4. প্রতিবেশীর সাথে সাদাচার

【1】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী সম্পর্কে নসীহত।

আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ জিবরাঈল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, হিব্বান)। আবু শুরায়হ আল-খুযাঈ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াপরবশ হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে সেন তার মেহমানের সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অন্যথায় নীরব থাকে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, তাহাবী)।

【2】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অধিকার।

মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীগণকে যেন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলেন, হারাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশটি নারীর সাথে যেনায় লিপ্ত হওয়া তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তার যেনা করার চেয়ে হালকা (পাপ)। পুনরায় তিনি তাদেরকে চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলেন, হারাম, মহামহিম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশ পরিবারে চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে হালকা (অপরাধ) (আবু দাউদ)।

【3】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশী থেকে (সদাচার) শুরু করবে।

ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন (বুখারী, মুসলিম)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার গোলামকে বলতে লাগলেন, তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তুমি কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অবিরত নসীহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো ওয়ারিস বানাবেন (আবু দাউদ, তিরমিযী)। আয়েশা (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ জিবরাঈল (আবু দাউদ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো অধিক নসীহত করতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন (১০০ নং দ্র.)।

【4】

অনুচ্ছেদঃ নিকটতর প্রতিবেশী থেকে উপহারাদি দান শুরু করবে।

আয়েশা (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে কোন প্রতিবেশীকে আমি উপহারাদি দিবো? তিনি বলেনঃ যার (ঘরের) দরজা তোমার অধিকতর নিকটবর্তী তাকে (বুখারী, আবু দাউদ, তাহাবী)। আয়েশা (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে কোন প্রতিবেশীকে আমি উপহারাদি দিবো? তিনি বলেনঃ যার দরজা তোমার অধিকতর নিকটবর্তী তাকে (বুখারী, আবু দাউদ)।

【5】

অনুচ্ছেদঃ নিকটতর অতঃপর পরবর্তী নিকটতর প্রতিবেশী।

হাসান (র) তাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নিজের ঘর থেকে সামনের চল্লিশ ঘর, পেছনের চল্লিশ ঘর, ডানের চল্লিশ ঘর এবং বামের চল্লিশ ঘর তোমাদের প্রতিবেশী। আবু হুরায়রা (রাঃ) নিকটবর্তী প্রতিবেশীকে বাদ দিয়ে দূরতর প্রতিবেশী থেকে (উপঢৌকনাদি প্রেরণ) শুরু করা যাবে নাসাঈ, বরং দূরবর্তী জনের পূর্বে নিকটবর্তী জন থেকে তা শুরু করতে হবে।

【6】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর জন্য নিজের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়।

ইবনে উমার (রাঃ) এমন একটি কাল আমরা অতিবাহিত করেছি যখন কারো নিকট তার মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে তার দীনার ও দিরহামের উপযুক্ত প্রাপক আর কেউ ছিলো না। আর এখন এমন যুগ এসেছে যখন দীনার ও দিরহামই আমাদের কারো নিকট তার মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ অনেক প্রতিবেশী কিয়ামতের দিন তার প্রতিবেশীকে অভিযুক্ত করবে এবং বলবে, এই ব্যক্তি আমার জন্য তার দ্বার রুদ্ধ করে রেখেছিল এবং আমাকে তার সদাচার থেকে বঞ্চিত করেছে।

【7】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীকে বাদ রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করা নিষেধ।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয় (বাযযার, হাকিম, তাহাবী)।

【8】

অনুচ্ছেদঃ তরকারীতে বেশী ঝোল রাখবে এবং তা প্রতিবেশীদেরও দিবে।

আবু যার (রাঃ) আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু (সাঃ) আমাকে তিনটি উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) নেতা নাক-কান কাটা গোলাম হলেও আমি তার নির্দেশ শুনবো এবং আনুগত্য করবো। (২) তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে বেশী ঝোল রাখবে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীদের দিকে লক্ষ্য করবে এবং সদিচ্ছা সহকারে তাদের তা পৌঁছাবে। (৩) নামায তার নির্ধারিত ওয়াক্তে আদায় করবে। যদি দেখো যে, ইমাম নামায পড়েছেন এবং তোমার নামাযও তুমি পড়েছো, তাহলে তোমার নামায তো হয়েছে নতুবা ইমামের সাথে তোমার নামায নফল হিসেবে গণ্য হবে (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, হিব্বান)। আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ হে আবু যার ! তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে পানি (ঝোল) বেশী রাখো এবং তা তোমার প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলাও (মুসলিম, আবু দাউদ, দারিমী, হিব্বান)।

【9】

অনুচ্ছেদঃ উত্তম প্রতিবেশী

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহর নিকট সেই সঙ্গী উত্তম যে নিজ সঙ্গীদের নিকট উত্তম। আল্লয়হর নিকট সেই প্রতিবেশী উত্তম যে নিজ প্রতিবেশীদের নিকট উত্তম (তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম, দারিমী)।

【10】

অনুচ্ছেদঃ সৎ প্রতিবেশী।

নাফে ইবনুল হারিস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ একজন মুসলমানের জন্য প্রশস্ত বাসভবন, সৎ প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন (আবু দাউদ, হাকিম)।

【11】

অনুচ্ছেদঃ নিকৃষ্ট প্রতিবেশী।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর একটি দোয়া হলোঃ “হে আল্লাহ! আমি (আমার ) আবাসস্থলে তোমার নিকট দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে আশ্রয় চাই। কেননা দুনিয়ার প্রতিবেশী তো বদল হতে থাকে” (নাসাঈ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।

【12】

অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত নামায পড়ে, সারা দিন রোযা রাখে, ভালো কাজ করে, দান-খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদেরকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেইবনে মাজাহ, সে জাহান্নামী। পুনরায় সাহাবীগণ বলেন, অমুক নারী ফরয নামায পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সে জান্নাতী (আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, বাযযার)। উমারা ইবনে গুরাব (র) তার ফুফু তাকে বলেছেন যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের কাউকে তার স্বামী কামনা করলে সে নিজেকে অভিমান অথবা অনিচ্ছা বশত স্বামীর নিকট সমর্পণ করে না। এতে কি আমাদের কোন দোষ হবে? তিনি বলেন, হাঁ। তোমার উপর তার অধিকার এই যে, সে তোমাকে কামনা করলে তুমি তার নিকট নিজেকে সমর্পণ করবে। তুমি তখন উটের পিঠে থাকলেও তাকে বাধা দিতে পারবে না। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, আমাদের কেউ ঋতুবতী হয়, অথচ তার ও তার স্বামীর একটি মাত্র লেপ বা বিছানাসাঈ, তখন সে কি করবে? তিনি বলেন, সে তার নিম্নাঙ্গে উত্তমরূপে বস্ত্র কষে বাঁধবে, অতঃপর তার সাথেই ঘুমাবে। এর উপর দিয়ে সে যা করতে চায় করবে। সাথে সাথে নবী (সাঃ) কি করতেন তাও আমি তোমাকে অবহিত করছি। আমার পালার রাতে আমি কিছু যব পিষলাম এবং তাঁর জন্য পিঠা তৈরি করলাম। তিনি ঘরে এসে পুনরায় মসজিদে চলে গেলেন। তিনি ঘুমাতে উদ্যত হলে ঘরের দরজা বন্ধ করতেন, কলসের মুখ বন্ধ করতেন, পাত্রসমূহ উপুড় করে রাখতেন এবং বাতি নিভিয়ে দিতেন। আমি অপেক্ষায় থাকলাম যে, তিনি ফিরে আসবেন এবং আমি তাঁকে পিঠা খাওয়াবো। কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি। শেষে ঘুম আমাকে পরাভূত করলো এবং শীত তাঁকে পীড়া দিলো। তিনি আমার নিকট এসে আমাকে তুললেন, তারপর বললেনঃ আমাকে উত্তাপ দাও, আমাকে উত্তাপ দাও। আমি তাঁকে বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বলেনঃ তথাপি তোমার উরুদ্বয় একটু উন্মুক্ত করো। আমি আমার উরুদ্বয় উন্মুক্ত করলাম। তিনি তার গাল ও মাথা আমার উরুদ্বয়ের উপর রাখলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি উত্তপ্ত হলেন। আমাদের প্রতিবেশীর একটি পোষা বকরী এসে পিঠা খেতে উদ্যত হলো। সে একটি পিঠা মুখে তুলে নিলো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি নড়াচড়া করায় নবী (সাঃ)-এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি বকরীটিকে দরজা দিয়ে তাড়িয়ে দিলাম। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি যে পিঠাটি উঠিয়েছো তা রেখে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তার বকরীর কারণে কষ্ট দিও না। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।

【13】

অনুচ্ছেদঃ এক প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে এমনকি বকরীর ক্ষুর উপটৌকন দেওয়াকেও যেন তুচ্ছ মনে না করে।

আমর ইবনে মুআয আল-আশহালী (র) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে মুমিন নারীগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যেন তার প্রতিবেশীকে যৎসামান্য দান করাকেও তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা রান্না করা বকরীর বাহুর সামান্য গোশতও হয় (বুখারী, মুসলিম, হাকিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মুসলিম নারীগণ, হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীকে বকরীর (রান্না করা) ক্ষুরও (উপঢৌকন) দেওয়াকে তুচ্ছ মনে না করে (বুখারী, মুসলিম)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর অভিযোগ ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তোমার ঘরের আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। অতএব সে ফিরে এসে তার ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিলো। এতে তার ঘরের সামনে লোকজন জড়ো হলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি হয়েছে? সে বললো, আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তা নবী (সাঃ)-এর নিকট বললে তিনি বলেনঃ যাও, ঘরে গিয়ে তোমার আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। তখন তারা বলতে লাগলো, “হে আল্লাহ! তার উপর তোমার অভিসম্পাত, হে আল্লাহ ! তাকে লাঞ্ছিত করো”। বিষয়টি প্রতিবেশী জানতে পেরে সেখানে এসে বললো, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না (আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। আবু জুহাইফা (রাঃ) এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নবী (সাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করলো। তিনি বলেনঃ তুমি তোমার মালপত্র তুলে রাস্তায় রেখে দাও। যে লোকই সেই পথ দিয়ে যাবে সে-ই তাকে অভিশাপ দিবে। অতএব যে লোকই সেই পথে গেলো সে-ই তাকে অভিশাপ দিলো। তখন সেই ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলে তিনি বলেনঃ লোকদের নিকট থেকে তুমি কি পেলে ? তিনি আরো বলেনঃ লোকজনের অভিসম্পাতের সাথে রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ। অতঃপর তিনি অভিযোগকারীকে বলেনঃ তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে (তাবারানী, হাকিম)। জাবের (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আসলো। সে ‘রুকন’ ও ‘মাকাম’-এর মধ্যবর্তী স্থানে বসা অবস্থায় নবী (সাঃ) এসে পৌছলেন। সে দেখলো যে, তিনি মাকামের নিকট একজন সাদা বস্ত্র পরিহিত লোকের সামনে দাঁড়ানো, যেখানে জানাযার নামায পড়া হয়। সে নবী (সাঃ)-এর সামনে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক। আপনার সামনে সাদা বস্ত্র পরিহিত যে লোকটিকে আমি দেখলাম তিনি কে? তিনি বলেনঃ তুমি কি তাকে দেখতে পেয়েছো? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ তুমি প্রভূত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করছো। তিনি আমার প্রভুর বার্তাবাহক জিবরাঈল (আবু দাউদ)। তিনি আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো নসীহত করতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে তার (অপর প্রতিবেশীর) ওয়ারিস বানাবেন।

【15】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে দিতে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলো।

আবু আমের আল-হিমসী (র) সাওবান (রাঃ) বলতেন, দুই ব্যক্তি তিন দিনের অধিক কাল সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকলে তাদের একজনের সর্বনাশ হবেই। আর সম্পর্কচ্ছেদরত অবস্থায় তারা মারা গেলে উভয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে প্রতিবেশী তার অপর প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সাথে হীন আচরণ করে, ফলে তাতে সে নিজ বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, সে ধ্বংস হলো।

【16】

অনুচ্ছেদঃ ইহুদী প্রতিবেশী।

মুজাহিদ (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে গোশত দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন (দারিমী, তিরমিযী)।

【17】

অনুচ্ছেদঃ মান-মৰ্যাদা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক সম্মানিত? তিনি বলেনঃ তাদের মধ্যকার সবাধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তি সর্বাধিক মর্যাদাবান। তারা বলেন, আমরা এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলেনঃ তাহলে মানুষের মধ্যে সবাধিক সম্মানিত হলেন আল্লাহর নবী ইউসুফ (আবু দাউদ), যিনি আল্লাহর নবী ইয়াকুব (আবু দাউদ)-এর পুত্র এবং আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু ইবরাহীম (আবু দাউদ)-এর প্রপৌত্র। তারা বলেন, আমরা আপনাকে এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা কি আরবের খনি (খান্দান) সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছো। তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে তোমাদের মধ্যে যারা উত্তম বিবেচিত হতো ইসলামী যুগেও তারাই উত্তম বিবেচিত হবে, যখন তারা ধর্মের জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জন করবে (বুখারী, মুসলিম)।