5. পর্ব-৫ঃ জানাযা

【1】

প্রথম অনুচ্ছেদ

অধিকাংশ লেখকবৃন্দ এর মধ্যে মুহাদ্দিসগণ ও ফুকাহারা জানাযাহ্ পর্বকে সলাতের পরে এনেছেন। কেননা মৃত ব্যক্তির সাথে গোসল, কাফন ইত্যাদি ক্রম করা হয় বিশেষ করে তার ওপর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয় যেখানে তার জন্য ক্ববরের ‘আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার উপকারিতা বিদ্যমান থাকে। কারো মতে মানুষের দু’ অবস্থা একটি জীবিত অপরটি মৃত অবস্থা আর প্রত্যেকটির সাথে সম্পর্ক থাকে ‘ইবাদাত ও মু‘আমিলাতের হুকুম-আহকাম। আর গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত হচ্ছে সলাত। সুতরাং যখন জীবিতকালীন সম্পর্কিত হুকুম-আহকাম হতে মুক্ত হল তখন মৃত্যুকালীন সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচনা করা হল তন্মধ্যে সলাত ও অন্যান্য বিষয়। কারো মতে, জানাযার সলাত শুরু হয়েছে হিজরীর প্রথম বৎসরে, সুতরাং যারা মাক্কায় মারা গেছে তাদের ওপর সলাত আদায় হয়নি। আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্ষুধাতুরকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হাক্ব বর্তায়। (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগ হলে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় শামিল হওয়া, (৪) দা’ওয়াত গ্রহণ করা ও (৫) হাঁচির জবাব দেয়া। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হাক্ব (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শারীক হবে। [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি আদেশ ও সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- (১) রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, (২) জানাযায় শারীক হতে, (৩) হাঁচির আলহামদুলিল্লা-হ’র জবাবে ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলতে, (৪) সালামের জবাব দিতে, (৫) দা’ওয়াত দিলে তা কবূল করতে, (৬) কসম করলে তা পূর্ণ করতে, (৭) মাযলূমের সাহায্য করতে। এভাবে তিনি আমাদেরকে (১) সোনার আংটি পরতে, (২) রেশমের পোশাক, (৩) ইস্তিবরাক [মোটা রেশম], (৪) দীবাজ [পাতলা রেশম] পরতে, (৫) লাল নরম গদীতে বসতে, (৬) ক্বাস্সী ও (৭) রূপার পাত্র ব্যবহার করতে। কোন কোন বর্ণনায়, রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রূপার পাত্রে পান করবে আখিরাতে সে তাতে পান করতে পারবে না। [১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে ৷ [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, হে বনী আদাম! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে দেখতে যাব? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদাম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে খাবার দিতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, সে সময় যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বনী আদাম! আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম। তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে তোমার পিপাসা নিবারণ করতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার একজন অসুস্থ বেদুইনকে দেখতে গেলেন। আর কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ‘ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘ভয় নেই, তুমি ভালো হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত রুগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন৷ তাকে নিরাময় করে দিন৷ নিরাময় করার মালিক আপনিই৷ আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই৷ এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না৷ [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন, “বিসমিল্লা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বা’যিনা- লিইউশ্ফা- সাক্বীমুনা- বিইযনি রব্বিনা-” (অর্থাৎ আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারো মুখের থুথুর সাথে মিশে আমাদের রোগীকে ভালো করবে, আমাদের মহান রবের নির্দেশে) ৷ [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে (مُعَوِّذَاتِ) ‘‘মু‘আবিবযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু‘আবিবযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মু‘আবিবযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)[১] মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘‘মু‘আবিবযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন। ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর শরীরে অনুভূত একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে) আর সাতবার বলো, ‘‘আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্‌রাতিহী মিন্ শার্‌রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির’’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাঁর ক্ষতি হতে)। ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস বলেন, আমি তা করলাম। ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। (মুসলিম)[১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) একবার জিবরীল (আঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! জিবরীল (আঃ) বললেন, আপনাকে কষ্ট দেয় এমন সব বিষয়ে আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছি প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হতে। অথবা তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বিদ্বেষী চোখের অকল্যাণ হতে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)[১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে এ ভাষায় দু‘আ করে আল্লাহর হাতে সোপর্দ করতেন। তিনি বলতেন, ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে প্রত্যেক শায়ত্বনের (শয়তানের) অনিষ্ট হতে, প্রত্যেক ধ্বংসকারী হিংস্র জন্তু জানোয়ারের ধ্বংস হতে, প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ হতে তোমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে সোপর্দ করছি। তিনি আরো বলতেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এ কালিমার দ্বারা তাঁর সন্তান ইসমা‘ঈল ও ইসহককে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতেন। বুখারী; মাসাবীহ সংস্করণের অধিকাংশ স্থানে ‘বিহা’ শব্দের জায়গায় بهما (বিহিমা-) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিবচন শব্দে।[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। (বুখারী)[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুসলিমের ওপর এমন কোন বিপদ আসে না, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফুটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ না করেন। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। তিনি সে সময় জ্বরে ভুগছিলেন। আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার তো বেশ জ্বর। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দু’জনে যা ভোগ করে আমি তা ভুগছি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এর কারণ, আপনার জন্য দু’গুণ পুরস্কার রয়েছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন মুসলিমের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাক না কেন চাই তা রোগ হোক বা অপর কিছু হোক আল্লাহ তা’আলা তা দ্বারা তার গুনাহসমূহ ঝেড়ে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বেশী রোগ যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়েছে এমন কাউকে দেখিনি। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুক ও চিবুকের মাঝে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পর আর কারো মৃত্যু যন্ত্রণাকে আমি খারাপ মনে করি না। [১] কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো, ক্ষেতের তরতাজা ও কোমল শস্য শাখার মতো, যাকে বাতাস এদিক-ওদিক ঝুঁকিয়ে ফেলে। একবার এদিকে কাত করে। আবার সোজা করে দেয়। এভাবে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পিপুল গাছের মতো। একেবারে ভূমিতে উপড়ে পড়ার আগে এ গাছে ঝটকা লাগে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো এক শস্য ক্ষেতের মতো। শস্য ক্ষেতকে যেভাবে বাতাস সবসময় ঝুঁকিয়ে রাখে, ঠিক এভাবে মু’মিনকে বিপদাপদ দোলায়। বালা-মুসীবত ঘিরে থাকে। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হলো, পিপুল গাছের মতো। পিপুল গাছ বাতাসের দোলায় ঝুঁকে না পড়লেও পরিশেষে শিকড়সহ উপড়ে যায় । [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সায়িব (রাঃ) -এর কাছে গেলেন। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? উম্মু সায়িব (রাঃ) বলল, আমার জ্বর বেড়েছে। আল্লাহ এর ভাল না করুন। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর বানী আদামের গুনাহগুলো এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে হাপর লোহার মরিচ দূর করে। [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ রোগে অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার ‘আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্বা’উন (মহামারী)’র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাহীদরা পাঁচ প্রকার-(১) মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, (২) পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (৩) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, (৪) দেয়াল চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৫) আল্লাহর পথে জিহাদ করে মৃত ব্যক্তি। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ‘আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ ‘আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমাত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। [১] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ত্বা’ঊন বা মহামারী হলো এক রকমের ‘আযাব। এ ত্বা’ঊন বানী ইসরাঈলের একটি দলের ওপর নিপতিত হয়েছিল। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর নিপতিত হয়েছিল। তাই তোমরা কোন জায়গায় ত্বা’ঊন-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে সেখানে যাবে না। আবার তোমরা যেখানে থাকো, মহামারী শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমি যখন আমার কোন বান্দাকে তার প্রিয় দু’টি জিনিস দিয়ে বিপদ্গ্রস্ত করি, আর সে এর উপর ধৈর্যধারণ করে, আমি তাকে এ দু’টি প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে জান্নাত দান করব। প্রিয় দু’টো জিনিস বলতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টো চোখ বুঝিয়েছেন। [১]

【2】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) দু’আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) সকাল পর্যন্ত দু’আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়। [১] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমার চোখের অসুখ হলে আমাকে দেখতে আসলেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যাতে ভাল করে উযূ করার পর তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিম তার এক অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলে, “আস্আলুল্ল-হাল ‘আযীমা রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীমি আই ইয়াশ্ফিয়াকা” (অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন, যিনি মহান ‘আরশের রব।)। তাহলে তাকে অবশ্যই আরোগ্য দান করা হয় যদি না তার জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হয়। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে জ্বরসহ অসুখ-বিসুখ হতে পরিত্রাণ পাবার জন্য এভাবে দু’আ করতে শিখিয়েছেন, “মহান আল্লাহর নামে, মহান আল্লাহর কাছে সব রক্তপূর্ণ শিরার অপকার হতে ও জাহান্নামের গরমের ক্ষতি হতে।” [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ ব্যথা-বেদনা অনুভব করলে অথবা তার কোন মুসলিম ভাই তার নিকট ব্যথা-বেদনার কথা বললে, সে যেন দু’আ করে, “আমাদের রব আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। হে রব! তোমার নাম পূতঃ-পবিত্র। তোমার নির্দেশ আকাশ ও পৃথিবী উভয় স্থানেই প্রযোজ্য। আকাশে যেভাবে তোমার অগণিত রহমাত আছে, ঠিক সেভাবে তুমি পৃথিবীতেও তোমার অগণিত রহমাত ছাড়িয়ে দাও। তুমি আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করে দাও। তুমি পূতঃ-পবিত্র লোকদের রব। তুমি তোমার রহমাতগুলো হতে বিশেষ রহমাত ও তোমার শেফাসমূহ হতে বিশেষ শেফা এ ব্যথা-বেদনার নিরাময় পাঠিয়ে দাও।” এ দু’আ তার সকল ব্যথা-বেদনা দূর করে দেবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তখন সে যেন বলে, “আল্ল-হুম্মাশফি ‘আবদাকা ইয়ান্কাউ লাকা ‘আদ্যুওয়ান আও ইয়াম্শী লাকা ইলা-জানা-যাহ্” (অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। সে যাতে তোমার জন্য শত্রুকে আঘাত করতে পারে। অথবা তোমার সন্তষ্টির জন্য জানাযায় অংশ নিতে পারে।) [১] ‘উমাইয়্যাহ্ (রহঃ) তিনি (‘উমাইয়্যাহ) একদিন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে “তোমাদের অন্তরে যা আছে তোমরা যদি তা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে তোমারদের হিসাব নিবেন”-(সূরাহ আল বাকারাহ ২:২৮৪) এবং “যে অন্যায় কাজ করবে সে তার শাস্তি ভোগ করবে”-(সূরাহ আন নিসা ৪:১২৩)- এ দু’টি আয়াতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উত্তরে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নেবার পর এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এ দু’টি আয়াতে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা হল দুনিয়ায় বান্দার যে জ্বর ও দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি হয়, তা দিয়ে আল্লাহ যে শাস্তি দেন তাই, এমনকি বান্দা জামার পকেটে কে সম্পদ রাখে, তারপর হারিয়ে ফেলে তার জন্য অস্থির হয়ে যায়-এটাও এ শাস্তির মধ্যে গণ্য। অবশেষে বান্দা তার গুনাহগুলো হতে পবিত্র হয়ে বের হয়। যেভাবে সোনাকে হাপরের আগুনে পরিস্কার করে বের করা হয়। [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বড় হোক কিংবা ছোট হোক, বান্দা যেসব দুঃখ-কষ্ট পায়, নিশ্চয়ই তা তার অপরাধের কারণে। তবে আল্লাহ্‌ যা ক্ষমা করে দেন তা এর চেয়েও অনেক বেশী। এ কথার সমর্থনে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-অর্থাৎ “তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মফলের কারণে। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমা করে দেন অনেক অনেক বেশি”-(সূরাহ আশ শূরা ৪২:৩০)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা যখন ‘ইবাদতের কোন সুন্দর নিয়ম-পদ্ধতি পালন করে চলতে শুরু করে এবং তারপর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে (‘ইবাদতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়), তখন তার ‘আমালনামা লিখার জন্য নিযুক্ত মালাককে (ফেরেশতাকে) বলা হয়, এ বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে ‘আমাল করত (অসুস্থ অবস্থাও) তার ‘আমালনামায় তা লিখতে থাকো। যে পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হলে মালায়িকাহ-কে (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়, এ বান্দা নিয়মিত যে নেক কাজ করত, তা-ই তার ‘আমালনামায় লিখতে থাকো। এরপর তাকে আল্লাহ্‌ আরোগ্য দান করলে গুনাহখাতা হতে ধুয়ে পাকসাফ করে নেন। আর যদি তাকে উঠিয়ে নেন, তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমাত দান করেন। [১] জাবির ইবনু ‘আতীক (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শাহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। এরা হচ্ছে (১) মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (২) পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৩) ‘যা-তুল জানব’ রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৪) পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৬) কোন প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৭) প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারী মহিলা। [১] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নাবী! কোন সব লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নাবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দ্বীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দ্বীনদারীতে যে যত বেশি মজবুত হয় তার বিপদ-মুসীবাত তত বেশি কঠিন হয়। দ্বীনের ব্যাপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করতে থাকে। তার কোন গুনাহখাতা থাকে না। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মৃত্যু কষ্ট দেখেছি। তাই এরপর আর সহজভাবে মৃত্যু হতে দেখলে ঈর্ষা করি না। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি তাঁর মৃত্যুবরণ করার সময় দেখেছি। তাঁর কাছে একটি পানিভরা বাটি ছিল। এ বাটিতে তিনি বারবার হাত ডুবাতেন। তারপর হাত দিয়ে নিজের চেহারা মুছতেন ও বলতেন, হে আল্লাহ্‌! তুমি আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় সাহায্য করো। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে ভালবাসেন তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মু’মিন নারী-পুরুষের বিপদ মুসীবাত লেগেই থাকে, এই বিপদ মুসীবাত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান- সন্তুতির ব্যপারে হতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্তই তা চলতে থাকে। আর আল্লাহর সাথে তার মিলিত হবার পর তার উপর গুনাহের কোন বোঝাই থাকেনা। (তিরমিযী; মালিক (রহঃ) এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।) মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ আস্ সুলামী তাঁর দাদা বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর তরফ হতে কোন মানুষের জন্য যখন কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে ‘আমাল দিয়ে লাভ করতে পারে না, তখন আল্লাহ তাকে তার শরীরে অথবা তার সন্তান-সন্ততির উপর বিপদ ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করারও শক্তি দান করেন। যাতে সেরূপ মর্যাদা লাভ করতে পারে, যা আল্লাহর তরফ হতে তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত! [১] ‘আমির আর্ র-ম (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন অসুখ-বিসুখ প্রসঙ্গে বললেন, মু’মিনের অসুখ হলে পরিশেষে আল্লাহ তাকে আরোগ্য করেন। এ অসুখ তার জীবনের অতীত গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্। আর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। কিন্তু মুনাফিকের অসুখ-বিসুখ হলে তাকেও আরোগ্য দান করা হয়, সেই উটের মতো যাতে মালিক বেঁধে রেখেছিলো তারপর ছেড়ে দিলো। সে বুঝলো না কেন তাকে বেঁধে রেখেছিল। আর কেনইবা ছেড়ে দিলো। এ সময় এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, হে আল্লাহর রসূল! অসুখ-বিসুখ আবার কি? আল্লাহর শপথ আমার কোন সময় অসুখ হয়নি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাদের কাছ থেকে সরে যাও। তুমি আমাদের মধ্যে গণ্য নও। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন রোগীকে দেখতে গেলে, তার জীবনের ব্যাপারে তাকে সান্ত্বনা যোগাবে, এ সান্ত্বনা যদিও তার তাক্বদীর পরিবর্তন করতে পারবে না। কিন্তু তার মন প্রশান্তি লাভ করবে। [১] সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকে তার ‘পেটের অসুখ’ হত্যা করেছে, তাকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে না। [১]

【3】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী যুবক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক (ফেরেশতা) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন, সে অসুখের সময় একদিন ‘আলী (রাঃ) তাঁর কাছ থেকে বের হয়ে এলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আবু হাসান! আজ সকালে আল্লাহর রসূলের অবস্থা কেমন রয়েছে? ‘আলী (রাঃ) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ সকাল ভালই যাচ্ছে। [১] ‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে একবার বললেন, হে ‘আত্বা! আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এ কালো মহিলাটিকে দেখো। এ মহিলাটি একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত। রোগের ভয়াবহতার ফলে আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তার কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি চাও, সবর করতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর তুমি চাইলে, আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দু’আ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল করে দেন। জবাবে মহিলাটি বলল, আমি সবর করব। পুনরায় মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দু’আ করুন আমি যেন উলঙ্গ হয়ে না পড়ি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। [১] ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হলো। এ সময় আর এক ব্যক্তি মন্তব্য করল, লোকটির ভাগ্য ভাল। মারা গেল কিন্তু কোন রোগে ভুগতে হল না। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আহ্! তোমাকে কে বলল, লোকটির ভাগ্য ভাল? যদি আল্লাহ তা’আলা লোকটিকে কোন রোগে ফেলতেন, আর তার গুনাহ মাফ করে দিতেন তাহলেই না সবচেয়ে ভাল হতো! [১] শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রাঃ) একবার তাঁরা দু’জন এক রোগীকে দেখতে গেলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে? রোগীটি বলল, আল্লাহর রহ্‌মতে ভালই। তার কথা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ ও অপরাধ মাফ হবার শুভ সংবাদ! কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মু’মিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা হতে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে উঠবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দী করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দার গুনাহ যখন বেশী হয়ে যায় এবং এসব গুনাহের কাফ্‌ফারার মতো যথেষ্ট নেক ‘আমাল তার না থাকে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বিপদে ফেলে চিন্তাগ্রস্ত করেন। যাতে এ চিন্তাগ্রস্ততা তার গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্ হয়ে যায়। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহ্‌মাতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহ্‌মাতের সাগরে ডুব দেয়। [১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো জ্বর হলে জ্বর আগুনের অংশ, আগুনকে পানি দিয়ে নিভানো হয়। সে যেন ফাজ্‌রের সলাতের পর সূর্য উঠার আগে প্রবাহিত নদীতে ঝাঁপ দেয় আর ভাটার দিকে এগুতে থাকে। এরপর বলে, হে আল্লাহ! শেফা দান করো তোমার বান্দাকে। সত্যবাদী প্রমাণ করো তোমার রসূলকে। ওই ব্যক্তি যেন নদীতে তিনদিন তিনটি করে ডুব দেয়। এতে যদি তার জ্বর না সারে তবে পাঁচদিন। তাতেও না সারলে, সাতদিন। সাতদিনেও যদি আরোগ্য না হয় তাহলে নয়দিন। আল্লাহর রহমাতে জ্বর-এর অধিক আগে বাড়বে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একবার জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ সময় এক লোক জ্বরকে গালি দিলো। এ কথা শুনে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর গুনাহ দূর করে যেভাবে (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার এক অসু্স্থ লোককে দেখতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ! আল্লাহ তা’আলা বলেন, তা আমার আগুন। আমি দুনিয়াতে এ আগুনকে আমার মু’মিন বান্দার কাছে পাঠাই। তা’ এজন্যই যাতে এ আগুন ক্বিয়ামাতে তার জাহান্নামের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার মহান রব বলেন, আমার ইয্য্ত ও প্রতাপের শপথ, আমি ততক্ষণ কাউকে দুনিয়া হতে বের করে আনি না যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেবার ইচ্ছা করি। যতক্ষণ না তার ঘাড়ে থাকা প্রত্যেকটি গুনাহকে তার দেহের কোন রোগ অথবা রিয্‌ক্বের সংকীর্ণতা দিয়ে বিনিময় করে দিই। [১] শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) অসুস্থ হলে আমরা দেখতে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তা দেখে তাঁকে কেউ কেউ খারাপ বলতে লাগলেন। সে সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) বললেন, আমি অসুখের জন্য কাঁদছি না। আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অসুখ হচ্ছে গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্। আমি বরং কাঁদছি এজন্য যে, এ অসুখ হল আমার বৃদ্ধ বয়সে। আমার শক্তি-সামর্থ্য থাকার সময়ে হল না। কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয় তার জন্য সে সাওয়াব লেখা হয়, যা অসুস্থ হবার আগে তার জন্য লেখা হত। এজন্যই যে অসুস্থতা তাকে ওই ‘ইবাদাত করতে বাধা দেয়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগীকে (রোগগ্রস্ত হবার পর) তিনদিন না হওয়া পর্যন্ত দেখতে যেতেন না। [১] উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি কোন অসুস্থ লোককে দেখতে গেলে, তাকে তোমার জন্য দু’আ করতে বলবে। কারণ রুগ্ন লোকের দু’আ মালায়িকার (ফেরেশ্‌তাদের) দু’আর মতো। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রোগীকে দেখতে যাবার পর নিয়ম হলো, রোগীর কাছে বসা। তার কাছে উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলা। ইবনু ‘আব্বাস তাঁর এ কথার সমর্থনে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুশয্যায় তাঁর পাশে লোকেরা বেশি কথাবার্তা ও মতভেদ শুরু করলে তিনি বলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে সরে যাও। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগী দেখতে অল্প সময় নেবে। [১] সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব- রোগীকে দেখার উত্তম নিয়ম হলো তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি খেতে তোমার মন চায়? জবাবে সে বলল, গমের রূটি। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কাছে গমের রুটি আছে সে যেন তা তার ভাইয়ের জন্য পাঠায়। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের কোন রোগী কিছু খেতে চাইলে, তাকে তা খাওয়াবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মাদীনায় মারা গেলেন, মাদীনায়ই তার জন্ম হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযায় সলাত আদায় করালেন। তারপর তিনি বললেন, হায়! এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করত। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, কেন? হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, কোন লোক জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুস্থান ও জন্মস্থানের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফররত অবস্থায় মারা যায় সে শাহীদ। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রোগে ভুগে মারা যায়, সে শাহীদ হয়ে মারা গেল; তাকে ক্ববরের ফিতনাহ্ হতে রক্ষা করা হবে। এছাড়াও সকাল-সন্ধ্যায় তাকে জান্নাত থেকে রিয্‌ক্ব দেয়া হবে। [১] ‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাহীদগণ এবং যারা বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারীদের ব্যাপারে ঝগড়া করবে। শাহীদগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। কেননা আমাদেরকে যেভাবে নিহত করা হয়েছে, এভাবে এদেরকেও নিহত করা হয়েছে।” আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীগণ বলবে, “এরা আমাদের ভাই। এ লোকেরা এভাবে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যেভাবে আমরা মরেছি।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এদের জখমগুলোকে দেখা হোক। এদের জখম যদি শাহীদদের জখমের মতো হয়ে থাকে, তাহলে এরাও শাহীদদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সাথে থাকবে। বস্তুত যখন জখম দেখা হবে, তখন তা’ শাহীদদের জখমের মতো হবে। [১] জাবির (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ রোগ চড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব পাবে। [১]

【4】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারন সে নেক্কার হলে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে, (সে তাওবাহ করে) আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাসিল করার সুযোগ পাবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে আর তা আসার পূর্বে তাকে যেন আহ্বান না জানায়, কারন সে যখন মৃত্যুবরণ করবে তার ‘আমাল বন্ধ হয়ে যাবে। আর মু’মিনের হায়াত বাড়লে তার ভাল কাজই বৃদ্ধি পায়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কোন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা করতেই হয় তাহলে যেন সে বলে, “আল্ল-হুম্মা আহয়িনী মা-কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী ওয়াতা ওয়াফফানী ইযা-কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবনে আমার জন্য যতক্ষণ কল্যাণকর হয়, আমাকে বাঁচিয়ে রেখ। আর আমাকে মৃত্যুদান করো যদি মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর হয়।) [১] উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ‘আয়িশাহ অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হল। যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ‘আযাব ও তার পরিণতির ‘খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) “মৃত্যু হলো আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাতের অগ্রবর্তী”। [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক দিন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সামনে দিয়ে একটি জানাযাহ্‌ বহন করা হচ্ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জানাযাহ্‌ দেখে) বললেন, এ ব্যক্তি শান্তি পাবে, অথবা এর থেকে অন্যরা শান্তি পাবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসুল! শান্তি পাবে কে, অথবা ওই ব্যক্তি কে যার থেকে অন্যরা শান্তি পাবে? তিনি(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর মু’মিন বান্দা মৃত্যুর দারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট হতে আল্লাহর রহমাতের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে সে শান্তি পায়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে তার অনিষ্ট ও ফাসাদ হতে মানুষ, শহর-বন্দর গাছ-পালা ও জন্তু – জানোয়ার সবকিছুই শান্তি লাভ করে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা হাত দিয়ে আমার দু’কাঁধ ধরলেন। তারপর বললেন, দুনিয়ায় তুমি এমনভাবে থাকো, যেমন-তুমি একজন গরীব অথবা পথের পথিক। (এরপর থেকে) ইবনু ‘উমার (মানুষদেরকে) বলতেন, “সন্ধ্যা হলে আর সকালের অপেক্ষা করবে না। আর যখন সকাল হবে, সন্ধার অপেক্ষা করবে না। নিজের সুস্থতার সুযোগ গ্রহন করবে অসুস্থতার আগে ও জীবনের সুযোগ গ্রহন করবে মৃত্যুর আগে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মৃত্যুর তিনদিন আগে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভাল ধারণা পোষণ করা ছাড়া তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে। [১]

【5】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদেরকে উদ্দেশ করে) বললেন, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন মু’মিনদেরকে সর্বপ্রথম যে কথাটি বলবেন, তোমরা চাইলে আমি তা’ তোমাদের বলে দিতে পারি। আমরা বললাম, অবশ্যই বলবেন, হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, আল্লাহ মু’মিনদেরকে বলবেন, তোমরা কি আমার সাক্ষাৎকে ভালবাসতে? মু’মিনগণ আরয করবেন, হে আমাদের রব অবশ্যই (আমরা আপনার সাক্ষাতকে ভালবাসতাম)! আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা কেন আমার সাক্ষাতকে ভালবাসতে? মু’মিনরা বলবে, আমরা আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত কামনা করেছি, তাই। এ কথা শুনে আল্লাহ বলবেন, তোমাদের জন্য মাগফিরাত মঞ্জুর করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস, মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করো। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আল্লাহর সাথে লজ্জা করার মত লজ্জা করো। সহাবীগণ বললেন, আমরা আল্লাহর সাথে লজ্জা করছি, হে আল্লাহর রসূল! সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লজ্জার মতো লজ্জা এটা নয় যা তোমরা বলছ। বরং প্রকৃত লজ্জা এমন যে, যখন ব্যক্তি লজ্জার হাক্ব আদায় করে সে যেন মাথা ও মাথার সাথে যা কিছু আছে তার হিফাযত করে। পেট ও পেটের সাথে যা কিছু আছে তারও হিফাযত করে। তার উচিৎ মৃত্যু ও তার হাড়গুলো পঁচে গলে যাবার কথা স্মরন করে। যে ব্যক্তি পরকালের কল্যান চায়, সে যেন দুনিয়ার চাকচিক্য ও জৌলুশ ছেড়ে দেয়। অতএব, যে ব্যক্তি এসব কাজ করল, সে ব্যক্তিই আল্লাহ সাথে লজ্জার হাক্ব আদায় করল। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত্যু হল মু’মিনের উপহার। [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মু’মিন কপালের ঘামের সাথে মৃত্যুবরণ করে।[১] উবায়দুল্লাহ ইবনু খালিদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আকস্মিক মৃত্যু (আল্লাহর গযবের) পাকড়াও। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন এক যুবকের কাছে গেলেন। যুবকটি সে সময়ে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, এখন তোমার মনের অবস্থা কী? যুবকটি উত্তর দিলো, আমি আল্লাহর রহমাতের প্রত্যাশী হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু এরপরও আমি আমার গুনাহখাতার জন্য ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ সময়ে এ যুবকের মতো যে আল্লাহর বান্দার মনে ভয় ও আশার সঞ্চার হয় আল্লাহ তা’আলা তাকে তাই দান করেন, সে গুনাহকে ভয় করে এবং আশা পোষন করে। [১]

【6】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যু কামনা করো না। কেননা মৃত্যু যন্ত্রনা খুবই কঠিন জিনিস। মানুষের জীবন দীর্ঘ হওয়া নিশ্চয় সৌভাগ্যেরই ব্যাপার। আল্লাহ তা’আলা তাকে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে নেন। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলাম। তিনি আমাদের অনেক নসীহাত করলেন। আখিরাতের ভয় দেখিয়ে আমাদের মনকে বিগলিত করে ফেললেন। এ অবস্থায় সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস কাঁদতে লাগলেন এবং বেশ কতক্ষন কাঁদলেন। তারপর বললেন, হায়! আমি যদি (শিশুকালেই) মারা যেতাম (তাহলে তো গুনাহ করতাম না আখিরাতের ‘আযাব হতেও মুক্ত থাকতাম)। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে সা’দ! তুমি আমার সামনে মৃত্যু কামনা করলে? এ বাক্যটি তিনি তিনবার বললেন। তারপর তিনি বললেন, সা’দ! তোমাকে যদি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়ে থাকে, তাহলে তোমার বয়স যত দীর্ঘ হবে এবং যত ভাল ‘আমাল তুমি করবে ততই তোমার জন্য উত্তম হবে। [১] হারিসাহ্ ইবনু মুযাররাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার খাব্বাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম (সে সময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন)। তিনি তার শরীরের সাত জায়গায় দাগ লাগিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ‘তোমরা মৃত্যু কামনা করো না’ কথাটি না শুনতাম, তাহলে অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমার নিজেকে এরুপ পেয়েছি যে, আমি একটি দিরহামেরও মালিক ছিলাম না। আর এখন আমার ঘরের কোণেই চল্লিশ হাজার দিরহাম পড়ে আছে। হারিসাহ বলেন, তারপর খাবাব্বের কাছে তার কাফনের কাপড় আনা হলো (যা খুবই উত্তম দামী কাপড় ছিল) তিনি তা দেখে কাঁদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, যদিও এ কাপড় জায়িয কিন্তু হামযাহ (রাঃ)-এর জন্য পুরো কাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি। শুধু একটি কালো ও সাদা পুরাতন চাদর ছিল। তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খালি হয়ে যেত। আবার পা ঢাকলে মাথা খালি হয়ে যেত। অবশেষে এ চাদর দিয়েই মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। আর পা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল ইযখার ঘাস দিয়ে। [১]

【7】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাকে কালিমায়ে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন,রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে কিংবা কোন মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তোমরা তখন যা বলো, (তা’ শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলেন। (মুসলিম) [১] উম্মুল মু’মিনীন সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম (কোন ছোট-বড়) বিপদে পতিত হয় এবং আল্লাহ তা’আয়ালার ইচ্ছা হলে এ কথাগুলো বলে, “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলায়হি র-জি’ঊন [অর্থাৎ “আমরা আল্লাহ্‌রই জন্য এবং তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন”-(সূরাহ্ আল বাক্বারাহ ২ : ১৫৬)]।“ আল্ল-হুম্মা আজির্‌নী ফী মুসীবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খয়রাম মিন্হা” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার বিপদের জন্য আমাকে সওয়াব দাও। আর [এ বিপদে] যা আমি হারিয়েছি তার জন্য উত্তম বিনিময় আমাকে দান করো) আল্লাহ তা’আলা তাকে এ জিনিসের উত্তম বিনিময় দান করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন আবূ সালামাহ্ (অর্থাৎ তাঁর স্বামী) মারা গেলেন, আমি বললাম, “আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে উত্তম কোন মুসলিম হতে পারে? এ আবূ সালামাহ্, যিনি সকলের আগে সপরিবারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হিজরত করেছেন। তারপর আমি উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়েছিলাম। বস্তুত আল্লাহ তা’আলা আমাকে আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করেছেন (অর্থাৎ তাঁর সাথে উম্মু সালামার বিয়ে হয়েছে)। (মুসলিম)[১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামার কাছে আসলেন যখন তাঁর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রুহ কবয করা হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। আবূ সালামার পরিবার (এ কথা শুনে বুঝল, আবূ সালামাহ ইন্তিকাল করেছেন) কাঁদতে ও চিল্লাতে লাগল। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা মাইয়্যিতের জন্য কল্যাণের দু’আ করো। কারণ তোমরা ভাল মন্দ যে দু’আই করো (তা ’শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ বলে। তারপর তিনি এ দু’আ পাঠ করলেন, “ আল্ল-হুম্মাগফির লিয়াবী সালামাহ, ওয়ারফা’ দারাজতাহূ ফিল মাহ্দীয়্যিন, ওয়াখ্লুফ্হু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগ্ফির লানা-ওয়ালাহূ ইয়া-রব্বাল আ’-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী ক্বব্‌রিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য ক্ববরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।)। (মুসলিম) [১] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।” (বুখারী,মুসলিম) [১]

【8】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবূ দাঊদ) [১] মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ’উসমান ইবনু মায’উন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন, এমনকি তাঁর চোখের পানি ‘উসমানের চেহারায় টপকে টপকে পড়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বাক্‌র সিদ্দীক্ব রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তাঁকে (চেহারা মুবারাকে) চুমু খেয়েছিলেন। (তিরমিযী,ইবনু মাজাহ্) [১] হুসায়ন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, ত্বলহাহ্ ইবনু বারা অসুস্থ হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখোতে গেলেন। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে বললেন, আমার মনে হচ্ছে ত্বলহার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অতএব তার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাকে খবর দিবে (যাতে আমি জানাযাহ্ আদায়ের জন্য আসতে পারি) আর তোমরা তার দাফন-কাফনের কাজ তাড়াতাড়ি করবে। কারণ মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে বেশীক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়। (আবূ দাঊদ) [১]

【9】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যুপথযাত্রীকে এ কালিমার তালকীন দেবে, “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল হালীমুল কারীম, সবুহা-নাল্ল-হি রব্বিল ‘আরশিল ‘আযীম, আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন”। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসুল! সুস্থ জীবিত ব্যক্তিদেরকে এ কালিমা শিখানো কেমন? তিনি বললেন, খুব উত্তম। খুব উত্তম।(ইবনু মাজাহ্) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট (ফেরেশতাগণ) আগমন করেন। যদি সে ব্যক্তি নেক ও সালিহ হয় মালাকগণ বলেন, পবিত্র দেহে অবস্থানকারী হে পবিত্র নাফ্স! বের হয়ে আসো। আল্লাহ ও মাখলূক্বের নিকট তুমি প্রশংসিত হয়েছ। তোমার জন্য আনন্দ ও প্রশান্তির, জান্নাতের পবিত্র রিয্ক্বের, আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের শুভ সংবাদ, আল্লাহ তোমার ওপরে রাগান্বিত নন। তার নিকট মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অনবরত এ কথা বলতে থাকবেন যে পর্যন্ত রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর মালায়িকাহ্ তা নিয়ে আকাশের দিকে চলে যাবেন। আকাশের দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয়, যেখানে আল্লাহ আছেন। আর যদি লোকটা খারাপ হয় (অর্থাৎ কাফির হয়) তখন রূহ কবয করার মালাক (ফেরেশতা) বলেন, হে খবীস আত্মা যা খবীস শরীরে ছিলে, এ অবস্থায়ই শরীর হতে বের হয়ে এসো। তোমার জন্য গরম পানি, পুঁজ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট আহারের সুসংবাদ। এই মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে বার বার মালায়িকাহ্ এ কথা বলতে থাকবে, যে পর্যন্ত তার রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর তারা তার রূহকে আসমানের দিকে নিয়ে যাবে। তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি কে? জবাব দেয়া হবে , ‘অমুক ব্যক্তি’। এবার বলা হবে, এ খবীস জীবনের জন্য কোন স্বাগতম নেই,যা অপবিত্র দেহে ছিল। তুমি ফিরে চলে যাও, তোমার বদনাম করা হয়েছে। তোমার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হবে না। বস্তুত তাকে আসমান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং সে ক্ববরের মধ্যে এসে পড়বে। (ইবনে মাজাহ্) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মুমিনদের রূহ (তার শরীর থেকে) বের হয়, তখন দু’জন মালাক (ফেরেশতা) তার কাছে আসেন, তাকে নিয়ে আকাশের দিকে রওনা হন। পরবর্তী রাবী হাম্মাদ বলেন, এরপর তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) ঐ ব্যক্তির রূহের খুশবু ও মিস্‌কের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন আকাশবাসীরা বলবে, পাক-পবিত্র রূহ জমিন হতে এসেছে। তারপর তার রূহকে উদ্দেশ করে বলবে, তোমার ওপর আল্লাহ রহ্‌মাত করুন এবং শরীরের প্রতি, কারণ তুমি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছ। এরপর এরা একে আল্লাহর কাছে আর্‌শে আযীমে নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ হুকুম দেবেন, তাকে নিয়ে যাও, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কাফির ব্যক্তির রূহ তার শরীর থেকে বের করে আনা হয়, অতঃপর তিনি তার দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ করলেন। তার প্রতি লা'নাতের উল্লেখ করলেন। তারপর বললেন, যখন তাদের রূহ আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে তখন আকাশবাসী বলেন, একটি নাপাক রূহ জমিন হতে এসেছে, তাকে নিয়ে যাও এবং কিয়ামাত পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদরের কোণা তার নাকের উপর টেনে দিলেন (যেন দুর্গন্ধ হতে বাঁচতে চাইলেন)। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মুমিনের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে আসেন এবং রূহকে বলেন, তুমি আল্লাহ তা'আলার ওপর সন্তুষ্ট, আল্লাহও তোমার ওপর সন্তুষ্ট এ অবস্থায় দেহ হতে বেরিয়ে এসো এবং আল্লাহ তা'আলার করুণা, উত্তম রিয্‌ক্ব ও পরওয়ারদিগারের দিকে চলো। তিনি তোমার ওপর রাগাম্বিত নন। বস্তুতঃ মিস্কের খুশবুর মতো রূহ দেহ হতে বেরিয়ে আসে। মালাকগণ সম্মানের সাথে তাকে হাতে হাতে নিয়ে চলে। এমনকি আসমানের দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসে। ওখানে মালাকগণ পরস্পর বলাবলি করেন, কি পবিত্র খুশবু জমিনের দিক হতে আসছে। তারপর তাকে মুমিনদের রূহের কাছে (ইল্লয়্যিনে) আনা হয়। ওই রূহগুলো এ রূহটিকে দেখে এভাবে খুশী হয়ে যায়, যেভাবে তোমাদের কেউ (সফর হতে ফিরে এলে তোমরা) এ সময় খুশী হও। তারপর সব রূহ এ রূহটিকে জিজ্ঞেস করে অমুক কি করে? অমুক কি করে তারা নিজেরা আবার বলাবলি করে, এখন এ রূহকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কিছু জিজ্ঞেস করো না)। এখন যে দুনিয়ার শোকতাপে আছে। তারপর একটু স্বস্তির পরে (সে নিজেই বলে) অমুক ব্যক্তি যার সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞেস করেছিলে, সে মরে গেছে। সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? রূহগুলো বলে, তাকে তো তার (উপযুক্ত স্থান) হাবিয়্যাহ্ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (ঠিক এভাবে কোন কফিরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার কাছে আযাবের মালাক (ফেরেশতা) শক্ত চটের বিছানা নিয়ে আসেন। আর তার রূহকে বলেন, হে রূহ। আল্লাহর আযাবের দিকে বেরিয়ে এসো। এ অবস্থায় যে, তুমি আল্লাহর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলে, তিনিও তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট। তারপর রূহ তার (কাফির ব্যক্তির) দেহ থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসবে। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) একে জমিনের দরজার দিকে নিয়ে যাবে। সেখানে মালায়িকাহ্ বলবে, কত খারাপ এ দুর্গন্ধ। তারপর এ রূহটিকে কাফিরদের রূহের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। (আহমাদ, নাসায়ী) [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় ক্ববরের কাছে গেলাম। (তখনো ক্ববর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ ক্ববরস্থ করা হয়নি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ক্ববরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মুমিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য। তাদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম। আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সস্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ কথা শুনে মুমিন বান্দার রূহ তার দেহ হতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হতে পানির ফোটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ 'পবিত্র রূহ কার' জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত , পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) আল্লাহ তা'আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ইল্লীয়্যিনে' লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে (ক্ববরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে ক্ববরের) সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু'জন মালাক (ফেরেশতা) (মুনকির নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব 'আল্লাহ। আবার তারা দু'জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দ্বীন ইসলাম। আবার তারা দু মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব' পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী (আল্লাহ) আহ্বান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার ক্ববরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়া'দা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক আমাল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ। তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে আযাবের মালায়িকা নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা আল্লাহর আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হতে টেনে বের করা হয় (আর এতে পশম আটকে থাকে)। মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিশিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুৰ্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সস্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দলীল হিসেবে) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (অনুবাদ) "ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।" এবার আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তার ‘আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্তুত কাফিরদের রূহ (নিচে) নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, "(অনুবাদ) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়)। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে (উড়িয়ে নিয়ে) দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। (অর্থাৎ আল্লাহর রহ্মাত থেকে দূরে সরে যায়)।" রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) দু'জন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার রব কে? (সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে) বলবে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তারপর তারা দুজন জিজ্ঞেস করবেন, “তোমার দ্বীন কি?" সে (কাফির ব্যক্তি) বলবে, "হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তারপর তারা দু'জন জিজ্ঞেস করেন, “এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?" সে বলে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।" তখন আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। (তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে) জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তার ক্ববরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, (দু’পাশ মিলে যাবার পর) তার পাঁজরের এদিকের (হাড়গুলো) ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে। তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। এ কুৎসিত লোকটি (ক্ববরে শায়িত লোকটিকে) বলতে থাকবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়াদা (দুনিয়ায়) তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন (ভাল) খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, “আমি তোমার বদ আমাল"৷ এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার। "তুমি ক্বিয়ামাত ক্বায়িম করো না।" আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার (মুমিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহ্‌মাত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তা'আলার কাছে এ মুমিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় (যাতে এ মালাক মুমিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারে।) আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন। আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ (আল্লাহর নিকট) আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়। (আহ্‌মাদ)" [১] আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, (আমার পিতা) কা’ব-এর মৃত্যু আসন্ন হলে ইবনু মা’রূর-এর কন্যা উম্মু বিশ্র (রাঃ) তার কাছে এলেন এবং বলতে লাগলেন, হে আবূ আবদুর রহমান (কা’ব-এর ডাক নাম) আপনি মৃত্যুবরণ করার পর (আলামে বারযাখে) অমুক ব্যক্তির সাথে দেখা হলে তাকে আমাদের সালাম বলবেন। এ কথা শুনে কা'ব বললেন, হে উম্মু বিশ্র! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। ওখানে আমার সবচেয়ে বেশী ব্যস্ততা থাকবে। তখন উম্মু বিশ্‌র (রাঃ) বললেন, হে আবূ আবদুর রহ্মান। আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেননি? আলামে বারযাখে মু’মিনদের রূহ সবুজ পাখির ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ হতে ফল-ফলাদি খেতে থাকবে। কা'ব বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি। উম্মু বিশ্র (রাঃ) বললেন, এটাই হলো (তাই আপনি এ মর্যাদা পাবেন বলে আশা করা যায়)। (ইবনু মাজাহ্, বায়হাক্বী- কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশুর)” [১] ‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মুমিনের রূহ (আলামে বার্যাখে) পাখীর ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ থেকে ফল-ফলাদি খেতে থাকবে যে পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা (তাকে উঠাবার দিন) এ রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে না দেন (অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের দিন)।" (মালিক, নাসায়ী, বায়হাক্বী- কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশূর)" [১] মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) তিনি বলেন, আমি (একবার) জাবির ইবনু আবদুল্লাহর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। আমি তাঁর কাছে আরয করলাম, (আপনি আলামে বার্যাখে পৌঁছে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার সালাম দেবেন।" (ইবনু মাজাহ্) [১]

【10】

প্রথম অনুচ্ছেদ

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ‘কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযুর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)" [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিন কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। যা সাহুলিয়্যাহ্ সাদা সূতি কাপড় সাদা ইয়ামানী। এতে কোন সেলাই করা কুর্তা ছিল না, পাগড়ীও ছিল না। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন তোমাদের কোন ভাইকে কাফন দিবে তখন উচিত হবে উত্তম কাফন দেয়া। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেক না। কারণ তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ‘লাব্বায়ক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (বুখারী, মুসলিম) [৬৭৭] মুস’আব ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) এর নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কিত খব্বাব (রাঃ)-এর হাদীসটি আমরা অচিরেই “সাহাবীগণের মর্যাদা” অধ্যায়ে উল্লেখ করব ইন্শা-আল্লা-হ। [১]

【11】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে, কারণ সাদা কাপড়ই সবচেয়ে ভাল। আর মুর্দাকে সাদা কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। তোমাদের জন্য সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ কারণ এ সুরমা ব্যবহারে তোমাদের চোখের পাপড়ি নতুন করে গজায় ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাফনে খুব বেশী মূল্যবান কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ এ কাপড় খুব তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে যায়। (আবূ দাঊদ) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন তিনি নতুন কাপড় আনালেন এবং তা পরিধান করলেন। তারপর বললেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মুর্দাকে (হাশরের দিন) সে কাপড়েই উঠানো হবে, যে কাপড়ে সে মৃত্যুবরণ করে। (আবূ দাঊদ) [১] উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম ‘কাফন’ হলো “হুল্লাহ্”, আর সর্বোত্তম কুরবানীর পশু হলো শিংওয়ালা দুম্বা। (আবূ দাঊদ) [১] তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্ আবূ উমামাহ্ (রা.) হতে। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ যুদ্ধের ‘শহীদদের’ শরীর থেকে লোহা, (হাতিয়ার, শিরস্ত্রাণ) চামড়া ইত্যাদি (যা রক্তমাখা নয়) খুলে ফেলার ও তাদেরকে তাদের রক্ত ও রক্তমাখা কাপড়-চোপড়সহ দাফন করতে নির্দেশ দেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১]

【12】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

সা‘দ ইবনু ইব্রাহীম তিনি তাঁর পিতা ইব্‌রাহীম (রাঃ) হতে বর্ননা করেছেন যে, একবার ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) সওম রেখেছিলেন। (সন্ধ্যায়) তাঁর খাবার আনানো হলো। তিনি বললেন উহুদ যুদ্ধের শাহীদ মুস্‘আব ইবনু ‘উমায়র (রাঃ) আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু তাঁকে শুধু একটি চাদর দিয়ে দাফন করা হয়েছিল। এটা এমনই খাটো ছিল যে, যদি মাথা ঢাকা হত পা খুলে যেত আর পা ঢাকা হলে মাথা খুলে যেত। (সর্বশেষে [চাদর দিয়ে] তার মাথা ঢেকে পাগুলোর উপর ‘ইযখির’ [ঘাস] দেয়া হয়েছিল)। (হাদীসের রাবী) ইব্‌রাহীম বলেন, আমার মনে হয় ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ এ কথাও বলেছেন, (উহুদের) আরেক শাহীদ হামযাহ্ও আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। (মুস্‘আব-এর মতো) তাঁরও এক চাদরে দাফন নাসীব হয়েছিল। (এখন মুসলিমদের দরিদ্র আল্লাহর ফযলে দূর হয়েছে) আমাদের জন্য এখন দুনিয়া বেশ প্রশস্ত হয়েছে, যা দৃশ্যমান। অথবা তিনি বলেছেন, “দুনিয়া এখন আমাদেরকে এতই পর্যাপ্ত পরিমাণে দেয়া হয়েছে যে, আমার ভয় হয় আমাদের নেক কাজের বিনিময় ফল আমরা মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই পেয়ে যাই কিনা। অতঃপর ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু আওফ কাঁদতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত সামনের খাবারই ছেড়ে দিলেন। (বুখারী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মুনাফিক্ব দলপতি ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ক্ববরে নামাবার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে ক্ববর থেকে উঠাবার নির্দেশ দিলেন। ক্ববর থেকে উঠাবার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর দু‘হাঁটুর উপর রাখলেন। নিজের মুখের পবিত্র থুথু তার মুখে দিলেন। নিজের জামা তাকে পরালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ‘আব্বাস (রাঃ) কে তার নিজের জামা পরিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]

【13】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সলাত তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জানাযাহ্ খাটিয়ায় রাখার পর লোকেরা যখন তাকে কাঁধে নেয় যে জানাযাহ্ যদি নেক লোকের হয় তাহলে সে বলে আমাকে (আমার মঞ্জীলের দিকে) তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো। আর যদি বদ লোকের হয়, সে (তার নিজ লোকদেরকে) বলে, হায়! হায়! আমাকে কোথায় নিয়ে চলছ। মুর্দারের কথার এ আওয়াজ মানুষ ছাড়া সবাই শুনে। যদি মানুষ এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে পড়ে যেত। (বুখারী) [১] রাবী (আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন লাশ দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। যারা জানাযার সাথে থাকে তারা যেন (জানাযাহ্ লোকদের কাঁধ থেকে মাটিতে অথবা ক্ববরে) রাখার আগে না বসে। (বুখারী, মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একটি জানাযাহ্ যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তার সাথে দাঁড়ালাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো এক ইয়াহুদী মহিলার জানাযাহ্। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন। মৃত্যু একটি ভীতিকর বিষয়। অতএব যখনই তোমরা জানাযাহ্ দেখবে দাঁড়িয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতে দেখলাম। আমরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বসলে আমরাও বসলাম। (মুসলিম, ইমাম মালিক ও আবূ দাঊদের বর্ণনার ভাষ্য হলো, তিনি জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতেন, তারপর বসতেন।) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহ্তিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সলাত আদায় করে ক্ববরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু' ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সলাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সহাবা কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সলাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) সলাতুল জানাযায় চার তাকবীর বলতেন। এক জানাযায় তিনি পাঁচ তাকবীরও বললেন। আমরা তখন তাঁকে (এর কারণ) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন। (মুসলিম) [১] ত্বলহাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সলাত আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (বুখারী) [১] ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক জানাযার সলাত আদায় করলেন। জানাযায় যেসব দু'আ তিনি পড়েছেন তা আমি মুখস্থ করে রেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “আল্ল-হুম্মাগ্ফির লাহ্ ওয়ার্হাম্হু ওয়া ’আ-ফিহী ওয়া’ফু আন্হু ওয়া আক্রিম নুযুলাহু ওয়া ওয়াস্সি' মু্দ্খলাহু ওয়াগ্সিল্হু বিলমা-য়ি ওয়াস্সালজি ওয়াল বারাদি ওয়ানাক্বিহী মিনাল খত্বা-ইয়া-কামা-নাক্কায়সাস্ সাওবাল আব্ইয়াযা মিনাদ্ দানাসি ওয়া আব্দিলহু দা-রান্ খয়রাম্ মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খয়রাম্ মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খয়রাম্ মিন যাওজিহী ওয়া আদ্খিলহুল ওয়াআ ’ইযহু মিন ’আযা-বিল ক্বব্রি ওয়ামিন আযা-বান্ না-র" (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে নিরাপদে রাখো। তার ভুল-ত্রূটি ক্ষমা করো, তাকে উত্তম মেহমানদারী করো (জান্নাতে), তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও ঠাণ্ডা (পানি) দিয়ে গোসল করাও। গুনাহখাতা হতে তাকে পবিত্র করো, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করো। তাকে (দুনিয়ার) তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর (জান্নাতে) দান করো, তার পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবারও দান করো। (দুনিয়ার) স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী (আখিরাতে) তাকে দিও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, তাকে ক্ববরের আযাব এবং জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো।")। অপর এক বর্ণনার ভাষায়- “ওয়াক্বহী ফিত্নাতাল ক্ববরি ওয়া ’আযা-বান্ না-র" (অর্থাৎ ক্ববরের ফিতনাহ্ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাও)। এ দু'আ শুনার পর আমার বাসনা জাগলো, এ মৃত ব্যক্তি যদি আমি হতাম। (মুসলিম) [১] আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে (তাঁর লাশ বাড়ী হতে দাফনের জন্য আনার পর) আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তার জানাযাহ্ মসজিদে আনো, তাহলে আমিও জানাযাহ্ আদায় করতে পারব। লোকেরা (জানাযাহ্ মাসজিদে আনতে) অস্বীকার করলেন (কারণ তারা ভাবলেন, মসজিদে জানাযার সলাত কিভাবে আদায় করা যেতে পারে)। তখন আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বায়যা' নামী মহিলার দু'ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার সলাত মসজিদে আদায় করিয়েছেন। (মুসলিম) [১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে এক মহিলার জানাযার সলাত আদায় করেছি। মহিলাটি নিফাস অবস্থায় মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ক্ববরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জানাযার সলাত আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা অথবা একটি যুবক (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মাসজিদে নবাবী ঝাড়ু দিত। একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে পেলেন না। তিনি সে মহিলা অথবা যুবকটির খোঁজ নিলেন। লোকেরা বলল, সে ইন্তিকাল করেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? (তাহলে আমিও জানাযায় শরীক থাকতাম)। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা এ মহিলার বা যুবকের বিষয়টিকে ছোট বা তুচ্ছ ভেবেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে কোথায় ক্ববর দেয়া হয়েছে আমাকে দেখাও। তারা তাঁকে ক্ববর দেখিয়ে দিল। তখন তিনি তার (কাছে গেলেন ও) ক্ববরে জানাযার সলাত আদায় করালেন, তারপর বললেন, এ ক্ববরগুলো এর অধিবাসীদের জন্য ঘন অন্ধকারে ভরা ছিল। আর আমার সলাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তা’আলা এগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম; এ হাদীসের ভাষা মুসলিমের) [১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ইবনু আব্বাস-এর এক ছেলে (মাক্কার নিকটবর্তী) ’কুদায়দ’ অথবা ’উসফান’ নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসেবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে সলাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রাসূলুল্লা্হ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার সলাত আদায় করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবুল করেন। (মুসলিম) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সলাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা’আত (মাগফিরাত) কামনা করবে। তাহলে তার জন্য তাদের এ শাফাআত (কবূল) হয়ে যাবে। (মুসলিম) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (একবার) এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। (ঠিক) এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ‘‘উমার জানতে চাইলেন। কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? (হে আল্লাহর রাসূল!) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারী, মুসলিম; অন্য আর এক বর্ণনার ভাষা হলো তিনি বলেছেন, মু’মিন আল্লহ তা’আলার সাক্ষী)। [১] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তির ভাল হবার ব্যাপারে চারজন লোক সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা আরয করলাম, যদি তিনজন (সাক্ষ্য দেয়)। তিনি বললেন, তিনজন দিলেও। আমরা (আবার) আরয করলাম, যদি দু’জন সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। তারপর আমরা আর একজনের (সাক্ষ্যের) ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। (বুখারী) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা নিশ্চিতভাবে তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে। (বুখারী) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের দু’ দু’জনকে এক কাপড়ে জমা করেন। তারপর বলেন, কুরআন মজীদ এদের কারো বেশী মুখস্থ ছিল? এরপর দু’জনের যার বেশী কুরআন মুখস্থ আছে বলে ইশারা করা হয়েছে, তাকে আগে ক্ববরে রাখেন এবং বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন আমি এদের জন্য সাক্ষ্য দিব। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে দাফন করার নির্দেশ দেন। তাদের জানাযার সলাতও আদায় করেননি গোসলও দেয়া হয়নি। (বুখারী) [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জীন ছাড়া একটি ঘোড়া আনা হলো। (এ অবস্থায়ই) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার উপর আরোহণ করলেন। এরপর ইবনু দাহ্দাহ (রাঃ)-এর জানাযার সলাত সেরে তিনি ফিরে এলেন। আমরা তাঁর চারপাশে পায়ে হেঁটে চলছিলাম। (মুসলিম) [১]

【14】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী চলবে জানাযার পশ্চাতে এবং পায়ে হাঁটা ব্যক্তিরা চলবে জানাযার সামনে পেছনে ডানে-বামে জানাযার কাছ ঘেষে। আর অকালে ভূমিষ্ট বাচ্চার সলাত আদায় করবে, তাদের মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রাহ্মাতের দু’আ করবে। (আবূ দাঊদ) [১] ইমাম আহ্মাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্-এর এক বর্ণনায় রাবী বলেছেন, আরোহীরা জানাযার পেছনে থাকবে। আর পায়ে চলা ব্যক্তির আগেপিছে যেভাবে পারে হাঁটবে। মৃত ছোট বাচ্চাদের জন্যও জানাযার সলাত আদায় করতে হবে। মাসাবীহ হতে এ বর্ণনাটি মুগীরাহ্ ইবনু যিয়াদ বর্ণনা করেছেন। যুহরী (রহঃ) তিনি বর্ণনা করেছেন সালিম (রহঃ) থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র, ‘উমারকে জানাযার আগে আগে হেঁটে চলতে দেখেছি। (আহ্মাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্, ইমাম তিরমিয়ী বলেনঃ আহলুল হাদীসগণ যেন হাদীসটি মুরসাল মনে করেছেন [কিন্তু হাদীসটি সহীহ]) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লাশের অনুসরণ করতে হয়। লাশ কারো অনুসরণ করে না। যে ব্যক্তি জানাযায় লাশের আগে যাবে সে জানাযার সাথের লোক নয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্, ইমাম তিরমিযী বলেন, বর্ণনাকারী আবূ মাজিদ মাজহুল [অজ্ঞাত লোক])। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাযার অনুসরণ করেছে এবং জীবনে তিনবার জানাযার লাশ বহন করেছে সে এ ব্যাপারে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করেছে। (তিরমিযী; তিনি [তিরমিযী] বলেছেন, হাদীসটি গরীব)। [১] আর শারহুস্ সুন্নাহ্’য় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা'দ ইবনু মুআয (রাঃ)-এর লাশ দু' কাঠের মাঝে ধরে বহন করেছেন। [১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা (একদিন) এক ব্যক্তির জানাযাহ্ সলাতের জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বের হলাম। তিনি কিছু লোককে আরোহী অবস্থায় দেখে বললেন, তোমাদের কি লজ্জাবোধ হচ্ছে না? আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশ্তাগণ) নিজেদের পায়ে হেঁটে চলেছেন, আর তোমরা পশুর পিঠে বসে যাচ্ছ? (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি সাওবান থেকে মাওকুফ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।)[১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জানাযার সলাত আদায়ের সময় মৃত ব্যক্তির জন্য খালেস অন্তরে দু’আ করবে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাযার সলাত আদায় করতেন, তখন বলতেন, "আল্ল-হুম্মাগ ফির্লি হাইয়্যিনা-, ওয়া মাইয়্যিতিনা-, ওয়া শা-হিদিনা, ওয়া গ-য়িবিনা-, ওয়া সগীরিনা-, ওয়া কাবীরিনা- ওয়া যাকারিনা-, ওয়া উন্সা-না-, আল্ল-হুম্মা মান আহ্ ইয়াইতাহ মিন্না- ফা আহ্য়িহী 'আলাল ইসলা-ম, ওয়ামান তাওয়াফ্ ফায়তাহ্ মিন্না- ফাতা ওয়াফ্ফাহূ ’আলাল ঈ-মান, আল্ল-হুম্মা লা- তাহরিমনা- আজরাহু ওয়ালা- তাফতিন্না বা’দাহ্” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারীগণকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাদেরকে তুমি জীবিত রাখবে তাদেরকে তুমি ইসলাম ধর্মের উপর জীবিত রাখ। আর যাদের মৃত্যুদান করবে তাদের ঈমানের উপর মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির সাওয়াব হতে বঞ্চিত করো না এবং এরপর আমাদেরকে বিপদাপন্ন করো না )। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)। [১] ইমাম নাসায়ী, ইব্রাহীম আল আশহালী তিনি তার পিতা হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি, “ওয়া উন্সা-না-" পর্যন্ত তার কথা শেষ করেছেন- আর আবূ দাঊদের বর্ণনায়, "ফাআহ্য়িহী 'আলাল ঈমা-ন ওয়াতা ওয়াফ্ফাহু ’আলাল ইস্লা-ম, ওয়ালা- তুযিল্লানা- বা’দাহু" উল্লেখ আছে। [১] ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে একজন মুসলিম ব্যক্তির জানাযাহ্ সলাতে ইমামাত করলেন। আমরা তাঁকে (এ সলাতে) পড়তে শুনেছি, "আল্ল-হুম্মা ইন্না ফুলা-ন ইবনু ফুলা-ন ফী যিম্মাতিকা, ওয়া হাব্লি জাওয়া-রিকা ফাক্বিহী মিন ফিত্নাতিল ক্বব্রি ওয়া ’আযা-বিন্না-র, ওয়া আন্তা আহ্লুল ওফা-য়ি ওয়াল হাক্বি, আল্ল-হুম্মাগ্ফির লাহু ওয়ার্হাম্হ, ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রহীম" (অর্থাৎ হে আল্লাহ! অমুকের ছেলে অমুককে তোমার যিম্মায় ও তোমার প্রতিবেশীসুলভ নিরাপত্তায় সোপর্দ করলাম। অতএব তুমি তাকে ক্ববরের ফিত্নাহ্ ও জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো। তুমি ওয়া’দা রক্ষাকারী ও সত্যের অধিকারী। হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহ্মাত বর্ষণ করো, তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াময় )। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভাল গুণগুলোই আলোচনা করো, তাদের খারাপ গুণ বা কাজগুলোর আলোচনা হতে বিরত থাকো। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) [১] নাফি‘ আবূ গালিব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সাথে এক জানাযায় (‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘‘উমার-এর ) সলাত আদায় করেছি। তিনি (আনাস (রাঃ) ) (জানাযার) মাথার বরাবর দাঁড়ালেন। এরপর লোকেরা কুরাইশ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে এলেন এবং বললেন, হে আবূ হামযাহ্‌ (এটা আনাসের ডাক নাম) এর জানাযার সলাত আদায় করে দিন। (এ কথা শুনে) আনাস খাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জানাযার সলাত আদায় করে দিলেন। এটা দেখে ‘আলা ইবনু যিয়াদ বললেন, আপনি কি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবে দাঁড়িয়ে সলাতে জানাযাহ্‌ আদায় করতে দেখেছেন, যেভাবে আপনি এ মহিলার সলাত মাঝখানে দাঁড়িয়ে ও পুরুষটির জানাযাহ্‌ মাথার কাছে দাঁড়িয়ে পড়লেন? আনাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্; ইমাম আবূ দাঊদ এ হাদীসটিকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে, “মহিলার জানাযায় তার খাটের মধ্যভাগে দাঁড়িয়েছিলেন” উল্লেখ করেছেন।) [১]

【15】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, (একদিন) সাহ্‌ল ইবনু হুনায়ফ ও ক্বায়স ইবনু সা‘দ (রাঃ) ক্বাদিসিয়্যাহ্‌ নামক স্থানে বসেছিলেন। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানযাহ্‌ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা দেখে তারা উভয়েই দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের (দাঁড়াতে দেখে) বলা হলো, এ জানযাহ্‌ জমিনবাসীর অর্থাৎ যিম্মির। তখন উভয় সাহাবী বললেন, (তাতে কি হয়েছে? এভাবে একদিন) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে দিয়েও একটি জানাযাহ্‌ যাচ্ছিল। তা দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁকেও বলা হয়েছিল, ‘এটা একজন ইয়াহূদীর জানযাহ্।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, সে মানুষ নয়? (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জানাযার সাথে গেলে যতক্ষণ পর্যন্ত তা’ ক্ববরে রাখা না হত ততক্ষণ বসতেন না। একবার এক ইয়াহূদী ‘আলিম রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এসে আরয করল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমরাও এরূপ করি।’ অর্থাৎ মুর্দা ক্ববরে রাখার আগে বসি না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর থেকে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জানাযাহ্‌ ক্ববরে রাখা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন না) বসে যেতেন। তিনি বলতেন, তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত করবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। বিশ্‌র ইবনু রাফি‘ বর্ণনাকারী হিসেবে শক্তিশালী নয়।)[১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রথম দিকে) আমাদেরকে জানাযাহ্‌ দেখলে দাঁড়িয়ে যেতে বলেছেন। (পরে) তিনি নিজে বসে থাকতেন। আমাদেরকেও বসে থাকতে নির্দেশ দেন। (আহ্‌মাদ) [১] মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন (রহঃ) তিনি বলেন, একবার একটি জানাযাহ্‌ হাসান ইবনু ‘আলী ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। (জানাযাহ্‌ দেখে) হাসান দাঁড়িয়ে গেলেন। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস দাঁড়ালেন না। হাসান (ইবনু ‘আব্বাসকে দাঁড়াননি দেখে) বললেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি একজন ইয়াহূদীর লাশ দেখে দাঁড়িয়ে যাননি? ইবনু আব্বাস বললেন, হ্যাঁ দাঁড়িয়েছিলেন, (প্রথম দিকে) শেষের দিকে আর দাঁড়াননি। (নাসায়ী) [১] জা‘ফার ইবনু মুহাম্মাদ একবার হাসান ইবনু “আলী (রাঃ) (এক জায়গায়) বসেছিলেন। তাঁর সম্মুখ দিয়ে একটি জানাযাহ্‌ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা (এ সময়) দাঁড়িয়ে গেল। তা অতিক্রম করে না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকল। তা দেখে হাসান বললেন, (একবার) একটি ইয়াহূদীর লাশ যাচ্ছিল আর সে সময় রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাস্তার পাশে বসেছিলেন। ইয়াহূদীর লাশ তাঁর মাথা ছাড়িয়ে যাক তা তিনি অপছন্দ করলেন। তাই দাঁড়িয়ে গেলেন। (নাসায়ী) [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাছ দিয়ে কোন ইয়াহূদী, নাসারা অথবা মুসলিমের লাশ অতিবাহিত হতে দেখলে দাঁড়িয়ে যাবে। তোমাদের এ দাঁড়ানো লাশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নয়। বরং লাশের সাথে যেসব মালাক (ফেরেস্তা) থাকেন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। (আহ্‌মাদ) [১] আনাস (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ দিয়ে একটি জানাযাহ্‌ যাচ্ছিল। তা দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, এটা তো একজন ইয়াহূদীর জানাযাহ্‌ (একে দেখে দাঁড়াবার কারণ কি?) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জানাযার সম্মানে দাঁড়াইনি। তাদের সম্মানে দাঁড়িয়েছি যারা জানাযার সাথে আছেন (অর্থাৎ ফেরেশ্‌তা)। (নাসায়ী) [১] মালিক ইবনু হুবায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিমের মৃত্যু ঘটলে তিন সারি বিশিষ্ট জামা'আত দ্বারা জানাযার সলাত আদায় সম্পন্ন করা গেলে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য (জান্নাত ও মাগফিরাত) ওয়াজিব করে দেন। এ কারণে মালিক ইবনু হুবায়রাহ্‌ (রাঃ) জানাযার সলাতে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা কম দেখলে এ হাদীস অনুযায়ী তাদেরকে তিন সারিতে দাঁড় করাতেন। (আবূ দাঊদ)। আর ইমাম তিরমিযীর একক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, মালিক ইবনু হুবায়রাহ্‌ যখন জানাযার সলাত আদায় করতেন, আর (উপস্থিত) মানুষের সংখ্যা কম দেখতেন, তখন তাদের তিন কাতারে বিন্যস্ত করে দিতেন। আর বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির জানাযার সলাত তিন সারি লোকে পড়ে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। ইবনু মাজাহ্ও এরুপ বর্ণনা করেছেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে এ দু’আ পড়তেন, “আল্ল-হুম্মা আন্‌তা রব্বুহা-, ওয়া আন্‌তা খলাক্বতাহা-, ওয়া আন্‌তা হাদায়তাহা- ইলাল ইস্‌লা-ম ওয়া আন্‌তা ক্ববায্তা রুহাহা-, ওয়া আন্‌তা আ’লামু বিসির্‌রিহা- ওয়া ‘আলা- নিয়াতিহা-, জি’না- শুফা’আ- আ ফাগ্‌ফির লাহূ” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ [জানাযার] ব্যক্তির তুমিই ‘রব’। তুমিই তাকে সৃষ্টি করেছ, তুমিই তাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছ, তুমিই তার রুহ কবয করেছ, তুমিই তার গোপন ও প্রকাশ্য [সব কিছু] জানো। আমরা তার জন্য তোমার কাছে সুপারিশ করতে এসেছি, তুমি তাকে মাফ করে দাও।) (আবূ দাঊদ) [১] সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আমি আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) এর পেছনে এমন একটি বালকের জানাযার সলাত আদায় করলাম, যে কক্ষনো কোন গুনাহের কাজ করেনি। আমি আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) কে তাঁর জন্য দু’আ করতে শুনলাম, “আল্ল-হুম্মা আ’ইয্‌হু মিন ‘আযা-বিল ক্বব্‌রি” (অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি এ ছেলেটিকে ক্ববর ‘আযাব থেকে রক্ষা করো)। (মালিক) [১] ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম বুখারি (রহঃ) তা’লীক্ব পদ্ধতিতে (অর্থাৎ সহীহুল বুখারীর তরজমাতুল বাবে সানাদ ছাড়া, এ হাদীসটি উদ্ধৃ্ত করেছেন), হাসান (রহঃ) বাচ্চার জানাযার সলাতে (প্রথম তাকবীরের পর) সূরাহ্‌ আল ফা-তিহাহ্‌ পড়তেন। (আর তৃতীয় তাকবীরে) এ দু’আ পড়তেন, “আল্ল-হুম্মাজ্‌ ‘আল্‌হু লানা- সালাফান ওয়া ফারাত্বান ওয়া যুখ্‌রান ওয়া আজ্‌রান” (অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ ছেলেটিকে (ক্বিয়ামতের দিন) আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক, রক্ষিত ভান্ডার ও সাওয়াবের কারণ বানাও)। ।[১] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (অপূর্ণাঙ্গ) বাচ্চাদের জন্য না জানাযার সলাত আদায় করতে হবে, না তাকে কারো ওয়ারিশ বানানো যাবে। আর না তার কোন ওয়ারিশ হবে। যদি সে জন্মের সময় কোন শব্দ করে না থাকে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্; কিন্তু ইবনু মাজাহ্ “তারও কেউ উত্তরাধিকারী হবেনা” এমন উল্লেখ করেননি। [১] আবূ মাস্‘ঊদ আল্ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইমামকে কোন কিছুর উপর (একা) ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (দারাকুত্বনী, আবূ দাঊদ) [১]

【16】

প্রথম অনুচ্ছেদ

‘আমির ইবনু সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রহঃ) তিনি বলেন, তার পিতা সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্বক্বাস (রাঃ) মৃত্যুশয্যায় রোগাক্রান্ত অবস্থায় বলেন, আমাকে দাফন করার জন্য লাহ্‌দ (বগলী) ক্ববর তৈরী করবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাফন করার জন্য যেভাবে ক্ববর খোঁড়া হয়েছিল, সেভাবে আমার উপরেও কাঁচা ইট দাঁড় করিয়ে দেবে। (মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্ববরে একটি লাল চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। (মুসলিম) [১] সুফ্ইয়ান তাম্মার (রহঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ববরকে উটের পিঠের মত (মুসান্নাম) উঁচু দেখেছেন। (বুখারি) [১] আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) তিনি বলেন, “আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, “আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাব না, যে কাজের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো, যখন তোমার চোখে কোন মূর্তি পড়বে, তা একেবারে নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না। আর উঁচু কোন ক্ববর দেখলে তাকে সমতল না করে রাখবে না। (মুসলিম) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরে চুনকাম করতে, এর উপর ঘর বানাতে এবং বসতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম) [১] আবূ মারসাদ আল গানাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ক্ববরের উপর বসবে না এবং ক্ববরের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করবে না। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসা, আর এ অঙ্গারে (পরনের) কাপড়-চোপড় পুড়ে শরীরে পৌছে যাওয়া তার জন্য উত্তম হবে ক্ববরের উপর বসা হতে। (মুসলিম) [১]

【17】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনায় দু’ ব্যক্তি ছিলেন (তারা ক্ববর খুঁড়তেন)। তাদের একজন (আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী) লাহ্‌দী (বুগলী) ক্ববর খুঁড়তেন আর দ্বিতীয়জন (আবূ ‘উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্) লাহ্‌দী ক্ববর খুঁড়তেন না (বরং সিন্ধুকী ক্ববর খুঁড়তেন)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকাল হলে সাহাবীগণ (সম্মিলিতভাবে বললেন), এ দু’ ব্যক্তির যিনি আগে আসবেন তিনিই তার মতো করে ক্ববর খনন করবেন। পরিশেষে তিনিই আগে আসলেন যিনি লাহ্‌দী ক্ববর খুঁড়তেন (অর্থাৎ আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী)। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য লাহ্‌দী ক্ববর খুঁড়লেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্) [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাহ্‌দী ক্ববর আমাদের জন্য। আর শাক্ক্ (সিন্ধুকী) ক্ববর আমাদের অপরদের জন্য। (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) [১] আর ইমাম আহমাদ আর ইমাম আহমাদ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে। [১] হিশাম ইবনু ‘আমির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের যুদ্ধের দিন বলেছেন, ক্ববর খনন কর, ক্ববরকে প্রশস্ত কর, বেশ গভীর করে খনন কর এবং এগুলোকে ভালো করে কর, অর্থাৎ মাটি এবং ধূলিকণা থেকে পরিষ্কার কর। এক-একটি ক্ববরে দু’ দু’, তিন তিন জন করে দাফন করো। আর তাদের মধ্যে যার বেশী করে কুরআন হিফ্‌জ আছে তাকে ক্ববরে আগে রাখো। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী এবং ইমাম ইবনু মাজাহ ‘ওয়া আহসিনূ’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।) [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতার (‘আবদুল্লাহর) লাশ আমাদের ক্ববরস্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে আসলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরফ থেকে একজন আহবানকারী জানালেন, শাহীদদেরকে তাঁদের শাহাদাতের জায়গায় পৌছিয়ে দাও। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, দারিমী; হাদীসের শব্দগুলো হলো তিরমিযীর)। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ববরে নামানোর সময় মাথার দিক দিয়ে নামানো হয়েছে। (শাফি’ঈ) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার রাতের বেলা মৃতকে রাখার জন্য ক্ববরে নামলেন। তার জন্য চেরাগ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি মাইয়্যিতকে ক্বিবলার দিক থেকে ধরলেন (তাকে ক্ববরে রাখলেন) এবং এ দু’আ পড়লেন, “রহিমাকাল্ল-হু ইন্ কুন্‌তা লাআও্ওয়া-হান তাল্লা-আন লিল কুরআ-ন” [অর্থাৎ আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। (তুমি আল্লাহর ভয়ে) কাঁদতে, আর কুরআনে কারীম বেশী বেশী পড়তে (এ দু’টি কারণে তুমি রহ্‌মাত ও মাগফিরাতের উপযোগী)] ( তিরমিযী; শারহুস্ সুন্নাহ্‌য় বলা হয়েছে এ বর্ণনার সনদ দুর্বল)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে রাখতেন, বলতেন, “বিসমিল্লা-হ, ওয়াবিল্লা-হি ওয়া ‘আলা- মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ”। অন্য এক বর্ণনায় আছে, “ওয়া ‘আলা- সুন্না-তি রসূলিল্লা-হ” (অর্থাৎ আল্লাহর নামে ও আল্লাহর হুকুম মুতাবিক রসূলুল্লাহর মিল্লাতের উপর ক্ববরে নামাচ্ছি)। অন্য বর্ণনায় ‘মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ’-এর জায়গায় ‘সুন্নাতি রসূলিল্লা-হ’ বর্ণিত হয়েছে। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; আবূ দাঊদ দ্বিতীয়াংশটি) [১] ইমাম জা‘ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের দু’ হাতের মুষ্টি ভরে মাটি নিয়ে মাইয়্যিতের ক্ববরের উপর তিনবার দিয়েছেন। তিনি তার পুত্র ইব্রাহীমের ক্ববরে পানি ছিটিয়েছেন এবং (চিহ্ন রাখার জন্য) ক্ববরের উপর কংকর দিয়েছেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্; ইমাম শাফি’ঈ “পানি ছিটিয়েছেন” থেকে [শেষ পর্যন্ত] বর্ণনা করেছেন) [১] জাবির (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরে সিমেন্ট চুন দিয়ে কোন কাজ করতে, তার উপর কিছু লিখতে অথবা খোদাই করে কিছু করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী) [১] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্ববরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাঁর ক্ববরে বিলাল ইবনু রাবাহ (রাঃ) পানি ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মশক দিয়ে তাঁর মাথা থেকে আরম্ভ করে পা পর্যন্ত পানি ছিটিয়ে দেন। (বায়হাক্বী- দালায়িলুল নিবুওয়াহ্) [১] মুত্ত্বালিব ইবনু আবী ওয়াদা‘আহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উসমান ইবনু মায্’ঊন (রাঃ)-এর মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার লাশ বের করা হয় এবং তা দাফন করা হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ক্ববরের চিহ্ন রাখার জন্য এক ব্যক্তিকে হুকুম দিলেন একটি বড়) পাথর আনার জন্য। লোকটি পাথর উঠিয়ে আনতে পারলেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা উঠিয়ে আনার জন্য উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের দু’ হাতের আস্তিন গুটিয়ে নিলেন। হাদীসের রাবী বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে রসূলের এ হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি বলতেন, যখন তিনি হাতা গুটাচ্ছিলেন- মনে হচ্ছে এখনো আমি রসূলের পবিত্র বাহুদ্বয়ের শুভ্রতার চমক অনুভব করছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে পাথরটি উঠিয়ে এনে ‘উসমানের ক্ববরের মাথার দিকে রেখে দিলেন এবং বললেন, আমি এ পাথর দেখে আমার ভাইয়ের ক্ববর চিনতে পারব। এখন আমার পরিবারের যে মারা যাবে তাকে এর পাশে দাফন করব।“ (আবূ দাঊদ) [১] ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আরয করলাম, হে আমার মা! যিয়ারত করার জন্য আমাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর দু’ সাথী (আবূ বাক্‌র ও ‘উমারের) ক্ববর খুলে দিন। তিনি তিনটি ক্ববরই খুলে দিলেন। আমি দেখলাম, তিনটি ক্ববরই না খুব উঁচু না মাটির সাথে একেবারে সমতল। বরং মাটি হতে এক বিঘত উঁচু ছিল। আর এ ক্ববরগুলোর উপর (মাদীনার পাশের) আরসা ময়দানের লাল কংকর বিছানো ছিল। (আবূ দাঊদ) [১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আনসারদের এক ব্যক্তির জানাযার জন্য বের হলাম। আমরা ক্ববরস্থানে পৌঁছে দেখলাম (এখনো ক্ববর তৈরি না হওয়ার কারণে) দাফনের কাজ শুরু হয়নি। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিবলার দিকে মুখ করে বসে গেলেন, আমরাও তাঁর সাথে বসে গেলাম। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ; ইবনু মাজাহ হাদীসের শেষে বাড়িয়েছেন, অর্থাৎ মনে হচ্ছিল আমাদের মাথার উপর পাখি বসেছে ।) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিতকালে তার হাড় ভাঙ্গারই মতো। (মালিক, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ) [১]

【18】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা (উম্মু কুলসুমের) দাফনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আর যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরের পাশে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি? আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছি, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, (মাইয়্যিতকে ক্ববরে রাখার জন্য) তুমিই ক্ববরে নামো। তখন তিনি ক্ববরে নামলেন। (বুখারী) [১] আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) মৃত্যুর সময় তাঁর ছেলে ‘আবদুল্লাহকে ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন যে, যখন আমি মারা যাব তখন আমার জানাযার সাথে যেন মাতম করার জন্য কোন রমণী না থাকে। আর না থাকে কোন আগুন। আমাকে দাফন করার সময় আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। দাফনের পরে দু’আ ও মাগফিরাতের জন্য এতটা সময় (আমার ক্ববরের কাছে) অপেক্ষা করবে, যতটা সময় একটি উট যবেহ করে তার গোশ্‌ত বণ্টন করতে লাগে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে একটু পরিচিত থাকবো এবং (নির্ভয়ে) জেনে নেব, আমি আমার রবের মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) নিকট কি জবাব দিবো। (মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ মারা গেলে তাকে আটকিয়ে রেখ না। বরং তাকে তার ক্ববরে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দাও। তার (ক্ববরে দাঁড়িয়ে) মাথার কাছে সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌-র প্রথমাংশ এবং তার দুই পায়ের কাছে সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌-র শেষাংশের আয়াতগুলো পড়বে। (বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটিকে শু’আবুল ঈমানে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এটি মাওকুফ হাদীস) [১] ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন হুবশী (মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম) নামক স্থানে ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু আবূ বাক্‌রের মৃত্যু হলে তাঁর লাশ মক্কায় নিয়ে এসে দাফন করা হয়। উম্মুল মু’মিনীন আয়িশাহ্‌ (রাঃ) (মক্কায় হজ্জ করতে) এলে তিনি ‘আবদুর রহ্‌মানের (ভাইয়ের) ক্ববরের কাছে এলেন। ওখানে তিনি (কবি তামীম ইবনু নুওয়াইরার কবিতার এ দু’টি পংক্তি আবৃত্তি করেন যাতে কবি তার ভাই মালিকের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন)- ওয়া কুন্না- কানাদ্ মা-নী জাযীমাতা হিক্ববাতান মিনাদ্ দাহরি হাত্তা-ক্বীলা লাই ইয়াতা সাদ্দা’আ ফালাম্মা- তাফার্‌রাক্বনা- কাআন্নী ওয়ামা-লিকান লিতূলিজ্ তিমা-’ইন লাম নাবিত লাইলাতাম্ মা’আ। অর্থাৎ আমরা দু’ ভাই বোন, জাযিমার সে দু’ বন্ধুর মতো অনেক দিন পর্যন্ত একত্রে কালযাপন করছিলাম। তাদের এ অবস্থা দেখে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, এরা তো কখনো (একে অপর থেকে) পৃথক হবে না। কিন্তু যখন আমরা দুজন অর্থাৎ আমি ও তুমি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম, তখন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এক সাথে থাকার পরও মনে হলো, আমরা একটি রাতের জন্যও একত্রে এক জায়গায় ছিলাম না। এরপর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি তোমার ইন্তিকালের সময় তোমার কাছে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাকে সেখানেই দাফন করতাম, যেখানে তুমি মৃত্যুবরণ করেছিলে। আর আমি যদি তোমার মৃত্যুর সময় তোমার কাছে থাকতাম তাহলে আজ তোমার ক্ববরের পাশে আমি আসতাম না। (তিরমিযী) [১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ এর লাশকে মাথার দিক থেকে ধরে কবরে নামিয়েছেন। তারপর তিনি তাঁর কবরে পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন। (ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার একটি জানাযার সলাত আদায় করালেন। তারপর তিনি ক্ববরের কাছে এলেন এবং ক্ববরে তার মাথা বরাবর তিন মুষ্টি মাটি রাখলেন। (ইবনু মাজাহ) [১] আমর ইবনু হাযম (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন আমাকে ক্ববরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললেন, তুমি এ ক্ববরবাসীকে কষ্ট দিও না। অথবা বললেন, তুমি একে কষ্ট দিওনা। (আহমাদ) [১]

【19】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আবূ সায়ফ কর্মকারের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র ইব্‌রাহীমের ধাত্রীর স্বামী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইব্‌রাহীমকে কোলে তুলে নিলেন, চুমু খেলেন ও শুঁকলেন। এরপর আমরা আবার একদিন আবু সায়ফ-এর ঘরে গেলাম। এ সময় নাবীতনয় মৃত্যু শয্যায়। (তার এ অবস্থা দেখে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অবস্থা দেখে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আওফ আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কাঁদছেন! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ইবনু ‘আওফ! এটা আল্লাহ্‌র রহ্‌মাত। তারপরও তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ চোখ পানি বহাচ্ছে, হৃদয় শোকাহত। কিন্তু এরপরও আমাদের মুখ দিয়ে এমন শব্দ বেরুচ্ছে যার জন্য আমাদের পরওয়ারদিগার আমদের উপর সন্তুষ্ট। হে ইব্‌রাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে খুবই শোকাহত। (বুখারী, মুসলীম) [১] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা (যায়নাব) কাউকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, তাঁর ছেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে আসেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সালাম পাঠালেন আর বললেন, যে জিনিস (অর্থাৎ সন্তান) আল্লাহ নিয়ে নেন তা তাঁরই। আর যে জিনিস তিনি দিয়ে রেখেছেন তাও তাঁরই। প্রতিটি জিনিসই তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অতএব অপরিসীম ধৈর্য ও ইহ্‌তিসাবের সাথে থাকতে হবে (শোকে দুঃখে বিহ্বল না হওয়া উচিত)। নাবী কন্যা আবার তাঁকে কসম দিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। এবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ্‌, মা’আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত সহ কিছু লোককে সাথে নিয়ে ওখানে গেলেন। বাচ্চাটিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোলে তুলে দেয়া হলো। তখন তার শ্বাস ওঠানামা করছে। বাচ্চার এ অবস্থা দেখে রসূলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। সা’দ রসূলের চোখে পানি দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা রহমাত, যা আল্লাহ বান্দার মনে সৃষ্টি করে দেন আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাগণের প্রতি দয়া করেন। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ্ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন ‘আবদুর রহ্মান ইবনু ‘আওফ, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ। তিনি ওখানে প্রবেশ করে সা’দ ইবনু ‘উবাদাহকে বেহুঁশ অবস্থায় পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মারা গেছে? সাহাবী জবাব দিলেন, জ্বী না, হে আল্লাহর রাসূল! তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁদতে লাগলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাঁদতে দেখে সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। এসময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাবধান তোমরা শুনে রাখ অশ্রু বিসর্জন ও মনের শোকের কারণে আল্লাহ তা’আলা কাউকে শাস্তি দেবেন না। তিনি তার মুখের দিকে ইশারা করে বললেন, অবশ্য আল্লাহ এজন্য ‘আযাবও দেন আবার রহ্মাতও করেন। আর মৃতকে তার পরিবার-পরিজনের বিলাপের কারণে ‘আযাব দেয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত ব্যক্তির শোকে) নিজের মুখাবয়বে আঘাত করে, জামার গলা ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়্যাতের যুগের মত হা-হুতাশ করে বিলাপ করে, সে আমাদের দলের মধ্যে গণ্য নয়। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) একবার আমার পিতা আবূ মূসা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এতে (আমার বিমাতা) তাঁর স্ত্রী ‘আবদুল্লাহর মা বিলাপ করতে লাগল। অতঃপর তিনি সংজ্ঞা লাভ করলেন এবং ‘আবদুল্লাহর মাকে বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তার সাথে সম্পর্কহীন যে মাথার চুল ছিঁড়ে, উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ফাঁড়ে। (বুখারী ও মুসলিম; কিন্তু পাঠ মুসলিমের) [১] আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়্যাত যুগের চারটি বিষয় রয়ে গেছে যা তারা ছাড়ছে না, (১) নিজের গুনের গর্ব, (২) কারো বংশের নিন্দা, (৩) গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং (৪) বিলাপ করা। অতঃপর তিনি বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্‌ না করে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে উঠানো হবে-তখন তার গায়ে থাকবে আলকাতরার জামা ও ক্ষতের পিরান। (মুসলিম ) [১] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন একজন মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্যধারণ করো। মহিলাটি বলল, আপনি আমার কাছ থেকে চলে যান, আমার উপর পতিত বিপদ আপনাকে স্পর্শ করেনি। মহিলাটি তাঁকে চিনতে পারেনি। পরে মহিলাটিকে বলা হলো, ইনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন মহিলাটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়ীর দরজায় এলো। সেখানে কোন দারোয়ান বা পাহারাদার মোতায়েন ছিল না। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, 'সবরতো তাকেই বলা হয় যা বিপদের প্রথম অবস্থায় ধারণ করা হয়।' (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে কসম পুরা করার জন্য (ক্ষণিকের জন্য হলেও) প্রবেশ করানো হবে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের কিছু সংখ্যক মহিলাকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদের যে কারো তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করবে, আর সে (এজন্য) ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের প্রত্যাশা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) তাদের একজন বলল, যদি দু' সন্তান মৃত্যুবরণ করে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, হ্যাঁ। দু'জন করলেও। (মুসলিম; মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, এমন তিন সন্তান মারা গেলে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি [তাদের জন্য এ সুসংবাদ]) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি যখন আমার কোন মু'মিন বান্দার প্রিয় জিনিসকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেই আর বান্দা এজন্য সবর অবলম্বন করে সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়, তাহলে আমার কাছে তার জন্য জান্নাতের চেয়ে উত্তম কোন পুরস্কার নেই। (বুখারী) [১]

【20】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শোকে মাতমকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাউদ) [১] সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু'মিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর করে, আবার বিপদেরও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে। মু'মিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়ও। (বায়হাক্বী'র শু'আবুল ঈমান) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মু'মিনের জন্য দু'টি দরজা রয়েছে। একটি দরজা দিয়ে তার নেক 'আমাল উপরের দিকে উঠে। আর দ্বিতীয়টি দিয়ে তার রিয্‌ক্ব নীচে নেমে আসে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে, এ দু'টি দরজা তার জন্য কাঁদে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার এ বাণীটি। তিনি বলেছেন, "এ কাফিদের জন্য না আকাশ কাঁদে আর না জমিন"-(সূরাহ আদ দুখান ৪৪ :২৯)। (তিরমিযী) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তির দু'টি সন্তান শৈশবে মারা যাবে, আল্লাহ তা'আলা এ কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (এ কথা শুনে) 'আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, আপনার উম্মাতের যে ব্যক্তির একটি মারা যাবে? তিনি বললেন, যার একটি শিশু সন্তান মারা যাবে তার জন্যও, হে যথাযোগ্য প্রশ্নকারিণী! 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) এবার বললেন, যার একটি বাচ্চাও মরেনি, তার জন্য কি শুভ সংবাদ? তিনি বললেন, আমিই আমার উম্মাতের জন্য এ অবস্থানে। কারণ আমার মুসীবাত বা মৃত্যুর চেয়ে আর বড় কোন সুসীবত তাদের স্পর্শ করতে পারে না। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদিস গরীব) [১] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ তা'আলা মালাকগণকে (ফেরেশ্‌তাদেরকে) বলেন, তোমরা আমার বান্দার রূহ কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের ফলকে কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর আল্লাহ বলেন, (এ ঘটনায়) আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেন, সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ইস্‌তিরজা' (ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জিউন) পড়েছে। এবার আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং এ ঘরটির নাম রাখো 'বায়তুল হাম্‌দ'। (আহ্‌মাদ ও তিরমিযী) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিপদাপন্নকে সান্ত্বনা দেবে, তাকেও বিপদগ্রস্তের সমান সওয়াব দেয়া হবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমি এ হাদীসটিকে ‘আলি ইবনু ‘আসিম ছাড়া আর কোন ব্যক্তি হতে মারফু’ হিসেবে পাইনি। ইমাম তিরমিযী এ কথাও বলেন যে, কোন কোন মুহাদ্দিস এ বর্ণনাটিকে মুহাম্মদ ইবনু সূকা হতে এ সানাদে ‘মাওকুফ” হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।) [১] আবূ বারযাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সন্তানহারা নারীকে সান্ত্বনা যোগাবে তাকে জান্নাতে খুবই উত্তম পোশাক পরানো হবে। (তিরমিযী, তিনি এ হাদীসটিকে গরীব বলেছেন) [১] আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) তিনি বলেন, জা’ফার-এর ইন্তিকালের খবর আসার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আহলে বায়াতকে) বললেন, তোমরা জা’ফারের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের ওপর এমন এক বিপদ এসে পড়েছে, যা তাদেরকে রান্নাবান্না করে খেতে বাধা সৃষ্টি করবে। (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ) [১]

【21】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় ক্বিয়ামতের দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আমরাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তাকে বলা হল যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আবু ‘আব্দুর রাহমানকে (ইবনু ‘উমারের উপনাম) মাফ করুন। তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করেছেন (ব্যাপার হলো) একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন ইয়াহুদী মহিলার ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তাঁর কবরের পাশে লোকজন কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার কবরে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে। (বুখারী, মুসলিম) [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু ‘আফফান–এর কন্যা মাক্কায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তাঁর জানাযাহ্‌ ও দাফনের কাজে যোগ দিতে মাক্কায় এলাম। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাসও এখানে আসলেন। আমি এ দু’জনের মধ্যে বসেছিলাম। এমন সময় ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার, ‘আম্‌র ইবনু ‘উসমানকে বললেন, আর তিনি তখন তাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন। তুমি (পরিবারের লোকজনকে আওয়াজ করে) কান্নাকাটি করতে কেন নিষেধ করছ না? অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য ‘আযাব দেয়া হয়। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘উমার (রাঃ) এ ধরনের কথা বলতেন। তারপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন, “আমি যখন ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে মাক্কাহ্‌ হতে ফেরার পথে ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌছালাম, হঠাৎ করে ‘উমার একটি কাঁকর গাছের ছায়ার নিচে এক কাফেলা দেখতে পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওখানে গিয়ে দেখো কাফেলায় কে কে আছে। আমি সুহায়বকে দেখতে পাই। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, আমি ফিরে এসে ‘উমারকে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ডেকে আনো। আমি আবার সুহায়াব-এর নিকট গেলাম। তাকে বললাম, ‘চলুন, আমীরুল মু’মিনীন ‘উমারের সাথে দেখা করুন’। এরপর যখন মাদীনায় ‘উমারকে আহত করা হলো সুহায়াব কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে এলেন এবং বলতে থাকলেন, হায় আমার ভাই, হায় আমার বন্ধু! (এটা কি হলো!) সে অবস্থায়ই ‘উমার বললেন, সুহায়ব! তুমি আমার জন্য কাঁদছ অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন ‘আযাব দেয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, আমি এ কথা ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে বললাম। তিনি শুনে বলতে লাগলেন, আল্লাহ তা’আলা ‘উমারের উপর দয়া করুন। কথা এটা নয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে, পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তিকে ‘আযাব দেয়া হয়। বরং আল্লাহ তা’আলা পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য কাফিরের ‘আযাব বাড়িয়ে দেন। তারপর ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, কুরআনের এ আয়াতই দলীল হিসেবে তোমাদের জন্য যথেষ্ট, অর্থাৎ “কোন ব্যক্তি অন্য কারো বোঝা বহন করবে না”- (সুরা ইসরা ১৭:১৫) ইবনু ‘আব্বাস বলেন, এ আয়াতের মর্মবাণীও প্রায় এ রকমই, অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাই হাসান ও কাঁদান। ইবনু আবূ মুলায়কাহ্‌ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার এসব কথা শুনার পর কিছুই বললেন না। (বুখারী, মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (মূতার যুদ্ধে) ইবনু হারিসাহ্‌, ও জা’ফার ও ইবনু রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে পৌছালে তিনি (মাসজিদে নাবাবীতে) বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল। আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাঁর অবস্থা দেখছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর খিদমাতে বলতে লাগল, জা’ফারের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে (অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করল)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন। লোকটি চলে গেল। (কিছুক্ষন পর) দ্বিতীয়বার এসে বলল, মহিলারা কোন কথা মানছে না। আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন। লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করল। (কিছুক্ষণ পর) সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলল, হে রসূল! তারা আমার উপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমার ধারনা হলো, এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি মনে মনে (ঐ ব্যক্তিকে) বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দুঃখ দেয়া হতে বিরত হচ্ছ না। (বুখারী, মুসলিম) [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহ্‌ মৃত্যুবরণ করলে আমি বললাম, আবূ সালামাহ্‌ মুসাফির ছিলেন, মুসাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন। অর্থাৎ মাক্কার লোক মাদীনায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমি তাঁর জন্য এমনভাবে কাঁদব যে, আমার কান্নাকাটি সম্পর্কে লোকেরা আলোচনা করবে। আমি কান্নাকাটি করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা এসে আমার সাথে কাঁদতে চাইল। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন। তিনি বললেন, এই ঘর হতে আল্লাহ দু’বার শয়তানকে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা তাকে পুনরায় এখানে আনতে চাও? উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তাঁর এ হুশিয়ারী শুনে আমি (কান্নাকাটি) করা হতে চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আর কাঁদিনি। (মুসলিম) [১] নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, একবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্‌ (কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে) জ্ঞান হারালেন। তাঁর বোন ‘আমরাহ্‌ কেঁদে কেটে বলতে লাগলেন হে আমার পর্বতসম ভাই! হে আমার এমন ভাই! তেমন ভাই! অর্থাৎ এভাবে তাঁর ভাইয়ের খ্যাতির বর্ণনা করতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহার জ্ঞান ফিরলে বোনকে বললেন, তুমি আমাকে নিয়ে যখন যা বলেছ, আমাকে তখনই জিজ্ঞেস করা হয়েছে, এসব গুনে গুণী আমি কিনা? অন্য এক বর্ণনায় অতিরিক্ত বর্ণনা এসেছে, যখন আবদুল্লাহ (মূতার যুদ্ধে) তখন তাঁর বোন ‘আম্‌রাহ্‌ আর তাঁর জন্য কাঁদেননি। (বুখারী) [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় এবং তার আপন ক্রন্দনকারীরা এ কথা বলে কাঁদে, হে আমার পাহাড়তুল্য অমুক। হে সরদার! ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ তা’আলা ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশ্‌তা) প্রেরণ করেন, যারা তার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে আর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এমনই ছিলে? (তিরমিযী; এবং তিনি বলেন, এ হাদিসটি গরীব ও হাসান) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের কোন একজন (যায়নাব) মারা গেলেন। তখন কয়েকজন মহিলা একত্রিত হয়ে তাঁর জন্য কাঁদতে লাগল। এ অবস্থায় ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করলেন, আর ভাগিয়ে দিতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অবস্থা দেখে বললেন, ‘উমার! এদেরকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ এদের চোখ কাঁদছে, হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত, আর মৃত্যুর সময়ও নিকটবর্তী! (আহ্‌মাদ, নাসায়ী) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) মারা গেলে মহিলারা কাঁদতে লাগল। ‘উমার (রাঃ) হাতের কোড়া দিয়ে তাদেরকে আঘাত করলেন। এ অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমারকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘উমার! কোমল হও। আর মহিলাদের বললেন, তোমরা তোমাদের গলার আওয়াজ শয়তান থেকে দূরে রাখো (অর্থাৎ চিৎকার করে ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদ না)। তারপর বললেন, যা কিছু চোখ (অশ্রু) ও হৃদয় (দুঃখ বেদনা ও শোক-তাপ) বের হয় তা আল্লাহর তরফ থেকেই বের হয়। এটা হয় রহ্‌মাতের কারণে। আর যা কিছু হাত ও মুখ হতে বের হয় তা হয় শায়ত্বনের তরফ থেকে। (আহ্‌মাদ) [১] ইমাম বুখারী ইমাম বুখারী সানাদবিহীন তা‘লীক্ব পদ্ধতিতে উল্লেখ করেন যে, যখন হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)-এর ছেলে (ইমাম) হাসান মারা যান, তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর ক্ববরের উপর এক বছর পর্যন্ত তাঁবু খাটিয়ে রেখেছিলেন। তাঁবু ভাঙ্গার পর অদৃশ্য হতে শুনতে পেলেন, “এ তাঁবু খাটিয়ে কি তারা হারানো ধন ফিরে পেলো?” এ কথার জবাবে আবার (অদৃশ্য হতেই) অন্য একজন বলল, না! বরং নিরাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে। [১] ইমরান ইবনু হুসায়ন ও আবূ বারযাহ্ (রাঃ) তাঁরা বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক জানাযায় গিয়েছিলাম। ওখানে এমন কিছু লোককে দেখা গেল, যারা শোকের চিহ্নের জন্য তাদের গায়ের চাদর খুলে রেখে শুধু জামা পরে হাঁটছে। (এ অবস্থা দেখে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের (মূর্খতা ও অজ্ঞতার) উপর ‘আমাল করছ অথবা জাহিলিয়্যাতের কার্যক্রমের মত কার্যক্রম অবলম্বন করছ? তারপর তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা হচ্ছে এমন বদ্‌দু‘আ করতে যাতে তোমরা ভিন্ন আকৃতি নিয়ে (অর্থাৎ বানর বা শুয়োরের আকৃতিতে ) ঘরে ফিরে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে তারা চাদরগুলো গায়ে পড়ল। এরপর কখনো তারা এমনটি করেনি। (ইবনু মাজাহ) [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সে জানাযায় শারীক হতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন যে জানাযার সাথে মাতমকারী মহিলা থাকে। (আহ্‌মাদ ও ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে, যার জন্য আমি শোকাহত। আপনি কি আপনার বন্ধু [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] থেকে এমন কোন কথা শুনেছেন যা আমাদের হৃদয়কে খুশী করতে পারে? আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতে সাগরের মাছের মতো সাঁতার কাটতে থাকবে। যখন তারা তাদের পিতাকে পাবে তখন পিতার কাপড়ের কোণা টেনে ধরবে। পিতাকে জান্নাতে না পৌছানো পর্যন্ত ছাড়বে না। (মুসলিম, আহ্‌মাদ; ভাষা ইমাম আহ্‌মাদের) [১] আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ আপনার বানী শুনে উপকৃত হচ্ছে, (এ অবস্থায়) আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার খিদমাতে উপস্থিত হব। আপনি আমাদেরকে ওসব কথা শুনাবেন, যা আল্লাহ্‌ আপনাকে বলেছেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দিন ও স্থান নির্ধারণ করে উপস্থিত থাকতে বললেন। সে মতে মহিলাগণ সেখানে একত্রিত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ওসব কথাই শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ্‌ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান তার আগে মৃত্যুবরণ করেছে, সে তার ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল হবে। এ কথা শুনে তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি আগে দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে কথাটি দু’বার পুনরাবৃত্তি করল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- যদি দু’জনও হয়, দু’জন হয়, দু’জন হয়। (বুখারী) [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দু’জন মুসলিম ব্যক্তির অর্থাৎ মাতা-পিতার তিনটি সন্তান (তাদের আগে) মারা যাবে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে তাঁর বিশেষ রহ্‌মাতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! দু’জন মারা গেলেও কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ দু’জন মারা গেলেও। সাহাবীগণ আবারো বললেন, একজন মারা গেলেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায় সেই মা ধৈর্য ধরে সাওয়াবের আশা করে, তাহলে সে সন্তানও তাঁর নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (আহ্‌মাদ, আর ইবনু মাজাহ এ বর্ণনা “আল্লাহর কসম” থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত উদ্ধৃত করেছেন।) [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির জীবদ্দশায় তার তিনটি অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান মারা যাবে, তারা তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবার জন্য অত্যন্ত মজবুত আশ্রয়স্থল হয়ে যাবে। (এ কথা শুনে) আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি তো দু’টি শিশু সন্তান হারিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বললেনঃ দু’টি হলেও হবে। কারীদের ইমাম উবাই ইবনু কা’ব, যার ডাকনাম ছিল ‘আবুল মুনযির, তিনি বললেন। আমিও তো একজন পাঠিয়েছি। অর্থাৎ আমার একটি সন্তান মারা গেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) বললেনঃ একটি হলেও এমন অবস্থা। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি গরীব) [১] কুররাহ্ আল মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার ছেলেকে সঙ্গে করে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে বেশী ভালবাসো? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনাকে ভালবাসেন যেমনভাবে আমি তাকে ভালবাসি। (কিছুদিন পর একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেলেটিকে তার পিতার সাথে দেখতে পেলেন না।) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুক ব্যক্তির সন্তানের কি হলো? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল? তার ছেলেটি মারা গেছে। (এরপর ঐ ব্যক্তি উপস্থিত হলে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এ কথা পছন্দ করো না যে, তুমি (ক্বিয়ামাতের দিন) জান্নাতের যে দরজাতেই যাবে, সেখানেই তোমার সন্তানকে তোমার জন্য অপেক্ষারত দেখবে? এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! এ শুভসংবাদ কি শুধু এ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, না সকলের জন্য? তিনি বললেন, সকলের জন্য। (আহ্‌মাদ) [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তানও তার পিতা-মাতাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর সময় তার ‘রবের’ সাথে বিতর্ক করবে। এর ফলে তখন বলা হবে, হে গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া সন্তান! তোমার পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তখন সে অপূর্ণাজ্ঞ সন্তান তার পিতা-মাতাকে নিজের নাড়ী দিয়ে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ) [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা (মানুষকে উদ্দেশ্য করে) বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি বিপদের প্রথম সময়ে ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা পোষণ করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হব না। (ইবনু মাজাহ) [১] হুসায়ন ইবনু ‘আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, কোন মুসলিম নর-নারী কোন বিপদাপদে পড়ার যত দীর্ঘ সময় পর মনে জেগে ওঠে আর সে নতুনভাবে “ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জি‘উন’ পড়ে তাহলে আল্লাহ তাকে নতুনভাবে সে সওয়াবই দিবেন যে সাওয়াব সে বিপদে পতিত হওয়ার প্রথম দিনই পেয়েছে। (আহমাদ, বায়হাক্বী‘র শু‘আবুল ঈমান) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও সে যেন ইস্‌তিরজা’ (ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জি‘উন) পড়ে। কারন এটা একটা বিপদই। (বায়হাক্বী‘র শু‘আবুল ঈমান) [১] উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবুদ্ দারদা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি আবুল ক্বাসিমকে [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে] বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেনঃ হে ‘ঈসা! আমি তোমার পরে এমন এক উম্মত পাঠাব, যারা তাদের পছন্দনীয় জিনিস পেলে আল্লাহর প্রশংসা করবে, আর বিপদে পড়লে সাওয়াবের আশা করবে ও ধৈর্যধারণ করবে। অথচ এই সময় তাদের কোন জ্ঞান ও ধৈর্যশক্তি থাকবে না। এ সময় তিনি [‘ঈসা (আলাইহিস সালাম)] নিবেদন করবেন, হে আমার রব! তাদের জ্ঞান ও ধৈর্য না থাকলে এটা এটা কেমন করে হবে? তখন আল্লাহ বললেন, আমি আমার সহিষ্ণুতা ও জ্ঞান হতে তাদেরকে কিছু দান করব। (উপরের দু‘টি হাদীসই বায়হাক্বী‘র শু‘আবিল ঈমানে বর্ণিত হয়েছে) [১]

【22】

প্রথম অনুচ্ছেদ

বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে ক্ববর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (কিন্তু এখন) তোমাদের ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি দিচ্ছি। (ঠিক) এভাবে আমি তোমাদের কুরবানীর গোশ্‌ত তিন দিনের বেশী জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যতদিন খুশী তা রাখতে পারো। আর আমি তোমাদেরকে ‘নাবীয (নামক শরাব) মশক ছাড়া অন্য কোন পাত্রে রেখে পান করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন তোমরা তা যে কোন পাত্রে রেখে পান করতে পার। তবে সাবধান! নেশা এনে দেয় এমন কোন দ্রব্য কখনো পান করবে না। (মুসলিম) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার নিজের মায়ের ক্ববরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তারপর বললেন, আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের ক্ববরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তাই তোমরা ক্ববরের কাছে যাবে। কারণ ক্ববর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (মুসলিম) [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরস্থানে গেলে এ দু’আ পড়তে শিখিয়েছেন: “আস্‌সালা-মু ‘আলায়কুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু‘মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না-ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূনা নাসআলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্” (অর্থাৎ হে ক্ববরবাসী মু‘মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।)। (মুসলিম) [১]

【23】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একবার) মাদীনার ক্ববরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ক্ববরস্থানের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, “আসসালা-মু ‘আলায়কুম ইয়া-আহলাল কুবূরি, ইয়াগ্‌ফিরুল্ল-হু লানা-ওয়ালাকুম, আন্‌তুম সালাফুনা- ওয়ানাহ্‌নু বিল আসার” (অর্থাৎ হে ক্ববরবাসী! তোমাদের ওপর সালাম পেশ করছি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্ববর্তী আর আমরা তোমাদের পশ্চাৎগামী)। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব) [১]

【24】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যে দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে আসতেন, সেদিন শেষ রাতে উঠে তিনি বাক্বী’তে (মাদীনার ক্ববরস্থান) চলে যেতেন। (ও স্থানে) তিনি বলতেন, “আসসালা-মু ‘আলায়কুম দা-রা ক্বওমিন মু‘মিনীন, ওয়া আতা-কুম মা-তূ‘ইদূনা গাদান মুআজ্জালূনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-অল্ল-হু বিকুম লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগ্‌ফির লিআহ্‌লি বাক্বী‘ইল গার্‌ক্বদ” (অর্থাৎ হে মু‘মিনের দল! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদেরকে আগামীকালের (ক্বিয়ামতের) যে প্রতিশ্রুতি (সাওয়াব অথবা শাস্তি) দেয়া হয়েছিল তা তোমরা কি পেয়ে গেছ? যে ব্যাপারে তোমাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল (ক্বিয়ামাত পর্যন্ত)। আর নিশ্চয়ই আমরাও আল্লাহ চাইলে তোমাদের সাথে মিলিত হবই। হে আল্লাহ! বাক্বী‘ গারক্বদ্‌বাসীদেরকে মাফ করে দিন!)। (মুসলিম) [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ক্ববর যিয়ারতে আমি কি বলব? তিনি বললেন, "আসসালা-মু 'আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু'মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ার্‌হামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্‌তা'খিরীনা, ওয়া ইন্না-ইন্‌শা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন" (অর্থাৎ সালাম বর্ষিত হোক মু'মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।)। (মুসলিম) [১] মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান (রহঃ) তিনি এ হাদীসের সানাদ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু'আতে নিজ মাতা-পিতা অথবা তাদের দু'জনের বা একজনের ক্ববর যিয়ারত করবে (সেখানে দু'আয়ে মাগফিরাত করবে) তাদের মাফ করে দেওয়া হবে। (যিয়ারতকারী মাতা-পিতার সাথে) সদাচরণকারী হিসাবে গণ্য করা হবে। (বায়হক্বী মুরসাল হাদীস হিসেবে শু'আবুল ঈমানে বর্ণনা করেন।) [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে ক্ববর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন) তোমরা ক্ববর যিয়ারত করবে। কারন ক্ববর যিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ) [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশী বেশী ক্ববর যিয়ারতকারী মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আহ্‌মাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিরমিযি আরো বলেছেন, কোন কোন 'আলিমের ধারণা এ হাদীসটি ক্ববর যিয়ারত নিষিদ্ধ সময়ের। কিন্তু ক্ববর যিয়ারতের অনুমতি দেবার পর পুরুষ মহিলা সকলেই এর মধ্যে গণ্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে কোন কোন 'আলিমের মতে, মহিলারা অপেক্ষাকৃত অধৈর্য, অসহিষ্ণু ও কোমলমতি বলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সেখানে যাওয়া অপছন্দ করেছেন। তাই ক্ববর যিয়ারতে যাওয়া মহিলাদের জন্য এখনো নিষিদ্ধ) [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন সেই ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুয়ে আছেন তখন আমি আমার চাদর খুলে রাখতাম। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি তো আমার স্বামী, আর অপরজনও আমার পিতা। কিন্তু যখন 'উমারকে এখানে তাঁদের সাথে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ঐ ঘরে প্রবেশ করেছি, 'উমারের কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর পেঁচিয়ে রেখেছি । (আহ্‌মাদ) [১]