আযান ফাজ্‌রের সলাতের জন্য হলে বলবে,আস্‌সলা-তু খয়রুম মিনান্‌ নাওম, আস্‌সলা-তু খয়রুম মিনান্‌ নাওম। আল্ল-হু আকবর, আল্ল-হু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ। [১] বিলাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন : ফাজ্‌রের সলাত ব্যতীত কোন সলাতেই তাসবীব করবে না। [১] কিন্ত তিরমিযী এ হাদীসের সমালোচনা করে বলেন, এ হাদীসের এক বর্ণনাকারী আবূ ইসরাঈল মুহাদ্দিসদের মতে নির্ভরযোগ্য নন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে বললেন, যখন আযান দিবে ধীর গতিতে (উচ্চকণ্ঠে) দিবে এবং যখন ইক্বামাত দিবে দ্রুতগতিতে (নিচু স্বরে) দিবে। তোমরা আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে এ পরিমাণ বিরতি রাখবে যাতে খাদ্য গ্রহণকারী খাওয়া, পানরত লোক পান করা, পায়খানা প্রস্রাবে রত লোক হাজাত পূর্ণ করতে পারে। আর আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা সলাতে কাতারবদ্ধ হবে না। [১] তিরমিযী বলেন, এ হাদীসকে আমরা ‘আবদুল মুন্‌’ইম ছাড়া আর কারও থেকে শুনিনি আর এর সানাদ মাজহূল-অজানা। যিয়াদ ইবনু হারিস আস্ সুদায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নির্দেশ দিলেন ফাজ্‌রের সলাতের আযান দিতে। আমি আযান দিলাম। তারপর (সলাতের সময়) বিলাল ইক্বামাত দিতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথন বললেন, সুদায়ীর ভাই আযান দিয়েছে। আর যে আযান দিবে সে ইক্বামাতও দিবে। [১]

【15】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলিমরা মাদীনায় হিজরত করে আসার পর সলাতের জন্য অনুমান করে একটা সময় ঠিক করে নিতেন। সে সময় সকলে একত্রিত হতেন। কারণ তখনও সলাতের জন্য কেউ আহ্বান করত না। একদিন এ বিষয় নিয়ে তারা আলোচনায় বসতেন। কেউ বললেন, নাসারাদের মতো ঘণ্টা বাজানো হোক। আবার কেউ বললেন, ‘ইয়াহূদীদের মতো শিঙ্গার ব্যাবস্থ করা হোক। তখন ‘উমার (রাঃ) বলেন, তোমরা কি একজন লোক পাঠিয়ে দিয়ে মানুষকে সলাতের জন্য আহ্বান করতে পারবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিলাল! উঠ, সলাতের জন্য আহ্বান কর (আযান দাও)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আবদ রব্বিহী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য একত্রিত হওয়ার জন্য ঘণ্টা বাজানোর নির্দেশ দিলেন। (সেদিন) আমি স্বপ্নে দেখলাম : এক লোক একটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি এ ঘণ্টাটা বিক্রি করবে? সে বলল, তুমি এ ঘণ্টা দিয়ে কী করবে? আমি বললাম, আমরা এ ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষকে সলাতের জামা’আতে ডাকব। সে ব্যক্তি বলল, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পন্থা বলে দিব না? আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। সে বলল, তুমি বল, ‘আল্ল-হু আকবার’ আযানের শেষ বাক্য পর্যন্ত আমাকে বলে শুনাল। এভাবে ইক্বামাতও বলে দিল। ভোরে উঠে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট স্বপ্নে যা দেখলাম সব তাঁকে তা বললাম। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ এ স্বপ্ন সত্য। এখন তুমি স্বপ্নে যা দেখেছে বিলালের সাথে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে থাক। আর সে আযান দিতে থাকুক। কারণ তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে জোরালো। অতএব আমি বিলালের সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে তাকে বলতে লাগলাম। আর তিনি আযান দিতে থাকলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) নিজ বাড়ী থেকে আযানের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি নিজ চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে এসে (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে) বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আলহাম্‌দু লিল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। [১] কিন্তু ইবনু মাজাহ ইক্বামাতের কথা উল্লেখ করেননি। ইমাম তিরমিযী বলেছেন- হাদীস সহীহ। তবে তিনি ঘণ্টার কথা উল্লেখ করেননি। আবূ বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ফাজ্‌রের সলাতের জন্য বের হলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার নিকট দিয়েই যেতেন, তাকে সলাতের জন্য আহ্বান করতেন অথবা নিজের পা দিয়ে তাকে নেড়ে দিয়ে যেতেন। [১] ইমাম মালিক একজন মুয়ায্‌যিন ‘উমারকে ফাজ্‌রের সলাতের জন্য জাগাতে এলে তাকে নিদ্রিত পেলেন। তখন মুয়ায্‌যিন বললেন, “আস্‌সলা-তু খয়রুম মিনান্‌ নাওম” (সলাত ঘুম থেকে উত্তম)। ‘উমার (রাঃ) তাকে এ বাক্যটি ফাজ্‌রের সলাতের আযানে যোগ করার নির্দেশ দিলেন। [১] আবদুর রহমান ইবনু সা‘দ ইবনু ‘আম্মার ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি (দাদা) ছিলেন মাসজিদে কুবায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুয়ায্‌যিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে (আযানের সময়) তার দুই আঙ্গুল দুই কানের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখার হুকুম দিলেন এবং বললেন, এভাবে (আঙ্গুল) রাখলে তোমার কণ্ঠষ্বর উঁচু হবে। [১]

【16】

প্রথম অনুচ্ছেদ

মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : ক্বিয়ামাতের দিন মুয়ায্‌যিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড় সম্পন্ন লোক হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সলাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে তাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্‌’আত সলাত আদায় করা হয়েছে। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বরেছেন : যতদূর পর্যন্ত মানুষ, জিন্‌ বা অন্য কিছু মুয়ায্‌যিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই ক্বিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা মুয়ায্‌যিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার উপর দশবার রাহমাত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হল জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন ওয়াজিব হয়ে পড়বে। [১] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুয়ায্‌যিন যখন “আল্লা-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, “আল্লা-হু আকবার” “আল্লা-হু আকবার” এরপর মুয়ায্‌যিন যখন বলেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,” সেও বলে, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,”। অতঃপর মুয়ায্‌যিন যখন বলে, “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ”, সেও বলে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ”, তারপর মুয়ায্‌যিন যখন বলে, “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ”, সে তখন বলে, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ”; পরে মুয়ায্‌যিন যখন বলে, “আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার”, সেও বলে, “আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার”, এরপর মুয়ায্‌যিন যখন বলে, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”, সেও বলে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে ( ও এর উত্তর দেয়ার ও দরূদ পড়ার পর) এ দু’আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু’আ হল : “আল্ল-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত্‌ তা-ম্মাতি ওয়াস্‌ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযী-লাহ, ওয়াব’আস্‌হু মাক্বা-মাম মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদ্‌তাহ্‌” [অর্থাৎ-হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সলাতের প্রভূ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করো ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া’দা তুমি তাঁকে দিয়েছ।] ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আমার শাফা’আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সেনাবাহিনী নিয়ে কোথাও যখন যেতেন ভোরে শত্রুদের উপর) আক্রমণ চালাতেন। ভোরে তিনি কান পেতে আযান শোনার অপেক্ষায় থাকতেন। (যে স্থানে আক্রমণ করার পরিকল্পনা হত) ওখান থেকে আযানের ধ্বনি কানে ভেসে এলে আক্রমণ করতেন না। আর আযানের ধ্বনি কানে ভেসে না এলে আক্রমণ করতেন। একবার তিনি শত্রুর উপর আক্রমণ করার জন্য রওনা হতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি এক ব্যক্তিকে ‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’ বলতে শনলেন। তখন তিনি বললেন, ইসলামের উপর আছে (কারণ আযান মুসলিমরাই দেয়)। এরপর ওই ব্যক্তি বলল, “আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই), রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি (শির্‌ক থেকে বিরত থাকার কারণে) জাহান্নাম থেকে বেঁচে গেলে। সহাবীগণ চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, আযান দান তা বকরীর পালের রাখাল। [১] সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি মুয়ায্‌যিনের আযান শুনে এই দু’আ পড়বে, “আশ্‌হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহূ, রাযিতু বিল্লা-হি রব্বাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা” (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দ্বীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানি ও মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সলাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সলাত আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেন: এই সলাত ওই ব্যক্তির জন্য যে পড়তে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে পড়তে চায়। [১]

【17】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ইমাম যিম্মাদার আর মুয়ায্‌যিন আমানতদার। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! তুমি ইমামদেরকে হিদায়াত দান কর। আর মুয়ায্‌যিনদেরকে মাফ করে দাও”। [১] (‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি (পারিশ্রমিক ও বিনিময়ের লোভ বাদ দিয়ে) শুধু সাওয়াব লাভের আশায় সাত বছর পর্যন্ত আযান দেয় তার জন্য জাহান্নামের মুক্তি লিখে দেয়া হয়। [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সলাতের জন্য আযান দেয় ও সলাত আদায় করে। আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালাকগণকে বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সলাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : ক্বিয়ামাতের দিন তিন ধরনের ব্যক্তি ‘মিস্‌কের’ টিলায় থাকবে। প্রথম সেই গোলাম যে আল্লাহর হাক্ব আদায় করে নিজ মুনীবের হাক্বও আদায় করেছে। দ্বিতীয় সেই ব্যক্তি যে মানুষের সলাত আদায় করায়, আর মানুষরা তার উপর খুশী। আর তৃতীয় হল সেই ব্যক্তি যে দিনরাত সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের জন্য আযান দিয়েছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুয়ায্‌যিন, তাকে মাফ করে দেয়া হবে। তার আযানের আওয়াজের শেষ সীমা পর্যন্ত তার জন্য সাক্ষ্য দেবে প্রতিটা সজীব এ নির্জীব জিনিস। যে সলাতে উপস্থিত হবে, তার জন্য প্রতি সলাতে পঁচিশ সলাতের সাওয়াব লিখা হবে। মাফ করে দেয়া হবে তার দুই সলাতের মধ্যবর্তি সময়ের গুনাহগুলো। [১] কিন্তু নাসায়ী, প্রত্যেক সজীব নির্জীব পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি আরও বলেছেন, তার জন্য সাওয়াব রয়েছে যারা সলাত আদায় করেছে তাদের সমান। [2] উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার জাতির ইমাম নিযুক্ত করে দিন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তাদের ইমাম। তবে ইমামতির সময় তাদের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখ। একজন মুয়ায্‌যিন নিযুক্ত করে নিও, যে আযান দেবার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে না। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মাগরিবের আযানের সময় এ দু’আটি পড়ার জন্য শিখিয়ে দিয়েছেন : “আল্ল-হুম্মা ইন্না হা-যা- ইক্ববা-লু লায়লিকা ওয়া ইদ্‌বা-রু নাহা-রিকা ওয়া আস্‌ওয়া-তু দু’আ-তিকা ফাগফির লী” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ আযানের ধ্বনি তোমার দিনের বিদায় ধ্বনি এবং তোমার মুয়ায্‌যিনের আযানের সময়। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।) [১] আবূ উমামাহ অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন সহাবী একবার বিলাল ইক্বামাত দিতে শুরু করলেন। তিনি যখন “ক্বদ ক্বা-মাতিস সলা-হ্‌” বললেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আক্বা-মাহাল্ল-হু ওয়া আদা-মাহা-“ (আল্লাহ সলাতকে ক্বায়িম করুন এ একে চিরস্থায়ী করুন)। বাকী সব ইক্বামাতে ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে আযানের উত্তরে যেরূপ উল্লেখ রয়েছে সেরূপই বললেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ আল্লাহ তা’আলার দরবার হতে ফেরত দেয়া হয় না। [১] সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দু’সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অথবা (তিনি বলেছেন) কমই ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সময়ের দু’আ ও যুদ্ধের সময়ের দু’আ, যখন পরস্পর কাটাকাটি, মারামারি আরম্ভ হয়ে যায়। আর এক বর্ণনায় আছে বৃষ্টি বর্ষণের সময়ে দু’আ। [১] তবে দারিমীর বর্ণনায় “বৃষ্টির বর্ষণের” কথাটুকু উল্লেখ হয়নি। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আযানদান তা’ তো আমাদের চেয়ে মর্যাদায় বেড়ে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা যেভাবে বলে তোমরাও তোদের সাথে সাথে সেভাবে বলে যাও। আর আযানের উত্তরে শেষে যা খুশী তাই আল্লাহর কাছে চাও, তোমাদেরকে দেয়া হবে। [১]

【18】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, শয়তান যখন সলাতের আযান শুনে তখন সে “রাওহা” না পৌঁছা পর্যন্ত ভাগতে থাকে (অর্থাৎ অনেক দূরে চলে যায়)। বর্ণনাকারী বলেন, “রাওহা” নামক স্থান মাদীনাহ্‌ থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। [১] আলক্বামাহ্ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আমি মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁর মুয়ায্‌যিন আযান দিচ্ছিলেন। মুয়ায্‌যিন যেভাবে (আযানের বাক্যগুলো) বলছিলেন, মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) ও ঠিক সেভাবে বাক্যগুলো বলতে থাকেন। মুয়ায্‌যিন “হাইয়্যা ‘আলাস্‌সলা-হ্‌” বললে মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। মুয়ায্‌যিন “হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ” বললে মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম”। এরপর আর বাকীগুলো তিনি তা-ই বললেন যা মুয়ায্‌যিন বললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (আযানের উত্তরে) এভাবে বলতে শুনেছি। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাচ্ছিলাম, বিলাল দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। আযান শেষে বিলাল চুপ করলে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এর মত বলবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুয়ায্যিনকে, “আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” ও “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ” বলতে শুনতেন তখন বলতেন, ‘আনা আনা’ (‘আর আমিও’ ‘আর আমিও’) অর্থাৎ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি বার বছর পর্যন্ত আযান দিবে তার আযানের বিনিময়ে প্রতিদিন তার ‘আমালনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাতের পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা হবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে মাগরিবের আযানের সময় দু’আ করার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে। [১]

【19】

প্রথম অনুচ্ছেদ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়। তাই তোমরা উম্মু মাকতূমের আযান না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া-দুওয়া করতে থাকবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) অন্ধ ছিলেন। ‘ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না। [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বিলালের আযান ও সুবহে কাযিব তোমাদেরকে সাহরী খাওয়া হতে যেন বিরত না রাখে। কিন্তু সুবহে সাদিক যখন দিগন্তে প্রসারিত হয়। (তখন খাবার-দাবার ছেড়ে দেবে)। [১] মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও আমার চাচাতো ভাই, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা সফরে গেলে আযান দিবে ও ইক্বামাত বলবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। [১] মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বেলন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন : তোমরা সলাত আদায় করবে যেভাবে আমাকে সলাত আদায় করতে দেখছ। সলাতের সময় হলে তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে। এরপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে তোমাদের সলাতের ইমামাত করবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলালকে বলে রাখলেন, সলাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সলাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফাজ্‌রের সলাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলাল জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগল। এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হল তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চল। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। বিলালকে তাক্ববীর দিতে বললেন। বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি তাদের ফাজ্‌রের সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষে নাবী বললেন, সলাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, “সলাত কাযিম কর আমার স্মরণে। [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হবে, তোমরা আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের ইক্বামাত দেয়া শুরু হলে তোমরা দৌড়িয়ে আসবে না, বরং শান্তভাবে হেঁটে আসবে। তারপর যা ইমামের সাথে পাবে তাই পড়বে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে পড়ে নিবে। [১] তবে মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “তোমাদের কেউ সলাতের জন্য বের হলে তখন সে সলাতেই থাকে”। [2]

【20】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, একবার মাক্কার পথে এক রাতে শেষের দিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহন হতে নেমে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলালকে নিযুক্ত করলেন তাদেরকে সলাতের জন্য জাগিয়ে দিতে। বিলালও পরিশেষে ঘুমিয়ে পড়লেন। তারা ঘুমিয়েই রইলেন। অবশেষে তারা যখন জাগলেন; সূর্য উপরে উঠে গেছে। জেগে উঠার পর তারা সকলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন বাহনে উঠতে ও ময়দান পার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকতে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ময়দানে শাইত্বন বিদ্যমান। তারা আরোহীতে সওয়ার হয়ে চলতেই থাকলেন। অবশেষে ময়দান পার হয়ে গেলেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অবতরণ করতে ও উযূ করতে নির্দেশ দিলেন। বিলালকে নির্ধেশ দিলের আযান দিতে অথবা ইক্বামাত দিতে। তারপর তিনি লোকজনদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাত হতে অবসর হওয়ার পর তাদের উপর ভীতি বিহবলতা পরিলক্ষিত হল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে লোকেরা! আল্লাহ আমাদের প্রাণসমূহকে ক্ববয করে নিয়েছিলেন। যদি তিনি ইচ্ছা করতেন এ সময়ের আরো পরেও আমাদের প্রাণসমূহ ফেরত দিতেন। তাই যখনই তোমাদের কেউ সলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা সলাত ভুলে যায়, জেগে উঠেই সে যেন এ সলাত সেভাবেই আদায় করে যেভাবে সময়মত আদায় করত। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্‌রকে লক্ষ্য করে বলেন, শয়তান বিলালের নিকট আসে। সে তখন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিল। তাকে সে শুইয়ে দিল। (এরপর শয়তান ঘুম পাড়াবার জন্য) চাপড়াতে লাগল শিশুদেরকে চাপড়ানের মতো, যতক্ষণ সে ঘুমিয়ে না পড়ে। তারপর তিনি বিলালকে ডাকলেন। বিলালও ঠিক সে কথাই বললেন, যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্‌রকে বলছিলেন। তখন আবূ বাক্‌র (রাঃ) ঘোষণা দিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রসূল। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মুসলিমদের দু’টি ব্যাপার মুয়ায্‌যিনদের ঘাড়ে ঝুলে থাকে। সিয়াম (রোযা) ও সলাত। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ্‌ বিজয়ের দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বাহ্‌ ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেক কোণে দু’আ করলেন, কিন্তু সলাত আদায় করলেন না। পরে বের হয়ে এলেন। কা’বার সামনে দুই রাক্‌’আত সলাত আদায় করলেন এবং বললেন, এটিই ক্বিবলাহ্‌। [১]

【21】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) মুসলিম এ হাদীসটিকে উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ হতেও বর্ণনা করেছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ্‌ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে ও উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ, ‘উসমান ইবনু ত্বালহাহ্‌ আল হাজাবী ও বিলাল ইবনু রাবাহ্‌ (রাঃ) কা’বায় প্রবেশ করলেন। এরপর বিলাল অথবা ‘উসমান (রাঃ) ভিতর থেকে (ভীড় হবার ভয়ে) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার ভিতরে কি করলেন? উত্তরে বিলাল বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দু’টি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সলাত আদায় করেছেন। সে সময় খানায়ে কা’বা ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (এখন তিনটি স্তম্ভের উপর। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মাসজিদে হারাম ছাড়া, আমার এই মাসজিদে সলাত আদায় করা অন্য জায়গায় এক হাজার রাক’আত সলাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মাসজিদে সফর করা যায় না : (১) মাসজিদে হারাম, (২) মাসজিদে আক্বসা ও (৩) আমার এই মাসজিদ (মাসজিদে নাবাবী)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যখানে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যকার একটি বাগান। আর আমার মিম্বার হচ্ছে আমার হাওজে কাওসারের উপর। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, প্রতি শনিবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়ে হেঁটে অথবা সওয়ারীতে আরোহণ করে ‘মাসজিদে কুবায়’ গমন করতেন। আর সেখানে দুই রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হতে মাসজিদই হল সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যাক্তি আল্লাহার উদ্দেশ্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন । [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যাক্তি সকাল-বিকাল মাসজিদে যাবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেক বারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্হা করে রাখবেন । চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায় । [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সালাতে সব চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সব চেয়ে বেশী দূরে । আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করার জন্য মাসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মাদজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালায় আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে । [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন : মাসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হল। এতে বানূ সালিমাহ্ গোত্র মাসজিদের কাছে স্হানান্তরিত হয়ে আসতে চাইল । এ খবর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পোঁছল । তিনি বানূ সালিমাহ্ কে বললেন, খবর পেলাম, তোমরা নাকি জায়গা পরিবর্তন করে মাসজিদের কাছে আসতে চাইছ ? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি । তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে বানূ সালিমাহ্ ! তোমাদের জায়গাতেই তোমরা অবস্হান কর । তোমাদের ‘আমালনামায় তোমাদের পায়ের চিহ্ন গুলো লেখা হয়– এ কথাটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’বার বললেন । [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেই দিন (ক্বিয়ামাতের দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে না : (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়স আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যাক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মাসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যাক্তি যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যাক্তি যে একাকী অবস্হায় আল্লাহর স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’চোখ দিয়ে আশ্রু ঝরে, (৬) যে ব্যাক্তি যাকে কোন ঊচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যাক্তি যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে । যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান কী খরচ করেছে । [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর প্রিয় রসূল বলেছেন : ঘরে অথবা (ব্যস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মাসজিদে জামা’আতের সাথে সালাত আদয় করার সওয়াব পঁচিশ গুণ বেশি । কারণ কোন ব্যাক্তি ভাল করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ করে নিঃস্বার্থভাবে সলাত আদায় করার জন্যই মাসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বদলা একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মাসজিদে পোঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সলাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসাল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ অনবরত এই দু’আ করতে থাকে : ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও । সে আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমাত বর্ষন কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সলাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সলাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে । আর এক বর্ণনার শব্দ হল, ‘যখন কেউ মাসজিদে গেল। আর সলাতের জন্য অবস্হান করল সেখানে, তাহলে সে যেন সলাতেই রইল। আর মালায়িকার দু’আর শব্দাবলী আরো বেশী : “হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তাওবাহ্ কবুল কর ।” এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায় । [১] আবূ উসায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন এই দু’আ পড়েঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উপর তোমার রহমাতের দরজাগুলো খুলে দাও’। যখন মাসজিদ হতে বের হয়ে তখন বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ফাযল বা অনুগ্রহ কামনা করি”। [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করে নেয়। [১] কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর হতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করতেন না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মাসজিদে প্রবেশ করতেন। দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন, তারপর সেখানে বসতেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে মাসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন তার উত্তরে বলে, ‘আল্লাহ করুন তোমার হারানো জিনিস তুমি না পাও। কারণ হারানো জিনিস খুঁজবার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের (পেঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ মালায়িকাহ কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়।[১] (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি ৫৬৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ। (যদি কেউ ফেলে) তার ক্ষতিপূরণ হল ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলা। [১] আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকল ‘আমাল আমার কাছে উপস্থিত করা হলো। তখন আমি তাদের ভাল কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম-রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস ফেলে দেয়া। আর মন্দ কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম, কফ পুঁতে না ফেলে মাসজিদে ফেলে রাখা। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কারণ যতক্ষণ সে তার জায়নামাযে থাকে ততক্ষণ আল্লাহর সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। সে তার ডান দিকেও ফেলবে না, কারণ সেদিকে মালাক আছে। (নিবারণ করতে না পারলে) সে যেন থুথু ফেলে তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নীচে, তারপর মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ তার বাম পায়ের নীচে। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মৃত্যুশয্যায় বলেছেনঃ আল্লাহর অভিশাপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিনত করেছে। [১] জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা ক্ববরসমূহকে মাসজিদে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে একাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সলাত আদায় করবে এবং ঘরকে ক্ববরে পরিণত করবে না। [১]

【22】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানেই ‘ক্বিবলাহ্’।[১] ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আমাদের গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তাঁর হাতে বাই’আত গ্রহণ করলাম। তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম। এরপর আমরা তাঁর কাছে আবেদন করলাম, আমাদের এলাকায় আমাদের একটি গির্জা আছে। এটাকে আমরা এখন কী করব? আমরা তাঁর নিকট তাঁর উযূ করা কিছু পানি তাবাররুক হিসেবে চাইলাম। তিনি পানি আনালেন, উযূ করলেন, কুলি করলেন এবং তা আমাদের জন্য একটি পাত্রে ঢাললেন। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা রওনা হয়ে যাও। তোমরা যখন তোমাদের এলাকায় পৌঁছবে, তোমাদের গির্জাটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। গির্জার জায়গায় পানি ছিটিয়ে দিবে। এরপর একে মাসজিদ বানিয়ে নিবে। আমরা আবেদন করলাম, আমাদের এলাকা অনেক দূরে। ভীষণ খরা। পানি তো শুকিয়ে যাবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আরও পানি মিশিয়ে এ পানি বাড়িয়ে নিবে। এ পানি তার পবিত্রতা ও বারাকাত বৃদ্ধি হওয়া ছাড়া কমাবে না। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহল্লায় মাসজিদ গড়ে তোলার, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ও এতে সুগন্ধি ছড়াবার হুকুম দিয়েছেন। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে মাসজিদ বানিয়ে তা চাকচিক্যময় করে রাখার হুকুম দেয়া হয়নি। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় যেভাবে ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানরা তাদের ‘ইবাদাতখানাকে (স্বর্ণ-রূপা দিয়ে) চাকচিক্যময় করে রাখত তোমরাও একইভাবে তোমাদের মাসজিদ-এর শ্রীবৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বর্ধন করবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের আলামতসমূহের একটি হচ্ছে মানুষেরা মাসজিদ নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সামনে আমার উম্মাতের সাওয়াবগুলো পেশ করা হয়, এমনকি খড়-কুটার সাওয়াবও পেশ করা হয় যা একজন মানুষ মাসজিদ হতে বাইরে ফেলে দেয়। ঠিক একইভাবে আমার সামনে পেশ করা হয় আমার উম্মাতের গুনাহসমূহ। তখন আমি কারও কুরআনের একটি সূরাহ্‌ বা একটি আয়াত যা তাকে দেয়া হয়েছে (তারপর ভুলে গেছে, মুখস্ত করার পর তা ভুলে যাওয়া) এর চেয়ে আর কোন বড় গুনাহ আমি দেখিনি। [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা অন্ধকারে মাসজিদে যায়। [১] আনাস (রাঃ) ইবনু মাজাহ-সাহ্‌ল ইবনু সা’দ ও আনাস (রাঃ) হতে। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাউকে তোমরা যখন নিয়মিত মাসজিদে যাতায়াত করতে দেখবে তখন তার ঈমান আছে বলে সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “আল্লাহর ঘর মাসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে”- (সূরাহ্‌ আত্‌ তাওবাহ্‌ ৯:১৮)। [১] উসমান ইবনু মায্‘ঊন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে খাসি হয়ে যাবার অনুমতি দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, সেই লোক আমাদের মধ্যে নেই, যে কাউকে খাসি করে অথবা নিজে খাসি হয়। বরং আমার উম্মাতের খাসি হওয়া হল সিয়াম পালন করা। ‘উসমান (রাঃ) আবেদন করলেন, তাহলে আমাকে ভ্রমণ করার অনুমতি দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, আমার উম্মাতের ভ্রমন হল আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়া। তারপর ‘উসমান (রাঃ) বললেন, তাহলে আমাকে বৈরাগ্য অবলম্বন করার অনুমতি দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাতের বৈরাগ্য হচ্ছে সলাতের অপেক্ষায় মাসজিদে বসে থাকা। [১] আবদুর রহমান ইবনু ‘আয়িশ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার ‘রবকে’ অতি উত্তম অবস্থায় স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মালা-উল আ‘লা-’ তথা শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্‌ কী ব্যাপারে ঝগড়া করছে? আমি বললাম, তা তো আপনিই ভাল জানেন। তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর হাত আমার দুই কাধের মাঝখানে রাখলেন। হাতের শীতলতা আমি আমার বুকের মধ্যে অনুভব করলাম। আমি তখন আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই জানতে পারলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “এভাবে আমি ইব্‌রহীমকে দেখালাম আকাশমন্ডলী ও জমিনের রাজ্যসমূহ যাতে সে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়”- (সূরাহ্‌ আল আন্‌‘আম ৭৫)। [১] আবদুর রহমান ইবনু ‘আয়িশ, ইবন ‘আব্বাস ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিরমিযীতে এ হাদীসটি কিছু শব্দগত পার্থক্যসহ ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আয়িশ, ইবন ‘আব্বাস ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। আর এতে আরো আছেঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন (অর্থাৎ নবীকে আসমান ও জমিনের জ্ঞান দেয়ার পর জিজ্ঞেস করলেন), হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন “মালা-উল আ‘লা-” কী বিষয়ে তর্ক করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ! জানি, ‘কাফফারাহ্‌’ নিয়ে তর্কবিতর্ক করছে। আর এই কাফ্‌ফারাহ্‌ হল, সলাতের পর মাসজিদে আর এক সলাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা বা যিক্‌র আযকার করার জন্য বসে থাকা। জামা’আতে সলাত আদায় করার জন্য পায়ে হেঁটে চলে যাওয়া। কঠিন সময়ে (যেমন অসুস্থ বা শীতের মৌসুমে) উযুর স্থানে ভাল করে পানি পৌঁছানো। যারা এভাবে উল্লিখিত ‘আমালগুলো করল কল্যাণের উপর বেঁচে থাকবে, কল্যাণের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর তার গুনাহসমূহ হতে এমনভাবে পাক-পবিত্র হয়ে যাবে যেমন আজই তার মা তাকে প্রসব করেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! সলাত আদায় শেষ করার পর এ দু’আটি পড়ে নিবেঃ “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্‌আলুকা ফি’লাল খয়রা-তি ওয়াতার্‌কাল মুন্‌কারা-তি ওয়া হুব্বাল মাসা-কীনা ফায়িযা- আরাত্তা বি’ইবা-দিকা ফিত্‌নাতান্‌ ফাক্ববিয্‌নী ইলায়কা গয়রা মাফতূন”- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ‘নেক কাজ’ করার, ‘বদ কাজ’ ছাড়ার, গরীব-মিসক্বীনদের বন্ধুত্বের আবেদন করছি। যখন তুমি বান্দাদের মধ্যে পথভ্রষ্ঠতা ফিত্‌নাহ্‌-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করবে তখন আমাকে ফিত্‌নামুক্ত রেখে তোমার কাছে উঠিয়ে নিবে।) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বললেন, ‘দারাজাত’ হল সালামের প্রসার করা, গরীবকে খাবার দেয়া, রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সলাত আদায় করা। [১] মিশকাতের সংকলক বলেন, যে হাদীস ‘আবদুর রহমান হতে মাসাবীহ-তে বর্ণিত হয়েছে তা আমি শারহে সুন্নাহ ছাড়া আর কোন কিতাবে দেখিনি। আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হয়েছে সে আল্লাহর জিম্মাদারিতে রয়েছে, যে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে উঠিয়ে না নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ না করান। অথবা তাকে ফিরিয়ে আনেন, যে সাওয়াব বা যে গনীমাতের মাল সে যুদ্ধে লাভ করেছে তার সাথে। (২) যে ব্যক্তি মাসজিদে গমন করেছে সে আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে এবং (৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে, সে আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘর হতে উযূ করে ফার্‌য সলাত আদায় করার জন্য বের হয়েছে তার সাওয়াব একজন ইহরাম বাঁধা হাজির সাওয়াবের সমান। আর যে ব্যক্তি সলাতুয্ যুহার জন্য বের হয়েছে আর এই সলাত ব্যতীত অন্য কোন জিনিস তাকে এদিকে ধাবিত করে না সে সাওয়াব পাবে একজন 'উমরাহকারীর সমান। এক সলাতের পর অন্য সলাত আদায় করা, যার মাঝখানে কোন বেহুদা কথা বলেনি তা "ইল্লীয়ীন"-এ লেখা হয়ে থাকে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন জান্নাতের বাগানের কাছ দিয়ে যাবে, এর ফল খাবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের বাগান কী? উত্তরে তিনি বললেনঃ মাসজিদ। আবার জিজ্ঞেস করা হল এর ফল খাওয়া কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "সুব্‌হা-নাল্ল-হি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার" - এ বাক্য বলা। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাসজিদে যে কাজের নিয়্যাত করে আসবে, সে সেই কাজেরই অংশ পাবে। [১] ফাত্বিমাহ্ বিনতু হুসায়ন (রাঃ) তিনি তার দাদী ফাত্বিমাতুল কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ফাত্বিমাতুল কুবরা (রাঃ) বলেছেন, (আমার পিতা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, মুহাম্মাদের (অর্থাৎ নিজের) উপর সালাম ও দরূদ পাঠ করতেন। বলতেন, "রব্বিগ্‌ফির্ লী যুনূবী ওয়াফ্‌তাহ লী আব্‌ওয়াবা রহমাতিকা" (অর্থাৎ- হে পরওয়ারদিগার! আমার গুনাহসমূহ মাফ কর। তোমার রহমাতের দুয়ার আমার জন্য খুলে দাও।)। তিনি যখন মাসজিদ হতে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করতেন। আর বলতেন, "রব্বিগ্‌ফির্ লী যুনূবী ওয়াফ্‌তাহ লী আব্‌ওয়াবা ফাযলিকা" (অর্থাৎ- হে পরওয়ারদিগার! আমার গুনাহসমূহ মাফ করে দাও। আমার জন্য দয়ার দুয়ার খুলে দাও।)। [১] কিন্তু আহমাদ ও ইবনু মাজার বর্ণনায় রয়েছে, ফাত্বিমাতুল কুবরা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন এবং এভাবে মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের উপর দরূদের পরিবর্তে বলতেনঃ আল্লাহর নামে এবং শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহ তা'আলার রাসূলের উপর। [2] তিরমিযী বলেন, হাদীসটির সানাদ মুত্তাসিল নয়। কেননা নাতনী ফাত্বিমাহ্ তার দাদী ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ পাননি। আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে, ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং জুমু'আর দিন জুমু'আর সলাতের পূর্বে গোল হয়ে বৃত্তাকারে বসতে নিষেধ করেছেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাউকে মাসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমার এ ব্যবসায়ে তোমাকে লাভবান না করুন। এভাবে কাউকে মাসজিদে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তা তোমাকে ফেরত না দিন। [১] হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ও তথায় কবিতা পাঠ ও হাদ্দ-এর শাস্তি কার্যকর করতে নিষেধ করেছেন। [১] সাহাবী জাবির (রাঃ) আর মাসাবীহ-তে সহাবী জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। মু‘আবিয়াহ্ ইবনু কুররাহ্ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'টি গাছ অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসূন খেতে নিষেধ করেছে। যে তা খাবে সে যেন আমাদের মাসজিদের কাছে না আসে। তিনি আরো বলেছেন, যদি তোমাদের একান্তই খেতে হয় তবে পাকিয়ে দুর্গন্ধ দূর করে খাও। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ববরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া দুনিয়ার আর সব জায়গায়ই মাসজিদ। কাজেই সব জায়গায়ই সলাত আদায় করা যায়। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি জায়গায় সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (১)আবর্জনা ফেলার জায়গায়, (২)জানোয়ার যবাহ করার জায়গায় (কসাইখানায়), (৩)ক্ববরস্থানে, (৪)রাস্তার মাঝখানে, (৫)গোসলখানায়, (৬)উট বাঁধার জায়গায় এবং (৭)খানায়ে কা'বার ছাদে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সলাত আদায় করতে পার, উট বাঁধার স্থানে সলাত আদায় করবে না। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন ঐ সকল স্ত্রী লোককে যারা (ঘন ঘন) ক্ববর যিয়ারত করতে যায় এবং ঐ সকল লোককেও অভিশাপ দিয়েছেন যারা কবরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করে বা তাতে বাতি জ্বালায়। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একজন ‘আলিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম ? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন। তিনি বললেন, যতক্ষণ জিবরীল আমীন না আসবেন আমি নীরব থাকবো। তিনি নীরব থাকলেন। এর মধ্যে জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) আসলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে ঐ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। তবে আমি আমার রবকে জিজ্ঞেস করব। এরপর জিবরীল (‘আলাইহিস সালাম) বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আল্লাহর এত নিকটে গিয়েছিলাম যা কোন দিন আর যাইনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে হে জিবরীল? তিনি বললেন, তখন আমার আর তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হল বাজার, আর সবচেয়ে উত্তম স্থান হল মাসজিদ। ইবনু হিব্বান; তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণনা করেছেন। [১]

【23】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে আমার এই মাসজিদে আসে এবং শুধু ভাল কাজের উদ্দেশ্যেই আসে, হয় সে ‘ইল্‌ম শিক্ষা দেয় অথবা নিজে শিখে, সে আল্লাহর পথে জিহাদের অংশগ্রহণকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসে সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে অন্যের জিনিসকে হিংসার চোখে দেখে (কিন্তু ভোগ করতে পারে না)। [১] হাসান বসরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মাসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকেদের গল্প- গুজবে বসবে না। আল্লাহ তা’আলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই। [১] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি মাসজিদে শুয়ে আছি, এমন সময় আমাকে একজন লোক কংকর মারল। আমি জেগে উঠে দেখি তিনি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন, যাও- ঐ দু ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাদেরকে নিয়ে আসলাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন গোত্রের বা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা তায়িফের লোক। ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি তোমরা মাদীনার লোক হতে তাহলে আমি তোমাদেরকে নিশ্চয় কঠিন শাস্তি দিতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে তোমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ। [১] ইমাম মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) মাসজিদে নাবাবীর পাশে একটি বড় চত্বর বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল ‘বুত্বায়হা’। তিনি লোকদেরকে বলে রেখেছিলেন, যে ব্যক্তি বাজে কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করবে অথবা উঁচু কন্ঠে কথা বলতে চায় সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিবলার দিকে থুথু পতিত হতে দেখলেন। এতে তিনি ভীষণ রাগ করলেন। তার চেহারায় এ রাগ প্রকাশ পেল। তিনি উঠে গিয়ে নিজের হাতে তা খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন সলাতে দঁড়ায় তার ‘রবের’ সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। আর তখন তার ‘রব’ থাকেন তার ও ক্বিবলার মাঝে। অতএব কেউ যেন তার ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে ফেলে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের চাদরের এক পাশ ধরলেন, এতে থুথু ফেললেন, তারপর চাদরের একাংশকে অপরাংশ দ্বারা মলে দিলেন এবং বললেনঃ সে যেন এভাবে থুথু নিঃশেষ করে দেয়। [১] সায়িব ইবনু খল্লাদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবীগনের মধ্যে একজন বলেন, এক লোক কিছু লোকের ইমামাত করছিল। সে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখলেন এবং ঐ লোকগুলোকে বললেন, এ ব্যক্তি যেন আর তোমাদের সলাত আদায় না করায়। পরে এই লোক তাদের সলাত আদায় করাতে চাইলে লোকেরা তাকে সলাত আদায় করতে নিষেধ করল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ তাকে জানিয়ে দিল। সে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ (ঘটনা ঠিক)। রাবী (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ কথাও বলেছেন, তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নিত্য দিনের অভ্যাসের বিপরীত) ফাজ্‌রের সলাতে আসতে এতটা দেরী করলেন যে, সূর্য প্রায় উঠে উঠে। এর মধ্যে তাড়াহুড়া করে তিনি আসলেন। সাথে সাথে সলাতের ইক্বামাত দেয়া হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষিপ্ত করে সলাত আদায় করলেন। সালাম দেয়ার পর তিনি উচ্চ কণ্ঠে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা সলাতের কাতারে যে যেভাবে আছ সেভাবে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরলেন ও বললেন, শুন! আজ ভোরে তোমাদের কাছে আসতে যে কারণ আমার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা হল, আমি রাতে ঘুম থেকে উঠলাম। উযূ করলাম। পরে আমার পক্ষে যা সম্ভব হল সলাত আদায় করলাম। সলাতে আমার তন্দ্রা ধরল, ঘুমে অসাড় হয়ে পড়লাম। এ সময় দেখি, আমি আমার ‘প্রতিপালক’ তাবারাকা ওয়া তা’আলার কাছে উপস্থিত। তিনি খুবই উত্তম অবস্থায় আছেন। তিনি আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মদ! আমি উত্তর দিলাম, হে আমার ‘রব’, আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, “মালা-উল আ’লা-” অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্‌ কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি উত্তরে বললাম, আমি তো কিছু জানি না, হে আমার ‘রব’! এভাবে তিনি আমাকে তিনবার জিজ্ঞেস করলেন। তারপর দেখি, তিনি আমার দু’কাঁধের মাঝখানে তাঁর হাত রেখে দিয়েছেন। এতে আমি আমার সিনায় তাঁর আঙ্গুলের শীতলতা অনুভব করতে লাগলাম। আমার নিকট তখন সব জিনিস প্রকাশ হয়ে পড়ল। আমি সকল ব্যাপার বুঝে গেলাম। তারপর তিনি আবার আমাকে ডাকলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে পরওয়ারদিগার। এখন বল দেখি “মালা-উল আ’লা-” কী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে? আমি বললাম, গুনাহ মিটিয়ে দেবার ব্যাপারসমূহ নিয়ে। আল্লাহ তা’আলা বললেন, সে সব জিনিস কী? আমি বললাম, সলাতের জন্য মাসজিদে যাওয়া, সলাতের পরে দু’আ ইত্যাদির জন্য মাসজিদে বসা এবং শীতের বা অন্য কারণে উযূ করা কষ্টকর হলেও তা উপেক্ষা করে উযূ করা। আবার আল্লাহ তা’আলা জিজ্ঞেস করলেন, আর কী ব্যাপারে তারা বিতর্ক করছে? আমি বললাম, দারাজাত অর্থাৎ মর্যাদার ব্যাপারে। তিনি বললেন, সে সব কী? আমি বললাম, গরীব-মিসকীনদের খাবার দেয়া, ভদ্রভাবে কথা বলা, রাতে মানুষ যখন ঘুমায় সে সময় উঠে (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় করা। তারপর আবার আল্লাহ তা’আলা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তোমার যা চাওয়ার তা নিবেদন কর। তাই আমি দু’আ করলামঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নেক কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার, মিসকীনের বন্ধুত্ব, তোমার ক্ষমা ও রহমাত চাই। আর যখন তুমি কোন জাতির মধ্যে গুমরাহী ছড়াতে চাও, তার আগে আমাকে গুমরাহী ছাড়া উঠিয়ে নিও। আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা আর ঐ ব্যক্তির ভালোবাসা চাই, যে তোমাকে ভালোবাসে, আর আমি এমন ‘আমালকে ভালবাসতে চাই যে ‘আমাল আমাকে তোমার ভালোবাসার নিকটবর্তী করবে”। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ স্বপ্ন ষোলআনা সত্য। তাই তোমরা এ কথা স্মরণ রাখবে, আর লোকদেরকে শিখাবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ চেহারার ও তাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শয়তান হতে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেউ এ দু’আ পাঠ করলে শয়তান বলে, আমার নিকট হতে সে সারা দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল। [১] আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’আ করলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার ক্ববরকে ভূঁত বানিও না যা লোকেরা পূজা করবে। আল্লাহ্‌র কঠিন রোষাণলে পতিত হবে সেই জাতি যারা তাদের নবীর ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে।” ইমাম মালিক মুরসাল হিসেবে। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘হিত্বান’-এ সলাত আদায় করতে ভালোবাসতেন। বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘হিত্বান’ অর্থ বাগান। [৭৬৫] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব। তিনি আরো বলেছেন, আমরা এ হাদীসটি হাসান ইবনু আবূ জাফর ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে অবগত নই। আর হাসানকে ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সা’দ প্রমুখ য’ইফ বলেছেন।[১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি তার ঘরে সলাত আদায় করে, তাহলে তার এ সলাত এক সলাতের সমান। আর যদি সে এলাকার পাঞ্জেগানা মাসজিদে সলাত আদায় করে তাহলে তার এই সলাত পঁচিশ সলাতের সমান। আর যদি জুমু’আহ মাসজিদে সলাত আদায় করে তাহলে তার সলাত পাঁচশত সলাতের সমান। সে যদি মাসজিদে আক্বসা অর্থাৎ বায়তুল মাকদিসে সলাত আদায় করে, তার এ সলাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমান। আর যদি আমার মাসজিদে (মাসজিদে নাবাবী) সলাত আদায় করে তার এ সলাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমান। আর সে যদি মাসজিদুল হারামে সলাত আদায় করে তবে তার সলাত এক লাখ সলাতের সমান। [১] আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, ‘মাসজিদুল হারাম’। আমি বললাম, তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেন, ‘মাসজিদুল আক্বসা’। আমি বললাম, এ উভয় মাসজিদ তৈরির মধ্যে সময়ের পার্থক্য কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছরের পার্থক্য। তারপর দুনিয়ার সব জায়গায়ই তোমার জন্য মাসজিদ, সলাতের সময় যেখানেই হবে সেখানেই সলাত আদায় করে নেবে। [১]

【24】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এক কাপড়ে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) এর ঘরে সলাত আদায় করছিলেন। তিনি এ কাপড়টি নিজের শরীরে এভাবে জড়িয়ে নিলেন যে, কাপড়ের দু’দিক তাঁর কাঁধের উপর ছিল। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতে কাপড়ের কোন অংশ কাঁধের উপর না রেখে তোমাদের কেউ যেন এক কাপড়ে সলাত আদায় না করে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক কাপড়ে সলাত আদায় করবে সে যেন কাপড়ের দু’কোণ কাঁধের উপর দিয়ে বিপরীত দিক হতে টেনে এনে জড়িয়ে নেয়। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি চাদর পরে সলাত আদায় করলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মত কিছু কাজ করা ছিল। সলাতে এই কারুকার্যের দিকে তিনি একবার তাকালেন। সলাত শেষ করার পর তিনি বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার ‘আমবিজানিয়াত’ নিয়ে আস। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার সলাতে মনোযোগী হতে বিরত রেখেছে। [৭৭১] বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সলাতে চাদরের কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সলাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট করতে পারে।[১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ্‌ সিদ্দীকা (রাঃ) এর একটি পর্দার কাপড় ছিল। সেটি দিয়ে তিনি ঘরের একদিকে ঢেকে রেখেছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার এ পর্দাখানি এখান থেকে সরিয়ে ফেল। কারণ এর ছবিগুলো সব সময় সলাতে আমার চোখে পড়তে থাকে। [১] উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রেশমের একটি ‘কাবা’ হাদীয়া দেয়া হল। তিনি সেটি পরে সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে তিনি কাবাটিকে অত্যন্ত অপছন্দনীয়ভাবে শরীর থেকে খুলে ফেললেন। এরপর তিনি বললেন, এ ‘কাবা’ মুত্তাকীদের পরা ঠিক নয়। [১]

【25】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

সালামাহ্ ইবনু আক্ওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। আমি কি(লুঙ্গি পায়জামা ছাড়া) এক কাপড়ে সলাত আদায় করে নিতে পারি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিউত্তরে বললেন হ্যাঁ, আদায় করে নিতে পার। তবে একটি কাঁটা দিয়ে হলেও (গলার নীচে কাপড়ের দু’ দিক) আটকিয়ে নিও। [১] এ হাদিসটি ঠিক এভাবে নাসায়ীও বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি(পায়ের গিটের নীচে) ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, যাও উযূ করে আস। লোকটি গিয়ে উযূ করে আসল। এ সময় এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি এই লোকটিকে কেন উযূ করতে বললেন (অথচ তাঁর উযূ ছিল)? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তাঁর লুঙ্গি (গিটের নীচে) ঝুলিয়ে রেখে সলাত আদায় করছিল। আর যে ব্যক্তি লুঙ্গি ঝুলিয়ে রেখে সলাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর সলাত ক্ববূল করেন না। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘ওড়না’ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের সলাত কবূল হয় না। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাদের কাছে যদি লুঙ্গি পায়জামার কোন কাপড় ভিতরে পরার জন্য না থাকে, শুধু জামা ও ওড়না পরে তারা সলাত আদায় করতে পারবে কিনা? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, সলাত হয়ে যাবে। তবে জামা এতটা লম্বা হতে হবে যাতে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢেকে যায়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। [১] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জুতা-মোজাসহ সলাত আদায় করে ইয়াহূদীদের বিপরীত কাজ করবে। কারণ জুতা-মোজা পরে তারা সলাত আদায় করে না। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণেরকে নিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি পা থেকে জুতা খুলে বাম পাশে রেখে দিলেন। তা দেখে লোকেরাও নিজেদের জুতা খুলে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে বললেন, তোমরা কেন নিজেদের পায়ের জুতা খুলে ফেললে? তারা উত্তর দিলেন, আপনাকে জুতা খুলে ফেলতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জিবরীল এসে আমাকে খবর দিলেন, আমার জুতায় নাপাকী আছে। তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে আসে তখন সে যেন তাঁর জুতায় নাপাক আছে কিনা তা দেখে নেয়। যদি তাঁর জুতায় নাপাকী দেখে তাহলে সে যেন তা মুছে ফেলে। এরপর জুতা সহকারেই সলাত আদায় করে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে সে যেন তার জুতা তার ডান পাশেও না রাখে, বাম পাশেও না রাখে। কারণ এদিক অন্য কারও ডান দিক হবে। তবে যদি বাম দিকে কেউ না থাকে (তাহলে বামদিকে রেখে দিবে)। অন্যথায় সে যেন জুতা দু’পায়ের মধ্যে (সামান্য সামনে) রেখে দেয়। আর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো এসেছে : (যদি জুতা পাক-পবিত্র হয় তা না খুলে) পায়ে রেখেই সলাত আদায় করবে। [১] ইবনু মাজাহ্ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【26】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। দেখলাম, তিনি একটি মাদুরের উপর সলাত আদায় করছেন, তার উপরই সাজদাহ্‌ দিচ্ছেন। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম তিনি এক প্রস্থ কাপড় বিপরীত দিক হতে কাঁধের উপর পেঁচিয়ে সলাত আদায় করছেন। [১] ‘আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খালি পায়ে ও জুতা সহকারে উভয় অবস্থায় সলাত আদায় করতে দেখেছি। [১] মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের সাথে এক কাপড়ে সলাত আদায় করলেন। তিনি তা গিরা লাগিয়ে পিছনে ঘাড়ের উপর বেঁধে রেখেছিলেন। তখন তার অন্যান্য কাপড় খুঁটির উপর রাখা ছিল। একজন তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি এক লুঙ্গিতেই সলাত আদায় করলেন (অথচ আপনার আরও কাপড় ছিল)? উত্তরে তিনি বললেন, তোমার মত আহাম্মককে দেখাবার জন্য আমি এ কাজ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কালে আমাদের কার কাছেই বা দু’টি কাপড় ছিল? [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, এক কাপড়ে সলাত আদায় করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমরা এভাবে এক কাপড়েই সলাত আদায় করেছি। তাতে আমাদেরকে দোষারোপ করা হয়নি। এ কথার উপর ইবনু মাস্‌’ঊদ (রাঃ) বললেন, যখন আমাদের কাপড়ের অভাব ছিল তখন এক কাপড়ে সলাত পড়া হত। আল্লাহ তা’আলা এখন আমাদেরকে প্রাচূর্য ও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছেন। তাই এখন দুই কাপড়েই সলাত আদায় করা উত্তম। [১]

【27】

প্রথম অনুচ্ছেদ

(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকালে ঈদগাহে চলে যেতেন। যাবার সময় তাঁর সাথে একটি বর্শা নিয়ে যাওয়া হত। এ বর্শা সামনে রেখে তিনি সলাত আদায় করতেন। [১] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার মাক্কার ‘আবতাহ্‌’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি চামড়ার লাল তাঁবুতে দেখতে পেলাম। বিলালকে দেখলাম রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূর পানি হাতে তুলে নিতে। আর (অন্যান্য) লোকদেরকে দেখলাম উযূর অবশিষ্ট পানি নিবার জন্য কাড়াকাড়ি করছে। যারা তাঁর ব্যবহারের অবশিষ্ট উযূর পানি আনতে পেরেছে তারাই তা’ বারাকাতের জন্যে সারা শরীর ও মুখমণ্ডলে মাখছে। আর যারা উযূর পানি আনতে পারেনি তারা সঙ্গী সাথীদের (যারা পানি পেয়েছে) ভিজা হাত স্পর্শ করছে। এরপর আমি বিলালকে দেখলাম, হাতে একটি বর্শা নিল ও তা মাটিতে পুঁতে দিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এলেন। কাপড়ের কিনারা সামলে লোকদেরকে নিয়ে দুই রাক’আত সলাত আদায় করলেন। সে বর্শাটি তখন তাঁর সামনে ছিল। এ সময় মানুষ ও জন্তু-জানোয়ারকে দেখলাম বর্শার বাইরে দিয়ে যাতায়াত করছে। [১] নাফি‘ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খোলা জায়গায় সলাত আদায় করলে) নিজের উটকে সামনে আড়াআড়িভাবে বসিয়ে উটের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করতেন। বুখারীর বর্ণনায় এ কথাও রয়েছে যে, নাফি’ বলেন, আমি ইবনু ‘উমারকে জিজ্ঞেস করলাম, উট মাঠে চরাতে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন কি করতেন? উত্তরে ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের ‘হাওদা’ নিতেন এবং হাওদার পিছনের ডাণ্ডাকে সামনে রেখে সলাত আদায় করতেন। [১] ত্বলহাহ্ (রাঃ) ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সলাত আদায় করার সময় হাওদার পিছনের দিকে লাঠির মত কোন কিছু সুতরাহ্‌ বানিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সলাত আদায় করবে। এরপর তার সামনে দিয়ে কে এলো আর গেল তার কোন পরোয়া করবে না। [১] আবূ জুহায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সলাত আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাতায়াতকারী এতে কি গুনাহ হয়, যদি জানত তাহলে সে সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে যাতায়াত অপেক্ষা চল্লিশ... পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করত। এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ নাযর বলেন, ঊর্ধ্বতন রাবী চল্লিশ দিন অথবা চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর বলেছেন আমার তা মনে নেই। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কেউ কিছুর আড়াল দিয়ে সলাত শুরু করে, আর কেউ আড়ালের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে চায় তাকে বাধা দিবে। সে বাধা অমান্য করলে তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কারণ চলাচলকারী (মানুষের আকৃতিতে) শায়ত্বান। এ বর্ণনাটি বুখারীর। মুসলিমেও এ মর্মে বর্ণনা আছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : নারী, গাধা ও কুকুর সলাত (সামনে দিয়ে অতিক্রম করে) নষ্ট করে। আর এর থেকে রক্ষা করে হাওদার (পেছনে দন্ডায়মান) ডান্ডার ন্যায় কিছু বস্তু। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সলাত আদায় করতেন। আমি তাঁর ও ক্বিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম আড়াঅড়িভাবে লাশ পড়ে থাকার মতো। [১] (হাদীসটি সহীহ: বুখারী ৫১৫, মুসলিম ৫১২।) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন একবার আমি একটি মাদি গাধার উপর আরোহণ করে এলাম। তখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার উপক্রম হয়ে গেছি। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় অন্যান্য লোকজনসহ কোন দেয়ালের আড়াল ছাড়া সলাত আদায় করছিলেন। আমি কাতারের এক পাশের সামনে দিয়ে চলে গেলাম। এরপর গাধাটাকে চরাবার জন্য ছেড়ে দিয়ে আমি কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমার এই কাজে কেউই কোন আপত্তি জানাল না। [১]

【28】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন সলাত আদায় করবে সে যেন তার সামনে কিছু গেড়ে দেয়। কিছু যদি না পায় তাহলে তার লাঠিটা যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি তার সাথে লাঠিও না থাকে, তাহলে সে যেন সামনে একটা রেখা টেনে দেয়। এরপর তার সামনে দিয়ে কিছু যাতায়াত করলে তার কোন ক্ষতি হবে না। [১] সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ সুতরাহ্ দাঁড় করিয়ে সলাত আদায় করলে সে যেন সুতরার কাছাকাছি দাঁড়ায়। তাহলে শয়তান তার সলাত নষ্ট করতে পারবে না। [১] মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনও কোন কাঠ, স্তম্ভ অথবা কোন গাছকে (সোজাসুজি) সামনে রেখে সলাত আদায় করতে দেখিনি। যখনই দেখেছি তিনি, এগুলকে নিজের ডান ভ্রু অথবা বাম ভ্রুর সোজাসুজি রেখেছেন। নাক বরাবর সোজা রাখেননি। [১] ফাযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। আর আমরা তখন বনে অবস্থান করছিলাম। তাঁর সাথে ছিলেন আমার পিতা ‘আব্বাস (রাঃ)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ময়দানে সলাত আদায় করলেন, সামনে কোন আড়াল ছিল না। সে সময় আমাদের একটা গাধী ও একটি কুকুর তাঁর সামনে খেলাধূলা করছিল। কিন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদিকে কোন দৃষ্টি দিলেন না। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কোন কিছুই সলাত নষ্ট করতে পারে না। এরপরও সলাতের সম্মুখ দিয়ে কিছু যাতায়াত করলে সাধ্য অনুযায়ী তাকে বাধা দিবে। নিশ্চয়ই তা শায়ত্বন। [১]

【29】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ঘুমাতাম। আর আমার দু’ পা থাকত তাঁর ক্বিবলার দিকে। তিনি যখন সাজদাহ্‌ দিতেন আমাকে টোকা দিতেন। আমি আমার পা দু’টি গুটিয়ে নিতাম। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি আমার দু’ পা লম্বা করে দিতাম। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, সে সময় ঘরে আলো থাকত না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সামনে দিয়ে যাতায়াত কত বড় গুনাহ তা যদি তোমাদের কেউ জানতো, তাহলে সে (সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে) যাতায়াতের চেয়ে এক শত বছর পর্যন্ত (এক জায়গায়) দাঁড়িয়ে থাকাকে বেশী উত্তম মনে করতো। (ইবনু মাজাহ্)[১] কা‘ব ইবনু আহবার (রহঃ) তিনি বলেন, যদি সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো তার এই অপরাধের শাস্তি কি, তাহলে সে নিজের জন্য ভূগর্ভে ধ্বসে যাওয়াকে সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে যাবার চেয়েও উত্তম মনে করতো। অন্য এক বর্ণনায় ‘উত্তম’-এর স্থানে ‘বেশী সহজ’ শব্দ এসেছে। (মালিক)[১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আড়াল ছাড়া (সুতরাহ্) সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, আর তার সম্মুখ দিয়ে গাধা, শূকর, ইয়াহূদী, মাজূসী ও স্ত্রীলোক অতিক্রম করে তাহলে তার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভেঙ্গে যাবে। তবে যদি একটি কঙ্কর নিক্ষেপের পরিমাণ দূর দিয়ে যায় তাহলে কোন দোষ নেই। (আবূ দাঊদ)[১]

【30】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মাসজিদের এক কোণে বসা ছিলেন। এরপর লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘ওয়া ‘আলায়কাস্ সালা-ম; যাও, আবার সলাত আদায় কর। তোমার সলাত হয়নি।’’ সে আবার গেল ও সলাত আদায় করলো। আবার এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলো। তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘ওয়া ‘আলায়কাস্ সালা-ম; আবার যাও, পুনরায় সলাত আদায় কর। তোমার সলাত হয়নি।’’ এরপর তৃতীয়বার কিংবা এর পরের বার লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ইচ্ছা করবে (প্রথম) ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে। এরপর ক্বিবলার দিকে দাঁড়িয়ে তাকবীর তাহরীমা বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা পড়া তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ‘ করবে। রুকূ‘তে প্রশান্তির সাথে থাকবে। এরপর মাথা উঠাবে। সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করবে। সাজদাতে স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে থাকবে। এরপর দ্বিতীয় সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করবে। সাজদায় স্থির থাকবে। আবার মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এভাবে তুমি তোমার সব সলাত আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর ও ক্বিরাআত (কিরআত) ‘‘আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন’’ দ্বারা সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন। তিনি যখন রুকূ‘ করতেন মাথা খুব উপরেও করতেন না, আবার বেশী নীচুও করতেন না, মাঝামাঝি রাখতেন। রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় যেতেন না। আবার সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সাজদায় যেতেন না। প্রত্যেক দু’ রাক্‘আতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন। শায়ত্বনের (শয়তানের) মতো কুকুর বসা বসতে নিষেধ করতেন। সাজদায় পশুর মতো মাটিতে দু’ হাত বিছিয়ে দিতেও নিষেধ করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করতেন সালামের মাধ্যমে। (মুসলিম)[১] আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর মধ্যে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আপনাদের চেয়ে বেশি আমি মনে রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু্’ হাত দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকূ‘ করার সময় পিঠ নুইয়ে রেখে দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। আর মাথা উঠিয়ে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রতিটি গ্রন্থি স্ব-স্ব স্থানে চলে যেত। তারপর তিনি সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করতেন। এ সময় হাত দু’টি মাটির সাথে বিছিয়েও রাখতেন না, আবার পাঁজরের সাথে মিশাতেনও না এবং দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা ক্বিবলামুখী করে রাখতেন। এরপর দু’ রাক্‘আতের পরে যখন বসতেন বাম পায়ের উপরে বসতেন ডান পা খাড়া রাখতেন। সর্বশেষ রাক্‘আতে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে আর অপর পা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর (ভর করে) বসতেন। (বুখারী)[১] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার সময় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার তাকবীরে ও রুকূ‘ হতে উঠার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হামদু’’ বলেও দু’ হাত একইভাবে উঠাতেন। কিন্তু সাজদার সময় এরূপ করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[১] নাফি' (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় শুরু করতে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন এবং দু’ হাত উপরে উঠাতেন। রুকূ‘ হতে উঠার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলার সময়ও দুই হাত উঠাতেন। এরপর দু’ রাক্‘আত আদায় করে দাঁড়াবার সময়ও দু’ হাত উপরে উঠাতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এসব কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে জানিয়েছেন। (বুখারী)[১] মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কান পর্যন্ত উপরে উঠাতেন। আর রুকূ‘ হতে মাথা উঠাবার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলেও এরূপ করতেন। আর এক বর্ণনায় আছে, এমনকি তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[১] মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেজোড় রাক্‘আতে সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) হতে উঠে দাঁড়াবার আগে কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসতেন। (বুখারী)[১] ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-কে দেখেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শুরু করার সময় দু’হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। এরপর হাত কাপরের ভিতর ঢেকে নিলেন এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। তারপর রু’কুতে যাবার সময় দু’হাত বের করে উপরের দিকে উঠালেন ও ‘তাকবীর বলে রু’কুতে গেলেন। রুকু’ হতে উঠার সময় “সামি’আল্লাহ-হু লিমান হামিদাহ” বলে আবার দু’ হাত উপরে উঠালেন। তারপর দু’হাতের মাঝে মাথা রেখে সাজদাহ করলেন। [১] সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, মানুষদেরকে হুকুম দেয়া হতো সলাত আদায়কারী যেন সলাতে তার ডান হাত বাম যিরা-এর উপর রাখে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। আবার রু’কুতে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। রুকু’ হতে তাঁর পিঠ উঠাবার সময় “সামি’আল্লাহ-হু লিমান হামিদাহ” এবং দাঁড়ানো অবস্থায় “রব্বানা –লাকাল হাম্‌দ” বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সাজদাহ্ হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সাজদাহ্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সলাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সলাতে তিনি এরূপ করতেন। যখন দু’রাক্’আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বোত্তম সলাত হল দীর্ঘ ক্বিয়াম (দাঁড়ানো) সম্বলিত সলাত। [১]

【31】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেন, তিনি সলাতের জন্য দাঁড়ালে দু’হাত উঠাতেন। এমনকি তা দু’কাধঁ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন। এরপর “ক্বিরাআত” পাঠ করতেন। এরপর রুকু’তে যেতেন। দু’হাতের তালু দু’হাটুর উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না আবার উপরের দিকেও উঠাতেন না। এরপর (রুকূ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ”। তারপর সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন। এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, “আল্লাহু-আকবার”। এরপর সাজদাহ্‌ করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা করে রাখতেন। দু’পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা উঠাতেন। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন। যাতে তাঁর সমস্ত হাড় নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক’আতও এভাবে আদায় করতেন। দু’রাক্’আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠাতেন। যেভাবে প্রথম সলাত শুরু করার সময় করতেন। এরপর তার বাকী সলাত এভাবে আদায় করতেন। শেষ রাক্’আতে শেষ সাজদার পর, যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সলাত আদায় করতেন। [১] আর তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ এ বর্ণনাটিকে এই অর্থে নকল করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। আবূ দাঊদের আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ এর হাদীসে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ করলেন। দু’হাত দিয়ে দু’হাটু আঁকড়ে মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’হাত ধনুকের মত করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ) আরও বলেন, এরপর তিনি সাজদাহ্‌ করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’হাতকে পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’উরুকে রাখেলন পেট থেকে আলাদা করে। এভাবে তিনি সাজদাহ্‌ করলেন। তারপর ইনি বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ ভাগকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি দুই রাক্’আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন। ডান পা রাখতেন খাঁড়া করে। তিনি চতুর্থ রাক’আতে বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন, আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)। [2] ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আদায় করার জন্য দাঁড়াবার সময় দেখেছেন। তিনি তার দু’ হাত কাঁধ বরাবর উপরে উঠালেন। দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুটি কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘আল্ল-হু আকবার’ বললেন। [১] আবূ দাঊদের আরেক বর্ননায় আছে বৃদ্ধাঙ্গুলকে কানের লতি পর্যন্ত উঠালেন। [2] ক্ববীসাহ্ ইবনু হুলব (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইমামতি করতেন। তিনি (দাঁড়ানো অবস্থায়) বাম হাতকে ডান হাত দিয়ে ধরতেন। [১] রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাসজিদে এসে সলাত আদায় করল। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তুমি আবার সলাত আদায় কর। তোমার সলাত হয়নি। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে সলাত আদায় করব তা আমাকে শিখিয়ে দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ক্বিবলামুখি হয়ে প্রথমে তাকবীর বলবে। তারপর সূরাহ্‌ ফাতিহা পাঠ করবে। এর সাথে আর যা পার (ক্বুরআন থেকে) পড়ে নিবে। তারপর রুকু’ করবে। (রুকু’তে) তোমার দু’ হাতের তালু তোমার দু’ হাটুর উপর রাখবে। রুকু’তে প্রশান্তিতে থাকবে এবং পিঠ সটান সোজা রাখবে। রুকু’ হতে উঠে পিঠ সোজা করে মাথা তুলে দাঁড়াবে যাতে হাড়গুলো নিজ নিজ যায়গায় এসে যায়। তারপর সাজদাহ্ করবে। সাজদায় প্রশান্তির সাথে থাকবে। [৮২০] (হাদিসের মুল পাঠ মাসাবীহ থেকে গৃহিত। এ হাদীসটি আবূ দাঊদ সামান্য শাব্দিক পার্থক্যসহ বর্ননা করেছেন। তিরমিযী, নাসায়িও প্রায় অনুরূপ বর্ননা করেছেন) তিরমিযীর বর্ননায় আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সলাতের জন্য দাঁড়াতে ইচ্ছা করলে আল্লাহ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে উযু করবে। এরপর কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে। ‘ইক্বামাত বলবে (সলাত শুরু করবে)। তোমার ক্বুরআন জানা থাকলে তা পড়বে, অন্যথায় আল্লাহর ‘হামদ’, তাকবীর, তাহলীল করবে। তারপর রুকু’ করবে। [১] ফাযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নাফল দু রাক্’আত। প্রত্যেক দু রাক্’আতেই ‘তাশাহ্হুদ’ ভয়ভীতী ও বিনয় এবং দীনহীনতার ভাব আছে। তারপর তুমি তোমার দু’ হাত উঠাবে। ফাযল বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তুমি তোমার দু’ হাত তোমার রবের নিকট দু’আর জন্য উঠাতে হাতের বুকের দিককে তোমার মুখের দিকে ফিরাবে। আর বারবার বলবে, হে আল্লাহ! অর্থাৎ দু’আ বার বার করবে। আর যে এভাবে করবেনা তার সলাত এরূপ এরূপ। আর এক বর্ণনায় আছে, তার সলাত অসম্পূর্ন। [১]

【32】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

সা‘ঈদ ইবনুল হারিস ইবনুল মু‘আল্লা (রহঃ) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) আমাদের সলাত আদায় করালেন। তিনি সাজদাহ্ হতে মাথা উঠাতে, সাজদায় যেতে ও দু রাক্’আতের পর মাথা উঠাবার সময় উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলতেন। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছি। [১] ‘ইকরিমাহ্ (রহঃ) আমি মাক্কায় এক শায়খের পিছনে (আবূ হুরায়রাহ্‌) সলাত আদায় করেছি। তিনি সলাতে মোট বাইশবার তাকবীর বলেন। আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর কাছে বললাম, (মনে হচ্ছে) এ লোকটি নির্বোধ। এ কথা শুনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, এটা তো ‘আবূল কা-সিম (রাঃ) এর সুন্নাত। [১] আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে রুকু’ ও সাজদায় এবং মাথা ঝুঁকাতে ও উঠাতে তাকবীর বলতেন। আর তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্ত সব সময় এভাবে সলাত আদায় করেছেন। [১] ‘আলকামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) আমাদের বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মতো সলাত আদায় করাব? এরপর তিনি সলাত আদায় করালেন। অথচ প্রথম তাকবীরে একবার হাত উঠানো ছাড়া আর কোথাও হাত উঠাননি। [১] আবূ দাঊদ বলেন, এ হাদিসটি এই অর্থে সহীহ নয়। আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন। হাত উপরে উঠিয়ে তিনি বলতেন, ‘আল্লা-হ আকবার’। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের যুহরের সলাত আদায় করালেন। এক ব্যক্তি সর্বশেষ পিছনের সারিতে ছিল। সলাত খারাপভাবে আদায় করছিল। সে সলাতের সালাম ফিরাবার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডাকলেন, ও বললেন, হে অমুক! তুমি কি আল্লাহকে ভয় করছ না? তুমি কি জান না তুমি কিভাবে সলাত আদায় করছ? তোমরা মনে কর, তোমরা যা কর তা আমি দেখি না। আল্লাহ্‌র কসম! নিশ্চয় আমি দেখি আমার পিছনের দিকে, যেভাবে আমি দেখি আমার সামনের দিকে। [১]

【33】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমার পরে ক্বিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বলি, “হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমুহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব করে দিয়েছ মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হতে। হে আল্লাহ্‌! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।” [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সলাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। তারপর তিনি এই দু’আ পাঠ করতেনঃ “ওয়াজ্‌জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস সামাওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশ্‌রিকীন, ইন্না সলা-তি ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন – লা- শারীকা লাহু, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা – আন্‌তা রব্বী, ওয়াআনা- ‘আব্‌দুকা যলাম্‌তু নাফ্‌সী ওয়া’তারাফ্‌তু, বিযাম্বী, ফাগ্‌ফিরলী যুনূবী জামী’আ-, ইন্নাহু লা- ইয়াগ্‌ফিরুয যুনূবা ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আখলাক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিয়াহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াস্‌রিফ ‘আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াস্‌রিফু ‘আন্নী সায়য়্যইয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা, ওয়াল খায়রা কুলুহু ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্‌ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাক্‌তা ওয়াতা’আ-লায়তা, আস্‌তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা” –(অর্থাৎ -“আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয় আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীনের জন্য। তার কোন শারীক নেই। আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত। হে আল্লাহ্‌! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের উপর যুল্‌ম (অত্যাচার) করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয় আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করে না। তুমি দূরে রাখ আমার নিকট হতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ্‌ আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে হাযির। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার উপর আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রতাবর্তন করছি।”) এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ’ করতেন, তখন বলতেন, “আল্ল-হুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু, ওয়ালাকা আস্‌লাম্‌তু, খাশা’আ লাকা সাম্‌’ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্‌খী ওয়া ‘আয্‌মী ওয়া ‘আসাবী” – (অর্থাৎ - হে আল্লাহ্‌! আমি তোমারই জন্য রুকূ’ করলাম। তোমাকেই বিশ্বাস করলাম। তোমার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করলাম। তোমার ভয়ে ভীত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, মগজ আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।) এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, বলতেনঃ “আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু, মিল্‌য়াস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ামা- বায়নাহুমা- ওয়ামিল্‌য়া মা- শি’তা মিন শাইয়্যিন বা’দু”-(অর্থাৎ হে আল্লাহ্‌! হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান ও জমিন ও এতদুভয়ের ভিতর যা কিছু আছে, সবই তোমার প্রশংসা করছে। এরপরে যা কিছু সৃষ্টি করবে তারাও তোমার প্রশংসা করবে।) এরপর তিনি সাজদায় গিয়ে পড়তেন, “আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাত্তু ওয়াবিকা আমান্‌তু ওয়ালাকা আস্‌লামতু, সাজাদা ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়াসাও্‌ ওয়ারাহু ওয়াশাক্কা সাম’আহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্ল-হু আহ্‌সানুল খা-লিক্বীন ”- (অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার জন্য সাজদাহ্‌ করছি। তোমার উপর ঈমান এনেছি। তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমার মুখমন্ডল তার জন্য সাজদাহ্‌ করছে যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে আকার আকৃতি দিয়েছেন। তার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ খুবই বারাকাতপূর্ণ উত্তম সৃস্টিকারী।”) এরপর সর্বশেষ দু’আ যা ‘আত্তাহিয়্যাতু’র পর ও সালাম ফিরাবার আগে পড়তেন তা হল, “আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দাম্‌তু ওয়ামা- আখ্‌খারতু ওয়ামা-আস্‌রারতু ওয়ামা- আ’লান্‌তু ওয়ামা– আস্‌রাফতু ওয়ামা- আন্‌তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা”- (অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি করেছি। আমার সেসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা আমি পরে করেছি। আমার ওইসব বাড়াবাড়িও ক্ষমা করে দাও যা আমি আমলে ও সম্পদ খরচে করেছি। আমার ওইসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমার চেয়ে তুমি ভাল জান। তুমি তোমার বান্দাদের যাকে চাও মান সম্মানে এগিয়ে নাও। আর যাকে চাও পিছে হটিয়ে দাও। তুমি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই।”) [১] ইমাম শাফি’ঈর এক বর্ণনায় প্রথম দু’আয় ‘ফী ইয়াদায়কা’– এর পরে আছে, “ওয়াশ্‌ শার্‌রু লায়সা ইলায়কা ওয়াল মাহ্‌দীইউ মান হাদায়তা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, লা- মান্‌জা-আ মিন্‌কা ওয়ালা- মাল্‌জা-আ ইল্লা- ইলায়কা তাবা-রাক্‌তা” – (অর্থাৎ- মন্দ তোমার জন্য নয়। সে-ই পথ পেয়েছে যাকে তুমি পথ দেখিয়েছ। আমি তোমার সাহায্যে টিকে আছি। তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। তোমার পাকড়াও হতে বাচাঁর কোন জায়গা নেই। তুমি ছাড়া আশ্রয়ের কোন স্থল নেই। তুমি বারাকাতময়।)। ইমাম শাফি’ঈ (রহ.)- এর এ রিওয়ায়াতটিও সহীহ। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক (তাড়াহুড়া করে) এসে সলাতের কাতারে শামিল হয়ে গেল। তার শ্বাস উঠানামা করছিল। সে বলল, “আল্লা-হু আকবার, আলহাম্‌দু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান তাইয়্যিবাম্‌ মুবা-রাকান ফিহী ”, অর্থাৎ - “ আল্লাহ্‌ মহান। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যা অনেক বেশী পাক-পবিত্র ও বরকতময়।” সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এ কথা বলেছে? সকলে চুপ হয়ে বসে আছে। তিনি আবার বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এ কথাগুলো বলেছে? এবারও কেউ উত্তর দিল না। তিনি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছে? যে ব্যক্তি এ কথাগুলো বলেছে সে আপত্তিকর কিছু বলেনি। এক ব্যক্তি আরয করল, আমি যখন এসেছি, আমার শ্বাস উঠানামা করছিল। আমিই একথা বলেছি। এবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি দেখলাম বারজন মালাক কার আগে কে আল্লাহর কাছে এই কথাগুলো নিয়ে যাবে এ প্রতিযোগিতা করছে। [১]

【34】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শুরু করার (তাকবীর তাহরীমার) পর এ দু’আ পাঠ করতেন, “সুবহা-নাকা আল্ল-হুমা ওয়া বিহাম্‌দিকা ওয়া তাবা-রাকাস্‌মুকা ওয়া তা’আলা- যাদ্দুকা ওয়ালা- ইলা-হা গায়রুকা” – (অর্থাৎ- হে আল্লাহ্‌! তুমি পূত পবিত্র। তোমার পূত পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করার সাথে সাথে আমরা আরও বলছি, তুমি খুবই বারাকাতপূর্ণ। তোমার শান অনেক ঊর্ধ্বে। তুমি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই।) [১] আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) আর ইবনু মাজাহও এ হাদীসটি আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি আমি হারিসাহ্‌ ছাড়া অন্য কারও সূত্রে শুনিনি। তার স্মরণশক্তি সমালোচিত। [১] জুবায়র ইবনু মুত্ব‘ইম (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাকবীর তাহরীমার পর বললেনঃ “আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুক্‌রাতাওঁ ওয়াআসীলা-” তিনবার বললেন। তারপর বলেছেন, “আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম মিন নাফ্‌খিহী ওয়া নাফ্‌সিহী ওয়া হাম্‌যিহী”। [৮৩৪] কিন্তু তিনি “ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-” উল্লেখ করেননি। তাছাড়া তিনি শেষ দিকে শুধু “মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম” বর্ণনা করেছেন। ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, (আরবি) (নাফ্‌খ) অর্থ অহমিকা, (আরবি) (নাফ্‌স) অর্থ কবিতা, আর (আরবি) (হাম্‌য) অর্থ পাগলামী। [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দু’টি নীরবতার স্থান স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা তাঁর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর, আর একটি নীরবতা হল, “গয়রিল মাগ্‌যূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্লীন” পাঠ করার পর। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-ও তার বক্তব্য সমর্থন করেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক্‌‘আত আদায় করার পর উঠে সাথে সাথে সূরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ দ্বারা ক্বিরাআত শুরু করে দিতেন এবং চুপ করে থাকতেন না। [১]

【35】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর তাহরীমা (আল্ল-হু আকবার) দ্বারা সলাত শুরু করতেন। তারপর পাঠ করতেন, “ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, লা- শারীকা লাহূ ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা- আও্‌ওয়ালুল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মাহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আ‘মা-লি এবং আহ্‌সানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা ওয়াক্বিনী সায়য়্যিয়াল আ‘মা-লি ওয়া সায়য়্যিয়াল আখলা-ক্বি লা- ইয়াক্বী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা”- (অর্থাৎ- আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্য। তাঁর কোন শারীক নেই। আর এর জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমিই হলাম এর প্রতি প্রথম আনুগত্যশীল। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিচালিত কর উত্তম কাজ ও উত্তম চরিত্রের পথে। তুমি ছাড়া উত্তম পথে আর কেউ পরিচালিত করতে পারবে না। আমাকে খারাপ কাজ ও বদ চরিত্র হতে রক্ষা কর। তুমি ছাড়া এর খারাবি থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবে না।)। [১] মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাফল সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে বলতেন, “আল্ল-হু আকবার, ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা আনা- মিনাল মুশ্‌রিকীন”- (অর্থাৎ- আল্লাহ বড় মহামহিম। আমি সে সত্তার দিকেই আমার মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”। ইমাম নাসায়ী বলেন, অবশিষ্ট হাদীস তিনি (উল্লেখিত) জাবির-এর হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি পরিবর্তে বলেছেন, “আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত”। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা সুবহা-নাকা ওয়া বিহাম্‌দিকা”- (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। তুমি পবিত্র। সব প্রশংসা তোমার জন্য।)। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিরাআত শুরু করতেন। [১]

【36】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাতে সূরাহ্‌ ফাতিহা পাঠ করেনি তার সলাত হল না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সুরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ পাঠ করল না তাতে তার সলাত “অসম্পূর্ণ” রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করব তখনও কি তা পাঠ করব? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ বলেছেন, আমি ‘সলাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্‌ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও ছানা আমার জন্য আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়। বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু, আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিনের হাকীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (‘ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি‘আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) সলাত “আলহাম্‌দু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন” দিয়ে শুরু করতেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে, তোমরাও ‘আমীন’ বলবে। কারণ যে ব্যক্তির ‘আমীন’ মালাকগণের আমীনের সাথে মিলে যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন। [১] আর এক বর্ণনায় আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন ইমাম বলে, “গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্লীন”, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। কারণ যার ‘আমীন’ শব্দ মালাকগণের ‘আমীন’ শব্দের সাথে মিলে যায় তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর। [2] সহীহ মুসলিমের হাদীসের শব্দগুলোও এর মতই। আর সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী অর্থাৎ ইমাম বা অন্য কেউ ‘আমীন’ বলবে, তোমরাও সাথে সাথে ‘আমীন’ বল। আর যে ব্যক্তির ‘আমীন’ শব্দ মালাকগণের আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। [3] আবূ মূসা আল্ আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন জামা‘আতে সলাত আদায় করবে, তোমাদের কাতারগুলোকে সোজা করবে। এরপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমাম হবে। ইমাম তাকবীর তাহরীমা ‘আল্ল-হু আকবার’ বললে, তোমরাও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলবে। ইমাম “গাইরিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায্‌ যোয়াল্‌লীন” বললে, তোমরা আমীন বলবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দু‘আ ক্ববুল করবেন। ইমাম রুকূতে যাবার সময় ‘আল্ল-হু আকবার’ বলবে ও রুকূ‘তে যাবে। তখন তোমরাও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলে রুকূতে যাবে। ইমাম তোমাদের আগে রুকু‘ করবে। তোমাদের আগে রুকূ‘ হতে মাথা উঠাবে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা ওটার পরিবর্তে (অর্থাৎ তোমরা পরে রুকূ‘তে গেলে, আর পরে মাথা উঠালে ও ইমাম আগে রুকূ‘তে গেলে আর আগে মাথা উঠালে, উভয়ের সময় এক সমান হয়ে গেল)। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইমাম “সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলবে, তোমরা বলবে “আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হাম্‌দ” আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা শুনেন। [১] মুসলিমের মুসলিমের আর এক বর্ননায় এ শব্দগুলো আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমামের ক্বিরাআত তিলাওয়াত করার সময় তোমরা চুপ থাকবে। [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতে প্রথম দু’রাকা’আতে সুরা ফাতেহা এবং আরও দুটি সুরাহ্‌ পাঠ করতেন। পরের দু’রাকা’আতে শুধু সুরাহ্‌ ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করতেন। তিনি প্রথম রাক্‌’আতকে দ্বিতীয় রাক্‌’আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি আসরের সলাতও আদায় করতেন। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আসরের সলাতে কত সময় দাঁড়ান তা আমরা অনুমান করতাম। আমরা অনুমান করলাম যে, তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক’আতে সুরাহ্‌ আলিফ লাম মীম তানযিলুস সাজদাহ্ পাঠ করতে যত সময় লাগে তত সময় দাঁড়াতেন। অন্য এক বর্ণনায়, প্রত্যেক রাক’আতে ত্রিশ আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। আর পরবর্তী দু’ রাক’আতে অর্ধেক সময় দাঁড়াতেন বলে অনুমান করেছিলাম। ‘আসরের সলাতের প্রথম দু’ রাক’আতে, যুহরের সলাতের শেষ দু’ রাক’আতের সমপরিমাণ এবং ‘আস্‌রে সলাতের শেষ দু’ রাক’আতে যুহরের শেষ দু’ রাক’আতের অর্ধেক সময় বলে অনুমান করেছিলাম। [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতে সূরাহ্‌ “ওয়াল্লায়লি ইযা-ইয়াগ্‌শা-” এবং অপর বর্ণনা মতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা” পাঠ করতেন। আস্‌রের সলাতও একইভাবে আদায় করতেন। কিন্তু ফাজ্‌রের সলাতে এর চেয়ে লম্বা সূরাহ্‌ তিলওয়াত করতেন। [১] জুবায়র ইবনু মুত্ব‘ইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ্‌ “তূর” পাঠ করতে শুনেছি। [১] উম্মুল ফাযল বিনতু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের সলাতে সূরাহ্‌ মুরসলাত পাঠ করতে শুনেছি। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জামায়াতে সলাত আদায় করতেন, তারপর নিজ এলাকায় যেতেন ও এলাকাবাসীর ইমামতি করতেন। এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করলেন, তারপর নিজ এলাকায় গিয়ে ইমামতি করলেন। তিনি সলাতে সূরাহ্‌ বাক্বারাহ্‌ পাঠ করতে লাগলেন। এতে বিরক্ত হয়ে এক লোক সালাম ফিরিয়ে সলাত থেকে পৃথক হয়ে গেল। একা একা সলাত আদায় করে চলে গেল। তার এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্মিত হয়ে বলল। হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে? উত্তরে সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কখনো মুনাফ্বিক হয়নি। নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাব। এ বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জানাব। এর পর সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলো। বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পানি সেচকারী (শ্রমিক), সারাদিন সেচের কাজ করি। মু’আয আপানার সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করে নিজের গোত্রের ইমামতি করতে এসে সূরাহ্‌ বাক্বারাহ্‌ দিয়ে সলাত শুরু করে দিলেন। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, হে মু’য়ায! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তুমি ‘ইশার সলাতে সূরাহ্‌ ওয়াশ্‌ শাম্‌সি ওয়ায যুহা-হা-, সূরাহ্‌ ওয়ায্‌ যুহা-, সূরাহ্‌ ওয়াল লায়লী ইযা-ইয়াগ্‌শা-, সূরাহ্‌ সাব্বিহিসমা রব্বিকাল ‘আলা-তিলওয়াত করবে। [১] বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘ইশার সলাতে সূরাহ্‌ “ওয়াত্‌তীন ওয়ায যায়তূন” পাঠ করতে শুনেছি। তার চেয়ে মধুর স্বর আমি আর কারো শুনিনি। [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের সলাতে সূরাহ্ ‘কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’ ও এরূপ সূরাগুলো তিলাওয়াত করতেন। অন্যান্য সলাত ফাজ্‌রের চেয়ে কম দীর্ঘ হত। [১] আমর ইবনু হুবায়স (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফাজ্‌রের সলাতে “ওয়াল লায়লি ইযা- ‘আস্‌আস্‌” সূরাহ্ তিলওয়াত করতে শুনেছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় আমাদের ফাজ্‌রের সলাত আদায় করিয়েছেন। তিনি সূরাহ্ মু’মিন তিলাওয়াত করা শুরু করলেন। তিনি যখন মূসা ও হারুন অথবা ঈসা (‘আলাইহিস সালাম)-এর আলোচনা পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন তাঁর কাশি এসে গেলে (সূরাহ্‌ শেষ না করেই) তিনি রুকূতে চলে গেলেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন ফাজ্‌রের সলাতের প্রথম রাক’আতে “আলিফ লা-ম মীম তানযীল” ( সূরাহ্ আস্‌ সাজদাহ্‌) ও দ্বিতীয় রাক’আতে “হাল আতা-আলাল ইনসা-নি”(অর্থাৎ সূরাহ্ আদ দাহ্‌র) তিলাওয়াত করতেন। [১] উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, মারওয়ান আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-কে মাদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে মাক্কায় গেলেন। এ সময় আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) জুমু’আর সলাতে আমাদের ইমামতি করলেন। তিনি সলাতে সূরাহ্ আল জুমু’আহ প্রথম রাক্’আতে ও সূরাহ্ “ইযা জা-আকাল মুনাফিকূন (সূরাহ্‌ আল মুনা-ফিকূন) দ্বিতীয় রাক্’আতে তিলাওয়াত করলেন। তিনি বলেন আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জুমু’আর সলাতে এ দুটি সূরাহ্ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। [১] নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদে ও জুমু’আর সলাতে সূরাহ্ “সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ’লা” (সূরাহ্ আ’লা) ও “হাল আতাকা হাদীসুল গা-শিয়াহ্‌” (সূরাহ্ গা-শীয়াহ্‌) তিলাওয়াত করতেন। আর ঈদ ও জুমু’আহ একদিনে হলে এ দুটি সূরাহ্ তিনি দু সলাতেই পড়তেন। [১] উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আবূ ওয়াকিদ আল্ লায়সীকে জিজ্ঞেস করলেন যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদেরর সলাতে কি পাঠ করতেন? রাবী বলেন, তিনি উভয় ঈদের সলাতে ‍‍“ক্বাফ ওয়াল কুরা-আনিল মাজীদ” (সূরাহ্ ক্বাফ) ও “ইক্বতারাবাতিস সা-‘আহ” (সূরাহ্ আল ক্বামার) তিলাওয়াত করতেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক্’আত সলাতে “কুল ইয়া –আয়্যুহাল কা-ফিরুন” ও “ কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ” তিলাওায়াত করেছেন। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক্’আত সলাতে যথাক্রমে সূরাহ্ বাক্বারার এ আয়াত “কূলূ আ-মান্না বিল্লা-হি ওয়ামা-উনযিলা ইলায়না-“ এবং সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান-এর এ আয়াত ‘কুল ইয়া –আহলাল’ কিতাবে “তা’আলাও ইলা- কালিমাতিন সাওয়া-য়িন বায়নানা- ওয়া বায়নাকুম” পাঠ করতেন। [১]

【37】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

(‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “বিসমিল্লা-হ” –এর সাথে সলাত শুরু করতেন। (ইমাম তিরমিযী এ হাদিস বর্ণনা করেন এবং বলেন, এ হাদিসের সানাদ শক্তিশালী নয়)। [১] ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি সলাতে “গয়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্ যোয়াল্‌লীন” পড়ার পর সশব্দে ‘আমীন’ বলেছেন। [১] আবূ যুহায়র আন্ নুমায়রী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হলাম। আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট এলাম যিনি (সলাতের মধ্যে) আল্লাহর কাছে আকুতি- মিনতির সাথে দু’আ করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লোকটি তার জন্য জান্নাত ঠিক করে নিল, যদি সে এতে মোহর লাগায়। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কি দিয়ে মোহর লাগাবে ? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমীন’ দিয়ে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ্ আ’রাফ দু’ভাগে ভাগ করে মাগরিবের সলাতের দু’ রাক্‌’আতে তিলাওয়াত করলেন। [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর উটের নাকশী ধরে ধরে সামনের দিকে চলতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে ‘উক্ববাহ্‌! আমি কি তোমাকে পাঠ করার মত দু’টি উত্তম সূরাহ্ শিক্ষা দেব? তারপর তিনি আমাকে “কুল আ’ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব” (সূরাহ্ ফালাক্ব) ও “কুল আ’ঊযু বিরব্বিন্না-স” (সূরাহ্ আন্‌ না-স) শিখালেন। কিন্তু এতে আমি খুব খুশী হয়েছি বলে মনে করলেন না। পরে তিনি ফাজ্‌রের সলাতের জন্য উট হতে নামলেন। এ দু’টি সূরাহ্ দিয়েই আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন। সলাত শেষ করে তিনি আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, কি দেখলে হে ‘উক্ববাহ্‌। [১] জাবির (রাঃ) ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) মাগরিবের সলাতে “কুল ইয়া-আইউহাল কা-ফিরুন” (সূরাহ্ আল কা-ফিরুন) ও “কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” (সূরাহ্ ইখলাস) পাঠ করতেন। এ হাদিসটি শারহে সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু মাজাহ্‌ এ হাদীসটি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে নকল করেছেন। কিন্তু এতে “লায়লাতুল জুমু’আহ্‌” (অর্থাৎ- জুমু’আর রাত) উল্লেখ নেই। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি গুনে শেষ করতে পারবো না যে, আমি কত বার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের সলাতের পরের ও ফাজ্‌রের সলাতের আগের দু’ (রাক’আতে) সুন্নাতে “কুল ইয়া-আইউহাল কা-ফিরুন” (সূরাহ্ আল কা-ফিরূন) ও “কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” (সূরাহ্ ইখলাস) তিলাওয়াত করতে শুনেছি। [১] ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি ইবনু মাজাহ্‌ আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার বর্ণনায় “মাগরিবের পর” শব্দ নেই। [১] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) বলেছেন, আমি অমুক লোক ছাড়া আর কোন লোকের পিছনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সলাত আদায় করিনি। সুলায়মান বলেন, আমিও ওই লোকের পিছনে সলাত আদায় করেছি। তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্’আত অনেক লম্বা করে পড়তেন। আর শেষ দু’ রাক্’আতকে ছোট করে পড়তেন। ‘আসরের সলাত ছোট করতেন। মাগরিবের সলাতে কিসারে মুফাস্‌সাল সূরাহ্ পাঠ করতেন। ‘ইশার সলাতে আওসাতে মুফাস্‌সাল পাঠ করতেন আর ফাজ্‌রের সলাতে তিওয়ালে মুফাস্‌সাল সূরাহ্ পাঠ করতেন। [৮৭২] নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্‌ও এ বর্ণনাটি নকল করেছেন। কিন্তু তার বর্ণনা ‘আসরের সলাত ছোট করতেন পর্যন্ত। [১] উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পিছনে ফাজ্‌রের সলাতে ছিলাম। তিনি যখন ক্বিরাআত শুরু করলেন, তখন তাঁর তিলাওয়াত করা কষ্টকর ঠেকল। তিনি সলাত শেষ করে বললেন, তোমরা মনে হয় ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়। আমরা আরজ করলাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ক্বিরাআত পাঠ করি। তিনি বললেন, সূরাহ্ ফাতিহা ছাড়া আর কিছু পাঠ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি এ সূরাহ্ পাঠ করবে না তার সলাত হবে না। [১]নাসায়ী এ অর্থে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু আবূ দাঊদের আর এক বর্ণনায় আছেঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কি হল কুরআন আমার সাথে এভাবে টানাটানি করছে কেন? আমি যখন সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করি তখন তোমরা সূরাহ্‌ ফাতিহাহ্‌ ছাড়া আর কিছু পাঠ করবে না। [2] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেহরী সলাত অর্থাৎ শব্দ করে ক্বিরাআত পড়া সলাত শেষ করে সলাত আদায়কারীদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে ক্বিরাআত তিলাওয়াত করেছ? এক ব্যক্তি বলল, হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (আমি পড়েছি)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাই তো, আমি সলাতে মনে মনে বলছিলাম, কি হল, আমি ক্বিরাআত পাঠ করতে আটকিয়ে যাচ্ছি কেন? আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) বলেন, রসূলের এ কথা শুনার পর লোকেরা রসূলের পেছনে জেহরী সলাতে ক্বিরাআত পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ) তারা বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায়কারী সলাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম এজন্য নিয়োগ করা হয় যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। তাই ইমাম ‘আল্লা-হু আকবার’ বললে তোমরাও ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবে। ইমাম যখন ক্বিরাআত তিলাওয়াত করবে, তোমরা চুপ থাকবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে হাজির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কুরআনের কোন অংশ শিখে নিতে সক্ষম নই। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে। উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি এই (দু’আ) পড়ে নিবেঃ “আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র। সব প্রশংসা তাঁর। আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই। আল্লাহ্‌ অতি বড় ও মহান। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি ও ‘ইবাদাত করার তাওফীক আল্লাহরই কাছে”। ঐ ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! এসব তো আল্লাহর জন্য। আমার জন্য কি? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য পড়বেঃ “হে আল্লাহ্‌! আমার উপর রহম কর। আমাকে নিরাপদে রাখ। আমাকে হিদায়াত দান কর। আমাকে রিয্ক দাও”। তারপর লোকটি নিজের দু’হাত দিয়ে এভাবে ইশারা করল আবার বন্ধ করল যেন সে পেয়েছে বলে বুঝাল। এটা দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তি তার দু’হাত কল্যান দিয়ে ভরে নিল। [১] কিন্তু নাসায়ীর রাবীগন এই বর্ণনা শেষ করেছেন “ইল্লা-বিল্লা-হ” পর্যন্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন “সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ’লা (সুরাহ আ’লা)পড়তেন তখন বলতেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (আমি আমার উচ্চ মর্যাদাবান রব্বুল ‘আলামীনের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)।[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি সুরাহ ওয়াত তীনি ওয়াযযাইতুন পড়তে পড়তে “আলায়সাল্ল-হু বিআহকামিল হা-কিমীন” (আল্লাহ্‌ কি সবচেয়ে বড় হাকীম নন?) পর্যন্ত পৌছবে সে যেন বলে, “বালা- ওয়াআনা- ‘আলা- যা-লিকা মিনাশ শাহিদীন” [সুরাহ আততীন] (হাঁ, আমি এ কথার সাক্ষ্যদানকারীদের একজন)। আর যে ব্যক্তি সুরাহ ক্বিয়ামাহ পড়তে “আলায়সা যা-লিকা বিক্বা-দিরীন ‘আলা- আন্ ইউহয়িয়াল মাওতা-” (সে আল্লাহর কি এ শক্তি নেই যে, তিনি মৃতদেরকে জীবিত করে উঠাবেন), তখন সে যেন বলে, “বালা” (হাঁ, তিনি তা করতে সমর্থ)। আর যে ব্যক্তি সুরাহ ওয়াল মুরসালা-ত পড়তে পড়তে “ফাবি আইয়ী হাদিসিন বা’দাহু ইউমিনুন” (এরপর এরা কোন কথার উপর ঈমান আনবে?”) এ পর্যন্ত পৌঁছে সে যেন বলে, “আ-মান্না বিল্লাহ” (আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি) । আবু দাউদ, তিরমিযী এ হাদিসটিকে “শাহিদীন” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।[১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কিছু সাহাবীগনের কাছে এলেন। তাদেরকে তিনি সুরাহ আর রাহমানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে শুনালেন। সাহাবীগন চুপ হয়ে শুনলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই সুরাটি আমি ‘লায়লাতুল জিন্নি’ (জিনদের সাথে দেখা হবার রাতে) জিনদের পড়ে শুনিয়েছি। জিনেরা তোমাদের চেয়ে এর উত্তর ভালো দিয়েছে। আমি যখনই “তোমাদের রবের কোন নিয়ামাতকে তোমরা অস্বীকার করতে পারবে” পর্যন্ত পৌঁছেছি তখনই তারা বলে উঠেছে, “হে আমাদের রব! আমরা তোমার কোন নি’আমাতকে অস্বীকার করিনা। তোমারই সব প্রশংসা। তিরমিযী বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। [১]

【38】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল জুহানী (রহঃ) তিনি বলেন, জুহাইনা বংশের এক ব্যক্তি তাকে বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ফাজরের সলাতের দু’রাকাতেই সুরাহ ‘ইযা যুলযিলাত’ তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। আমি বলতে পারি না, রসুল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলে গিয়েছিলেন না ইচ্ছা করেই পড়েছিলেন। [১] উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আবুবকর (রাঃ) ফাজরের সলাত আদায় করলেন। উভয় রাকাতেই সুরাহ বাকারাহ তিলাওয়াত করলেন।[১] ফুরাফিসাহ্ ইবনু ‘উমায়র আল্ হানাফী (রহঃ) আমি সুরাহ ইউসুফ উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে শুনে শুনে মুখস্ত করেছি। কেননা তিনি এ সূরাকে বিশেষ করে ফাজরের সালাতে প্রায়ই তিলাওয়াত করতেন। [১] ‘আমির ইবনু রবী‘আহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আমীরুল মু’মিনীন খলীফা উমার ফারুক (রাঃ) এর পিছনে ফাজরের সলাত আদায় করলাম। তিনি এর দু’রাকাতেই সুরাহ ইউসুফ ও সুরাহ হাজ্জকে থেমে থেমে তিলাওয়াত করেছেন। কেউ আমিরকে জিজ্ঞেস করল যে, খলীফাহ ‘উমার (রাঃ) ফাজরের ওয়াক্ত শুরু হবার সাথে সাথেই কি সলাত আদায়ে দাঁড়িয়ে যেতেন? উত্তরে আমির বলেন, হাঁ। [১] আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মুফাসসাল সুরার (হুজুরাত থেকে নাস পর্যন্ত) ছোট-বড় সকল সুরাহ দিয়েই ফারয সলাতের ইমামতি করতে শুনেছি। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ্ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সালাতে সূরাহ ‘হা-মীম আদ দুখান’ তিলাওয়াত করলেন। [১]

【39】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রুকূ ও সাজদাহ ঠিকভাবে আদায় করবে। আল্লাহ্‌র কসম! আমি নিশ্চই তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখি। [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর রুকূ’, সাজদাহ, দু সাজদার মধ্যে বসা, রুকু’র পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ (ক্বিরাআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় ছাড়া প্রায় সমান সমান ছিল। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলতেন, সোজা হয়ে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা মনে করতাম নিশ্চয়ই তিনি (সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। এরপর তিনি সাজদাহ করতেন ও দু’সাজদার মধ্যে এত লম্বা সময় বসে থাকতেন, আমরা মনে করতাম, তিনি (নিশ্চয় দ্বিতীয় সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের উপর আমাল করে নিজের রুকূ ও সাজদায় এই দু’আ বেশী বেশী পাঠ করতেনঃ “সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা রব্বানা-ওয়াবিহামদিকা আল্ল-হুম্মাগ ফিরলী” - (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পুত পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও )। [১] উক্ত রাবী [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ ও সাজদায় বলতেন, “সুবহুন কুদ্দুসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ” মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র, খুবই পবিত্র । [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! আমাকে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকু’তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুয়া করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম যখন “সামি’আলাহু লিমান হামিদাহ” বলবে তখন তোমরা “আল্লাহুম্মা রব্বানা–লাকাল হামদ” বলবে। কেননা যার কথা মালায়িকার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু হতে তার পিঠ সোজা করে উঠে বলতেন, “সামি’আলাহু লিমান হামিদাহ, আল্লাহুম্মা রব্বানা–লাকাল হামদ মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শাইয়িম বা’দ” – (অর্থাৎ আল্লাহ শুনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আমার রব! আকাশ ও পৃথিবীপূর্ণ তোমার প্রশংসা, এরপর তুমি যা সৃষ্টি করতে চাও তাও পরিপূর্ণ)। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু হতে মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শাইয়িম বা’দু আহলুস সানা-য়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্বা-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আব্দুন, আল্লাহুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আ’ত্বাইতা ওয়ালা- মু’তিয়া লিমা- মানা’তা। ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ” – (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তোমারই সব প্রশংসা। আকাশ পরিপূর্ণ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। হে প্রশংসা ও মর্যাদার মালিক! মানুষ তোমার প্রশংসায় যা বলে তুমি তার চেয়েও অধিক প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি যা দিবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই। আর তুমি যাতে বাধা দিবে তা দিতেও কেউ সমর্থ নয়। কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না। [১] রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি' (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পিছনে সলাত আদায় করছিলাম । তিনি যখন রুকূ’ হতে মাথা তুলে, “সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বললেন (যে ব্যক্তি আল্লাহর হাম্‌দ ও সানা পাঠ করল আল্লাহ তা শুনলেন), তখন এক ব্যক্তি ‘বলল’ “রব্বানা- লাকাল হাম্‌দু হামদান কাসীরান ত্বইইয়্যিবাম মুবারকান্‌ ফীহ” – (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য প্রশংসা, অনেক প্রশংশা, যে প্রশংসা শির্‌ক ও রিয়া হতে পবিত্র ও মুবারক) । সলাত শেষে নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এখন এ বাক্যগুলো কে পড়ল? সেই ব্যক্তি উত্তরে বলল, আমি, হে আল্লাহর রসূল! তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি ত্রিশজনেরও অধিক মালাক দেখেছি এ কালিমার সাওয়াব কার আগে কে লিখবে এ নিয়ে তাড়াহুড়া করছেন । [১]

【40】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত রুকূ ও সাজদাতে তার পিঠ স্থিরভাবে সোজা না করে তার সলাত হবে না। [৮৯৮] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ l [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, যখন “ফাসাব্বিহ বিইস্‌মি রব্বিকাল আযীম” তোমর মহান রবের নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর এ আয়াত নাযিল হল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই আয়াতটিকে তোমরা তোমাদের রুকূতে তাসবীহরূপে পড়। এভাবে যখন “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা” (তোমরা উচ্চ মর্যাদাশীল রবের নামের পবিত্রতা ঘোষণা কর) আয়াত নাযিল হল তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা এটিকে তোমাদের সাজদার তাসবীহতে পরিণত কর। [১] ‘আওন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রুকূ’ করবে সে যেন রুকূ’তে তিনবার “সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম” পড়ে । তাহলে তার রুকূ’ পূর্ণ হবে । আর এটা হল সর্বনিম্ন সংখ্যা । এভাবে যখন সাজদাহ্‌ করবে, সাজদায়ও যেন তিনবার “সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-” পড়ে । তাহলে তার সাজদাহ্‌ পূর্ণ হবে । আর তিনবার হল কমপক্ষে পড়া । [১] ইমাম তিরমিযী বলেন, এর সানাদ মুত্তাসিল নয় । কেননা ‘আওন (রহঃ)-এর ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়নি । হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করলেন । তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূতে “সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম” ও সাজদায় “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা-” পড়তেন । আর যখনই তিনি ক্বিরাআতের সময় রহমতের আয়াতে পৌঁছতেন, ওখানে থেমে যেতেন, রাহমাত তলবের দু’আ পাঠ করতেন । আবার যখন আযাবের আয়াত পৌঁছতেন, সেখানে থেমে গিয়ে ‘আযাব থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতেন। [১] এ হাদীসটিকে “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা-” পর্যন্ত নকল করেছেন । ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

【41】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সলাত আদায় করতে দাঁড়ালাম । তিনি রুকূ’তে গিয়ে সূরাহ বাক্বারাহ্‌ তিলাওয়াত করতে যত সময় লাগত তত সময় রুকূ‘তে থাকলেন । রুকূ‘তে বলতে থাকলেন, “সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিব্‌রিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাতি” (অর্থাৎ - ক্ষমতা, রাজ্য, বড়ত্ব, মহত্ব ও বিরাটত্বের মালিকের পবিত্রতা ঘোষনা করছি) । [১] ইবনু জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর ইন্তিকালের পর এই যুবক অর্থাৎ ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয ছাড়া আর কারো পেছনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সলাতের মত সলাত পড়িনি । বর্ণনাকারী বলেন, আনাস বলেছেন, আমরা তার রুকূ’র সময় অনুমান করেছি দশ তাসবীহ্‌র পরিমাণ এবং সাজদার সময়ও অনুমান করেছি দশ তাসবীহ পরিমাণ ।[১] শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্‌ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন , সে তার রুকূ সাজদাহ্‌ পূর্ণ করছে না । সে সলাত শেষ করলে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি সলাত আদায় করনি । শাক্বীক্ব বলেন, আমার মনে হয় হুযায়ফাহ্‌ এ কথাও বলেছেন, যদি তুমি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, তাহলে নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন, তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে । [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চুরি হিসেবে সবচেয়ে বড় চোর হল ঐ ব্যক্তি যে সলাতে (আরকানের) চুরি করল। সহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সলাতের চুরি কিভাবে হয়? নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের চুরি হল রুকূ’-সাজদাহ্‌ পূর্ণ না করা। [১] নু‘মান ইবনু মুররাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবায়ে কিরামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী ও চোরের ব্যাপারে তোমাদের কি ধারণা? নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর এ প্রশ্নটি এসব অপরাধের শাস্তি বিধানের আয়াত নাযিল হবার আগের। সহাবীগণ আরয করলেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই ভাল জানেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেন, গুনাহ কাবীরাহ, এর সাজাও আছে। আর নিকৃষ্টতম চুরি হল যা মানুষ তার সলাতে করে থাকে। সহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! মানুষ তার সলাতে কিভাবে চুরি করে থাকে? রসূল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মানুষ রুকূ’- সাজদাহ্‌ পূর্ণভাবে আদায় না করে (এ চুরি করে থাকে)। [৯০৬] আহমাদ ও দারিমীতে হাদীসটি পাওয়া যায়নি ।[১]

【42】

প্রথম অনুচ্ছেদ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমাকে শরীরের সাতটি হাড় ; যথা কপাল, দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাগায্যে সাজদাহ্‌ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন সাজদাহ্‌ ঠিক মত করবে। তোমাদের কেউ যেন সাজদায় কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিযে না দেয়। [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাজদাহ্‌ করার সময় তোমরা দু’ হাতের তালু জমিনে রাখবে। উভয় হতের কনুই উপরে উঠিয়ে রাখবে।[১] মায়মূনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারত। এগুলো হলো আবূ দাউদের শব্দ। [১] যেমন ইমাম বাগাবী শারহে সুন্নায় সানাদসহ ব্যক্ত করেছেন। সহীহ মুসলিমে প্রায় অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মায়মূনাহ্‌ (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্‌ করতেন তখন ছাগলের বাচ্চা তাঁর দু’ হাতের মাঝ দিয়ে (পেট ও হাতের ভিতর দিয়ে) চলে যেতে চাইলে যেতে পারত। [2] আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সাজদাহ্‌ দিতেন তার হাত দু’টিকে এমন প্রশস্ত রাখতেন যে তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় গিয়ে বলতেন, “ আল্ল-হুম্মাগফিরলী জাম্বি কুল্লাহ্‌ দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আও-ওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু ওয়া আলা-নিয়্যাতাহু ওয়া সির্‌রাহু” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগের-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম, তিনি সলাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি বলছেন : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বিমু’আ-ফা-তিকা মিন উকূবাতিকা, ওয়া আঊযুবিকা মিন্‌কা লা-উহ্‌সী সানা-য়ান আলায়কা, আনতা কামা-আসনায়তা আলা নাফ্‌সিকা। (অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার আযাব হতে মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমাতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছ। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশী নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশী বেশী করে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। [১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আদাম সন্তানরা যখন সাজদার আয়াত পড়ে ও সাজদাহ্‌ করে, শয়তান তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল মন্দ। আদাম সন্তান সাজদার আদেশ পেয়ে সাজদাহ্‌ করল তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদার আদেশ দেয়া হয়েছিল আমি তা অমান্য করলাম। আমার জন্য তাই জাহান্নাম। [১] রবী‘আহ্ ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাতের বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থাকতাম। উযূর পানিসহ অন্যান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন মিসওয়াক, জায়নামাজ ইত্যাদি এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন (দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা কিছু চাও) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম আমার তো শুধু জান্নাতে আপনার সাহচর্য লাভই একমাত্র কাম্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (যে মর্যাদায় তুমি পৌছতে চাও এটা বড় কথা) এছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম এটাই আমার একমাত্র আবেদন। তিনি (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বেশী বেশী সাজদাহ্‌ করে (এ মর্যদা লাভের জন্য) আমাকে সাহায্য কর। [১] মা‘দান ইবনু ত্বলহাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যে কাজ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি খামুশ থাকলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি খামুশ রইলেন। তৃতীয়বার তাকে আবার একই প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজেও এ বিষয়ে রসূল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহকে বেশী বেশী সাজদাহ করতে থাকবে। কেননা আল্লাহকে তুমি যত বেশী সাজদাহ করতে থাকবে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা বাড়াতে থাকবেন। তোমার অতটা গুনাহ উক্ত সাজদাহ দিয়ে কমাতে থাকবেন। মা’দান বলেন, এরপর আবুদ দারদার সাথে দেখা করে তাকেও আমি একই প্রশ্ন করি। তিনিও আমাকে সাওবান (রাঃ) যা বলেছিলেন তাই বললেন। [১]

【43】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাজদাহ করার সময় মাটিতে তাঁর হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতে ও সাজদাহ হতে উঠতে হাঁটুর আগে হাত উঠাতে দেখেছি। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ সাজদাহ করার সময় যেন উটের বসার মত না বসে, বরং দু হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। [১] আবূ সুলায়মান খাত্তাবী বলেন, এ হাদীসের চেয়ে ওয়ায়িল এর আগের হাদীসটি বেশী মজবুত। কেউ কেউ বলেন, এ হাদীসটি মানসূখ বা রহিত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’সাজদার মধ্যে বলতেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আ –ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক দান কর)। [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ সাজদাহর মাঝখানে বলতেন, “রাব্বিগফিরলী” – (অর্থাৎ - হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও)। [১]

【44】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মাসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে আলী! আমি আমার জন্য যা ভালবাসি তোমার জন্যও তা ভালবাসি এবং আমার জন্য যা অপছন্দ করি তোমার জন্যও তা অপছন্দ করি। তুমি দু সাজদার মাঝখানে (কুকুরের মতো) হাত খাড়া করে দিয়ে দুই পায়ের উপর বসো না। [১] ত্বালক্ব ইবনু ‘আলী আল হানাফী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ সে বান্দার সলাতের প্রতি সুদৃষ্টি দেন না যে বান্দা সলাতের রুকূ ও সাজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না। [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি সলাতের সাজদায় নিজের কপাল জমিনে রাখে সে যেন তার হাত দুটিকেও জমিনে ওখানে রাখে যেখানে কপাল রাখে। তারপর যখন সাজদাহ হতে উঠবে তখন নিজের হাত দুটিও উঠায়। কারণ যেভাবে মুখমন্ডল সাজদাহ করে ঠিক সেভাবে দু হাতও সাজদাহ করে। [১]

【45】

প্রথম অনুচ্ছেদ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মত করার জন্য আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন। [১] আর এক বর্ণনায় আছে, যখন সলাতের মধ্যে বসতেন দু’হাত দু’হাটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধার নিকট যে আঙ্গুল রয়েছে (তর্জনী) তা উঠাতেন। তা দিয়ে দু’আ (ইশারা) করতেন। আর তাঁর বাম হাত বাম হাটুর উপর বিছানো থাকত। [১] আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাশাহহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসলে নিজের ডান হাত ডান রানের উপর এবং বাম হাত বাম রানের উপর রাখতেন। শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের নিকটে রাখতেন। বাম হাতের তালু দিয়ে বাম হাঁটু জড়িয়ে ধরতেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করতাম তখন এ দুআ পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” – (অর্থাৎ- আল্লাহর উপর সালাম তাঁর বান্দাদের উপর পাঠাবার আগে, জিবরাঈলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর উপর সালাম। সালাম অমুকের উপর)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর উপর সালাম” বল না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)। অতএব তোমাদের কেউ সলাতে বসে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলায়না ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” (অর্থাৎ সব সম্মান, ইবাদাত, উপসানা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের উপর সালাম)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌছবে। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- (অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু’আ ভাল লাগে সে দু’আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, “আত্তাহিয়্যাতুল মুবা-রাকা-তুস সলাওয়া-তু ওয়াত্তাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হি। আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু আলায়না- ওয়া আলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদন আবদুহু ওয়ারসূলুহু”। [১] মিশকাত সংকলক বলেন, সালা-মুন আলায়কা ও সালা-মুন আলায়না আলিফ, লাম ছাড়া বুখারী, মুসলিম ও এদের সংকলন হুমায়দীর কিতাবে কোথাও নেই। কিন্তু জামিঊল উসূল প্রণেতা তিরমিযী হতে এভাবে বর্ণনা করেছেন। [2]

【46】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) তিনি (তাশাহহুদের বৈঠক সম্পর্কে) নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে দিলেন। বাম হাতকে বাম রানের উপর রাখলেন। এভাবে তিনি ডান কনুইকে ডান রানের উপর বিছিয়ে রাখলেন। এরপর (নব্বইয়ের বন্ধনের ন্যায়) ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা বন্ধ করলেন। (মধ্যমা ও বৃদ্ধার দ্বারা) একটি বৃত্ত বানালেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল উঠালেন। এ সময় আমি তাঁকে খলাম, তিনি তাশাহহুদ পাঠ করতে করতে ইশারা করার জন্য শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতে বসা অবস্থায় “কালিমায়ে শাহাদাত” দুআ পাঠ করতেন, নিজের শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু তা নাড়াচড়া করতেন না। [১] আবূ দাঊদ এ শব্দগুলোও নকল করেছেন যে, তাঁর দৃষ্টি ইশারা করার বাইরে অতিক্রম করত না।[2] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সলাতে তাশাহহুদ পড়ার সময় শাহাদাতের দু আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতে লাগল। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যেন সলাতে হাতের উপর ঠেস দিয়ে না বসে। [১] আবূ দাঊদের এক বর্ণনায় এ শব্দগুলোও আছে যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেনঃ সলাতে উঠার সময় কোন ব্যক্তি যেন তার দু’হাতের উপর ভর দিয়ে না উঠে। [2] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম দু রাকআতের পরের বৈঠক হতে এত তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতেন, মনে হত যেন কোন উত্তপ্ত পাথরের উপর বসেছেন। [১]

【47】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে আমাদেরকে কুরআনের কোন সূরাহ শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে তিনি আমাদেরকে তাশাহহুদও শিখাতেন। তিনি বলতেন, “বিসমিল্লা-হি ওয়া বিল্লা-হি, আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াত ত্বইয়্যিবা-তু আসসালা-মু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবীয়্যু, ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওবারাকা-তুহু, আসসালা-ম আলাইনা- ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস সলিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহু। আসআলুল্লা-হাল জান্নাতা ওয়া আউযু বিল্লা-হি মিনান্না-র”। [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) যখন সলাতে বসতেন, নিজের দু হাত নিজের দু রানের উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন এবং তার চোখের দৃষ্টি থাকত আঙ্গুলের প্রতি।। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ শাহাদাত আঙ্গুল শায়ত্বনের কাছে লোহার চেয়ে বেশী শক্ত। অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদের ইশারা করা শায়ত্বনের উপর নেযা নিক্ষেপ করার চেয়েও কঠিন। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলতেন, সলাতে তাশাহহুদ চুপে চুপে পড়াই সুন্নাত। আবূ দাঊদ ও তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। [১]

【48】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, কাব ইবনু উজরাহ (রাঃ) এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে আবদুর রহমান! আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি? উত্তরে আমি বললাম, হ্যাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’ কিভাবে পাঠ করব তা আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি ‘সলাত’ কিভাবে পাঠ করব? রসূল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা বল, “আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ –লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা আলা- ইবরা-হীমা ওয়া আল – আ –লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ –লি মুহাম্মাদিন কামা-বা-রাকতা আলা- ইবরা-হীমা ওয়া আলা- আ –লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ” – (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রাহমাত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রাহমাত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছ ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)। [১] কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর বর্ণনায় ‘আলা-ইবরা-হীম’ শব্দ দু স্থানে উল্লিখিত হয়নি। আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা বল, “আল্লাহুম্মা…..” শেষ পর্যন্ত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। [১]

【49】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশবার রাহমাত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা আমার প্রতি বেশী বেশী দরূদ পাঠ করবে তারাই ক্বিয়ামাতের দিন আমার বেশী নিকটে হবে। [১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌছান। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ আমার উপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। [১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত কর না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। [১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লাঞ্চিত হোক সেই ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্চিত হোক সেই ব্যক্তি যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্চিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দুজনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা তাকে জান্নাতে পৌছায় না। [১] আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি বললেন, আমার নিকট জিবরীল আলায়হি ওয়াসাল্লাম এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি তার উপর দশবার রাহমাত বর্ষণ করব? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার সালাম পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাব? [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দুআর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক তৃতীয়াংশ করি? নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমার জন্যই ভাল। আমি বললাম, যদি দুই-তৃতীয়াংশ করি। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, তাহলে (আমি আমার দুআর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [১] ফুযালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক এলেন। তিনি সলাত পড়লেন এবং এই দুআ পড়লেন “আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার উপর রহম কর)। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে সলাত আদায়কারী! তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাম শেষ করে দুআর জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার উপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর কাছে দুআ করবে। ফুযালাহ (রাঃ) বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো সলাত আদায় করলো। সে সলাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করল, নাবী করীমের উপর দরূদ পাঠ করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে সলাত আদায়কারী! আল্লাহর কাছে দুআও কর। দুআ কবূল করা হবে। [৯৫৪] আবূ দাঊদ, নাসায়ী-ও এরূপই বর্ণনা করেছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সলাত আদায় করছিলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)। সলাত শেষে আমি যখন বসলাম আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করলাম, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরূদ পাঠ করলাম। তারপর আমি আমার নিজের জন্য দুআ করতে লাগলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। [১]

【50】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পূর্ণ মাপে বেশী বেশী সাওয়াব লাভে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন আমার উপর দরূদ পাঠ করে, আহলে বায়তের উপরও যেন দরূদ পাঠ করে। বলে, আল্লাহুম্মা সল্লি আলা- মুহাম্মাদীন্নাবীয়্যিল উম্মিয়্যি, ওয়া আযওয়াযিহী, ওয়া উম্মাহাতিল মুমিনীনা, ওয়া যুররিয়্যাতিহী ওয়া আহলে বায়তিহী, কামা- সল্লায়তা আলা- আ –লি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ” । (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ, মুমিনদের মা, তাঁর বংশধর ও পরিবার-পরিজনের উপর রহমাত অবতীর্ণ কর। যেভাবে, তুমি রাহমাত অবতীর্ণ করেছ ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর)। [১] খলীফাহ্ ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত কৃপণ হল সে ব্যক্তি যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হবার পর আমার উপর দরূদ পাঠ করেনি। [৯৫৭] হাদীসটি ইমাম আহমাদ হুসায়ন ইবনু আলী হতে নকল করেছেন; আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান, সহীহ ও গরীব। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে আমি তা সরাসরি শুনতে পাই। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার প্রতি দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌছিয়ে দেয়া হয়। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর মালায়িকাহ তার উপর সত্তরবার দরূদ পাঠ করেন। [১] রুওয়াইফি‘ ইবনু সাবিত আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরূদ পড়বে এবং বলবে, “আল্লাহুম্মা আনজিলহু মাকআদাল মুকাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি”। (হে আল্লাহ! তাঁকে তুমি ক্বিয়ামাতের দিন তোমার কাছে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দিও) আমার সুপারিশ তার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে। [১] আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। এখানে তিনি আল্লাহর দরবারে সাজদারত হলেন। সাজদাহ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ না করুক তাঁকে তো আবার আল্লাহ মৃত্যুমুখে পতিত করেননি? আবদুর রহমান বলেন, তাই আমি তাঁর কাছে এলাম, পরখ করে দেখার জন্য। তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, কি হয়েছে? আমি তাঁকে আমার আশংকার কথা বললাম। আবদুর রহমান বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমাকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে এই শুভ সংবাদ দিবো না যা আল্লাহ তাআলা আপনার ব্যাপারে বলেন? যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার প্রতি রাহমাত বর্ষণ করব। যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠাবে আমি তার প্রতি শান্তি নাযিল করব। [১] উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, দুআ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নাবীর উপর দরূদ না পাঠাও। [১]

【51】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের মধ্যে (সালাম ফিরাবার আগে) দুআ করতেন। বলতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্ববরি, ওয়া আউযু্বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জালি। ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়া ফিতনাতিল মামাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরামি”। (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি ক্ববরের আযাব থেকে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি গুনাহ ও দেনার বোঝা হতে)। এক ব্যক্তি বলল, নাবী! আপনি দেনার বোঝা হতে বড় বেশী পানাহ চেয়ে থাকেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কেউ যখন দেনাদার হয় তখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সলাতের শেষে শেষ তাশাহহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের আযাব। (২) কবরের আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ। (৪) মাসীহুদ দাজ্জালের অনিষ্ট। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এই দুআ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম, ওয়া আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্ববরি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামাতি”। (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই ক্ববরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে) ।[১] (১ম খলীফাহ) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি দুআ বলে দিন যা আমি সলাতে (তাশাহহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ দুআ পড়বে, “আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী। ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম”। (অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের উপর অনেক যুলুম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে মাফ করে দাও। আমার উপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী)। [১] আমির ইবনু সাদ তাবিঈ (রহঃ) তিনি তার পিতা সাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান দিকে ও বাম দিকে এভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত পড়া শেষ করে আমাদের দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় শেষে ডান দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন শায়ত্বনের জন্য নিজেদের সলাতের কোন অংশ নির্দিষ্ট না করে একথা ভেবে যে, শুধু ডান দিকে ঘুরে বসাই তার জন্য নির্দিষ্ট। আমি নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে অনেকবার বাম দিকেও ঘুরে বসতে দেখেছি। [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে সলাত আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম। তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বারা (রাঃ) বলেন, একদিন আমি শুনলাম নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “রাব্বি কিনী আযা বাকা ইয়াও মা তাবআসু আও তাজমাউ ‘ইবাদাকা”। অর্থাৎ “হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের ময়দানে উঠাবে অথবা একত্র করবে”।[১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় মহিলারা জামাআতে সলাত আদায় করলে সালাম ফিরাবার সাথে সাথে উঠে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতেন। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে যে সকল পুরুষ সালাতে শারীক হতেন, যতটুকু সময় আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য মঞ্জুর করতেন বসে থাকতেন। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দাঁড়াতেন সব পুরুষগণও দাঁড়িয়ে চলে যেতেন। [১]

【52】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে বললেন, হে মুআয! আমি তোমাকে ভালবাসি। আমিও সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালবাসি। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দুআ পাঠ করতে ভুল করো না: “রাব্বি আইন্নি আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবা-দাতিকা”। (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকর, শুকরিয়া ও উত্তমরূপে ইবাদাত করতে সাহায্য কর।) [১] কিন্তু আবূ দাঊদ, “ক্বালা মুআজুন ওয়া আনা- উহিব্বুকা” বাক্য বর্ণনা করেননি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে সালাম ফিরাবার সময় “আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে ডান দিকে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার ডান পাশের উজ্জলতা নজরে পড়ত। আবার তিনি বাম দিকেও “আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার বাম পাশের উজ্জলতা দৃষ্টিতে পড়ত। [১] ইমাম তিরমিযী তাঁর বর্ণনায়, “এমন কি তাঁর চেহারার উজ্জলতা দেখা যেত” এ বাক্য নকল করেননি। বনু মাজাহ ইবনু মাজাহ এ হাদীস আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের পর অধিকাংশ সময় তাঁর বাম দিকে নিজের হুজরার দিকে মোড় ঘুরতেন। [১] আত্বা আল খুরাসানী (রহঃ) মুগীরাহ্ (রাঃ) মুগীরাহ বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম যে স্থানে ফারয সলাত আদায় করেছে সে স্থানে যেন অন্য সলাত আদায় না করে, যে পর্যন্ত না স্থান পরিবর্তন করে। ] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের প্রতি তাদের উদ্দীপনা যোগাতেন। আর সলাত শেষে রসূল (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাইরে গমনের আগে তাদেরকে বের হতে নিষেধ করেছেন। [১]

【53】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতে এ দুআ পাঠ করতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাস সাবা-তা ফিল আমরি ওয়াল আযীমাতা আলার রুশদি, ওয়া আসআলুকা শুক্-রা নিমাতিকা ওয়া হুসনা ইবা-দাতিকা, ওয়া আসআলুকা ক্বালবান সালীমান ওয়ালিসা-নান স-দিক্বান ওয়া আসআলুকা মিন খায়রি মা- তালামু, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি মা- তালামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা- তালামু”- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কাজের স্থায়িত্ব ও সৎপথে দৃঢ় থাকার আবেদন জানাচ্ছি। তোমার নিআমাতের শুকর ও তোমার ইবাদাত উত্তমভাবে করার শক্তির জন্যও আমি তোমার কাছে দুআ করছি। সরল মন ও সত্য কথা বলার জন্যও আমি প্রার্থণা জানাচ্ছি। আমি তোমার কাছে প্রার্থণা করি তুমি যা ভাল বলে জান। আমি তোমার কাছে ঐ সব হতে পানাহ চাই যা তুমি আমার জন্য মন্দ বলে জান। সর্বশেষ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই আমার সে সকল অপরাধের জন্য যা তুমি জান। [১] আহমাদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সলাতের মধ্যে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর বলতেন, “আহসানুল কালা-মি কালামুল্ল-হি ওয়া আহসানুল হাদয়ি হাদয়ু মুহাম্মাদিন (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ”- (অর্থাৎ- আল্লাহর ‘কালামই’ সর্বোত্তম কালাম। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হিদায়াতই সর্বোত্তম হিদায়াত।) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের ভিতর এক সালাম ফিরাতেন সামনের দিকে। এরপর ডান দিকে একটু মোড় নিতেন। [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইমামের সালামের উত্তর দিতে, একে অন্যকে ভালবাসতে ও পরস্পর সালাম বিনিময় করতে হুকুম দিয়েছেন। [১]

【54】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম ‘আল্লা-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে। [১] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সালাম ফিরাবার পর শুধু এ দু’আটি শেষ করার পরিমান সময় অপেক্ষা করতেন, “আল্লাহুম্মা আনতাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। [১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার “আস্তাগফিরুল্ল-হ” বলতেন, তারপর এ দু’আ পড়তেন: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আধাঁর। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত) [১] মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব ফারয সলাতের পরে এ দু’আ পড়তেন: “লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আ’ত্বয়তা, ওয়ালা-মু’ত্বিয়া লিমা- মানা’তা, ওয়ালা-ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু” (অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয় l তার কোন অংশীদার নেই l রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তার জন্যে l তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার। আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর পর উচ্চকন্ঠে বলতেন, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা-হাওলা ওয়ালা-ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা-না’বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস সানা-উল হাসানু, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন” (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শারীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিাকার কোন মা’বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করি, যাবতীয় নি’আমত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষা থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর। [১] সা‘দ (রাঃ) তিনি তার সন্তানদেরকে দু’আর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলতেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ’উযুবিকা মিন আরযালিল উমুরি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া-ওয়া আযা-বিল ক্ববরি” (অর্থাৎ হে আল্লাহ!আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ ও ক্ববরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই)।[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি’আমতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সলাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সলাত আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে যারা দান-সদক্বাহ করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদগামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো আমাল করবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুহ হে আল্লাহর রসূল! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা প্রতি সলাতের পর ‘সুবহা-নাল্লাহ’, ‘আল্ল-হু আকবার’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের আমালের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ আমার করছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা আল্লাহ তা’আলার কুরুনা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সলাতের পর দশবার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আলাহমাদু লিল্লা-হ, ‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়। [১] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রতি ফারয সলাতের পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ আছে যেগুলো পাঠকারী বা আমালকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো হলো: ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সলাতের শেষে ‘সুব্‌হা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্‌দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ওয়াহুওয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর” (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। (মুসলিম) [১]

【55】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্‌ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফার্‌য সলাতের শেষের দু‘আ। (তিরমিযী) [১] উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) ‘উক্ববাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতি সলাতের শেষে “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্‌ না-স” ও “কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব” পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন”। (আহ্‌মাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, বায়হাক্বী-দা‘ওয়াতুল কাবীর) [১] আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যারা ফাজ্‌রের সলাত শেষ করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌রে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, ইসমা’ঈল (আঃ)–এর সন্তান থেকে চারজনকে দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর যারা ‘আস্‌রের সলাতের শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌রে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, চারজনকে আযাদ করার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। (আবূ দাঊদ) [১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি ফাজ্‌রের সলাত জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিক্‌র করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ‘উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ‘উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (তিরমিযী) [১]

【56】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আযরাক্ব ইবনু ক্বায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমাদের ইমাম, যার উপনাম ছিল আবূ রিমসাহ্‌ (রাঃ), তিনি আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন। সলাতের শেষে তিনি বললেন, আমি এ সলাত অথবা এ সলাতের মতো সলাত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে আদায় করেছি। আবূ রিমসাহ্‌ বলেন, আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) প্রথম কাতারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডানপাশে দাঁড়ালেন। এক লোক এসে সলাতের প্রথম তাকবীরে উপস্থিত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করালেন। অতঃপর তিনি তার ডানে ও বামে সালাম ফিরালেন এমনকি আমরা তাঁর দুই গালের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরলেন, যেভাবে রিমসাহ্‌ ফিরছেন। যে ব্যক্তি প্রথম তাকবীর পেয়েছিল, সে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে লাগল। ‘উমার তার দিকে চড়াও হলেন এবং তার দু’ কাঁধ ধরে ধাক্কা দিয়ে বললেন, বসে যাও। কারণ আহ্‌লে কিতাবরা ধ্বংস হয়েছে এজন্য যে, তারা দু’ সলাতের মাঝে কোন পার্থক্য করত না। ‘উমার-এর এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, হে খাত্ত্বাবের ছেলে! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। (আবু দাঊদ) [১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সলাতের শেষে ‘সুব্‌হা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার পাঠ করতে। একজন আনসারী স্বপ্নে দেখতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তোমাদেরকে প্রতি সলাত শেষে এতো এতো বার তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলল, হ্যাঁ। মালাক (ফেরেশ্‌তা) বললেন, এ তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করবে। এবং এর সাথে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যা বলা হয়েছে তাই করো। (আহ্‌মাদ, নাসায়ী, দারিমী) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ মিম্বারের কাঠের উপর বসে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি সলাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়বে তাকে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বিষয় জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। আর যে ব্যক্তি ঘুমাবার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার ঘর, প্রতিবেশীদের ঘর ও তার চারপাশের ঘর-বাড়ীর নিরাপত্তা দিবেন। এ হাদীসটি বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এর সূত্র দুর্বল। [১] ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজ্‌র ও মাগরিবের সলাতের শেষে জায়গা হতে উঠার ও পা ঘুরানোর আগে এ দু‘আ দশবার পড়েঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহ্‌ লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহ্‌য়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর” (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)। তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়। আর এ দু‘আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শয়তান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্‌ক ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ‘আমালের দিক দিয়ে এ লোক হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যাতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ‘আমাল করবে। (আহ্‌মাদ) [১] আবূ যার (রাঃ) এ বর্ণনাটি ইমাম তিরমিযী আবূ যার (রাঃ)-এর সূত্রে .... “ইল্লাশ্‌ শির্‌কা” পর্যন্ত হুবহু বর্ণনা করেছেন। সে তার বর্ণনায় <<صَلَاةَ الْمَغْرِبِ>> “সালা-তাল মাগরিব” ও <<بِيَدِهِ الْخَيْرُ>> “বিয়াদিহিল খয়র” শব্দ উল্লেখ করেনি। (তিনি [তিরমিযী] বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।) [১] ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সৈন্য বাহিনী নাজ্‌দ-এর দিকে প্রেরণ করলেন। তারা অনেক গানীমাতের মাল প্রাপ্ত হলেন এবং দ্রুত মাদীনায় ফিরে এলেন। আমাদের মাঝে এক লোক যে ঐ বাহিনীর সাথে বের হয়নি, সে বলল, আমরা এমন কোন বাহিনী দেখিনি এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত উত্তম গানীমাতের মাল নিয়ে ফেরত আসতে। এটা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি দলের নির্দেশনা দেব না যারা গানীমাতের মালেও দ্রুত ফিরে আসার ব্যাপারে এদের চেয়েও উত্তম? তিনি বললেন, যারা ফাজ্‌রের সলাতে হাজির হয়, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর যিক্‌র করে। এরাই দ্রুত ফিরে আসা ও উত্তম গানীমাতের মাল আনার লোকদের চেয়েও বেশী উত্তম। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব। আর এর একজন বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনু আবূ হুমায়দ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল।) [১]

【57】

প্রথম অনুচ্ছেদ

মু‘আবিয়াহ্ ইবনু হাকাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করি। যখন মুসল্লীদের মাঝে থেকে একজন হাঁচি দিলো তখন আমি ‘ইয়ারহামুকাল্ল-হ’ বললাম। ফলে লোকজন আমার প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপন করল। আমি বললাম, তোমাদের মা সন্তানহারা শোকাহত হোক। তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আমার দিকে এমন করে তাকাচ্ছো? মুসল্লীরা আমাকে নীরব করানোর জন্য নিজ নিজ রানের উপর হাত দিয়ে মারতে লাগল। আমি যখন লক্ষ্য করলাম তারা আমাকে চুপ থাকতে বলছে, তখন আমি নীরব হয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করলেন। আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্যে উৎসর্গ হোক। তার চেয়ে এত চমৎকার শিক্ষাদানে কোন শিক্ষক তার পরবর্তীকালে বা তার পূর্ববর্তীকালে আমি দেখিনি। তিনি আমাকে না ধমকি দিলেন, না মারলেন, না বক্‌লেন। তিনি শুধু এতটুকু বললেন, এ সলাতে মানবীয় কথাবার্তা বলা উপযুক্ত নয়। সলাত হলো ‘তাসবীহ’ পড়া, ‘তাকবীর’ বলা ও কুরআন পড়ার নাম। অথবা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনটি বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি জাহিলী যুগ ত্যাগকারী এক নতুন বান্দা। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসছেন। আমাদের মধ্যে অনেকে গণকের কাছে আসে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের কাছে আসবে না। আমি আবেদন করলাম, আমাদের অনেকে শুভ-অশুভ লক্ষণ মানে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা তারা নিজেদের মনের মধ্যে পেয়ে থাকে। তা যেন তাদেরকে কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে। মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি আবার বললাম, আমাদের মধ্যে এমন কতগুলো লোক আছে যারা রেখা টানে (ভবিষ্যদ্বানী করে)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নাবীদের মধ্যে একজন নাবী রেখা টানতেন। অতএব কারো রেখা টানা এ নাবীর রেখা টানার সাথে মিল থাকলে ঠিক আছে। (মুসলিম; মিশকাত সংকলকের উক্তি- তিনি বলেন, আমি “ওয়ালাকিন্নী সাকাততু”-কে সহীহ মুসলিম ও হুমায়দীর পুস্তকে এভাবে পেয়েছি। তবে জামিউল উসূল-এর লেখক লাকিন্নী শব্দের উপর كزا শব্দের দ্বারা বিশুদ্ধতার প্রতি ইশারা করছে।) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালামের জবাব দিতেন। আমরা যখন নাজাশী বাদশাহর নিকট থেকে ফিরে এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম দিলাম, তখন তিনি আমাদের সালামের জবাব দেননি। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনাকে সলাতের মধ্যে সালাম দিতাম, আপনি সালামের জবাব দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের মধ্যে অবশ্যই ব্যস্ততা আছে। (বুখারী, মুসলিম) [১] মু‘আয়ক্বীব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে এক লোক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে ব্যক্তি সলাতে সাজদার স্থানের মাটি সমান করে। তিনি বললেন, যদি তা করতেই চাও তবে শুধু একবার তা করবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে কোমর বা কাঁধে হাত রেখে ক্বিয়াম করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাতে এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেন, এটা ছোঁ মারা। শয়তান বান্দাকে সলাত হতে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সলাতে দু‘আ করার সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে। (মুসলিম) [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লোকজন নিয়ে সলাত পড়াতে দেখেছি। এমতাবস্থায় নাতনি উমামাহ্‌ বিনতু আবুল ‘আস তখন তাঁর কাঁধে থাকত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ‘তে যেতেন উমামাকে নিচে নামিয়ে রাখতেন। আবার যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্‌ হতে মাথা উঠাতেন, তাকে আবার কাঁধে উঠিয়ে দিতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতে তোমাদের কারো ‘হাই’ আসলে যথাসাধ্য তা আটকে রাখবে। কারণ (‘হাই’ দেয়ার সময়) শয়তান (মুখে) ঢুকে যায়। (মুসলিম) [১] ইমাম বুখারীর এক বর্ণনায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও সলাতের মধ্যে ‘হাই’ আসে, তখন সে যেন স্বীয়শক্তি অনুযায়ী তা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করে এবং ‘হা’ করে মুখ খুলে না দেয়। নিশ্চয়, এটা শায়ত্বনের পক্ষ হতেই হয়ে থাকে, শয়তান তাতে হাসে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ গত রাতে একটি ‘দুষ্ট জিন্’ আমার নিকট ছুটে এসেছে, আমার সলাত বিনষ্ট করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ক্ষমতা দিলেন। ফলে আমি তাকে ধরে ফেললাম। আমি ইচ্ছা করলাম মাসজিদে নাবাবীর কোন একটি খুঁটির সাথে একে বেঁধে ফেলতে, যাতে তোমরা সকলে একে দেখতে পারো। সে মুহূর্তে আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর এ দু‘'আটি স্মরণ করলাম, “রাব্বি হাব্লী মুলকান লা- ইয়াম্বাগী লিআহাদীম মিম্‌ বা’দী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে এমন একটি বাদশাহী দান করো, যা আমার পর আর কারো জন্যে সমীচীন হবে না)। তারপর আমি একে অপদস্ত করে ফেরত দিয়েছি। (বুখারী, মুসলিম) [১] সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ সলাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুব্‌হা-নাল্ল-হ' পড়ে নেয়। আর হাত তালি একমাত্র মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট। আরো এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তাসবীহ পড়া পুরুষদের বেলায়, আর হাত তালি দেয়া নারীদের বেলায় প্রযোজ্য। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【58】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাবশাহ্‌ যাওয়ার পূর্বে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সলাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও আমাদের সালামের উত্তর দিতেন। আমরা যখন হাবাশাহ্‌ হতে ফিরে (মাদীনায়) আসি আমি তখন তাকে সলাতরত অবস্থায় পাই। তারপর আমি তাকে সালাম দিলাম কিন্তু তিনি আমাকে সালামের জবাব দিলেন না সলাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, তরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন যে বিষয় ইচ্ছা করেন সে বিষয় আদেশ জারী করেন। আল্লাহ এখন সলাতে কথাবার্তা না বলার আদেশ জারী করেছেন। অতঃপর তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন। [১] এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সলাত শুধু কুরআন পড়া ও আল্লাহর যিক্‌র করার জন্য। অতএব তোমরা যখন সলাত আদায় করবে তখন এ অবস্থায়ই থাকবে। (আবূ দাঊদ) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিলালকে প্রশ্ন করলাম, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতরত থাকা অবস্থায় তারা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব কিভাবে দিতেন? বিলাল উত্তরে বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত দিয়ে (সালামের জবাবে) ইশারা করতেন। (তিরমিযী; নাসায়ীর বর্ণনাও এমনই। তবে তাতে বিলাল-এর স্থলে সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ হয়েছে।) [১] রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সলাত আদায় করলাম। (সলাতের মধ্যে) আমি হাঁচি দিলাম। আমি ক্বালিমায়ে হাম্‌দ অর্থাৎ “আলহাম্দু লিল্লা-হি হাম্‌দান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্‌ মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান ‘আলায়হি কামা- ইউহিব্বু রব্বুনা- ওয়া ইয়ার্‌যা-” পাঠ করলাম। সলাত শেষ করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে বললেন, সলাতের মাঝে কথা বলল কে? এতে কেউ কোন কথা বলেনি, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় প্রশ্ন করলেন। তবুও কেউ কোন কথা বলেনি। তৃতীয়বার তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার প্রশ্ন করলেন। এবার রিফা‘আহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঐ জাতের শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! ত্রিশের বেশি মালাক (ফেরেশ্‌তা) এ ক্বালিমায়ে হাম্‌দগুলো কার আগে কে উপরে নিয়ে যাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। (তিরমিয়ী, আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ সলাতে ‘হাই’ তোলা শায়ত্বনের কর্ম। অতএব সলাতে তোমাদের কেউ হাই তুললে তা যথাসম্ভব বারণ করার চেষ্টা করবে। (তিরমিযী; তাঁর অন্য বর্ণনা ও ইবনু মাজাহ-এর বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছেঃ অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সলাতে ‘হাই’ আসলে সে যেন নিজের হাত মুখের উপর রাখে।) [১] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন উযূ করে তখন সে সুন্দর করে উযূ করবে। তারপর সলাতের উদ্দেশ্য করে মাসজিদে যাবে। আর তখন এক হাতের আঙ্গুলকে অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাবে না। কেননা সে সলাতে আছে। (আহ্মাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী) [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা সলাতের মধ্যে থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার সঙ্গে থাকেন, যতক্ষন না সে এদিক সেদিক দৃষ্টি ফেরায়। আর সে এদিক সেদিক নযর করলে তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আনাস! সলাতে তুমি তোমার দৃষ্টিকে সাজদার স্থানে রাখবে। (এ হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্বী ‘সুনানে কাবীরের আনাস (রাঃ) থেকে হাসান এর সূত্রে হাদীসটি মারফূ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন)। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আমার বৎস! সলাতে এদিক-সেদিক তাকানো থেকে সাবধান থাকো। কারণ সলাতে (ঘাড় ফিরিয়ে) এদিক-সেদিক লক্ষ্য করা ধ্বংসাত্নক কান্ড। যদি নিরুপায় হয়ে পড় তবে নাফ্‌ল সলাতের ক্ষেত্রে (অনুমতি থাকবে) ফার্‌জ সলাতের ক্ষেত্রে নয়। (তিরমিযী) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের মাঝে ডানদিকে বামদিকে লক্ষ্য করতেন, পেছনের দিকে গর্দান ঘুরাতেন না। (তিরমিযী, নাসায়ী) [১] ‘আদী ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের মাঝে হাঁচি আসা, তন্দ্রা আসা, হাই তোলা, মাসিক হওয়া, বমি হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হওয়া শয়তান কর্তৃক আয়োজিত হয়। (তিরমিযী) [১] মুত্বর্রিফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট আসলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি সলাত আদায় করতেছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাত আদায় করতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর সিনার মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ থাকত। (আহমাদ, নাসায়ী প্রথমাংশটুকু, আবূ দাঊদ দ্বিতীয়াংশটুকু বর্ণনা করেছেন) [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়াবে সে যেন হাত দিয়ে পাথর ঘষে না উঠায়। কেননা রহ্‌মাত তার সম্মুখ দিয়ে আগমন করে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমদের ‘আফলাহ’ নামক গোলামকে দেখলেন যে, সে যখন সাজদায় যায় (তখন সাজদার স্থান সাফ করার জন্য) ফুঁ দেয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আফ্লাহ! তুমি তোমার চেহারাকে ধূলিময় করো। (তিরমিযী) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ সলাতে কোমরে হাত বেঁধে দাঁড়ানো জাহান্নামীদের বিশ্রাম স্বরূপ। (শারহুস সুন্নাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতরত অবস্থায়ও দু’ ‘কালোকে’ হত্যা করো অর্থাৎ সাপ ও বিচ্ছুকে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী অর্থের দিক দিয়ে) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন এমতাবস্থায় দরজা বন্ধ থাকত। আমি এসে দরজা খুলতে বলতাম। তিনি হেঁটে এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার মুসাল্লায় চলে যেতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, দরজা ছিল ক্বিবলামুখী। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ীতে অনুরূপ) [১] ত্বালক বিন ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ সলাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন নিঃশব্দে বাতাস বের করে, সে যেন ফিরে গিয়ে উযূ করে এসে পুনরায় সলাত আদায় করে নেয়। (আবূ দাঊদ; এ বর্ণনাটিকে ইমাম তিরমিযীও কিছু বেশ কম করে বর্ণনা করেছেন।) [১] ‘আয়িশাহ্ সিদ্দীক্বা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে উযূ ভঙ্গ করে ফেলে সে যেন তার নাক চেপে ধরে তারপর সলাত ছেড়ে চলে আসে। (আবূ দাঊদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকের শেষ পর্যায় উপনীত হয়, আর সালাম ফিরানোর আগে উযূ ভঙ্গ হয়ে যায়, তবুও তার সলাত বৈধ হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটির সূত্র শক্তিশালী নয় এবং তার সূত্রের মাঝে গণ্ডগোল মনে করছেন হাদীস বিশারদগণ।) [১]

【59】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের জন্যে বের হলেন। যখন তাকবীর দিলেন তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেছনের দিকে ফিরলেন এবং সাহাবীদেরকে ইশারা করে বললেন, তোমরা যেভাবে আছো সেভাবে থাকো। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে গেলেন। গোসল করলেন। তারপর আসলেন। এমতাবস্থায় তার চুল থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি সহাবীদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তারপর যখন সলাত শেষ করলেন তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি অপবিত্র ছিলাম। গোসল করতে ভুলে গিয়েছিলাম। (আহ্‌মা্দ) [১] ইমাম মালিক হাদীসটি ইমাম মালিক ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে মুরসালরুপে বর্ণনা করেছেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুহরের সলাত আদায় করতাম। আমি এক মুষ্টি পাথর হাতে নিতাম আমার হাতের তালুতে শীতল করারা জন্যে। প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচার জন্যে এ পাথরগুলোকে সাজদার স্থানে রাখতাম। (আবূ দাঊদ, নাসায়ীতে অনুরূপ) [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। আমরা তাঁকে সলাতে “আ‘ঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা” পরতে শুনলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন, “আমি তোমাদের ওপর অভিশাপ করছি, আল্লাহর অভিশাপ দ্বারা”। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত প্রশস্ত করলেন, যেন তিনি কোন জিনিস নিচ্ছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল। আজ আমরা আপনাকে সলাতে এমন কথা বলতে শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি। আর আজ আমরা আপনাকে হাত বিস্তার করতেও দেখেছি। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলীস আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্যে আগুনের টুকরা হাতে করে নিয়ে এসেছিল। তখন আমি তিনবার বলেছিলাম, “আ‘ঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা” (আমি আল্লাহর কাছে তোমার শত্রুতা হতে আশ্রয় চাই)। এরপর আমি বলেছি, আমি তোমার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করছি, আল্লাহর সম্পূর্ণ লা’নত দ্বারা। এতে সে দূরে সরেনি। তারপর আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করলাম। আল্লাহর শপথ! যদি আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর দু‘আ না থাকত তাহলে (সে মাসজিদের খাম্বায়) ভোর পর্যন্ত বাঁধা থাকত। আর মাদীনার শিশু-বাচ্চারা একে নিয়ে খেলতো। (মুসলিম) [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গমন করলেন, তখন সে সলাত আদায় করছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে সালাম প্রদান করলেন। সে ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সালামের উত্তর স্বশব্দে দিলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, তোমাদের কোন লোককে সলাতরত অবস্থায় সালাম দেয়া হলে তার উত্তর স্বশব্দে দিতে নেই, বরং নিজের হাত দিয়ে ইশারা করবে। (মালিক) [১]

【60】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তি সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে তার নিকটে শয়তান আসে। সে তাকে সন্দেহ-সংশয়ে ফেলে দেয়, এতে সে স্মরণ রাখতে পারে না কত রাক্‘আত সলাত সে আদায় করছে। তাই তোমাদের কোন ব্যক্তি এ অবস্থাপ্রাপ্ত হলে সে যেন (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করে। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আত্বা বিন ইয়াসার (রহঃ) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সলাতের মধ্যে সন্দেহ করে যে, সে কতটুকু সলাত আদায় করছে? তিন রাক্‘আত না চার রাক্‘আত, তাহলে সে যেন সন্দেহ দূর করে। যে সংখ্যার উপর দৃঢ়তা সৃষ্টি হয় তার ওপর নির্ভর করবে। তারপর সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টো সাজদাহ্ করবে। যদি সে পাঁচ রাক্‘আত সলাত আদায় করে থাকে তাহলে এ সাজদাহ্ এ সলাতকে জোড় সংখ্যায় (ছয় রাক্‘আতে) পরিণত করবে। যদি সে পুরো চার রাক্‘আত আদায় করে থাকে তাহলে এ দু’ সাজদাহ্ শায়ত্বনকে লাঞ্ছনাকারী গণ্য হবে। (মুসলিম; ইমাম মালিক এ হাদীসটিকে ‘আত্বা হতে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছে যে, সলাত আদায়কারী এ দু’ সাজদাহ্ দিয়ে পাঁচ রাক্‘আতকে জোড় সংখ্যা বানাবে।) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) (তিনি বলেন) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত পাঁচ রাক্‘আত আদায় করে নিলেন। তাঁকে বলা হলো, সলাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, কি হয়েছে? সহাবীরা বললেন, আপনি সলাত পাঁচ রাক্‘আত আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পরে দু’ সাজদাহ্ করে নিলেন। আর এক সূত্রে এ শব্দগুলোও আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আমিও একজন মানুষ। তোমাদের যেমন ভুল হয়, আমারও তেমন ভুল হয়। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সলাতে সন্দেহ করলে সে যেন সঠিকটি চিন্তা-ভাবনা করে এবং সে সঠিক চিন্তার উপর সলাত পূর্ণ করে। তারপর সে যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টো সাজদাহ্ করে। (বুখারী, মুসলিম) [১] ইবনু সীরীন (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপরাহ্ণের দু’ সলাতের (যুহর অথবা ‘আস্‌রের) কোন এক সলাত আমাদেরকে নিয়ে আদায় করালেন, যার নাম আবূ হুরায়রাহ্‌ আমাকে বলেছিলেন, কিন্তু আমি ভুলে গেছি। আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে নিয়ে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করে তারপর সালাম ফিরালেন। পরপরই মাসজিদে আড়াআড়িভাবে রাখা একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল যে, তিনি খুব রাগতঃ অবস্থায় আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন এবং স্বীয় ডান মুখমণ্ডললকে বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাদের তাড়া আছে তারা জলদি মাসজিদের বিভিন্ন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তারা বলতে লাগলো, সলাতকে কমানো হয়েছে? যারা তখনো মাসজিদে ছিল তাদের মধ্যে আবু বাক্‌র ও ‘উমারও ছিলেন। কিন্তু তারা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল। সহাবীদের মধ্যে এক ব্যক্তি লম্বা হাত বিশিষ্ট ছিল। আর সেজন্য তাকে যুল্‌ ইয়াদায়ন অর্থাৎ দু’ হাতওায়ালা বলা হত। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন বা সলাতকে কমানো হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি ভুলিনি, সলাতও কমানো হয়নি। তারপর তিনি সহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমারাও কি তাই বলছো যা যুল্‌ ইয়াদায়ন বলছে? সহাবীরা আরয করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ কথা সঠিক। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে যে দু’ রাক্‘আত সলাত ছুটে গিয়েছিল তা পড়ে নিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন তারপর তাকবীর বললেন। অতঃপর পূর্বের সাজদার মতো সাজদাহ্‌ করলেন বা তার চেয়েও বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন তারপর তাকবীর দিলেন এবং সাজদাহ্‌ করলেন। তার অন্য সাজদার মতো বা তার চেয়ে বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন। ইতোমধ্যে লোকসকল ইবনু সীরীনকে জিজ্ঞেস করল তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সালাম ফিরালেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, আমাকে অবহিত করা হয়েছে। যে ‘ইমরান ইবনু হুসাইন বলেছেন তারপর তিনি সালাম ফিরালেন। (বুখারী ও মুসলিম; মূল পাঠ বুখারীর। মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল্‌ ইয়াদায়নের জবাবে বললেন, “না ভুলেছি আর না সলাত কমানো হয়েছে”। অন্য স্থানে বলেছেন, “যা তোমরা বলছো তার কোনটাই না। তিনি আবেদন করলেন, “হে আল্লাহর রসূল! এর কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে।”) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদেরকে যুহরের সলাত আদায় করালেন। তিনি প্রথম দু’ রাক্‘আত পড়ে (প্রথম বৈঠকে বসা ছাড়া তৃতীয় রাক্‌‘আতের জন্য) দাঁড়িয়ে গেলেন, বসলেন না। অন্যান্যরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমনকি সলাত যখন শেষ করলেন এবং লোকেরা সালাম ফিরাবার অপেক্ষা করলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা অবস্থায় তাকবীর দিলেন এবং সালাম ফিরাবার পূর্বে দু’টি সাজদাহ্‌ করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【61】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাতের মাঝে তাঁর ভুল হয়ে গেলো। তিনি দু’টি সাজদাহ্‌ দিলেন। তারপর তিনি আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করলেন এবং সালাম ফিরালেন। (ইমাম তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব) [১] মুগীরাহ্ বিন শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করার পর (প্রথম বৈঠকে না বসে তৃতীয় রাক্‌‘আতের জন্যে) উঠে গেলে যদি সোজা দাঁড়িয়ে যাবার পূর্বে মনে হয় তাহলে সে যেন বসে যায়। আর যদি সোজা দাঁড়িয়ে যায় তবে সে বসবে না (এবং শেষ বৈঠকে) দু’টি সাহ্‌উ সাজদাহ্‌ করবে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১]

【62】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আস্‌রের সলাত আদায় করালেন। তিনি তিন রাক্‌‘আত পড়ে সালাম ফিরালেন তারপর ঘরে প্রবেশ করলেন। খিরবাক্ব নামক এক লম্বা হাতওায়ালা লোক দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তাঁর নিকট ঘটনাটি আলোচনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগান্বিত অবস্থায় নিজ চাদর টানতে টানতে মানুষের কাছে পৌঁছলেন অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলেছে তা-কি সত্য? সহাবীগন বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর এক রাক্‌‘আত সলাত আদায় করলেন তারপর সালাম ফিরালেন, তারপর দু’টি সাহ্‌উ সাজদাহ্‌ দিলেন তারপর সালাম ফিরালেন। (মুসলিম) [১] ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, সলাত আদায় করতে যে ব্যক্তি কম (রাক্‌‘আত) পড়ার সন্দেহ করে, সে যেন সলাত আদায় করে যতক্ষণ পর্যন্ত বেশী আদায়ের সন্দেহ না করে। (আহ্‌মাদ) [১]

【63】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ্ আন্ নাজ্‌ম- এ সাজদাহ্‌ করেছেন। তার সাথে মুসলিম, মুশরিক, জিন্ ও মানুষ সাজদাহ্ করেছে। (বুখারী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সূরাহ্‌ ইনশিক্বাক্ব ও সূরাহ্‌ আল ‘আলাক্ব-এ সাজদাহ্‌ করেছি। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন, আর আমরা তাঁর নিকটে থাকতাম, তখন তিনি সাজদায় গেলে আমরাও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সাজদাহ্‌ করতাম। এ সময় এত ভিড় হত যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল মাটিতে রাখার জায়গা পেতো না যার উপর সে সাজদাহ্‌ করবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে সূরাহ্‌ নাজম পাঠ করেছি। তিনি এতে সাজদাহ্‌ করেননি। (বুখারী, মুসলিম) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূরাহ্ সাদ-এর সাজদাহ্ বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সূরায় সাজদাহ্ করতে দেখেছি। [১] মুজাহিদ (রহঃ) আমি 'আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, সূরাহ্ সাদ-এ সাজদাহ্ করবো কি-না? উত্তরে তিনি (ইবনু ‘আব্বাস) “তাঁর বংশধরের মধ্যে থেকে দাঊদ ও সুলায়মান” পাঠ করতে করতে এই বাক্য পৌঁছলেন- “সুতারাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর”- (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৮৪-৯০)। অতঃপর বললেন, তোমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ লোকদের মধ্যে গণ্য যাদের প্রতি আগের নাবীর আনুগত্য করার নির্দেশ ছিল। (বুখারী) [১]

【64】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কুরআনে ১৫টি সাজদাহ্ শিখিয়েছেন। এর মাঝে তিনটি সাজদাহ্ মুফাসসাল সূরায় এবং দু’ সাজদাহ্ সূরাহ্ আল হাজ্জ-এর মধ্যে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সূরাহ্ আল হাজ্জ-এর কি দু’টি সাজদাহ্ করার কারণে এমন মর্যাদা? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যক্তি এ দু’টি সাজদাহ্ করবে না সে যেন এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত না করে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসের সূত্র মজবুত নয়। আর মাসাবীহ হতে শারহুস্ সুন্নাহ্‌র মতো “সে দু'’টো সাজদার আয়াত যেন না পড়ে”-এর স্থলে “'তাহলে সে যেন এ সূরাকে না পড়ে” এসেছে।) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাতে সাজদাহ্ করলেন, তারপর কিয়াম করলেন। তারপর রুকূ’ করলেন। মানুষেরা মনে করলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তানযীল আস্ সাজদাহ্ সূরাহ পড়েছেন। (আবূ দাঊদ) [১] উক্ত রাবী [‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে কুরআন মাজীদ পাঠ করতেন। যখন সাজদার আয়াতে পৌছতেন তাকবীর বলে সাজদাহ্ দিতেন। আমরাও তাঁর সাথে সাজদাহ্ করতাম। (আবূ দাঊদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন সাজদার আয়াত পাঠ করলেন। তাই (উপস্থিত) সকল সহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সঙ্গে সাজদাহ্ করলেন। সাজদাকারীদের কেউ তো সওয়ারীর উপর ছিলেন, আর কেউ জমিনে সাজদাকারী। আরোহীরা তাদের হাতের ওপরই সাজদাহ্ করলেন। (আবু দাঊদ) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় যাওয়ার পর মুফাস্‌সাল সূরার কোন সূরায় সাজদাহ্‌ করেননি। (আবূ দাঊদ) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তিলাওয়াতের সাজদায় এ দু‘আ পড়তেনঃ “সাজাদা ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী খলাক্বাহূ ওয়া শাক্বা সাম্‌‘আহু ওয়া বাসারাহূ বিহাওলিহী ওয়া ক্যুওয়াতিহী” (অর্থাৎ আমার চেহারা ওই জাতে পাককে সাজদাহ্ করল যিনি একে সৃষ্টি করেছে। নিজের শক্তি ও কুদরতের দ্বারা তাতে কান ও চোখ দিয়েছেন)। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এস আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আজ রাত্রে আমি আমার নিজকে স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি একটি গাছের নিচে সলাত আদায় করছি। আমি যখন সাজদায়ে তিলাওয়াত করলাম তখন এ গাছটিও আমার সাথে সাজদায়ে তিলাওয়াত করল। আমি শুনলাম গাছটি এ দু‘আ পড়ছেঃ “আল্ল-হুম্মাক্‌তুব্ লী বিহা-‘ইনদাকা আজ্‌রান ওয়াযা‘ ‘আন্নী বিহা- বেযরান, ওয়াজ্‘আল্‌হা-লী ‘ইন্দাকা যুখরান ওয়াতা ক্বব্বালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন ‘আব্‌দিকা দাঊদা” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ সাজদার জন্যে তোমার কাছে আমার জন্যে সাওয়াব নির্দিষ্ট করো। এর মাধ্যমে আমার গুনাহ মাফ করে দাও। এ সাজদাকে তোমার নিকট সঞ্চিত সম্পদ বানিয়ে দাও। এ সাজদাহ্‌কে এমনভাবে কবূল করো যেভাবে তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে কবূল করেছ।” ইবনু ‘আব্বাস বলেন, এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদার আয়াত পাঠ করলেন, সাজদাহ্ দিলেন। আমি তাকে ঐ বাক্যগুলো বলতে শুনেছি যা ঐ লোকটি গাছটিকে বলেছে বলে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী; ইবনু মাজাহও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু তার বর্ণনায় “ওয়াতাক্বব্বালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন ‘আব্‌দিকা, দাঊদ” উল্লেখ হয়নি। আর তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব পর্যায়ের।) [১]

【65】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সূরাহ্ আন্ নাজম’ তিলাওয়াত করলেন এবং তাতে সাজদাহ্ করলেন। তাঁর কাছে যেসব মানুষ ছিলেন তারাও সাজদাহ্ করলো। কিন্তু কুরায়শ বংশের এক বৃদ্ধ পাথর অথবা এক মুষ্টি মাটি নিয়ে নিজের কপালের দিকে উঠাল এবং বলল, আমার জন্যে এটাই যথেষ্ট হবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‌‘'উদ (রাঃ) বলেন, আমি এ ঘটনার পর দেখেছি ঐ বৃদ্ধ মানুষটিকে কুফ্‌রী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম; বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে বুড়া লোকটি ছিল উমাইয়্যাহ্ বিন খাল্‌ফ।) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ্ সাদ-এ সাজদাহ্ করেছেন এবং বলেছেন, দাঊদ (আঃ) সূরায়ে সাদ-এর সাজদাহ্ দু‘আ কবুলের জন্যে করেছেন। আর আমরা তার তাওবাহ্ কবূলের কৃতজ্ঞতা স্বীকারস্বরূপ সাজদাহ্ করছি। (নাসায়ী) [১]

【66】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সূর্য উদয়ের ও অস্ত যাওয়ার সময় সলাত আদায়ের জন্য অন্বেষণ না করে। একটি বর্ণনার ভাষা হলো, তিনি বলেছেন, “যখন সূর্য গোলক উদিত হয় তখন সলাত ত্যাগ করবে, যে পর্যন্ত সূর্য বেশ স্পষ্ট হয়ে না উঠবে। ঠিক এভাবে আবার যখন সূর্য গোলক ডুবতে থাকে তখন সলাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যে পর্যন্ত সূর্য সম্পূর্ণভাবে ডুবে না যায়। আর সূর্য উঠার ও অস্ত যাওয়ার সময় সলাতের ইচ্ছা করবে না। কারণ সূর্য শায়ত্বনের দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদয় হয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘উকবাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, তিন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে ও মুর্দা দাফন করতে আমাদেরকে বারণ করেছেন। প্রথম হলো সূর্য উদয়ের সময়, যে পর্যন্ত না তা সম্পূর্ণ উদিত হয়। দ্বিতীয় হলো দুপুরে একবারে সূর্য ঠিক স্থির হওয়ার সময় থেকে সূর্য ঢলার আগ পর্যন্ত। আর তৃতীয় হলো সূর্য ডুবে যাবার সময় যে পর্যন্ত না তা ডুবে যায়। (মুসলিম) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ ফাজ্‌রের সলাতের পর সূর্য উঠে উপরে চলে না আসা পর্যন্ত আর কোন সলাত নেই। আর ‘আস্‌রের সলাতের পর সূর্য না ডুবা পর্যন্ত কোন সলাত নেই। (বুখারী, মুসলিম) [১] আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় তাশরীফ আনলে আমিও মাদীনায় চলে আসলাম। তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমাকে সলাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফাজ্‌রের সলাত আদায় করো। এরপর সলাত হতে বিরত থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শায়ত্বনের দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিরগণ (সূর্য পূজারীরা) একে সাজদাহ্ করে। তারপর সলাত পড়ো। কেননা এ সময়ে (আল্লাহর কাছে বন্দার) সলাতের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও জমিনের উপর না পড়ে (আর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়), এ সময়ও সলাত হতে বিরত থাকো। এজন্য যে এ সময় জাহান্নমকে গরম করা হয়। তারপর ছায়া যখন সামান্য ঢলে যাবে তখন সলাত আদায় করো। সলাতের সময়টা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশ্‌তাদের) উপস্থিতি ও সাক্ষ্য দেয়ার সময় যে পর্যন্ত তুমি ‘আস্‌রের সলাত আদায় না করবে। তারপর আবার সলাত হতে বিরত থাকবে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কারণ সূর্য শায়ত্বনের দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়। এ মুহূর্তে সূর্য পূজক কাফিররা সূর্যকে সাজদাহ্ করে। ‘আম্‌র ইবনু ‘আবাসাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি আবার আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! উযূর ব্যাপরে কিছু বয়ান করুন। তিনি বললেন, তোমাদের যে লোক উযূর পানি তুলে নিবে, কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে নেবে। তাতে তার চেহারার, মুখের ও নাকের ছিদ্রের পাপরাশি ঝরে যায়। সে যখন তার চেহারাকে আল্লাহর নির্দেশ মতো ধুয়ে নেয় তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাঁড়ির পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর সে যখন তার দু’টি হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেয় তখন দু’হাতের পাপ তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে বের হয়ে পানির ফোটার সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে যখন তার মাথা মাসেহ করে তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর যখন সে তার দু’ পা গোছাদ্বয়সহ ধৌত করে তখন তার দু’ পায়ের পাপ তার আঙ্গুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে উযূ সমাপ্ত করে যখন দাঁড়ায় ও সলাত আদায় করে এবং আল্লাহর উপযুক্ত প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে, আল্লাহর জন্যে নিজের মনকে নিবেদিত করে, তাহলে সলাতের শেষে তার অবস্থা তেমন (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (মুসলিম) [১] কুরায়ব (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস, মিস্‌ওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ ও ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু আয্‌হার (রাঃ) তারা সকলে তাকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। তারা তাকে বলে দিলেন, ‘আয়িশাকে তাদের সালাম দিয়ে ‘আস্‌রের সলাতের পর দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করার ব্যাপারে প্রশ্ন করতে। কুরায়ব বলেন, আমি ‘আয়িশার নিকট হাযির হলাম। ঐ তিনজন যে খবর নিয়ে আমাকে পাঠালেন আমি সে খবর তার কাছে পৌঁছালাম। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেন, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তাদের কাছে গেলাম, তারপর তারা আমাকে উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। অতঃপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। তিনি এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তারপর আমি দেখলাম, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করছেন। তিনি (এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করে) ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন, আমি খাদিমকে রসূলের দরবারে পাঠালাম এবং তাকে বলে দিলাম, তুমি রসূলকে গিয়ে বলবে যে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অথচ আমি আপনাকে এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে দেখেছি। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ উমাইয়্যার মেয়ে! তুমি ‘আস্‌রের পরে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছ। ‘আবদুল ক্বায়স গোত্রের কিছু লোক (ইসলামী শিক্ষা ও দ্বীনের হুকুম আহকাম জানার জন্য) আমার কাছে আসে। (তাদের দ্বীনের ব্যাপারে আহকাম বলতে বলতে) তারা আমাকে যুহরের পরের দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সলাত আদায় করা থেকে ব্যস্ত রাখেন। সেটাই এ দু’ রাক্‘আত (যে দু’ রাক্‘আত সলাত এখন 'আস্‌রের পরে পড়লাম)। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【67】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ক্বায়স ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে দেখলেন যে, সে ফাজ্‌রের সলাতের পর দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাকে) বললেন, ভোরের সলাত দু’ রাক্‘আত, দু’ রাক্‘আত। সে ব্যক্তি বললো, ফাজ্‌রের ফার্‌য সলাতের পূর্বের দু’ রাক্‘আত সলাত আমি আদায় করিনি। সে সলাতই এখন আদায় করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। (আবু দাঊদ; ইমাম তিরমিযীও এমন বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ বর্ণনার সূত্র মুত্তাসিল নয়। কারণ ক্বায়স ইবনু ‘আম্‌র হতে মুহাম্মাদ ইবনু ইব্‌রা-হীম অত্র হাদীস শ্রবণ করেনি। তাছাড়াও শারহুস্ সুন্নাহ্ ও মাসাবীহের কোন নুসখায় ক্বায়স ইবনু ক্বাহ্‌দ (রাঃ) থেকে এমনই বর্ণিত হয়েছে।) [১] জুবায়র ইবনু মুত্‘ইম (রাঃ) মহানাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আব্‌দ মানাফ-এর সন্তানেরা! তোমরা কাউকে এ ঘরের (খানায়ে কাবার) তাওয়াফ করতে এবং রাত-দিনের যে সময় মনে ইচ্ছা হয় এতে সলাত আদায় করতে নিষেধ করো না (তাকে সলাত আদায় করতে দাও)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মহানাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুপুরের সময় সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন যে পর্যন্ত সূর্য ঢলে না পড়বে। একমাত্র জুমু‘আর দিন ব্যতীত। (শাফি‘ঈ) [১] আবুল খলীল (রহঃ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠিক দুপুরে সলাত আদায় করাকে মাকরূহ মনে করতেন, যে পর্যন্ত না সূর্য ঢলে যায়, একমাত্র জুমু‘আর দিন ছাড়া। তিনি আরো বলেন, জুমু‘আর দিন ব্যতীত প্রতিদিন দুপুরে জাহান্নামকে গরম করা হয়। [আবূ দাঊদ; তিনি বলেছেন- আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ)-এর সাথে আবুল খলীলের সাক্ষাৎ হয়নি (তাই এ হাদীসের সানাদ মুত্তাসিল নয়)।] [১]

【68】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ আস্ সুনাবিহী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সূর্য উঠে তখন এর সঙ্গে শায়ত্বনের শিং থাকে। তারপর সূর্য উপরে উঠে গেলে শায়ত্বনের শিং তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার যখন দুপুর হয়, শয়তান সূর্যের নিকট আসে। আবার সূর্য ঢলে গেলে শয়তান এর থেকে পৃথক হয়ে যায়। আবার সূর্য ডুবার মুহূর্তে শয়তান তার নিকট আসে। সূর্য ডুবে গেলে শয়তান তার হতে পৃথক হয়ে যায়। এসব সময় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (মালিক, আহ্‌মাদ, নাসায়ী) [১] আবূ বাসরাহ্ আল গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে মুখাম্মাস নামক স্থানে ‘আস্‌রের সলাত আদায় করালেন। তারপর বললেন, এ সলাতটি তোমাদের পূর্বের মানুষের উপরও অবশ্য পালনীয় বিধান করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা নষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই যে লোক এ সলাতরে ব্যাপারে যত্নবান হবে সে দ্বিগুণ প্রতিদান পাবে। (তিনি এ কথাও বলেছেন,) ‘আস্‌রের সলাত আদায় করার পর আর কোন সলাত নেই, যে পর্যন্ত শাহিদ উদিত না হবে। আর শাহিদ হলো তারকা। (মুসলিম) [১] মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) তিনি মানুষদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা তো একটি সলাত আদায় করছ। আর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গ পেয়েছি। তবে আমরা তাঁকে এ দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করতে দেখিনি। বরং তিনি তো ‘আস্‌রের সমাপ্তির পরে এ দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী) [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি কাবা ঘরের দরজার উপর উঠে বলেছেন, যিনি আমাকে জানেন তিনি তো জানেনই। আর যারা আমাকে জানেন না তারা জেনে রাখুক, আমি ‘জুনদুব’। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ফাজ্‌রের সলাত আদায় করার পর সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত এবং ‘আস্‌রের সলাতের পর সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোন সলাত নেই, একমাত্র মাক্কায়, একমাত্র মাক্কায়, একমাত্র মাক্কায়। (আহ্‌মাদ, রযীন) [১]

【69】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একা একা সলাত আদায় করার চেয়ে জামা‘আতে সলাত আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশি হয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন নিবদ্ধ। আমি মনে করেছি কোন (খাদিমকে) লাকড়ি জোগার করার আদেশ করব। লাকড়ি জোগার করা হলে আমি (‘ইশার) সলাতের আযান দিতে আদেশ করব। আযান হয়ে গেলে সলাতের ইমামতি করার জন্যে কাউকে আদেশ করব। তারপর আমি ঐসব লোকের খোঁজে বের হবো (যারা কোন কারণ ছাড়া জামা‘আতে সলাত পড়ার জন্য আসেনি)। অপর সূত্রে আছেঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন, আমি ঐসব লোকের কাছে যাবো যারা সলাতে হাযির হয় না এবং আমি তাদেরকে ঘরবাড়ীসহ জ্বালিয়ে দেব। সে সত্বার কসম যার হাতে আমার জীবন আবদ্ধ! যারা সলাতের জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করে না তাদের কোন ব্যক্তি যদি জানে যে, মাসজিদে মাংস সহ হাড় অথবা (গাভী ও বকরীর) দু’টি ভাল খুর পাওয়া যাবে, তাহলে সে অবশ্যই ‘ইশার সলাতে উপস্থিত হয়ে যেত। (বুখারী, মুসলিম) [১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একজন অন্ধলোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মাসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রসূলের নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন ঘরে সলাত আদায়ের অবকাশ দেয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অবকাশ দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি সলাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে (অর্থাৎ নিজেকে জামা‘আতে শরীক করবে)। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি এক শৈত্য প্রবাহে শীতের রাতে সলাতের আযান দিলেন। আযান দেয়ার পর তিনি বললেন, সাবধান! তোমরা নিজ নিজ আবাসে সলাত আদায় কর। এরপর বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠাণ্ডা শীত-বৃষ্টি মুখর রাতে মুয়ায্‌যিনকে আদেশ দিতেন সে আযান দেয়ার পর যেন বলে দেয়, ‘সাবধান! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সলাত আদায় কর।’ (বুখারী, মুসলিম) [১] উক্ত রাবী [‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো রাতের খাবার সামনে রাখা হলে এমতাবস্থায় সলাতের তাকবীর বলা হলে, তখন রাত্রের খাবার খাওয়া শুরু করবে। খাবার খেতে তাড়াহুড়া করবে না খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ইবুন ‘উমার (রাঃ)-এর সামনে খাবার রাখা হত এমতাবস্থায় সলাত শুরু হলে তিনি খাবার খেয়ে শেষ করার আগে সলাতের জন্য যেতেন না, এমনকি তিনি ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পেলেও। (বুখারী, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে কোন সলাত নেই এবং দু’ অনিষ্ট কাজ (পায়খানা-পেশাব) চেপে রেখেও কোন সলাত নেই। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ সালতের ইক্বামাত দেয়া হলে তখন ফার্‌য সলাত ব্যতীত অন্য কোন সলাত নেই। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী যদি মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‌‘উদ (রাঃ)-এর বিবি যায়নাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন নারী মাসজিদে গেলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে সব মহিলা সুগন্ধি লাগায় তারা যেন ‘ইশার সলাতে আমাদের সঙ্গে আংশগ্রহণ না করে। (মুসলিম) [১]

【70】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মাসজিদে আসতে নিষেধ করো না। তবে সলাত আদায়ের জন্য তাদের জন্যে ঘরই উত্তম। (আবূ দাঊদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের তাদের ঘরের মাঝে সলাত আদায় করা তাদের বাইরের ঘরে সলাত আদায় করার চেয়ে ভাল। আবার কোন কামরায় তাদের সলাত আদায় করা তাদের ঘরে সলাত আদায় করার চেয়ে ভাল। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার মাহবুব আবুল ক্বাসিম (রসূলুল্লাহ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ঐ মহিলার সলাত কবূল হবে না যে সুগন্ধি মেখে মাসজিদে যায়, যতক্ষণ সে গোসল না করে নাপাকী থেকে গোসল করার ন্যায়। (আবূ দাঊদ, আহ্‌মাদ, নাসায়ী) [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুণরায় বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সব সলাতের মাঝে এ দু’টি সলাত (ফাজ্‌র ও ‘ইশা) মুনাফিক্বদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তোমরা যদি জানতে এ দু’টি সলাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা হাঁটুর উপর ভর করে হলেও সলাতে আসতে। সলাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্‌’র (ফেরেশ্‌তাদের) কাতারের মতো (মর্যাদাপূর্ণ)। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌছার চেষ্টা করতে। আর একা একা সলাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সলাত আদায় করা অনেক সাওয়াব। আর দু’জনের সাথে মিলে সলাত আদায় করলে একজনের সাথে সলাত আদায় করার চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সলাত আদায় করা হয়, তা আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে গ্রামে বা জঙ্গলে তিনজন মানুষ বসবাস করবে, সে স্থানে জামা‘আতে সলাত আদায় করা না হলে তাদের ওপর শয়তান জয়ী হয়। অতএব তুমি জামা‘আতকে নিজের জন্যে অপরিহার্য করে নাও। কারণ দলচ্যুত ছাগলকে নেকড়ে বাঘ ধরে খেয়ে ফেলে। (আহ্মাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মুয়ায্যিনের আযান শ্রবণ করল এবং আযান শেষে সলাতের জামা‘আতে হাযির হতে তার কোন বাধা সৃষ্টিকারী ওযর না থাকে। লোকেরা প্রশ্ন করল, ওযর কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ভয় বা রোগ (জামা‘আত ছেড়ে দেয়ায়) তার সলাত কবূল হবে না যা সে আদায় করেছে। (আবূ দাঊদ, দারাকুত্বনী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেলে তখন তোমাদের কারো পায়খানার বেগ ধরলে সে যেন আগে পায়খানা করে নেয়। (তিরমিযী, মালিক, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেনঃ তিনটি জিনিস এমন আছে যা করা কারো জন্য বৈধ নয়। প্রথম, কোন লোক যদি কোন জামা‘আতে ইমামতি করে, দু‘আয় জামা‘আতকে অংশগ্রহণ না করে শুধু নিজের জন্য দু‘আ করে। যদি সে এমন করে তাহলে সে জামা‘আতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। দ্বিতীয়, কোন ব্যক্তি যেন কারো ভেতর বাড়িতে অনুমতি ছাড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। যদি কেউ এমন করে তবে সে ব্যক্তি ঐ ঘরওলাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। তৃতীয়, কারো পায়খানায় যাওয়ার দরকার হলে সে তা থেকে হালকা না হয়ে সলাত আদায় করবে না। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আহার বা অন্য কোন কারণে সলাতে দেরি করবে না। (শারহুস্ সুন্নাহ্) [১]

【71】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দেখেছি জামা‘আতে সলাত আদায় করা থেকে শুধু মুনাফিক্বরাই বিরত থাকত যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। তবে যে রুগ্ন লোক দু’ব্যক্তির ওপর ভর করে চলতে পারতো সেও জামা‘আতে আসত। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘উদ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর শিখানো হিদায়াতের পথসমূহ থেকে একটি এই যে, যে মাসজিদে আযান দেয়া হয় সেটাতে জামা‘আতের সাথে সলাত আদায় করা। অপর একটি বর্ণনায় আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সলাত উপযুক্ত সময়ে আদায় করার প্রতি যত্নবান হয়ে যেখানে সলাতের জন্যে আযান দেয়া হয় সেখানে সলাত আদায় করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের রসূলের জন্যে ‘সুনানুল হুদা’ (হিদায়াতের পথ) নির্দিষ্ট করেছেন। জামা‘আতের সাথে এ পাঁচ বেলা সলাত আদায় করাও এ ‘সুনানুল হুদার’ মধ্যে একটি অন্যতম। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সলাত আদায় কর, যেভাবে এ পিছে পড়ে থাকা লোকগুলো (মুনাফিক্ব) তাদের বাড়িতে সলাত আদায় করে, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নাবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা তোমাদের নাবীর হিদায়াতসমূহ ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে। তোমাদের মধ্যে যারা ভাল করে পাক-পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর এসব মাসজিদের কোন মাসজিদে সলাত আদায় করতে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি কদমে একটি করে নেকী দান করবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করবেন এবং তার একটি পাপ মাফ করে দেন। আমি আমাদেরকে দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক্বরা ছাড়া অন্য কেউ সলাতের জামা‘আত থেকে পিছে থাকতো না বরং তাদেরকে দু’জনের কাঁধে হাত দিয়ে এনে সলাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মহানাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যদি ঘরে নারী ও শিশুরা না থাকত তবে আমি ‘ইশার সলাতের জামা‘আত আদায় করতাম এবং আমার যুবকদেরকে (জামা‘আত ত্যাগকারী) মানুষদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিতাম। (আহ্মাদ) [১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেনঃ তোমরা যখন মাসজিদে থাকবে আর সে মুহূর্তে আযান দিলে তোমরা সলাত আদায় না করে মাসজিদ ত্যাগ করবে না। (আহমাদ) [১] আবূ শা‘সা (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক আযান শেষে মাসজিদ থেকে চলে গেল, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, এ লোক আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফরমানী করল। [১] ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক মাসজিদে থাকা অবস্থায় আযান দেয়ার পর বিনা ওযরে বের হলে ও আবার ফিরে আসার ইচ্ছা না থাকলে সে লোক মুনাফিক্ব। (ইবনু মাজাহ) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আযানের শব্দ শুনল অথচ এর জবাব দিলো না তাহলে তাঁর সলাত হলো না। তবে কোন ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (দারাকুত্বনী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! মাদীনায় ক্ষতিসাধনকারী অনেক জানোয়ার ও হিংস্র জন্তু আছে। আর আমি একজন জন্মান্ধ লোক। এ সময় আপনি কি আমাকে (জামা‘আতে যাওয়া থেকে) অবকাশ দিতে পারেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ্‌, হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ” শব্দ শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ (আমি শুনতে পাই)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন, তাহলে তোমাকে জামা‘আতে আসতে হবে। তাকে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা‘আত ত্যাগের অনুমতি দিলেন না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আবুদ্‌ দারদা (রাঃ) আমার নিকট রাগান্বিত অবস্থায় আসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, কোন্‌ জিনিস তোমাকে এত রাগান্বিত করল? জবাবে আবুদ্‌ দারদা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মাঝে জামা‘আতে সলাত আদায় করা ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখতে পাই না মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের। (বুখারী) [১] আবূ বাকর ইবনু সুলায়মান ইবনু আবূ হাসমাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ফাজ্‌রের সলতে (আমার পিতা) সুলায়মানকে হাযির পাননি। সকালে ‘উমার হাটে গেলেন। সুলায়মানের বাড়ীটি মাসজিদ ও হাটের মাঝামাঝি স্থানে। তিনি সুলায়মান-এর মা শিফা-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, কি ঘটনা আজ সুলায়মানকে ফাজ্‌রের জামা‘আতে দেখলাম না! সুলায়মানের মা উত্তর দিলেন, আজ সারা রাতই সুলায়মান সলাতে অতিবাহিত করেছে। তাই ঘুম তার ওপর বিজয়লাভ করেছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি সারা রাত সলাতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে আমার নিকট ফাজ্‌রের সলাতের জামা‘আতে অংশগ্রহণ করাটা বেশী প্রিয়। (মালিক) [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ দু’ব্যক্তি ও এর বেশী হলে সলাতের জামা‘আত হতে পারে। (ইবনু মাজাহ) [১] বিলাল ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ মহিলারা মাসজিদে যাওয়ার জন্যে তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলে, তোমরা মাসজিদে গমন থেকে বাধা দিয়ে তাদের অংশ থেকে বঞ্চিত করো না। বিলাল (রহঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমি তাদেরকে নিষেধ করব। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিলালকে বললেন, আমি বলছি, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন”, আর তুমি বলছ, তুমি অবশ্যই তাদের বাধা দিবে। [১] সালিম (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এরপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিলাল-এর সামনাসামনি হয়ে অনেক গালাগাল করলেন। আমি কখনো তার মুখে এরূপ গালাগালি শুনিনি। তিনি বলেন, আমি তোমাকে অবহিত করছি, এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। আর, তুমি বলছ, আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমরা তাদেরকে ফিরাব। (মুসলিম) [১] মুজাহিদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ কেউ যেন তার স্ত্রীকে মাসজিদে আসতে বাধা না দেয়। (এ কথা শুনে) ‘আবদুল্লাহর এক ছেলে (বিলাল) বললেন, আমরা তো অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব। (এ সময়) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করছি। আর তুমি বলছ এ কথা? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার মৃত পর্যন্ত আর তার সাথে কথা বলেননি। (আহমাদ) [১]

【72】

প্রথম অনুচ্ছেদ

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধনুকে তীর সোজা করার ন্যায় আমাদের কাতার সোজা করতেন। এমনকি আমরা তাঁর হতে কাতার সোজা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর থেকে) বের হয়ে এসে সলাতের জন্যে দাঁড়ালেন। তাকবীরে তাহ্‌রীমা বাঁধতে যাবেন ঠিক এ মুহূর্তে এক ব্যক্তির বুক সলাতের কাতার থেকে একটু বেরিয়ে আছে দেখতে পেয়ে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তোমাদের কাতার সোজা করো। নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারায় বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।) [১] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সলাতের কাতার ঠিক করে নাও। কারণ সলাতের কাতার সোজা করা সলাত ক্বায়িম করার অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মনের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্‌‘উদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (সলাতে) আমার নিকট দিয়ে দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চৈঃস্বরে বললেন। আর তোমরা (মাসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না। (মুসলিম) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদের মাঝে প্রথম সারিতে এগিয়ে আসতে গড়িমসি লক্ষ্য করে তাদেরকে বললেন, সামনে এগিয়ে আসো। আমার অনুকরণ করো। তাহলে যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা তোমাদের অনুকরণ করবে। এরপর তিনি বললেন, একদল লোক সর্বদাই প্রথম কাতারে দাঁড়াতে দেরী করতে থাকে। পরিণামে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের পেছনে ফেলে রাখবেন। (মুসলিম) [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে এসে আমাদেরকে গোল হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বসা দেখে বললেন, কি ব্যাপার তোমাদেরকে বিভক্ত হয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এরপর আর একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে আগমন করলেন এবং বললেন, তোমরা কেন এভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াচ্ছ না যেভাবে মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশ্‌তারা) আল্লাহর সামনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মালায়িকাহ্‌ আল্লাহর সামনে কিভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়? তিনি বললেন, তারা প্রথমে সামনের কাতার পুরা করে এবং কাতারে মিলেমিশে দাঁড়ায়। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতে পুরুষদের জন্যে সবচেয়ে ভাল হলো প্রথম সারি এবং নিকৃষ্টতম হলো পেছনের সারি। আর মহিলাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হলো পেছনের কাতার এবং সবচেয়ে খারাপ হলো প্রথম কাতার। (মুসলিম) [১]

【73】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : (সলাতে) তোমাদের কাতারগুলো মিলেমিশে দাঁড়াবে এবং কাতারগুলোও কাছাকাছি (প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে) বাঁধবে। নিজেদের কাঁধ মিলিয়ে রাখবে। কসম ওই জাতে পাকের যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি শায়ত্বনকে তোমাদের (সলাতের) সারির ফাঁকে ঢুকতে দেখি যেন তা হিজাযী ছোট কালো বকরী। (আবূ দাঊদ) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমরা পূর্বে প্রথম কাতার সম্পূর্ণ করো, এরপর পরবর্তী কাতার পুরা করবে। কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকলে সেটা হবে একেবারে শেষের কাতার। (আবূ দাঊদ) [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করতেন : যেসব ব্যক্তি প্রথম কাতারের নিকটবর্তী গিয়ে পৌঁছে তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেন ও তাঁর মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশ্‌তারা) তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর কদমের চেয়ে ভাল কোন কদম নেই যে লোক হেঁটে কাতারের খালি স্থান পূরণ করে। (আবূ দাঊদ) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের কাতার ডানদিকের মানুষের ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতারা) তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। (আবূ দাঊদ) [১] নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সলাতে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রথমে মুখে অথবা হাতে ইশারা করে) কাতারগুলোকে ঠিক করে দিতেন। যখন আমরা ঠিক হয়ে দাঁড়াতাম তিনি তাকবীর তাহরীমা বলতেন। (আবূ দাঊদ) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (সলাত শুরু করার পূর্বে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে তাঁর ডানপাশে ফিরে বলতেন, ‘ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা করো’। তারপর তাঁর বামপাশে ফিরেও বলতেন, ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা করো। (আবূ দাঊদ) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যারা সলাতরে মাঝে নিজেদের কাঁধগুলো নমনীয় রাখে, তোমাদের মাঝে তারাই ভাল। (আবূ দাঊদ) [১]

【74】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করতেন : তোমরা সলাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সলাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সলাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আমার জীবন যার হাতে নিহিত তাঁর কসম করে বলছি, আমি তোমাদেরকে সামনে যেমন দেখতে পাই পেছনেও তদ্রূপ দেখতে পাই। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতাগণ) সলাতে প্রথম সাড়িতে দাঁড়ানো লোকদের ওপর করুণা বর্ষণ করেন। এ কথা শুনে সহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ানো লোকদের ওপর? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন, “আল্লাহ ও তাঁর মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতাগণ) সলাতের প্রথম কাতারের উপর করুণা বর্ষণ করেন। সহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আর দ্বিতীয় কাতারের উপর তিনি জবাবে বললেন, দ্বিতীয় কাতারের উপরও। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন : তোমরা তোমাদের সলাতের কাতারগুলোকে সোজা রাখো, কাঁধকে সমান করো, ভাইদের হাতের সাথে হাত নরম করে রাখো। কাতারের মাঝে খালি স্থান ছাড়বে না। তা না হলে শয়তান তোমাদের মাঝে হিজাযী ছোট কালো ছাগলের মতো ঢুকে পড়বে। অর্থাৎ ভেড়ার ছোট বাচ্চা। (আহ্‌মাদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমরা সলাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে শয়তান দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর রহ্‌মাতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার রহ্‌মাত থেকে কেটে দেন। (আবূ দাঊদ; নাসায়ী এ হাদীসকে, ‘ওয়ামান ওয়াসালা সাফ্‌ফান’ হতে শেষ পর্যন্ত নকল করেছেন) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ইমামকে মধ্যখানে রাখো, কাতারের মাঝে খালি স্থান বন্ধ করে দিও। (আবূ দাঊদ) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : কিছু লোক সব সময়ই সলাতে প্রথম কাতার থেকে পেছনে থাকে, এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দেন। (আবূ দাঊদ) [১] ওয়াবিসাহ্ ইবনু মা‘বাদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে কাতারের পেছনে একা দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি ওই লোককে আবার সলাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ; তিরমিযী বলেন – এ হাদীসটি হাসান।) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্‌ (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রে ছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাতের জন্য দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে তাঁর হাত দ্বারা আমার হাত ধরে পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার জন্যে দাঁড়ালেন। আমি এসে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে আমার ডান হাত ধরলেন। (পেছন দিয়ে টেনে এনেই) আমাকে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তারপর জাব্বার ইবনু সাখ্‌র আসলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বামপাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দু’জনের হাত একসাথে ধরলেন। আমাদেরকে (নিজ নিজ স্থান হতে) সরিয়ে এনে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও ইয়াতীম আমাদের ঘরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করছিলাম। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ছিলেন আামদের পেছনে। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে, তার মা ও খালাসহ সলাত আদায় করলেন। তিনি বলেন আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে। (মুসলিম) [১] আবূ বাকরাহ (রাঃ) তিনি একবার সলাত আদায় করার জন্যে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু‘তে ছিলেন। রুকু‘ ছুটে যাওয়ার আশংকায় কাতারে পৌঁছার পূর্বেই তিনি তাকবীর তাহরীমা দিয়ে রুকূ‘তে চলে গেছেন। এরপর ধীরে ধীরে হেঁটে এসে কাতারে শামিল হলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ ঘটনা উল্লেখ করলে তিনি বললেন, ‘আনুগত্য ও নেক ‘আমালের ক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন করবে না। (বুখারী) [১]

【75】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন। যখন আমাদের তিন লোক সলাত আদায় করবে তখন আমাদের একজন (উত্তম ব্যক্তি) সামনে চলে যাবে অর্থাৎ ইমামতি করবে। (তিরমিযী) [১] আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি (একদিন) মাঠে (সলাতে) মানুষের ইমামতি করছিলেন। সলাত আদায় করার জন্যে তিনি একটি চত্বরের উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ ছিলেন তার নীচে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থা দেখে হুযায়ফাহ্‌ কাতার থেকে বেরিয়ে এসে সামনের দিকে গেলেন এবং ‘আম্মারের হাত ধরলেন। ‘আম্মার তাঁকে অনুকরণ করলেন। হুযায়ফাহ্‌ তাঁকে নীচে নামিয়ে দিলেন। ‘আম্মারের সলাত শেষ হওয়ার পর হুযায়ফাহ্‌ তাঁকে বললেন। আপনি কি জানেননি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : কোন লোক জামা‘আতে সলাতের ইমাম হলে তার দাঁড়াবার স্থান যেন মুক্তাদীদের দাঁড়াবার স্থান হতে উঁচু না হয়। অথবা এ রকমের কোন শব্দ উচ্চারণ করেছেন। ‘আম্মার উত্তর দিলেন, এ জন্যেই তো আপনি যখন আামার হাত ধরেছেন আমি আপনার অনুসরণ করেছি। (আবূ দাঊদ)[১] সাহল ইবনু সা‘দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) একদিন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বার কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেন, জঙ্গলের ঝাউ কাঠের তৈরি ছিল। সেটাকে অমুক মহিলার স্বাধীন করা গোলাম অমুকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যে তৈরি করেছিলেন। সেটা তৈরি হয়ে গেলে, মাসজিদে রাখা হলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দাঁড়ালেন। ক্বিবলামুখী হয়ে সলাতের জন্য তাকবীর তাহ্‌রীমা বাঁধলেন। সকলে তার পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর হতেই ক্বিরাআত পাঠ করলেন। রুকূ‘ করলেন। অন্যান্য লোকও তাঁর পেছনে রুকূ‘ করলেন। অতঃপর তিনি রুকূ‘ হতে মাথা উত্তোলন করলেন। এরপরে মিম্বার থেকে পা নামিয়ে জমিনে সাজদাহ্‌ করলেন। এরপর পুনরায় তিনি মিম্বারে উঠলেন। কুরআন পড়লেন। রুকূ‘ করলেন রুকূ‘ থেকে মাথা উত্তোলন করলেন, তারপর পেছনে সরে আসলেন এমনকি জমিনে সাজদাহ্‌ করলেন। [এ ভাষা বুখারী (রহঃ)-এর একক; আবার বুখারী মুসলিমের মিলিত বিবরণটা এরূপ। এ হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীসের শেষে এ উক্তি পেশ করলেন। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত হতে অবসর হলেন, তখন বললেন, “আমি এজন্যে এ ‘আমাল করেছি, তোমরা যেন আমার অনুকরণ করো। আমার সলাতের পরিস্থিতি, এর বিধানাবলী জানতে পার।] [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের কামরায় সলাত আদায় করলেন। আর লোকেরা কামরার বাইরে হতে তাঁর সাথে সলাতের ইকতেদা করলেন। (আবূ দাঊদ) [১]

【76】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের ব্যাপারে কিছু বলব না? (তাহলে) শুনো! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে সলাত আদায় করার জন্য (প্রথমে) পুরুষদের কাতার করালেন, এরপর তাদের পেছনে শিশুদের কাতার দাঁড় করালেন। তারপর তাদের নিয়ে সলাত আদায় করালেন। (আবূ মালিক) তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের বিবরণ দেয়ার পর বললেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষে বললেন, এভাবে সলাত আদায় করতে হবে। ‘আবদুল ‘আলা যিনি আবূ মালিক থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমার মনে হয়, আবূ মালিক ‘আমার উম্মাতের’- এ কথাটিও বলেছেন। (আবূ দাঊদ) [১] ক্বায়স ইবনু ‘উবাদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি মাসজিদে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলাম। এ সময় এক লোক আমাকে পেছন থেকে টেনে একপাশে নিয়ে নিজে আমার স্থানে দাঁড়ালেন। আল্লাহর শপথ! এ রাগে আমার সলাতে হুঁশ ছিল না। সলাত শেষ করার পর আমি তাকিয়ে দেখলাম তিনি উবাই ইবনু কা‘ব। আমাকে রাগান্বিত দেখে তিনি বললেন, হে যুবক! (আমার এর জন্যে) আল্লাহ তোমাকে যেন কষ্ট না দেয়! আমার জন্যে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়াসিয়াত ছিল, আমি যেন তাঁর নিকট দাঁড়াই। তারপর ক্বিবলাব দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনবার এ কথা বললেন, রবের কা‘বার কসম! ধ্বংস হয়ে গেছে আহলুল ‘আক্বদ। আরো বললেন, আল্লাহর কসম! তাদের ওপর (জনগণের সম্পর্কে) আমার কোন চিন্তা নেই। চিন্তা তো হলো তাদের জন্যে যাদের নেতারা গোমরাহ করছে। ক্বায়স ইবনু ‘উবাদ বলেন, আমি উবাই ইবনু কা‘বকে বললাম। হে আবূ ইয়া‘কূব! ‘আহলুল আক্বদ’ বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘উমারাহ্‌’ (নেতা ও শাসকবর্গ) । (নাসায়ী) [১]

【77】

. প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : জাতির ইমামতি এমন লোক করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উত্তম পড়তে পারেন। উপস্থিতদের মাঝে যদি সকলেই উত্তম ক্বারী হন তাহলে ইমামতি করবেন ঐ লোক যিনি সুন্নাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন। যদি সুন্নাতের ব্যাপারে সকলে সমপর্যায়ের জ্ঞানী হন তবে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরত করায়ও যদি সবাই এক সমান হন। তাহলে ইমামাত করবেন যিনি বয়সে সকলের চেয়ে বড়। আর কোন লোক অন্য লোকের ক্ষমতাসীন এলাকায় গিয়ে ইমামতি করবে না এবং কেউ কোন বাড়ী গিয়ে যেন অনুমতি ছাড়া বাড়ীওয়ালার আসনে না বসে। (মুসলিম; তাঁর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘আর কোন লোক অন্য লোকের গৃহে গিয়ে [অনুমতি ব্যতীত] ইমামতি করবে না।”)[১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমরা যখন তিনজন হবে; সলাত আদায় করার জন্যে একজনকে ইমাম বানাবে এবং ইমামতির জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত যে কুরআন সবচেয়ে ভাল পড়তে পারেন। (মুসলিম; মালিক ইবনু হুওয়াইরিস-এর হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে “আযানের মর্যাদা অধ্যায়”-এর পর কোন এক অধ্যায়ের মধ্যে।) [১]

【78】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমদের যে লোক সবচেয়ে উত্তম তাঁরই আযান দেয়া উচিত। আর তোমাদের যে ব্যক্তি সবচেয়ে ভাল ক্বারী তাকেই তোমাদের ইমামতি করা উচিত। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ আল ‘উক্বায়লী (রহঃ) তিনি বলেন, মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (সহাবী) আমাদের মাসজিদে আগমন করতেন। আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাতেন। একদা তিনি এভাবে আমাদের মাঝে আছেন সলাতের সময় হয়ে গেল। আবূ ‘আত্বিয়্যাহ বলেন, আমরা মালিক-এর নিকট আবেদন করলাম, সামনে বেড়ে আমাদের সলাতের ইমামতি করার জন্যে। মালিক বললেন, তোমরা তোমাদের কাউকে সামনে বাড়িয়ে দাও। সে-ই তোমাদের সলাত আদায় করাবে। আর আমি কেন সলাত আদায় করাব না। কারণ তোমাদেরকে বলছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে লোক কোন জাতির সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করতে যায় সে যেন তাদের ইমামতি না করে। বরং তাদের মধ্যে কেউ ইমামতি করবে। (আবূ দাউদ, তিরমিযী; নাসায়ীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)…… শব্দগুলো পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাক্‌তুমকে সলাত আদায়ের জন্যে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তিন লোকের সলাত কান হতে উপরের দিকে উঠে না (অর্থাৎ কবূল হয় না)। প্রথম হলো কোন মালিক-এর নিকট থেকে পলায়ন করা গোলাম যতক্ষণ তার মালিক-এর নিকট ফিরে না আসে। দ্বিতীয় ঐ মহিলা, যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত কাটাল। তৃতীয় হলো ঐ ইমাম, যাকে তার জাতি অপছন্দ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব) (আবূ দাঊদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তিন লোকের সলাত কবূল হয় না। ঐ লোক যে কোন জাতির ইমাম অথচ সে জাতি তার ওপর অসন্তুষ্ট। দ্বিতীয় ঐ লোক যে সলাতে বিলম্ব করে উত্তম সময় চলে যাওয়ার পর আসে। আদায় করে আসা মর্ম হলো সলাতের মুস্তাহাব সময় চলে যাওয়ার শেষে আসে। তৃতীয় ঐ লোক যে স্বাধীন লোককে দাস বা দাসীতে পরিণত করে মনে করে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] সালামাহ্ বিনতুল হুর্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ক্বিয়ামাতের নিদর্শনসমূহের একটি নিদর্শন হলো মাসজিদে হাযির সলাত আদায়কারীরা একে অন্যকে ঠেলিবে। তাদের সলাত আদায় করিয়ে দিতে পারবে এমন যোগ্য ইমাম তারা পাবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের ওপর প্রত্যেক নেতার সঙ্গে চাই সে সৎ ‘আমালদার হোক কি বদকার, জিহাদ করা ফার্‌য। যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহও করে। প্রত্যেক মুসলিমের পেছনে সলাত আদায় করা তোমাদের জন্যে আবশ্যক। (সে সলাত আদায়কারী) সৎ ‘আমালদার হোক কি বদকার। যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহও করে থাকে। সলাতে জানাযাও প্রত্যেক মুসলিমদের ওপর ফার্‌য। চাই সে সৎ কর্মশীল হোক কি বদকার। সে গুনাহ কাবীরাহ্ করে থাকলেও। (আবূ দাঊদ) [১]

【79】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আমর ইবনু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মানুষ চলাচলের পথে একটি কুয়ার পাড়ে বসবাস করতাম। এটা মানুষের চলাচলের স্থান। যে কাফিলা আমাদের নিকট দিয়ে ভ্রমণ করে আমরা তাদের প্রশ্ন করতাম, মানুষের কি হলো। এ লোকটির (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) কি হলো? আর এ লোকটির বৈশিষ্ট্য কি? এসব লোক আমাদেরকে বলত, তিনি নিজেকে রসূল হিসেবে দাবী করেন। আল্লাহ তাঁকে সত্য নাবী করে পাঠিয়েছেন। (কাফিলার লোক তাদের কুরআনের আয়াত পড়ে শুনাত) বলত এসব তাঁর কাছে ওয়াহী হিসেবে আসে। বস্তুত: কাফিলার নিকট আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যেসব গুনাগুনের কথা ও কুরআনের যেসব আয়াত পড়ে শুনাত এগুলোকে এমনভাবে মুখস্থ রাখতাম যা আমার সিনায় গেঁথে থাকত। আরাববাসী ইসলাম গ্রহণের সম্পর্কে মাক্কাহ বিজয় হওয়ার অপেক্ষা করছিল। অর্থাৎ তারা বলত, মাক্কাহ বিজয় হয়ে গেলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। আর এ কথাও বলত এ রসূলকে তাদের জাতির ওপর ছেড়ে দাও। যদি সে জাতির ওপর বিজয় লাভ করে (মাক্কাহ বিজয় করে নেয়) তাহলে মনে করবে সে সত্য নাবী। মাক্কাহ বিজয় হলে গেলে লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করবে। আমার পিতা জাতির প্রথম লোক যিনি প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি (ইসলাম গ্রহণ করে) ফিরে আসার পর জাতির নিকট বলতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! আমি সত্য নাবীর নিকট থেকে এসেছি। তিনি বলেছেন, অমুক সময়ে এভাবে সলাত আদায় করবে। অমুক সময়ে এ রকম সলাত আদায় করবে। সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে। আর তোমাদের যে বেশী ভাল কুরআন পড়তে জানে সে ইমামতি করবে। বস্তুত: যখন সলাতের সময় হলো (জামা’আতের প্রস্তুত হলো) মানুষেরা কাকে ইমাম বানাবে পরস্পরের প্রতি দেখতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে ভাল কুরআন পড়ুয়া কাউকে পায়নি। লোকেরা আমাকে আগে বাড়িয়ে দিলো। এ সময় আমার বয়স ছিয় ছয় কি সাত বছর। আমার পরনে ছিল শুধু একটি চাদর। আমি যখন সেজদায় যেতাম; চাদরটি আমার শরীর হতে সরে যেত। আমাদের জাতির একজন মহিলা (এ অবস্থা দেখে) বলল, আমাদের সামনে হতে তোমরা তোমাদের ইমামের লজ্জাস্থান ঢেকে দিচ্ছো না কেন? জাতির লোকেরা যখন কাপড় খরিদ করল এবং আমার জন্য জামা বানিয়ে দিলো। এ জামার জন্যে আমার মন এমন খুশি হলো যা আর কখনও হয়নি। (বুখারী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মদীনায় প্রথম গমনকারী মুজাহিরগণ যখন আসলেন, আবূ হুযায়ফার আযাদ গোলাম সালিম তাদের সলাতের ইমামতি করতেন। মুক্তাদীদের মাঝে ‘উমার (রাঃ) আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুল আসাদও শামিল থাকতেন। (বুখারী) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: তিন ব্যক্তি এমন আছেন যাদের সলাত মাথার উপরে এক বিঘত পরিমাণও উঠে না। এক ব্যক্তি যে জাতির ইমাম, অথচ জাতি তাকে অপছন্দ করে। দ্বিতীয় মহিলা, যে এ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে যে তার স্বামী তার ওপর অসন্তুষ্ট। তৃতীয় দু’ ভাই, যাদের পরস্পরের ওপর পরস্পর অসন্তুষ্ট। (ইবনু মাজাহ) [১]

【80】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে আর কোন ইমামের পেছনে এতো হালকা ও পরিপূর্ণ সলাত আদায় করিনি। তিনি যদি (সলাতের সময়) কোন শিশুর কান্নার শব্দ পেতেন, মা চিন্তিত হয়ে পড়বে মনে করে সলাত হালকা করে ফেলতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সলাত আরম্ভ করলে তা লম্বা করার ইচ্ছা করি। কিন্তু যখনই (পেছন থেকে) শিশুদের কান্নার শব্দ শুনি, তখন আমার সলাতকে আমি সংক্ষেপ করি। কারণ তার কান্নায় তার মায়ের মনের উদ্বিগ্নতা বেড়ে যাওয়ার আশংকায়। (বুখারী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যারা মানুষের সলাত আদায় করায় সে যেন সলাত সংক্ষেপ করে। কারণ (তার পেছনে) মুক্তাদীদের মধ্যে রোগী, দুর্বল, বুড়ো থাকে (তাদের প্রতি খেয়াল রাখাও দরকার)। আর তোমাদের কী যখন একা সলাত আদায় করবে সে যত ইচ্ছা সলাত দীর্ঘ কর‍তে পারে। (বুখারী, মুসলিম) [১] ক্বায়স ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, একদিন এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে আবেদন করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্‌র শপথ, অমুক লোক খুব দীর্ঘ সলাত পড়াবার জন্যে আমি ফাজরের সলাতে দেরী করে আসি। আবূ মাস’ঊদ বলেন, সেদিন অপেক্ষা উপদেশ করার সময় আর কোন দিন তাঁকে (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) আজকের মতো এত রাগ করতে দেখিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেনঃ তোমাদের কেউ কেউ (দীর্ঘ করে সলাত আদায় করে) মানুষকে বিরক্ত করে তোলে। (সাবধান!) তোমাদের যে লোক মানুষকে (জামা‘আতে) সলাতে ইমামতি করবে। সে যেন সংক্ষেপে সলাত আদায় করায়। কারণ মুক্তাকীদের মাঝে দুর্বল, বুড়ো, প্রয়োজনের তাড়ার লোকজন থাকে। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【81】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদেরকে ইমাম সলাত আদায় করাবেন। বস্তুতঃ যদি সলাত ভালোভাবে পড়ায় তবে তোমাদের জন্যে সফলতা আছে (তার জন্যেও আছে)। আর সে যদি কোন ভুল করে ফেলে তাহলে তোমরা সাওয়াব পাবে। তার জন্যে সে পাপী হবে। (বুখারী) [১] ‘উসমান ইবনু আবিল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে যে শেষ ওয়াসিয়্যাত করেছেন তা ছিল, যখন তোমরা মানুষের (সলাতের) ইমামতি করবে, করে সলাত পড়াবে। (মুসলিম) সহীহ মুসলিমের আর এক সুত্রে পাওয়া যায়, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমানকে বলেছেনঃ নিজ জাতির ইমামতি করো। ‘উসমান বললেন, আমি আবেদন করলাম, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার মনে খটকা লাগে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বল্লেনঃ আমার নিকট আসো। আমি তাঁর নিকট আসলে তিনি আমাকে তাঁর সামনে বসালেন। আমার সিনার উপর দু‘ছাতির মাঝে তাঁর নিজের হাত রেখে বললেন। এদিকে পিঠ ফিরাও। আমি তাঁর দিকে আমার পিঠ ফিরালাম। তিনি আমার পিঠে দু‘কাধের উপর হাত রাখলেন এবং বললেনঃ যাও, নিজের জাতির সলাতে ইমামতি করো। (মনে রাখবে) যখন কোন লোক কোন জাতির ইমামতি করবে তার উচিত ছোট করে সলাত আদায় করানো। কারণ সলাতে বৃদ্ধ লোক থাকে। অসুস্থ মানুষ থাকে। দুর্বল ও প্রয়োজনের তাড়া থাকে এমন লোক উপস্থিত হয়। যখন কেউ একা একা সলাত আদায় করবে সে যেভাবে (যত দীর্ঘ) চায় আদায় করবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হালকা করে সলাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে যখন সলাত আদায় করাতেন সাফফাত সূরাহ দিয়ে সলাত আদায় করাতেন। (নাসায়ী) [১]

【82】

প্রথম অনুচ্ছেদ

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সলাত আদায় করতাম। বস্তুতঃ তিনি যখন ‘সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ পাঠ করতেন, তখন যে পর্যন্ত তিনি সাজদার জন্য তাঁর কপাল মাটিতে না লাগাতেন, আমাদের কেউ নিজ পিঠ ঝুকাতেন না। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। তাই তোমরা রুকু করার সময়, সাজদাহ্‌ করার সময়, দাঁড়াবার সময়, সালাম ফিরাবার সময় আমার আগে যাবে না, আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার সম্মুখ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে দেখে থাকি। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ইমামের পূর্বে কোন ‘আমাল করো না। ইমাম তাকবির দিলে তোমরাও তাকবির দিবে। ইমাম যখন বলবেন ‘ওয়ালায যোল্লীন’, তোমরা বলবে ‘আমীন’। ইমাম রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। ইমাম যখন বলবে ‘সামি আল্ল-হু লিমান হামিদাহ্‌’, তোমরা বলবে ‘আল্লা- হুম্মা রব্বানা- লাকাল হাম্‌দু।“ বুখারী, মুসলিম; তবে ইমাম বুখারী “ওয়াইযা-ক্বা-লা ওয়ালায্‌ যোল্লীন” উল্লেখ করেননি। (মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন: একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ভ্রমণের সময় ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনি নীচে পড়ে গেলেন। ফলে তার ডান পাজরের চামড়া উঠে গিয়ে চরম ব্যথা পেলেন (দাড়িয়ে সলাত আদায় করতে পারছিলেন না)। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে বসে আমাদেরকে (পাচ বেলা সলাতের) কোন এক বেলা সলাত আদায় করালেন। আমরাও তার পেছনে বসে বসেই সলাত আদায় করলাম। সলাত শেষ করে তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ইমাম এ জন্যেই নির্ধারিত করা হয়েছে যেন তোমরা তার অনুকরণ করো। তাই ইমাম দাড়িয়ে সলাত আদায় করালে তোমরাও দাড়িয়ে সলাত আদায় করবে। ইমাম যখন রুকু করবে, তোমরাও রুকু করবে। ইমাম রুকু হতে উঠলে তোমরাও রুকু হতে উঠবে। ইমাম সামি'আল্ল-হু লিমান হামিদাহ বললে, তোমরা রব্বানা- লাকাল হামদু’ বলবে। আর যখন ইমাম বসে সলাত আদায় করাবে, তোমরা সব মুক্তাদী বসে সলাত আদায় করবে। ইমাম হুমায়দী (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম বসে সলাত আদায় করালে’ তোমরাও বসে সলাত আদায় করবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ নির্দেশ, তার প্রথম অসুস্থের সময়ের নির্দেশ ছিল। পরে মৃত্যুশয্যায় (ইস্তিকালের একদিন আগে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে বসে সলাত আদায় করিয়েছেন। মুক্তাদীগণ তার পেছনে দাড়িয়ে সলাত আদায় করেছেন। তিনি তাদেরকে বসে সলাত আদায়ের নির্দেশ দেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ শেষ আমালের ওপরই আমাল করা হয়। এগুলো হলো বুখারীর ভাষা। এর ওপর ইমাম মুসলিম একমত পোষণ করেছেন। মুসলিমে আরো একটু বেশী বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইমামের বিপরীত কোন আমাল করো না। ইমাম সাজদাহ করলে তোমরাও সাজদাহ করবে। (বুখারী)” [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এমন সময় একদিন বিলাল (রাঃ) সলাত আদায়ের জন্যে রসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডাকতে আসলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আবু বকরকে লোকদের সলাত আদায় করাতে বলো। ফলে আবু বাকর ও সে কয়দিনের (সতর বেলা) সলাত আদায় করালেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন একটু সুস্থতা মনে করলেন। তিনি দু’ সহাবীর কাধে ভর দিয়ে দু’পা মাটির সাথে হেঁচড়িয়ে সলাতের জন্যে মসজিদে আসলেন। মসজিদে প্রবেশ করলে আবু বকর (রাঃ) রসূলের (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন টের পেলেন ও পিছু হটতে আরম্ভ করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে সেখান থেকে সরে না আসার জন্যে আবু বাকরকে ইঙ্গিত করলেন। এরপর তিনি আসলেন এবং আবু বাকরের বাম পাশে বসে গেলেন। আর আবু বাকর দাড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৰসে বসে সলাত আদায় করলেন। আবু বাকর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের ইকতিদা করছেন। আর লোকেরা আবু বকরের সলাতের ইকতেদা করে চলছেন। (বুখারী, মুসলিম; উভয়ের আর এক বর্ণনা সূত্রে আছে, আবু বকর লোকদেরকে রসূলের তাকবীর স্বজোড়ে শুনাতে লাগলেন )” [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ইমামের পূর্বে (রুকু’ সাজদাহ্‌ হতে) মাথা উঠায় সে কি এ বিষয়ের ভয় করে না যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার মাথাকে পরিবর্তন করে গাধার মাথায় পরিণত করবেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【83】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আলী ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোনও লোক যখন জামাতের সালাতে শরীক হওয়ার জন্য আসবে তখন ইমাম যে অবস্থায় থাকবে ও যে কাজ করবে সেও সে কাজ করবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন হাদিসটি গরীব) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ তোমরা জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্য সালাতে আসলে আমাদেরকে সাজদাহ্‌ অবস্থায় পেলে তোমরাও সাজদায় যাও। আর এ সাজদাহকে (কোন রাক’আত) হিসেবে গণ্য করবে না। তবে যে লোক (ইমামের সাথে) এক রাক’আত প্রাপ্ত হবে সে সম্পূর্ণ সালাত পেয়ে গেল। (আবু দাঊদ) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাকবীর তাহরীমাসহ আল্লাহ্‌র জন্য জামা’আতে সালাত আদায় করেন তার জন্য দু’প্রকার মুক্তি বরাদ্ধ করা হয়। এক জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর দ্বিতীয় মুনাফিক্বী থেকে মুক্তি। (তিরমিযী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক উযূ করেছে এবং ভালোভাবে সে তার উযূ সমাপ্ত করেছে। তারপর মাসজিদে গিয়েছে। সেখানে লোকদেরকে সালাত আদায় করে ফেলা অবস্থায় পেয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে ঐ সালাত আদায়কারীদের সমান সওয়াব দান করবেন যারা সেখানে হাজির হয়ে সালাত পুরা করেছে। অথচ তাতে তাদের পুণ্য একটুও কমতি হবে না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন এক লোক মাসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কোন মানুষ কি নেই যে তাকে সাদক্বাহ্‌ দিবে তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করে। এ মুহূর্তে এক লোক দাঁড়ালেন এবং তার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ) [১]

【84】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

উবায়দুল্লাহ (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি আয়িশাহ (রাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বললাম। আপনি কি আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থ অবস্থার (সলাত আদায় করার ব্যাপারে) কিছু বলবেন না? জবাবে তিনি বললেন, হ্যা! (বলব শুনো)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন সলাতের সময়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কি সলাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! তারা আপনার অপেক্ষা করছে (এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেন। আমার জন্যে পাত্র ভরে পানি আনো। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা তার জন্যে পাত্র ভরে পানি আনলাম। সে পানি দিয়ে গোসল করলেন। চাইলেন দাঁড়াতে। (কিন্তু দুর্বলতার কারণে) তিনি বেহুশ হয়ে পড়লেন। হুশ ফিরে আসলে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা কি সলাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম না। এখনো পড়েনি। লোকেরা আপনার অপেক্ষায় আছে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, আমার জন্যে পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসো। আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে বসলেন। আবার গোসল করলেন। চেয়েছিলেন দাঁড়াতে। কিন্তু (এ সময়) বেহুশ হয়ে পড়লেন, যখন হুশ হয়েছে আবার জিজ্ঞেস করেছেন, লোকেরা কি সলাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, এখনো পড়েনি। লোকেরা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসো। আমরা পানি নিয়ে আসলাম। তিনি বসলেন, গোসল করলেন। তারপর আবার যখন উঠতে চাইলেন বেহুশ হয়ে গেলেন। যখন হুশ ফিরে আসলো তখন বললেন, লোকেরা কি সলাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না; তারা আপনার অপেক্ষায় আছে, হে আল্লাহর রসূল। লোকেরা মসজিদে বসে বসে ঈশার সলাত পড়ার জন্য আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে দিয়ে (বিলাল) আবু বকরের নিকট খবর পাঠালেন লোকদের সলাত পড়িয়ে দেয়ার জন্যে। তাই দূত [বেলাল (রাঃ)] তাঁর এর নিকট এলেন। বললেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে লোকদের সলাত আদায় করার জন্যে আদেশ করেছেন। আবু বাকর ছিলেন কোমলমতি মানুষ। তিনি এ কথা শুনে উমারকে বললেন। উমার! তুমিই লোকদের সলাত পড়িয়ে দাও। কিন্তু উমার (রাঃ) বললেন। আপনিই সলাত আদায় করান এর জন্যে আপনিই সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। এরপর আবু বকর রসূলের অসুখের এ সময়ে (সতের ওয়াক্ত) সলাত সহাবীদেরকে নিয়ে আদায় করালেন। একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটু সুস্থতাবোধ করলে দু'লোকের ওপর ভর করে (এঁদের একজন ইবনু আব্বাস ছিলেন) যুহরের সলাতে (মাসজিদে গমন করলেন। তখন আবু বাকর সলাত পড়াচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহর আগমন টের পেয়ে আবু বকর পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশারা দিয়ে তাকে পেছনে সরে আসতে নিষেধ করলেন। যাদের ওপরে ভর করে তিনি মসজিদে এসেছিলেন তাদের বললেন। আমাকে আবু বাকরের পাশে বসিয়ে দাও। ফলে তারা তাঁকে আবু বাকরের পাশে বসিয়ে দিলেন। তিনি বসে বসে সলাত পড়তে লাগলেন। উবায়দুল্লাহ (এ হাদীসের বর্ণনাকারী) বলেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস শুনে আমি 'আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাকে আমি বললাম, আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুখের সময়ের যে হাদীসটি আয়িশার (রাঃ) নিকট শুনলাম তা-কি আপনার নিকট বর্ণনা করব না? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যা, শুনাও। তাই আমি তার সামনে আয়িশার নিকট শুনা হাদীসটি বর্ণনা করলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ হাদীসের কোন কথা অস্বীকার করলেন না। অবশ্য তিনি বললেন, আয়িশাহ্ (রাঃ) তোমাকে এ লোকের নাম বলেননি যিনি ইবনু আব্বাসের সঙ্গে ছিলেন। আমি বললাম, না, বলেননি। ইবনু আব্বাস বললেন। তিনি ছিলেন আলী (রাঃ)। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যে লোক (সলাতে) রুকু পেয়েছে সে গোটা রাকা’আতই পেয়েছে। আর যে লোকের সূরায়ে আল ফাতিহাহ পড়া ছুটে গিয়েছে, অনেক সাওয়াব তার থেকে ছুটে গিয়েছে। (মালিক)” [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যে লোক (রুকু ও সাজদায়) ইমামের পূর্বে নিজের মাথা উঠিয়ে ফেলে অথবা ঝুঁকিয়ে ফেলে তবে মনে করতে হবে তার কপাল শায়ত্বনের হাতে। (মালিক) [১]

【85】

প্রথম অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করতেন। এরপর নিজের গোত্রে এসে তাদের সলাত আদায় করাতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জামা'আতে ইশার সলাত আদায় করতেন। তারপর নিজ জাতির কাছে ফিরে এসে তাদের আবার ইশার সলাত আদায় করাতেন। তার জন্যে তা ছিল নাফল। (শাফিঈ তাঁর মুসনাদে, তুহাবী, দারাকুত্বনী ও বায়হাক্বী) [১]

【86】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

ইয়াযীদ ইবনু আস্ওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হজ্জে (বিদায় হাজ্জ) গিয়েছিলাম। সে সময় আমি একদিন তার সঙ্গে মসজিদে খায়েফে ফাজরের সলাত আদায় করেছি। তিনি সলাত সমাপ্ত করে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন জামা’আতের শেষ প্রান্তে দু'লোক বসে আছে। যারা তাঁর সঙ্গে (জামা'আতে) সলাত আদায় করেনি। তাদের দেখে তিনি বললেন তাদেরকে আমার নিকট নিয়ে আসো। তাদের এ অবস্থায়ই রসূলের নিকট হাযির করা হলো। ভয়ে তখন তাদের কাধের গোশত থরথর করে কাঁপছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন। আমাদের সঙ্গে সলাত আদায় করতে তোমাদেরকে কে বাধা দিয়েছে? তারা আরয করলো! হে আল্লাহর রসূল। আমরা আমাদের বাড়িতে সলাত আদায় করে এসেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা শুনে বললেন ভবিষ্যতে এ কাজ আর করবে না। তোমরা ঘরে সলাত আদায় করে আসার পরও মাসজিদে এসে জামা'আত চলছে দেখলে জামা'আতে সলাত আদায় করে নিবে। এ সলাত তোমাদের জন্যে নাফল হয়ে যাবে। (তিরমিয়ী, আবু দাউদ, নাসায়ী) [১]

【87】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

বুসর ইবনু মিহজান (রহঃ) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (তার পিতা মিহজান) এক সভায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় আযান হয়ে গেল। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্যে দাঁড়িয়ে গেলেন ও সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষ করে ফিরে আসলেন। দেখলেন মিহজান তার স্থানে বসে আছে। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন। মানুষের সঙ্গে (জামা'আতে) সলাত আদায় করতে তোমাকে কোন জিনিস নিষেধ করেছিল? তুমি কি মুসলিম না। মিহজান বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিম। কিন্তু আমি আমার পরিবারের সঙ্গে সলাত আদায় করে এসেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি তোমার বাড়িতে সলাত আদায় করে আসার পরে মসজিদে এসে সলাত হচ্ছে দেখলে লোকদের সঙ্গে (জামা’আতে) সলাত আদায় করবে তুমি (এর পূর্বে) সলাত আদায় করে থাকলেও। (মালিক, নাসাঈ) [১] আসাদ ইবনু খুযায়মাহ্ গোত্রের এক লোক থেকে বর্ণিত। তিনি আবু আইয়ুব আল আনসারী (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন। আমাদের কেউ বাড়িতে সলাত আদায় করে মসজিদে আসলে (জামা'আতে) সলাত হচ্ছে দেখলে তাদের সাথে সলাত পড়ি। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে আমার মনে খটকা অনুভব করি। আবু আইয়ুব আল আনসারী জবাবে বললেন, আমিও এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেন, এটা (দ্বিতীয়বার সলাত আদায় করা) তার জন্যে জামা’আতের অংশ সমতুল্য। (এতে খটকার কিছু নেই)। (মালিক, আবু দাউদ) [১] ইয়াযীদ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। সে সময় তিনি লোকজন নিয়ে সলাত আদায় করছিলেন। আমি (এক পাশে) বসে থাকলাম। তাদের সঙ্গে জামা'আতে অংশগ্রহণ করলাম না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে এদিকে ফিরে আমাকে বসা অবস্থায় দেখে বললেন। তুমি কি মুসলিম না, হে ইয়াযীদ! সলাত আদায় করনি। আমি বললাম। হ্যাঁ! আমি মুসলিম হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, তাহলে লোকদের সঙ্গে সলাতে অংশগ্রহণ করতে তোমাকে নিষেধ করেছে কে? আমি বললাম, আমি আমার ঘরে সলাত আদায় করে এসেছি। আমার ধারণা ছিল আপনিও সলাত আদায় করে ফেলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি যখন মসজিদে আসবে আর লোকজনকে জামা'আতে সলাত আদায় করতে দেখবে। তখন তুমিও সলাতে অংশগ্রহণ করবে। যদি তুমি এর পূর্বে (একবার) সলাত আদায় করেও থাকো। আর এ (দ্বিতীয়বারের) সলাত তোমার জন্যে নাফল হিসেবে গণ্য হবে। আর পূর্বের পড়া সলাত ফারয হিসেবে আদায় হবে। (আবু দাউদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক তাঁকে প্রশ্ন করল। আমি আমার বাড়িতে সলাত আদায় করে নেই। এরপর মাসজিদে আসলে (মানুষদেরকে) ইমামের সঙ্গে সলাত আদায় করা অবস্থায় পাই। আমি কি (এ অবস্থায়) এ ইমামের পেছনে সলাত আদায় করতে পারি? ইবনু উমার বললেন হ্যাঁ, পারো। তারপর ঐ লোক আবার প্রশ্ন করল। তাহলে আমার (ফরয) সলাত কোনটি মনে করব? ইবনু উমার বললেন, এটা কি তোমার কাজ? এটা আল্লাহ তা'আলার কাজ। তিনি যে সলাতকে চাইবেন ফারয হিসেবে গ্রহণ করে নেবেন। (মালিক) [১] উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্‌ (রাঃ)-এর মুক্ত গোলাম সুলায়মান (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর নিকট বালাতে (মাসজিদের আঙিনায়) আসলাম। সে সময় মানুষেরা মাসজিদে (জামা’আতে) সলাত আদায় করছিল। আমরা ইবনু ‘উমার–কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি লোকদের সঙ্গে (জামা’আতে) সলাত আদায় করছেন না কেন ? জবাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বললেন, আমি সলাত আদায় করে ফেলেছি। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা একই দিনে এক সলাত দু’বার আদায় করবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, যে লোক মাগরিবের সলাত কি ফাজ্‌রের সলাত একা একা আদায় করে নিয়েছে। এরপর এ সলাতগুলোকে (অন্যত্র) ইমামকে জামা’আতে আদায় করা অবস্থায় পায় তাহলে সে এ সলাতকে পুনরায় আদায় করবে না। (মালিক) [১]

【88】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যে লোক দিন রাতে বারো রাক্‌’আত সলাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্‌’আত সলাত হলো) চার রাক্‌’আত যুহরের ফার্‌যের পূর্বে আর দু’ রাক্‌’আত যুহরের (ফার্‌যের) পরে, দু’ রাক্‌’আত মাগরিবের (ফার্‌য সলাতের) পরে। দু’ রাক্‌’আত ‘ইশার ফার্‌য সলাতের পরে। আর দু’ রাক্‌’আত ফাজ্‌রের (ফার্‌য সলাতের) পূর্বে। (তিরমিযী) মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্‌ বলেছনে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফার্‌য সলাত ব্যতীত বারো রাক্‌’আত সুন্নাত সলাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেনে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর বানান হবে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে যুহরের ফার্‌যের পূর্বে দু’ রাক্‌’আত ও মাগরিবের ফার্‌যের পরে দু’ রাক্‌’আত সলাত তাঁর বাড়িতে এবং ‘ইশার সলাতের ফার্‌যের পর দু’ রাক্‌’আত সলাত তাঁর বাড়িতে আদায় করেছি। ইবনু ‘উমার আরো বলেছেন, হাফসাহ (রাঃ) (ইবনু ‘উমারের বোন) আমার নিকট বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হালকা দু’ রাক্‌’আত সলাত ফাজ্‌রের সলাতের সময় আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুমু’আর সলাতের পর কামরায় পৌছার পূর্বে কোন সলাত আদায় করতেন না। কামরায় পৌঁছার পর তিনি দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নাফ্‌ল সলাতের ব্যাপারে ‘আয়িশাকে প্রশ্ন করেছি। ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে আমার ঘরে যুহরের পূর্বে চার রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। তারপর মাসজিদে যেতেন। সেখানে লোকেদের নিয়ে (জামা’আতে যুহরের ফার্‌য) সলাত আদায় করতেন। তারপর তিনি কামরায় ফিরে আসতেন এবং দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। (ঠিক এভাবে) তিনি লোকদেরকে নিয়ে মাগরিবের সলাত মাসজিদে আদায় করতেন। তারপরে হুজরায় ফিরে এসে দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। রাতে তিনি (তাহাজ্জুদের) সলাত কখনো নয় রাক্‌’আত পড়তেন। এর মাঝে বিত্‌রের সলাতও শামিল ছিল। আর রাতে তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ও দীর্ঘ সময় বসে বসে সলাত আদায় করতেন। যে সময় তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতেন ? দাঁড়ানো থেকেই রুকূ’ সাজদায় চলে যেতেন। আর যখন বসে বসে সলাত আদায় করতেন, বসা থেকেই রুকূ’ ও সাজদায় চলে যেতেন। সুবহে সাদিকের সময় ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌’আত সুন্নাত আদায় করে নিতেন। (মুসলিম; আবূ দাঊদ আরো কিছু বেশী শব্দ নকল করেছেন [অর্থাৎ ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌’আত সুন্নাত আদায় করে তিনি মাসজিদে চলে যেতেন। সেখানে লোকজনসহ ফাজ্‌রের ফার্‌য সলাত আদায় করতেন]) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাফ্‌ল সলাতের মাঝে ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌’আত সুন্নাত সলাতের প্রতি যেমন কঠোর যত্ন নিতেন আর কোন সলাতের উপর এত কঠোর ছিলেন না। (বুখারী, মুসলিম) [১] উক্ত রাবী [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌’আত সুন্নাত সলাত দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে বেশি উত্তম। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মাগরিবের ফার্‌য সলাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্‌’আত নাফ্‌ল সলাত আদায় কর। মাগরিবের ফার্‌য সলাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্‌’আত নাফ্‌ল সলাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, “যিনি ইচ্ছা করেন” (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেন : তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুস একে সুন্নাত না করে ফেলে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের যে লোক জুমু’আর (ফার্‌য সলাতের) পর সলাত আদায় করতে চায় সে যেন চার রাক্‌’আত সলাত আদায় করে নেয়। (মুসলিম) আর মুসলিমেরই অন্য এক সূত্রে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন জুমু’আর (ফার্‌য) সলাত আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাক্‌’আত সুন্নাত সলাত আদায় করে নেয়। [১]

【89】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে লোক যুহরের (ফার্‌য সলাতের) পূর্বে চার রাক্‘আত, এরপর চার রাক্‘আত সলাত আদায় করে। আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যুহরের (ফার্‌য) সলাতের পূর্বের চার রাক্‘আত সলাত, যার মাঝে সালাম ফিরানো হয় না, সলাতের জন্যে (তা আদায়কারীর জন্যে) আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূর্য হেলে যাওয়ার পর যুহরের সলাতের পূর্বে চার রাক্‘আত সলাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন, এটা এমন এক সময় যখন (নেক ‘আমাল উপরের দিয়ে যাওয়ার জন্যে) আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। তাই এ মুহূর্তে আমার নেক ‘আমালগুলো উপরের দিকে যাক এটা আমি চাই। (তিরমিযী) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা ঐ লোকের ওপর রহ্‌মাত বর্ষণ করেন, যে লোক ‘আস্‌রের (ফার্‌য সলাতের) পূর্বে চার রাক্‘আত সলাত আদায় করে। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আস্‌রের সলাতের (ফার্‌যের) পূর্বে চার রাক্‘আত সলাত আদায় করতেন। এ চার রাক্‘আতের মধ্যখানে সালাম ফিরানোর দ্বারা নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশ্‌তা) এবং তাদের অনুসারী মুসলিম ও মু’মিনীনদের মাঝে পার্থক্য করতেন। (তিরমিযী) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আসরের পূর্বে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মাগরিবের সলাতের পর ছয় রাক্’আত সলাত আদায় করবে এবং এর মধ্যখানে কেন অশালীন কথাবার্তা বলবে না। তাহলে এ (ছয়) রাক্‘আতের সাওয়াব তার জন্যে বারো বছরের ‘ইবাদাতের সাওয়াবের পরিমাণ হয়ে যাবে। (তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। কারণ এ হাদীস ‘উমার ইবনু খাস্‘আম-এর সূত্র ছাড়া আর কোন সূত্রে জানা যায়নি। আর আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, ‘উমার ইবনু খাস‘আম মুনকারুল হাদীস। তাছাড়াও তিনি হাদীসটিকে যথেষ্ট য‘ঈফ বলেছেন।) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক মাগরিবের সলাত শেষের পর বিশ রাক্‘আত সলাত আদায় করবে। আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবেন। (তিরমিযী) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সময়ই ‘ইশার সলাত আদায় করে আমার নিকট আসতেন, চার অথবা ছয় রাক্‘আত সুন্নাত সলাত অবশ্যই আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ‘ইদবা-রুন নুজূম’, দ্বারা ফাজ্‌রের পূর্বে দু’ রাক্‘আত সলাত ও ‘ইদ্‌বারুস সুজূদ’ দ্বারা মাগরিবের ফার্‌য সলাতের পরের দু’ রাক্‘আত সলাত বুঝানো হয়েছে। (তিরমিযী) [১]

【90】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : যুহরের পূর্বে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর চার রাক্‘আত সলাত, তাহাজ্জুদের চার রাক্‘আত সলাত আদয় করার সমান। আর এ সময় সকল জিনিস আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতার ঘোষণা করে। তারপর তিনি (কুরআনের আয়াত) পড়লেন, “সকল জিনিসের ছায়া ডান দিক ও বাম দিক হতে আল্লাহ তা‘আলার জন্যে সাজদাহ্ করে ঝুঁকে থাকে। আর এর সবই বিনয়ী”- (সূরাহ্‌ আন্ নাহ্‌ল ১৬ : ৪৮)। (তিরমিযী, বায়হাক্বী ফী শু‘আবুল ঈমান) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট (অর্থাৎ হুজরায়) কোন দিন ‘আস্‌রের পরে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করা ছেড়ে দেননি। (বুখারী, মুসলিম)। বুখারীর এক সানাদের ভাষা হলো, তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেছেন : ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি রসূলের রূহপাক কবজ করেছেন। তিনি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ দু’ রাক্‘আত সলাত ছেড়ে দেননি। [১] মুখতার ইবনু ফুলফুল (রহঃ) তিনি বলেন। আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আস্‌রের পর নাফ্‌ল সলাতের ব্যাপারে। তিনি (উত্তরে) বললেন। ‘উমার (রাঃ) ‘আস্‌রের পর নাফ্‌ল সলাত আদায়কারীদের হাতের উপর প্রহার করতেন। আমারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মাগরিবের সলাতের (ফার্‌যের) পূর্বে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতাম। (এ কথা শুনে) আমি আনাসকে প্রশ্ন করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও কি এ দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরক আদায় করতে দেখতেন। কিন্তু আদায় করতে বলতেন না। আবার বাধাও দিতেন না। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মাদীনায় ছিলাম। (এ সময়ে অবস্থা এমন ছিল যে, মুয়ায্‌যিন মাগরিবের আযান দিলে (কোন কোন সহাবা ও তাবি‘ঈ) মাসজিদের খূঁটির দিকে দৌঁড়াতেন আর দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করতে আরম্ভ করতেন। এমনকি কোন মুসাফির লোক মাসজিদে এসে অনেক লোককে একা একা সলাত আদায় করতে দেখে মনে করতেন (ফার্‌য) সলাত বুঝি সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর লোকেরা এখন সুন্নাত পড়ছে। (মুসলিম) [১] মারসাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার ‘উক্ববাহ্ আল জুহানী (রাঃ) এর নিকট হাযির হয়ে বললাম। আমি কি আপনাকে আবূ তামীম আদ্ দারীর (তাবি‘ঈ) একটি বিষ্ময়কর ঘটনা শুনাব না? তিনি (আবূ তামীম আদ্ দারী) মাগরিবের সলাতের পূর্বে দু’ রাক্‘আত নাফ্‌ল সলাত আদায় করেন। তখন ‘উক্ববাহ্ বললেন, এ সলাত তো আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় আদায করতাম। তখন তিনি বললেন, তাহলে এ সলাত এখন আদায় করতে আপনাদেরকে বাধা দিচ্ছে কে? জবাবে তিনি বললেন (দুনিয়ার) কর্মব্যস্ততায়। (বুখারী) [১] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আনসার গোত্র) বানী ‘আবদুল আশহাল-এর মাসজিদে আসলেন এবং এখানে মাগরিবের সলাত আদায় করেছেন। সলাত সমাপ্ত করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু মানুষকে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি বললেন এসব (নাফ্‌ল) সলাত বাড়িতে পরার জন্য। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক সূত্রে পাওয়া যায়, লোকেরা ফারয সলাত আদার করার পর নাফ্‌ল সলাত আদায়ের জন্যে দাঁড়ালে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘এসব সলাত তোমাদের বাড়ীতে আদায় করা উচিত’।) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাগরিবের সলাতের শেষে (সুন্নাতের) দু’ রাক্‘আত সলাতে এত বড় ক্বিরাআত পড়তেন যে, লোকেরা তাদের সলাত শেষ করে (বাড়ী) চলে যেতেন। (আবূ দাঊদ) [১] মাকহূল (রহঃ) মাকহূল (রহঃ) এ হাদীসটির বর্ণনা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক মাগরিবের সলাত আদায় করার পর কথাবার্তা বলার আগে দু’ রাক্‘আত। আর এক বর্ণনায় আছে, চার রাক্‘আত সলাত আদায় করবে, তার সলাত ‘ইল্লীয়্যিনে পৌঁছে দেয়া হয়। (হাদীসটি মুরসাল) [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) কিন্তু তাঁর বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করতেন : তোমরা মাগরিবের পরে দু’ রাক্‘আত (সুন্নাত) দ্রুত পড়ে নাও। এজন্য যে, এ দু’ রাক্‘আত সলাতও ফার্‌য সলাতের সঙ্গে উপরে (অর্থাৎ ‘ইল্লীয়্যিনে) পৌঁছে দেয়া হয়। এ উভয় হাদীসই রযীন বর্ণনা করেছেন, বায়হাক্বীর শু‘আবুল ঈমানেও এমনই বর্ণিত আছে। [১] ‘আমর ইবনু ‘আত্বা (রহঃ) তিনি বলেছেন, নাফি‘ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তাঁকে সায়িব (রাঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি যেন ঐসব জিনিস তাঁকে প্রশ্ন করেন যেসব জিনিস তাকে সলাতে আদায় করতে দেখে মু‘আবিয়াহ্ তা করতে বারণ করেছেন। [তাই আম্‌র (রহঃ) সায়িব (রাঃ)-এর নিকট গেলেন এবং তার থেকে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলেন।] তিনি বললেন, হ্যাঁ, একবার আমি ‘আমীরে মু‘আবিয়ার সঙ্গে মাক্‌সূরায় জুমু‘আর সলাত আদায় করেছি। ইমাম সালাম ফিরাবার পর আমি (ফার্‌য পড়ার স্থানেই) দাঁড়িয়ে গেলাম ও সুন্নাত সলাত আদায় করতে শুরু করলাম। (‘আমীরে মু‘আবিয়াহ্ সলাত শেষ করে নিজের বাড়ীতে চলে গেলেন)। যাওয়ার সময় তিনি এক লোককে, আমাকে বলার জন্যে বলে পাঠালেন যে, ঐ সময় (জুমু‘আহ্ আদায়ের সময়) তুমি যা করেছ ভবিষ্যতে তুমি যেন তা না করো। যখন তুমি জুমু‘আর সলাত আদায় করবে তখন ফার্‌য সলাতকে আর কোন সলাতর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলবে না, যে পর্যন্ত না তুমি কোন কথাবার্তা বলো অথবা (মাসজিদ থেকে) বের হয়ে যাও। কারণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন, আমরা যেন এক সলাতকে আর সলাতের সঙ্গে মিশিয়ে না ফেলি, যতক্ষণ পর্যন্ত না কথাবার্তা বলি অথবা মাসজিদ থেকে বের হয়ে না যাই। (মুসলিম) [১] ‘আত্বা থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন মাক্কায় জুমু’আর সলাত আদায় করতেন (তখন জুমু’আর ফার্‌য সলাত শেষ হবার পর) একটু সামনে এগিয়ে যেতেন এবং দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। এরপর আবার সামনে এগিয়ে যেতেন ও চার রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। আর তিনি যখন মাদীনাতে ছিলেন, জুমু’আর সলাতের ফার্‌য আদায় করে নিজের বাড়ীতে চলে যেতেন। ঘরে দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করতেন, মাসজিদে (ফার্‌জ সলাত ব্যতীত কোন) সলাত আদায় করতেন না। এর কারণ সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনই করতেন। আবূ দাঊদ, আর তিরমিযীর বর্ণনার ভাষা হলো, ‘আত্বা বললেন, আমি ইবনু ‘উমারকে দেখেছি যে, তিনি জুমু’আর পরে দু’ রাক্‌’আত সলাত আদায় করে আবার চার রাক্‌’আত আদায় করতেন। [১]

【91】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘ইশার সলাতের পর ফাজ্‌র পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্‌’আত সলাতের পর সলাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্‌’আত দ্বারা বিত্‌র আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্‌’আতে এত লম্বা সাজদাহ্‌ করতেন যে, একজন লোক সাজদাহ্‌ হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়ায্‌যিনের ফাজ্‌রের আযানের আওয়াজ শেষে ফাজ্‌রের সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্‌’আত হালকা সলাত আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়ায্‌যিন ইক্বামাতের অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মাসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজ্‌রের সুন্নাত সলাত (ঘরে) আদায়ের পর যদি আমি সজাগ হয়ে উঠতাম তাহলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আর আমি ঘুমে থাকলে তিনি শয়ন করতেন। (মুসলিম) [১] উক্ত রাবী [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌’আত সুন্নাত সলাত আদায় করে নিজের ডান পাঁজরের উপর শুয়ে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে তের রাক্‌’আত সলাত আদায় করতেন। এর মাঝে বিত্‌র ও ফাজ্‌রের সুন্নাত দু’ রাক্‌’আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (মুসলিম) [১] মাসরূক্ব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর রাত্রের সলাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, ফাজ্‌রের সুন্নাত ব্যতীত কোন কোন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাত রাক্‌’আত, কোন কোন সময় নয় রাক্‌’আত, কোন কোন সময় এগার রাক্‌’আত আদায় করতেন। (বুখারী) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর সলাতের আরম্ভ করতেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সলাত দিয়ে। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যখন রাত্রে সলাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠে, সে যেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সলাত দ্বারা (তার সলাত) আরম্ভ করে। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্‌ (রাঃ)-এর বাড়ীতে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে রাত্রে তাঁর বাড়ীতে ছিলেন। ‘ইশার পর কিছু সময় তিনি তাঁর স্ত্রী মায়মূনার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর শুয়ে পড়েন। রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি সজাগ হলেন। আকাশের দিকে লক্ষ করে এ আয়াত পাঠ করলেন : [আরবি] অর্থাৎ “আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করা, রাত ও দিনের ভিন্নতার (কখনো অন্ধকার কখনো আলোকিত, কখনো গরম কখনো শীত, কখনো বড়ো কখনো ছোট) মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শন”-(সূরাহ্‌ আলি ‘ইমরান ৩ : ১৯০) তিনি সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। তারপর উঠে তিনি পাত্রের কাছে গেলেন। এর বাঁধন খুললেন। পাত্রে পানি ঢাললেন। তারপর দু’ উযূর মাঝে মধ্যম ধরনের ভাল উযূ করলেন। হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, (মধ্যম ধরনের উযূর অর্থ) খুব অল্প পানি খরচ করলেন। তবে শরীরে দরকারী পানি পৌঁছিয়েছেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে লাগলেন। (এসব দেখে) আমি নিজেও উঠলাম। অতঃপর উযূ করে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কান ধরে তাঁর বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। তার তের রাক্’আত সলাত আদায় করা শেষ হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তাঁর নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে সলাত প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি সলাত আদায় করালেন। কোন উযূ করলেন না। তার দু’আর মাঝে ছিল, “আল্ল-হুম্মাজ্‌’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াফী সাম্‌’ঈ নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহ্‌তী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্‌’আল্‌ লী নূরা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে ভরে দাও। আমার জন্যে কেবল নূরই নূর সৃষ্টি করে দাও।) কোন কোন বর্ণনাকারী এ শব্দগুলোও নকল করেছেন, “ওয়াফী লিসা-নী নূরা-” (অর্থাৎ- আমার জিহবায় নূর পয়দা করে দাও)। (অন্য বর্ণনায় এ শব্দগুলোও) উল্লেখ করেছেন, “ওয়া ‘আসাবী ওয়া লাহ্‌মী ওয়াদামী ওয়া শা’রী ওয়া বাশারী” (অর্থাৎ- আমার শিরা উপশিরায়, আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে, আমার চামড়ায় নূর তৈরী করে দাও)। (বুখারী, মুসলিম) বুখারী ও মুসলিমেরই আর এক বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে, “ওয়াজ্‌’আল ফী নাফ্‌সী নূরাওঁ ওয়া আ’যিম লী নূরা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার মনের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও এবং আমার মাঝে নূর বাড়িয়ে দাও)। মুসলিমের এক বিবরণে আছে, “আল্ল-হুম্মা আ’ত্বিনী নূরা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দান করো)। [১] উক্ত রাবী [‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] তিনি এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট শুইলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে জাগলেন। মিসওয়াক করলেন ও উযূ করলেন। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, ইন্না ফী খালকিস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি..... সূরার শেষ পর্যন্ত। এরপর তিনি দাঁড়ালেন, অতঃপর দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করলেন। সলাতে তিনি বেশ লম্বা ক্বিয়াম, রুকূ’ ও সাজদাহ্‌ করলেন। সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন ও নাক ডাকতে শুরু করলেন। এ রকম তিনি তিনবার করলেন। তিনবারে তিনি ছয় রাক্’আত সলাত আদায় করলেন। প্রত্যেকবার তিনি মিসওয়াক করলেন, উযূ করলেন। ঐ আয়াতগুলোও পাঠ করলেন। সর্বশেষ বিত্‌রের তিন রাক্‌’আত সলাত আদায় করলেন। (মুসলিম) [১] যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার ইচ্ছা করলাম, আজ রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সলাত দেখব। প্রথমে তিনি হালকা দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দীর্ঘ দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করলেন দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ করে। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্‌‘আত সলাত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক্‌‘আত থেকে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্‌‘আত আদায় করলেন যা পূর্বের আদায় করা দু’ রাক্‌‘আত হতে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্‌‘আত যা আগে আদায় করা দু’ রাক্‌‘আত হতে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্‌‘আত আদায় করলেন যা আগের আদায় করা দু’ ‘রাক্‌‘আত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর তিনি বিত্‌র আদায় করলেন। এ মোট তের রাক্‌‘আত (সলাত) তিনি আদায় করলেন। (মুসলিম) আর যায়দ-এর কথা, অতঃপর তিনি দু’ রাক্‌‘আত আদায় করলেন যা প্রথমে আদায় করা দু’ রাক্‌‘আত থেকে কম লম্বা ছিল। সহীহ মুসলিমে ইমাম হুমায়দীর কিতাবে, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, সুনানে আবূ দাঊদ এমনকি জামি‘উল উসূলসহ সব স্থানে চারবার উল্লেখ করা হয়েছে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছলে বার্ধক্যের কারণে তিনি ভারী হয়ে গেলেন। তখন তিনি অনেক সময়ে নাফ্‌ল সলাতগুলো বসে বসে আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, যেসব সূরাহ্‌ পরস্পর একই রকমের ও যেসব সূরাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একসাথে করতেন আমি এগুলোকে জানি। তাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ তাঁর ক্রমিক অনুযায়ী বিশটি সূরাহ্‌ যা (তিওয়ালে) মুফাস্‌সালের প্রথমদিকে তা গুণে গুণে বলে দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সূরাগুলোকে এভাবে একত্র করতেন যে, এক এক রাক্‌‘আতে দু’ দু’টি সূরাহ্‌ পাঠ করতেন। আর বিশটি সূরার শেষের দু’টি হলো, (৪৪ নং সূরাহ্‌) হা-মীম আদ্‌ দুখা-ন ও (৭৮ নং সূরাহ্‌) ‘আম্মা ইয়াতাসা-আলূন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【92】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় করতে দেখেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার “আল্ল-হু আকবার” বলে এ কথা বলেছেন : “যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাতি’। তারপর তিনি সুব্‌হা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা পড়ে সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ পড়তেন। এরপর রুকূ‘ করতেন। তাঁর রুকূ‘ প্রায় ক্বিয়ামের মতো (দীর্ঘ) ছিল। রুকূ‘তে তিনি সুব্‌হা-না রব্বিআল ‘আযীম বলেছেন। তারপর রুকূ‘ থেকে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকূ‘ সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়েছেন। (এ সময়) তিনি বলতেন, ‘লিরব্বিয়াল হাম্‌দু’ অর্থাৎ সব প্রশংসা আমার রবের জন্যে। তারপর তিনি সাজদাহ্‌ করেছেন। তাঁর সাজদার সময়ও তাঁর ‘ক্বাওমার’ বরাবর ছিল। সাজদায় তিনি বলতেন, ‘সুব্‌হা-না রব্বিয়াল আ‘লা-। তারপর তিনি সাজদাহ্‌ হতে মাথা উঠালেন। তিনি উভয় সাজদার মাঝে সাজদার পরিমাণ সময় বসতেন। তিনি বলতেন, ‘রব্বিগ্‌ফির লী, ‘রব্বিগ্‌ফির লী’ হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করো। হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো। এভাবে তিনি চার রাক্‌‘আত (সলাত) আদায় করলেন। (এ চার রাক্‌‘আত সলাতে) সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌, আ-লি ‘ইমরান, আন্‌-নিসা, আল মায়িদাহ্‌ অথবা আল আন্‌‘আম পড়তেন। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী শু‘বার সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, হাদীসে শেষ সূরাহ্‌ আল মায়িদাহ্‌ উল্লেখ করা হয়েছে না সূরাহ্‌ আল আন্‌‘আম। (আবূ দাঊদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক দশটি আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত (সলাতে) ক্বিয়াম করবে তাকে ‘গাফিলীনের’ (আনুগত্যশীলের) মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যে লোক একশত আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত ক্বিয়াম করে তার নাম ‘গাফিলীনের’ মাঝে লিখা হবে। আর যে লোক এক হাজার আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত দাঁড়াবে তার নাম ‘অধিক সওয়াব পাওয়ার লোকেদের’ মাঝে লিখা হবে। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাত্রের সলাতের ক্বিরাআত বিভিন্ন রকমের হতো। কোন সময় তিনি শব্দ করে ক্বিরাআত পাঠ করতেন, আবার কোন সময় নিচু স্বরে। (আবূ দাঊদ)[১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, স্বীয় বাড়ীতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন আওয়াজে (সলাতে) ক্বিরাআত পাঠ করতেন যে, কামরার লোকেরা তা শুনতে পেত। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাত্রে বাইরে এসে আবূ বাক্‌রকে সলাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি নীচু শব্দে কুরআন পাঠ করছিলেন। এরপর তিনি ‘উমারের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) উচ্চ শব্দ করে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। আবূ ক্বাতাদাহ্‌ বলেন, (সকালে) যখন আবূ বাক্‌র ও ‘উমার দু’জনে রসূলের খিদমাতে একত্র হলেন; তিনি বললেন, আবূ বাক্‌র! আজ রাত্রে আমি তোমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তুমি নীচুস্বরে কুরআন কারীম পড়ছিলে। আবূ বাক্‌র আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাঁর নিকট মুনাজাত করছিলাম, তাঁকেই জানাচ্ছিলাম। তারপর তিনি ‘উমারকে বললেন, হে ‘উমার! (আজ রাত্রে) আমি তোমার নিকট দিয়েও যাচ্ছিলাম। তুমি সলাতে উঁচু শব্দে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলে। ‘উমার আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি উঁচু শব্দে সলাত আদায় করে ঘুমে থাকা লোকগুলোকে সজাগ করছিলাম আর শায়ত্বনকে তাড়াচ্ছিলাম। রসূলুল্লাহ (দু’জনের কথা শুনে আবূ বাক্‌রকে) বললেন, আবূ বাক্‌র! তুমি তোমার শব্দকে আরো একটু উঁচু করবে। (‘উমারকে বললেন) ‘উমার! তুমি তোমার আওয়াজকে আরো একটু নীচু করবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) [১] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, (এক রাত্রে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাতে ভোর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে একটি মাত্র আয়াত পড়তে থাকলেন, আয়াতটি এই “ইন তু‘আয্‌যিব হুম ফায়িন্নাহুম ‘ইবা-দুকা ওয়া ইন তাগ্‌ফির লাহুম ফায়িন্নাকা আন্‌তাল ‘আযীযুল হাকীম” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! যদি তুমি তাদেরকে আযাব দাও তাহলে তারা তোমার বান্দা। আর যদি তুমি তাদেরকে মাফ করো, তাহলে তুমি সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়”- (সূরাহ্‌ আল মায়িদাহ্‌ ৫ : ১১৮)। (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যখন ফাজ্‌রের দু’ রাক্‌‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করবে। সে যেন (জামা‘আত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) ডান পাশে শুয়ে থাকে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ) [১]

【93】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

মাসরূক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সবচেয়ে প্রিয় ‘আমাল কোনটি- এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন, যে ‘আমালই হোক তা সব সময় করা। তারপর আমি প্রশ্ন করলাম, রাত্রের কোন সময়ে তিনি (তাহাজ্জুদের) সলাতের জন্য সজাগ হতেন? তিনি বললেন, মোরগের ডাক শুনার সময়। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যদি আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে রাত্রে সলাতরত অবস্থায় দেখার জন্য লক্ষ্য করতাম, তাহলে আমরা তাকেঁ সলাত আদায় করতে দেখতে পেতাম। আর আমরা যদি রসূলুল্লাহকে ঘুম অবস্থায় দেখার জন্যে লক্ষ্য করতাম, তাহলে আমরা তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায়ই দেখতে পেতাম। (নাসায়ী) [১] হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এক সহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে গিয়েছিলাম। (তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম) আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করতে উঠলে তাঁকে আমি সলাতের সময় দেখতে থাকব। যাতে তিনি কিভাবে সলাত আদায় করেন তা আমি দেখতে পাই (পরে আমি সেভাবে ‘আমাল করব)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘ইশার সলাত, যাকে ‘আত্বামাহ্ বলা হয়, আদায় করার পর ঘুমিয়ে গেলেন (কিছু সময় আরাম করলেন)। তারপর তিনি সজাগ হলেন। তারপর আকাশের দিকে নজর করলেন ও এ আয়াত, “রব্বানা- মা- খালাকতা হা-যা- বা-ত্বিলান… ইন্নাকা লা- তুখলিফুল মি’আ-দ- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৯১-১৯৪) পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তারপর তিনি বিছানার দিকে গেলেন। মিসওয়াক বের করলেন। এরপর তাঁর নিকট রাখা পানির পাত্র হতে পানি বের করলেন। মিসওয়াক করলেন। উযূ করলেন। সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। সলাত শেষ হওয়ার পর আমি মনে মনে বললাম, যত সময় তিনি ঘুমিয়েছেন তত সময় তিনি সলাত আদায় করেছেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। শেষে আমি মনে মনে বললান, যত সময় তিনি সলাত আদায় করেছেন তত সময় তিনি ঘুমিয়েছিলেন। এরপর তিনি সজাগ হলেন। আবার ওসব কাজ করলেন যা পূর্বে করেছিলেন এবং তাই বললেন যা পূর্বে বলেছিলেন (অর্থাৎ মিসওয়াক, উল্লিখিত আয়াত ইত্যাদি)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজ্‌রের পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তিনবার করলেন। (নাসায়ী) [১] ইয়া‘লা ইবনু মুমাল্লাক (রহঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে একদিন রসূলুল্লাহর রাত্রের সলাত ও ক্বিরাআতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, তাঁর সলাতের বিবরণ দিলে তোমাদের কি কল্যাণ হবে? যে সময় পরিমাণ সলাত আদায় করতেন, সে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন। তারপর সে সময় পরিমাণ সলাত আদায় করতেন যে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন, এভাবে ভোর হত। বর্ণনাকারী ইয়া’লা বলেন, অতঃপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তাঁর ক্বিরাআতের বর্ণনা দিয়েছেন, দেখলাম তিনি পৃথক পৃথক এক এক অক্ষর করে বিস্তারিত পড়ার বর্ণনা দিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী) [১]

【94】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে তাহাজ্জুদের সলাতের জন্য সজাগ হয়ে এ দু’আ পড়তেন, “আল্ল-হুম্মা লাকাল হাম্‌দু, আনতা ক্বইয়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হাম্‌দু, আন্‌তা নূরুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না ওয়ালা কাল হাম্‌দু, আনতা মালিকুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদ্, আন্‌তাল হাক্কু, ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু, ওয়ালিক্ব-উক্বা হাক্কুন, ওয়া ক্বওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্‌না-রু হাক্কুন, ওয়ান্ নাবীয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন, ওয়াস্ সা-‘আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আস্‌লামতু, ওয়াবিকা আ-মান্‌তু, ওয়া ‘আলায়কা তাওয়াক্কাল্‌তু, ওয়া ইলায়কা আনাব্‌তু, ওয়াবিকা খ-সাম্‌তু, ওয়া ইলায়কা হা-কাম্‌তু, ফাগ্ফিরলী মা- ক্বদ্দাম্‌তু, ওয়ামা- আখ্‌খার্‌তু, ওয়ামা আস্‌রার্‌তু, ওয়ামা আ’লান্‌তু, ওয়ামা- আন্‌তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু, ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা, ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুকা। ” অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই তোমার। তুমিই আসমান জমিন এবং যা এ উভয়ের মাঝে আছে ক্বায়িম রেখেছ। সকল প্রশংসা তোমার। তুমি আসমান জমিন এবং এ উভয়ের মধ্যে যা আছে সকলের বাদশাহ। সকল প্রশংসা তোমারই। তুমিই সত্য। তোমার ওয়া’দা সত্য। তোমার সাক্ষাৎ সত্য। তোমার কালাম সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। সকল নাবী সত্য। মুহাম্মাদ (রসূলুল্লাহ) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য। ক্বিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছি। আমি তোমার ওপর ঈমান এনেছি। তোমার ওপরই ভরসা করেছি। তোমার দিকেই আমি ফিরেছি। তোমার মদদেই আমি শত্রুর মুকাবিলা করছি। তোমার নিকট আমার ফরিয়াদ। তুমি আমার আগের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দাও। আমার গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। আমার ওসব গুনাহও তুমি ক্ষমাকরে দাও, যা আমার চেয়ে তুমি ভাল অবগত আছো। তুমি যাকে ইচ্ছা করবে আগে আনবে, যাকে ইচ্ছা করবে পেছনে সরিয়ে দিবে। তুমি ছাড়া (প্রকৃত) কোন মা’বূদ নেই। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমত : এ দু’আ পাঠ করতেন, “আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা, ওয়া ইস্‌রা-ফীলা, ফাত্বিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি, আন্‌তা তাহ্‌কুমু বায়না ‘ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখ্‌তালিফূন, ইহ্‌দিনী লিমাখ্‌তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বিইয্‌নিকা, ইন্নাকা তাহ্‌দি মান তাশা-উ ইলা- সিরাত্বিম মুসতাক্বীম। ” অর্থাৎ হে আল্লাহ! হে জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব, হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী! তুমিই তোমার বান্দাদের মতপার্থক্য ফায়সালা করে দিবে। হে আল্লাহ! সত্যের সম্পর্কে যে ইখতিলাফ করা হচ্ছে, এ সম্পর্কে আমাকে সরল সঠিক পথ দেখাও। কারণ তুমি যাকে চাও, সরল পথ দেখাও। (মুসলিম) [১] ‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে লোক রাত্রে ঘুম থেকে জেগে এ দু’আ পাঠ করবে : “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্‌দাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, ওয়া সুব্‌হা-নাল্ল-হি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা-হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ” (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। আল্লাহ তা’আল পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত গুনাহ হতে বাঁচার ও সৎকার্য করার ক্ষমতা কারো নেই)। তারপর বলবে, “রব্বিগ্ ফির্‌লী”(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর)। অথবা বললেন, পুনরায় দু’আ পাঠ করবে। তার দু’আ কবূল করা হবে। তারপর যদি উযূ করে ও সলাত আদায় করে, তার সলাত কবূল করা হবে। (বুখারী) [১]

【95】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে ঘুম থেকে জেগে হয়ে উঠলে বলতেন, “লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা সুব্‌হা-নাকা, আল্ল-হুম্মা ওয়াবি হাম্‌দিকা আসতাগ্‌ফিরুকা লিযাম্‌বি, ওয়া আস্আলুকা রহমাতাকা, আল্ল-হুম্মা যিদ্‌নী ‘ইলমা-, ওয়ালা- তুযিগ ক্বল্‌বি বা’দা ইয হাদায়তানী, ওয়া হাব্‌লী মিল্লাদুন্‌কা রহমাতান, ইন্নাকা আন্‌তাল ওয়াহ্‌হা-ব। ” (আবূ দাঊদ) [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে মুসলিম রাত্রে পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিক্‌র করে ঘুমিয়ে যায়, তারপর রাত্রে জেগে উঠে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তাকে (দুনিয়া ও আখিরাতে) অবশ্যই কল্যাণ দান করেন। (আহ্‌মাদ, আবূ দাঊদ) [১] শারীকুল হাওযানী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে প্রশ্ন করেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে ঘুম থেকে সজাগ হওয়ার পর কোন জিনিস দিয়ে ‘ইবাদত আরম্ভ করতেন? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি আমাকে এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছ যা তোমার পূর্বে আমাকে কোন লোক জিজ্ঞেস করেনি। তিনি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর প্রথম দশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করতেন। ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ বলতেন দশবার। “সুব্‌হা-নাল্ল-হি ওয়া বিহাম্‌দিহী” পাঠ করতেন দশবার। “সুব্‌হা-নাল মালিকিল কুদ্দূস” পাঠ করতেন দশবার। ‘আস্‌তাগ্‌ফিরুল্ল-হ’ পাঠ করতেন দশবার। ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করতেন দশবার। আর দশবার পড়তেন এ দু’আ, “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন যীক্বিদ্ দুন্ইয়া ওয়া যীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়া-মাহ্”। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (তাহাজ্জুদের) সলাত আরম্ভ করতেন। (আবূ দাঊদ) [১]

【96】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) রাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের জন্যে দাঁড়ালে প্রথমে আল্ল-হু আকবার বলে এ দু‘আ পড়তেন, ‘‘সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়াবি হামদিকা, ওয়াতাবা- রকাসমুকা ওয়াতা‘আলা- জাদ্দুকা, ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুকা’’। অর্থাৎ ‘‘হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমরা তোমার প্রশংসা করছি। তোমার নাম বারাকাতপূর্ণ। তোমার মর্যাদা অনেক উপরে। তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই।’’ তারপর তিনি বলতেন, ‘‘আল্ল-হু আকবার কাবীরা-’’। এরপর বলতেন, ‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হিস্ সামী‘উল ‘আলীম, মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম, মিন হামযিহী, ওয়া নাফখিহী ওয়া নাফসিহ’’। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী; ইমাম আবূ দাঊদের বর্ণনায় ‘‘গয়রুকা’’র পর এ কথাটুকু আছে, তারপর তিনি বলতেন, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ তিনবার। আর হাদীসের শেষের দিকের শব্দগুলো হলোঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)‘‘আ‘ঊযু বিল্লা-হিস সামী‘ইল ‘আলীম’’ পড়ে) তারপর ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া আরম্ভ করতেন।)[১] রবী‘আহ্ ইবনু কা‘ব আল আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কামরার নিকট রাত্র কাটিয়েছি। আমি তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেতাম। তিনি রাতে তাহাজ্জুদের সলাতের জন্যে সজাগ হলে বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত ‘‘সুবহা-না রব্বিল ‘আ-লামীন’’ পাঠ করতেন। তারপর আবার লম্বা সময় ‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী’’ পড়তেন। (নাসায়ী; তিরমিযী অনুরূপ বর্ণনা করে বলেছেন, হাসান সহীহ)[1

【97】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন (রাতে) ঘুমিয়ে যায়, শয়তান (শয়তান) তার মাথার পেছনের দিকে তিনটি গিরা লাগায়। প্রত্যেক গিরায় শয়তান (শয়তান) তার মনে এ কথার উদ্রেক করে দেয় যে, এখনো অনেক রাত বাকী, কাজেই ঘুমিয়ে থাকো। সে যদি রাতে জেগে উঠে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাহলে তার (গাফলতির) একটি গিরা খুলে যায়। তারপর সে যদি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে, (গাফলতির) আর একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আরম্ভ করে তখন তার তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। বস্ত্ততঃ এ লোক পাক-পবিত্র হয়ে ভোরের মুখ দেখে, নতুবা অপবিত্র হয়ে ভোরের দিকে কলূষ অন্তর ও অলস মন নিয়ে উঠে। (বুখারী, মুসলিম)[১] মুগীরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাত্রে সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পড়তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি কেন এত কষ্ট করছেন। অথচ আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, আমি কী কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হবো না? (বুখারী, মুসলিম)[১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক লোক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তাঁকে বলা হলো, লোকটি সকাল পর্যন্ত একটানা ঘুমিয়ে থাকে, সলাতের জন্যে উঠে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, এ লোকের কানে অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তার দু’কানে শয়তান (শয়তান) পেশাব করে দিয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়িয়ে গিয়ে এ কথা বলতে বলতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন, ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ আজ রাত্রে কত ধন-সম্পদ অবতরণ করা হয়েছে। আর কত ফিতনাহ্ অবতরণ করা হয়েছে। হুজরাবাসিনীদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিবে কে? তিনি এর দ্বারা তাঁর স্ত্রীদেরকেই বুঝিয়েছেন। যেন তারা সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। কত মহিলা দুনিয়ায় কাপড় পরিধান করে আছে, কিন্তু আখিরাতে তারা উলঙ্গ থাকবে। (বুখারী)[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান বারাকাতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব।’ (বুখারী, মুসলিম)[১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রাত্রে এমন একটা সময় অবশ্যই আছে, কোন মুসলিম যদি এ সময়টা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা অবশ্যই দান করেন। এ সময়টা প্রতি রাত্রেই আসে। (মুসলিম)[১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সকল সলাতের মাঝে দাঊদ (আঃ)-এর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং সকল সওমের মাঝে দাঊদ (আঃ)-এর সওম সবচেয়ে বেশী প্রিয়। তিনি অর্ধেক রাত্র ঘুমাতেন। এক-তৃতীয়াংশ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর রাতের ষষ্ঠাংশে আবার ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন সওম পালন করতেন এবং একদিন সওম ছেড়ে দিতেন। (বুখারী, মুসলিম)[১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রের প্রথমাংশে ঘুমাতেন, আর শেষাংশে জেগে থাকতেন। এরপর তিনি যদি তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট যাওয়া দরকার মনে করতেন যেতেন। এরপর আবার ঘুমিয়ে যেতেন। তিনি যদি ফজরের (ফজরের) পূর্বে আযানের সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকতেন, উঠে যেতেন। নিজের শরীরে পানি ঢেলে নিতেন। আর অপবিত্র অবস্থায় না থাকলে ফাজ্‌রের (ফজরের) সলাতের জন্যে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন। (ফজরের) দু’ রাক্‘আত (সলাত) আদায় করে নিতেন। (বুখারী, মুসলিম)[১]

【98】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের জন্যে ক্বিয়ামুল লায়ল (তাহাজ্জুদের সলাত) আদায় করা আবশ্যক। কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেক লোকদের অভ্যাস। (তাছাড়াও এ) ক্বিয়ামূল লায়ল আল্লাহর নৈকট্য লাভ আর পাপের কাফ্‌ফারাহ্‌। তোমাদেরকে পাপ থেকেও (এ ক্বিয়ামুল লায়ল) ফিরিয়ে রাখে। (তিরমিযী) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তিন প্রকার লোকদের প্রতি নজর করে আল্লাহ তা’আলা হাসেন (অর্থাৎ তাদের ওপর খুশি হন)। ঐ লোক, যে রাতে উঠে (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় করে। (দ্বিতীয়) ঐ লোক, যারা সলাতে কাতারবন্ধি হয়ে দাঁড়ায়। (তৃতীয়) ঐ লোকজন, যারা (দ্বীনের) দুশমনদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। (শারহুস্‌ সুন্নাহ্‌) [১] আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন : আল্লাহ তা’আলা শেষ রাতেই বান্দার বেশী নিকটতম হন। তাই সে সময় তোমরা আল্লাহর যিক্‌রকারীদের মাঝে শামীল হওয়ার চেষ্টা করতে যদি পারো অবশ্যই করো। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হিসেবে হাসান সহীহ, সানাদগত দিক থেকে গরীব) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমাত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সলাতের জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে তাঁর মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও রহমাত করেন যে রাত্রে উঠে তাহাজ্জদের সলাত আদায় করে। আবার তাঁর স্বামীকেও তাহাজ্জুদের সলাত আদায়ের জন্য উঠায়। যদি স্বামী ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তাঁর মুখে পানি ছিটে দেয়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন সময়ের দু’আ আল্লাহর নিকট বেশি কবূল হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মাঝরাতের শেষ ভাগের দু’আ। আর ফার্‌য সলাতের পরের দু’আ। (তিরমিযী) [১] আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : জান্নাতে এমন সব কক্ষ আছে যার বাইরের জিনিস ভেতর থেকে আর ভেতরের জিনিস বাইরে থেকে দেখা যায়। আর এ বালাখানা আল্লাহ তা’আলা ঐসব ব্যক্তির জন্যে তৈরি করে রেখেছেন, যারা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে নরম কথা বলে। (গরীব-মিসকীনকে) খাবার দেয়। প্রায়ই (নাফ্‌ল) সওম পালন করে। রাত্রে এমন সময় (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় করে যখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (বায়হাক্বীর শু’আবুল ঈমান) [১] ‘আলী (রাঃ) ইমাম তিরমিযীও এ ধরনের বর্ণনা ‘আলী (রাঃ) হতে নকল করেছেন। কিন্তু এদের সূত্রে ‘কোমল কথা বলে’-এর স্থানে ‘মধুর কথা বলে’ উদ্ধুত হয়েছে। উভয় বাক্যের অর্থ একই।।[১]

【99】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ! তিমি অমুক লোকের মতো হয়ো না। সে রাত্রে (সজাগ হয়ে) তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করত, পরে তা ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারী, মুসলিম) [১] উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : দাঊদ (‘আলাইহিস সালাম)-এর জন্যে রাত্রের (শেষাংশের একটি) সময় নির্ধারিত ছিল। যে সময়ে তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদেরকে উঠাতেন। তিনি বলতেন, হে দাউদের পরিবারের লোকেরা! (ঘুম থেকে) জাগো এবং সলাত আদায় কর। কারণ এটা এমন মুহূর্ত, যে সময় আল্লাহ তা’আলা দু’আ কবুল করেন। কিন্তু জাদুকর ও ছিনতাইকারীর দু’আ কবুল হয়না। (আহ্‌মদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : ফার্‌য সলাতের পর অধিক উত্তম সলাত হলো মাঝ রাত্রের সলাত। (আহ্‌মাদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একলোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলো এবং তাঁকে বলল, অমুক লোক রাত্রে সলাত আদায় করে কিন্তু ভোরে উঠে চুরি করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : খুব তাড়াতাড়ি তার সলাত তাকে এ ‘আমাল থেকে বাধা দিবে, তার যে ‘আমালের কথা তুমি বলছ। (আহমাদ, বায়হাক্বী’র শু’আবুল ‘ঈমান) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যখন কোন তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে উঠায় ও উভয়ে এক সাথে সলাত আদায় করে অথবা তিনি এ কথা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকে দু’ রাক্‌’আত করে সলাত এক সাথে পড়ে, তাহলে এ দুই (স্বামী-স্ত্রী) লোকের নাম আল্লাহকে স্মরণকারী নর ও নারীদের দলের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আমার উম্মাতের মাঝে বেশী সম্ভ্রান্ত অর্থাৎ উন্নত মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি তারাই, যারা কুরআন বহনকারী ও সলাত আদায়ের মাধ্যমে রাত জাগরণকারী। (বায়হাকী-শু’আবুল ঈমান) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁর পিতা ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রাত্রে আল্লাহর ইচ্ছা মতো সলাত আদায় করতেন। রাত্রের শেষভাগে নিজ পরিবারকে সলাত আদায়ের জন্যে উঠিয়ে দিতেন। তিনি তাদের বলতেন, সলাত আদায় কর। তারপর এ আয়াত পাঠ করতেন : “ওয়া’মুর আহ্‌লাকা বিস্‌সলা-তি ওয়াস্‌ত্বাবির ‘আলায়হা- লা –নাস্‌আলুকা রিয্‌ক্বান। নাহনু নার্‌যুকুকা ওয়াল ‘আ-ক্বিবাতু লিত্ তাক্বওয়া-”। অর্থাৎ “তোমার পরিবারের লোকজনদেরকে সালাতের আদেশ করতে থাকো। নিজেও (এ কষ্টের) জন্যে ধৈর্য ধারণ করতে থাকো। আমি তোমার নিকট রিয্‌ক্ব চাইনা। রিয্‌ক্ব তো আমিই তোমাকে দান করি। আখিরাতের সফলতা তো মুত্তাক্বী লোকদের জন্য”- (সূরাহ্‌ ত্ব-হা- ২০ : ১৩২)। (মালিক) [১]

【100】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন কোন মাসে রোযাহীন কাটাতেন। এমনকি আমরা মনে করতাম, তিনি হয়ত এ মাসে সওম পালন করবেন না। আবার তিনি সওম পালন করতে থাকতেন। আমরা ধারণা করতাম, তিনি বুঝি এ মাসে সওম পালন করা ছাড়বেন না। তুমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাত্রে সলাত আদায়ে করা অবস্থায় দেখতে চাও, তাহলে দেখতে পাবে তিনি সলাত আদায়ে করছেন। আবার তুমি যদি ঘুম অবস্থায়ে দেখতে চাও তাহলে দেখতে পাবে তিনি ঘুমাছছেন। (বুখারী) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহর নিকট বান্দার সবচেয়ে প্রিয় ‘আমাল হল সর্বদা তা করা যদি (পরিমাণে) কমও হয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যত পরিমাণ তোমরা সামর্থ্য রাখো তত পরিমাণ ‘আমাল করো। এ জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলা সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ তোমরা ক্লান্ত না হবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কারো উচিত ততক্ষণ পর্যন্ত সলাত আদায় করা যতক্ষণ সে প্রফুল্ল বা সতেজ থাকে। ক্লান্ত হয়ে গেলে সে যেন বসে যায় (অর্থাৎ সলাত আদায় না করে)। (বুখারী, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যদি সলাত আদায় করা অবস্থায় ঝিমাতে শুরু করে তবে সে যেন ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুম দূর না হওয়া পর্যন্ত। কারণ তোমাদের কেউ যখন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সলাত আদায় করে (ঘুমের কারণে) সে জানতে পারে না (সে কি পড়ছে)। হতে পারে সে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করতে গিয়ে (ঝিমানীর কারণে নিজে) নিজেকে গালি দিচ্ছে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। কিন্তু যে লোক দীনকে কঠিন করে তুলে, দ্বীন তাকে পরাভূত করে দেয়। অতএব দ্বীনের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন ও সাধ্য অনুযায়ী ‘আমাল কর (নিজেকে ও অন্যকে) শুভ সংবাদ দাও, আর সকাল-সন্ধ্যা এবং রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। (বুখারী) [১] উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : কোন লোক রাতের বেলা তার নিয়মিত ‘ইবাদাত অথবা তার আংশিক না করে শুয়ে গেল। তারপর সে ফাজ্র ও যুহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা করে নিলে যেন সে রাতেই তা পড়েছে বলে লিখে নেয়া হয়। (মুসলিম) [১] ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : সলাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে আদায় করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে (শুয়ে) কাত হয়ে আদায় করবে। (বুখারী) [১] ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি কোন লোকের বসে বসে (নাফ্ল) সলাত আদায় করার ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি দাঁড়িয়ে পড়ত ভাল হতো। যে লোক বসে বসে নাফ্ল সলাত আদায় করবে সে দাঁড়িয়ে পড়া লোকের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। আর যে লোক শুয়ে সলাত আদায় করবে সে বসে পড়া ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। (বুখারী) [১]

【101】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে লোক পাক-পবিত্র হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহর যিক্রে লিপ্ত থাকে, রাতে যতবার সে পাশ বদলাবে এবং আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে কোন কল্যাণ কামনা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে কল্যাণ অবশ্যই দান করবেন। (ইবনুস্‌ সুন্নীর বরাতে ইমাম নাবাবীর কিতাবুল আযকার) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : দু’ লোকের ওপর আল্লাহ তা’আলা খুব সন্তুষ্ট হন। এক লোক, যে নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও প্রিয় স্ত্রী হতে আলাদা হয়ে তাহাজ্জুদ সলাতের জন্যে উঠে যায়। আল্লাহ এ সময় তার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকাও। সে আমার নিকট থাকা জিনিস পাওয়ার আগ্রহে (সাওয়াব, জান্নাত) এবং আমার নিকট থাকা জিনিসকে ভয় করে (জাহান্নাম ও ‘আযাব) নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও স্ত্রীর মধুর নৈকট্য ত্যাগ করে সলাত (তাহাজ্জুদ) আদায়ের জন্যে উঠে পড়েছে। আর দ্বিতীয় হলো ঐ লোক, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছে। (কোন ওযর ছাড়া) যুদ্ধের ময়দান হতে সঙ্গী-সাথী নিয়ে ভেগে এসেছে। কিন্তু এভাবে ভেগে আসায় আল্লাহর শাস্তি ও ফেরত আসায় গুনাহর কথা মনে পড়ায় আবার যুদ্ধের মাঠে ফিরে আসছে। আল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছে। আল্লাহ তার মালায়িকাহ্-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে লক্ষ্য করে দেখো, যারা আমার কাছে থাকা জিনিস (জান্নাত) পাওয়র জন্যে ও আমার কাছে থাকা জিনিস (জাহান্নাম) থেকে বাঁচার জন্যে যুদ্ধের মাঠে ফিরে এসেছে, জীবনও দিয়ে দিয়েছে। (শারহুস্ সুন্নাহ্) [১]

【102】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : বসে (নাফ্ল) সলাত আদায় করলে, দাঁড়িয়ে সলাত আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তিনি (‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে হাযির হলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে বসে সলাত আদায় করছিলেন। (সলাত শেষ হবার পর) আমি রসূলের মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র! কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তো বলা হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : বসে সলাত আদায়কারীর সলাতে অর্ধেক সাওয়াব হয়। অথচ আপনি বসে বসে সলাত আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা-ই। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতো নই। (মুসলিম) [১] সালিম ইবনুল আবী জা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, খুযা’আহ্ গোত্রের এক লোক বলল, হায় আমি যদি সলাত আদায় করতাম, আরাম পেতাম। লোকেরা তার কথা শুনে মন খারাপ করল। তখন লোকটি বলল, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি : হে বিলাল! সলাতের জন্যে ইক্বামাত দাও। এর দ্বারা আমাকে আরাম দাও। (আবূ দাঊদ) [১]

【103】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : রাত্রের (নাফ্ল) সলাত দু’ রাক্’আত দু’ রাক্’আত করে (আদায় করতে হয়)। কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকাবোধ হলে সে যেন (দু’রাক্’আতের) সাথে সাথে আরো এক রাক্’আত আদায় করে নেয়। তাহলে এ রাক্’আত পূর্বে আদায় করা সলাতকে বেজোড় করে দেবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আর বিত্র এক রাক্’আত শেষ রাতে। (মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রে (তাহাজ্জুদের সময়) তের রাক্’আত সলাত আদায় করতেন। তের রাক্’আতের মাঝে পাঁচ রাক্আত বিত্র। আর এর মাঝে (পাঁচ রাক্’আতের) শেষ রাক্’আত ব্যতীত কোন রাক্’আতে ‘তাশাহ্হুদ’ পড়ার জন্যে বসতেন না। (বুখারী, মুসলিম) [১] সা‘দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) -এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বললাম, উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ‘খুলুক’ (স্বভাব-চরিত্র) ব্যাপারে কিছু বলুন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? আমি বললাম, হ্যাঁ পড়ি। এবার তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নৈতিকতা ছিল আল-কুরআন। আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বিতর ব্যাপারে বলুন। তিনি বললেন, (রাতের বিতর সলাতের জন্যে) আমি পূর্বে থেকেই রসূলুল্লাহর মিসওয়াক ও উযূর পানির ব্যবস্থা করে রাখতাম। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁকে ঘুম হতে সজাগ করতে চাইতেন, উঠাতেন। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে মিসওয়াক করতেন, তারপর উযূ করতেন ও নয় রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। অষ্টম রাক‘আত ব্যতীত কোন রাক‘আতে তিনি বসতেন না। আট রাক‘আত পড়া শেষ হলে (‘তাশাহহুদে’) বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু‘আ করতেন অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন। তারপর সালাম ফিরানো ব্যতীত নবম রাক‘আতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাক‘আত শেষ করে তাশাহহুদ পাঠ করার জন্যে বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তার প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু‘আ করতেন (অর্থাৎ তাশাহহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন। তারপর বসে বসে দু’ রাক‘আত আদায় করতেন। হে বৎস! এ মোট এগার রাক‘আত হলো। এরপর যখন তিনি বার্ধক্যে পৌছে গেলেন এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন বিতরসহ সাত রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। আর পূর্বের মতোই দু’ রাক‘আত বসে বসে আদায় করতেন। প্রিয় বৎস! এ মোট নয় রাক‘আত হলো। আল্লাহর নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সলাত আদায় করলে, তা নিয়মিত আদায় করতে পছন্দ করতেন। কোন দিন যদি ঘুম বেশী হয়ে যেত অথবা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিত, যাতে তাঁর জন্যে রাত্রে দাঁড়ানো সম্ভব হত না, তখন তিনি দুপুরে বারো রাক‘আত সলাত আদায় করে নিতেন। আমার জানা মতে, আল্লাহর নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো এক রাতে সম্পুর্ণ কুর‘আন পড়েননি। অথবা ভোর পর্যন্ত সারা রাত্র ধরে সলাত আদায় করেননি এবং রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে গোটা মাস সওম পালন করেননি। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমরা বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সলাত করো। (মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমরা (ভোরের লক্ষণ ফুটে উঠার আগে) বিতরের সলাত আদায় করতে দ্রুত করো। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক আশংকা করে যে, শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে নেয়। আর যে লোক শেষ রাত্রে উঠতে পারবে বলে মনে করে, সে যেন শেষ রাতেই বিতরের সলাত আদায় করে। এজন্য যে, শেষ রাতের সলাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটা অনেক ভাল। (মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রের প্রতি অংশেই বিতরের সলাত আদায় করেছেন- প্রথম রাতেও (ইশার সলাতের পরপর), মধ্যরাতেও এবং শেষ রাতেও। কিন্তু শেষ জীবনে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের সলাতের জন্যে রাতের সাহরীর সময় (শেষভাগ) নির্ধারিত করে নিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ) আমাকে তিনটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করেছেন : প্রতি মাসে তিনটি সওম পালন করতে, যুহা’র দু’ রাক‘আত সলাত (ইশরাক অথবা চাশত) পড়তে এবং ঘুমাবার পূর্বে বিতরের সলাত আদায় করতে। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【104】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

গুযায়ফ ইবনু হারিস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারয গোসল রাতে প্রথম অংশে না শেষ অংশে করতেন? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, কোন কোন সময় রাতের প্রথম প্রহরে কোন কোন সময় রাতের শেষ প্রহরে গোসল করতেন। আমি বললাম, আল্লাহ তা‘আলা অনেক বড়। সব প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্যে। যিনি দ্বীনের ‘আমালের ব্যাপারে সহজ (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। আবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বিতরের সলাত রাতের প্রথম ভাগে আদায় করে নিতেন না রাতের শেষ ভাগে আদায় করতেন? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, তিনি কখনো রাতের প্রথম ভাগেই আদায় করতেন, আবার কখনো শেষ রাতে আদায় করতেন। আমি বললাম, আল্লাহ তা‘আলা অনেক বড়। সব প্রশংসা তাঁর যিনি দ্বীনের কাজ সহজ (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তাহাজ্জুদের সলাতে অথবা অন্য কোন সলাতে শব্দ করে ক্বিরাআত পড়তেন, না আস্তে আস্তে? তিনি বললেন, কখনো তো শব্দ করে ক্বিরাআত পড়তেন, আবার কখনো নিচু স্বরে। আমি বললাম, আল্লাহ তা‘আলা অনেক বড় ও সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য, যিনি দ্বীনের কাজ সহজ ও প্রশস্ত করে দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ! ইবনু মাজাহ এ সূত্রে শুধু শেষ অংশ [যাতে ক্বিরাআতের উল্লেখ হয়েছে] নকল করেছেন) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত রাক‘আত বিতরের সলাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো চার ও তিন (অর্থাৎ সাত), আবার কখনো ছয় ও তিন (অর্থাৎ নয়), কখনো আট ও তিন (অর্থাৎ এগার) আবার কখনো দশ ও তিন (অর্থাৎ তের) রাক‘আত বিতরের সলাত আদায় করতেন। তিনি সাত-এর কম ও তের-এর বেশী বিতরের সলাত আদায় করতেন না। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : বিতরের সলাত প্রত্যেক মুসলিমের আদায় করা কর্তব্য। তাই যে লোক বিতরের সলাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করতে চায় সে যেন পাঁচ রাক‘আত আদায় করে। যে লোক তিন রাক‘আত আদায় করতে চায় সে যেন তিন রাক‘আত আদায় করে। যে লোক এক রাক‘আত আদায় করতে চায় সে যেন এক রাক‘আত আদায় করে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা বিতর (বিজোড়)। তিনি বিজোড়কে ভালোবাসেন। অতএব হে কুরআনের বাহকগণ! তোমরা বিতর সলাত আদায় কর। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] খারিজাহ্ ইবনু হুযাফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা'আলা এমন এক সলাত দিয়ে তোমাদের সহযোগিতা করেছেন (পাঞ্জেগানা সলাত ছাড়া) যা তোমাদের জন্যে লাল উটের চেয়েও অনেক উত্তম। তা হলো বিতরের সলাত। আল্লাহ তা'আলা এ সলাত তোমাদের জন্য ইশার সলাতের পর থেকে ফাজরের সলাতের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মাঝে আদায়ের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (তিরমিয়ী, আবূ দাঊদ) [১] যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক বিতরের সলাত আদায় না করে শুয়ে পড়েছে (আর উঠতে পারেনি), সে যেন (ফাজরের সলাতের পূর্বে) ভোর হয়ে গেলেও তা পড়ে নেয়। (তিরমিয়ী মুরসাল হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন) [১] ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আয়িশাহ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করেছিলাম, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের সলাতে কোন কোন সূরাহ পড়তেন? আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, তিনি প্রথম রাকাআতে সাবিহিস্মা রব্বিকাল আ'লা- দ্বিতীয় রাকাআতে কুল ইয়া- আইয়াহাল কা-ফিরুন এবং তৃতীয় রাকাআতে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’, ‘কুল আ‘উয়ু বিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ‘উয়ু বিরব্বিন না-স’ পড়তেন। (তিরমিয়ী, আবূ দাঊদ) [১] আবদুর রহমান ইবনু আবযা এ বর্ণনাটিকে ইমাম নাসায়ী আবদুর রহমান ইবনু আবযা হতে বর্ণনা করেছেন। [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) আর ইমাম আহমাদ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আর দারিমী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে নকল করেছেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ ও দারিমী নিজেদের বর্ণনায় “মু‘আব্বিযাতায়ন” উল্লেখ করেননি)। [১] সান ইবনু ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের দুআ কুনুত পাঠ করার জন্য আমাকে কিছু কালিমাহ্ শিক্ষা দিয়েছেন। সে কালিমাগুলো হলো, “আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ-‘ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাক্তা রব্বানা- ওয়াতা‘আ-লায়তা” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করে সে সব মানুষের সঙ্গে যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছ (নবী রসূলগণ)। তুমি আমাকে দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে হিফাযাত করো ওসব লোকের সঙ্গে যাদেরকে তুমি হিফাযাত করেছ। যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছো, তাদের মাঝে আমারও অভিভাবক হও। তুমি আমাকে যা দান করেছ (জীবন, জ্ঞান সম্পদ, ধন, নেক ‘আমাল), এতে বারাকাত দান করো। আর আমাকে তুমি রক্ষা করো ওসব অনিষ্ট হতে যা আমার তাকদীরে লিখা হয়ে গেছে। নিশ্চয় তুমি যা চাও তাই আদেশ করো। তোমাকে কেউ আদেশ করতে পারে না। তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেউ অপমানিত করতে পারে না। হে আমার রব! তুমি বারাকাতে পরিপূর্ণ। তুমি খুব উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন"। (তিরমিয়ী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী) [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের সলাতের সালাম ফিরাবার পর বলতেন, “সুবহা-নাল মালিকিল কুদূস” অর্থাৎ পাক-পবিত্র বাদশাহ খুবই পবিত্র। (আৰু দাঊদ, নাসায়ী; তিনি [নাসায়ী] বৃদ্ধি করেছেন যে, তিনবার দু'আটি পড়তেন, শেষের বারে দীর্ঘায়িত করতেন) [১] ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা নাসায়ীর একটি বর্ণনা ‘আবদুর রহমান ইবনু আবৃযা তার পিতা হতে নকল করেছেন : তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাম ফিরাতেন, তিনবার বলতেন "সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস", তৃতীয়বার উচ্চৈঃস্বরে বলতেন। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বিতরের সলাত শেষে এ দুআ পড়তেন : “আল্ল-হুম্মা ইনী আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিকা ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন উকুবাতিকা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনকা, লা- উহসী সানা-য়ান ‘আলায়কা, আনতা কামা- আস্নায়তা ‘আলা- নাফসিকা” (অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি পানাহ চাই তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার গজব থেকে, তোমার নিরাপত্তার মাধ্যমে তোমার আযাব থেকে। আমি পানাহ চাই তোমার নিকট তোমার অসন্তোষ থেকে। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে আমি শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি তোমার বিবরণ দিয়েছ )। (আবূ দাঊদ, তিরমিয়ী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১]

【105】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর নিকট প্রশ্ন করা হলো যে, আমীরুল মু'মিনীন মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) -এর ব্যাপারে আপনার কিছু বলার আছে? তিনি বিতরের সলাত এক রাক্'আত আদায় করেন। (এ কথা শুনে) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি একজন ‘ফকীহ', যা করেন ঠিক করেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, মু‘আবিয়াহ্ ‘ইশার সলাতের পর বিতরের সলাত এক রাক্'আত আদায় করেছেন। তার কাছে ছিলেন ইবনু 'আব্বাস-এর আযাদ করা গোলাম। তিনি তা দেখে ইবনু ‘আব্বাসকে ব্যাপারটি জানিয়ে দিলেন। ইবনু ‘আব্বাস বললেন, তার সম্পর্কে কিছু বলো না। তিনি নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহচর্যের মর্যাদা লাভ করেছেন। (বুখারী) [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : বিতরের সলাত আবশ্যক (অর্থাৎ ওয়াজিব)। তাই যে লোক বিতরের সলাত আদায় করল না, সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য নয়। ‘বিতরের সলাত সত্য', যে বিতরের সলাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য হবে না। ‘বিতরের সলাত সত্য', যে লোক বিতরের সলাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য হবে না। ‘বিতরের সলাত সত্য', যে ব্যক্তি বিতরের সলাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য হবে না। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক বিতরের সলাত আদায় না করে ঘমিয়ে পড়লো অথবা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন যখনই স্মরণ হয় বা ঘুম হতে সজাগ হয়ে আদায় করে নেয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ) [১] ইমাম মালিক (রহঃ) তিনি জানতে পারলেন যে, এক লোক ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার-এর নিকট বিতরের সলাত ওয়াজিব কি-না তা প্রশ্ন করল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বললেন, বিতরের সলাত রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায় করেছেন এবং মুসলিমরাও (সহাবীগণ) আদায় করেছেন। ঐ লোক বারবার একই বিষয় জিজ্ঞেস করতে থাকেন। ইবনু 'উমারও একই উত্তর দিতে থাকেন যে, বিতরের সলাত রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায় করেছেন এবং মুসলিমরাও আদায় করেছেন। (মুয়াত্ত্বা ) [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের সলাত তিন রাক্‘আত আদায় করতেন এবং তাতে মুফাসসালের নয়টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। প্রতি রাক্‘আতে তিনটি সূরাহ্ এবং এগুলোর শেষ সূরাহ্ ছিল “কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” (সূরাহ্ আল ইখলা-স)। (তিরমিযী) [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার-এর সঙ্গে মাক্কায় ছিলাম। আসমান মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ইবনু ‘উমার সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন। তখন তিনি এক রাক্‘আত বিতরের সলাত আদায় করে নিলেন। তারপর আসমান পরিষ্কার হয়ে গেলে দেখলেন, এখনো অনেক রাত অবশিষ্ট আছে। তাই তিনি আরো এক রাক্‘আত আদায় করে জোড়া করে নিলেন। এরপর দু' দু' রাক্'আত করে (নাফল) আদায় করলেন। তারপর যখন আবার সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন তিনি বিতরের এক রাক্'আত আদায় করলেন। (মালিক) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (শেষ বয়সে) বসে বসে ক্বিরাআত পড়তেন। ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকতে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন। বাকী (আয়াত) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেন। তারপর রুকূ‘ করতেন ও সাজদায় যেতেন। এভাবে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয় রাক্‘আতও আদায় করতেন। (মুসলিম) [১] উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের পরে দু' রাক্'আত (সলাত) আদায় করতেন। [তিরমিযী; কিন্তু ইবনু মাজাহ আরো বলেছেন, সংক্ষেপে ও বসে বসে। [১] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের এক রাক্‘আত আদায় করতেন। তারপর দু' রাক্‘আত (নাফল) আদায় করতেন। এতে তিনি বসে বসে ক্বিরাআত পড়তেন। রুকূ‘ করার সময় হলে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন ও রুকূ‘ করতেন। (ইবনু মাজাহ) [১] সাওবান (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তাহাজ্জুদের সলাতের জন্যে রাত্রে জেগে উঠা কষ্টকর ও কঠিন কাজ। তাই তোমাদের যে লোক রাতের শেষাংশে জাগরিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়, সে ঘুমাবার পূর্বে ‘ইশার সলাতের পর বিতর আদায় করতে চাইলে যেন দু' রাক্‘আত আদায় করে নেয়। যদি তাহাজ্জুদের সলাতের জন্যে রাত্রে উঠে যায় তবে তো ভাল, উঠতে না পারলে ঐ দু' রাক্‘আত যথেষ্ট। (দারিমী) [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের পর দু’ রাক্‘আত সলাত বসে আদায় করতেন। আর এ দু’ রাক্‘আতে ‘ইযা- যুল্‌যিলাতি’ এবং ‘কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’ পড়তেন। (আহমদ) [১]

【106】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন লোককে বদ্‌দু‘আ অথবা কোন লোককে দু‘আ করতে চাইলে রুকূ‘র পরে কুনূত পড়তেন। তাই কোন কোন সময় তিনি, ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, রাব্বানা- লাকাল হাম্‌দু’ বলার পরে এ দু‘আ করতেন, ‘আল্লা-হুম্মা আন্‌জিল ওয়ালীদ ইবনিল ওয়ালীদ। ওয়া সালামাতাব্‌নি হিশা-ম, ওয়া ‘আইয়্যা-শাব্‌নি রবী‘আহ্‌, আল্লা-হুম্মাশ্‌দুদ ওয়াত্ব আতাকা ‘আলা-মুযারা ওয়াজ্‌‘আল্‌হা- সিনীনা কাসিনী ইউসুফা’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে সালামাহ্‌ ইবনু হিশামকে, ‘আইয়্যাশ ইবনু আবূ রবী‘আকে তুমি মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! ‘মুয়ায জাতির’ ওপরে তুমি কঠিন ‘আযাব নাযিল করো। আর এ ‘আযাবকে তাদের ওপর ইউসুফ (আঃ) -এর বছরগুলোর ন্যায় দুর্ভিক্ষের রূপ ধারণ করে দাও।’ তিনি উচ্চৈঃস্বরে এ দু‘আ পড়তেন। কোন কোন সালাতে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরবে এসব গোত্রের জন্যে এভবে দু‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি অমুক অমুকের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করো।’ তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেছেন, ‘লাইসা লাকা মিনাল আম্‌রি শাইয়ুন’ অর্থাৎ “এ ব্যাপারে আপনার কোন দখল নেই”- (সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১২৮)। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আসিম আল আহ্ওয়াল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে “দু‘আয়ে কুনূত” ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি যে, এটা সলাতে রুকূ‘র পূর্বে পড়া হয়, না পরে? আনাস বললেন, রুকূ‘র পূর্বে। তিনি আরো বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফাজ্‌রের সলাতে অথবা সকল সলাতে রুকূ‘র পরে দু‘আয়ে) কুনূত পড়েছেন শুধু একবার। (তারও কারণ ছিল) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু লোককে, যাদেরকে ক্বারী বলা হত, তাদের সংখ্যা ছিল সত্তরজন (তাবলীগের জন্য) কোথাও পাঠিয়েছিলেন। ওখানকার লোকেরা তাদেরকে শাহীদ করে দিয়েছে। সেজন্য রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস পর্যন্ত রুকূ‘র পরে দু‘আয়ে কুনূত পড়ে হত্যাকারীদের জন্যে বদদু‘আ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【107】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে এক মাস পর্যন্ত প্রতিদিন যুহর ‘আস্‌র, মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজ্‌রের সলাতের শেষ রাক্‌‘আতে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ বলার পর দু‘আ কুনূত পড়তেন। এতে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী সুলায়ম-এর কয়েকটি গোত্র, রি’ল, যাকওয়ান, ‘উসাইয়্যাহ্‌ এর জীবিতদের জন্যে বদ্‌দু‘আ করতেন। পেছনের লোকেরা ‘আমীন’ আমীন’ বলতেন। (আবূ দাঊদ) [১] আনাস (রাঃ) নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে এক মাস পর্যন্ত (রুকূ‘র পরে) ‘দু‘আ কুনূত’ পাঠ করেছেন। তারপর তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ত্যাগ করেছেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১] আবূ মালিক আল আশজা‘ঈ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, হে পিতা! আপনি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র, ‘উমার, ‘উসমান, আর ‘আলী (রাঃ) -এর পেছনে কুফায় প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত সলাত আদায় করেছেন। এসব মর্যাদাবান ব্যক্তিগণ কি “দু‘আ কুনূত” পড়তেন? তিনি জবাব দিলেন, হে আমার পুত্র! (দু‘আ কুনূত পড়া) বিদ‘আত। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১]

【108】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

হাসান (রহঃ) তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) (রমাযান মাসের তারাবীহের জন্যে) লোকজনকে একত্র করলেন। তিনি (‘উমার) উবাই ইবনু কা‘বকে ইমাম নিযুক্ত করলেন। উবাই ইবনু কা‘ব তাদের নিয়ে বিশ রাত সলাত আদায় করালেন। তিনি (উবাই) রমযানের শেষ পনের দিন ছাড়া আর কোন দিন লোকদেরকে নিয়ে দু‘আ কুনূত পড়েননি। শেষ দশ দিন উবাই ইবনু কা‘ব মসজিদে আসেননি। বরং তিনি বাড়িতেই সলাত আদায় করতে লাগলেন। লোকেরা বলতে লাগল, উবাই ইবনু কা‘ব ভেগে গেছেন। (আবূ দাঊদ) [১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ‘র পরে দু‘আ কুনূত পড়তেন। আর এক সূত্রে আছে, তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ কুনূত পড়তেন কখনো রুকূ‘র পূর্বে, আর কখনো রুকূ‘র পরে। (ইবনু মাজাহ) [১]

【109】

প্রথম অনুচ্ছেদ

যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রমাযান) মাসে মাসজিদের ভিতরে চাটাই দিয়ে একটি কামরা তৈরি করলেন। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে কয়েক রাত (তারাবীহ) সলাত আদায় করলেন। আস্তে আস্তে তাঁর নিকট লোকজনের ভিড় জমে গেল। এক রাতে তাঁর কণ্ঠস্বর না শুনতে পেয়ে লোকের মনে করেছে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে গেছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাকারী দিলো, যাতে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের যে অনুরাগ আমি দেখছি তাতে আমার আশংকা হচ্ছে এ সলাত না আবার তোমাদের ওপর ফার্‌য হয়ে যায়। তোমাদের ওপর ফার্‌য হয়ে গেলে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। অতএব হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে সলাত আদায় কর। এজন্য ফার্‌য সলাত ব্যতীত যে সলাত ঘরে পড়া হয় তা উত্তম সলাত। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযানের মাসে ক্বিয়ামুল লায়লের উৎসাহ দিতেন (তারাবীহ সলাত), কিন্তু তাকিদ করে কোন নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে লোক ঈমানের সঙ্গে ও পুণ্যের জন্যে রমাযান মাসে রাত জেগে ‘ইবাদত করে তার পূর্বের সব সগীরাহ্‌ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওফাতের পর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে গেল। (অর্থাৎ তারবীহের জন্য জামা‘আত নির্দিষ্ট ছিল না, বরং যে চাইতো সওয়াব অর্জনের জন্যে আদায় করে নিত)। আবূ বাক্‌রের খিলাফতকালেও এ অবস্থা ছিল। ‘উমারের খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ অবস্থা ছিল। শেষের দিকে ‘উমার তারাবীহের সলাতের জন্যে জামা‘আতের ব্যবস্থা করেন এবং তখন থেকে লাগাতার তারবীহের জামা‘আত চলতে থাকল। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কোন লোক যখন নিজের ফার্য সলাত মাসজিদে আদায় করে, সে যেন তার সলাতের কিছু অংশ বাড়ীতে আদায়ের জন্য জন্য রেখে দেয়। কেননা, আল্লাহ তা'আলা তার সলাতের দ্বারা ঘরের মাঝে কল্যাণ সৃষ্টি করে দেন।” (মুসলিম) [১]

【110】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে (রমাযান মাসের) সওম পালন করেছি। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসের অনেক দিন আমাদের সঙ্গে ক্বিয়াম করেননি (অর্থাৎ তারাবীহের সলাত আদায় করেননি)। যখন রমযান মাসের সাতদিন অবশিষ্ট থাকল তখন তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে এক তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত ক্বিয়াম করলেন অর্থাৎ তারাবীহের সলাত আদায় করালেন। যখন ছয় রাত বাকী থাকল (অর্থাৎ চব্বিশতম রাত এলো) তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে ক্বিয়াম করলেন না। আবার পাঁচ রাত অবশিষ্ট থাকতে অর্থাৎ পঁচিশতম রাতে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে আধা রাত পর্যন্ত ক্বিয়াম করলেন। আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আজ রাত যদি আরো অনেক সময় আমাদের সঙ্গে ক্বিয়াম করতেন (তাহলে কতই না ভাল হত)। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন কোন লোক ফার্য সলাত ইমামের সঙ্গে আদায় করে। সলাত শেষে ফিরে চলে যায়, তার জন্যে গোটা রাত্রের ‘ইবাদাতের সাওয়াব লেখা হয়ে যায়। এরপর যখন চার রাত বাকী থাকে অর্থাৎ ছাব্বিশতম রাত আসে তখন তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে ক্বিয়াম করতেন না। এমনকি আমরা তাঁর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে এক তৃতীয়াংশ রাত বাকী থাকল। যখন তিনরাত বাকী থাকল অর্থাৎ সাতাশতম রাত আসলো। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবারের নিজের বিবিগণের সকলকে একত্র করলেন এবং আমাদের সঙ্গে ক্বিয়াম করালেন (অর্থাৎ গোটা রাত আমাদেরকে সলাত আদায় করালেন)। এমনকি আমাদের আশংকা হলো যে, আবার না ‘ফালাহ’ ছুটে যায়। বর্ণনাকারী বললেন, আমি প্রশ্ন করলাম ‘ফালা-হ’ কি? ‘আবূ যার’ বললেন। ‘ফালা-হ’ হলো সাহরী খাওয়া। এরপর তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সঙ্গে মাসের বাকী দিনগুলো (অর্থাৎ আটাশ ও উনত্রিশতম দিন) ক্বিয়াম করেননি। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইবনু মাজাহও এভাবে বর্ণনা নকল করেছেন। তিরমিয়ীও নিজের বর্ণনায় “এরপর আমাদের তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে কিয়াম করেননি” শব্দগুলো উল্লেখ করেনি।) [১] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি রাত্রে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বিছানায় খুঁজে না পেয়ে তাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ জান্নাতুল বাকীতে দেখতে পেলাম। আমাকে দেখে তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আশংকা করেছিলে যে, আল্লাহ ও রসূলুল্লাহ তোমার ওপর অবিচার করবে? আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মনে করেছিলাম আপনি আপনার কোন বিবির নিকট গিয়েছেন। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (‘আয়িশাহ্) আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের পনের তারিখের রাত্রে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। বানূ কাল্ব গোত্রের (বকরীর) দলের পশমের সংখ্যার চেয়েও বেশী পরিমাণ গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিয়ী, ইবনু মাজাহ; রযীন অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন “যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে তাদের মধ্য থেকে”। আর তিরমিয়ী বলেছেন, আমি ইমাম বুখারীকে এ হাদীসটি দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করতে শুনেছি) [১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : মানুষ তার ঘরে ফার্য সলাত ব্যতীত যে সলাত আদায় করবে তা এ মাসজিদে সলাত আদায়ের চেয়ে ভাল। (আবূ দাঊদ, তিরমিয়ী) [১]

【111】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল ক্বারী (রহঃ) তিনি বলেন, একবার রমযান মাসের রাত্রে ‘উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) -এর সঙ্গে আমি মাসজিদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মানুষ অমীমাংসিত বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। কেউ একা একা নিজের সলাত আদায় করছে। আর কারো পেছনে ছোট একদল সলাত আদায় করছে এ অবস্থা দেখে ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি যদি সকলকে একজন ইমামের পেছনে জমা করে দেই তাহলেই চমৎকার হবে। তাই তিনি এ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে ফেললেন এবং সকলকে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) -এর পেছনে জমা করে তাকে তারাবীহ সলাতের জন্যে লোকের ইমাম বানিয়ে দিলেন। ‘আবদুর রহমান বলেন, এরপর আমি একদিন ‘উমারের সঙ্গে মাসজিদে গেলাম। সকল লোককে দেখলাম তারা তাদের ইমামের পেছনে (তারাবীহের) সলাত আদায় করছে। ‘উমার তা দেখে বললেন, “উত্তম বিদ‘আত”। আর তারাবীহের এ সময়ের সলাত তোমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময়ের সলাতের চেয়ে ভাল। এ কথার দ্বারা ‘উমার বুঝাতে চেয়েছেন শেষ রাতকে। অর্থাৎ তারাবীহের রাতের প্রথমাংশের চেয়ে শেষাংশে আদায় করাই উত্তম। ঐ সময়ের লোকেরা তারাবীহের সলাত প্রথম ভাগে আদায় করে ফেলতেন। (বুখারী) [১] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাকা‘আত তারাবীহের সলাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের সলাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্তুতঃ কিয়াম বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজরের নিকটবর্তী সময়ে সলাত শেষ করতাম। (মালিক) [১] আ‘রাজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা সব সময় লোকদেরকে (সহাবীদেরকে) পেয়েছি তারা রমযান মাসে কাফিরদের ওপর লা‘নাত বর্ষণ করতেন। সে সময় ক্বারী অর্থাৎ তারাবীহের সলাতের ইমামগণ সূরাহ আল বাক্বারাহ-কে আট রাকা‘আতে পড়তেন। যদি কখনো সূরাহু আল বাক্বারাহ-কে বারো রাকা‘আতে পড়ত, তাহলে লোকেরা মনে করত ইমাম সলাত সংক্ষেপ করে ফেলেছেন। (মালিক) [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উবাইকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমরা রমযান মাসে ‘ক্বিয়াম’ অর্থাৎ তারাবীহের সলাত শেষ করে ফিরতাম রাত শেষ হয়ে সাহরীর সময় থাকবে না ভয়ে খাদিমদেরকে তাড়াতাড়ি খাবার দিতে বলতাম। অন্য এক সূত্রের ভাষ্য হলো, ফাজরের সময় হয়ে যাবার ভয়ে (খাদিমদেরকে দ্রুত খাবার দিতে বলতাম)। (মালিক) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন : তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শা‘বান মাসের পনের তারিখে কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : বানী আদামের প্রতিটি লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদাম সস্তানের যারা এ বছর মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের ‘আমাল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযক্ব আসমান থেকে নাযিল করা হয়। ‘আয়িশাহ এমএ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না? তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন : হ্যাঁ! কোন মানুষই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বাক্যটি তিনবার উচ্চারণ করলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আবেদন করলেন, এমনকি আপনিও নয়! এবার তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও না, তবে আল্লাহ তার রহমাত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। (বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি দা‘ওয়াতুল কাবীর নামক গ্রন্থে নকল করেছে) [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত্রে অর্থাৎ ‘শবে বরাতে’ দুনিয়াবাসীর প্রতি ফিরেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (ইবনু মাজাহ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হাদীসটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের এক বর্ণনায় এ বাক্যটি আছে যে, কিন্তু দু’ লোক : ‘হিংসা পোষণকারী ও আত্মহত্যাকারী ব্যতীত আল্লাহ তার সকল সৃষ্টিকে মাফ করে দেন)। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত হলে তোমরা সে রাত্রে সলাত আদায় কর ও দিনে রোযা রাখো। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা এ রাত্রে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং (দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে) বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। কোন রিযক্বপ্রার্থী আছে, আমি তাকে রিযক্ব দান করব? কোন বিপদগ্রস্ত কি আছে, আমি তাকে বিপদ মুক্ত করে দেব? এভাবে আল্লাহ মানুষের প্রতিটি দরকার ও প্রতিটি বিপদের নাম উল্লেখ করে তাঁর বান্দাদেরকে সকাল হওয়া পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন। (ইবনু মাজাহ) [১]

【112】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন যখন আমার ঘরে আসলেন, প্রথমে তিনি গোসল করলেন। এরপর তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আট রাকা‘আত সলাত আদায় করলেন। এর আগে আমি কোন দিন তাঁকে এত সংক্ষেপে সলাত আদায় করতে দেখিনি। কিন্তু তিনি রুকূ‘ সাজদাহ ঠিক মতো করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, এটা ছিল চাশতের সলাত। (বুখারী, মুসলিম) [১] মু‘আযাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহার সলাত কত রাকা‘আত করে আদায় করতেন? তিনি উত্তর দিলেন, তিনি চার রাকা‘আত আদায় করতেন। আল্লাহর ইচ্ছায় কখনো এর চেয়ে বেশীও আদায় করতেন। (মুসলিম) [১] আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : সকাল হতেই তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটা গ্রস্থির জন্যে ‘সদাক্বাহ্’ দেয়া অবশ্য দায়িত্ব। অতএব প্রতিটা ‘তাসবীহ’ই অর্থাৎ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা ‘সদাক্বাহ্’। প্রতিটি ‘তাহমীদ’ই অর্থাৎ ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়া সদাক্বাহ্। প্রতিটি ‘তাহলীল’ অর্থাৎ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্। প্রতিটি ‘তাকবীর’ অর্থাৎ ‘আল্ল-হ আকবার’ বলা সদাক্বাহ্। ‘নেক কাজের নির্দেশ’ করা সদাক্বাহ্। মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সদাক্বাহ্। আর এ সবের পরিবর্তে ‘যুহার দু’ রাকা‘আত সলাত’ আদায় করে নেয়া যথেষ্ট। (মুসলিম) [১] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি একটি দলকে ‘যুহার’ সময় সলাত আদায় করতে দেখে বললেন, এসব লোকে জানে না, এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সলাত আদায় করা অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নিবিষ্টচিত্তে লোকদের সলাতের সময় হলো উষ্ট্রীর দুধ দোহনের সময়ে। (মুসলিম) [১]

【113】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবুদ্ দারদা ও আবূ যার (রাঃ) তাঁরা দু’জনে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : হে বানী আদাম! তুমি আমার জন্য চার রাক্‘আত সলাত আদায় কর দিনের প্রথমে। আমি তোমার জন্য যথেষ্ট হবো দিনের শেষে। (তিরমিযী) [১] নু‘আয়ম ইবনু হাম্মার আল গাত্বাফানী এ হাদীসটি নু‘আয়ম ইবনু হাম্মার আল গাত্বাফানী থেকে আবূ দাঊদ ও দারিমী বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন তাদের নিকট থেকে। [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ করা। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মাসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়াও একটি সদাক্বাহ্। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে ‘যুহার (চাশত) দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্য যথেষ্ট। (আবূ দাঊদ) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক যুহার বারো রাক্‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাতে সোনার বালাখানা তৈরি করবেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। এজন্যে এ সূত্র ব্যতীত আর কোন সূত্রে এ বর্ণনা পাওয়া যায়নি।) [১] মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : ফাজ্‌রের সলাত সমাপ্তির পর যে লোক তার মুসাল্লায় সূর্য উপরে উঠে আসা পর্যন্ত বসে থাকে, তারপর যুহার দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে এবং এ সময়ে ভাল কথা ছাড়া আর কোন কথা না বলে, তাহলে তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। সে গুনাহ যদি সাগরের ফেনারাশির চেয়েও অনেক হয়ে থাকে। (আবূ দাঊদ) [১]

【114】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : যে লোক ‘যুহার’ (চাশত) দু’ রাক্‘আত সালাতের যত্ন নিবে, তার সকল (সগীরাহ্) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমমানের হয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ) [১] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি চাশতের আট রাক্‘আত করে সালাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন, আমার জন্যে যদি আমার মাতা-পিতাকেও জীবিত করে দেয়া হয় তাহলেও আমি এ সলাত ছাড়ব না। (মালিক) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিতভাবে চাশতের সলাত আদায় করতে থাকতেন। আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়ত এ সলাত আর ছাড়বেন না। আর যখন ছেড়ে দিতেন অর্থাৎ বন্ধ করতেন, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়ত এ সলাত আর কখনো আদায় করবেন না। (তিরমিযী) [১] মুওয়াররিক্ব আল ‘ইজলী (রহঃ) আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি যুহার সালাত আদায় করেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, ‘উমার (রাঃ) আদায় করতেন? তিনি বললেন, না। আবার আমি প্রশ্ন করলাম, আবূ বাকর (রাঃ) কি আদায় করতেন? তিনি বললেন, না। পুনরায় আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আদায় করতেন? তিনি বললেন, আমার জানা মতে তিনিও আদায় করতেন না। (বুখারী) [১]

【115】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে ফাজ্‌রের সলাতের সময়ে ইরশাদ করলেন : হে বিলাল! ইসলাম কবুল করার পর তুমি এমন কি ‘আমাল করেছ যার থেকে অনেক সওয়াব হাসিলের আশা করতে পার। কেননা, আমি আমার সম্মুখে জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। (এ কথা শুনে) বিলাল বললেন, আমি তো অনেক আশা করার মতো কোন ‘আমাল করিনি। তবে রাত্রে বা দিনে যখনই আমি উযূ করেছি, আমার সাধ্যমতো উযূ দিয়ে আমি (তাহ্ইয়্যাতুল উযূর) সালাত আদায় করেছি। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (আল্লাহর নিকট) ‘ইস্তিখারাহ্’ করার নিয়ম ও দু’আ এ রকম শিখাতেন, যেভাবে আমাদেরকে তিনি কুরআনের সূরাহ্ শিখাতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কোন লোক কোন কাজ করার সংকল্প করলে সে যেন ফার্য সলাত ব্যতিত দু’ রাক্‘আত নাফল সলাত আদায় করে। তারপর এ দু’আ পড়ে- “আল্ল-হুম্মা ইন্নি আস্তাখীরুকা বি‘’ইলমিকা ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আস্আলুকা মিন ফাযলিকাল ‘আযীমি ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা- আক্বদিরু ওয়া তা‘লামু ওয়ালা- আ‘লামু ওয়া আনতা ‘আল্লা-মুল গুয়ূব, আল্লা-হুম্মা ইন্না কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খায়রুল লী ফী দীনী ওয়ামা ‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতী আমরী আও ক্বা-লা ফী ‘আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাক্বদুরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বা-রিক লী ফিহি ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফি দীনি ওয়ামা ‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতী আমরী আও ক্বা-লা ফী ‘আ-জিলি আমরী ওয়া আ-জিলিহী ফাসরিফহু ‘আন্নী ওয়াসরিফ্নী ‘আন্হু ওয়াক্ব দুরলিয়াল খয়রা হায়সু কা-না সুম্মা আরযিনী বিহী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জানার ভিত্তিতে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। তোমার কুদরতের দ্বারা তোমার নিকট নেক ‘আমাল করার শক্তি প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট তোমার মহা ফজল চাই। এজন্য তুমি সকল কাজের শক্তি দাও। আমি তোমার ইচ্ছা ব্যতিত কোন কাজ করতে পারব না। তুমি সব কিছুই জানো। আমি কিছুই জানি না। সব গোপন কথা তোমার জানা। হে আল্লাহ! তুমি যদি ইচ্ছা কর এ কাজটি (উদ্দেশ্য) আমার জন্য আমার দীনে, দুনিয়ায়, আমার জীবনে, আমার পরকালে অথবা বলেছেন, এ দুনিয়ায় ঐ দুনিয়ায় ভাল হবে, তাহলে তা আমার জন্যে ব্যবস্থা করে দাও। আমার জন্য তা সহজ করে দাও। তারপর আমার জন্য বারাকাত দান করো। আর তুমি যদি এ কাজকে আমার জন্য আমার দীন, আমার জীবন, আমার পরকাল অথবা বলেছেন, আমার ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ মনে করো, তাহলে আমাকে তার থেকে, আর তাকে আমার থেকে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্যে যা কল্যাণকর তা করে দাও। অতঃপর এর সঙ্গে আমাকে রাজী করো।) হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ কাজটি’ বলার সময় দরকারের ব্যাপারটি স্মরণ করতে হবে। (বুখারী) [১]

【116】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ) আমাকে বলেছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : যে কোন লোক অন্যায় করার পর (লজ্জিত হয়ে) উঠে গিয়ে উযূ করে ও সলাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত পড়লেন (মূল আয়াত হাদীসে আছে) : -“এবং যেসব লোক এমন কোন কাজ করে বসে যা বাড়াবাড়ি ও নিজেদের ওপর যুলম, এরপর আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তখন নিজেদের গুনাহের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে”- (সূরাহ আ-ল ‘ইমরান ৩ : ১৩৫)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; কিন্তু ইবনু মাজাহ উপরোক্ত আয়াত উল্লেখ করেননি)। [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন সম্পর্কে নাবী (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে চিন্তিত করে তুললে তিনি নাফল্ সলাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবূ দাঊদ) [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের সময় বিলালকে ডাকলেন। তাকে তিনি বললেন, কি ‘আমাল দ্বারা তুমি আমার পূর্বে জান্নাতে চলে গেছ। আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করেছি, তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি। বিলাল আবেদন করলেন, হে আলাহর রাসূল! আমি আযান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’ রাক্‘আত সলাত অবশ্যই আদায় করি। আর আমার উযূ নষ্ট হয়ে গেলে তখনই আমি উযূ করে আল্লাহর জন্যে দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করা জরুরী মনে করেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হ্যাঁ, এ কারণেই তুমি এত বিশাল মর্যাদায় পৌঁছে গেছ। (তিরমিযী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর নিকট বা কোন লোকের নিকট কারো কোন দরকার হয়ে পড়লে সে যেন ভাল করে উযূ করে দু’রাক্’আত সলাত আদায় করে। তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দরুদ পড়ে, এ দু’আ পড়ে (দু’আর বাংলা অর্থঃ) “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি বড়ই ধৈর্যশীল ও অনুগ্রহশীল। আল্লাহ মহাপবিত্র, তিনি ‘আরশে আযীমের অধিপতি। সব প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐসব জিনিস চাই যার উপর তোমার রহমত বর্ষিত হয় এবং যা তোমার ক্ষমা পাওয়ার উপায় হয়। আর আমি আমার ভাল কাজের অংশ চাই। সকল গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার কোন গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া ব্যতীত, আমার কোন দুঃখ দূর করে দেয়া ব্যতীত, আমার কোন দরকার যা তোমার নিকট পছন্দনীয়, পূরণ করা ব্যতীত রেখে দিও না, হে আর্‌হামার রহিমীন”। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি গরীব।) [১]

【117】

সলাতুত্ তাসবীহ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদু’ল মুত্তালিবকে বললেন, হে ‘আব্বাস! হে আমার চাচাজান! আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে বলে দেব না? আপনাকে কি দশটি অভ্যাসের অধিপতি বানিয়ে দেব না? আপনি যদি এগুলো ‘আমাল করেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে পূর্বের, পরের, পুরানো ও নতুন, ইচ্ছাকৃত অথবা ভুলক্রমের, ছোট কি বড়, প্রকাশ্য কি গোপন সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আর সেটা হলো আপনি চার রাক্’আত সলাত আদায় করবেন। প্রতি রাকআতে ফাতিহাতুল কিতাব ও সঙ্গে একটি সূরাহ্। প্রথম রাকআতে ক্বিরাআত্ পড়া শেষ হলে দাঁড়ানো অবস্থায় পনের বার এ তাসবীহ পড়বেনঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লা-হি, ওয়ালা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আল্লা-হু আকবার”। তারপর রুকুতে যাবেন। রুকু’তে এ তাসবীহটি দশবার পড়বেন। তারপর রুকু’ থেকে মাথা উঠিয়ে এ তাসবীহ আবার দশবার পড়বেন। তারপর সাজদাহ করবেন। সাজদায় এ তাসবীহ দশবার পড়বেন। তারপর সাজদাহ হতে মাথা উঠাবেন। সেখানেও এ তাসবীহ দশবার পড়বেন। তারপর দ্বিতীয় সাজদায় যাবেন। এ তাসবীহ দশবার এখানেও পড়বেন। সর্বমোট এ তাসবীহ এক রাকআতে পঁচাত্তর বার হবে। চার রাকআতে এরকম পড়ে যেতে হবে। আপনি যদি প্রতিদিন এ সলাত এরকম পড়তে পারেন তাহলে প্রতিদিনই পড়বেন। প্রতিদিন পড়তে না পারলে সপ্তাহে একদিন পড়বেন। সপ্তাহে একদিন পড়তে না পারলে প্রতি মাসে একদিন পড়বেন। যদি প্রতিমাসে একদিন পড়তে না পারেন, বছরে একবার পড়বেন। যদি বছরেও একবার পড়তে না পারেন, জীবনে একবার অবশ্যই পড়বেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্, বায়হাক্বী’র দা’ওয়াতুল কাবীর) [১] ইমাম তিরমিযী ইমাম তিরমিযী এ ধরনের বর্ণনা আবূ রাফি হতে নকল করেছেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ‘আমালের হিসাব হবে, তা হলো সলাত। যদি তার সলাত সঠিক হয় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সলাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যদি ফার্‌য সলাতের কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ-কে (ফেরেশ্‌তাগণকে) বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নাফ্‌ল সলাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফার্‌য সলাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেওয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব ‘আমালের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (আবূ দাঊদ) [১] ইমাম আহমাদ ইমাম আহ্‌মাদ এ হাদীস আর এক লোক হতে নকল করেছেন। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা বান্দার কোন ‘আমালের প্রতি তাঁর করুণার সঙ্গে এত বেশী লক্ষ্য করেন না, যতটা তার পড়া দু’রাক্’আত সলাতের প্রতি করেন। বান্দা যতক্ষন সলাতে লিপ্ত থাকে তার মাথার উপর নেক ও কল্যাণ ছড়িয়ে দেয়া হয়। আর বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সম্পর্কে যেভাবে তার থেকে বের হয়ে আসা হিদায়াতের উৎস অর্থাৎ আল-কুরআন হতে উপকৃত হয়, আর কোন জিনিস হতে এমন উপকৃত হয় না। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী) [১]

【118】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাদীনায় যুহরের সলাত চার রাক্’আত আদায় করেছেন। তবে যুল হুলায়ফায় ‘আস্‌রের সলাত দু’রাক্’আত আদায় করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব আল খুযা‘ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাথে নিয়ে ‘মিনায়’ দু’রাক্’আত সলাত আদায় করেছেন। এ সময় আমার সংখ্যায় এত বেশী ছিলাম যা এর আগে কখনো ছিলান না এবং নিরাপদ ছিলাম। (বুখারী, মুসলিম) [১] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমারের কাছে নিবেদন করলাম, আল্লাহ তা’আলার বানী হলো, “তোমরা সলাত কম আদায় করো, অর্থাৎ ক্বস্‌র করো, যদি অমুসলিমরা তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে বলে আশংকা করো”-(সূরাহ্‌ আন্‌ নিসা ৪:১০১)। এখন তো লোকেরা নিরাপদ। তাহলে ক্বস্‌রের সলাত আদায়ের প্রয়োজনটা কি? ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ ব্যাপারে যেমন বিস্মিত হচ্ছো, আমিও এরুপ আশ্চর্য হয়েছিলাম। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ব্যাপারটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতে ক্বস্‌র করাটা আল্লাহর একটা সদাকাহ বা দান, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তার এ দান গ্রহণ করো। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা (বিদায় হাজ্জের সময়) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনাহ্ হতে মাক্কায় গমন করেছিলাম। সেখানে তিনি মাদীনার ফেরত না আসা পর্যন্ত চার রাক্’আত ফার্‌য সলাতের স্থলে দু’রাক্’আত আদায় করেছেন। আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনারা কি মাক্কায় কয়েক দিন অবস্থান করেছিলেন? জবাবে আনাস বললেন, হ্যাঁ, আমরা মাক্কায় দশদিন অবস্থান করেছিলাম। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ভ্রমনে গিয়ে ঊনিশ দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দু’রাক্’আত করে ফার্‌য সলাত আদায় করেন। ইবনু ‘আব্বাস বলেন আমরাও মাক্কাহ্ মাদীনার মধ্যে কোথাও গেলে সেখানে উনিশ দিন অবস্থান করলে আমরা দু’রাক্’আত করে সলাত আদায় করতাম। এর চেয়ে বেশী দিন অবস্থান করলে চার রাক্’আত করে ক্বায়িম করতাম। (বুখারী) [১] হাফস ইবনু ‘আসিম (রহঃ) তিনি বলেন, একবার মাক্কাহ্-মাদীনার পথে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের সাথে থাকার আমার সোভাগ্য ঘটেছ। (যুহরের সালাতের সময় হলে) তিনি আমাদেরকে দু’রাক্’আত সলাত (জামা’আতে) আদায় করালেন। এখান থেকে তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তিনি দেখলেন লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন লোকেরা কি করছে? আমি বললাম তারা নাফ্‌ল সলাত আদায় করছে। তিনি বললেন, আমাকে যদি নাফ্‌ল সালাতই আদায় করতে হয়, তাহলে ফার্‌য সলাতই তো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা বেশী ভালো ছিল। কিন্তু যখন সহজ করার জন্য ফার্‌য সলাত ক্বস্‌র আদায়ের হুকুম হয়েছে তখন তো নফল সলাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থাকার সৌভাগ্যও পেয়েছি। তিনি সফরের অবস্থায় দু’রাক’আতের বেশী (ফার্‌য) সলাত আদায় করতেন না। আবূ বাক্‌র, ‘উমার, উসমান (রাঃ) এর সাথে চলারও সুযোগ আমার হয়েছে। তাঁরাও এভাবে দু’ রাক’আতের বেশী আদায় করতেন না। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে গেলে যুহর ও ‘আস্‌রের সলাত এক সাথে আদায় করতেন। (ঠিক এমনিভাবে) মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একসাথে আদায় করতেন। (বুখারী) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রমণে গেলে রাতের বেলায় ফার্‌য সলাত ছাড়া (অন্য সলাত) সওয়ারীর উপর বসেই ইশারা করে আদায় করতেন। সওয়ারীর মুখ যে দিকে থাকতো তার মুখও সে দিকে থাকত। এমনি ভাবে বিত্‌রের সলাত তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর উপরই আদায় করেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【119】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন সফরকালে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব রকমই করেছেন। তিনি (সফর অবস্থায়) ক্বস্‌রও আদায় করতেন আবার পূর্ণ সলাতও আদায় করতেন। (শারহূস্‌ সুন্নাহ্‌) [১] ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। মাক্কাহ্ বিজয়ের সময়ও তাঁর সাথে ছিলাম। এ সময়ে তিনি আঠার দিন মাক্কায় অবস্থানরত ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার রাক্’আত বিশিষ্ট সলাত দু’রাক্‌আত আদায় করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন হে শহরবাসীরা! তোমরা চার রাক্’আত করে সলাত আদায় কর। আমি মুসাফির (তাই দু’রাক্’আত আদায় করছি)। (আবূ দাঊদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে দু’রাক্’আত যুহর ও এরপর দু’রাক্’আত সুন্নাত আদায় করেছি। আর এক বর্ণনায় আছে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বলেন আবাসে ও সফরে আমি নবী কারীম(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করেছি। আবাসে তাঁর সাথে যুহর সলাত আদায় চার রাক্’আত আদায় করেছি এবং সফরে যুহর দু’রাক্’আত ও ‘আস্‌র দু’রাক্’আত আদায় করেছি। এর পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর কোন সলাত আদায় করেননি। মাগরিবের সলাত আদায় করেছেন আবাসে ও সফরে সমান ভাবে তিন রাক্’আত। আবাসে ও সফরে কোন অবস্থাতেই মাগরিবের বেশ কম হয় না। এইটা হল দিনের বিত্‌রের সলাত। এরপর তিনি আদায় করেছেন দু’রাক্’আত সুন্নাত। (তিরমিযী) [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধ চলাকালে যুহরের সময় সূর্য ঢলে গেলে যুহর ও ‘আস্‌রের সলাত দেরী করতেন এবং ‘আস্‌রের সলাতের জন্য মঞ্জিলে নামতেন অর্থাৎ- যুহর ও ‘আস্‌রের সলাত একসাথে আদায় করতেন। মাগরিবের সলাতের সময়ও তিনি এরুপ করতেন। সূর্য তাঁর ফিরে আসার আগে ডুবে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করতেন। আর সূর্য অস্ত যাবার আগে চলে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাতে দেরী করতেন। ’ইশার সলাতের জন্য নামতেন এবং দু’সলাত একত্রে আদায় করতেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে (অর্থাৎ শহরের বাইরে) যেতেন (মুসাফির অবস্থায় হোক অথবা মুক্বীম) নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে চাইতেন, তখন উটের মুখ ক্বিবলার দিকে করে নিতেন এবং তাকবীরে তাহরীমাহ্‌ বলে যেদিকে সওয়ারীর মুখ করতেন সেদিকে মুখ করে তিনি সলাত আদায় করতেন।(আবূ দাউদ) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠালেন। আমি প্রত্যাবর্তন করে এসে দেখি তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাহনের উপর পূর্ব দিকে মুখ ফিরে সলাত ক্বায়িম করছেন। তবে তিনি রুকু’ হতে সাজদায় একটু বেশী নীচু হতেন।(আবূ দাঊদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় (চার রাক্’আত বিশিষ্ট সলাত) দু’রাক্’আত সলাত আদায় করেছেন। তারপর আবূ বাক্রও দু’রাক্’আত সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর ‘উমারও দু’রাক্’আত সলাত আদায় করেছেন। ‘উসমান (রাঃ) তার খিলাফাতকালের প্রথম দিকে দু’রাক্আত্ই সলাত আদায় করতেন। কিন্তু পরে তিনি চার রাক্’আত আদায় করতে শুরু করেন। ইবনু ‘উমার-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ইমামের (‘উসমান-এর) সাথে সলাত আদায় করতেন, তখন চার রাক্’আত আদায় করতেন। আর একাকী হলে (সফরে) দু’রাক্’আত আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【120】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (ইসলামের প্রথম দিকে) দু’রাক্’আতই সলাত ফার্‌য ছিল। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরাত করলে মুক্বীমের জন্য চার রাক্’আত সলাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর সফর অবস্থায় প্রথম থেকেই দু’রাক্’আত ফার্‌য ছিল। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, আমি ‘উরওয়ার নিকট আরয করলাম, ‘আয়িশার কি হলো যে, তিনি সফর অবস্থায়ও পুরো চার রাক্’আত সলাত আদায় করেন। (উত্তরে) তিনি বললেন, তিনিও ‘উসমান-এর মত ব্যাখ্যা করেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জবানিতে মুক্বীম অবস্থায় চার রাক্’আত আর সফরকালে দু’রাক্’আত সলাত ফার্‌য করেছেন। (মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের অবস্থায় সলাত দু’রাক্’আত নির্ধারিত করে দিয়েছেন। আর এ দু’রাক্’আতই হলো (সফরের) পূর্ণ সলাত, ক্বস্‌র নয়। আর সফরে বিত্‌র সলাত আদায় করা সুন্নাত। (ইবনু মাজাহ্) [১] ইমাম মালিক (রহঃ) তিনি শুনেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস মাক্কাহ্ ও ত্বায়িফ, মাক্কাহ্ ও ‘উসফান, মাক্কাহ্ ও জিদ্দার দূরত্বের মাঝে ক্বস্‌রের সলাত আদায় করতেন। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, এসবের দূরত্ব ছিল চার বারীদ অর্থাৎ আটচল্লিশ মাইল। (মুয়াত্ত্বা) [১] বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আঠারোটি সফরে তাঁর সফরে সঙ্গী ছিলাম, এ সময় আমি তাঁকে সূর্য ঢলে পড়ার পরে আর যুহরের সলাতের আগে দু’রাক্’আত সলাত আদায় করা ছেড়ে দিতে কখনো দেখিনি। ( আবূ দাঊদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব।) [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার তাঁর পুত্র ‘উবায়দু’ল্লাহকে সফর অবস্থায় নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁকে তা করতে নিষেধ করতেন না। (মালিক) [১]

【121】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমরা দু’নিয়ার শেষের দিকে এসেছি। তবে ক্বিয়ামাতের দিন মর্যাদার দিক থেকে আমরা সবার আগে থাকব। তাছাড়া ইয়াহুদী নাসারাদেরকে আমাদেরকে আমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে। আর আমাদের কিতাব দেয়া হয়েছে পরে। অতঃপর এ ‘জুমু’আর দিন’ তাদের উপর ফার্য করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এ নিয়ে মতভেদ করলে আল্লাহ তা’আলা ঐ দিনটির ব্যপারে আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। এ লোকেরা আমাদের অনুসরণকারী। ইয়াহূদীরা আগামীকালকে অর্থাৎ ‘শনিবারকে’ গ্রহণ করেছে। আর নাসারারা গ্রহণ করেছে পরশুকে অর্থাৎ ‘রবিবারকে’। (বুখারী, মুসলিম) কিন্তু মুসলিমের এক রিওয়ায়াতে সেই আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমরাই (পরবর্তীরাই) প্রথম হব। অর্থাৎ যারা জান্নাতে গমন করবে তাদের মধ্যে আমরা প্রথম হব। অতঃপর (আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর) পার্থক্য এই যে, বাক্য হতে শেষ পর্যন্ত পূর্ববৎ বর্ণনা করেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ) মুসলিমের অন্য এক রিওয়ায়াতে আবূ হুরায়রাহ্‌ ও হুযায়ফাহ্‌ (রাঃ) থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা দু’জনই বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসের শেষ দিকে বলেছেনঃ দু’নিয়ায় আগমনের দিক দিয়ে আমরা সকলের পেছনে। কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আমরা সকলের আগে থাকব। সকলের আগে আমাদের হিসাব নেয়ার ও জান্নাতে প্রবেশ করার হুকুম দেয়া হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু’আর দিন। এ দিনে আদাম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দু’নিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাতও এ জুমু’আর দিনেই ক্বায়িম হবে। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জুমু’আর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে মুহূর্তটি যদি কোন মু’মিন বান্দা পায় আর আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেন। মুসলিম; অন্য এক বর্ণনায় ইমাম মুসলিম এ শব্দগুলোও নকল করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সে সময়টা খুবই ক্ষণিক হয়। বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: নিঃসন্দেহে জুমু’আর দিনে এমন একটি ক্ষণ আসে যে ক্ষণে যদি কোন মু’মিন বান্দা সলাতের জন্য দাঁড়াতে পারে এবং আল্লাহর নিকট কল্যাণের জন্য দু’আ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সে কল্যাণ দান করেন। [১] আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জুমু’আর দিনের দু’'আ কবুলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেন: সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সলাত পড়বার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মুসলিম) [১]

【122】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তূর (বর্তমান ফিলিস্তীনের সিনাই) পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে কা'ব আহবার-এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। আমি তার কাছে বসে গেলাম। তিনি আমাকে তাওরাতের কিছু কথা বলতে লাগলেন। আমি তার সামনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু হাদীস বর্ণনা করলাম। আমি যেসব হাদীস বর্ণনা করলাম তার একটি হলো, আমি তাকে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমু’আর দিন। জুমু’আর দিনে আদামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাঁকে জান্নাত থেকে জমিনে বের করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর তাওবাহ কবুল করা হয়। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে। আর জিন্ ইনসান ছাড়া এমন কোন চতুস্পদ জন্তু নেই যারা এ জুমু’আর দিনে সূর্য উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত কিয়ামাত হবার মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা না করে। জুমু’আর দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে সময় যদি কোন মুসলিম সলাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট কিছু চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন। কা’ব আহবার এ কথা শুনে বললেন, এ রকম দিন বা সময় বছরে একবার আসে। আমি বললাম, বরং প্রতিটি জুমু’আর দিনে আসে। তখন কা'ব তাওরাত পাঠ করতে লাগলেন, এরপর বললেন, "রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য বলেছেন।" আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর কাব-এর কাছে আমি যে হাদীসের উল্লেখ করেছি তা তাকেও বললাম। এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) কে এ কথাও বললাম যে, কা'ব বলছেন, ‘এ দিন’ বছরে একবারই আসে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, “কাব ভুল কথা বলেছে।" তারপর আমি বললাম, কিন্তু কাব এরপর তাওরাত পড়ে বলেছে যে, এ সময়টা প্রত্যেক জুমু’আর দিনই আসে। ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, কা’ব এ কথা ঠিক বলেছে। এরপর বলতে লাগলেন, আমি জানি সে কোন সময়? আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, পুনরায় আমাকে বলুন। গোপন করবেন না। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, সেটা জুমু’আর দিনের শেষ প্রহর কি করে হয়, যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মু’মিন বান্দা এ ক্ষণটি পাবে ও সে এ সময়ে সলাত আদায় করে থাকে.....? (আর আপনি বলছেন সে সময়টি জুমু’আর দিনের শেষ প্রহর। সে সময় তো সলাত আদায় করা হয় না। সেটা মাকরূহ সময়)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, (এটা তো সত্য কথা কিন্তু) এটা কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা নয় যে, যে ব্যক্তি সলাতের অপেক্ষায় নিজের স্থানে বসে থাকে সে সলাত অবস্থায়ই আছে, আবার সলাত পড়া পর্যন্ত। আবূ হুরায়রাহ বলেন, আমি এ কথা শুনে বললাম, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেছেন। 'আবদুল্লাহ বলেন, তাহলে সলাত অর্থ হলো, সলাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর দিনের শেষাংশে সলাতের জন্য বসে থাকা নিষেধ নয়। সে সময় যদি কেউ দু’আ করে, তা কবুল হবে। (মালিক, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ইমাম আহমদও এ বর্ণনাটি [আরবি] পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন দু’আ কবুল হবার সময়টির আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন ‘আস্রের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। (তিরমিযি) [১] আওস ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জুমু’আর দিন হলো তোমাদের সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে। এ দিনে প্রথম শিঙ্গা ফুৎকার হবে। এ দিন দ্বিতীয় শিঙ্গা ফুৎকার দেয়া হবে। কাজেই এ দিন তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। সহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? অথচ আপনার হাড়গুলো পচে গলে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, এ. (আরাম্‌তা) শব্দ দ্বারা সহাবীগণ [আরবি] (বালীতা) অর্থ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার পবিত্র দেহ পঁচে গলে মাটিতে মিশে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা'আলা নবী-রসূলদের শরীর মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন (অর্থাৎ মাটি তাদের দেহ নষ্ট করতে পারবে না)। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্, দারিমী ও বায়হাক্বীর দা’ওয়াতুল কাবীর) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: (কুরআনে বর্ণিত) "ইয়াওমুল মাও’উদ" হলো ক্বিয়ামাতের দিন। ‘ইয়াওমুল মাশ্‌হূদ’ হলো আরাফাতের দিন। আর ‘শাহিদ’ হলো জুমু’আর দিন। যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো "জুমু’আর দিন"। এ দিনে এমন একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মু’মিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করবেন। যে জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। [আহমাদ, তিরমিযী; তিনি (তিরমিযী) বলেন, এ হাদীসটি গরীব। কারণ মূসা ইবনু উবায়দার সূত্র ছাড়া এ হাদীস জানা যায় না। আর মূসা মুহাদ্দিসীনের কাছে দুর্বল রাবী। [১] লুবাবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জুমু’আর দিন" সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহ্‌র কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তা'আলা এ দিনে আদামকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি আদামকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদাম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশ্‌তা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু’আর দিনকে ভয় করে। (ইবনু মাজাহ্) [১]

【123】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

ইমাম আহমাদ সা'দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) আনসারদের এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে জুমু’আর দিন সম্পর্কে বলুন। এতে কি আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এতে পাঁচটি বৈশিষ্ট রয়েছে। (বাকী হাদীস বর্ণনা পূর্ববৎ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো: "জুমু’আর দিন" জুমু’আহ নাম কি কারণে রাখা হলো? তিনি বললেন, যেহেতু এ দিনে (১) তোমাদের পিতা আদামের মাটি একত্র করে খামির করা হয়েছে। (২) এ দিনে প্রথম শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। (৩) এ দিনে দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে। (৪) এ দিনেই কঠিন পাকড়াও হবে। তাছাড়া (৫) এ দিনের শেষ তিন প্রহরে এমন একটি সময় আছে যে কেউ আল্লাহ তা'আলার কাছে দু’আ করলে তা কবুল করা হয়। (আহমাদ) [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা জুমু’আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশ্‌তাগণ) হাজির হয়ে থাকেন। যে ব্যক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবূদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা'আলা নাবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নাবীরা ক্ববরে জীবিত এবং তাদেরকে রিয্‌ক্ব দেয়া হয়। (ইবনু মাজাহ্) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ববরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। (আহমদ, তিরমিযী; তিনি ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। এর সানাদ মুত্তাসিল নয়) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নি‘আমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩)। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ইয়াহূদী বসা ছিল। সে ইবনু ‘আব্বাসকে বলল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতটি দু’ঈদের দিন, বিদায় হাজ্জ (হজ/হজ্জ) ও ‘আরাফার জুমু‘আর দিন নাযিল হয়েছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব)[১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস আসলে এ দু‘আ পড়তেন, ‘‘হে আল্লাহ! রজব ও শা‘বান মাসের (‘ইবাদাতে) আমাদেরকে বারাকাত দান করো। আর আমাদেরকে রমাযান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘‘জুমু‘আর রাত আলোকিত রাত। জুমু‘আর দিন আলোকিত দিন।’’ (বায়হাক্বী’র দা‘ওয়াতুল কাবীর)[১]

【124】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তাঁরা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা যেন জুমু‘আর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে না দেয়। (যদি ছেড়ে দেয়) আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরসমূহে মুহর মেরে দেবেন। অতঃপর সে ব্যক্তি অমনোযোগীদের মধ্যে গণ্য হবে। (মুসলিম)[১]

【125】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবুল জা‘দ আয্ যুমায়রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা করে পরপর তিন জুমু‘আর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দিলে মুহর লাগিয়ে দেবেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[১] ইমাম মালিক (রহঃ) সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম (রাঃ) ইমাম মালিক (রহঃ) সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম (রাঃ) থেকে। [১] আহমাদ (রহঃ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) আহমাদ (রহঃ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন।[১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক কোন কারণ ব্যতীত জুমু‘আর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দেবে সে যেন এক দীনার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। যদি এক দীনার পরিমাণ সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে অর্ধেক দীনার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর আযান শুনতে পাবে, তার ওপর জুমু‘আর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয হয়ে যায়। (আবূ দাঊদ)[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার ওপরই ফরয যে তার ঘরে রাত কাটায়। (তিরমিযী, তার মতে হাদীসের সানাদ দুর্বল)[১] ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর সলাত অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। জুমু’আর সলাত চার ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জামা’আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। ওই চার ব্যক্তি হলো (১) গোলাম যে কারো মালিকানায় আছে, (২) নারী, (৩) বাচ্চা, (৪) রুগ্ন ব্যক্তি। (আবূ দাউদ; শারহুস্ সুন্নাহ্‌ কিতাবে মাসাবীহ কিতাবের মূল পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা ওয়ায়িল গোত্রের এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণিত।) [১]

【126】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন লোক সম্পর্কে বলেছেন, যারা জুমু’আর সলাতে উপস্থিত হয় না, তাদের সম্পর্কে আমি চিন্তা করে দেখেছি যে, আমি কাউকে আদেশ করব, সে আমার স্থানে লোকদের ইমামত করবে। আর আমি গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেবো। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কারণ ব্যতীত জুমু’আর সলাত ছেড়ে দেয়, তার নাম এমন কিতাবে মুনাফিক্ব হিসেবে লিখা হয় যা কখনো মুছে ফেলা যায় না, না পরিবর্তন করা যায়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, তিন জুমু’আহ্‌ পরিত্যাগ করার কথা আছে (তার জন্য এ শাস্তি)। (ইমাম শাফি’ঈ) [১] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার ওপর ও আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে, তার জন্য জুমু’আর দিনে জুমু’আর সলাত আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। তবে অসুস্থ, মুসাফির, নারী, নাবালেগ ও গোলামের ওপর ফার্‌য নয়। সুতরাং যারা খেল-তামাসা বা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে জুমু’আর সলাত হতে উদাসীন থাকবে, আল্লাহ তা’আলাও তার দিক থেকে বিমুখ থাকবেন। আর আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, তিনি সুউচ্চ, প্রশংসিত। (দারাকুত্বনী) [১]

【127】

প্রথম অনুচ্ছেদ

সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মাসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সলাত (নাফ্‌ল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্‌ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু’আহ্‌ ও আগের জুমু’আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্‌) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।(বুখারী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু’আর সলাত আদায় করতে এসেছে ও যতটুকু সম্ভব হয়েছে সলাত আদায় করেছে, ইমামের খুত্‌বাহ্‌ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রয়েছে। এরপর ইমামের সাথে সলাত (ফার্‌য) আদায় করেছে। তাহলে তার এ জুমু’আহ্‌ থেকে বিগত জুমু’আর মাঝখানে, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযু করবে এবং উত্তমভাবে উযু করবে, তারপর জুমু’আর সলাতে যাবে। চুপচাপ খুত্‌বাহ্‌ শুনবে। তাহলে তার এ জুমু’আহ্‌ হতে ওই জুমু’আহ্‌ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্ত আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্‌বার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল।(মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমু’আর দিন মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশ্‌তারা) মাসজিদের দরজার এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রথমে আসে তার নাম লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন,) যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রথমে যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মাক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সলাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু’আর জন্য মাসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মাক্কায় একটি দু’ম্বা পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সলাত আদায় করার জন্য মাসজিদে আসে তার উদাহরন হলো, যে কুরবানী করর জন্য মাক্কাহ্‌ একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর জন্য মাসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুত্‌বাহ্‌ দেবার জন্য বের হলে তারা তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুত্‌বাহ্‌ শোনেন। (বুখারী মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম খুতবাহ্‌ পাঠ করার সময় যদি তুমি তোমার কাছে বসা লোকটিকে বলো যে,‘চুপ থাকো’ তাহলে তোমার এ কথাটিও অর্থহীন। (বুখারী,মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু’আর দিনে মাসজিদে গমন করে কোন মুসলিম ভাইকে যেন তার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে নিজে না বসে। বরং সে বলতে পারে ভাই! একটু জায়গা করে দিন।(মুসলিম) [১]

【128】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তাঁরা বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে। উত্তম পোশাক পরবে। তার কাছে থাকলে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মাসজিদে গমন করবে। কিন্তু মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করবে না। এরপর যথাসাধ্য সলাত আদায় করবে। ইমাম খুতবার জন্য হুজরা হতে বের হবার পর থেকে সলাত শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকবে। তাহলে এ জুমু’আহ্ হতে পূর্বের জুমু’আহ্ পর্যন্ত যত গুনাহ হয়েছে তা তার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (আবূ দাউদ) [১] আওস ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে পোশাক-পরিচ্ছদ ধুইবে ও নিজে গোসল করবে। এরপর সকাল সকাল প্রস্তুত হবে। সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে আগে মাসজিদে যাবে। ইমামের নিকট গিয়ে বসবে। চুপচাপ ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। বেহুদা কাজ করবে না। তার প্রতি কদমে এক বছরের ‘আমালের সওয়াব হবে। অর্থাৎ এক বছরের দিনের সিয়াম ও রাতের সলাতের ‘আমালের পরিমাণ সওয়াব হবে। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে, সে যেন তার কাজ-কর্মের পোশাক ছাড়া জুমু’আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক রাখে। (ইবনু মাজাহ্) [১] ইমাম মালিক ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ আল আনসারী (রাঃ) ইমাম মালিক ইয়ায়্ইয়া ইবনু সা’ঈদ আল আনসারী (রাঃ) হতে। [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জুমু’আর দিন খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসবে। কারণ কোন ব্যক্তি পেছনে থাকতে থাকতে (অর্থাৎ প্রথম সারিতে না গিয়ে পেছনের সারিতে থাকে) অবশেষে জান্নাতে প্রবেশেও পেছনে পড়ে যাবে। (আবূ দাউদ) [১] সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর দিনের জামা’আতে যে ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করবে, ক্বিয়ামতে দিন তাকে জাহান্নামের ‘পুল’ বানানো হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন হাদীসটি গারীব) [১] মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জুমু’আর সলাতের সময় কারো যদি তন্দ্রা পেয়ে বসে তাহলে সে যেন স্থান পরিবর্তন করে বসে। (তিরমিযী) [১]

【129】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সলাতের সময়) কাউকে অপরজনকে তার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে বসতে নিষেধ করেছেন। নাফি’কে জিজ্ঞেস করা হলো, এটা কি শুধু জুমু’আর সলাতের জন্য। উত্তরে তিনি বললেন, জুমু’আর সলাত ও অন্যান্য সলাতেও। (বুখারী ও মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তিন প্রকারের লোক জুমু’আর সলাতে উপস্থিত হয়। এক প্রকার হলো, যারা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে হাজির হয়। জুমু’আর দ্বারা তাদের এটাই হয় লাভ। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে চাইতে হাজির হয়। এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর কাছে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। আল্লাহ চাইলে তাদের তা দান করতে পারেন। আর ইচ্ছা না করলে নাও দিতে পারেন। তৃতীয় প্রকারের লোক হলো, শুধু জুমু’আর সলাতের উদ্দেশ্যে নিরবতার সাথে মাসজিদে উপস্থিত হয়। সামনে যাবার জন্য কারো ঘাড় টপকায় না। কাউকে কোন কষ্ট দেয় না। এ ধরনের লোকদের এ জুমু’আহ্ থেকে পরবর্তী জুমু’আহ্ পর্যন্ত সময়ে (সগীরাহ্) গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়। তাছাড়া আর অতিরিক্ত তিন দিনের কাফফারাহ্ হবে এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ করবে তার জন্য এর দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে”-(সুরাহ্ আল আন্’আম ৬:১৬০)। (আবূ দাউদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন খুতবার সময় কথা বলে, সে ভারবাহী গাধার মতো (বোঝা বহন করে, ফল ভোগ করতে পারে না)। আর যে ব্যক্তি অন্যকে চুপ করতে বলে তারও জুমু‘আহ্‌ নেই। (আহ্‌মাদ) [১] ‘উবায়দ ইবনু সাব্বাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক জুমু‘আর দিন বলেছেন: হে মুসলিমগণ! এ দিন, যে দিনকে আল্লাহ তা‘আলা ঈদ হিসেবে গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা এ দিন গোসল করবে। যার কাছে সুগন্ধি আছে সে তা ব্যবহার করলেও কোন ক্ষতি নেই। তোমরা অবশ্য অবশ্যই মিসওয়াক করবে। (মালিক, ইবনু মাজাহ্‌ তাঁর (‘উবায়দাহ্‌ হতে) [১] ‘আব্বাস (রাঃ) এবং হাদীসটি ‘আব্বাস (রাঃ) হতে মুত্তাসিলরূপে বর্ণিত হয়েছে। বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জুমু‘আর দিন মুসলিমরা যেন অবশ্যই গোসল করে। তার পরিবারে সুগন্ধি থাকলে যেন তা ব্যবহার করে। যদি সুগন্ধি না থাকে তাহলে গোসলের পানিই তার জন্য সুগন্ধি। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী; তিনি [তিরমিযী (রহঃ)] বলেন, হাদীসটি হাসান।) [১]

【130】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে পড়লে জুমু‘আর সলাত আদায় করতেন। (বুখারী) [১] সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সলাত আদায় করার পূর্বে খাবারও গ্রহণ করতাম না, বিশ্রামও করতাম না। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচণ্ড শীতের সময় জুমু‘আর সলাত সকাল সকাল (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর প্রচণ্ড গরমের সময় দেরী করে আদায় করতেন। (বুখারী) [১] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে জুমু‘আর প্রথম আযান দেওয়া হত ইমাম মিম্বারে বসলে। ‘উসমান (রাঃ) খলীফা হবার পর, লোকের সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি যাওরা-এর উপর তৃতীয় আযান বাড়িয়ে দিলেন। (বুখারী) [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জুমু‘আর দিন) দু’টি খুতবাহ্‌ (ভাষণ) দিতেন। উভয় খুতবার মধ্যখানে তিনি কিছু সময় বসতেন। তিনি (খুতবায়) কিছু কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং লোকদেরকে উপদেশ শুনাতেন। সুতরাং তাঁর সলাত ও খুতবাহ্‌ উভয়ই ছিল নাতিদীর্ঘ। (মুসলিম) [১] আম্মার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: কোন ব্যক্তির দীর্ঘ সলাত সংক্ষিপ্ত খুতবাহ্‌ তার বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। তাই তোমরা সলাতকে লম্বা করবে, খুতবাকে খাটো করবে। নিশ্চয় কোন কোন ভাষণ যাদু স্বরূপ। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন তাঁর দু’চোখ লাল হয়ে যেত, কন্ঠস্বর হত সুউচ্চ, রাগ বেড়ে যেত। মনে হত তিনি কোন সামরিক বাহিনীকে এ বলে শত্রু হতে সর্তক করে দিচ্ছেন : সকাল-সন্ধ্যায় তোমাদের ওপর শত্রু বাহিনী হানা দিতে পারে। তিনি খুতবায় বলতেন, আমাকে ও ক্বিয়ামাতকে এভাবে পাঠানো হয়েছে। এ কথা বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্র করে মিলিয়ে দেখালন। (মুসলিম)[১] ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে উঠে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করতে শুনেছি : “জাহান্নামীরা (জাহান্নামের দারোগাকে) ডেকে বলবে, হে মালিক! (তুমি বলো) তোমার রব যেন আমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন”- (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৭৭) অর্থাৎ তিনি খুত্বায় জাহান্নামের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] উম্মু হিশাম বিনতু হারিসাহ্ ইবনুল নু‘মান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কুরআন মাজীদের “সূরাহ্ ক্বাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মূখ থেকে শুনে শুনেই মুখস্থ করেছি। প্রত্যেক জুম‘আয় তিনি মিম্বারে উঠে খুতবার প্রাক্কালে এ সূরাহ্ পাঠ করতেন। (মুসলিম) [১] ‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ দিলেন। তখন তাঁর মাথায় ছিল কালো পাগড়ী। পাগড়ীর দু’মাথা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেন : তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মাসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্’আত (নাফ্ল) সলাত আদায় করে নেয়। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সলাতের এক রাক্‘আত পেল, সে যেন পূর্ণ সলাত পেল। (বুখারী, মুসলিম) [১]

【131】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন। তিনি মিম্বারে উঠে বসতেন। যে পর্যন্ত মুয়ায্যিন আযান শেষ না করতেন। এরপর তিনি দাঁড়াতেন ও খুতবাহ্ শুরু করে দিতেন। তারপর আবার বসতেন। এ সময় তিনি কোন কথা বলতেন না। অতঃপর তিনি আবার দাঁড়াতেন ও (দ্বিতীয়) খুতবাহ্ দিতেন। (আবূ দাউদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিম্বারে দাঁড়াতেন, আমরা তাঁর মুখোমুখী হয়ে বসতাম। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি শুধু মুহাম্মাদ ইবনু ফায্‌ল- এর মাধ্যমে পাওয়া গেছে। তিনি ছিলেন য‘ঈফ [দুর্বল]। তার স্মরণশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। [১]

【132】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবাহ্ দিতেন। এরপর তিনি বসতেন। আবার তিনি দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবাহ্ দিতেন। যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে, তিনি বসা অবস্থায় খুতবাহ্ দিয়েছেন, সে মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌র শপথ করে বলছি! আমি তাঁর সাথে দু’হাজারেরও বেশী সলাত আদায় করেছি (তাঁকে বসে বসে খুতবাহ্ দিতে কোন দিন দেখিনি)। (মুসলিম) [১] কা‘ব ইবনু উজরাহ্ (রাঃ) তিনি মাসজিদে হাজির হলেন। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু উম্মুল হাকাম বসে খুতবাহ্ দিচ্ছিলেন। কা‘ব বললেন, এ খবীসের দিকে তাকাও। সে বসে খুতবাহ্ দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যখন তারা বাণিজ্য কাফেলা অথবা খেল-তামাশা দেখে, তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে চলে যায়”- (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ১১)। (মুসলিম) [১] ‘উমারাহ্ ইবনু রুওয়াইবাহ্ (রাঃ) তিনি বিশর ইবনু মারওয়ান-কে মিম্বরের উপরে দু’হাত উঠিয়ে জুমু’আর খুতবাহ্‌ দিতে দেখে বললেন, আল্লাহ তার এ হাত দু’টিকে ধ্বংস করুন। আমি রসূলুল্লাহকে ভাষণ পেশ করার সময় দেখেছি, তিনি তাঁর হাত এর অধিক উঁচুতে উঠাতেন না। এ কথা বলে ‘উমারাহ্‌ তর্জনী উঠিয়ে (রাসুলের হাত উঁচুতে উঠাবার) পরিমাণের দিকে ইঙ্গিত দিলেন। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, জুমু’আর সলাতের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উঠে বসে বললেন, তোমরা বসো। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) এ নির্দেশ শুনে মাসজিদের দরজায় বসে পড়লেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখলেন এবং বললেন, হে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ! এগিয়ে এসো। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যাক্তি (ইমামের সাথে) জুমু’আর (সলাতের) এক রাক্’আত পেয়েছে, সে যেন এর সাথে দ্বিতীয় রাক্’আত যোগ করে। আর যার দুই রাক্’আতই ছুটে গেছে, সে যেন চার রাক্’আত আদায় করে; অথবা বলেছেন, সে যেন যুহরের সলাত আদায় করে নেয়। (দারাকুত্বনী)[১]

【133】

প্রথম অনুচ্ছেদ

সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নাজ্‌দের দিকে যুদ্ধে গেলাম। আমরা শত্রু সেনাদের মুখোমুখি হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাত আদায় করাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমাদের একদল লোক তাঁর সাথে সলাতে দাঁড়ালেন। অন্য দল শত্রু সেনার সামনে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথের লোকজনসহ একটি রুকূ’ ও দু’টি সাজদাহ্ করলেন। এরপর এরা, যারা সলাত আদায় করেনি তাদের জায়গায় চলে গেলেন। তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে এসে দাঁড়ালেন। এদেরকে নিয়ে তিনি একটি রুকূ’ ও দু’টি সাজদাহ্ করলেন। তারপর তিনি একাই সালাম ফিরালেন। তাদের প্রত্যেক দল পরপর উঠে নিজেদের জন্য একটি রুকূ’ ও দু’টি সাজদাহ্ আদায় করলেন। এ নিয়মে সকলে সলাত শেষ করলেন। ‘আব্দুল্লাহর আরেকজন ছাত্র নাফি’ও এ ধরনের বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আরো বেশি বর্ণনা করেছেন। ভয় যদি আরো বেশি হয় তাহলে তারা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবেন। অথবা সওয়ারীর উপর বসে ক্বিবলার দিকে অথবা উল্টা দিকে, যে দিকে ফিরতে সমর্থ হয় সে দিকে ফিরে সলাত আদায় করবেন। এরপর নাফি’ বলেন, আমার মনে হয় ‘আব্দুল্ললাহ ইবনু ‘উমার এ কথাও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী) [১] ইয়াযীদ ইবনু রূমান (রহঃ) সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত (রহঃ) যিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যাতুর রিক্বা’ যুদ্ধে ‘সালাতুল ‘খাওফ’ আদায় করেছিলেন। তিনি বলেন, (এ যুদ্ধে সলাতের সময়) একদল লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সারি বেঁধে ছিলেন। অন্যদল (তখন) শত্রুদের মুখোমুখি ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম দল নিয়ে এক রাক্’আত আদায় করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুসল্লিরা নিজেদের সলাত পূর্ণ করলেন, অতঃপর শত্রু সেনাদের সামনে গিয়ে কাতারবন্দী হলেন। এরপর দ্বিতীয় দল এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতে যোগ দিলেন। যে রাক্’আত বাকী ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদের সাথে নিয়ে আদায় করলেন। তারপর তিনি বসে থাকলেন। এ দল তাদের বাকী রাক্’আত পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদের নিয়ে সালাম ফিরালেন। (বুখারী, মুসলিম) কিন্তু ইমাম বুখারী হাদীসটি অন্য সুত্রে ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ হতে, তিনি সালিহ ইবনু খাও্ওয়াত হতে, তিনি সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ হতে এবং তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এগিয়ে যেতে যেতে যাতুর রিক্বা’ পর্যন্ত পৌঁছালাম। এখানে একটি ছায়া বিশিষ্ট গাছের নিকট গেলে, তা আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, এ সময় মুশরিকদের একজন এখানে এসে দেখলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরবারিখানা গাছের সাথে লটকানো আছে। সে তখন ত্বরিত গতিতে তাঁর তরবারিখানা হাতে নিয়ে কোষমুক্ত করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় পাও না? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কখনো না। সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করবেন। বর্ণনাকারী (জাবির (রাঃ)) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ সে মুশরিককে ভয় দেখালে সে তরবারিখানা কোষবদ্ধ করে আবার ঝুলিয়ে রাখল। তিনি (জাবির (রাঃ)) আবার বলেন, এ সময় সলাতের আযান দেয়া হল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুসংখ্যক লোক নিয়ে দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করলেন। এরপর এ দল পিছনে সরে গেলে তিনি অবশিষ্টদের নিয়ে দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করলেন। তিনি (জাবির (রাঃ)) বলেন, এতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চার রাক্’আত হল। অন্যান্য লোকের হলো দু’ রাক্’আত। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে ‘সালাতুল খাওফ’ আদায় করলেন। আমরা তাঁর পেছনে দু’টি সারি বানালাম। শত্রুপক্ষ তখন আমাদের ও ক্বিবলার মাঝখানে ছিল। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা বাঁধলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে রুকূ’ করলাম। অতঃপর তিনি রুকূ’ হতে মাথা উঠালেন। আমরা সবাই মাথা উঠালাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর নিকটবর্তী সারি অর্থাৎ প্রথম রাক’আতে যারা পেছনে ছিল সাজদায় গেলেন। আর পরবর্তী সারি শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে রইলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর নিকটবর্তী সারি সাজদাহ্ শেষ করলে পরবর্তী সারি সাজদায় গেলেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালেন। আমরা সবাই সালাম ফিরালাম। (মুসলিম) [১]

【134】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বাতনে নাখল’ যুদ্ধে লোকজন নিয়ে ভীতি অবস্থায় যুহরের সলাত আদায় করলেন। তিনি একদল নিয়ে দু’ রাক্’আত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। এরপর দ্বিতীয় দল আসলো। তিনি তাদেরকে নিয়েও দু’ রাক্’আত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্) [১]

【135】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার (জিহাদ করার লক্ষ্যে) যাজ্‌নান ও ‘উসফান নামক স্থানের মধ্যবর্তী স্থানে উপস্থিত হলেন। মুশরিকরা তখন বলাবলি করল। এ মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সলাত আছে, যে সলাত তাদের নিকট তাদের পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি হতেও অধিক প্রিয়। আর সে সলাতটা হল ‘আসরের সলাত। তাই তোমরা দলবদ্ধ হও। এ ‘আসরের সলাত আদায়ের সময় তাদের উপর আক্রমণ কর। ঠিক এ সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিবরিল (আঃ) আসলেন। তাকে হুকুম দিলেন তিনি যেন তাঁর সাথিদেরকে দু’ভাগে ভাগ করেন। একদলকে নিয়ে সলাত আদায় করবেন। আর অপর দলটি তাদের অপর দিকে শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন অটুটভাবে। এমনকি সলাতেও যেন তারা সম্ভাব্য সতর্কতা ও অস্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকে। এতে তাদের সলাতও এক রাক্’আত হয়ে যাবে। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হবে দু’ রাক্’আত। (তিরমিযী, নাসায়ী) [১]

【136】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঘর থেকে) বের হয়ে ঈদগাহের ময়দানে গমন করতেন। প্রথমে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে গিয়ে সলাত আদায় করাতেন। এরপর তিনি মানুষের দিকে মুখ ফিরে দাঁড়াতেন। মানুষরা সে সময় নিজ নিজ সারিতে বসে থাকতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ভাষণ শুনাতেন, উপদেশ দিতেন। আর যদি কোন দিকে কোন সেনাবাহিনী পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তাদেরকে নির্বাচন করতেন। অথবা কাউকে কোন নির্দেশ দেয়ার থাকলে তা দিতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঈদগাহ) হতে প্রত্যাবর্তন করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দু’ঈদের সলাত একবার নয়, দু’বার নয়, আযান ও ইক্বামাত ছাড়া... (বহুবার) আদায় করেছি। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) দু ’ঈদের সলাত খুতবার পূর্বেই আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ঈদের সলাতে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ছিলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতের জন্য ঈদগাহে এসেছেন। (প্রথমে) সলাত আদায় করেছেন, তারপর খুত্‌বাহ্‌ প্রদান করেছেন। তবে তিনি আযান ও ইক্বামাতের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের নিকট এসেছেন। তাদের ওয়াজ নাসীহাত করেছেন। অতঃপর আমি দেখলাম মহিলাগণ নিজ নিজ কান ও গলার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। গহনা খুলে খুলে বিলালের নিকট দিতে লাগলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও বিলাল বাড়ীর দিকে চলে গেলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্‌রের দিন মাত্র দু’ রাক্’আত সলাত আদায় করেছেন। এর পূর্বেও তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সলাত আদায় করেননি, পরেও পড়েননি। (বুখারী, মুসলিম)[১] উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সলাতের জায়গা হতে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (বিদায় হাজ্জে) মিনায় অবস্থানকালে আবূ বাক্‌র তাঁর নিকটে গেলেন। সে সময় আনসারদের দু’জন বালিকা সেখানে গান গাচ্ছিল ও দফ্‌ বাজাচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা বু‘আস যুদ্ধে আনসার গোত্রের লোকেরা যে সব গান গেয়ে গর্ব করেছিল সে সব গান আবৃত্তি করছিল। এ সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদর মুড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ বাক্‌র বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন। এ সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাপড় হতে মুখ খুলে বললেন, হে আবূ বাক্‌র ওদেরকে ছেড়ে দাও। এটা ঈদের দিন। অন্য বর্ণনায়, হে আবূ বাক্‌র! প্রত্যেক জাতির একটা ঈদের দিন আছে। আর এটা হলো আমাদের ঈদের দিন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্‌রের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। আর খেজুরও খেতেন তিনি বিজোড়। (বুখারী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন (ঈদের মাঠে) যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। (বুখারী) [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কুরবানীর ঈদের দিন আমাদের সামনে এক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, এ ঈদের দিন প্রথমে আমাদেরকে সলাত আদায় করতে হবে। এরপর আমরা বাড়ী গিয়ে কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে করল সে আমাদের পথে চলল। আর যে ব্যক্তি আমাদের সলাত আসায় করার পূর্বে কুরবানী করল সে তাঁর পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি যাবাহ করে নিশ্চয়ই তা গোশত ভক্ষণের ব্যবস্থা করল, তা কুরবানীর কিছুই নয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] জুনদুব ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সলাতের আগে যাবাহ করেছে সে যেন এর পরিবর্তে (সলাতের পরে) আর একটি যাবাহ করে। আর যে ব্যক্তি আমাদের সলাত আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত যাবাহ করেনি সে যেন (সলাতের পর) আল্লাহ্‌র নামে যাবাহ করে (এটাই প্রকৃত কুরবানী)। (বুখারী, মুসলিম) [১] বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের আগে যাবাহ করল সে নিজের (খাবার) জন্যই যাবাহ করল। আর যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের পর যাবাহ করল তার কুরবানী পরিপূর্ণ হলো। সে মুসলিমদের নিয়ম অনুসরণ করল। (বুখারি, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবাহ করতেন এবং নহর করতেন ঈদগাহের ময়দানে। (বুখারী) [১]

【137】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করার পর তাদের দু’টি দিন ছিল। এ দিন দু’টিতে তারা খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদ করত। (এ দেখে) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কি? তারা বলল ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের সময় এ দিন দু’টিতে আমরা খেলাধুলা করতাম। (এ কথা শ্রবণে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ দু’দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য আরো উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল আযহার দিন ও অপরটি ঈদুল ফিত্‌রের দিন। (আবূ দাউদ) [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ও ঈদুল আযহার দিন কিছু খেয়ে সলাতের জন্য বের হতেন না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী) [১] কাসীর তাঁর পিতা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা ‘আম্‌র ইবনু ‘আওফ হতে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদের প্রথম রাক্‌’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাতবার ও দ্বিতীয় রাক্‌’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচবার তাকবীর বলেছেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী) [১] জা‘ফার সাদিক্ব ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) জা’ফার সাদিক্ব ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) মুরসাল হিসেবে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্‌র, ‘উমার দু’ ঈদে ও ইস্তিক্বার সলাতে সাতবার ও পাঁচবার করে তাকবীর বলেছেন। তাঁরা সলাত আদায় করতেন খুতবার পূর্বে। সলাতে ক্বিরাআত পড়েছেন উচ্চৈঃস্বরে। (শাফি’ঈ) [১] সা‘ঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আল আশ্‌’আরী ও হুযায়ফাহ্‌ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করছিলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্‌রের সলাতে কতবার তাকবীর বলতেন? তখন আবূ মূসা আল আশ্‌’আরী বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার তাকবীরের মতো চার তাকবীর বলতেন। এ জবাব শুনে হুযায়ফাহ্‌ (রাঃ) বললেন, তিনি ঠিকই বলেছেন। (আবূ দাউদ) [১] বারা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঈদের দিনে একটি ক্বাওস দেয়া হলো। তিনি এ ক্বাওসের উপর ভর করে (ঈদের) খুতবাহ্‌ দান করলেন। (আবূ দাউদ) [১] ‘আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ্ প্রদান করার সময় নিজের লাঠির উপর ঠেস দিয়ে (খুতবাহ্) দিতেন। (শাফি’ঈ) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ঈদের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার আগেই আযান ও ইক্বামাত ছাড়া সলাত শুরু করে দিলেন। সলাত শেষ করার পর তিনি বিলালের গায়ে ভর করে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব ও গুণ গরীমা বর্ণনা করলেন। লোকদের উপদেশ বাণী শুনালেন। তাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুসরণ করার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগালেন। তারপর তিনি মহিলাদের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন বেলাল। তাদেরকে তিনি আল্লাহর ভয়-ভীতির কথা বললেন, ওয়াজ করলেন। পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। (নাসায়ী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন এক পথ দিয়ে (ঈদগাহে) আসতেন। আবার অন্য পথ দিয়ে (বাড়ীতে) ফিরতেন। (তিরমিযী, দারিমী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার ঈদের দিন তাঁদের সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে নিয়ে মাসজিদে ঈদের সলাত আদায় করলেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১] আবুল হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজরানে নিযুক্ত তাঁর প্রশাসক আম্‌র ইবনু হায্‌ম-এর নিকট চিঠি লিখলেন। ঈদুল আযহার সলাত তাড়াতাড়ি আদায় করাবে। আর ঈদুল ফিত্‌রের সলাত বিলম্ব করে আদায় করবে। লোকজনকে ওয়াজ নাসীহাত করবে। (শাফি’ঈ) [১] আবূ ‘উমায়র ইবনু আনাস (রাঃ) তিনি তাঁর এক চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন সাহাবীদের অন্তর্ভক্ত। (তিনি বলেন) একবার একদল আরোহী নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে সাক্ষ্য দিলো যে, তারা গতকাল (শাওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সওম ভেঙ্গে ফেলার ও পরের দিন সকালে ঈদগাহের ময়দানে যেতে নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১]

【138】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

ইবনু জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেন, আত্বা (রহঃ) আমার কাছে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা দু’জনেই বলেছেন, (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায়) ঈদুল ফিত্‌র ও ঈদুল আযহার সলাতের জন্য আযান দেয়া হত না। ইবনু জুরায়জ বলেন, এর কিছুদিন পর আমি আবার আত্বা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। আত্বা (রহঃ) তখন বললেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বলেছেন। ঈদুল ফিত্‌রের সলাত আদায়ের জন্য আযানের প্রয়োজন নেই। ইমাম (সলাতের জন্য) বের হবার সময়েও না। বের হয়ে আসার পরেও না। (এভাবে) ইক্বামাত ও কোন আহবানও নেই। না অন্য কিছু আছে। এ দিন না কোন আহবান আছে। আর না কোন ইক্বামাত। (মুসলিম) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্‌রের দিন (ঈদগাহে গিয়ে) প্রথমে সলাত আরম্ভ করতেন। সলাত আদায় করা শেষ হলে (খুতবাহ্ প্রদানের জন্য) মানুষের দিকে ফিরে দাঁড়াতেন। তাঁরা নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকতেন। বস্ততঃ যদি কোথাও সৈন্য বাহিনী পাঠাবার প্রয়োজন থাকত তাহলে, তা মানুষদেরকে বলে (বাহিনী পাঠিয়ে) দিতেন। অথবা জনগণের প্রয়োজনের ব্যাপারে কোন কথা থাকলে সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে দিতেন। তিনি খুতবায় বলতেন, তোমরা সদাক্বাহ্ দাও, তোমরা সাদক্বাহ্ দাও, তোমরা সাদক্বাহ্ দাও। বস্তুতঃ মহিলারাই অধিক পরিমাণে সদাক্বাহ্ করতেন। এরপর তিনি নিজ বাড়ীতে ফিরে আসতেন। এভাবেই (দু’ঈদের সলাত) চলতে থাকল যে পর্যন্ত (মু’আবিয়ার পক্ষ হতে) মারওয়ান ইবনু হাকাম (মাদীনার) শাসক নিযুক্ত না হন। (এ সময় এক ঈদের দিনে) মারওয়ান-এর হাত ধরে আমি ঈদগাহের ময়দানে উপস্থিত হলাম। এসে দেখি কাসির ইবনু সাল্‌ত মাটি ও কাঁচা ইট দিয়ে একটি মিম্বার তৈরি করেছেন। এ সময় মারওয়ান হাত দিয়ে আমার হাত ধরে টানাটানি আরম্ভ করল আমি যেন মিম্ভারে উঠে খুতবাহ্ দেই। আর আমি তাকে সলাত আদায়ের জন্য টানতে লাগলাম। আমি তার এ অবস্থা দেখে বললাম, সলাত দিয়ে শুরু করা কোথায় গেল? সে বলল, না আবূ সা’ঈদ! আপনি যা জানেন না তা এখন নেই। আমি বললাম, কখনো নয়। আমার জান যার হাতে নিবন্ধ তার শপথ করে বলছি। আমি যা জানি এর চেয়ে ভাল কিছু তোমরা কখনো বের করতে পারবে না। বর্ণনাকারী বলেন এ কথা তিনি তিনবার বললেন, তারপর (ঈদগাহ হতে) চলে গেলেন। (মুসলিম) [১]

【139】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক কুরবানীর ঈদে ধূসর রং ও শিংওয়ালা দু’টি দুম্বা কুরবানী করলেন। নিজ হাতে তিনি এ দুম্বা দু’টিকে বিস্মিল্লা-হ ও আল্ল-হু আকবার বলে যাবাহ করলেন। আমি তাকেঁ (যাবাহ করার সময়) দুম্বা দু’টির পাঁজরের উপর নিজের পা রেখে ‘বিস্মিল্লা-হি ওয়াল্ল-হু আকবার’ বলতে শুনেছি। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে বললেন যা কালোতে হাঁটে, কালোতে শোয়, কালোতে দেখে অর্থাৎ যে দুম্বার পা কালো, পেট কালো ও চোখ কালো। কুরবানী করার জন্য ঠিক এমনি একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাকে (রাঃ) বললেন, হে আয়িশাহ্! একটি ছুরি লও। এটিকে পাথরে ধাঁর করাও। আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি তাই করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছুরিটি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে ধরলেন। অতঃপর এটাকে পাঁজরের উপর শোয়ালেন এবং যাবাহ করতে করতে বললেন, “আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি এ কুরবানীকে মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার এবং মুহাম্মাদের উম্মাতের পক্ষ হতে গ্রহণ করো।” এরপর তিনি এ কুরবানী দ্বারা লোকদের সকালের খাবার খাইয়ে দিলেন। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা (কুরবানীতে) মুসিন্নাহ্ ছাড়া কোন পশু যাবাহ করবে না। হ্যাঁ ,যদি মুসিন্নাহ্ পাওয়া না যায় তবে দুম্বার জাযা’আহ্ যাবাহ করতে পার। (মুসলিম) [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর সাহাবীদের মধ্যে কুরবানী করার জন্য বন্টন করার সময় ‘উক্ববাকে কতগুলো ছাগল-ভেড়া দিলেন। বন্টনের পর একটি এক বছরের বাচ্চা ছাগল রয়ে গেল। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটি তুমি কুরবানী করে দাও। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার ভাগে তো একটি মাত্র বাচ্চা ছাগল রইল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি এটাই কুরবানী করে দাও। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহের ময়দানেই যাবাহ করতেন বা নহর করতেন। (বুখারী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে (ঠিক একইভাবে) একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানী) করা বৈধ হবে। (মুসলিম, আবূ দাউদ; ভাষা আবু দাউদের) [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু না ধরে অর্থাৎ না কাটে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ স্পর্শ না করে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি জিলহাজ্জ মনের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়্যাত করবে সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলো কর্তন না করে। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই, যে দিনের আমাল এ দশদিনের আমাল অপেক্ষা অধিক প্রিয়। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে। আর তা হতে কোন কিছু নিয়ে ফিরেনি। (বুখারী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কুরবানীর দিনে দু‘টি ছাই রঙের শিংওয়ালা খাশী দুম্বা কুরবানী করলেন। ওদের ক্বিবলামুখী করে বললেন “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা ‘আলা-মিল্লাতি ইবরা-হীমা হানীফাও্ ওয়ামা-আনা্- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, লা-শারীকা লাহ্ ওয়াবিযা-লিকা আমারতু ওয়া আনা-মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা ‘আন্ মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহী, বিসমিল্লা-হি ওয়াল্ল-হু আকবার” বলে যাবাহ করতেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী। কিন্তু আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী বণর্না করেছেন, নিজ হাতে যাবাহ করলেন এবং বললেন, বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্ল-হুমা হা-যা-‘ আন্নী, ওয়া ‘আম্মান লাম ইউযাহহি মিন উম্মাতী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ এ কুরবানী আমার পক্ষ থেকে কবূল করো। কবুল করো আমার উম্মাদগনণের মধ্য থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ হতে।) [১] হানাশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ) কে দু‘টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম। এটাই কি (অর্থাৎ দু‘টি কেন)? ‘আলী (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর পক্ষ হতে কুরবানী করার জন্য ওয়াসীয়াত করে গেছেন। তাই আমি তাঁর পক্ষ হতে একটি দুম্বা কুরবানী করছি। (আবু দাউদ, তিরমিযী) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর (জানোয়ারের) চোখ, নাক ভালভাবে দেখে নেয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। যে পশুর কানের সম্মুখ ভাগ শেষের ভাগ কাটা গেছে। অথবা যে পশুর কান গোলাকারবাভে ছিদ্রিত হয়ে গেছে বা যার কান পাশের দিকে থেকে কেটে গিয়াছে সেসব পশু যেন কুরবানী না করি। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী; তবে দারিমী (আরবী) “কান” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং ভাঙ্গা, কান কাটা, পশু দিয়ে কুরবানী করতে বারণ করেছেন। (ইবনু মাজাহ) [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ ধরনের জানোয়ার কুরবানী করা হতে বেঁচে থাকা উচিত? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, চার ধরনের পশু (কুরবানী করা হতে) বেঁছে থাকা উচিত। (১) যে পশু স্পষ্ট খোঁড়া। (২) যে পশু স্পষ্ট কানা। (৩) যে পশু সুস্পষ্ট রোগা ও দুর্বল। (৪) যে পশুর হাড়ের মজ্জা নেই তথা একেবারেই শুকিয়ে গেছে। (মালিক, আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিংওয়ালা শক্তিশালী দুম্বা কুরবানী করতেন। যে দুম্বা অন্ধকারে দেখত। অন্ধকারে ভক্ষণ করত এবং অন্ধকারে চলত। অর্থাৎ যে দুম্বার চোখ কালো, চোখ মুখ কালো ও পা কালো। (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী,ইবনু মাজাহ) [১] বানী সুলায়ম গোত্রের এক সাহাবী মুজাশি' (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : ছয় মাস পূর্ণ ভেড়া এক বছর বয়সের ছাগলের কাজ পূরণ করে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। ছয়মাস বয়স অতিবাহিত ভেড়া বেশ উত্তম কুরবানী। (তিরমিযী) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন কুরবানীর সময় উপস্থিত হলো। আমরা তখন এক গরুতে সাতজন ও এক উটে দশজন করে (কুরবানীতে) অংশীদার হলাম। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান, গারীব।) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কুরবানীর দিনে আদাম সস্তানগণ এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার (অর্থাৎ কুরবানী করা) চেয়ে বেশী প্রিয় হতে পারে। কুরবানীর সকল পশুর শিং, পশম, এদের ক্ষুরসহ ক্বিয়ামাতের দিন (কুরবানীকারীর নেকীর পাল্লায়) এসে হাজির হবে। কুরবানীর পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহর নিকট মর্যাদাকর স্থানে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা সানন্দে কুরবানী করবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন : জিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিন অপেক্ষা আর কোন উত্তম দিন নেই। যে দিন আল্লাহর 'ইবাদাত করার জন্য প্রিয়তর হতে পারে। এ দশদিনের প্রতি দিনের সিয়াম এক বছরের সিয়ামের সমমর্যাদার। এর প্রত্যেক রাতের সলাত ক্বদরের রাতের সলাত সমতুল্য। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটির সানাদ দুর্বল।) [১]

【140】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জুনদুব ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক কুরবানীর ঈদে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। (আমি দেখলাম) তিনি সলাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরায়ে সলাত হতে অবসর হওয়া ছাড়া আর কিছু করলেন না। এ সময় তিনি কিছু কুরবানীর গোশত দেখলেন, যা সলাত আদায়ের পূর্বেই যাবাহ করা হয়েছিল। তিনি তখন বললেন, যে সলাত আদায়ের আগে অথবা আমার সলাত আদায়ের আগে বর্ণনাকারীর সন্দেহ কুরবানীর পশু যাবাহ করছে সে যেন অন্য একটি কুরবানী করে নেয়। আর এক বর্ণনায় আছে, জুনদুব বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সলাত আদায় করলেন। তারপর ভাষণ প্রদান করলেন। এরপর কুরবানীর পশু যাবাহ করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের আগে কুরবানীর পশু যাবাহ করেছে সে যেন আর একটি পশু যাবাহ করে। আর যে যাবাহ করেনি সে যেন আল্লাহর নামে যাবাহ করে। (বুখারী,মুসলিম) [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিনের পরেও অর্থাৎ দশই যিলহাজ্জের পরেও দু'দিন কুরবানীর দিন অবশিষ্ট থাকে। [১] ইমাম মালিক (রহঃ) তিনি (ইমাম মালিক) আরো, 'আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) হতেও এরূপ একটি উক্তি প্রমাণিত। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেছেন। (আর এ দশ বছরই) তিনি একাধারে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। (তিরমিযী) [১] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কুরবানীটা কি? তিনি বললেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর সুন্নাত। তাঁরা আবার জিজ্ঞেস করলেন : এতে কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : কুরবানীর পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে প্রতিদান রয়েছে। সহাবীগণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কি হবে? (এদের পশম তো অনেক বেশী)? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ) [১]

【141】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন : এখন আর ফারা'ও নেই এবং 'আতীরাহ্-ও নেই। বর্ণনাকারী বলেন ফারা' হলো উট বা ছাগল বা ভেড়ার প্রথম বাচ্চা। এ বাচ্চা তারা তাদের দেব-দেবীর জন্য যাবাহ তথা উৎসর্গ করত। আর 'আতীরাহ্ হলো রজব মাসে যা করা হত। (বুখারি, মুসলিম) [১]

【142】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মিখনাফ ইবনু সুলায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে 'আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত ছিলাম। আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, হে লোকেরা! প্রত্যেক পরিবারের জন্য প্রতি বছরই একটি 'কুরবানী ও একটি 'আতিরাহ্ রয়েছে। তোমরা কি জানো 'আতিরাহ্ কি? তা হলো যাকে তোমরা 'রজাবিয়্যাহ্ বলে থাকো। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ; কিন্তু ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে য'ঈফ ও ইমাম আবূ দাঊদ মানসুখ বলেছেন) [১]

【143】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা কুরবানীর দিনকে এ উম্মাতের জন্য 'ঈদ' হিসাবে পরিগণিত করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি মাদী 'মানীহাহ্' ছাড়া অন্য কোন পশু না পাই। তবে কি তা দিয়েই কুরবানী করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : না; তবে তুমি এ দিন তোমার চুল ও নখ কাটবে। তোমার গোঁফ কাটবে। নাভির নিচের পশম কাটবে। এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পরিপূর্ণ কুরবানী। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) [১]

【144】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি একজন আহ্বানকারীকে, সলাত প্রস্তুত মর্মে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন। (লোকজন একত্র হলে) তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে দু' দু' রাক্'আত সলাত আদায় করালেন। এতে চারটি রুকূ' ও চারটি সাজদাহ্ করলেন। 'আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এ দিন যত দীর্ঘ রুকূ সাজদাহ্ আমি করেছি এত দীর্ঘ রুকূ সাজদাহ্ আর কোন দিন করিনি। (বুখারি, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনই বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে খুসূফে তাঁর ক্বিরাআত স্বরবে পরলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কালে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনগণকে সাথে নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাতে তিনি সূরাহ আল বাক্বারাহ্ পড়ার মতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ রুকু' করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেন। তবে এ দাঁড়ানো ছিল প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা স্বল্প সময়ের। এরপর আবার লম্বা রুকু' করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ অপেক্ষা ছোট ছিল। তারপর রুকূ' হতে মাথা উঠালেন ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তবে তা আগের দাঁড়ানোর চেয়ে কম। তারপর আবার দীর্ঘ রুকূ' করলেন। তবে এ রুকূ'ও আগের রুকূ' অপেক্ষা ছোট। তারপর মাথা উঠালেন ও সাজদাহ্ করলেন। এরপর সলাত শেষ করলেন। আর এ সময় সূর্য পূর্ন্ জ্যোতিময় হয়ে উঠে গেল। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু'টো নিদর্শন। তারা কারও জন্ম-মৃত্যুতে গ্রহনযুক্ত হয় না। তোমরা এরূপ 'গ্রহণ' দেখলে আল্লাহ তা'আলার যিক্‌র করবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে আমরা দেখলাম। আপনি যেন এ স্থানে কিছু গ্রহণ করেছেন। তারপর দেখলাম পেছনের দিকে সরে গেলেন। রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেন, তখন আমি জান্নাত দেখতে পেলাম। জান্নাত হতে এক গুচ্ছ আঙ্গুর নিতে আগ্রহী হলাম। যদি আমি তা গ্রহণ করতাম তাহলে তোমরা দুনিয়ায় বাকি থাকা পর্যন্ত সে আঙ্গুর খেতে পারতে। আর আমি তখন জাহান্নাম দেখতে পেলাম। জাহান্নামের মতো বীভৎস কুৎসিত দৃশ্য আর কখনো আমি দেখিনি। আমি আরো দেখলাম যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কি কারণে তা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের কুফরির কারণে। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরি করে থাকে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না; বরং স্বামীর সাথে কুফ্‌রী করে থাকে। তারা (স্বামীর) সদ্ব্যবহার ভুলে যায়। সারা জীবন যদি তুমি তাদের কারও সাথে ইহসান করো। এরপর (কোন সময়) যদি সে তোমার পক্ষ হতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে বলে উঠে। আমি জীবনেও তোমার কাছে ভাল ব্যবহার পেলাম না। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বরাতে বর্ণিত হওয়া এ ধরনের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ 'আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদায় গেলেন। তিনি দীর্ঘ সাজদাহ্ করলেন। তারপর সলাত শেষ করলেন। তখন সূর্য বেশ আলোকিত হয়ে গেছে। তারপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্য বক্তব্য প্রদান করলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর গুণকীর্তন করলেন। তারপর বললেন, সূর্য ও চাঁদ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর দু'টো নিদর্শন। কারও মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আর কারও জন্মের কারণেও হয় না। তোমরা এ অবস্থা দেখতে পেলে আল্লাহর নিকট দু'আ করো এবং তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। সলাত আদায় কর। দান-সদাক্বাহ্ ও খয়রাত করো। এরপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতেরা! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা'আলার চেয়ে বেশী ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। তাঁর যে বান্দা 'জিনা' তথা ব্যভিচার করবে অথবা তাঁর যে বান্দী 'জিনা' তথা ব্যভিচার করবে তিনি তাদের ঘৃণা করেন। হে মুহাম্মাদের উম্মতগণ! আল্লাহর কসম! আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, নিশ্চয় তোমরা কম হাসতে ও বেশি কাঁদতে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হলো। এতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। তাঁর উপর 'ক্বিয়ামাত' সংঘটিত হয়ে যাবার মতো ভয়-ভীতি আরোপিত হলো। অতঃপর তিনি মাসজিদে গমন করলেন। দীর্ঘ 'কিয়াম' 'রুকূ' ও সাজদাহ্' দিয়ে সলাত আদায় করলেন। সাধারনতঃ (এত দীর্ঘ সলাত আদায় করতে) আমি কখনো তাঁকে দেখিনি। অতঃপর তিনি বললেন, এসব নিদর্শনাবলী যা আল্লাহ তা'আলা পাঠিয়ে থাকেন তা না কারো মৃত্যুতে সংঘটিত হয়ে থাকে, আর না কারো জন্মে হয়ে থাকে। বরং এসব দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে থাকেন। অতএব তোমরা যখন এ নিদর্শনাবলীর কোন একটি অবলোকন করবে, আল্লাহকে ভয় করবে। তাঁর যিক্‌র করবে। তাঁর নিকট দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় যেদিন তাঁর ছেলে ইব্‌রাহীমের ইন্তিকাল হলো। এদিন সূর্যগ্রহণ হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনগণকে নিয়ে 'ছয় রুকূ' ও চার সাজদায় সলাত আদায় করালেন। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণের সময় (দু' রাক'আত) সলাত আট রুকূ' ও চার সাজদায় আদায় করেছেন। (মুসলিম) [১] ‘আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) হতেও ঠিক এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (মুসলিম) [১] ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় মাদীনায় আমি আমার তীরগুলো (লক্ষস্থলে) নিক্ষেপের মাধ্যমে প্রশিক্ষন গ্রহণ করছিলাম। এ সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলো। তীরগুলো আমি ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আজ দেখব সূর্যগ্রহণের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আজ কি করেন। এরপর আমি তাঁর নিকট এলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাঁর হাত দু’টি উঠিয়ে সূর্যগ্রহণ ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর ও হামদ করেছেন। আল্লাহর দরবারে দু’আয় মশগুল রয়েছেন। সূর্যগ্রহণ ছেড়ে গেলে তিনি দু’টি সূরাহ পড়লেন ও দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন- (মুসলিম; শারহে সুন্নাতেও হাদীসটি এভাবে ‘আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ হতে বর্ণিত হয়েছে। আর মাসাবীহ হতেও এ বর্ণনাটি জাবির ইবনু সামুরাহ হতে নকল করে হয়েছে।) [১] আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণ শুরু হলে দাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী) [১]

【145】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণের সময় আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করেছেন। আমরা তাঁর আওয়াজ শুনতে পাইনি। (তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ) [১] ‘ইকরামাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাসকে বলা হলো, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অমুক স্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন। খবর শুনার সাথে সাথে তিনি সাজদায় লুটে পড়লেন। তাঁকে তখন জিজ্ঞাস করা হলো, আপনি কি এ সময় সাজদাহ করছেন? (অর্থাৎ এটা কি সাজদাহ করার সময়?) তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা যখন কোন নিদর্শন দেখবে তখন সাজদাহ করবে। আর কোন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীর দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যাবার চেয়ে বড় নিদর্শন আর কি হতে পারে? (আবু দাঊদ, তিরমিযী) [১]

【146】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তিনি তাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তিওয়ালে মুফাসসালের সূরাহ দ্বারা কিরাআত পড়লেন। এরপর (প্রথম রাক’আতে) পাঁচটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সাজদাহ করলেন। তারপর দ্বিতীয় রাক’আতের জন্য জন্য দাঁড়ালেন। তিওয়ালে মুফাসসালের একটি সূরাহ দিয়ে ক্বিরাআত পড়লেন। এরপর একটি রুকূ’ করলেন। দু’টি সাজদাহ করলেন। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে বসলেন। সূর্যগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত (বসে বসে) দু’আ করতে থাকলেন। (আবূ দাঊদ) [১] নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ হলে তিনি দু’ দু’ রাক’আত সলাত আদায় শুরু করতেন ও মাসজিদে বসে গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। (অর্থাৎ দু’ রাকআত সলাত আদায়ান্তে দেখতেন ‘গ্রহণ’ শেষ হয়েছে কি-না? না হলে আবার দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন)। এভাবে ‘গ্রহণ’ থাকা পর্যন্ত সলাত আদায় করতে থাকতেন। আবূ দাঊদ; নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণ লাগলে আমাদের সলাতের মত সলাত আদায় করতে শুরু করতেন। রুকূ’ করতেন, সাজদাহ করতেন। (নাসায়ীর) অন্য এক রিওয়ায়াতে আছে, একদিন সূর্যগ্রহণ শুরু হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তড়িৎগতিতে মাসজিদে চলে গেলেন এবং সলাত আদায় করতে লাগলেন। এ অবস্থায় সূর্য আলোকিত হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, জাহিলিয়্যাতের সময় মানুষেরা বলাবলি করত পৃথিবীর কোন বড় মানুষ মৃত্যুবরণ করলে ‘সূর্যগ্রহণ’ ও ‘চন্দ্রগ্রহণ’ হয়ে থাকে। (ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়) আসলে কোন মানুষের জন্ম বা মৃত্যুতে ‘গ্রহণ’ হয় না। বরং এ দু’টি জিনিস (চাঁদ, সূর্য) আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিসমূহের দু’টি সৃষ্টি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টি জগতে যেভাবে চান পরিবর্তন আনেন। অতএব যেটারই ‘গ্রহণ’ হয় তোমরা সলাত আদায় করবে। যে পর্যন্ত ‘গ্রহণ’ ছেড়ে না যায়। অথবা আল্লাহ তা’আলা কোন নির্দেশ জারী না করেন (অর্থাৎ ‘আযাব অথবা ক্বিয়ামাত শুরু না হয়)। [১]

【147】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন আনন্দের ব্যাপার সংঘটিত হলে অথবা কোন ব্যাপার তাঁকে খুশী করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশে সাজদায় নুয়ে পড়তেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব) [১] আবূ জা‘ফার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন একজন বেটে লোককে দেখে সাজদায় পড়ে গেলেন। (দারাকুত্বনী হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর শারহুস সুন্নায় মাসাবীহের ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।) [১] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কাহ হতে মাদীনার উদ্দেশ্যে পথযাত্রা শুরু করলাম। আমরা গাযওয়াযা নামক স্থানের কাছে পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরোহী হতে নামলেন। দু’হাত উঠালেন। কিছু সময় পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু’আ করতে থাকলেন। তারপর সাজদায় গেলেন। দীর্ঘক্ষণ সাজদায় পড়ে থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন। কিছু সময় পর্যন্ত হাত উঠিয়ে থাকলেন। তারপর আবার সাজদায় গেলেন। দীর্ঘক্ষণ সাজদায় থাকলেন। তারপর সাজদাহ হতে উঠে দু’হাত তুলে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ। তারপর আবার সাজদায় গেলেন। বললেন, আমি আমার রবের কাছে আরয করলাম। আমার উম্মাতের জন্য সুপারিশ করলাম। তিনি আমাকে আমার উম্মাতের তিনভাগের একভাগ দান করলেন। এজন্য আমি আমার রবের শুকর আদায় করার জন্য সাজদায় গেলাম। তারপর আমি আমার মাথা উঠালাম। আমার রবের কাছে আমার উম্মাতের জন্য আবার আবেদন জানালাম। এবার তিনি আমাকে আমার উম্মাতের আর এক অংশ দান করলেন। এজন্য আমি আমার রবের শুকর আদায় করার জন্য আবার সাজদায় চলে গেলাম। এরপর আবার আমি মাথা উঠালাম। আমার রবের কাছে আমার উম্মাতের জন্য আবেদন জানালাম। এবার তিনি আমাকে আমার উম্মাতের শেষ তৃতীয়াংশ দান করলেন। এ কারণে এবার আমি আমার রবের শুকর আদায়ের জন্য তৃতীয়বার সাজদায় মনোনিবেশ করলাম। (আহমাদ, আবূ দাঊদ) [১]

【148】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বৃষ্টির জন্য লোকজন নিয়ে ঈদগাহতে গেলেন। তাদের নিয়ে তিনি দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন। উচ্চৈঃস্বরে করে তিনি উভয় রাক’আতে ক্বিরা’আত পড়লেন। এরপর তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। ক্বিবলামুখী হবার সময় তিনি তাঁর চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিসক্বা (বৃষ্টির জন্য সলাত) ছাড়া আর অন্য কোন দু’আয় হাত উঠাতেন না। এ দু’আয় তিনি এত উপরে হাত উঠাতেন যে তাঁর বগলের শুভ্র উজ্জলতা দেখা যেত। (বুখারী, মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন আল্লাহর নিকট পানি চাইলেন এবং দু’হাতের পিঠ আসমানের দিকে করে রাখলেন। (মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আকাশে বৃষ্টি দেখতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি পর্যাপ্ত ও কল্যাণকর বৃষ্টি বর্ষণ করাও। (বুখারী) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। আনাস বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর গায়ে বৃষ্টি পড়ার জন্য নিজের গায়ের কাপড় খুলে ফেললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এরূপ করলেন কেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ সদ্য বর্ষিত পানি তাঁর রবের নিকট হতে আসলো তাই। (মুসলিম) [১]

【149】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ইস্তিসক্বার সালাত (বৃষ্টির জন্য সলাত) আদায়ের জন্য ঈদগাহের দিকে গমন করলেন। তিনি ক্বিবলামুখী হবার সময় তাঁর গায়ের চাদর ঘুড়িয়ে দিলেন। চাদরের ডানদিক তিনি বাম কাঁধের উপর এবং বামদিক ডান কাঁধের উপর রাখলেন। এরপর আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন। (আবূ দাউদ) [১] আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিস্ক্বার সলাত আদায় করলেন। তখন তাঁর গায়ে ছিল একটি চারকোণ বিশিষ্ট কালো চাদর। তিনি এ চাদরটির নীচের দিক উপরের দিকে উঠিয়ে আনতে চাইলেন। কিন্তু কাজটি কষ্টসাধ্য হবার কারণে চাদরটি দু’কাঁধের উপর ঘুরিয়ে দিলেন। (আহ্মাদ, আবু দাউদ) [১] ‘উমায়র মাওলা আবূ লাহম (রাঃ) তিনি একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আহজা-রুয্ যায়ত’ নামক জায়গার কাছে ‘যাওয়ার’ নিকটবর্তী স্থানে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতে দেখেছেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন দাঁড়িয়ে দু’হাত চেহারা পর্যন্ত উত্তোলন করে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করছিলেন; কিন্তু তাঁর হাত (উপরের দিকে) মাথা পার হয়ে যায়নি। (আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ী একইভাবে বর্ণনা করেছেন) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন অতি সাধারণ পোশাক পরিধান করে, বিনয়-বিনম্র অবস্থায় আল্লাহ্‌র কাছে নিবেদন করতে করতে ইস্তিস্ক্বার সলাতের জন্য বের হয়ে গেলেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] ‘আমর ইবনু শু‘আয়ব তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাদা বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টির জন্য দু‘আ করার সময় বলতেন, “আল্ল-হুম্মাস্ক্বি ‘ইবা-দাকা ওয়াবাহী মাতাকা ওয়ান্শুর রহ্মাতাকা ওয়াআহ্য়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে, তোমার পশুদেরকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। তোমার মৃত জমিনকে জীবিত করো)। (মালিক, আবূ দাউদ) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইস্তিস্ক্বার সলাতে হাত বাড়িয়ে এ কথা বলতে দেখেছি "হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি দাও। যে পানি সুপেয়, ফসল উৎপাদনকারী, উপকারী, অনিষ্টকারী নয়। দ্রুত আগমনকারী, বিলম্বকারী নয়।" (বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা বলতে না বলতেই) তাদের ওপর আকাশ বর্ষণ শুরু করে দিলো। (আবু দাউদ) [১]

【150】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে মিম্বার আনার জন্য নির্দেশ দিলেন। বস্তুতঃ মিম্বার আনা হলো। তিনি লোকজনদেরকে একদিন ঈদগাহে আসার জন্য সময় ঠিক করে দিলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যকিরণ দেখা দেবার সাথে সাথে ঈদগাহে চলে গেলেন। মিম্বারে আরোহণ করে তাকবীর দিলেন। আল্লাহ্‌র গুণকীর্তন বর্ণনা করে বললেন, তোমরা তোমাদের শহরের আকাল, সময় মতো বৃষ্টি না হবার অভিযোগ করেছ। আল্লাহ তা'আলা এখন তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা তার কাছে দু’আ করো। তিনি তোমাদের দু’আ কবুল করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তারপর তিনি বললেন, "আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, আর রহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ইয়াফ'আলু মা-ইউরীদুল্ল-হুম্মা আনতাল্ল-হু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতাল গনিয়্যু ওয়া নাহ্নুল ফুকারা-উ, আনযিল আলায়নাল গয়সা ওয়াজ'আল মা-আনযালতা লানা-ক্যুওয়াতান ওয়াবালা-গান ইলাহীন" (অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র। তিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী। আর আমরা কাঙ্গাল, তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যে জিনিস (বৃষ্টি) তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো)। এরপর তিনি তার দু'হাত উঠালেন। এত উঠালেন যে, তার বগলের উজ্জ্বলতা দেখা গেল। তারপর তিনি জনগণের দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিজের চাদর ঘুরিয়ে নিলেন। তখনো তার দু হাত ছিল উঠানো। আবার লোকজনের দিকে মুখ ফিরালেন এবং মিম্বার হতে নেমে গেলেন। দু' রাকাআত সলাত আদায় করলেন। আল্লাহ তা'আলা তখন মেঘের ব্যবস্থা করলেন। মেঘের গর্জন শুরু হলো। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে বর্ষণ শুরু হলো। তিনি তাঁর মসজিদ পর্যন্ত পৌছার পূর্বেই বৃষ্টির ঢল নেমে গেল। এ সময় তিনি মানুষদেরকে বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য দৌড়াতে দেখে হেসে ফেললেন। এতে তাঁর সামনের দাঁতগুলো দৃষ্টিগোচর হতে থাকল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর আমি এ সাক্ষীও দিচ্ছি যে, আমি তার বান্দা ও রসূল। (আবু দাউদ) [১] আনাস (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব, লোকেরা অনাবৃষ্টির কবলে পতিত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর ওয়াসীলায় আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য দুআ করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! তোমার নিকট এতদিন আমরা আমাদের নাবীর মধ্যমতা পেশ করতাম। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে পরিতৃপ্ত করতে। এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নাবীর চাচার ওয়াসীলা পেশ করছি। তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করো। (বুখারী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নাবীদের মধ্যে একজন নাবী ইস্তিস্ক্বার (সলাত) আদায়ের জন্য লোকজন নিয়ে বের হয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি পিপীলিকা দেখতে পেলেন। পিপড়াটি তার দুটি পা আকাশের দিকে উঠিয়ে রেখেছে। (অর্থাৎ পিপীলিকাটি বৃষ্টির জন্য দুআ করছে)। এ দৃশ্য দেখে উক্ত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে বললেন, তোমরা ফিরে চলো। এ পিপড়াটির দু'আর কারণে তোমাদের দু'আ কবুল হয়ে গেছে। (দারাকুত্বনী) [১]

【151】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি পূরবী বাতাস দিয়ে উপকৃত হয়েছি। আর ‘আদ জাতি পশ্চিমা বাতাস দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো এতটা হাসতে দেখিনি যাতে তার আলা জিহবা দেখতে পেরেছি। তিনি মুচকী হাসতেন শুধু। তবে তিনি যখন ঝড়-তুফান দেখতেন তখন তার প্রভাব তার চেহারায় উদ্ভাসিত হয়েছে বলে বুঝা যেত। (বুখারী, মুসলিম) [১] [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা-ওয়া খয়রা মা-ফীহা-ওয়া খয়রা মা-উরসিলাত বিহী ওয়া আ’উযুবিকা মিন শাররিহা-ওয়া শারারি মা-ফীহা-ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ ঝড়ো হাওয়ার কল্যাণের দিক কামনা করছি। কামনা করছি এর মধ্যে যা কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে কারণে এ ঝড়ো হাওয়া পাঠানো হয়েছে সে কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই তোমার নিকট এর ক্ষতির দিক থেকে এবং এতে যা কিছু ক্ষতি নিহিত আছে এবং যে ক্ষতির জন্য তা পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি)। (‘আয়িশাহ বলেন) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যেত। তিনি বিপদের ভয়ে একবার বের হয়ে যেতেন। আবার প্রবেশ করতেন। কখনো সামনে আসতেন। কখনো পেছনে সরতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তার উৎকণ্ঠা কমে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, একবার আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ উৎকণ্ঠা অনুভূত হলে তিনি তাঁর নিকট এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ্। এ ঝড়ো হাওয়া এমনতো হতে পারে যা "আদ জাতি ভেবে ছিল। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বলেন, “তারা যখন একে তাদের মাঠের দিকে আসতে দেখল, বললো, এটা তো মেঘ। আমাদের ওপর পানি বর্ষণ করবে”-(সূরাহ আল আহকাফ ৪৬ : ২৪)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বাভাবিক বৃষ্টি দেখলে বলতেন, এটা আল্লাহর রহমাত । (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বললেন: গায়বের চাবি পাঁচটি। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ, যার নিকট রয়েছে ক্বিয়ামাতের জ্ঞান। আর তিনিই পাঠান মেঘমালা-বৃষ্টিধারা"-(সূরাহ লুক্বমান ৩১ : ৩৪)। (বুখারী) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বৃষ্টি না হওয়া প্রকৃত দুর্ভিক্ষ নয়। বরং প্রকৃত দুর্ভিক্ষ হলো, তোমরা বৃষ্টির পর বৃষ্টি লাভ করতে থাকবে অথচ মাটি ফসল উৎপাদন করবে না। (মুসলিম) [১]

【152】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বৃষ্টি না হওয়া প্রকৃত দুর্ভিক্ষ নয়। বরং প্রকৃত দুর্ভিক্ষ হলো, তোমরা বৃষ্টির পর বৃষ্টি লাভ করতে থাকবে অথচ মাটি ফসল উৎপাদন করবে না। (মুসলিম) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বাতাসকে অভিসম্পাত করল। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বাতাসকে অভিসম্পাত করো না। কারণ তারা আজ্ঞাবহ। আর যে ব্যক্তি এমন কোন জিনিসকে অভিশাপ দেয় যে জিনিস অভিশাপ পাবার যোগ্য নয়। এ অভিশাপ তার নিজের ওপর ফিরে আসে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গারীব) [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বাতাসকে গালি-গালাজ করো না। বরং তোমরা যখন (এতে) মন্দ কিছু দেখবে বলবে, হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে এ বাতাসের কল্যাণ দিক কামনা করছি। এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা এবং যে জন্য তাকে হুকুম দেয়া হয়েছে তার ভাল দিক চাই। আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই, এ বাতাসের খারাপ দিক হতে। যত খারাপ এতে নিহিত রয়েছে তা হতেও। এ বাতাস যে জন্য নির্দেশিত হয়েছে তার মন্দ দিক হতেও। (তিরমিযী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাঁটু ঠেক দিয়ে বসতেন আর বলতেন, “হে আল্লাহ! এ বাতাসকে তুমি রহমাতে রূপান্তরিত করো। আযাবে পরিণত করো না। হে আল্লাহ! একে তুমি বাতাসে পরিণত করো। ঝড়-তুফানে পরিণত করো না। “ইবনু ‘আব্বাস বলেন, আল্লাহর কিতাবে রয়েছেঃ আমি তাদের উপর পাঠিয়েছিলাম প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি”-(সূরাহ্ আল ক্বামার ৫৪ : ১৯)। “আমি তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম অকল্যাণকর বাতাস”-(সূরাহ্ আয্ যা-রিয়া-ত ৫১ : ৪১)। “আমি বৃষ্টি-সঞ্চারী বাতাস প্রেরণ করি’-(সূরাহ্ আল হিজর ১৫ : ২২)। “তিনি বায়ু প্রেরণ করেন সুসংবাদ দানের জন্য”-(সূরাহ্ আর্ রূম ৩০ : ৪৬)। (শাফি’ঈ, বায়হাক্বীর দা’ওয়াতুল কাবীর) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকাশে মেঘ দেখলে কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে তার দিকেই নিবিষ্টচিত্ত হয়ে যেতেন। তিনি বলতেন, ”আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন শাররি মা-ফীহি”-(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই। এতে যে মন্দ রয়েছে তা হতে)। এতে যদি আল্লাহ মেঘ পরিষ্কার করে দিতেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন। আর যদি বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হত বলতেন, “আল্ল-হুম্মা সাক্বয়ান না-ফি’আনা”-(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি কল্যাণকর পানি দান করো)। (আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, শাফি’ঈ; শব্দাবলি তাঁর) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেঘের গর্জন, বজ্রপাতের শব্দ শুনলে বলতেন, “আল্ল-হুম্মা লা-তাক্বতুলনা-বিগাযাবিকা ওয়ালা- তুহলিকনা-বি’আযা-বিকা ওয়া ‘আ-ফিনা-ক্ববলা যা-লিকা” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার গজব দ্বারা মৃত্যু দিও না এবং তোমার ‘আযাব দ্বারা ধ্বংস করো না। বরং এ অবস্থার আগেই তুমি আমাদের নিরাপত্তার বিধান করো)। (আহমাদ, তিরমিযী, তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেন, হাদীসটি গারীব) [১]

【153】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন। তিনি বলতেন, আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সে সত্তার যার পবিত্রতা বর্ণনা করে “মেঘের গর্জন, তার প্রশংসাসহ ফেরেশতাগণও তার ভয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করেন”। (ইমাম মালিক) [১]