6. বদান্যতা, কৃপণতা ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি

【1】

অনুচ্ছেদঃ দুনিয়ার সৎকর্মশীলগণই আখেরাতে সৎকর্মশীল হিসেবে গণ্য হবে।

কাবীসা ইবনে বুরমা আল-আসাদী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়ার সৎকর্মশীলগণই আখেরাতে সৎকর্মশীল গণ্য হবে এবং দুনিয়ার পাপিষ্ঠরাই আখেরাতেও পাপিষ্ঠ গণ্য হবে (উসদুল গা বাযযার)। হারমালা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি রওনা হয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতেই নবী (সাঃ) তাকে চিনে ফেলেন। তিনি রওয়ানা হলে আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহর শপথ আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট যাবো এবং আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়াবো। আমি হেঁটে হেঁটে তার নিকট গিয়ে তার সামনে দাড়ালাম। আমি বললাম, আপনি আমাকে কি কাজের নির্দেশ দিবেন? তিনি বলেনঃ হে হারমালা ! তুমি সৎকাজ করবে এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর আমি ফিরে এসে আমার বাহনের নিকট এলাম, আবার ফিরে গিয়ে তার নিকট আমার স্থানে দাঁড়ালাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দিবেন? তিনি বলেনঃ “হে হারমালা! তুমি সৎকাজ করবে এবং পাপ কাজ বর্জন করবে। তুমি লক্ষ্য করো, তোমার কান কি শুনতে পছন্দ করে? তোমার সম্প্রদায় তোমার অনুপস্থিতিতে যা বললে তুমি আনন্দ পাও তা করো এবং তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার সম্প্রদায় যা বললে তুমি অপছন্দ করো তা থেকে বিরত থাকো”। হারমালা (রাঃ) বলেন, আমি ফিরে এসে ভেবে দেখলাম, তা এমন দু’টি কথা, যাতে কিছুই বাদ পড়েনি (তায়ালিসী, আদাবুল মুহাদ্দিস, ইসা বাযযার)। সালমান (রাঃ) পৃথিবীর সৎকর্মশীল লোকেরাই আখেরাতে সৎকর্মশীল গণ্য হবেন। মহানবী (সাঃ) একথা বলেছেন।

【2】

অনুচ্ছেদঃ প্রতিটি সৎকাজ দান-খয়রাততুল্য।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ প্রতিটি সৎকাজ দান-খয়রাততুল্য (বুখারী, মুসলিম, হাকিম)। আবু মূসা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমানের দান-খয়রাত করা ওয়াজিব। সাহাবীগণ বলেন, সে যদি তা করতে সক্ষম না হয় বা তা করতে না পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে স্বহস্তে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং দান-খয়রাত করবে। সাহাবীগণ বলেন, যদি তার সে সামর্থ্য না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে দুস্থ-বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। সাহাবীগণ বলেন, সে যদি তাও না করতে পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে কল্যাণের বা সৎকাজের আদেশ দিবে। তারা বলেন, যদি সে তাও না করতে পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে অপরের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে। এটাই তার জন্য দানস্বরূপ।-(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ) আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে বলা হলো, সর্বোত্তম আমল কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে জিহাদ। বলা হলো, আযাদ করার জন্য সর্বোত্তম গোলাম কে? তিনি বলেনঃ যার মূল্য সর্বাধিক এবং যে নিজ মনিব পরিবারের অধিক প্রিয়। প্রশ্নকারী বললো, আপনার কি মত, আমি যদি কোন কোন কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বলেনঃ তাহলে কোন কারিগরের কাজে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞ লোকের কাজ করে দাও। সে বললো, আপনি কি মনে করেন, যদি তা করতে আমি অপারগ হই? তিনি বলেনঃ তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ থাকতে দাও। কেননা তাও সদাকা যা তোমার নিজের জন্য করতে পারো (২১৯ নং দ্র.)। আবু যার (রাঃ) বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিত্তবানরা সওয়াব লুটে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা যেমন নামায পড়ি, তারাও নামায পড়েন, আমরা যেমন রোযা রাখি, তারাও রোযা রাখেন এবং তারা তাদের উদৃত্ত মাল থেকে দান-খয়রাত করেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ কি তোমাদের জন্য দান-খয়রাতের ব্যবস্থা রাখেননি? নিশ্চয় প্রতিটি তাসবীহ ও তাহমীদ দানস্বরূপ এবং তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মিলনও দানস্বরূপ। সাহাবীগণ বলেন, তার যৌনমিলনও কি দানস্বরূপ। তিনি বলেনঃ যদি সে হারাম পথে তা চরিতার্থ করতো তবে কি তা তার জন্য পাপ হতো না? অনুরূপ সে তা হালালভাবে চরিতার্থ করলে তার জন্য সওয়াব রয়েছে (মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, ইবনে খুযাইমাহ)।

【3】

অনুচ্ছেদঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ।

আবু বারযা আল-আসলামী (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে একটি আমল শিখিয়ে দিন, যা আমাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেনঃ জনপথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করো (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা অতিক্রমকালে তার সামনে কাঁটা পড়লো। সে বললো, আমি অবশ্যই এই কাঁটা সরিয়ে ফেলবো, যাতে তা কোন মুসলমানকে কষ্ট দিতে না পারে। তাকে (এইবনে মাজাহ) কাজের উসীলায় ক্ষমা করা হয় (বুখারী, মুসলিম, ইবনে হিব্বান)। আবু যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উমাতের ভালো-মন্দ সমুদয় আমল আমার সামনে পেশ করা হলো। আমি তাদের নেক আমলসমূহের মধ্যে জনপথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও দেখতে পেলাম এবং তাদের বদ আমলসমূহের মধ্যে মসজিদে নিক্ষিপ্ত খুখুও দেখতে পেলাম যা মাটি দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়নি (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিব্বান)।

【4】

অনুচ্ছেদঃ উত্তম কথা।

আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আল-খাতমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ প্রতিটি সৎকাজ একটি দানস্বরূপ (আবু দাউদ)। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে কিছু দেয়া হলে তিনি বলতেনঃ যাও, এটা অমুক নারীকে দিয়ে এসো। কেননা সে ছিল খাদীজার বান্ধবী। এটি নিয়ে অমুক মহিলার ঘরে যাও। কেননা সে খাদীজাকে মহব্বত করতো (বাযযার, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। হুযায়ফা (রাঃ) তোমাদের নবী (সাঃ) বলেছেনঃ প্রতিটি সৎকাজই দানস্বরূপ (মুসলিম,দা)।

【5】

অনুচ্ছেদঃ সজি বাগানে গমন এবং থলে ভর্তি জিনিসপত্রসহ তা কাঁধে বহন করে বাড়ি ফেরা।

আমর ইবনে আবু কুররা আল-কিন্দী (র) আমার পিতা আবুল কুররা (র) সালমান (রাঃ)-এর নিকট তার বোনের বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। তিনি তাতে অসম্মত হলেন এবং বুকায়রা নাম্নী নিজ মুক্তদাসীকে বিবাহ করলেন। আবু কুররা (র) সালমান (রাঃ) ও হুযায়ফা (রাঃ)-এর মধ্যকার মনোমালিন্যের কথা জানতে পারলেন। তিনি তার খোঁজে গেলেন। তাকে জানানো হলো যে, তিনি তার সব্জি বাগানে আছেন। তিনি সেখানে গেলেন এবং তার সাক্ষাত পেলেন। তার সাথে সব্জি ভর্তি একটি ঝুড়ি ছিল। তিনি এর হাতার মধ্যে তার লাঠি ঢুকিয়ে তা কাঁধে তুলে নিলেন। তিনি বলেন, হে আবদুল্লাহর পিতা! আপনার ও হুযায়ফা (রাঃ)-র মধ্যে কি ঘটেছে? আবু কুররা (র) বলেন, সালমান (রাঃ) পড়লেন, “মানুষ তাড়াহুড়া প্রবণ” (১৭ : ১১)। অতএব তারা রওয়ানা হয়ে সালমান (রাঃ)-র বাড়িতে এসে পৌছলেন। সালমান (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললেন। আবু কুররাকে অনুমতি দিলে তিনিও ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে একখানা মাদুর বিছানো ছিল। সালমান (রাঃ) বলেন, আপনার দাসীর বিছানায় বসুন। সে নিজের জন্য তা পেতেছে। অতঃপর তিনি তার সাথে কথা শুরু করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসন্তুষ্ট অবস্থায় যা বিভিন্নজনকে বলতেন, হুযায়ফা (রাঃ) তা লোকদের নিকট বর্ণনা করেন। এসব সম্পর্কে আমার নিকট এসে আমাকে জিজ্ঞেস করা হতো। আমি বলতাম, হুযায়ফা-ই তার কথা সম্পর্কে অধিক অবগত। লোকজনের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হওয়া আমি অপছন্দ করতাম। লোকজন আবার হুযায়ফার কাছে গিয়ে বলতো, সালমান (রাঃ) আপনার বক্তব্যকে সমর্থনও করেননি এবং মিথা প্রতিপন্নও করেননি। হুযায়ফা (রাঃ) আমার নিকট এসে বলেন, হে সালমানের মায়ের পুত্র সালমান। আমিও বললাম, হে হুযায়ফার মায়ের পুত্র হুযায়ফা! তুমি বিরত হবে, অন্যথায় আমি উমারকে তোমার সম্পর্কে লিখে জানাবো। আমি তাকে উমারের ভয় প্রদর্শন করলে তিনি আমাকে ত্যাগ করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “আমিও আদমেরই সন্তান। (হে আল্লাহ) আমি আমার কোন উম্মাতকে অকারণে ভর্ৎসনা করলে বা গালি দিলে তুমি তা তার পক্ষে দোয়ারূপে গ্রহণ কর” (আবু দাউদ, আহমাদ)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা আমার সাথে চলো, আমাদের লোকজনের এলাকায় ঘুরে আসি। আমরা রওয়ানা হলাম। আমি ও উবাই ইবনে কাব (রাঃ) ছিলাম সকলের পেছনে। আকাশে মেঘ উঠলে উবাই (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের থেকে এর কষ্ট দূর করো। পরে আমরা অন্যান্যদের সাথে গিয়ে মিলিত হলাম। তাদের হাওদাসমূহ ভিজে গিয়েছিল। তারা জিজ্ঞেস করলো, আমাদের উপর যা (বৃষ্টি) বর্ষিত হলো তা কি তোমাদের উপর হয়নি? আমি বললাম, ইনি (উবাইবনে মাজাহ) মহামহিম আল্লাহর নিকট এর কষ্ট সরিয়ে নেয়ার জন্য দোয়া করেছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, তোমাদের সাথে আমাদের জন্যও দোয়া করলে না কেন (তারীখ ইবনে আসাকির)।

【6】

অনুচ্ছেদঃ ভূ-সম্পত্তি দেখতে যাওয়া।

আবু সালামা (রাঃ) আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-র নিকট আসলাম। তিনি ছিলেন আমার বন্ধু। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের সাথে খেজুর বাগানে বেড়াতে যাবেন না? অতএব তিনি তার কালো চাদর পরিহিত অবস্থায় রওয়ানা হলেন। উম্মু মূসা (র) আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে গাছে উঠে কিছু নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন। তার সাথীরা আবদুল্লাহ (রাঃ)-র উরুর দিকে তাকিয়ে তার কৃশতার কারণে তারা হেসে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমরা কেন হাসছো? (পুণ্যের) পাল্লায় আবদুল্লাহর পা উহুদ পাহাড়ের তুলনায় অধিক ভারী হবে।

【7】

অনুচ্ছেদঃ মুসলমান তার ভাইয়ের আয়নাস্বরূপ।

আবু হুরায়রা (র) মুমিন ব্যক্তি তার ভাইয়ের আয়নাস্বরূপ। সে তার মধ্যে কোনরূপ দোষ দেখতে পেলে তা সংশোধন করে দেয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি তার ভাইয়ের আয়নাস্বরূপ। এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। সে তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের হেফাযত করবে (এবং তার অবর্তমানেও তার হেফাযত করবে) (দারেমী)। মুসতাওরিদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি মুসলমানের মাল থেকে (অবৈধভাবে) গ্রাস করলে, আল্লাহ জাহান্নামের অনুরূপ এক গ্রাস তাকে খাওয়াবেন। কেউ মুসলমানের বস্ত্র (অবৈধভাবে) হরণ করলে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অনুরূপ বস্ত্র পরাবেন। কেউ মুসলমানের প্রতিপক্ষ হয়ে নাম-যশের দাবিদার হলে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন নাম-যশের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন (আবু দাউদ, আহমাদ)।

【8】

অনুচ্ছেদঃ যে ধরনের খেলাধুলা, হাসি-ঠাট্টা ও রসিকতা নিষিদ্ধ।

আবদুল্লাহ ইবনুস সাইব (র) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যেন তার সাথীর কোন বস্তু হস্তগত না করে, ঠাট্টাচ্ছলেও নয়, বাস্তবিকপক্ষেও নয়। তোমাদের কেউ তার সাথীর লাঠি নিলেও তা যেন তাকে ফেরত দেয় (দারিমী, তিরমিযী, তাহাবী)।

【9】

অনুচ্ছেদঃ কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন।

আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আমি ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমাকে একটি বাহন দান করুন। তিনি বলেনঃ আমার কাছে তা নেই। বরং তুমি অমুকের কাছে যাও। হয়তো সে তোমাকে বাহন দিতে পারে। সে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট গেলো এবং সে তাকে বাহন দান করলো। লোকটি নবী (সাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে তাকে তা অবহিত করলো। তিনি বলেনঃ কেউ কল্যাণের পথ দেখালে সে কল্যাণ সাধনকারীর সমান সওয়াব পায় (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)।

【10】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের প্রতি ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন।

আনাস (রাঃ) এক ইহুদী নারী বিষ মিশ্রিত ছাগলের গোশত নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলো। তিনি তার কিছুটা আহার করলেন। তাকে গ্রেপ্তার করে আনা হলো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা কি তাকে হত্যা করবো না? তিনি বলেনঃ না। রাবী বলেন, আমি আজীবন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখগহ্বরে সেই বিষের ক্রিয়া লক্ষ্য করেছি (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)। ওয়াহব ইবনে কায়সান (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ “ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদের থেকে দূরে থাকো” (৭ : ১৯৯)। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এই আয়াতে লোকদের উত্তম চরিত্র গ্রহণের আদেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর শপথ! যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের সাথে থাকবো, ততক্ষণ তাদের থেকে তা গ্রহণ করতে থাকবো (বুখারী, আবু দাউদ)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা জ্ঞান দান করো, দীনকে সহজসাধ্য করো, কঠিন করো না এবং তোমাদের মধ্যকার কেউ ক্রুদ্ধ হলে সে যেন নীরবতা অবলম্বন করে (আবু দাউদ)।

【11】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের সাথে খোলা মনে মেলামেশা করা।

আতা ইবনে ইয়াসার (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, তাওরাতে উক্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, অবশ্যই। আল্লাহর শপথ! তাওরাতেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এমন কতক বৈশিষ্ট্য উক্ত আছে যা কুরআনেও উক্ত আছেঃ “হে নবী! নিশ্চয় আমি আপনাকে সাক্ষ্যদা তাবারানী, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছি” (৩৩ : ৪৫) এবং নিরক্ষরদের আশ্ৰয়স্থল, আপনি আমার বান্দা ও আমার রাসূল। আমি আপনার নাম রেখেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহর উপর নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ মেজাজ, পাষাণহৃদয় ও হাট-বাজারে শোরগোলকারী নন। আপনি মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রতিহত করেন নাসাঈ, বরং ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তুলে নিবেন না যতক্ষণ তাঁর দ্বারা বক্র জাতিকে সরল পথে প্রতিষ্ঠিত না করবেন এবং তারা বলবে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। এর দ্বারা তিনি অন্ধ চক্ষু খুলে দিবেন, বধির কানকে শ্রবণশক্তি দান করবেন, আচ্ছাদিত অন্তরসমূহকে আচ্ছাদনমুক্ত করবেন (বুখারী)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) কুরআনের আয়াতঃ “হে নবী! নিশ্চয় আমি আপনাকে সাক্ষ্যদা তাবারানী, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছি” (৩৩ : ৪৫), তাওরাতে অনুরূপ উল্লেখ আছে (বুখারী)। মুয়াবিয়া (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এমন কথা শুনেছি যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করেছেন। আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ “তুমি সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কারো পেছনে লেগে গেলে তাদের সর্বনাশ করবে”। সুতরাং আমি তাদের ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ হবো না এবং তাদের সর্বনাশও করবো না (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমার এই দুই কান শুনেছে এবং আমার এই দুই চোখ দেখেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দুই হাতে হাসান অথবা হুসাইনের দুই হাত চেপে ধরলেন। তার দুই পা ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পায়ের উপর। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছিলেনঃ আরোহণ করো। বালকটি চড়তে থাকে, এমনকি তার পদদ্বয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বুকের উপর রাখলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমার মুখ উন্মুক্ত করো। অতঃপর তিনি তাকে চুমা দিলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তাকে মহব্বত করুন। কেননা আমি তাকে মহব্বত করি (তাবারানী)।

【12】

অনুচ্ছেদঃ মুচকি হাসি।

কায়েস (র) আমি জারীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখনই আমাকে দেখেছেন, আমার সামনে মুচকি হাসি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এই দরজা দিয়ে কল্যাণময় ও বরকতের অধিকারী এক ব্যক্তি প্রবেশ করবে যার চেহারায় ফেরেশতার হাতের স্পর্শ রয়েছে। জারীর (রাঃ) তখন সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)। মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এমনভাবে হাসতে দেখিনি যাতে তার আলজিভ দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। তিনি আরও বলেন, তিনি মেঘ অথবা বাতাস বইতে দেখলে তাঁর চেহারায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ পেতো। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকেরা মেঘ দেখে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। আর আমি লক্ষ্য করেছি যে, আপনি মেঘ দেখলে আপনার চেহারায় বিরূপ অবস্থা প্রতিভাত হয়। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তা যে শাস্তির বাহক নয় সেই নিশ্চয়তা আমাকে কে দিবে? এক সম্প্রদায়কে বায়ু দ্বারা শাস্তি দেয়া হয়েছিল। এক সম্প্রদায় শাস্তি আসতে দেখে বললো, তা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)।

【13】

অনুচ্ছেদঃ হাসি।

আবু হুরায়রা (র) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ কম হাসো, কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায় (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা বেশি হাসবে না। কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায় (ইবনে মাজাহ, তাবারানী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) তাঁর কতক সাহাবীকে অতিক্রম করছিলেন। তখন তারা হাস্যালাপ ও কথাবার্তায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে, তবে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে। অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং লোকজন কাঁদতে লাগলো। তখন মহামহিম আল্লাহ ওহী নাযিল করেন, হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে কেন নিরাশ করছো। নবী (সাঃ) ফিরে এসে বলেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, সরল পথ অবলম্বন করো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে তৎপর হও (বুখারী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ তুমি আবির্ভূত হলে সশরীরে আবির্ভূত হও এবং প্রস্থান করলেও সশরীরে প্রস্থান করো।

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি এ হাদীস বর্ণনাকালে প্রায়ই মহানবী (সাঃ)-এর উল্লেখ করে বলতেন, যাঁর ভ্রুযুগল প্রশস্ত, বাহুদ্বয় শুভ্র তিনি আমাকে বলেছেনঃ “তুমি যখন আবির্ভূত হবে পূর্ণদেহে আবির্ভূত হবে এবং যখন প্রস্থান করবে পূর্ণদেহে প্রস্থান করবে”। কোন চোখ তাঁর মত কাউকে কখনও দেখেনি এবং কখনও দেখবে না।

【15】

অনুচ্ছেদঃ পরামর্শদাতা হলো আমানতদার।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) আবুল হায়ছাম (রাঃ)-কে বলেনঃ তোমার কি খাদেম আছে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেনঃ আমাদের কাছে বন্দী আসলে তুমি আমাদের নিকট আসবে। তারপর নবী (সাঃ)-এর কাছে দু’জন বন্দী আনা হলো, এদের সাথে তৃতীয় কেউ ছিলো না। তখন আবুল হায়ছাম (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি এদের দুইজনের মধ্যে একজনকে বেছে নাও। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিই আমাকে একজন বেছে দিন। নবী (সাঃ) বলেনঃ যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তাকে বিশ্বস্ত হতে হয়। একে নিয়ে যাও। আমি তাকে নামায পড়তে দেখেছি। তার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। পরে তার স্ত্রী তাকে বলেন, নবী (সাঃ) তার ব্যাপারে যা বলেছেন, তাকে দাসত্বমুক্ত করা ছাড়া অন্যভাবে তার দাবি তুমি পূরণ করতে পারবে না। আবুল হায়ছাম (রাঃ) বলেন, সে স্বাধীন। নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ কোন নবী অথবা খলীফা প্রেরণ করেননি যার সাথে দুইজন অন্তরঙ্গ বন্ধু দেননি। এক বন্ধু তাকে উত্তম কাজের প্রেরণা দেয় এবং পাপ কাজ থেকে বারণ করে এবং অপরটি তার সর্বনাশ সাধন করে। যে ব্যক্তি মন্দ প্ররোচনাদানকারী বন্ধুর প্ররোচনা থেকে রক্ষা পেয়েছে সে রক্ষা পেয়েছ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, তাহাবী)।

【16】

অনুচ্ছেদঃ পরামর্শ করা।

আমর ইবনে দীনার (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিলাওয়াত করেন, “তাদের সাথে কোন কোন ব্যাপারে পরামর্শ করুন” (মুসান্নাফ ইবনে শায় বাযযার, তাবারানী)। হাসান বসরী (র) আল্লাহর শপথ! যে সম্প্রদায়ের লোকজন পরামর্শ করে কাজ করে, তারা সর্বোত্তম পন্থার সন্ধান পেয়ে যায়। তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন, “তাদের বিষয়সমূহ পরামর্শের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়” (৪২ : ৩৮)।

【17】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার ভাইকে ভ্রান্ত পরামর্শ দেয় তার পাপ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমি যা বলিনি তা যে ব্যক্তি আমার প্রতি আরোপ করবে সে যেন দোযখে তার স্থান করে নিলো। কোন ব্যক্তির নিকট তার কোন মুসলমান ভাই পরামর্শ চাইলো কিন্তু সে তাকে ভ্রান্ত পরামর্শ দিলো। সে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। আর যে ব্যক্তি দলীল-প্রমাণ ছাড়াই ফতোয়া দিলো, তার এই ফতোয়াদানের পাপ তার উপরই বর্তাবে (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।

【18】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের পারস্পরিক মহব্বত।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তোমরা পরস্পরকে মহব্বত না করা পর্যন্ত মুসলমান হতে পারবে না। তোমরা সালামের প্রসার ঘটালে তোমাদের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি হবে। সাবধান! তোমরা অবশ্যই বিদ্বেষ পরিহার করবে। কারণ তা মুণ্ডনকারী। আমি তোমাদের বলি না যে, তা চুল মুণ্ডন করে, বরং দীনকে মুণ্ডন করে (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)।

【19】

অনুচ্ছেদঃ স্নেহ-মমতা।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন দুই ব্যক্তির রূহ এক দিনের দূরত্ব থেকে পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করে, অথচ তাদের একজন অপরজনকে কখনো দেখেনি (ইতহাফ)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কতো সুখ-সুবিধার শোকরগোযারী করা হয় না। কতো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়। কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত কিছু আমি দেখেনি (ইতহাফ)। উমাইর ইবনে ইসহাক (র) আমরা আলোচনা করতাম যে, সর্বপ্রথম মানুষের মন থেকে স্নেহ-মমতা তুলে নেয়া হবে।

【20】

অনুচ্ছেদঃ রসিকতা।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) তাঁর এক স্ত্রীর নিকট এলেন। উম্মু সুলাইম (রাঃ)-ও তাদের সাথে ছিলেন। তিনি বলেনঃ “ধীরে হে আনজাশা, ধীরে! তোমার চালান যে কাঁচের চালান হে”! রাবী আবু কিলাবা (র) বলেন, নবী (সাঃ) এমন বাক্য উচ্চারণ করলেন, যদি তোমাদের মধ্যকার কেউ তা বলতো, তবে তোমরা নিশ্চয় তাকে দোষারোপ করতে। তাঁর সেই বাক্যটি ছিলঃ “তোমার চালান যে কাঁচের চালান হে” (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের সাথে রসিকতাও করেন। তিনি বলেনঃ আমি সত্য ছাড়া কিছু বলি না (তিরমিযী, আহমাদ) । বাকর ইবনে আবদুল্লাহ (র) নবী (সাঃ)-এর সাহাবীগণ একে অপরের প্রতি তরমুজ নিক্ষেপ করেও রসিকতা করতেন। কিন্তু তারা কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলে যোগ্য পুরুষই প্রতিপন্ন হতেন। ইবনে আবু মুলাইকা (র) আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে রসিকতা করলেন। তার মা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই পরিবারের কোন কোন রসিকতা কিনানা গোত্র থেকে এসেছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ বরং আমাদের কতক রসিকতা ঐ গোত্র থেকেই এসেছে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট একটি বাহন চাইতে আসে। তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে একটা উষ্ট্রীর বাচ্চা বাহন হিসেবে দিবো। সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উস্ত্রীর বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ উষ্ট্রীই তো উট প্রসব করে (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ)।

【21】

অনুচ্ছেদঃ শিশুর সাথে রসিকতা।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাদের (শিশুদের) সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতেন। তিনি আমার ছোট ভাইকে বলতেনঃ হে আবু উমাইর! কি করলো তোমার নুগায়র (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)! আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) হাসান অথবা হুসাইন (রাঃ)-এর হাত ধরলেন, অতঃপর তার পদদ্বয় নিজের পদদ্বয়ের উপর রাখলেন, অতঃপর বলেনঃ আরোহণ করো।

【22】

অনুচ্ছেদঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র।

আবু দারদা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ওজনদণ্ডে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই হবে না (দারিমী, তিরমিযী, আবু দাউদ, হিব্বান)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) নিজেও অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশ্লীলতাকে তিনি পছন্দও করতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমাদের মধ্যে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের লোকই সর্বোত্তম (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)। আমর ইবনে শুআইব (র) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার নিকট প্রিয়তর এবং কিয়ামতের দিন আমার নিকটবর্তী আসনে উপবিষ্ট হবে তোমাদের মধ্যকার এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করবো না? লোকজন চুপ থাকলো। তিনি দুই অথবা তিনবার কথাটি বললেন। লোকজন বললো, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের পূর্ণতা দান করার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি (আবু দাউদ, হাকিম)। আয়েশা (রাঃ) যখনই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দুইটি ব্যাপারের একটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, তখনই তিনি সহজতরটিকে বেছে নিয়েছেন, যতক্ষণ না তা পাপাচার হতো। যদি তা পাপাচার হতো তবে তিনি লোকজনের চেয়ে তা থেকে সর্বাধিক দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনো ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। অবশ্য আল্লাহ তাআলার বিধানের পরিপন্থী কোন কিছু হতে দেখলে তিনি মহামহিম আল্লাহর জন্য তার প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন (বুখারী, মুসলিম, মুওয়াত্তা মালিক)। আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বণ্টন করেছেন যেভাবে তোমাদের মধ্যে রিযিক বণ্টন করেছেন। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসেন না তাদের সকলকেই সম্পদ দান করেছেন। কিন্তু তিনি ঈমান দান করেছেন কেবল যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন। অতএব যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয়ে কৃপণ, শক্রর বিরুদ্ধে জিহাদে ভীত এবং ইবাদতের মাধ্যমে রাত জাগরণে দুর্বল, সে যেন বেশি পাঠ করেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদু লিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার” (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই । তিনি মহাপবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ মহান) (আবু দাউদ, হাকিম)।

【23】

অনুচ্ছেদঃ মনের ঐশ্বর্য।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য থাকলেই মানুষ ধনী হয় না। মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)। আনাস (রাঃ) আমি দশটি বছর যাবত নবী (সাঃ)-এর খেদমত করেছি। কখনো তিনি আমাকে (বিরক্তিসূচক) উফ শব্দটিও বলেননি। তিনি আমাকে কোন কিছু করতে বললে, (যদিও আমি তা করেছি,) কখনো বলেননিঃ তুমি এটা করলে না কেন বা যা করেছি তার জন্যও বলেননি যে, তুমি তা করলে কেন (বুখারী, মুসলিম)? আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাঁর কাছে যে-ই আসতো, তিনি তাকে প্রতিশ্রুতি দিতেন। তাঁর কাছে দেয়ার মত কিছু থাকলে তিনি অবশ্যই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতেন। নামাযের ইকামত হয়ে গেলে এক বেদুইন এসে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র চেপে, ধরে বললো, আমার সামান্য একটু প্রয়োজন আছে এবং আমার আশঙ্কা হয় যে, পাছে আমি তা ভুলে না যাই। তখন তিনি তার সাথে গেলেন এবং তার প্রয়োজন সেরে দিয়ে নামাযে মনোনিবেশ করলেন (বুখারী, মুসলিম)। জাবির (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো “না” বলেননি (মুসলিম, দার, ইবনে হিব্বান)। আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) আমি আয়েশা (রাঃ) ও আসমা (রাঃ)-এর চাইতে অধিক দানশীলা আর কোন দুই মহিলাকে দেখিনি। তাদের দু’জনের দানের বৈশিষ্ট্য ছিল দুই রকম। আয়েশা (রাঃ) একটু একটু করে সঞ্চয় করতেন। সঞ্চিত বস্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হলে তিনি তা বণ্টন করে দিতেন। আর আসমা (রাঃ) আগামী দিনের জন্য কিছু তুলে রাখতেন না (সাথে সাথে দান করে দিতেন)।

【24】

অনুচ্ছেদঃ মনের সংকীর্ণতা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের) ধুলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোন বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না। অনুরূপভাবে মনের সংকীর্ণতা ও ঈমানও কোন বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দুইটি কুঅভ্যাস কোন মুমিন বান্দার মধ্যে একত্র হতে পারে নাঃ কার্পণ্য এবং অসৎ চরিত্র (তিরমিযী)। আবদুল্লাহ ইবনে রবীয়া (র) আমরা আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। লোকজন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করলো। তারা তার চরিত্র সম্পর্কেও উল্লেখ করলো। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি তার মাথা কেটে ফেলো, তবে কি তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, তার হাত কেটে ফেললে? তারা বলেন, না। তার পা কাটলে? তারা বলেন, না। তিনি বলেন, তোমরা যদি কোন লোকের বাহ্যিক অবয়ব পরিবর্তন করতে অক্ষম হও, তাহলে তার আভ্যন্তরীণ অবয়ব কি করে পরিবর্তন করবে! বীর্য স্ব-অবস্থায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত জরায়ুতে অবস্থান করে। তারপর তা রক্তে পরিণত হয়, অতঃপর জমাট রক্তে, অতঃপর মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান, যিনি তার জীবিকা, চরিত্র এবং সে হতভাগা না ভাগ্যবান হবে তা লিপিবদ্ধ করেন।

【25】

অনুচ্ছেদঃ লোকজন প্রজ্ঞা অর্জন করতে পারলে উত্তম চরিত্রে ভূষিত হয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্রের সাহায্যে কোন ব্যক্তি রাত জেগে ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে (আবু দাউদ, হাকিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি আবুল কাসিম (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যকার উত্তম চরিত্রের লোক প্রজ্ঞা অর্জন করতে পারলে ইসলামের মানদণ্ডে সে তোমাদের সকলের চেয়ে উত্তম (আবু দাউদ)। সাবিত ইবনে উবাইদ (র) আমি মজলিসে গাম্ভীর্য অবলম্বনকারী এবং নিজ বাড়িতে খোশমেজাজী লোক যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) ব্যতীত আর কাউকে দেখিনি (ইসা বাযযার)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন দ্বীন (ধর্মিত) মহামহিম আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলেনঃ সহজ সরল দ্বীন (আবু দাউদ)। আবদুল্লাহ ইবনে আমরা (রাঃ) চারটি গুণ যদি তোমাকে দান করা হয় তবে পার্থিব অন্য কিছু না পেলেও তোমার কোন ক্ষতি নেই। (১) উত্তম স্বভাব-চরিত্র, (২) উত্তম ও পরিচ্ছন্ন (হালাল) রিযিক, (৩) সত্য ভাষণ এবং (৪) আমানত সংরক্ষণ (আবু দাউদ)। আবু হুরায়রা (র) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, কোন জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? সাহাবীগণ বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ দুইটি ছিদ্র (১) লজ্জাস্থান ও (২) মুখ। অপরদিকে কোন জিনিসের বদৌলতে অধিক লোক বেহেশতে যাবে? আল্লাহর ভয় ও উত্তম স্বভাবের কারণে (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)। উম্মু দারদা (রাঃ) এক রাতে আবু দারদা (রাঃ) নামায পড়তে দাড়ালেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমার দৈহিক গঠন সুন্দর করেছো, আমার স্বভাব-চরিত্রও সুন্দর করে দাও”। এই অবস্থায় তিনি ভোরে উপনীত হলেন। আমি বললাম, হে আবু দারদা! কাল সারা রাত ধরে আপনার দোয়া ছিলো সুন্দর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে। তিনি বলেন, হে উম্মু দারদা! মুসলিম বান্দা তার স্বভাব-চরিত্র সুন্দর করতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সুন্দর স্বভাব-চরিত্র তাকে বেহেশতে প্রবেশ করায়। আবার সে তার স্বভাব-চরিত্র খারাপ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তা তাকে দোযখে প্রবেশ করায়। মুমিন বান্দাকে তার ঘুমন্ত অবস্থায় ক্ষমা করা হয়। আমি বললাম, হে আবু দারদা! ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে ক্ষমা করা হয় কিভাবে? তিনি বলেন, তার অপর ভাই শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে মহামহিম আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। সে তার অপর ভাইয়ের জন্যও দোয়া করে, আল্লাহ তার সেই দোয়াও কবুল করেন। উসামা ইবনে শরীক (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন বিভিন্ন স্থান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেদুইন আসলো। লোকজন নির্বাক ছিলো। কেবল বেদুইনরাই কথা বলছিলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক ব্যাপারে আমাদের কোন দোষ হবে কি? তারা এমন কিছু মানবীয় বিষয় জিজ্ঞেস করে যাতে দোষের কিছু ছিলো না। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ পাপকে রহিত করেছেন। পাপ তো এমন লোকের হতে পারে যে নিজের জন্য অত্যাচার-নির্যাতনকে অবধারিত করে নিয়েছে। এতে তার পাপ হয় এবং সে ধ্বংস হয়”। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা ঔষধপত্র ব্যবহার করবো কি? তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ঔষধ ব্যবহার করো। কেননা মহামহিম আল্লাহ এমন কোন রোগ রাখেননি, যার প্রতিষেধক রাখেননি, একটি রোগ ছাড়া। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি? তিনি বলেনঃ বাৰ্ধক্য। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষকে প্রদত্ত সর্বোত্তম জিনিস কি? তিনি বলেনঃ উত্তম স্বভাব-চরিত্র (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, হাকিম)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন জনগণের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল। তাঁর এই দানশীলতা উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছতো রমযান মাসে। জিবরাঈল (আবু দাউদ) যখন তাঁর সাথে মিলিত হতেন তখন তাঁর দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো। জিবরাঈল (আবু দাউদ) রমযানের প্রতি রাতে তাঁর সাথে মিলিত হতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে কুরআন পড়ে শুনাতেন। জিবরাঈল (আবু দাউদ) যখন তাঁর সাথে মিলিত হতেন, তখন তাঁর দানশীলতার গতি বেগবান বাতাসের চেয়েও অধিক বেগবান হতো (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)। আবু মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী কালের এক ব্যক্তির আমলের হিসাব নেয়া হলো। কিন্তু তার আমলনামায় কল্যাণকর কিছুই পাওয়া গেলো না। তবে লোকটির জনগণের সাথে সংস্রব ছিল এবং সে ছিল সচ্ছল। সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিতো যে, তারা অভাবী দেনাদারকে যেন সময় দেয়। তখন মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমিই তার চাইতে এই গুণের বেশি যোগ্য। অতএব তোমরা (ফেরেশতাগণ) তাকে এড়িয়ে যাও (মুসলিম, তিরমিযী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কিসের বদৌলতে অধিক সংখ্যক লোক বেহেশতে যাবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর ভয় এবং উত্তম স্বভাব-চরিত্র। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, কিসের কারণে বহু লোক দোযখে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি ছিদ্র, মুখ ও লজ্জাস্থান (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। নাওয়াস ইবনে সামআন আল-আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ পুণ্য হচ্ছে উত্তম স্বভাব-চরিত্র এবং পাপ হচ্ছে যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং লোকজন তা অবগত হোক তা তুমি পছন্দ করো না (মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, দারিমী, হাকিম, ইবনে হিব্বান)।

【26】

অনুচ্ছেদঃ কৃপণতা।

জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হে বনু সালামা! তোমাদের নেতা কে? আমরা বললাম, জুদ্দ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি। তিনি বলেনঃ কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কি হতে পারে? বরং তোমাদের নেতা হলো আমর ইবনুল জামূহ। জাহিলী যুগে আমর ছিলেন তাদের পুরোহিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিবাহ করলে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে বিবাহ ভোজের আয়োজন করেন (আবু দাউদ, হাকিম)। মুগীরা (রাঃ)-র সচিব ওয়াররাদ (র) মুআবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রাঃ)-কে লিখে পাঠান, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যে হাদীস তুমি শুনেছো তা আমাকে লিখে পাঠাও। মুগীরা (রাঃ) লিখেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গুজব ছড়াতে, সম্পদ ধ্বংস করতে, অধিক যাঞ্চা করতে, অপরের প্রাপ্য অধিকার বাধাগ্রস্ত করতে, মাতাদের অবাধ্যাচারী হতে এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। জাবির (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট কিছু প্রার্থনা করা হলে তিনি কখনো ‘না’ বলেননি (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, ইবনে হিব্বান)।

【27】

অনুচ্ছেদঃ উত্তম মাল উত্তম লোকের জন্য।

আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাঃ) লোক মারফত আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন পোশাকে ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হই। অতএব আমি তাই করলাম। আমি যখন তাঁর নিকট এসে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি উযু করছিলেন। তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে গভীরভাবে দেখলেন, তারপর দৃষ্টি অবনত করে বলেনঃ হে আমর! আমি তোমাকে একটি বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করে পাঠাতে চাচ্ছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে গনীমতের অধিকারী করেন। আমি তোমার জন্য উৎকৃষ্ট মাল কামনা করি। আমি বললাম, আমি সম্পদের লোভে ইসলাম গ্রহণ করিনি। আমি ইসলামের আকর্ষণে মুসলমান হয়েছি, যাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে থাকতে পারি। তিনি বলেনঃ হে আমর! হাকিম, উত্তম লোকের জন্যই উত্তম সম্পদ (চু, হাকিম, ইবনে হিব্বান)।

【28】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিরাপদে রাত কাটালো।

উবায়দুল্লাহ ইবনে মিহসান আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নিরাপদে ও সুস্থ দেহে রাত কাটালো এবং তার নিকট সে দিনের খাবারও মওজুদ আছে, তাকে যেন গোটা দুনিয়াই দান করা হলো (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)।

【29】

অনুচ্ছেদঃ উৎফুল্ল মন।

মুআয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের কাছে বের হয়ে এলেন, তাঁর দেহে ছিল গোসলের আলামত এবং তিনি ছিলেন আনন্দচিত্ত। আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার কোন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করেছেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে প্রসন্ন হৃদয় দেখছি। তিনি বলেনঃ হাঁ, আলহামদু লিল্লাহ। তারপর প্রাচুর্যের প্রসঙ্গ এলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্য ক্ষতিকর নয়। আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্য অধিক উপকারী। মনের প্রসন্নতাও নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত।-(ইবনে মাজাহ) নাওয়াস ইবনে সামআন আল-আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেনঃ পুণ্য হলো উত্তম স্বভাব-চরিত্র এবং পাপ হলো যা তোমার অন্তরে দ্বিধার সৃষ্টি করে এবং সেটা লোকে জানুক তা তুমি পছন্দ করো না (মুসলিম, তিরমিযী)। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, সর্বাধিক দানশীল এবং সর্বাধিক সাহসী বীর পুরুষ। এক রাতে মদীনাবাসীরা (এক বিকট শব্দে) ভীত-সন্ত্রস্ত হলো। লোকজন শব্দের অনুসরণ করে অগ্রসর হলো। নবী (সাঃ) তাদের সামনে পড়লেন। তিনি তাদের পূর্বেই শব্দের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ তোমরা ভীত হয়ে না। তোমরা ভয় পেও না। তিনি নিজ ঘাড়ে তরবারি ঝুলানো অবস্থায় আবু তালহার জিনপোষবিহীন ঘোড়ায় সওয়ার ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমি একে সমুদ্ৰবত পেয়েছি অথবা এটি তো একটি সমুদ্র (বুখারী, মুসলিম)। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাত স্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাত এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত (তিরমিযী)।

【30】

অনুচ্ছেদঃ দুস্থজনকে সাহায্য করা অপরিহার্য।

আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ আল্লাহর উপর ঈমান এবং তার পথে জিহাদ। প্রশ্নকারী বললো, কোন গোলাম আযাদ করা সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ যা অধিক মূল্যবান এবং যে নিজ মনিবের প্রিয়তম। প্রশ্নকারী বললো, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি তার কতক করতে না পারি? তিনি বলেনঃ দুস্থজনকে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞের কাজ সেরে দাও প্রশ্নকারী বললো, যদি আমি তাতে অপারগ হই? তিনি বলেনঃ তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ রাখো। কেননা তাও সদাকাস্বরূপ যা তোমার পক্ষ থেকে তুমি করতে পারো (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, দারিমী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। সাঈদ ইবনে আবু বুরদা (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ প্রত্যেক মুসলমানকেই দান-খয়রাত করতে হবে। রাবী বলেন, যদি তার সেই সামর্থ্য না থাকে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে শ্রম নিয়োগ করে নিজেও উপকৃত হবে এবং দান-খয়রাতও করবে। রাবী বলেন, আপনি কি মনে করেন, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে যেন কোন দুঃস্থজনকে সাহায্য করে। রাবী বলেন, আপনার কি মত, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তা করতে না পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ করবে। রাবী বলেন, আপনার কি মত, যদি তার সেই সামর্থ্যও না থাকে বা সে তাও করতে না পারে? তিনি বলেনঃ তাহলে সে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা তাও তার জন্য সদাকাস্বরূপ (বুখারী, মুসলিম)।

【31】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি চরিত্রবান হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যাপ্ত পরিমাণে দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য, পুত-পবিত্র চরিত্র, আমানতদারি এবং তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারার সামর্থ্য প্রার্থনা করছি (বাযযার)। ইয়াযীদ ইবনে ইয়াবানূস (র) আমরা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে মুমিন জননী! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য কি ছিল? তিনি বলেন, কুরআনই ছিল তার চরিত্র। আপনার সূরা মুমিনূন পড়ে থাকেন। তিনি বলেন, পড়ুনঃ “কাদ আফলাহাল মুমিনূন”। ইয়াযীদ (র) বলেন, আমি পড়লাম, “কাদ আফলাহাল মুমিনুন.... লিফুরূজিহিম হাফিযুন” পর্যন্ত (১-৫)। তিনি বলেন, এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর চরিত্র বৈশিষ্ট্য (নাসাঈ, হাকিম)।

【32】

অনুচ্ছেদঃ মুমিন ব্যক্তি তিরস্কারকারী হতে পারে না।

সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (র) আমি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে কখনো কাউকে অভিশাপ দিতে শুনিনি, মানুষকেও নয়। সালেম (র) বলতেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তির অভিশাপকারী হওয়া শোভনীয় নয়।-(তিরমিযী, হাকিম) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশ্লীল আচরণকারীকে, অশ্লীলতার প্রশ্ৰয় দানকারীকে এবং হাটে-বাজারে শোরগোলকারীকে পছন্দ করেন না। আয়েশা (রাঃ) কতক ইহুদী নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আসসামু আলাইকুম (তোমাদের মৃত্যু হোক)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ওয়া আলাইকুম ওয়া লাআনাকুমুল্লাহু ওয়া গাদিবাল্লাহু আলাইকুম’ (তোমাদের উপর-ইবনে মাজাহ, আল্লাহ তোমাদেরকে অভিশপ্ত করুন ও ক্রোধ নিপতিত করুন)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ থামো আয়েশা! নম্রতা অবলম্বন করো এবং অবশ্যই অশ্লীল ও কর্কষ ভাষা ব্যবহার করো না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আপনি কি শুনেননি তারা কি বলেছে? তিনি বলেনঃ তুমি কি শুনোনি যে, আমি কি বলেছি? আমি তো তাদের একই প্রতিউত্তর দিয়েছি। তাদের ব্যাপারে আমার দোয়া তো কবুল হবে। কিন্তু আমার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য কবুল হবে না (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি খোঁটাদা তাবারানী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও বাচাল হতে পারে না (তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ চোগলখোর কখনো বিশ্বস্ত হতে পারে না (তিরমিযী, আহমাদ)। আবদুল্লাহ (রাঃ) মুমিন ব্যক্তির চরিত্রের সর্বাপেক্ষা কষ্টদায়ক বিষয় হলো অশ্লীলতা (ইবনে হিব্বান)। আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) অভিশাপকারীরা অভিশপ্ত। মারওয়ান বলেন, যারা মানুষকে অভিশাপ দেয় (তারা অভিশাপকারী)।

【33】

অনুচ্ছেদঃ অভিশাপকারী।

আবু দারদা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ অভিশাপকারীরা কিয়ামতের দিন সাক্ষ্যদাতা ও সুপারিশকারী হতে পারবে না (মুসলিম, আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান))। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ পরম সত্যবাদীর পক্ষে অভিসম্পাতকারী হওয়া শোভনীয় নয় (মুসলিম, হাকিম)। হুযায়ফা (রাঃ) কোন সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করলে তাদের জন্য অভিশাপ অবধারিত হয়ে যায়।

【34】

অনুচ্ছেদঃ কেউ নিজ গোলামকে অভিশাপ দিলে যেন তাকে আযাদ করে দেয়।

আয়েশা (রাঃ) আবু বাকর (রাঃ) তার কোন গোলামকে অভিসম্পাত করেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ হে আবু বাকর! কাবার প্রভুর শপথ! একই ব্যক্তি একই সাথে পরম সত্যবাদী ও অভিসম্পাতকারী হতে পারে না। তিনি দুই বা তিনবার একথা বলেন। আবু বাকর (র) সেদিনই ঐ গোলামকে আযাদ করে দেন এবং নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলেন, আমি আর কখনো এরূপ আচরণ করবো না (বাযযার)।

【35】

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর অভিশাপ, আল্লাহর ক্রোধ এবং আগুন দ্বারা অভিশাপ দেয়া।

সামুরা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরকে আল্লাহর অভিশাপ, আল্লাহর ক্রোধ এবং আগুনের দ্বারা অভিসম্পাত করো না (দারিমী, তিরমিযী)।

【36】

অনুচ্ছেদঃ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মুশরিকদের বদদোয়া করুন। তিনি বলেনঃ আমি অভিশাপকারীরূপে প্রেরিত হইনি। বরং আমি করুণারূপে প্রেরিত হয়েছি (মুসলিম)।

【37】

অনুচ্ছেদঃ চোগলখোর।

হাম্মাম (র) আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তাকে বলা হলো, এক ব্যক্তি জনগণের কথা উসমান (রাঃ)-র কানে পৌঁছায়। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করবে না (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? সাহাবীগণ বলেন, হা। তিনি বলেনঃ যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরো বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ যারা চোগলখেরি করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায় (ইবনে মাজাহ, আহমাদ, নাসাঈ, বাযযার)।

【38】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অশ্লীলতা শোনে এবং তা ছড়ায়।

আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) যে ব্যক্তি অশ্লীল কথা বলে এবং তা প্রচার করে তাদের উভয়ে সমান পাপী (বাযযার)। শুবাইল ইবনে আওফ (র) কথিত আছে যে, কোন ব্যক্তি অশ্লীল কথা শুনলে এবং তা ছড়ালে সে অশ্লীলতার উদ্ভাবকের সমতুল্য পাপী।- (তাহযীবুল কামাল) আতা (র) তার মতে, যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ছাড়ায় তার শাস্তি হওয়া উচিত।

【39】

অনুচ্ছেদঃ লোকের দোষ অনুসন্ধানকারী।

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ব্যতিব্যস্ত হয়ো না এবং করে গোপন তথ্য ফাঁস করো না। কেননা তোমাদের পশ্চাতে রয়েছে কিয়ামতের) ভীষণ কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী বিপদসমূহ (কানযুল উম্মাল)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তুমি যখন তোমার সঙ্গীর দোষচর্চা করতে ইচ্ছা করে তখন তোমার নিজের দোষ স্মরণ করো। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করো না” (৪৯:১১)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, তোমরা একে অপরকে তিরস্কার করো না। আবু জুবায়রা ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) আমাদের অর্থাৎ বনূ সালামার লোকদের ব্যাপারেই নাযিল হয়ঃ “তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে অভিহিত করো না” (সূরা হুজুরাত ১২)। তিনি বলেন, যখন নবী (সাঃ) আমাদের এখানে আসলেন, আমাদের প্রত্যেকের দুইটি করে নাম ছিল। নবী (সাঃ) বলতেনঃ হে অমুক। সাহাবীগণ বলতেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই নামে ডাকলে সে অসন্তুষ্ট হয় (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে মাজাহ, হাকিম)। ইকরিম (র) আমার মনে নেইবনে মাজাহ, হয় ইবনে আব্বাস (রাঃ) অথবা তার চাচাতো ভাই একে অপরকে আহারের দাওয়াত দিলেন। এক বাঁদী তাদের সামনে (আহার পরিবেশনের) কাজ করছিল। তাদের একজন তাকে বলেন, হে যেনাকারিনী। তখন অপরজন বলেন, থামো। সে যদি দুনিয়াতে তোমাকে (এই অপবাদের) শাস্তি না দিতে পারে, তবে আখেরাতে অবশ্যই তার শাস্তি দিবে। তিনি বলেন, আপনি কি মনে করেন, ব্যাপারটি যদি তাই হয়? অপরজন বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কথক ও অশ্লীলতার বাহককে পছন্দ করেন না। ইনি ছিলেন ইবনে আব্বাস (রাঃ) যিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কথক ও অশ্লীলতার বাহককে পছন্দ করেন না। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি খোঁটাদা তাবারানী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও বাচাল হতে পারে না (তিরমিযী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, হাকিম)।

【40】

অনুচ্ছেদঃ মুখের উপর প্রশংসা করা।

আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সামনে এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উঠলে এক ব্যক্তি তার প্রশংসা করলো। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমার সর্বনাশ! তুমি তো তোমার ভাইয়ের গলা কাটলে! এ কথা তিনি কয়েকবার উচ্চারণ করলেন। তোমাদের কেউ যদি একান্তই কারো প্রশংসা করতে চায় তবে সে যেন বলে, আমি তাকে এরূপ মনে করি, যদি তার ধারণামতে সে তদ্রূপ হয়ে থাকে। তার হিসাব গ্রহণকারী তো আল্লাহ। আর আল্লাহর সামনে কাউকে নির্দোষ মনে করো না (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী,আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আবু মূসা (রাঃ) নবী (সাঃ) এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির সজীব প্রশংসা করতে শুনলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা তো তাকে হত্যা করলে অথবা তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিলে (বুখারী, মুসলিম)। ইবরাহীম আত-তায়মী (র) তিনি বলেন, আমরা উমার (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপস্থিত প্রশংসা করলে উমার (রাঃ) বলেন, তুমি তো লোকটিকে হত্যা করলে। আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। যায়েদ ইবনে আসলাম (র) তিনি বলেন, আমি উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, (কারো) প্রশংসা করা (তাকে) যেন হত্যা করা। মুহাম্মাদ (র) বলেন, যখন প্রশংসিত ব্যক্তি তা গ্রহণ করে (বাযযার, ইবনে মাজাহ)।

【41】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি তার সহযোগীর প্রশংসা করলে তাতে তার ক্ষতির আশংকা না থাকলে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কতো উত্তম লোক আবু বাকর, কতো উত্তম লোক উমার, কতো উত্তম লোক আবু উবায়আবু দাউদ, কতো উত্তম লোক উসাইদ ইবনে হুদাইর, কতো উত্তম লোক মুয়ায ইবনে আমর ইবনুল জামূহ, কতো উত্তম লোক মুআয ইবনে জাবাল। তিনি পুনরায় বলেনঃ কতো মন্দ লোক অমুক, কতো মন্দ লোক অমুক। এভাবে তিনি একে একে সাতজন সম্পর্কে মন্তব্য করেন (তিরমিযী, নাসাঈ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। আয়েশা (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলো। তিনি বলেনঃ বংশের কু-সন্তান। সে তার সাক্ষাতে উপস্থিত হলে তিনি তার সাথে হাসিমুখে প্রশস্ত হৃদয়ে মিলিত হন। সে বের হয়ে যাওয়ার পর আর এক ব্যক্তি তাঁর সাক্ষাত প্রার্থনা করে। তিনি বলেনঃ বংশের সু-সন্তান। কিন্তু তিনি তার সাথে আগের ব্যক্তির মতো হাসিমুখে মিলিত হননি। এ ব্যক্তিও বের হয়ে চলে গেলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি অমুকের সম্পর্কে ঐরাপ মন্তব্য করলেন অথচ তার সাথে হাসিমুখে মিলিত হলেন এবং এই ব্যক্তি সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করলেন অথচ প্রথম ব্যক্তির মতো তার সাথে সাক্ষাত করেননি। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! যার অশ্লীল বাক্য ও দুর্ব্যবহারের জন্য লোকে তাকে ত্যাগ করে, সে হলো সর্বনিকৃষ্ট (বুখারী, মুসলিম)।

【42】

অনুচ্ছেদঃ চাটুকারদের মুখে ধূলি নিক্ষেপ করা।

আবু মামার (র) এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জনৈক প্রশাসকের চাটুকারিতা করছিল। মিকদাদ (রাঃ) তার মুখে ধূলি নিক্ষেপ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে চাটুকারদের মুখে ধূলি নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। আতা ইবনে আবু রাবাহ (র) এক ব্যক্তি ইবনে উমার (র)-এর সামনে অপর ব্যক্তির প্রশংসা করছিল। ইবনে উমার (রাঃ) তার মুখের দিকে ধূলি নিক্ষেপ করতে করতে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ তোমরা চাটুকারদের দেখলে তাদের মুখে ধূলি নিক্ষেপ করবে (ইবনে হিব্বান)। রাজা (র) আমি একদিন মিহজান আল-আসলামী (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। শেষে আমরা বসরাবাসীদের এক মসজিদে গিয়ে পৌছলাম। তখন মসজিদের এক দরজায় বুরাইদা আল-আসলামী (রাঃ) বসা ছিলেন। রাবী বলেন, মসজিদে সুকবা নামক এক ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি নামায দীর্ঘ করে পড়তেন। আমরা যখন মসজিদের দরজায় পৌছলাম তখন বুরাইদা (রাঃ)-র গায়ে জড়ানো ছিল একটি চাদর। বুরাইদা (রাঃ) ছিলেন রসিক প্রকৃতির। তিনি বলেন, হে মিহজান! তুমি কি সুকবার মতো নামায পড়ো? মিহুজান (রাঃ) এর প্রতিউত্তর না করেই প্রত্যাবর্তন করেন। রাবী বলেন, মিহজান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার হাত ধরলেন। আমরা পদব্রজে অগ্রসর হলাম। শেষে আমরা গিয়ে উহুদ পাহাড়ে উঠলাম। তিনি মদীনার দিকে তাকিয়ে বলেনঃ এই জনপদের জন্য দুঃখ হয় যখন তা বসতিপূর্ণ থাকবে, এমন অবস্থায় তার অধিবাসীরা তা ত্যাগ করবে। এখানে দাজ্জাল আসবে এবং মদীনার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে একজন করে ফেরেশতা দেখতে পাবে। অতএব সে তাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি ফিরে এলেন। আমরা মসজিদে পৌছলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে নামায ও রুকূ-সিজদায় মশগুল দেখলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেনঃ লোকটি কে? আমি তার অতিরিক্ত প্রশংসা করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে অমুক লোক যার এই গুণ আছে। তিনি বলেনঃ ক্ষান্ত হও, তাকে শুনাবে নাসাঈ, অন্যথায় তুমি তার সর্বনাশ করবে। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি চলতে থাকলেন, শেষে যখন তাঁর হুজরার নিকট এলেন তখন তার দুই হাত জড়িয়ে ধরে বলেনঃ তোমাদের উত্তম দ্বীন হলো তার সহজ তাবারানী, তোমাদের উত্তম দ্বীন হলো তার সহজতা। তিনি একথা তিনবার বলেন (আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ ১৯১৮৫)।

【43】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কবিতার মাধ্যমে প্রশংসা করলো।

আল-আসওয়াদ ইবনুস সারী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর পর্যাপ্ত প্রশংসা করেছি এবং আপনারও। তিনি বলেনঃ তোমার প্রতিপালক তো তাঁর প্রশংসা পছন্দ করেন। আমি তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতে লাগলাম। তখন দীর্ঘকায় ও টাকমাথার এক ব্যক্তি তার সাক্ষাত প্রার্থনা করলেন। নবী (সাঃ) আমাকে বলেনঃ থামো। সেই ব্যক্তি প্রবেশ করে ক্ষণিক তাঁর সাথে আলাপ করে বের হয়ে চলে গেলেন। আমি পুনরায় আবৃত্তি করতে লাগলাম। লোকটি পুনরায় এলে তিনি আমাকে থামিয়ে দিলেন, অতঃপর বের হয়ে চলে গেলেন। তিনি দুই কি তিনবার এরূপ করলেন। আমি বললাম, এ লোকটি কে, যার জন্য আপনি আমাকে থামিয়ে দিলেন? তিনি বলেনঃ ইনি এমন ব্যক্তি (উমার) যিনি বাতিলকে পছন্দ করেন না (আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)।

【44】

অনুচ্ছেদঃ কবির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাকে বখশিশ দেয়া।

নুজাইদ ইবনে ইমরান (র) এক কবি ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ)-এর নিকট এলে তিনি তাকে কিছু বখশিশ দেন। তাকে বলা হলো, আপনিও কবিকে বখশিশ দিলেন। তিনি বলেন, নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে।

【45】

অনুচ্ছেদঃ বন্ধুকে এমনভাবে সম্মান দেখাবে না যাতে সে অস্বস্তি বোধ করে।

মুহাম্মাদ (র) প্রবীণগণ বলতেন, তুমি তোমার বন্ধুকে এমনভাবে সম্মান দেখাবে না যা তার জন্য কষ্টকর বা অস্বস্তিকর হতে পারে।

【46】

অনুচ্ছেদঃ দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার (রুগ্ন) ভাইকে দেখতে গেলে বা তার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে আল্লাহ তাকে বলেন, তুমি উত্তম, তোমার পদচারণা কল্যাণময় হোক এবং তুমি তোমার স্থান জান্নাতে নির্ধারিত করে নিয়েছে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। উম্মু দারদা (রাঃ) সালমান (রাঃ) মাদায়েন থেকে পদব্রজে সিরিয়া এসে আমাদের সাথে সাক্ষাত করেন। তখন তার পরনে ছিল পাজামা। ইবনে শাওযাব (র) বলেন, সালমান (রাঃ)-কে দেখা গেলো যে, তার গায়ে চাদর জড়ানো, তার মাথা মুণ্ডিত এবং কান প্রশস্ত। তাকে বলা হলো, আপনি নিজেকে কদাকার করে ফেলেছেন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আখেরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ।

【47】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে তাদের সাথে তার আহার গ্রহণ।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক আনসারীর বাড়িতে দেখা-সাক্ষাত করতে গেলেন এবং সেখানে তাদের সাথে আহার করলেন। তিনি রওয়ানা হওয়ার সময় আদেশ করলে ঘরের একটি স্থানে পানি ছিটিয়ে বিছানা পেতে দেয়া হলো। তিনি সেখানে নামায পড়লেন এবং তাদের জন্য দোয়া করলেন (বুখারী হা/৫৬৪২) । আবু খালদা (র) আবু উমাইয়্যা আবদুল করীম (র) মোটা পশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় আবুল আলিয়ার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। আবুল আলিয়া (র) তাকে বলেন, এটা তো খৃস্টান সন্যাসীদের পোশাক। মুসলমানগণ পরস্পরের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে গেলে উত্তম পোশাক পরতেন। আসমা (রাঃ)-এর মুক্তদাস আবদুল্লাহ (র) আসমা (রাঃ) আমার সামনে একটি তায়ালিসী জুব্বা বের করলেন। তাতে এক বিঘৎ পরিমাণ এক টুকরা রেশমী কাপড় লাগানো ছিল, যা দ্বারা জুব্বার দুইটি কিনারা মোড়ানো ছিল । তিনি বলেন, এটা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জুব্বা। তিনি প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাতকালে এবং জুমুআর দিন তা পরতেন (মুসলিম, আবু দাউদ, তাহাবী)। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) একটি রেশমী চাদর পেলেন। তিনি তা নবী (সাঃ)-এর নিকট নিয়ে গিয়ে বলেন, আপনি এটি ক্রয় করুন এবং তা জুমুআর দিন অথবা যখন বিভিন্ন প্রতিনিধি দল আপনার সাথে সাক্ষাত করতে আসবে তখন পরবেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ যার আখেরাতে কোন প্রাপ্য নাই কেবল সে এটা পরতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট অনুরূপ কয়েকটি রেশমী চাদর আসলো। তিনি তার একটি চাদর উমার (রাঃ)-এর জন্য, একটি চাদর উসামা (রাঃ)-এর জন্য এবং একটি চাদর আলী (রাঃ)-এর জন্য পাঠান। উমার (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটা আমার জন্য পাঠিয়েছেন। অথচ আপনি এ সম্পর্কে যা বলেছেন তা তো আমি শুনেছি। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি এটা বিক্রি করো অথবা এটা দ্বারা তোমার কোন প্রয়োজন পূরণ করো (বুখারী, মুসলিম)।

【48】

অনুচ্ছেদঃ পারস্পরিক সাক্ষাতের ফযীলাত।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করার জন্য তার গ্রামে গেলো। আল্লাহ তার পথে একজন ফেরেশতাকে মোতায়েন করেন। ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কোথায় যেতে চান? সে বললো, এই গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। ফেরেশতা বলেন, আপনার উপর কি তার কোন অনুগ্রহ আছে, যার কারণে আপনি যাচ্ছেন? সে বললো, নাসাঈ, আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। ফেরেশতা বলেন, আমি আল্লাহর দূতরূপে আপনার নিকট এসেছি। আপনি যেমন ঐ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, আল্লাহও তদ্রুপ আপনাকে ভালোবাসেন (মুসলিম, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।

【49】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসে কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না।

আবু যার (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, কিন্তু কার্যত তাদের সাথে মিলিত হতে পারছে না। তিনি বলেনঃ হে আবু যার! তুমি যাকে ভালোবাসো তারই সাথে হবে। আমি বললাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি বলেনঃ হে আবু যার! তুমি যাকে ভালোবাসো তার সাথেই থাকবে (আবু দাউদ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে হিব্বান)। আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললো, হে আল্লাহর নবী! কিয়ামত কখন হবে? তিনি বলেনঃ তুমি তার জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো? সে বললো, আমি ব্যাপক কিছু প্রস্তুতি নিতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, সে তার সাথেই থাকবে। আনাস (রাঃ) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সেদিন মুসলমানরা যতো অধিক খুশি হয়েছে, আর কোন দিন আমি তাদেরকে এতো খুশি হতে দেখিনি (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)।

【50】

অনুচ্ছেদঃ প্রবীণদের মর্যাদা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে লোক আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (দারিমী, তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম)। আমর ইবনে শোয়াইব (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের বড়দের অধিকার মানে না এবং আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আবু উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

【51】

অনুচ্ছেদঃ বড়দের সম্মান করা।

আবু মূসা আশআরী (র) প্রবীণ মুসলমানদের প্রতি সমান প্রদর্শন, কুরআনের ভারসাম্যপূর্ণ ভাষ্যকারের প্রতি, অযৌক্তিক ব্যাখ্যাকার ও রূঢ় আচরণকারীর প্রতি নয়, এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত (আবু দাউদ)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (দারিমী, তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম)।

【52】

অনুচ্ছেদঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বক্তব্য পেশ ও জিজ্ঞাসার সূচনা করবে।

রাফে ইবনে খাদীজ ও সাহল ইবনে আবু হাসমা (র) আবদুল্লাহ ইবনে সাহল ও মুহাইয়্যাসা ইবনে মাসউদ (রাঃ) খায়বারে পৌছে এক খেজুর বাগানে তারা পরস্পর পৃথক হয়ে যান। সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে সাহল (গুপ্ত ঘাতক দ্বারা) নিহত হন। (এ খবর মদীনায় পৌছলে) সাহলের পুত্র আবদুর রহমান এবং মাসউদের দুই পুত্ৰ হুআইয়্যাসা ও মুহাইয়্যাসা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নবী (সাঃ)-এর নিকট আসেন। আবদুর রহমান কথা শুরু করলেন। তিনি ছিলেন দলের সর্বকনিষ্ঠ। নবী (সাঃ) তাকে বলেনঃ বড়কে অগ্রাধিকার দাও। রাবী ইয়াহইয়া (র) বলেন, অর্থাৎ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরই প্রথম কথা বলা উচিত। অতএব তারা তাদের সাথীর ব্যাপারে আলাপ করলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা কি তোমাদের পঞ্চাশ ব্যক্তির শপথের দ্বারা তোমাদের নিহত ব্যক্তির দিয়াতের দাবিদার হবে? তারা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এমন একটি বিষয় যা আমরা স্বচক্ষে দেখিনি। তিনি বলেনঃ তাহলে ইহুদীরা তাদের পঞ্চাশ ব্যক্তির শপথের দ্বারা এই খুনের দায় থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। তারা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা তো কাফের সম্প্রদায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তির দিয়াত পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। সাহল (রাঃ) বলেন, দিয়াতের উটগুলোর মধ্যকার একটি উষ্ট্রী আমার ভাগে পড়ে। আমি এদের খোয়াড়ে গেলে সেই উষ্ট্রী আমাকে লাথি মারে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

【53】

অনুচ্ছেদঃ প্রবীণ ব্যক্তি কথা না বললে কনিষ্ঠজন কি কথা বলতে পারে?

ইবনে উমার (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা আমাকে এমন একটি গাছ সম্পর্কে অবহিত করে যা মুসলমানের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ, যা তার প্রভুর নির্দেশে অনবরত ফল দান করে এবং যার পাতাও ঝরে না। তখন আমার মনে খেজুর গাছ স্মরণ হলো। কিন্তু আবু বাকর ও উমার (রাঃ) উপস্থিত থাকাতে আমি কথা বলা অসঙ্গত মনে করলাম। তারাও কোন উত্তর দিলেন না। তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ তা খেজুর গাছ। আমি আমার পিতার সাথে মজলিস ত্যাগ করে বললাম, পিতা! আমার মনেও খেজুর গাছের কথা উদয় হয়েছিল। তিনি বলেন, তোমাকে তা বলতে কিসে বাধা দিলো? তুমি তা বললে আমার নিকট তা এই জিনিস হতেও আনন্দদায়ক হতো। আমি বললাম, আমার বলতে কোন বাধা ছিলো না। তবে আমি দেখলাম, আপনি বা আবু বাকর (রাঃ) কেউ কথা বলছেন না। তাই আমি তা বলা অসঙ্গত মনে করলাম (বুখারী, মুসলিম)।

【54】

অনুচ্ছেদঃ প্রবীণদের নেতৃপদে সমাসীন করা।

হাকীম ইবনে কায়েস ইবনে আসেম (র) তার পিতা তার মৃত্যুকালে তার সন্তানদের ওসিয়াত করে বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের মধ্যকার প্রবীণ ব্যক্তিকে নেতৃত্ব দান করো। কেননা কোন সম্প্রদায় তাদের প্রবীণদের উপর নেতৃত্ব অর্পণ করলে তারা তাদের পূর্বপুরুষের অনুসরণ করে এবং তাদের বয়কনিষ্ঠদের নেতৃপদে দিলে তারা তাদের সমকক্ষদের দৃষ্টিতে তাদেরকে হেয় করে দেয়। তোমরা অবশ্যই সম্পদ সংরক্ষণ করো এবং তা উৎপাদনমুখী কাজে বিনিয়োগ করো। কেননা তা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে স্মরণীয় করে এবং তা দ্বারা ইতর লোকের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বাঁচা যায়। সাবধান! মানুষের কাছে যাঞ্চা করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ তা হচ্ছে মানুষের উপার্জনের সর্বশেষ উপায়। আমি মারা গেলে তোমরা আমার জন্য বিলাপ করবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য বিলাপ করা হয়নি। আমি মারা গেলে আমাকে এমন স্থানে দাফন করবে যেন বাকর ইবনে ওয়াইল গোত্র তা টের না পায়। কেননা জাহিলী যুগে আমি তাদের সাথে বহু অন্যায় করেছি (নাসাঈ, আহমাদ, বুখারী)।

【55】

অনুচ্ছেদঃ উপস্থিত শিশুদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠকে ফল খেতে দেয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট মৌসুমের প্রথম ফল আনা হলে তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের শহরে এবং আমাদের ওজনে ও মাপে বরকতের সাথে আরো বরকত দিন”। অতঃপর তিনি তার নিকট উপস্থিত শিশুদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠকে তা খেতে দিতেন (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

【56】

অনুচ্ছেদঃ ছোটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন।

আমর ইবনে শুআইব (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের পরোয়া করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (আবু দাউদ)।

【57】

অনুচ্ছেদঃ শিশুদের সাথে কোলাকুলি করা।

ইয়ালা ইবনে মুররা (রাঃ) আমরা নবী (সাঃ)-এর সাথে আহারের এক দাওয়াতে রওয়ানা হলাম। তখন হুসাইন (রাঃ) রাস্তায় খেলছিলেন। নবী (সাঃ) দ্রুত গতিতে সকলের অগ্রগামী হয়ে তাঁর দুই হাত বাড়িয়ে দিলেন। তখন বালকটি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো এবং নবী (সাঃ) তাকে হাসাতে লাগলেন। শেষে তিনি তাকে ধরে ফেললেন। তিনি তাঁর এক হাত তার চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অপর হাত তার মাথায় রাখলেন, তারপর তাকে আলিঙ্গন করলেন। অতঃপর নবী (সাঃ) বলেনঃ হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইনের থেকে। যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। হুসাইন আমার নাতিদের একজন (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)।

【58】

অনুচ্ছেদঃ ছোট বালিকাকে কোন ব্যক্তির চুমা দেয়া।

বুকাইর (র) তিনি আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (র)-কে উমার ইবনে আবু সালামার দুই বছর বয়সের কন্যা যয়নবকে চুমা দিতে দেখেন। হাসান (র) সম্ভব হলে তুমি তোমার পরিবারের কারো চুলের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। তবে তোমার স্ত্রী বা ছোট্ট বালিকা হলে ভিন্ন কথা।

【59】

অনুচ্ছেদঃ শিশুদের মাথায় হাত বুলানো।

ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নাম রাখেন ইউসুফ। তিনি আমাকে তার কোলে বসান এবং আমার মাথায় হাত বুলান (আহমাদ, শামাইল তিরমিযী)। আয়েশা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর সামনে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম এবং আমার সখীরাও আমার সাথে খেলা করতো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘরে আসলে তারা লুকিয়ে যেতো। তিনি তাদেরকে বের করে এনে আমার নিকট পাঠাতেন। তখন তারা আমার সাথে খেলা করতো (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।

【60】

অনুচ্ছেদঃ ছোট শিশুকে কোন ব্যক্তির “হে আমার পুত্র” বলে সম্বোধন।

আবুল আজলান আল-মুহারিবী (র) আমি ইবনুয যুবাইরের সামরিক বাহিনীতে ছিলাম। আমার এক চাচাতো ভাই মারা যান। তিনি তার একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য ওসিয়াত করে যান। আমি তার ছেলেকে বললাম, উটটি আমাকে দাও। কারণ আমি ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-র সামরিক বাহিনীতে ছিলাম। সে বললো, চলো আমরা ইবনে উমারের কাছে যাই এবং এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে নেই। অতএব আমরা ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট গেলাম। সে বললো, হে আবদুর রহমানের পিতা! আমার পিতা মারা গেছেন এবং তিনি তার একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার ওসিয়াত করেছেন। আর ইনি আমার চাচাতো ভাই। তিনি ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-এর সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। আমি কি তাকে এই উট দিতে পারি? ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, হে আমার পুত্র। আল্লাহর রাস্তায় প্রতিটি কাজই উত্তম। তোমার পিতা যদি তার উট মহামহিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার ওসিয়াত করে থাকেন, তবে মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের জিহাদে তুমি তা দান করো। আর এই ব্যক্তি ও তার সাথীরা তো সমাজের যুব শ্রেণীর রাস্তায় লড়ছে। শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে কে সীলমোহর অংকিত করবে তা নিয়েই তাদের যুদ্ধ। জারীর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, মহামহিম আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না (বুখারী, মুসলিম)। উমার (রাঃ) যে ব্যক্তি দয়া করে না, সে দয়া পায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না, সে ক্ষমা পায় না। যে ব্যক্তি উদারতা প্রদর্শন করে না, সে উদারতা পায় না। যে ব্যক্তি অন্যকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয় না সে রক্ষা পায় না।

【61】

অনুচ্ছেদঃ জগতবাসীর প্রতি দয়া করো।

উমার (রাঃ) যে ব্যক্তি দয়া করে নাসাঈ, সে দয়া পায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না তাকেও ক্ষমা করা হয় না। যে ব্যক্তি ওযর কবুল করে নাসাঈ, তার ওযরও কবুল করা হয় না। যে ব্যক্তি অন্যকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয় নাসাঈ, সেও রক্ষা পায় না (ইবনে খুজাইমাহ)। মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (র) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ছাগল যবেহ করি এবং দয়াপরবশ হই অথবা সে বললো, ছাগল যবেহ করতে আমার অন্তরে দয়ার উদ্রেক হয়। তিনি দুইবার বলেনঃ তুমি যদি ছাগলের প্রতি দয়াপরবশ হও, তবে আল্লাহও তোমার প্রতি দয়াপরবশ হবেন (মুজামুস সগীর)। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী বলে সমর্থিত নবী আবুল কাসিম (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ হতভাগা ছাড়া আর কারো অন্তর থেকে দয়ামায়া তুলে নেয়া হয় না (তিরমিযী, আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম)। জারীর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে নাসাঈ, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না (বুখারী, মুসলিম)।

【62】

অনুচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের প্রতি মমতা।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) মানুষের মধ্যে নবী (সাঃ) ছিলেন পরিবার-পরিজনের প্রতি সর্বাধিক দয়ালু। তাঁর এক পুত্র ছিল মদীনার উপকণ্ঠে এক মহিলার দুগ্ধপোষ্য। তার স্বামী ছিল লোহাড়। আমরা সেখানে যেতাম। ঘরটি ইযখির ঘাসের ধোঁয়ায় ভরে যেতো। তিনি তাকে চুমা দিতেন এবং নাক লাগিয়ে ঘ্ৰাণ নিতেন (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি একটি শিশুসহ নবী (সাঃ)-এর নিকট এলো। সে তাকে নিজ দেহের সাথে লাগাচ্ছিল। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি কি তার প্রতি মায়া করো? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার প্রতি তোমার চেয়ে অধিক দয়াপরবশ এবং তিনি দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু (নাসাঈ)।

【63】

অনুচ্ছেদঃ নির্বাক প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি পথ চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগলো। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নামলো এবং পানি পান করে উঠে আসলো। তখন সে দেখলো যে, একটি কুকুর পিপাসার্ত হয়ে হাপাচ্ছে এবং ভিজা মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বললো, আমি যেমন পিপাসার্ত হয়েছিলাম, কুকুরটিরও তদ্রুপ পিপাসা লেগেছে। সে পুনরায় কূপে নামলো এবং তার মোজা ভর্তি করে পানি তুলে তা নিজের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে উপরে আসলো এবং কুকুরটিকে তা পান করালো। আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পশুর জন্যও কি আমাদেরকে সওয়াব দেয়া হবে? তিনি বলেনঃ প্রতিটি প্রাণধারী সৃষ্টির সেবার জন্য সওয়াব রয়েছে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুওয়াত্তা মালিক, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এক নারী একটি বিড়ালের কারণে দোযখের শাস্তি প্রাপ্ত হয়। সে সেটিকে বেঁধে রেখেছিল, ফলে অনাহারে তার মৃত্যু হয় এবং সেই কারণে উক্ত নারী দোযখে যায়। তাকে বলা হবে, আল্লাহ অধিক অবগত, তুই একে আটকে রাখা অবস্থায় না একে খাদ্য ও পানীয় দিলি আর না একে ছেড়ে দিলি যে, পোকা-মাকড় খেয়ে তার জীবন রক্ষা করতে পারতো (বুখারী, মুসলিম)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা দয়া করো তোমাদেরকেও দয়া করা হবে। তোমরা ক্ষমা করো, তোমাদেরকেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন। সর্বনাশ তাদের যারা কথা ভুলে যায় এবং ধ্বংস তাদের জন্য যারা জ্ঞাতসারে বারবার অন্যায় কাজ করতে থাকে (আবু দাউদ)। আবু উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দয়াপরবশ হয়, তা যবেহ করার প্রাণীর প্রতি হলেও, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে দয়া করবেন।

【64】

অনুচ্ছেদঃ বাসা থেকে পাখির ডিম আনা।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) এক মনযিলে অবতরণ করলেন। এক ব্যক্তি হুম্মারা পাখির ডিম তুলে আনলো। পাখিটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাথার উপর এসে উড়তে লাগলো। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে তার ডিম তুলে এনে একে শংকিত করেছে? এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তার ডিম পেড়ে এনেছি। নবী (সাঃ) বলেনঃ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ডিম রেখে আসো (আবু দাউদ, আহমাদ)।

【65】

অনুচ্ছেদঃ খাঁচার পাখি

হিশাম ইবনে উরওয়া (র) ইবনুয যুবাইব (রাঃ) মক্কায় (শাসনকর্তা) ছিলেন। আর নবী (সাঃ)-এর সাহাবীগণ খাঁচায় পাখি পোষতেন বা খাঁচায় করে (অন্যত্র) নিয়ে যেতেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) (আবু তালহার ঘরে) প্রবেশ করলেন। তিনি আবু তালহার বালক পুত্র আবু উমাইরকে দেখতে পেলেন। তার একটি বুলবুলি ছিল এবং সে তা নিয়ে খেলা করতো। তিনি তাকে বলেনঃ ওহে আবু উমাইর! কি করলো তোমার নুগায়ের (বুখারী, মুসলিম)।

【66】

অনুচ্ছেদঃ লোকের মধ্যে সদ্ভাব সৃষ্টি করা।

উম্মু কুলসুম (রাঃ) উম্মু কুলসুম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয় এবং কল্যাণকর কথা বলে বা কল্যাণকর ব্যবস্থার উন্নয়ন করে, সে মিথ্যুক নয়। উম্মু কুলসুম (রাঃ) আরো বলেন, আমি তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া আর কোন ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ)-কে কাউকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনিঃ (১) লোকজনের মধ্যে আপোষ-রফা করতে, (২) স্ত্রীর নিকট স্বামীর কথায় এবং (৩) স্বামীর নিকট স্ত্রীর কথায় (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)।

【67】

অনুচ্ছেদঃ মিথ্যা কথন বর্জনীয়।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা অবশ্যই সত্যের ধারক হবে। কেননা সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথ দেখায় এবং কল্যাণ জান্নাতের দিকে পথ দেখায়। কোন ব্যক্তি সত্যবাদিতা অবলম্বন করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যাশ্রয়ী বলে তালিকাভুক্ত হয়। সাবধান! তোমরা মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে চালিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি মিথ্যাচার অবলম্বন করে এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যাবাদীর তালিকাভুক্ত হয় (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)। আবদুল্লাহ (রাঃ) মিথ্যা বাস্তবিকপক্ষেও নয় এবং ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করে তা তাকে না দেয়ার বিষয়টিও সংগত নয়।

【68】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি জনগণের উৎপাতে ধৈর্য ধারণ করে।

ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি জনগণের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের উৎপাত সহ্য করে সে—যে ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের উৎপাতও সহ্য করে নাসাঈ, তার চেয়ে উত্তম (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ) ।

【69】

অনুচ্ছেদঃ উৎপাত সহ্য করা।

আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কষ্টদায়ক কিছু শোনার পরও ধৈর্য ধারণের ব্যাপারে মহামহিম আল্লাহর চেয়ে অধিক ধৈর্যশীল আর কেউ বা কিছু নাই। লোকে তাঁর সন্তান আছে বলে দাবি করে। এতদসত্ত্বেও তিনি তাদেরকে নিরাপদ রাখেন এবং রিযিক দান করেন (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) । আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) কিছু মাল বণ্টন করলেন, সাধারণত যেভাবে তিনি বণ্টন করতেন। আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বললো, আল্লাহর শপথ! এটা এমন বণ্টন যাতে মহামহিম আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অভিপ্রায় অনুপস্থিত। আমি মনে মনে বললাম, আমি অবশ্যই নবী (সাঃ)-কে বলবো। আমি তার নিকট আসলাম। তিনি তখন তার সাহাবী পরিবেষ্টিত ছিলেন। আমি তাঁকে নীরবে তা বললাম। এতে তাঁর মনোকষ্ট হলো এবং তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তিনি এতো অসন্তুষ্ট হলেন যে, আমি মনে মনে বললাম, যদি আমি তা তাকে অবগত না করতাম। অতঃপর তিনি বলেনঃ মূসা (আবু দাউদ)-কে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)।

【70】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের মধ্যে আপোষ-রফা করা।

আবু দারদা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে নামায, রোযা ও দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম কাজ সম্পর্কে অবহিত করবো না। সাহাবীগণ বলেন, নিশ্চয়। তিনি বলেনঃ জনগণের মধ্যে (বিবাদের) আপোষ-রফা। আর জনগণের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদ হলো ধ্বংসকারী (দারিমী, তিরমিযী)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) “অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করো” (সূরা আনফালঃ ১)। উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর দ্বারা আল্লাহ বান্দার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন যে, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের পারস্পরিক অবস্থার সংশোধন করে (তাবারানী)।

【71】

অনুচ্ছেদঃ তুমি কোন ব্যক্তিকে মিথ্যা কথা বললে, অথচ সে তাকে সত্য মনে করলো।

সুফিয়ান ইবনে উসাইদ আল-হাদৱামী (র) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ সবচাইতে মারাত্মক বিশ্বাসভঙ্গ এই যে, তুমি তোমার কোন ভাইকে কোন কথা বললে, সে তো তোমাকে বিশ্বাস করেছে, অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথাই বলেছে (আবু দাউদ)।

【72】

অনুচ্ছেদঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে ওয়াদা করলে তার খেলাপ করো না।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করো নাসাঈ, তাকে উপহাস করো না এবং তার সাথে এমন ওয়াদা করো না তুমি যার খেলাপ করবে (তিরমিযী)।

【73】

অনুচ্ছেদঃ বংশের খোঁটা দেয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দুইটি (মন্দ) কর্ম যা আমার উম্মাত ত্যাগ করবে না : মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা এবং বংশ তুলে খোটা দেয়া (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনুল জারূদ)।

【74】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা।

ফুসায়লা (র) আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অন্যায় কাজে কোন ব্যক্তির নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করা কি জাহিলী গোত্রপ্রীতির অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেনঃ হাঁ।-(ইবনে মাজাহ, আহমাদ)

【75】

অনুচ্ছেদঃ কারো সম্পর্কচ্ছেদ করা।

আওফ ইবনুল হারিস (র) আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তার কোন একটি জিনিস বিক্রয় বা দান করার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! হয় আয়েশা (রাঃ) এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন, নয়তো আমি তাকে সম্পদ দানের অযোগ্য ঘোষণা করবো। আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি সে এ ধরনের কথা বলেছে? লোকেরা বললো, হাঁ। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করছি যে, আমি ইবনুয যুবাইরের সাথে কখনো কথা বলবো না। এ বিচ্ছেদকাল দীর্ঘায়িত হলে ইবনুয যুবাইর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট মধ্যস্থতাকারী পাঠান। কিন্তু আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো কারো সুপারিশ গ্রহণ করবো না এবং আমি আমার শপথও ভঙ্গ করবো না। ব্যাপারটি ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-এর জন্য দীর্ঘায়িত হলে তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগূসের সাথে কথা বলেন। তারা দু’জন বনু যোহরার লোক ছিলেন। ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তাদেরকে বলেন, তোমাদের দু’জনকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমাকে তোমরা আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে পৌছিয়ে দাও। কেননা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মানত মানা তার জন্য জায়েয হয়নি। অতএব মিসওয়ার ও আবদুর রহমান (রাঃ) চাদর গায়ে জড়িয়ে ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনে আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। দু’জন বলেন, আসসালামু আলাইকে ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু! আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? তিনি বলেন, হাঁ, আসো। তারা বলেন, হে উম্মুল মুমিনীন। আমরা সবাই কি ভেতরে আসতে পারি? আয়েশা বলেন, হাঁ, সবাই আসো। আয়েশা (রাঃ) জানতেন না যে, তাদের সাথে ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-ও আছেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করলে ইবনুয যুবাইর (রাঃ) পর্দার ভেতর গিয়ে আয়েশা (রাঃ)-কে জড়িয়ে ধরে আল্লাহর দোহাই দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। মিসওয়ার ও আবদুর রহমানও তাঁকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-এর সাথে কথা বলতে এবং তার ওজর ও অনুশোচনা গ্রহণ করতে বলেন। তারা দু’জন বলেন, আপনি তো জানেন, নবী (সাঃ) সালাম-কালাম ও দেখা-সাক্ষাত বন্ধ করে দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “কোন মুসলমানের জন্য তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী দেখা-সাক্ষাত ও সালাম-কালাম বন্ধ রাখা জায়েয নয়”। তারা দু’জন যখন এভাবে আয়েশা (রাঃ)-কে বুঝালেন এবং বারবার এর ক্ষতিকর দিক স্মরণ করিয়ে দিলেন তখন তিনিও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি (কথা না বলার) মানত ও শপথ করে ফেলেছি এবং অনেক কঠিন মানত। কিন্তু তারা দু’জন বরাবর তাকে বুঝাতে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি ইবনুয যুবাইরের সাথে কথা বলেন। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) তার শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে চল্লিশজন গোলাম আযাদ করেন। এরপর যখনই এ মানতের কথা তার স্মরণ হতো তখনই তিনি কাঁদতেন, এমনকি তার চোখের পানিতে তার ওড়না ভিজে যেতো (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)।

【76】

অনুচ্ছেদঃ মুসলমানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ নিষিদ্ধ।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমরা পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসাঈ, পরস্পর গোপনে শত্রুতা করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ পরম্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন রাতের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয় (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, মুওয়াত্ত্বা মালিক)। আতা ইবনে ইয়ামীদ আল-লাইসী আল-জুনদাই (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য তার অপর ভাইয়ের সাথে তিন রাতের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা হালাল নয়। (অবস্থা এই যে,) তাদের দেখা-সাক্ষাত হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে যে প্রথমে সালাম দেয় সে অপরের চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, তাবারানী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমরা পরম্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসাঈ, ঝগড়া-বিবাদ করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও (বুখারী, মুসলিম)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ দুই ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর জন্য অথবা ইসলামের সৌজন্যে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাদের মধ্যকার কোন একজনের প্রথম অপরাধ তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় (আবু দাউদ)। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-র চাচাতো ভাই হিশাম ইবনে আমের আল-আনসারী (রাঃ) তার পিতা উহুদের যুদ্ধের দিন শহীদ হন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তারা যাবত সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকবে, তাবৎ তারা সত্য বিমুখ বলে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথম কথা বলার উদ্যোগ নিবে তার সেই উদ্যোগ তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ হবে। আর যদি তারা এরূপ সম্পর্কচ্ছেদ অবস্থায় মারা যায় তবে তারা কখনও একত্রে বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি তাদের একজন অপরজনকে সালাম করে, আর সে তা গ্রহণ করতে রাজী না হয়, তবে একজন ফেরেশতা তার সালামের জবাব দেন, আর অপরজনকে দেয় শয়তান। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি অবশ্যই বুঝতে পারি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেমন করে তা বুঝেন? তিনি বলেনঃ যখন তুমি সন্তুষ্ট থাকো তখন বলো, হাঁ, মুহাম্মাদের প্রভুর শপথ। আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট থাকো তখন বলো, নাসাঈ, ইবরাহীমের প্রভুর শপথ। আমি বললাম, হাঁ, আমি তখন আপনার নামটাই কেবল পরিহার করি।

【77】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বছরব্যাপী তার ভাইয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকে।

আবু খিরাশ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে এক বছর ধরে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকে, সে যেন তাকে হত্যা করলো (আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম)। ইমরান ইবনে আবু আনাস (র) আসলাম গোত্রীয় মহানবী (সাঃ)-এর জনৈক সাহাবী তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “কোন ঈমানদার ব্যক্তির সাথে এক বছর ধরে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা তাকে হত্যা করার সমতুল্য”। সেই মজলিসে মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবু ইতাবও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, আমরাও সেই সাহাবীর নিকট এ হাদীস শুনেছি (আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম)।

【78】

অনুচ্ছেদঃ দুই সম্পর্কচ্ছেদকারী।

আবু আইউব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন লোকের জন্য তার (মুসলমান) ভাইকে এভাবে পরিত্যাগ করা (কথাবার্তা না বলা) বৈধ নয় যে, উভয়ের সাক্ষাত হলে একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাদের দু’জনের মধ্যে উত্তম সেইজন যে সালাম দ্বারা (কথাবার্তার) সূচনা করে। হিশাম ইবনে আমের আল-আনসারী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তারা যাবত সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকবে তাবৎ তারা সত্য বিমুখ বলে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথম কথা বলার উদ্যোগ নিবে, তার সেই উদ্যোগ তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ হবে। আর যদি তারা এইরূপ সম্পর্কচ্ছেদ অবস্থায় মারা যায় তবে তারা কখনও একত্রে বেহেশতে যেতে পারবে না (আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।

【79】

অনুচ্ছেদঃ শত্রুতা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও (বুখারী, মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি দ্বিমুখী চরিত্রের লোককে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টরূপে দেখতে পাবে, যে এদের কাছে এক চেহারা নিয়ে আসে এবং অন্যদের কাছে ভিন্ন চেহারা (চরিত্র) নিয়ে আসে (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা কুধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা কুধারণা হলো ডাহা মিথ্যা। তোমরা নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে পণ্যের দরদাম করো নাসাঈ, ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো নাসাঈ, ঝগড়াঝাটি করো না এবং গোপনে শত্রুতা করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে যাও (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয় যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। বলা হয়, এই দু’জনকে আপোষ-রক্ষা করার জন্য অবকাশ দাও। এই দু’জনকে আপোষ-রফা করার জন্য অবকাশ দাও; এই দু’জনকে আপোষ-রফার জন্য অবকাশ দাও (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুওয়াত্ত্বা মালিক, ইবনে হিব্বান)। আবু দারদা (রাঃ) আমি কি তোমাদেরকে এমন কথা বলবো না যা দান-খয়রাত ও রোযার তুলনায় উত্তম? তা হলো মানুষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয়া। সাবধান! ঘৃণা-বিদ্বেষ ধ্বংসাত্মক। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির মধ্যে তিনটি পাপাচার না থাকলে যাকে ইচ্ছা তার অন্য গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরীক না করে মারা গেলো, (২) সে যাদু চর্চাকারী ছিলো না এবং (৩) সে তার কোন (মুসলমান) ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেনি।

【80】

অনুচ্ছেদঃ সালাম সম্পর্কচ্ছেদের কাফফারাস্বরূপ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির জন্য কোন ঈমানদার ব্যক্তির সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা জায়েয নয়। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে যেন তার সাথে সাক্ষাত করে তাকে সালাম দেয়। মুমিন ব্যক্তি তার সালামের জবাব দিলে তারা দু’জনই সওয়াবে অংশীদার হবে। আর তার সালামের উত্তর না দেয়া হলে সালামদাতা মুসলমান ব্যক্তি সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে (আবু দাউদ)।

【81】

অনুচ্ছেদঃ উঠতি বয়সের যুবকদের পৃথক পৃথক রাখা।

সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (র) উমার (রাঃ) তার পুত্রদেরকে বলতেন, ভোর হলেই তোমরা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে এবং এক ঘরে একত্র হবে না। কেননা আমার আশংকা হয়, না জানি তোমাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ বা কোন অঘটন ঘটে যায়।

【82】

অনুচ্ছেদঃ পরামর্শ না চাইতেই কেউ তার ভাইকে পরামর্শ দিলে।

ইবনে উমার (রাঃ) ইবনে উমার (রাঃ) এক রাখালকে তার ছাগলসহ একটি তৃণলতাহীন স্থানে দেখতে পেলেন। তিনি তার চাইতে উত্তম একটি স্থানও দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বলেন, হে রাখাল! তোমার জন্য দুঃখ হয়। এগুলো অন্যত্র নিয়ে যাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “প্রত্যেক রাখালকে তার রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে”(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ)।

【83】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অবাঞ্ছিত দৃষ্টান্ত অপছন্দ করে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমাদের জন্য মন্দ দৃষ্টান্ত শোভনীয় নয়। যে ব্যক্তি দান করে তা ফেরত নেয় সে কুকুরতুল্য—যে বমি করে পুনরায় তা গলাধকরণ করে।- (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)

【84】

অনুচ্ছেদঃ ধোঁকাবাজ ও প্রতারক সম্পর্কে

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে (আবু দাউদ, হাকিম, তাহাবী)।

【85】

অনুচ্ছেদঃ গালমন্দ করা।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে দুই ব্যক্তি পরস্পরকে গালি দিলো। তাদের একজন গালি দিলে অপরজন নীরব থাকলো। নবী (সাঃ) বসা অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর অপরজনও তার প্রতিপক্ষকে গালি দিলো। নবী (সাঃ) উঠে দাঁড়ান। তাঁকে বলা হলো, আপনি উঠে গেলেন কেন? তিনি বলেনঃ ফেরেশতারা উঠে যাওয়ায় আমিও উঠে গেলাম। ঐ ব্যক্তি যতক্ষণ নীরব ছিল, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার পক্ষ থেকে যে গালি দিচ্ছিল, তার উত্তর দিচ্ছিলেন। যখন সে প্রতিশোধস্বরূপ গালি দিলো তখন ফেরেশতারা উঠে চলে গেলেন (আবু দাউদ)। উম্মু দারদা (রাঃ) এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বললো, এক ব্যক্তি আবদুল মালেকের নিকট আপনার দুর্নাম করেছে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে দোষ নাই তা কেউ বলে থাকলে, কখনো আমরা এমন গুণের জন্যও প্রশংসিত হয়েছি যা আমাদের মধ্যে নেই। কায়েস (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার সাথীকে বললো, তুমি আমার দুশমন অথবা বললো, সে তার বন্ধুত্ব থেকে দায়মুক্ত, তাদের একজন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেলো। কায়েস (র) বলেন, পরে আবু জুহাইফা (রাঃ) আমাকে অবহিত করেন যে, তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, তবে যে তওবা করে সে ব্যতীত।

【86】

অনুচ্ছেদঃ পানি পান করানো।

ইবনে আব্বাস (র) আদম সন্তানের দেহে তিনশত ষাটটি সংযোগ অস্থি বা গ্রন্থি আছে। প্রতিদিন সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি সদাকা ধার্য আছে। প্রতিটি উত্তম কথা একটি সদাকা। কোন ব্যক্তির তার ভাইকে সাহায্য করাও একটি সদাকা। কেউ কাউকে পানি পান করালে তাও একটি সদাকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও একটি সদাকা (বাযযার, ইবনে হিব্বান)।

【87】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি গালি-গালাজ শুরু করে উভয়ের পাপ তার উপর বর্তায়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দুই পরস্পর গালিদাতার পাপ সূচনাকারীর উপর বর্তায়, প্রথমে যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে সীমা লংঘন না করলে (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান)। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দুই পরস্পর গালিদাতার পাপ সূচনাকারীর উপর বর্তায়, প্রথমে যাকে গালি দেয়া হয়েছে সে সীমা লংঘন না করলে।– (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান) মহানবী (সাঃ) তোমরা কি জানো চোগলখোর কে? সকলে বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের একের কথা অপরের কানে লাগায়। মহানবী (সাঃ) মহামহিম আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন, তোমরা বিনয়ী হও এবং একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করো না।

【88】

অনুচ্ছেদঃ গালিগালাজকারী পক্ষদ্বয় দুই শয়তান এবং তারা মিথ্যা দাবিদার ও মিথ্যাবাদী।

ইয়াদ ইবনে হিমার (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক ব্যক্তি আমাকে গালাগালি করে। নবী (সাঃ) বলেনঃ যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা দুইটি শয়তান, তারা বাজে কথা বলে এবং তারা মিথ্যুক (ইবনে হিব্বান)। ইয়াদ ইবনে হিমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেনঃ তোমরা পরস্পর বিনয়ী হও, এমনকি একে অপরের সাথে বাড়াবাড়ি করবে নাসাঈ, একে অপরের সামনে অহংকার করবে না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনার কি মত, কেউ যদি আমাকে আমার চেয়ে কম মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের মজলিসে গালি দেয় এবং আমিও তার প্রতিউত্তর করি, তবে তাতে আমার গুনাহ হবে? তিনি বলেনঃ যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা দুইটি শয়তান, উভয়ে বাজে কথা বলে এবং উভয়ে মিথ্যুক (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। ইয়াদ (রাঃ) আমি ছিলাম রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শত্রু। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি তাঁকে একটি উল্লী হাদিয়া দিতে চাইলাম, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেনঃ মুশরিকদের উপহারাদি গ্রহণ আমার পছন্দনীয় নয় (আবু দাউদ, তিরমিযী)।

【89】

অনুচ্ছেদঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ।

সাদ ইবনে মালক (রাঃ) মহানবী (সাঃ) বলেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনো অশ্লীলভাষী, অভিশাপকারী বা গালি বর্ষণকারী ছিলেন না। অসন্তুষ্ট হলে তিনি বলতেনঃ তার কি হলো? তার কপাল ধূলিমলিন হোক (বুখারী)। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুসলমানকে গালি দেয়া জঘন্য পাপ এবং তাকে হত্যা করা কুফরী কাজ (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)। আবু যার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে যেন পাপাচারী বা কাফের বলে অভিহিত না করে। বাস্তবে সেই ব্যক্তি তদ্রুপ না হলে উক্ত অপবাদ অপবাদ দানকারীর উপর পতিত হয় (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ)। আবু যার (রাঃ) আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে নিজ পিতা ব্যতীত অপর কাউকে তার পিতা বলে পরিচয় দেয় এবং যে ব্যক্তি নিজেকে এমন কোন বংশের লোক বলে পরিচয় দেয়, যে বংশে তার জন্ম হয়নি, সে যেন দোযখকে তার বাসস্থান বানালো। আর যে ব্যক্তি কাউকে কাফের বা আল্লাহর দুশমন বলে অথচ সে তা নয়, তা তার উপর পতিত হয় (বুখারী, মুসলিম)। নবী (সাঃ)-এর সাহাবী সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ)-এর সামনে দুই লোক পরস্পরকে গালি দিলো। তাদের একজন অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে গেলো, এমনকি তার চেহারা ফুলে বিকৃত হয়ে গেলো। তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি এমন একটি কথা জানি যা সে বললে তার ক্রোধ তিরোহিত হতো। একথা শুনে এক ব্যক্তি লোকটির কাছে গিয়ে নবী (সাঃ)-এর এ উক্তিটি তাকে অবহিত করলো এবং বললো, তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও অর্থাৎ আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়ো। প্রত্যুত্তরে সে বললো, আমার মধ্যে কি তুমি কোন খারাপ কিছু দেখতে পাচ্ছো? আমি কি পাগল? তুমি চলে যাও -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)। আবদুল্লাহ (রাঃ) প্রতি দু’জন মুসলমান যাদের মধ্যে মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আচ্ছাদন বিদ্যমান আছে। কোন ব্যক্তি তার অপর সাথীকে অশ্লীল কথা বললে সে আল্লাহর সেই আচ্ছাদন ছিন্ন করলো এবং একজন অপরজনকে তুমি কাফের বললে তাদের মধ্যকার একজন তো কাফের হয়েই যায়।

【90】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কাউকে মুখের উপর কিছু বলে না।

আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) একটা কিছু করলেন এবং লোকদেরকেও তা করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু লোকেরা তা করা থেকে বিরত থাকলো। এ খবর নবী (সাঃ)-এর কাছে পৌছলে তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য পেশ করলেন। বক্তৃতায় তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তারপর বলেনঃ লোকদের কি হয়েছে যে, এমন কাজ থেকে তারা বিরত থাকছে যা আমি করেছি? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তাদের চেয়ে বেশী জানি এবং তাদের চেয়ে বেশী ভয়ও করি (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)। আনাস (রাঃ) কারো কোন আচরণ অপছন্দ হলে মহানবী (সাঃ) তাকে কাদাচিৎ মুখের উপর কিছু বলেছেন। একদিন তাঁর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হলো যার পরিধেয় বস্ত্রে হলুদ রং-এর ছাপ ছিল। সে চলে গেলে তিনি তার সাহাবীদের বলেনঃ কতই না উত্তম হতো যদি এই ব্যক্তি এই রংটি পরিবর্তন করতো বা তা তুলে ফেলতো (আবু দাউদ, আহমাদ, তিরমিযী)।

【91】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অপরকে বললো, হে মুনাফিক।

আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ) আমাকে ও যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে পাঠালেন। আমরা দুজনই ছিলাম ঘোড়সওয়ার। তিনি বলেনঃ “তোমরা রওয়ানা হয়ে অমুক অমুক রওদায় (বাগানে) গিয়ে পৌছবে। সেখানে এক নারীকে পাবে। তার সাথে একটি চিঠি আছে যা হাতেব মুশরিকদের লিখেছে। তোমরা সেই পত্র উদ্ধার করে আমার নিকট নিয়ে আসবে”। আমরা পথ চলতে লাগলাম এবং নবী (সাঃ)-এর দেয়া তথ্য মোতাবেক সেই নারীকে পেয়ে গেলাম। সে তার উটে করে যাচ্ছিল। আমরা বললাম, তোমার সাথের চিঠি কোথায়? সে বললো, আমার সাথে কোন চিঠি নাই। আমরা তাকে এবং তার উট তল্লাশী করলাম। আমার সাথী বললো, আমি তো (চিঠি) দেখি না। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিথ্যা বলেননি। আল্লাহর শপথ! হয় তুমি পত্র বের করে দিবে, নতুবা আমি তোমাকে উলঙ্গ করবো। তখন সে তার কোমরের দিকে তার হাত বাড়ালো। সে একটি পশমী কাপড় পরিহিত ছিল। সে চিঠি বের করলো। আমি তা নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট ফিরে এলাম। উমার (রাঃ) বললেন, এই ব্যক্তি (হাতিব) আল্লাহ, তার রাসূল এবং মুসলিম জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাকে তাকে হত্যা করার অনুমতি দিন। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কেন এটা করলে? হাতিব বললেন, আল্লাহর উপর আমার ঈমান ঠিক আছে। আমি ইচ্ছা করলাম যে তাদের উপর আমার একটু অনুগ্রহ থাকুক। নবী (সাঃ) বলেনঃ সে ঠিক বলেছে। হে উমার! সে কি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এজন্যই হয়তো আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেছেন, “তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো, তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেছে”। এ কথায় উমার (রাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসজল হয়ে গেলো এবং তিনি বলেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)

【92】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার (মুসলমান) ভাইকে বলে, হে কাফের !

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন লোক তার কোন ভাইকে ‘হে কাফের’ বলে সম্বোধন করলে তাদের একজন কুফরীর শিকার হলো (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, মুওয়াত্ত্বা মালিক)। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কাফের বললে তাদের দুইজনের মধ্যে একজন কাফের হয়ে যায়। সেই ব্যক্তি যাকে কাফের বলেছে, সে যদি সত্যিই কাফের হয়ে থাকে তাহলে সে যথার্থই বলেছে। আর সে যদি তার মন্তব্য অনুযায়ী কাফের না হয়ে থাকে, তবে যে তাকে কাফের বললো সে কাফের হয়ে যায় (বুখারী, আহমাদ)।

【93】

অনুচ্ছেদঃ শত্রুর আনন্দ-উল্লাস।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) দুর্ভাগ্য এবং শক্রর আনন্দ-উল্লাস থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)।

【94】

অনুচ্ছেদঃ সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তোমাদের তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিনটি কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা হলো, তোমরা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কিছু শরীক করবে না। তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রশিকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরবে। আল্লাহ যাকে তোমাদের শাসক বানিয়েছেন তোমরা তার কল্যাণ কামনা করবে বা তাকে সদুপদেশ দিবে। তিনি তোমাদের যে তিনটি কাজ অপছন্দ করেন তা হলো, আসার কথা (গুজব), অধিক যাঞ্চা ও সম্পদের অপচয় (বুখারী,মা,ইবনে হিব্বান)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা যা কিছু খরচ করো আল্লাহ তার বিনিময় দেন, তিনি উত্তম রিযিকদাতা” (৩৪:৩৯) সম্পর্কে বর্ণিত। তিনি এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহর এই ওয়াদা তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন তোমরা অপচয় করবে না এবং কার্পণ্যও করবে না।

【95】

অনুচ্ছেদঃ বাসস্থান সংস্কার করা।

যায়েদ ইবনে আসলাম (র) উমার (রাঃ) মিম্বারে দাড়িয়ে বলতেন, হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের বাসস্থানসমূহ সংস্কার করো এবং এই জিনেরা তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের পূর্বেই তোমরা তাদের ভীতি প্রদর্শন করো। এদের মধ্যকার মুসলমানরা তোমাদের সামনে আবির্ভূত হবে না। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে তাদের সাথে আমার শত্রুতা হয়েছে তারপর আর কোন দিন তাদের সাথে আমি আপোষ করিনি।

【96】

অনুচ্ছেদঃ ঘর-বাড়ি নির্মাণের খরচ।

খাব্বাব (রাঃ) আদম সন্তানকে প্রতিটি ব্যাপারেই সওয়াব দেয়া হবে, ঘরবাড়ি নির্মাণ ব্যয় ব্যতীত (তিরমিযী) ।

【97】

অনুচ্ছেদঃ কর্মচারীদের কাজে নিয়োগকর্তার সহযোগিতা।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) ওয়াহত নামক স্থান থেকে আগত তার এক ভ্রাতুষ্পুত্রকে বলেন, তোমার কর্মচারীরা কি কাজ করে? সে বললো, আমি জানি না। তিনি বলেন, যদি তুমি সাকাফী গোত্রের লোক হতে তবে তোমার কর্মচারীরা কি কাজ করে তা তুমি অবশ্যই জানতে। অতঃপর তিনি আমাদের লক্ষ্য করে বলেন, কোন ব্যক্তি নিজের ঘরে বা সম্পদে তার কর্মচারীদের সাথে কাজ করলে সে হয় মহামহিম আল্লাহর কর্মচারী।

【98】

অনুচ্ছেদঃ সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মানুষ সুউচ্চ দালানকোঠা নিয়ে গর্বে মত্ত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না (বুখারী)। হাসান (র) আমি উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের ঘরসমূহে যাতায়াত করতাম। আমি তাদের ঘরসমূহের ছাদসমূহ আমার দুই হাতে নাগাল পেতাম (মারাসীলে আবু দাউদ)। দাউদ ইবনে কায়েস (র) খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত মুমিন জননীদের ঘরসমূহ আমি দেখেছি। এসব ঘরের বহির্দিকে (দেয়ালে) ছিল ঘাসের পলেস্তারা। আমার মনে হয় ঘরের প্রস্থ ছিল ঘরের দরজা থেকে বাড়ির ফটক পর্যন্ত প্রায় ছয়-সাত হাত, ভিতরের অংশ দশ হাত এবং উচ্চতা মনে হয় সাত-আট হাত হবে। আমি আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়েছি। তা ছিল পশ্চিমমুখী (আবু দাউদের মারাসীল)। আবদুল্লাহ রুমী (র) আমি উম্মে তালক (রাঃ)-এর বাড়িতে গেলাম। আমি তাকে বললাম, আপনার এই ঘরের ছাদ কতো নিচু। তিনি বলেন, হে ব্যৎস! আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার কর্মচারীদেরকে লিখে পাঠান, তোমাদের ঘর-বাড়িগুলো সুউচ্চ করে বানাবে না। কেননা তা তোমাদের দুর্দিনের ইঙ্গিতবহ ।

【99】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বাড়িঘর নির্মাণ করে।

বর্ণনাকারী হাব্বা ইবনে খালিদ এবং সাওয়া ইবনে খালিদ (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট এলেন। তখন তিনি ঘরের দেয়াল মেরামত করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর সেই কাজে তাকে সহায়তা করেন।-(ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান) কায়েস ইবনে আবু হাযেম (র) আমরা অসুস্থ খাবাব (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। তিনি তার দেহে (গরম লোহার) সাতটি দাগ নিলেন। তিনি বলেন, আমাদের যে সকল সাথী অতীত হয়েছেন, দুনিয়া তাদের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। এখন আমরা এমন বস্তুর অধিকারী হয়েছি যা রাখার জন্য মাটি ছাড়া আর কিছু পাচ্ছি না। নবী (সাঃ) যদি আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ না করতেন তবে আমি অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। কায়েস ইবনে আবু হাযেম (র) অতঃপর আর একদিন আমরা তার নিকট আসলাম। তখন তিনি তার একটি দেয়াল নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, মুসলমানকে তার প্রতিটি খরচের জন্য সওয়াব দেয়া হয়, কিন্তু যা সে মাটিতে খরচ করে (ঘরবাড়ি নির্মাণ করে) তাতে নয় (বুখারী, মুসলিম)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) যাচ্ছিলেন, তখন আমি আমার কুড়ে ঘর মেরামত করছিলাম। তিনি বলেনঃ এটা কি? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কুড়ে ঘর মেরামত করছি। তিনি বলেনঃ ব্যাপারটি (মৃত্যু বা কিয়ামত) এর চেয়েও দ্রুত ধেয়ে আসছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবেন হিব্বান)

【100】

অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত বসতবাড়ি।

নাফে ইবনে আবদুল হারিস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির সৌভাগ্যের নিদর্শন হলো প্রশস্ত বসতবাড়ি, উত্তম প্রতিবেশী এবং মনোপূত বা আরামদায়ক বাহন -(আহমাদ, তাহাবী)।

【101】

অনুচ্ছেদঃ স্বতন্ত্র কোঠায় অবস্থান।

সাবিত (র) তিনি আনাস (রাঃ)-এর সাথে তার ঘরে উপরের মাচানে ছিলেন। তিনি আযান শুনে নিচে নামলে আমিও তার সাথে নিচে নামলাম। তিনি ঘন ঘন পা ফেলে (মসজিদে) যেতে লাগলেন। তিনি বলেন, একদা আমি যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি এভাবে আমাকে সাথে নিয়ে হটলেন এবং বললেন, তুমি কি জানো, আমি তোমার সাথে এভাবে কেন হাঁটছি? কেননা নবী (সাঃ) আমাকে সাথে নিয়ে এভাবে (ঘন কদমে) হেঁটেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ তুমি কি জানো, আমি কেন তোমার সাথে এভাবে হাঁটছি? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ যাতে নামাযের উদ্দেশ্যে আমাদের পদচারণার সংখ্যা অধিক হয় (ইবনে আবু শায় বাযযার)।

【102】

অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা কারুকার্য করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ লোকে নকশি কাঁথার মত কারুকার্যময় বাড়িঘর নির্মাণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। ইবরাহীম (র) বলেন, ‘মারাজিল’ অর্থ কারুকার্য মণ্ডিত কাপড়। মুগীরা (রাঃ)-এর সচিব ওয়াররাদ (র) মুয়াবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রাঃ)-কে লিখে পাঠান, আপনি নবী (সাঃ)-এর কাছে যা শুনেছেন তা আমাকে লিখে পাঠান। মুগীরা (রাঃ) তাকে লিখলেন, আল্লাহর নবী (সাঃ) প্রতি নামাযের পর বলতেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাইবনে মাজাহ, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই। তাঁরই রাজত্ব, তাঁর জন্যই সব প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো তা কেউ রোধ করতে পারে না এবং যা প্রতিরোধ করো তা কেউ দান করতে পারে না। কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার অসন্তুষ্টির মোকাবিলায় কোন উপকারে আসে না”। তিনি তাকে পত্রে আরো লিখেনঃ তিনি অযথা অধিক কথাবার্তা বলতে, যাঞ্চা করতে এবং সম্পদের অপচয় করতে নিষেধ করতেন। তিনি আরো নিষেধ করতেন, মায়েদের অবাধ্য হতে, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত প্রোথিত করতে এবং কার্পণ্য করতে ও অপরের প্রাপ্য রুখে রাখতে। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমাহ, আবু আওয়া নাসাঈ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকেই তার আমল মুক্তি দিতে পারবে না। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিও নন কি? তিনি বলেনঃ আমিও নইবনে মাজাহ, যদি না আল্লাহ তাঁর রহমাত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। অতএব তোমরা সরল পথে চলো, তাঁর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হও, সকাল-সন্ধ্যায় ইবাদত করো, রাতের অন্ধকারেও কিছু ইবাদত করো এবং সর্বাবস্থায় ভারসাম্যপূৰ্ণপন্থা অবলম্বন করো -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)।

【103】

অনুচ্ছেদঃ নম্রতা প্রদর্শন।

মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) কয়েকজন ইহুদীর একটি দল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করে বললো, আসসামু আলাইকুম (তোমাদের মৃত্যু হোক)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, কথাটা আমি বুঝতে পারলাম এবং বললাম, ওয়া আলাইকুমুস সামু ওয়াল-লানাতু (তোমাদের মৃত্যু হোক এবং অভিসম্পাতও)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ থামো হে আয়েশা! আল্লাহ সব ব্যাপারে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কি বলেছে তা আপনি শুনেননি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমিও তো ওয়া আলাইকুম বলেছি -(বুখারী, মুসলিম)। জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবু দারদা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যাকে নম্রতার মতো গুণ দান করা হয়েছে তাকে কল্যাণ দান করা হয়েছে। আর যাকে নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে ভারী বস্তু হবে উত্তম চরিত্র। নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও বাচাল লোককে পছন্দ করেন না -(তিরমিযী, আবু দাউদ)। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করো। (আবু দাউদ, নাসাঈ) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কর্কশ স্বভাব যে কোন বস্তুকেই দোষযুক্ত করে। নিশ্চয় আল্লাহ নম্র এবং তিনিও নম্রতা পছন্দ করেন। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। কোন কিছু তাঁর অপছন্দ হলে আমরা তাঁর চেহারা দর্শনেই তা বুঝতে পারতাম -(বুখারী, মুসলিম)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ উত্তম চালচলন, সদাচার এবং মিতাচার হচ্ছে নবুয়াতের সত্তর ভাগের একভাগ (আবু দাউদ)। আয়েশা (রাঃ) আমি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। তা ছিল বেশ কষ্টদায়ক। (আমি তাকে প্রহার করলে) নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি অবশ্যই নম্রতা অবলম্বন করবে। কোন বস্তুর মধ্যে তা বিদ্যমান থাকলে তা সেই বস্তুকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর কোন বস্তু থেকে তা অপসারিত করা হলে তা দোষদুষ্ট হয়ে যায় (মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সাবধান! কৃপণতা পরিহার করবে। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এই কৃপণতাই ধ্বংস করেছে। ফলে তারা পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে এবং আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যুলুম কিয়ামতের দিন ঘনীভূত অন্ধকাররূপে আবির্ভূত হবে (মুসলিম, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।

【104】

অনুচ্ছেদঃ সরল জীবনযাত্রা।

কাসীর ইবনে উবায়দুল্লাহ (র) আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, একটু অপেক্ষা করো। আমি আমার মুখাভরণটি একটু সেলাই করে নেই। আমি অপেক্ষা করলাম। আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি যদি বাইরে গিয়ে লোকজনকে অবহিত করি তবে তারা এটাকে আপনার কৃপণতা বলবে। তিনি বলেন, তুমি নিজের অবস্থার দিকে তাকাও। যে ব্যক্তি পুরাতন কাপড় পরিধান করে না তার জন্য নতুন কাপড় নয় (তাবাকাত ইবনে সাদ)।

【105】

অনুচ্ছেদঃ নম্রতা অবলম্বন করলে বান্দাকে যা দেয়া হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্রতার উসীলায় (বান্দাকে) এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার বেলায় দান করেন না (মুসলিম, আবু দাউদ)।

【106】

অনুচ্ছেদঃ সান্ত্বনা প্রদান।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সহজ করো, কঠিন করো নাসাঈ, সান্ত্বনা দাও, ঘৃণা বা বিরক্তি উৎপাদন করো না -(বুখারী, মুসলিম)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বনী ইসরাঈলে জনৈক মেহমান আসলো। তাদের ঘরের দরজায় ছিল তাদের একটি মাদী কুকুর। লোকজন বললো, হে কুকুরী! আমাদের মেহমানের আগমনে ঘেউ ঘেউ করো না। (কুকুরী তো নীরব থাকলো কিন্তু) তার পেটের দানাগুলো ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। তারা (বিষয়টি) তাদের নবীর কাছে উল্লেখ করলো। তিনি বলেনঃ এর অনুরূপ তোমাদের পরবর্তী উম্মাতের মধ্যে ঘটবে। তাদের নির্বোধেরা তাদের আলেমদের পরাভূত করবে (আবু দাউদ)।

【107】

অনুচ্ছেদঃ কঠোরতা প্রদর্শন।

আয়েশা (রাঃ) আমি একটি উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। তা ছিল বেশ কষ্টদায়ক। আমি তাকে প্রহার করলে নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি অবশ্যই নম্রতা অবলম্বন করবে। কোন বস্তুর মধ্যে তা থাকলে তা সেই বস্তুকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর কোন বস্তু থেকে তা অপসারিত করা হলে তা দোষদুষ্ট হয়ে যায়। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)

【108】

পরিচ্ছেদঃ দুনিয়া

আবু নাদরা (র) আমাদের মধ্যকার জাবির বা জুয়াইবির নামক এক ব্যক্তি বলেন, উমার (রাঃ)-এর খেলাফতকালে তার কাছে আমার একটি বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলো। আমি রাতে মদীনায় পৌছলাম। ভোর হলে আমি উমার (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমাকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বাকপটুতা উভয়ই দান করা হয়েছে। আমি পার্থিব জীবন সম্পর্কে কথা তুললাম এবং একে একেবারেই তুচ্ছ প্রতিপন্ন করলাম। তার পাশে উপস্থিত ছিলেন সাদা পোশাক পরিহিত শুভ্রকেশী এক ব্যক্তি। আমি কথা শেষ করলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার সব কথাই ঠিক। কিন্তু দুনিয়াই তোমার বর্তমান ঠিকানা। তুমি কি জানো, দুনিয়া কি? দুনিয়া হলো আমাদের লক্ষ্যে পৌছার ক্ষেত্র বা আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহের স্থান। এখানে আমরা যে আমল করবো তার প্রতিদান আমরা আখেরাতে লাভ করবো। আগন্তুক বলেন, দুনিয়া প্রসঙ্গে এমন এক ব্যক্তি কথা বললেন, যিনি এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার পাশে উপবিষ্ট ইনি কে? তিনি বলেন, ইনি হলেন মুসলমানদের নেতা উবাই ইবনে কাব (রাঃ)। বারাআ ইবনে আযেব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ দাম্ভিকতা হলো সর্বনাশের মূল।(আবু দাউদ)

【109】

অনুচ্ছেদঃ উৎপাদনমুখী খাতে সম্পদ বিনিয়োগ।

হানাশ ইবনুল হারিস (র) তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কারো ঘোটকীর বাচ্চা হলে সে তা যবেহ করে ফেলতো আর বলতো, তা বাহনের উপযুক্ত হওয়া পর্যন্ত কি আমি বেঁচে থাকবো। অতএব আমাদের নিকট উমার (রাঃ)-র একখানা চিঠি আসলোঃ আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছেন তার রক্ষণাবেক্ষণ করো। কেননা তোমাদের ঐ আচরণ অত্যন্ত স্বার্থপরতা প্রসূত। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপন করে (আহমাদ হা/১২৯৩৩ ও ১৩০১২)। দাউদ ইবনে আবু দাউদ (র) আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি যদি শুনতে পাও যে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে, আর তুমি খেজুরের চারা রোপণে লিপ্ত আছো, তবে তার রোপনকাজ সারতে তাড়াহুড়া করো না। কেননা তারপরও লোকবসতি অব্যাহত থাকবে।

【110】

অনুচ্ছেদঃ নির্যাতীতের দোয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেন তিনটি দেয়া অবশ্যই কবুল হয়। (১) উৎপীড়িতের দোয়া, (২) মুসাফিরের দোয়া এবং (৩) সন্তানের জন্য পিতার দোয়া (ইবনে মাজাহ)।

【111】

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর কাছে বান্দার রিযিক প্রার্থনা। কেননা মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “আপনি আমাদের রিফিক দান করুন এবং আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা” (৫ : ১১৪)।

জাবের (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় ইয়ামনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুনেছেনঃ হে আল্লাহ! এদের অন্তরকে ফিরিয়ে দিন। অতঃপর তিনি ইরাকের দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরূপ বলেন। এভাবে তিনি প্রত্যেক দিকে ফিরে অনুরূপ বলেন। তিনি আরো বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি পৃথিবীর উৎপন্নজাত দ্রব্যাদি থেকে আমাদেরকে রিফিক দান করুন এবং আমাদের মুদ্দ ও সা-এ বরকত দান করুন। (আহমাদ, তিরমিযী)

【112】

অনুচ্ছেদঃ যুলুম হলো অন্ধকার।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকাররূপে আসবে। তোমরা কৃপণতা থেকে বিরত থাকো। কেননা এই কৃপণতা তোমাদের পূর্ববতীদের ধ্বংস করেছে এবং তাদেরকে পরস্পরের রক্তপাত করতে এবং তাদের প্রতি হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে (মুসলিম, আবু দাউদ) । জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের শেষ যমানায় পাপকর্মের (শাস্তিস্বরূপ) চেহারা বিকৃতিরমিযী,আসমানী বিপদ ও ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটবে। এই বিপদ প্রথমে যালেমের উপর পতিত হবে। ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপে আবির্ভূত হবে। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ) আবু সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তিগণের দোযখ থেকে মুক্তি লাভের পর বেহেশত ও দোযখের মধ্যখানে স্থাপিত এক পুলের উপর তাদের গতিরোধ করা হবে। তারা দুনিয়াতে পরস্পরের প্রতি যে অবিচার করেছিল তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। অতঃপর শেষে যখন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে তখন তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! প্রত্যেকেই জান্নাতে তার স্থান তার দুনিয়ার অবস্থান স্থলের চেয়েও উত্তমরূপে চিনতে পারবে। -(বুখারী, তিরমিযী, আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা অবশ্যই যুলুম করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। তোমরা অবশ্যই অশ্লীলতা বর্জন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলভাষী ও অশ্লীলতার প্রসারকারীকে পছন্দ করেন না। তোমরা অবশ্যই কৃপণতা পরিহার করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে এবং হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে। জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকো। কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকাররূপে আসবে। তোমারা কৃপণতা পরিহার করো। কেননা এই কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং তাদেরকে পরস্পরের রক্তপাত করতে এবং তাদের প্রতি হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে। (মুসলিম,আহমাদ) আবুদ দোহা (র) মাসরূক ও শুতাইর ইবনে শাকল (র) মসজিদে একত্র হলেন। মসজিদে উপস্থিত লোকজন তাদেরকে ঘিরে ধরলো। মাসরূক (র) বলেন, লোকজন আমাদের নিকট উপদেশ শোনার জন্যই আমাদের ঘিরে ধরেছে। হয় আপনি আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সূত্রে (হাদীস) বর্ণনা করুন এবং আমি তা সমর্থন করবো অথবা আমি আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করি এবং আপনি তা সমর্থন করুন। অপরজন বলেন, হে আবু আয়েশা! আপনি বর্ণনা করুন। তখন তিনি বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ চক্ষুদ্বয় যেন করে, হস্তদ্বয় যেনা করে, পদদ্বয় যেনা করে এবং লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে? অপরজন বলেন, হাঁ, আমিও তা শুনেছি। পুনরায় তিনি বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, নিম্নোক্ত আয়াতের মতো কুরআন মাজীদের আর কোন আয়াতে একই সাথে হালাল-হারাম ও আদেশ-নিষেধ সন্নিবেশিত হয়নিঃ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়-ইনসাফ, দয়া-অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়ের প্রাপ্য প্রদানের নির্দেশ দিচ্ছেন” (১৬ : ৯০)? তিনি বলেনঃ হাঁ, আমি তাকে একথা বলতে শুনেছি। তিনি পুনরায় বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের চেয়ে দ্রুত অভাব মোচনকারী ও বিপদমুক্তির অন্য কোন আয়াত নেইঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য মুক্তির একটি ব্যবস্থা করে দেন? (৬৫ : ২) তিনি বললেন, হাঁ। মাসরূক (র) বলেন, আপনি কি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের চেয়ে অধিক আবেদনময়ী বা সুবিধা দানকারী অন্য কোন আয়াত নাইঃ “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না? (৩৯ : ৫৩) শুতাইর (রাঃ) বলেন, হাঁ, আমি তার নিকট একথা শুনেছি। আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ বরকতময় মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার নিজের উপর যুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের প্রতি তোমাদের যুলুম করাও হারাম করেছি। অতএব তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা তো রাত-দিন গুনাহ করো, আর আমি গুনাহ মাফ করি । তাতে আমার কোন পরওয়া নাই। অতএব তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত, অবশ্য আমি যাকে আহার করাই সে ব্যতীত। অতএব তোমরা আমার কাছে আহার চাও, আমি তোমাদের আহার্য দান করবো। তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন, তবে আমি যাকে বস্ত্র দান করি সে ব্যতীত। অতএব তোমরা আমার নিকট বস্ত্র চাও, আমি তোমাদের বস্ত্র দান করবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্যকার প্রথম ব্যক্তি থেকে শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলে অর্থাৎ তোমাদের জিন ও মানব সকলে যদি তোমাদের মধ্যকার সর্বাধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তির অন্তরসম হয়ে যায়, তবে তাতে আমার রাজত্বের বিন্দুমাত্র শ্ৰীবৃদ্ধি ঘটবে না। আর যদি সকলে সর্বাধিক পাপিষ্ঠ ব্যক্তিসম হয়ে যায়, তবে তাতেও আমার রাজত্ব বিন্দুমাত্র শ্রীহীন হবে না। তোমাদের সকলে যদি এক বিশাল প্রান্তরে সমবেত হয়ে আমার নিকট প্রার্থনা করে এবং আমি তাদের প্রত্যেককে তার চাহিদামত দান করি, তবে তাতে আমার রাজত্বের এতটুকুই ঘাটতি হবে, যতটুকু হয় কেউ সমুদ্রে একটি সুই একবার মাত্র ডুবালে। হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলসমূহই তোমাদের জন্য সঞ্চয় করে রাখি। সুতরাং তোমাদের কেউ কল্যাণ লাভ করলে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর কেউ তার বিপরীত (অমঙ্গল) কিছু লাভ করলে সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে। আবু ইদরীস আল-খাওলানী (র) এই হাদীস যখনই বর্ণনা করতেন তখনই নিজের হাটুদ্বয় একত্র করে পরম বিনয় প্রকাশ করতেন (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, হাকিম)

【113】

অনুচ্ছেদঃ অপচয়কারীগণ।

আবু উবায়দায়ন (র) আমি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে মুবাযযিরীন (অপব্যয়কারী) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, যারা অন্যায় পথে সম্পদ খরচ করে তারাই অপব্যয়কারী (বাযযার)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) যারা অন্যায় পন্থায় সম্পদ খরচ করে তারাই অপচয়কারী।