20. জন্মোৎসব ও খতনা অনুষ্ঠান

【1】

অনুচ্ছেদঃ খতনা (লিংগাগ্রের ত্বকচ্ছেদন)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ইবরাহীম (আঃ) আশি বছরোর্দ্ধ বয়সে খতনা করেন। তিনি কাদূম নামক স্থানে খতনা করেন। ইমাম বুখারী (র) বলেন, ‘কাদুম’ একটি জায়গার নাম। (বুখারী, মুসলিম)

【2】

অনুচ্ছেদঃ নারীর খতনা করা।

উম্মুল মুহাজির (র) আমি রূম এলাকা (এশিয়া মাইনর) থেকে যুদ্ধবন্দিনীরূপে নীত হই। উসমান (রাঃ) আমাদের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। আমি এবং অপর একজন ব্যতীত আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। উসমান (রাঃ) বলেন, এই দুই নারীকে নিয়ে যাও, তাদের (ভগাংকুর) নিচু করো এবং তাদের পবিত্র করো।

【3】

অনুচ্ছেদঃ খতনা অনুষ্ঠানের দাওয়াত।

সালেম (র) ইবনে উমার (রাঃ) আমার ও নাঈমের খতনা করালেন। তিনি আমাদের জন্য একটি মেষ যবেহ করেন। আমাদের স্মরণ আছে যে, আমরা আনন্দভরে শিশুদের বলতাম, আমাদের জন্য একটি মেষ যবেহ করা হয়েছে।

【4】

অনুচ্ছেদঃ খতনা উপলক্ষে আনন্দ অনুষ্ঠান।

উম্মু আলকাম (র) আয়েশা (রাঃ)-র ভ্রাতুষ্পুত্রীদের খতনা করানো হলো। আয়েশা (রাঃ)-কে বলা হলো, তাদেরকে ভুলানোর জন্য কাউকে ডাকবো না কি? তিনি বলেন, অবশ্যই। অতএব হুদীর (উট চরানোর গান) গায়ককে ডেকে পাঠানো হলো। সে আসলো। আয়েশা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে তাকে মাথার চুল ঝাকড়িয়ে গীত পরিবেশন করতে দেখেন। তার মাথায় ছিল পর্যাপ্ত চুল। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আহ! একটি শয়তান, একে বের করে দাও, একে বের করে দাও।

【5】

অনুচ্ছেদঃ যিম্মী (অমুসলিম নাগরিক) প্রদত্ত দাওয়াত।

উমার (রাঃ)-র মুক্তদাস সালেম (র) আমরা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-র সাথে সিরিয়ায় পৌঁছলে তার নিকট এক (খৃষ্টান) ভূস্বামী এসে বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি আপনার জন্য আহার্য তৈরি করেছি। আমি আশা করি যে, আপনার সম্ভ্রান্ত পারিষদবর্গসহ আপনি আমার এখানে আসবেন। তা আমার কাজে শক্তি যোগাবে এবং আমার শরাফত বৰ্দ্ধিত হবে। উমার (রাঃ) বলেন, তোমাদের গির্যাসমূহে (জীব-জন্তুর) চিত্রাবলী থাকা অবস্থায় আমরা তাতে প্রবেশ করতে পারি না।

【6】

অনুচ্ছেদঃ বাঁদীর খতন করানো।

উম্মুল মুহাজির (র) আমি রুম এলাকায় যুদ্ধবন্দী হই। উসমান (রাঃ) আমাদের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। আমাদের মধ্যে আমি এবং অপর একজন ব্যতীত কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। উসমান (রাঃ) বলেন, এই দুই নারীর খতনা করাও এবং তাদের পবিত্র করো। আমি উসমান (রাঃ)-র খেদমত করতাম।

【7】

অনুচ্ছেদঃ বড়োদের খতনা করানো।

আবু হুরায়রা (রাঃ) ইবরাহীম (আঃ) এক শত বিশ বছর বয়সে খতনা করেন। অতঃপর তিনি আশি বছর জীবিত ছিলেন। সাঈদ (র) বলেন, ইবরাহীম (আঃ) হলেন খতনাকারী প্রথম ব্যক্তি, তিনিই প্রথম গোঁফ কাটেন, তিনিই প্রথম নখ কাটেন এবং তিনিই প্রথম সাদা চুল (বার্ধক্যের চিহ্ন) দেখেন। তিনি বলেন, হে প্ৰভু! এটা কি? তিনি বলেন, গাম্ভীর্য ও মর্যাদা। তিনি বলেনঃ হে প্ৰভু! আমার গাম্ভীর্য ও মর্যাদা বৰ্দ্ধিত করুন। (বুখারী, মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান) সালেম ইবনে আবুয যিয়াল (র) আমি হাসান বসরী (র)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা মালেক ইবনুল মুনযির সম্পর্কে কেন হতবাক হচ্ছে? তিনি কাসকারবাসীদের কতক প্রবীণ লোকের নিকট গেলেন, তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তিনি তাদের তদারক করে দেখে তাদের নির্দেশ দিলে তারা খতনা করায়। এটা শীত মৌসুমের ঘটনা। আমি জানতে পারলাম যে, তাদের কতক মারা গেছে। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাবশী, রূমী ইত্যাদি জাতির লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে কিন্তু তাদের কোনরূপ তদারক করে দেখা হয়নি (খতনা করেছে কি নাসাঈ)। ইবনে শিহাব (র) কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে সে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তাকে খতনা করার নির্দেশ দেয়া হতো।

【8】

অনুচ্ছেদঃ শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষে দাওয়াত।

বিলাল ইবনে কাব আল-আককী (র) আমি, ইবরাহীম ইবনে আদহাম, আবদুল আযীয ইবনে কুদাইদ ও মূসা ইবনে ইয়াসার (র) ইয়াহইয়া ইবনে হাসান আল-বাকরী আল-ফালাসতিনীর সাথে তার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলাম। তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। মূসা রোযাদার হওয়ায় আহার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ইয়াহইয়া বলেন, চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে কিনানা গোত্রীয় আবু কিরসাফা (রাঃ) ডাকনামের নবী (সাঃ)-এর একজন সাহাবী আমাদের ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার পিতার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে তিনি তাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল তার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাংলেন। ইবরাহীম (র) উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে তার চাদরখানা উপটৌকন দেন এবং মূসাও রোযা ভাংগেন। ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু কিরসাফা (রাঃ)-র নাম জানদারা ইবনে খায়শানা।

【9】

অনুচ্ছেদঃ শিশুকে মিষ্টিমুখ (তাহনীক) করানো।

আনাস (রাঃ) আবু তালহা (রাঃ)-র পুত্র আবদুল্লাহ যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিন আমি তাকে নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলাম। নবী (সাঃ) তখন আবা পরিহিত অবস্থায় তাঁর একটি উটের শরীর মালিশ করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার সাথে খেজুর আছে কি? আমি বললাম, হাঁ। আমি কয়েকটি খেজুর তাঁকে দিলাম। তিনি সেগুলো তাঁর মুখে ভরে চিবালেন, অতঃপর শিশুর মুখ ফাঁক করে তা তার মুখে দিলেন। শিশুটি তা চুষতে লাগলো। তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ খেজুর হলো আনসারদের প্রিয়। তিনি তার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

【10】

অনুচ্ছেদঃ সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।

মুআবিয়া ইবনে কুররা (র) আমার সন্তান ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে আমি নবী (সাঃ)-এর একদল সাহাবীকে দাওয়াত করে আহার করাই। তারা দোয়া করলেন। আমি বললাম, আপনারা দোয়া করেছেন। আল্লাহ আপনাদের দোয়ার উসীলায় আপনাদের বরকত দান করুন। আমিও এখন কতগুলো দোয়া করবো এবং আপনারা আমীন বলবেন। রাবী বলেন, আমি তার দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তার জন্য অনেক দোয়া করলাম। রাবী বলেন, আমি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করছি।

【11】

অনুচ্ছেদঃ ভূমিষ্ঠ শিশু পুত্র বা কন্যা যাই হোক, সুস্থ জন্মগ্রহণ করায় যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করলো।

কাছীর ইবনে উবায়েদ (র) আয়েশা (রাঃ)-র পরিবারে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন না যে, তা পুত্র না কন্যা সন্তান। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, তা সুঠামদেহী পয়দা হয়েছে তো? যদি হাঁ বলা হতো, তবে তিনি বলতেন, জগতসমূহের প্রভু আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা।

【12】

অনুচ্ছেদঃ নাভীর নিচের লোম মুণ্ডন করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ পাঁচটি স্বভাব সম্মত বিষয়। গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, নাভীর নিচের লোম কামানো, বগলের নিচের লোম উপড়ানো এবং মিসওয়াক করা। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, তাহাবী, ইবনে হিব্বান)

【13】

অনুচ্ছেদঃ (কোন কাজের জন্য) সময় নির্ধারণ।

নাফে (র) ইবনে উমার (রাঃ) প্রতি মাসের পনেরো তারিখে (হাত-পায়ের) নখ কাটতেন এবং প্রতি মাসে ক্ষৌরকার্য করতেন ।