8. বিবিধ বিষয়

【1】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ ঘরের কাজকর্ম করে।

আসওয়াদ (র) আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার পরিবারবর্গের সাথে অবস্থানকালে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, পরিবারের কাজকর্ম করতেন এবং নামাযের ওয়াক্ত হলে বের হয়ে যেতেন। (বুখারী, তিরমিযী) হিশাম ইবনে উরওয়া (র) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাঃ) তার ঘরে অবস্থানকালে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তিনি তার জুতা মেরামত করতেন এবং লোকজন নিজ ঘরে সাধারণত যা করে থাক, তিনিও তাই করতেন (আবু দাউদ)। হিশাম (র) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাঃ) তাঁর ঘরে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি নিজ ঘরে যা করে থাকে, তিনি জুতা মেরামত করতেন, কাপড়ে তালি দিতেন এবং সেলাই করতেন (আবু দাউদ)। আমর (র) আয়েশা (রাঃ)-কে বলা হলো, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার ঘরে কি কাজ করতেন? তিনি বলেন, তিনি তো লোকজনের মতো একজন মানুষই ছিলেন। তিনি তাঁর কাপড় পরিষ্কার করতেন এবং তাঁর বকরীর দুধ দোহন করতেন (শামাইলে তিরমিযী, বাযযার)।

【2】

অনুচ্ছেদঃ কেউ তার কোন ভাইকে মহব্বত করলে তাকে যেন তা অবগত করে।

মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার অপর (মুসলমান) ভাইকে মহব্বত করলে সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে মহব্বত করে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, হাকিম, ইবনে হিব্বান) মুজাহিদ (র) নবী (সাঃ)-এর কোন এক সাহাবী আমার সাথে সাক্ষাত করলেন। তিনি আমার পেছন দিক থেকে আমার কাঁধ ধরে বলেন, শোন! আমি তোমাকে ভালোবাসি। রাবী বলেন, আমি বললাম, যে সত্তার (সন্তুষ্টির) জন্য আপনি আমাকে ভালোবাসেন, তিনি যেন আপনাকে ভালোবাসেন। সাহাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যদি একথা না বলতেনঃ “কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে”, তবে আমি তোমাকে তা অবহিত করতাম না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, শোন! আমার কাছে একটি বালিকা আছে। তবে তার এক চোখ অন্ধ। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি পরস্পরকে মহব্বত করলে, তাদের মধ্যে যে অপরজনকে অধিক মহব্বত করে সে অধিক উত্তম। (হাকিম, ইবনে হিব্বান)

【3】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কাউকে মহব্বত করলে সে যেন তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত না হয় এবং তার নিকট কিছু না চায়।

মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) তুমি তোমার কোন (মুসলমান) ভাইকে মহব্বত করলে তার সাথে ঝগড়া করবে না, তার ক্ষতি সাধনের চিন্তাও করবে না এবং তার কাছে কিছু চাইবেও না। এমন যেন না হয় যে, তুমি শক্রর খপ্পরে পড়ে যাও এবং সে তোমাকে তার সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার মধ্যে নেই। এভাবে সে তোমার ও তার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে (জামে সগীর, হিলইয়া)। আবদুল্লাহ ইবন আমর (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি তাঁর অপর ভাইকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মহব্বত করে এবং বলে, আমি তোমাকে আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে মহব্বত করি, তারা উভয়ে জান্নাতে দাখিল হবে। যার মহব্বত অধিক প্রবল হবে সে তার ভাইকে মহব্বত করার কারণে অধিক মর্যাদাবান হবে।

【4】

অনুচ্ছেদঃ অন্তর হলো বুদ্ধির উৎসস্থল।

ইয়াদ ইবনে খলীফা (র) তিনি তাকে সিফফীন নামক স্থানে বলতে শুনেছেন, অন্তর হলো বুদ্ধির উৎসস্থল, করুণার স্থান হৃদপিণ্ড, মায়া-মমতার স্থান যকৃত এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থান ফুসফুস।

【5】

অনুচ্ছেদঃ অহংকার-অহমিকা।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন বনভূমি থেকে সীজান (এক প্রকার মাছ) রং-এর জুব্বা পরিহিত এক ব্যক্তি এসে নবী (সাঃ) -এর মাথার কাছে দাঁড়ালো এবং বললো, তোমাদের সাথী প্রত্যেক আরোহীকে অবদমিত করেছে বা আরোহীদেরকে অবদমিত করার সংকল্প করেছে এবং প্রত্যেক রাখালকে সমুন্নত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জুব্বার হাতা ধরে বলেনঃ আমি কি তোমাকে নির্বোধের পোশাক পরিহিত দেখছি না? অতঃপর তিনি বলেনঃ আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আবু দাউদ)-এর ইন্তিকালের সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর পুত্রকে বলেনঃ আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাকে দুটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি এবং দুটি বিষয় নিষেধ করছি। আমি তোমাকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর নির্দেশ দিচ্ছি। কেননাসাঈ, সাত আসমান ও সাত জমিনকে যদি এক পাল্লায় তোলা হয় এবং অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” তোলা হয়, তবে সেই তাওহীদের পাল্লাই ভারী হবে। সাত আসমান ও সাত জমিন যদি একটি জটিল গ্রন্থির রূপ ধারণ করে, তবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এবং “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী” তা চুরমার করে দিবে। কেননা তা প্রত্যেক বস্তুর নামায এবং সকলেই এর বদৌলতে রিযিক লাভ করে থাকে। আর আমি তোমাকে বারণ করছি শিরক এবং অহংকারে লিপ্ত হতে। আমি বললাম অথবা বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! শিরক তো আমরা বুঝলাম, তবে অহংকার কি? আমাদের মধ্যকার কারো যদি কারুকার্য খচিত চাদর থাকে, আর তা পরিধান করে? তিনি বলেনঃ না। সে আবার বললো, যদি আমাদের কারো সুন্দর ফিতাযুক্ত সুন্দর একজোড়া জুতা থাকে? তিনি বলেনঃ না। সে পুনরায় বললো, যদি আমাদের কারো আরোহণের একটি জন্তুযান থাকে? তিনি বলেনঃ না। সে বললো, যদি আমাদের কারো বন্ধু-বান্ধব থাকে এবং তারা তার সাথে ওঠা-বসাও করে (তবে তা কি অহংকার হবে)? তিনি বলেনঃ না। সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে অহংকার কি? তিনি বলেনঃ সত্য থেকে বিমুখ থাকা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা। (আহমাদ, নাসাঈ, বাযযার, হাকিম, হিব্বান, তাহাবী) ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজেকে বড়ো মনে করে অথবা তার চালচলনে অহংকার প্রকাশ করে, সে এমন অবস্থায় মহামহিম আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে যে, তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন (আবু দাউদ, হাকিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার খাদেমকে সাথে নিয়ে আহার করে, গাধায় চড়ে বাজারে যায়, ছাগল পোষে এবং তার দুধ দোহন করে, সে অহংকারী নয়। কাপড় বিক্রেতা সালেহ (র) তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি এক দিরহামের খেজুর কিনে তা তার চাদরে করে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম অথবা এক ব্যক্তি তাকে বললো, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার বোঝাটি আমিই বহন করি। তিনি বলেন, নাসাঈ, পরিবারের পিতাই বোঝা বহনের অধিক উপযুক্ত (তারীখুল কামিল)। আবু সাঈদ (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, ইজ্জত আমার পরিধেয় এবং কিবরিয়া (অহংকার) আমার চাদর। যে কেউ আমার সাথে এই দু’টি জিনিস নিয়ে বিবাদ করবে, আমি তাকে শাস্তি দিবো। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, হাকিম) হায়সাম ইবনে মালেক আত-তাই (র) আমি নোমান ইবনে বশীর (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, শয়তানের অনেক রকম জাল ও ফাঁদ আছে। শয়তানের জাল ও ফাঁদ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে অহংকার করা, আল্লাহর দান সম্পর্কে গর্ব করা, আল্লাহর বান্দাগণের উপর অহংকার করা এবং আল্লাহর সত্তা ব্যতীত নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (বায়হাকীর শুআবুল ঈমান, জামে সগীর, ইবনে আসাকির)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ বেহেশত ও দোযখ পরস্পর বিতর্ক ও বাদানুবাদে লিপ্ত হলো। দোযখ বললো, পরাক্রমশালী, স্বৈরাচারী ও অহংকারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বেহেশত বললো, দুর্বল ও দরিদ্ররা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বরকতময় মহান আল্লাহ বেহেশতকে বলেন, তুমি হলে আমার রাহমাত, আমি যাকে ইচ্ছা তোমার মাধ্যমে অনুগ্রহ করবো। অতঃপর তিনি দোযখকে বলেন, তুমি হলে আমার শাস্তি। আমি যাকে ইচ্ছা তোর মাধ্যমে শাস্তি দিবো। তোদের দু’জনকেই পূর্ণ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিব্বান) আবদুর রহমান (র) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাহাবীগণ অশিষ্ট বা মনমরা ছিলেন না। তারা তাদের মজলিসসমূহে উত্তম কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহিলী যুগের বিষয়াদি আলোচনা করতেন। কিন্তু তাদের কাউকে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করাবার প্রয়াস চালানো হলে তার দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়ে যেতো। যেন তিনি এক উন্মাদ। (ইবনে আবু শায় বাযযার) আবু হুরায়রা (রাঃ) এক অতিশয় সুন্দর ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, সৌন্দর্য আমার অতি প্রিয়, আর আমাকে সৌন্দর্য দান করা হয়েছে যা আপনি দেখছেন। এমনকি আমি এতটুকুও পছন্দ করি না যে, জুতার ফিতা বা তার লাল অগ্রভাগের সৌন্দর্যের দিক দিয়েও কেউ আমাকে ডিংগিয়ে যাক। এটা কি অহংকার? তিনি বলেনঃ নাসাঈ, বরং অহংকার হলো সত্য থেকে বিমুখ হওয়া এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। (দারিমী, তিরমিযী) আমর ইবনে শুআইব (র) মহানবী (সাঃ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে পিপিলিকা সদৃশ (ক্ষুদ্রদেহ) মানুষরূপে হাশরের মাঠে সমবেত করা হবে। তারা সব দিক থেকে লাঞ্ছনা পরিবেষ্টিত থাকবে। তাদেরকে দোযখের বূলাস নামক কারাগারের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তারা দোযখের আগুনে জ্বলতে থাকবে এবং দোযখীদের (দেহ নিৰ্গত) ঘাম পান করবে। (তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ)

【6】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

আয়েশা (র) নবী (সাঃ) তাকে বলেনঃ তুমি তোমার প্রতিশোধ নাও। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ ফাতেমা (রাঃ)-কে নবী (সাঃ)-এর নিকট পাঠান। তিনি (গিয়ে) অনুমতি প্রার্থনা করেন। নবী (সাঃ) তখন আয়েশা (রাঃ)-এর বিছানায় ছিলেন। তিনি তাকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। তিনি প্রবেশ করে বলেন, আপনার স্ত্রীগণ আবু কুহাফার কন্যার ব্যাপারে তাদের প্রতি সুবিচার প্রার্থনা করার জন্য আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তিনি বলেনঃ হে আমার কন্যা! আমি যা ভালোবাসি তুমি কি তা ভালোবাসবে? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ তবে তুমি তাকে (আয়েশা) ভালোবাসবে। অতঃপর ফাতেমা (রাঃ) উঠে চলে এলেন এবং বিষয়টি তাদের বললেন। তারা বলেন, তুমি আমাদের কোন উপকার করতে পারলে না। তুমি আবার তাঁর কাছে যাও। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এই প্রসঙ্গে আমি আর কখনো তাঁর সাথে কথা বলবো না। অতঃপর তারা নবী-পত্নী যয়নব (রাঃ)-কে পাঠান। তিনি গিয়ে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে অনুমতি দিলেন। তিনি তখন সেই কথা তাঁকে বলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, যয়নব আমাকে গালি দিয়ে কথা বলতে লাগলো। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম যে, নবী (সাঃ) আমাকে (প্রতিউত্তরের) অনুমতি দেন কিনা। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, আমি প্রত্যুত্তর করলে তিনি অপছন্দ করবেন নাসাঈ, তখন আমিও যয়নবের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম এবং তাকে পরাস্ত করে ছাড়লাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ সাবধান! সে তো আবু বাকরের কন্যা। (মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

【7】

অনুচ্ছেদঃ দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুৎপপাসার সময় সমবেদনা জ্ঞাপন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) শেষ যমানায় দুর্ভিক্ষ হবে। যে ব্যক্তি সেই যুগ পাবে, সে যেন ক্ষুধার্ত প্রাণীদের প্রতি অবিচার না করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) আনসার সাহাবীগণ নবী (সাঃ)-কে বলেন, আমাদের এবং আমাদের (মুহাজির) ভাইদের মধ্যে খেজুর বাগান ভাগ করে দিন। তিনি বলেনঃ না। তারা বলেন, আপনারা আমাদের বাগানে মেহনত করুন, আপনাদের ভাগ দেবো। তারা (মুহাজিররা) বলেন, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দুর্ভিক্ষের বছর বলেন, আর সেই বছরটি ছিল ভীষণ দুর্বিপাক ও কষ্টের। উমার (রাঃ) পল্লী অঞ্চলের বেদুইনদের উট, খাদ্যশস্য ও তৈল প্রভৃতি সাহায্য সামগ্ৰী পৌঁছাবার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি গ্রামাঞ্চলের এক খণ্ড জমিও অনাবাদী পড়ে থাকতে দেননি এবং তার চেষ্টা ফলপ্রসূ হলো। উমার (রাঃ) দোয়া করতে দাঁড়িয়ে বলেন, “হে আল্লাহ! আপনি তাদের রিযিক পর্বত চূড়ায় পৌছে দিন”। আল্লাহ তার এবং মুসলমানদের দোয়া কবুল করলেন। তখন বৃষ্টি বর্ষিত হলে তিনি বলেন, আলহামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহ এই বিপর্যয় দূর না করতেন, তবে আমি কোন সচ্ছল মুসলমান পরিবারকেই তাদের সাথে সম-সংখ্যক অভাবী লোককে যোগ না করে ছাড়তাম না। যতটুকু খাদ্যে একজন জীবন ধারণ করতে পারে, তার সাহায্যে দু’জন লোক ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে পারে। সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানী করে, সে যেন তৃতীয় দিনের পর এমন অবস্থায় ভোরে উপনীত না হয় যে, তার ঘরে কোরবানীর গোশতের কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে। পরবর্তী বছর আসলে লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা গত বছর যেরূপ করেছিলাম, এ বছরও কি তদ্রুপ করবো? তিনি বলেনঃ নিজেরা খাও, অন্যকে খেতে দাও এবং জমা রাখো। (যেহেতু) ঐ বছর মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল, তাই আমি চেয়েছিলাম যে, এই অবস্থায় তোমরা তাদের সাহায্য করো। (বুখারী, মুসলিম)

【8】

অনুচ্ছেদঃ অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন।

হিশাম ইবনে উরওয়া (র) তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তার মনে যেন কি চিন্তার উদ্রেক হলো। অতঃপর তিনি সচকিত হয়ে বলেন, অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন দ্বারাই সহিষ্ণুতা অর্জিত হয়। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (ইবনে আবু শায়বাহ, ইবনে হিব্বান) আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সহনশীল ও ধৈর্যশীল হয় এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান হওয়া যায়। না (বুখারী, তিরমিযী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

【9】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে তার ভাইকে আহার করায়।

আলী (রাঃ) আমার কতক ভাইকে একত্র করে তাদেরকে আমার এক বা দুই সা পরিমাণ আহার করানো—তোমাদের বাজারে গিয়ে আমার একটি গোলাম (খরিদ করে তাবারানী) দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়।

【10】

অনুচ্ছেদঃ জাহিলী যুগের পারস্পরিক চুক্তি।

আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) আমি আমার চাচাদের সাথে মুতাইয়্যাবীনের চুক্তিতে (হিলফুল ফুযূল) শরীক ছিলাম। বহুমূল্য লাল উটের বিনিময়েও তা লংঘন করা আমার পছন্দনীয় নয় (আহমাদ হা/১৬৫৫ ও ১৬৭৬)।

【11】

অনুচ্ছেদঃ ভ্ৰাতৃ সম্পর্ক স্থাপন।

আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ)-র মধ্যে ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে দেন (আহমাদ)।

【12】

অনুচ্ছেদঃ ইসলামী যুগে সাবেক আমলের চুক্তি।

আনাস ইবনে মালেক (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার মদীনার বাড়িতে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে বন্ধুত্ব চুক্তি স্থাপন করেন (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। আমর ইবনে শুয়াইব (র) তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর নবী (সাঃ) কাবা ঘরের সিঁড়িতে বসলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেনঃ জাহিলী যুগে যার চুক্তি ছিল, ইসলাম তা আরো মজবুত করেছে এবং মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নাই। (তিরমিযী, আহমাদ, ইবনে খুজাইমাহ)

【13】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলো।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সংগে থাকা অবস্থায় আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগলো। নবী (সাঃ) তাঁর দেহের উপরিভাগ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলেন। ফলে তাঁর শরীর বৃষ্টিতে ভিজে গেলো। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বলেনঃ যেহেতু মহান প্রভুর কাছ থেকে সদ্য আগত (তাই আমি তা শরীরে লাগিয়ে নিলাম বরকতের জন্য)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ ছাগল-ভেড়ার মধ্যে বরকত নিহিত।

হুমাইদ ইবনে মালেক ইবনে খায়ছাম (র) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে তার আকীক নামক স্থানের ভূমিতে বসা ছিলাম। তখন জন্তুযানে আরোহী একদল মদীনাবাসী তার নিকট উপস্থিত হন। তারা অবতরণ করলেন। হুমাইদ (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) আমাকে বললেন, আমার মায়ের নিকট গিয়ে বলো, আপনার পুত্র আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন, আমাদের কিছু আহার করান। রাবী বলেন, তিনি তিনটি যবের পিঠা, কিছু যায়তুন তৈল ও কিছু লবণ একটি পেয়ালায় করে দিলেন। আমি তা আমার মাথায় তুলে নিয়ে তাদের নিকট ফিরে এলাম। আমি তা তাদের সামনে রেখে দিলে আবু হুরায়রা (রাঃ) “আল্লাহু আকবার” বলেন এবং আরো বলেন, সেই সত্তার প্রশংসা যিনি আমাদের রুটি খাওয়ালেন। নতুবা এমন একদিন ছিল যখন দু’টি কালো বস্তু অর্থাৎ খেজুর ও পানি ছাড়া আমাদের আর কিছু জুটতো না। এই খাদ্যে দলের লোকজনের কিছু হলো না। তারা চলে গেলে আবু হুরায়রা (রাঃ) আমাকে বলেন, হে ভাইপো! তোমার ছাগলগুলোর খুব যত্ন করো, এগুলোর গায়ের ধুলাবালি ঝেড়ে দাও, এগুলোর খোঁয়াড় পরিষ্কার রাখো এবং এর এক কোণে নামায পড়ো। কেননা এগুলো বেহেশতের জীবজন্তু। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ। অচিরেই লোকজনের উপর এমন এক সময় আসবে যখন এক পাল ছাগল তার মালিকের নিকট মারোয়ানের রাজপ্রাসাদের চেয়েও প্রিয়তর হবে। আলী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ঘরে একটি বকরী একটি বরকতস্বরূপ, দুইটি বকরী দুইটি বরকতস্বরূপ এবং তিনটি বকরী অনেক বরকত।

【15】

অনুচ্ছেদঃ উট তার মালিকের জন্য মর্যাদার উৎস।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কুফরীর মূল পূর্ব দিকে (প্রাচ্যে), দম্ভ ও অহংকার উট ও ঘোড়ার পালের মালিকদের মধ্যে এবং বেদুইনদের মধ্যে যারা তাদের উটের পাল নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং দ্বীনের প্রতি মনোযোগী হয় না। আর প্রশান্তি ছাগলের মালিকের মধ্যে। (বুখারী, মুসলিম) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কুকুর ও ছাগলের ব্যাপারে আমি বিক্ষিত হই। ছাগল বছরে এতো এতো সংখ্যক যবেহ করা হয়, এতো এতো সংখ্যক কোরবানী করা হয়। আর কুকুর, এক একটি মাদী কুকুর এতো এতো সংখ্যক শাবক প্রসব করে। অথচ ছাগলের সংখ্যা কুকুরের চেয়ে অধিক। আবু যাবয়ান (র) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে বলেন, হে আবু যাবয়ান। তোমার রাষ্ট্ৰীয় ভাতার পরিমাণ কতো? আমি বললাম, আড়াই হাজার। তিনি তাকে বলেন, হে আবু যাবয়ান! কুরাইশ বংশের গোলামেরা তোমাদের শাসক হওয়ার পূর্বেই তুমি চাষাবাদ ও পশুপালনে মনোযোগী হও। তাদের সামনে ভাতা কোন উল্লেখযোগ্য সম্পদ নয়। আবদা ইবনে হুযন (র) উট পালের মালিক ও বকরীর পালের মালিকগণ পরস্পর গর্ব প্রকাশ করছিল। নবী (সাঃ) বলেনঃ মূসা (আবু দাউদ) মেষপাল চরানো অবস্থায় নবুয়াত লাভ করেন। দাউদ (আবু দাউদ) মেষপাল চরানো অবস্থায় নবুয়াত লাভ করেন। আমিও আজয়াদ নামক স্থানে আমার পরিবারের মেষপাল চরানো অবস্থায় নবুয়াত লাভ করি। (নাসাঈ)

【16】

অনুচ্ছেদঃ যাযাবর জীবন।

আবু হুরায়রা (র) কবীর গুনাহ সাতটি। তার প্রথমটি আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) নরহত্যা, (৩) সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি যেনার মিথ্যা অপবাদ রটানো এবং (৪) হিজরতের পর পুনরায় যাযাবর জীবন বরণ করা।

【17】

অনুচ্ছেদঃ বিরান জনপদে বসবাসকারী।

সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেনঃ তুমি বিরানভূমিতে বসতি স্থাপন করো না। কেননা বিরানভূমির অধিবাসী যেন কবরের অধিবাসী। আহমাদ (র) বলেন, কাফুর শব্দের অর্থ গ্রামাঞ্চল। সাওবান (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে সাওবান! বিরানভূমিতে বসবাস করো না। কেননা বিরানভূমির বাসিন্দা কবরের বাসিন্দা তুল্য।

【18】

অনুচ্ছেদঃ মরুময় ভূমিতে বা পানির উৎসে বসবাস।

মিকদাম ইবনে শুরায়হ (র) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে মরু এলাকায় বসবাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আমি বললাম, নবী (সাঃ) কি মরুময় এলাকায় যেতেন! তিনি বলেনঃ তিনি (পাহাড়ের উপর থেকে নিচে প্রবাহিত) ঐসব পানির উৎসে যেতেন (আবু দাউদ, মুসলিম, আহমাদ)। আমর ইবনে ওয়াহব (র) আমি মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উসাইদ (র)-কে দেখেছি যে, তিনি ইহরাম অবস্থায় জন্তুযানে আরোহণ করলে, তার দুই কাঁধের উপর থেকে কাপড় তার দুই উরুর উপর রাখতেন। আমি বললাম, এটা কি? তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এরূপ করতে দেখেছি।

【19】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি গোপনীয়তা রক্ষা পছন্দ করে এবং যে কোন লোকের সাথে তাদের বৈশিষ্ট্যাবলী অবহিত হওয়ার জন্য মেলামেশা করে।

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারী (র) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও এক আনসার ব্যক্তি একত্রে বসা ছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারী (র) এসে তাদের নিকট বসলেন। উমার (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের কথা অন্যদের কাছে পৌছায় আমরা তাকে পছন্দ করি না। আবদুর রহমান (র) তাকে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন। আমি তাদের সাথে ওঠাবসা করি না। উমার (রাঃ) বলেন, হাঁ, তুমি এর সাথে ওর সাথে ওঠাবসা করো, কিন্তু আমাদের (গোপন) কথা কোথাও ফাঁস করো না। অতঃপর তিনি আনসারীকে বলেন, আচ্ছা! আমার পরে কে খলীফা হবে বলে লোকজন আলোচনা করে? আনসারী মুহাজিরদের বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন, কিন্তু তাতে আলী (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেননি? উমার (রাঃ) বলেন, তারা হাসানের পিতার (আলীর) কথা বলে না কেন? আল্লাহর শপথ তিনি তাদের শাসনভার প্রাপ্ত হলে তিনিই তাদের সত্য পথে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার ব্যাপারে সর্বাধিক যোগ্য।

【20】

অনুচ্ছেদঃ কাজেকর্মে তাড়াহুড়া বৰ্জনীয়।

হাসান বসরী (র) এক ব্যক্তি মৃত্যুকালে একটি পুত্র সস্তান ও একটি মুক্তদাস রেখে যায়। সে তার পুত্রের বিষয়ে তার মুক্তদাসকে ওসিয়াত করে যায়। সে তার ব্যাপারে কোন অবহেলা করেনি। ছেলেটি বালেগ হলে সে তাকে বিবাহও করায়। সে মুক্তদাসকে বললো, আমার সফরের আয়োজন করে দাও। আমি জ্ঞান অন্বেষণ করবো। সে তার সফরের আয়োজন করে দিলো। অতএব সে একজন আলেমের নিকট এসে তার কাছে জ্ঞানদানের আবেদন করলো। আলেম ব্যক্তি তাকে বলেন, তোমার ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তখন আমাকে বলবে, আমি তোমাকে জ্ঞানের কথা শিখাবো। সে আলেমকে বললো, আমার প্রত্যাবর্তনের সময় হয়েছে। আপনি আমাকে জ্ঞানের কথা শিখিয়ে দিন। আলেম বলেন, “তুমি আল্লাহকে ভয় করো, ধৈর্য ধরো এবং (কোন ব্যাপারে) তাড়াহুড়া করো না”। হাসান (র) বলেন, এতে সার্বিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে যখন ফিরে এলো তখন তা তার স্মরণে ছিল। কেননা কথা ছিল মাত্র তিনটি। সে তার পরিবারে পৌছে সওয়ারী থেকে অবতরণ করলো। সে ঘরে ঢুকে দেখলো যে, একটি পুরুষলোক শিথিল অবস্থায় একটি নারীর অদূরে ঘুমিয়ে আছে। আর সেই নারী হচ্ছে তারই স্ত্রী। সে মনে মনে বললো, আল্লাহর শপথ! এই দৃশ্য দেখার পর আর কিসের অপেক্ষা করবো। সে তার সওয়ারীর কাছে ফিরে এলো। তরবারি নিতে গিয়ে তার স্মরণ হলো, “আল্লাহকে ভয় করো, ধৈর্য ধরে এবং তাড়াহুড়া করো না”। সে আবার ফিরে গিয়ে তার শিয়রের নিকট দাঁড়িয়ে বললো, এমন দৃশ্য দেখার পর আর মোটেও অপেক্ষা করবো না। সে তার সওয়ারীর নিকট ফিরে এলো এবং তরবারি তুলতে যেতেই উপদেশের কথা স্মরণ হলো। পুনরায় সে তার নিকট ফিরে গেলো। সে তার শিয়রের নিকট দাড়াতেই নিদ্রিত ব্যক্তি জেগে উঠলো এবং তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলো, তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। সে বললো, আমার নিকট থেকে যাওয়ার পর আপনি কেমন ছিলেন? সে বললো, আল্লাহর শপথ! তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর আমি পর্যাপ্ত কল্যাণ লাভ করেছি, আল্লাহর শপথ। ভালোই। আজ রাতে আমি মোট তিনবার তরবারি ও তোমার মাথার মাঝে যাতায়াত করেছি এবং যে জ্ঞান আমি অর্জন করেছি, তোমাকে হত্যা করার ব্যাপারে তা আমার প্রতিবন্ধক হয়েছে।

【21】

অনুচ্ছেদঃ কাজেকর্মে ধীরস্থিরতা।

আবদুল কায়েস গোত্রের আশাজ্জ (রাঃ) নবী (সাঃ) বললেনঃ তোমার মধ্যে এমন দুইটি অভ্যাস আছে যা আল্লাহর পছন্দনীয়। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি কি? তিনি বলেনঃ সহিষ্ণুতা ও লজ্জাশীলতা। আমি বললাম, এই দুইটি অভ্যাস পূর্ব থেকে আমার মধ্যে ছিল না নতুনভাবে দেখছেন? তিনি বলেনঃ পূর্ব থেকে। আমি বললাম, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার মধ্যে জন্মগতভাবে এমন দু’টি অভ্যাস সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহ পছন্দ করেন। (নাসাঈ, আবু ইয়ালা) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) আবদুল কায়েস গোত্রের (প্রতিনিধি দলের নেতাবারানী) আশাজ (রাঃ)-কে বলেনঃ তোমার মধ্যে এমন দুইটি অভ্যাস আছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। তা হলো সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা। (মুসলিম) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) আবদুল কায়েস গোত্রের (প্রতিনিধি দলের নেতাবারানী) আশাজ্জ (রাঃ)-কে বললেনঃ তোমার মধ্যে এমন দুটি বৈশিষ্ট্য আছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন, সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা। (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়া নাসাঈ) মায়ীদা আল-আবদী (র) আশাজ্জ (রাঃ) পদব্রজে এসে নবী (সাঃ)-এর হাত ধরে তাতে চুমা দিলেন। নবী (সাঃ) তাকে বলেনঃ জেনে রাখো, তোমার মধ্যে এমন দু’টি স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খুবই মনঃপুত। আশাজ্জ (রাঃ) বলেন, ঐগুলি কি আমার প্রকৃতিগত না আমার চরিত্রগত? তিনি বলেনঃ নাসাঈ, ঐগুলি তোমাকে প্রকৃতিগতভাবেই দান করা হয়েছে। আশাজ্জ (রাঃ) বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে প্রকৃতিগতভাবেই এমন স্বভাব দান করেছেন, যা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের মনঃপুত। (বুখারীর তারীখুল কাবীর)

【22】

অনুচ্ছেদঃ বিদ্রোহ।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) যদি এক পাহাড় অন্য পাহাড়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতো, তবে বিদ্রোহী পাহাড় একাকার হয়ে যেতো (তাফসীরে রূহুল মাআনী, সূরা ইউনুস, জামে সগীর, শুয়াবুল ঈমান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ দোযখ ও বেহেশত বিতর্কে লিপ্ত হলো। দোযখ বললো, অহংকারী ও পরাক্রমশালী স্বৈরাচারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বেহেশত বললো, দুর্বল ও নিঃস্বরাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তায়ালা দোযখকে বলেন, তুই হলি আমার আযাব। যার থেকে ইচ্ছা আমি তোর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিবো। তিনি বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার রহমাত, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার মাধ্যমে অনুগ্রহ করবো। ফাদালা ইবনে উবাইদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তিন ব্যক্তিকে কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না (সরাসরি দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে)। (১) যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো এবং তার ইমামের (নেতার) অবাধ্য হলো এবং অবাধ্য অবস্থায় মারা গেলো। তাকে কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। (২) যে ক্রীতদাসী বা ক্রীতদাস তার মনিবের নিকট থেকে পালিয়ে গেলো। (৩) যে নারীর স্বামী বহির্দেশে গিয়েছে, সে যদি তার অনুপস্থিতিতে তার রূপ-যৌবনের পসরা করে বেড়ায় এবং ভ্রষ্টা হয়। আরো তিন ব্যক্তিকে কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। আর তাঁর চাদর হচ্ছে অহংকার এবং তাঁর পরিধেয় হচ্ছে তাঁর ইজ্জত। (২) যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের মধ্যে সন্দেহ পোষণ করে। (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়। (আবু দাউদ) বাক্কার ইবনে আবদুল আযীয (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তার মর্যিমাফিক গুনাহসমূহের মধ্যে যে কোন গুনাহের শাস্তি প্রদান কিয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত করতে পারেন। কিন্তু তিনি বিদ্রোহ, পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার গুনাহর শাস্তি অপরাধীর মৃত্যুর পূর্বেই এই দুনিয়াতে দিয়ে থাকেন (দারিমী, তিরমিযী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) তোমাদের কেউ তো তার ভাইয়ের চোখের মধ্যকার সামান্য ধুলিকণাও দেখতে পায়, কিন্তু তার নিজের চোখে আস্ত একটা কড়িকাঠ বা গুড়ি পড়ে থাকলেও তা দেখতে পায় না। মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (র) আমি মাকিল আল-মুযানী (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করলেন। অতঃপর আমিও রাস্তায় কিছু একটা দেখে তা সরালাম। তিনি বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমাকে কিসে এই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে? আমি বললাম, আপনাকে এরূপ করতে দেখে আমিও তাই করলাম। তিনি বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি খুব উত্তম কাজ করেছো। আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মুসলমানদের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করে, তার জন্য একটি সওয়াব লেখা হয়। আর যার একটি সওয়াবের কাজ কবুল হয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।

【23】

অনুচ্ছেদঃ উপহারাদি গ্রহণ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা পরস্পর উপহারাদি বিনিময় করো, তোমাদের পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি হবে (যায়লাঈ ও সুয়ুতীর মতে আবু ইয়ালা, নাসাঈর কিতাবুল কুনাসাঈ, শুআবুল ঈমান, ইবনে আদীর কামিল)। সাবিত (র) আনাস (রাঃ) বলতেন, হে বৎসগণ! তোমরা পরস্পরের জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করো, তা তোমাদের মধ্যে সদ্ভাব সৃষ্টির উপায় হবে।

【24】

অনুচ্ছেদঃ মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি উপহারাদি বর্জন করে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে একটি উস্ত্রী উপহার দিলো। তিনিও তাকে প্রতিদান দিলেন। তাতে সে অসন্তুষ্ট হলো। আমি নবী (সাঃ)-কে মিম্বারে দাড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমাকে তোমাদের কেউ হাদিয়া দিলে আমিও আমার সামর্থ্য অনুসারে তাকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। তাতে সে অসন্তুষ্ট হয়। আল্লাহর শপথ! এই বছরের পর আমি কুরাশী, আনসারী, সাকাকী ও দাওসী গোত্র ছাড়া কোন বেদুইনের হাদিয়া গ্রহণ করবো না। (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, বাযযার, ইবনে হ্বিবান)

【25】

অনুচ্ছেদঃ লজ্জাশীলতা।

আবু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ নবুয়াতী কথার মধ্যে মানুষ যা পেয়েছে তাতে এও আছে, “তুমি নির্লজ্জ হতে পারলে যাচ্ছে তাই করতে পারো”। (বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, তাবারানী) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ঈমানের ষাট বা সত্তরের অধিক শাখা আছে। তার মধ্যে সবোৎকৃষ্ট শাখা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেইবনে মাজাহ) এবং তার সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি বিশেষ শাখা -(বুখারী, মুসলিম)। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) অন্দর মহলের পর্দানশীন কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি কোন কিছু অপছন্দ করলে তাঁর চেহারা দর্শনেই আমরা তা বুঝতে পারতাম -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)। উসমান (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) আবু বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলেন। তিনি তখন আয়েশা (রাঃ)-এর একটি চাদর পরিহিত অবস্থায় তার বিছানায় শায়িত ছিলেন। তিনি এই অবস্থায় থাকতেই আবু বাকর (রাঃ)-কে সাক্ষাতের অনুমতি দিলেন। আবু বাকর (রাঃ) তার সাথে নিজ প্রয়োজন সেড়ে চলে গেলেন। অতঃপর উমার (রাঃ) এসে তার সাথে সাক্ষাত প্রার্থনা করলেন। তিনি শায়িত অবস্থায় তাকেও অনুমতি দিলেন। তিনিও তার সাথে প্রয়োজন সেড়ে চলে গেলেন। উসমান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তার সাথে সাক্ষাত প্রার্থনা করলাম। তিনি উঠে বসে আয়েশা (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি তোমার কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নাও। উসমান (রাঃ) বলেন, আমিও তার সাথে নিজ প্রয়োজন সেড়ে বিদায় নিলাম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দেখলাম, আপনি আবু বাকর ও উমার (রাঃ)-র আগমনে শংকিত বা সতর্ক হননি, যতটা হয়েছেন উসমান (রাঃ)-এর আগমনে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ উসমান অতিশয় লজ্জাশীল প্রকৃতির লোক। আমি আশংকা করলাম, যদি আমি তাকে এই অবস্থায় ঘরে ঢোকার অনুমতি দেই তবে সে তার প্রয়োজন নিয়ে আমার নিকট পৌঁছতো না। (মুসলিম, মুশকিলুল আসার) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর কেবল কদৰ্যতাই বৃদ্ধি করে। আর লজ্জা কোন জিনিসের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ) সালেম (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার ভাইকে লজ্জাশীলতার বিরুদ্ধে নসীহত করছিল। নবী (সাঃ) বলেনঃ তাকে ছাড়ো। কেননা লজ্জাশীলতা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) এক লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি লজ্জা সম্পর্কে তার ভাইকে তিরস্কার করে বলছিলঃ তুমি খুবই লাজুক, এতে তোমার দারুণ ক্ষতি হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। কেননা লজ্জা ঈমানের অংশ। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার ঘরে শোয়া ছিলেন। তার উরু অথবা পা খোলা ছিলো। আবু বাকর (রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থাতেই কথাবার্তা বলেন। এরপর উমার (রাঃ) অনুমতি চাইলে তিনি তাকেও অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থায় কথাবার্তা বলেন। অতঃপর উসমান (রাঃ) অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করলেন। রাবী মুহাম্মাদ বলেন, এ ব্যাপারটি একই দিনে ঘটেছে বলে আমি বলতে পারি না। এরপর উসমান (রাঃ) এসে কথাবার্তা বলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) এলেন, আপনি কোন খেয়াল করলেন না। উমার (রাঃ) এলেন, আপনি কোন খেয়াল করলেন না। উসমান (রাঃ) আসতেই আপনি উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করে নিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি কি সে ব্যক্তিকে লজ্জা করবো না ফেরেশতারা যাকে লজ্জা করে থাকেন। (মুসলিম, মুশকিলুল আসার)