2. আত্মীয়তার বন্ধন

【1】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা বাধ্যতামূলক।

কুলাইব ইবনে মানফায়া (র) আমার দাদা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সদাচরণ প্রাপ্তির ব্যাপারে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা-মাতা, তোমার ভাইবোন এবং এতদসংশ্লিষ্ট তোমার গোলাম, এদের অধিকার পূর্ণ করা ওয়াজিব এবং আত্মীয়-সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে (মুসলিম, দারেমী, তিরমিযী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন এই আয়াত নাযিল হলোঃ “তোমার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করো”(২৬ : ২১৪), তখন নবী (সাঃ) দাঁড়ালেন এবং ডেকে বলেনঃ হে বনু কাব ইবনে লুয়াই! নিজেদেরকে আগুন (দোযখ) থেকে রক্ষা করো। হে বনু আবদে মানাফ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে হাশেম বংশীয়গণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে মুহাম্মদ কন্যা ফাতেমা! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। অন্যথায় তোমাকে আল্লাহর বিচার থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আমার নাই। কেবল আমার সাথে তোমাদের রক্তের বন্ধন, তা আমি সজীব রাখবো (বুখারী, মুনাসাঈ, তিরমিযী, দারেমী, হিব্বান)।

【2】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন।

আবু আইউব আনসারী (রাঃ) এক বেদুইন নবী (সাঃ)-এর এক সফরে তার সাথে সাক্ষাত করে বললো, যা আমাকে বেহেশতের নিকটবর্তী এবং দোযখের দূরবর্তী করবে তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করো, তার সাথে কিছু শরীক করো নাসাঈ, নামায কায়েম করো, যাকাতা দাও এবং আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুন্ন রাখো। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যখন মহামহিম আল্লাহ যাবতীয় মাখলুকের সৃষ্টি সম্পন্ন করলেন তখন “রেহেম” (আত্মীয়তার বন্ধন) উঠে দাড়ালো। তিনি বলেন, কি ব্যাপার! সে বললো, এ হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে যুক্ত রাখবো এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো? রেহেম বললো, হে প্ৰভু! তিনি বলেন, এটাই তোমার প্রাপ্য। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা চাইলে পড়তে পারোঃ “তোমরা আধিপত্য লাভ করলে হয়তো পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে” (৪৭ : ২২)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর বাণীঃ “আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও” (১৭ : ২৬)। যদি কারো কিছু অর্থ-সম্পদ থাকে, তবে প্রথমেই তার সবেত্তিম কর্তব্য কি তা আল্লাহ বলে দিলেন। “নিকটাত্মীয়দেরকে তাদের প্রাপ্য প্রদান করে এবং দরিদ্র ও পথিকজনকেও” (১৭ : ২৬)। যদি তার কাছে কিছু না থাকে তবে সে কি করবে তা তিনি এভাবে শিক্ষা দিলেনঃ “তুমি তোমার প্রভুর কাঙ্খিত রহমাতের আশায় থাকাকালে তাদেরকে বঞ্চিত করতে হলে, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো” (১৭ : ২৮)। অর্থাৎ উত্তম প্রতিশ্রুতি দাও, যেন তা নিশ্চিত এবং আল্লাহর মর্জি তা অচিরেই হয়ে যাবে। “এবং তুমি ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না” (১৭ : ২৯) অর্থাৎ দান করা থেকে তুমি একেবারে বিরত থেকো না। “এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না”(১৭ : ২৯) অর্থাৎ যা আছে তা সবই দান করো নাসাঈ, “তাহলে তুমি তিরস্কৃত হবে” (১৭ : ২৯) অর্থাৎ পরে যারা আসবে তারা যেন তোমাদেরকে রিক্তহস্ত দেখে তিরস্কার না করে। এবং “রিক্তহস্ত”(১৭ : ২৯) অর্থাৎ যা দান করেছো তার জন্য পরে যেন আক্ষেপ করতে না হয় (তারীখুল কাবীর)।

【3】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক অটুট রাখার ফযীলাত।

আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে। আমি তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে, কিন্তু আমি তা সহ্য করি। তিনি বলেনঃ যদি তোমার বক্তব্য সঠিক হয়, তবে তুমি যেন তাদের মুখে উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছে। তোমার কারণে তাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী তাদের মোকাবিলায় তোমার সাথে থাকবেন (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমার নাম রহমান, দয়াময়। আমি রেহেম (জরায়ু, আত্মীয় সম্পর্ক)-কে সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে তার নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে তাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে আমার সাথে যুক্ত রাখবো এবং যে তাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে আমার থেকে ছিন্ন করবো (দারিমী, তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম)। আবুল আনবাস (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-র সাথে তায়েফে তার খামার বাড়ি ওয়াহত-এ গেলাম। তখন তিনি বলেন, নবী (সাঃ) তাঁর আঙ্গুলসমূহ একত্র করলেন এবং বললেনঃ রেহেম হলো রহমানের অংশ। যে তাকে যুক্ত রাখবে, আল্লাহও তাকে যুক্ত রাখবেন এবং যে তাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহও তাকে ছিন্ন করবেন। কিয়ামতের দিন তা সাবলীল বাগ্মীভাষী হবে (তিরমিযী, হাকিম)। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ রেহেম হলো আল্লাহর একটি শাখা। যে তাকে যুক্ত রাখবে, আল্লাহও তাকে যুক্ত রাখবেন এবং যে তাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহও তাকে ছিন্ন করবেন (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।

【4】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-সম্পর্ক বজায় রাখলে হায়াত বাড়ে।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে। আবু হুরায়রা (র) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার জীবিকা প্রশস্ত এবং আয়ু বৃদ্ধি হওয়ার দ্বারা আনন্দিত হতে চায়, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে।

【5】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।

ইবনে উমার (রাঃ) যে ব্যক্তি নিজ প্রভুকে ভয় করে এবং আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে, তার মৃত্যু পিছিয়ে দেয়া হয়, তার সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালোবাসে। ইবনে উমার (রাঃ) যে ব্যক্তি নিজ প্রভুকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে, তার আয়ু ও ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালোবাসে।

【6】

অনুচ্ছেদ ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুসারে ঘনিষ্ঠতর আচরণ।

মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তোমাদের পিতাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর নৈকট্যের ক্রমানুসারে নিকটাত্মীয় সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। আবু আইউব সুলায়মান (র) আবু হুরায়রা (রাঃ) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা জুমআর রাতে আমাদের এখানে এলেন এবং বললেন, আমি প্রত্যেক আত্মীয়তা ছিন্নকারীকে ভালোবাসি না। আমাদের এখানে এরূপ কেউ থাকলে সে যেন উঠে যায়। কিন্তু কেউ মজলিস থেকে উঠেনি। তিনি তিনবার একথা বললেন। এক যুবক তার ফুফুর কাছে এলো। সে তার সাথে দুই বছর যাবত সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিল। সে তার নিকট প্রবেশ করলে সে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি কেন এসেছে? যুবক বললো, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি। সে বললো, তুমি তার কাছে ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি কেন এরূপ বলেন? তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আদম সন্তানের আমলসমূহ আল্লাহর কাছে প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না। ইবনে উমার (রাঃ) কোন ব্যক্তি তার নিজের জন্য এবং নিজ পরিবারের জন্য সওয়াবের আশায় যা ব্যয় করে, তার প্রতিটির জন্য আল্লাহ তাকে প্রতিদান দেন। তোমার পোষ্যদের থেকে ব্যয় করা শুরু করো এবং তারপর অবশিষ্ট থাকলে পরবর্তী ঘনিষ্ঠজনকে দান করো, তারপর অবশিষ্ট থাকলে হস্ত আরো সম্প্রসারিত করো।

【7】

অনুচ্ছেদঃ যাদের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকে তাদের উপর রহমাত নাযিল হয় না।

আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকলে তাদের উপর আল্লাহর রহমাত নাযিল হয় না।

【8】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর পাপ।

জুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ রেহেম (রক্তের বাঁধন) রহমানের অংশবিশেষ। সে বলবে, “হে প্ৰভু! আমি মযলুম, হে প্ৰভু! আমি ছিন্নকৃত, হে প্ৰভু! আমি আমি...। তখন আল্লাহ তাকে জবাব দিবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে ছিন্ন করবে, আমিও তাকে ছিন্ন করবো এবং যে তোমাকে সংযুক্ত রাখবে, আমিও তাকে সংযুক্ত রাখবো? সাঈদ ইবনে সামআন (র) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বালকের ও নির্বোধের নেতৃত্ব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি। সাঈদ ইবনে সামআন (র) বলেন, ইবনে হাসান আল-জুহানী (র) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তার নিদর্শন কি? তিনি বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে, বিভ্রান্তকারীর আনুগত্য করা হবে এবং সৎপথ প্রদর্শনকারীর অবাধ্যাচরণ করা হবে।

【9】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর পার্থিব শাস্তি।

আবু বাকরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহু যেসব পাপীকে পার্থিব জগতেই তার পাপের ত্বরিৎ শাস্তি দেন, তা হলো আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী ও বিদ্রোহীর পাপ এবং আখেরাতেও তার জন্য শাস্তি জমা রাখেন।

【10】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী স্বার্থপর।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সা) বলেনঃ প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষাকারী প্রকৃত আত্মীয় রক্ষাকারী নয়। বরং আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে যে ব্যক্তি তা যুক্ত করে সে হলো আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষাকারী।

【11】

অনুচ্ছেদঃ বিবেক বর্জিত আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারীর ফযীলাত।

বারাআ (রাঃ) এক বেদুইন এসে বললো, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন, তোমার সংক্ষিপ্ত ভাষণ যদি এই হয়ে থাকে তাহলে তুমি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছো। গোলাম আযাদ করো এবং গর্দান মুক্ত করো। সে বললো, দুইটা একই বস্তু নয় কি? তিনি বলেনঃ নাসাঈ, গোলাম আযাদ করা তো কোন গোলামকে আযাদ করাই এবং গর্দান মুক্ত করা মানে আত্মীয়-স্বজনদের মুক্ত করা। যদি তা না পারো, তবে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। যদি তার সামথ্যও না হয়, তবে সদবাক্য বলা ছাড়া মুখ বন্ধ রাখবে।

【12】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইসলাম-পূর্ব যুগে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করেছে।

হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে বলেন, আমি জাহিলী যুগে যেসব কাজ করেছি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার, দাসমুক্তি এবং দান-খয়রাত ইত্যাদি, তার কোন প্রতিদান আমি পাবো কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমার পূর্ববর্তী পুণ্যসমূহসহ তুমি মুসলমান হয়েছো।

【13】

অনুচ্ছেদঃ মুশরিক আত্মীয়ের সাথে রক্তের বন্ধন ও পরস্পর উপহারাদি বিনিময়।

ইবনে উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) একটি লাল বর্ণের রেশমী চাদর দেখে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি তা খরিদ করতেন তবে জুমুআর দিন এবং আপনার নিকট বাইরের প্রতিনিধি দল এলে তা পরতেন। তিনি বলেনঃ হে উমার! যার পরকাল বলতে কিছু নেই সে এটা পরবে। পরে অনুরূপ কিছু লাল বর্ণের রেশমী চাদর নবী (সাঃ)-কে উপঢৌকন দেয়া হয়। তিনি তা থেকে একটা চাদর উমার (রাঃ)-কে উপহার পাঠান। উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে এটা পাঠিয়েছেন, অথচ আপনি ইতিপূর্বে এ সম্পর্কে যা বলেছেন তা আমি শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমার পরিধানের জন্য এটা আমি তোমাকে দেইনি। অবশ্য আমি এজন্য তোমাকে এটা দিয়েছি যে, তা বিক্রয় করবে অথবা কাউকে পরতে দিবে। অতএব উমার (রাঃ) তার এক বৈপিত্রেয় মুশরিক ভাইকে তা উপহার দেন (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, নাসাঈ)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষার্থে তোমাদের বংশ পরিচিতি জেনে রাখো।

জুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেন, তোমাদের বংশ পরিচিতি (নসবনামা) জেনে রাখো, অতঃপর আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। আল্লাহর শপথ! ঘটনাক্রমে কোন ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে কিছু ঘটে যায়। যদি সে জানতে পারতো যে, তার এবং অপরজনের মধ্যে রক্তের বন্ধন রয়েছে তাহলে তা তাকে তার ভাইকে অপদস্থ করা থেকে বিরত রাখতো (তিরমিযী, তাবারানী)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তোমরা তোমাদের নসবনামা জেনে রাখো, তোমাদের আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। কেননা দূরাত্মীয়ও সম্পর্কের কারণে নিকটতর হয়ে যায় এবং নিকটাত্মীয়ও সম্পর্কের অভাবে দূরে চলে যায়। প্রতিটি রক্তের বন্ধন কিয়ামতের দিন তার সংশ্লিষ্ট জনের সামনে আসবে এবং সে যদি তাকে দুনিয়ায় যুক্ত রাখে, তবে সে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। কিন্তু সে যদি তাকে দুনিয়ায় ছিন্ন করে থাকে, তবে সে তার বিরুদ্ধে সম্পর্ক ছিন্নের সাক্ষ্য দিবে (হাকিম)।

【15】

অনুচ্ছেদঃ মুক্তদাস কি বলবে, আমি অমুকের সাথে সম্পৃক্ত?

আবদুর রহমান ইবনে আবু হাবীব (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কোন বংশের লোক? আমি বললাম, আমি তায়েম তামীম গোত্রের। তিনি বলেন, তুমি কি সে বংশভুক্ত অথবা তাদের মুক্তদাস? আমি বললাম, আমি তাদের মুক্তদাস। তিনি বলন, তাহলে তুমি বললে না কেন যে, তুমি তাদের মুক্তদাস?

【16】

অনুচ্ছেদঃ কোন গোষ্ঠীর মুক্তদাস তাদের অন্তর্ভুক্ত।

রিফায়া ইবনে রাফে (রাঃ) নবী (সাঃ) উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ তোমার গোষ্ঠীর লোকজনকে আমার কাছে সমবেত করো। অতএব তিনি তাদেরকে সমবেত করলেন। তারা নবী (সাঃ)-এর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করে বলেন, আমার গোষ্ঠীর লোকজনকে আপনার কাছে সমবেত করেছি। আনসারগণ তা শুনতে পেয়ে (মনে মনে) বলেন, নিশ্চয় কুরাইশদের সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়েছে। অতএব তাদেরকে কি বলা হয় তা শোনার জন্য দর্শক ও শ্রোতা এসে হাযির হলো। নবী (সাঃ) বাইরে এসে তাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে তোমাদের ছাড়া অন্য কেউ আছে কি? তারা বলেন, হাঁ, আমাদের মধ্যে আমাদের বন্ধুগোত্র, আমাদের বোনপুত এবং আমাদের মুক্তদাসগণও আমাদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ আমাদের বন্ধুগোত্র আমাদের অন্তর্ভুক্ত, আমাদের বোনপুত্ররা আমাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আমাদের মুক্তদাসগণও আমাদের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা শোনো! তোমাদের মধ্যকার আল্লাহভীরু ব্যক্তিগণই আমার বন্ধু। তোমরা যদি তাই হও তবে তো তাই। অন্যথায় লক্ষ্য করো কিয়ামতের দিন যেন এমন না হয় যে, লোকজন তো তাদের সৎকর্মসমূহ নিয়ে আসবে, আর তোমরা আসবে তোমাদের পাপের বোঝাসমূহ নিয়ে এবং তা তোমাদের পক্ষ থেকে পেশ করা হবে। অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত উচু করে তা কুরাইশদের মাথার উপর রেখে ডাক দিয়ে বলেনঃ হে লোকসকল! কুরাইশগণ আমানতদার। যে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে সে সমূহ বিপদ ডেকে আনবে। আল্লাহ তাকে অধঃমুখে উপুড় করে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। তিনি এ কথা তিনবার বলেন (আবু দাউদ, হাকিম)।