1. ঈমান

【1】

ঈমান

আবুযার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বোত্তম কাজ হ’ল আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য শক্রতা করা।” তাহক্বীক্ব : হাদীছটির সনদ যঈফ। ইয়াযীদ ইবনু আবী যিয়াদ নামের ব্যক্তি যঈফ। এছাড়া আরেকজন রাবী আছে, তার নাম উল্লেখ করা হয়নি, সে অপরিচিত। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বলে সাক্ষ্য প্ৰদান করা। তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে শাহর ইবনু হাওশাব আছে। সে মু’আয (রাঃ) থেকে হাদীছ শ্রবণ করেনি। এছাড়াও ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামের রাবীও যঈফ। ওছমান (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মারা গেলেন তখন তাঁর ছাহাবীদের অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি তাদের কারো মনে দ্বিধাও সৃষ্টি হল। ওছমান (রাঃ) বলেন, আমিও তাদের অন্যতম। এমন সময় ওমর (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গেলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না। ওমর (রাঃ) আবুবকর (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলেন। অতঃপর উভয়ে আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে সালাম করলেন। অতঃপর আবুবকর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওছমান আপনার কী হয়েছে? আপনি কেন আপনার ভাই ওমরের সালামের জবাব দেননি? আমি বললাম, আমি তো এরূপ করিনি। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি এরূপ করেছেন। ওছমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি এই দিক দিয়ে গেছেন বা আমাকে সালাম দিয়েছেন। এরপর আবুবকর (রাঃ) বললেন, ওছমান ঠিকই বলেছেন। অতঃপর আবুবকর (রাঃ) বললেন, নিশ্চয় আপনাকে কোন দুশ্চিন্তা এ থেকে বিরত রেখেছিল। আমি বললাম, জি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী? আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা তার নবীকে তুলে নিলেন। অথচ আমরা তাকে এই বিষয়টি থেকে বাঁচার উপায় জানতে পারলাম না। আবুবকর (রাঃ) বললেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আমি তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। একথা শুনে আমি তার দিকে অগ্রসর হলাম এবং বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনিই এর জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি। আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম এ থেকে বাঁচার উপায় কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ঐ কালেমা গ্রহণ করল। যা আমি আমার চাচার কাছে পেশ করেছিলাম; আর তিনি তা প্ৰত্যাখ্যান করেছিলেন। ঐটাই নাজাতের পথ। তাহক্বীক্ব : যঈফ। মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি একদা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেন, কোন ঈমান সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি বললেন, কাউকে মিত্র ভাবলে আল্লাহর জন্যই ভাববে। আর কাউকে শক্ৰ ভাবলে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্যই ভাববে। আর নিজের জিহবাকে আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত রাখবে। মু’আয বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সেটা কী। তিনি বললেন, অন্যের জন্য তাই পসন্দ করবে যা তোমার জন্য পসন্দ কর। এভাবে নিজের জন্য যা অপসন্দ করবে অন্যের জন্যও তা অপসন্দ করবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে যুবান ইবনু ফায়েদ ও ইবনু লাহিয়া নামে দুইজন দুর্বল রাবী আছে।

【2】

কাবীরা গোনাহ ও মুনাফিকীর নিদর্শন

ছাফওয়ান ইবনু আসসাল (রাঃ) একদিন এক ইহুদী তার সাথীকে বলল, এই নবীর কাছে আমাকে নিয়ে চল। তার সাথী বলল, তাকে নবী বল না। কারণ তোমার মুখে এই কথা শুনলে সে গর্বে আটখানা হয়ে যাবে। অতঃপর তারা উভয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসল এবং তাঁকে মূসা (আঃ)-এর নয়টি মু'জিযা সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি উত্তরে বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (২) চুরি করবে না (৩) ব্যভিচার করবে না (৪) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে না- যা আল্লাহ হারাম করেছেন (৫) কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে কোন ক্ষমতাবান হাকিমের কাছে নিয়ে যাবে না- যাতে তিনি তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন (৬) জাদু করবে না (৭) সূদ খাবে না (৮) কোন সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিবে না (৯) জিহাদকালে পলায়ন করবে না এবং বিশেষ করে তোমরা ইহুদীদের শনিবারের নিয়ম পালন করবে না। ছাফওয়ান বলেন, তারা উভয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পায়ে চুম্বন করল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি সত্য নবী। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে আমার অনুসরণে তোমাদের অন্তরায় কোথায়? তারা বলল, দাউদ (আঃ) আল্লাহর নিকট দুআ করেছিলেন যে, নবী যেন বরাবর তাঁর বংশের মধ্যেই হন। সুতরাং আমাদের আশংকা হয় আমরা আপনার অনুসরণ করলে ইহুদীরা আমাদেরকে হত্যা করবে।” তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সালামা নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম বুখারী, ইবনু কাছীর তাকে যঈফ বলেছেন। আনাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনটি বিষয় ঈমানের বুনিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। (১) যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমা পড়বে, তার প্রতি আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে; কোন গুনাহর দরুন তাকে কাফের মনে করবে না এবং কোন আমলের দরুন তাকে ইসলাম হতে খারিজ করে দিবে না। (২) জিহাদ- যেদিন হতে আল্লাহ আমাকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেদিন হতে এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা দাজালের সাথে জিহাদ করতে থাকবে, কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার বা কোন সুবিচারকের সুবিচার জিহাদকে বাতিল করতে পারবে না এবং (৩) তাকদীরে বিশ্বাস করা। তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইয়াযীদ ইবনু আবী নুশবাহ নামে একজন যঈফ রাবী আছে।

【3】

কুমন্ত্রণা

ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মানুষের সাথে শয়তানের একটি ছোঁয়া আছে এবং ফেরেশতারও একটি ছোঁয়া আছে। শয়তানের ছোঁয়া হল অমঙ্গলের ভীতি প্ৰর্দশন এবং সত্যকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করা। পক্ষান্তরে ফেরেশতার ছোঁয়া হল মঙ্গলের সুসংবাদ প্ৰদান এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। সুতরাং যে ব্যক্তি দ্বিতীয় অবস্থা গ্ৰহণ করবে সে যেন মনে করে এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অপর অবস্থা অনুভব করবে, সে যেন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চায়। তাহক্বীক্ব : যঈফ। কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল, ছালাতের মধ্যে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এটা আমার পক্ষে বড় কষ্টদায়ক। কাসেম উত্তরে বললেন, তুমি তোমার ছালাত পূর্ণ করতে থাক। কারণ ঐটা তোমার থেকে দূর হবে না যতক্ষণ না ছালাত পূর্ণ কর এবং বল যে আমি ছালাত পূর্ণ করিনি। তাহক্বীক : যঈফ।

【4】

তাক্বদীরে বিশ্বাস

মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রাঃ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) কে কুরআনের এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘যখন তোমার প্রভু আদম সন্তানদের পিঠ হতে তাদের সমস্ত সন্তানকে বের করলেন’। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি শুনেছি, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত দ্বারা তাঁর পিঠে বুলালেন এবং সেখান থেকে একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, জান্নাতের কাজই তারা করবে। এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাহলে আমল কেমন হবে? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বরা জান্নাতের কাজই করিয়ে নেন। অবশেষে জান্নাতীদের কোন কাজ করে মৃত্যুবরণ করে। আর আল্লাহ তা’য়ালা এর দ্বারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। অনুরূপভাবে আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামের কাজই করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কোন কাজ করেই মৃত্যু বরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আবু খুযামা আবু খুযামা তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, আমি একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস বরলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি এবং কোন ঔষধি দ্বারা ঔষধ করে থাকি অথবা কোন উপায় দ্বারা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করি, তা কি তাক্বদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? তিনি বললেন, তোমাদের এ সকল চেষ্টা তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। তাহক্বীক : যঈফ। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই রকমের লোক রয়েছে, তাদের জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই; তারা হল মুর্জিয়া ও ক্বাদারিয়া। তাহক্বীক : যঈফ। ওমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ক্বাদারিয়াদের সাথে উঠা-বসা করা না এবং তাদেরকে বিচারক নিযুক্ত কর না। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ছয় ব্যক্তির উপর আমি অভিশম্পাত করি এবং আল্লাহও তাদের প্রতি লা’নত করেন। আর প্রত্যেক নবীর দু’আই কবুল করা হয়। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবে কিছু অতিরিক্ত যোগ করে (২) যে ব্যক্তি তাক্বদীরে অবিশ্বাস করে (৩) যে ব্যক্তি এই উদ্দেশ্যে জোর করে ক্ষমতা দখল করে যে, আল্লাহ যাকে অপমান করেছেন তাকে সে যেন সম্মান দান করতে পারে এবং আল্লাহ যাকে সম্মান দান করেছেন তাকে যেন অপমান করতে পারে (৪) যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর মক্কায় এমন কাজ করে, যা তথায় করা আল্লাহ হারাম করেছেন। (৫) আমার বংশে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার করা কোন হারাম কাজকে হালাল করে এবং (৬) যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত পরিত্যাগ করে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আয়েশা (রাঃ) আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে তাক্বদীর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবে, কিয়ামতের দিনে তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সে সম্পর্কে আলোচনা করবে না। তাকে প্রশ্নও করা হবে না। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আলী (রাঃ) একদিন খাদীজা (রাঃ) জাহেলী যুগে তার যে দু’টি সন্তান মৃত্যুবরণ করেছিল তাদের সম্পর্কে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, উত্তরে তিনি বললেন, তারা উভয়ে জাহান্নামে রয়েছে। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন খাদীজার চেহারায় অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি বললেন, তুমি যদি জাহান্নামে তাদের অবস্থান দেখতে, তবে তুমিও তাদেরকে ঘৃণা করতে। অতঃপর খাদীজা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আপনার পক্ষের আমার যে সন্তান মারা গেছে তার অবস্থা কী? তিনি বললেন, সে জান্নাতে আছে। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মুমিনগণ ও তাদের সন্তানগণ জান্নাতে থাকবে এবং কাফের, মুশরিক ও তাদের সন্তানরা থাকবে জাহান্নামে। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এই আয়াত পাঠ করলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরা তাহাদের অনুসরণ করবে’। তাহক্বীক্ব : যঈফ, মুনকার। এর সনদে মুহাম্মাদ বিন ওছমান নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পিঠ হতে তাদের সন্তানদের বের করলেন’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা তাদের একত্রিত করলেন এবং তাদেরকে বিভিন্নরূপে গঠন করতে চাইলেন। অতঃপর তাদের আকৃতি দান করলেন এবং কথা বলার শক্তি দিলেন। ফলে তারা কথা বলতে পারল । অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাদের নিকট হতে প্ৰতিজ্ঞা গ্ৰহণ করলেন এবং তাদেরকে নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষী করলেন। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল, হ্যাঁ; অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বললেন, আমি তোমাদের এ কথার উপর সাত আসমান ও সাত যমীনকে সাক্ষী করছি এবং তোমাদের উপর তোমাদের পিতাকেও সাক্ষী করছি; তোমরা যেন কাল কিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার যে, এটা আমরা জানতাম না। তোমরা জেনে রাখা যে, আমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই এবং আমি ব্যতীত তোমাদের কোন প্রতিপালক নেই। সুতরাং তোমরা আমার সাথে কাউকে শরীক কর না। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি আমার রাসূলগণকে পাঠাব, তাঁরা তোমাদেরকে আমার এই অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিবেন। এতদ্ব্যতীত আমি তোমাদের প্রতি আমার কিতাব নাযিল করব। তখন তারা বলল, আমরা ঘোষণা করছি যে, নিশ্চয় আপনি আমাদের প্রতিপালক ও আমাদের মা’বূদ, আপনি ব্যতীত আমাদের কোন প্রতিপালক নেই, আপনি ব্যতীত আমাদের কোন মা’বূদ নেই। তারা এটা স্বীকার করল। অতঃপর আদম (আঃ)-কে তাদের উপর উঠিয়ে ধরা হল, তিনি সকলকে দেখতে লাগলেন। তিনি দেখলেন তার মধ্যে ধনী-দরিদ্র, সুন্দর-অসুন্দর সবই আছে। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! যদি আপনি এদের সকলকে সমান করতেন? আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমি চাই এই প্ৰভেদের মাধ্যমে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হোক। এভাবে তিনি নবীগণকে দেখলেন, সকলের মধ্যে তাঁরা চেরাগ সমতুল্য, তাদের উপর আলো ঝলমল করছে। তাঁরা নবুঅত ও রিসালাত-এর কর্তব্য পালন সম্পর্কে বিশেষ অংগীকারেও আবদ্ধ হয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘আমি নবীদের নিকট হতে তাদের অংগীকার গ্রহণ করলাম ঈসা ইবনু মারইয়াম পর্যন্ত’। অতঃপর উবাই (রাঃ) বলেন, সে সকল রূহের মধ্যে ঈসা (আঃ)-এর রূহও ছিল; আল্লাহ তা'আলা তা মারিয়াম (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করলেন। উবাই (রাঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, সেই রূহ মারিয়াম (আঃ)-এর মুখ দিয়ে প্রবেশ করেছিল। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আবু দারদা (রাঃ) একদিন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু হচ্ছে সে সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বলেন, তোমরা যখন শুনবে যে, কোন পাহাড় তার জায়গা হতে চলে গেছে তখন সেটা বিশ্বাস করবে; কিন্তু যখন শুনবে যে কোন লোক তার স্বভাব পরিবর্তন করেছে তখন তা বিশ্বাস করবে না। কারণ যার উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে । তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত হাদীসের সনদে যুহরী নামক রাবী আছে। সে আবু দারদা (রাঃ)-এর যুগ পায়নি। তাই বিচ্ছিন্নতার কারণে যঈফ। উম্মু সালামা (রাঃ) একদিন তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি বিষ মিশানো বকরীর যে গোশত খেয়েছিলেন তার কারণে প্রত্যেক বছরেই আপনাকে কষ্ট পেতে হয়। তিনি বললেন, আমার কাছে তার কোন কষ্ট পৌঁছে না; কিন্তু কেবল তা-ই পৌঁছে, যা আমার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। অথচ আদম (আঃ) তখন মাটির মধ্যেই ছিলেন। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আবুবকর আনসী নামক রাবী দুর্বল। তার বর্ণিত হাদীসগুলো ছহীহ হাদীসের বিরোধী। আবু সাঈদ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কাফেরের জন্য কবরে ৯৯টি সাপ নির্ধারণ করা হয়। সেগুলো তাকে কিয়ামত পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকে। যদি একটি সাপ যমীনে নিঃশ্বাস ফেলে, তাহলে যমীনে কখনো শস্য জন্মাবে না। তিরমিযীর বর্ণনায়, ৭০ টির কথা এসেছে । তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে দার্রাজ আবুস সামহে নামক একজন মুনকার রাবী আছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদিছটি যে সনদে বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে দুইজন দুর্বল রাবী আছে। জাবের (রাঃ) সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন মারা যান, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর জানাযায় হাযির হলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযা পড়ার পর তাকে যখন কবরে রাখা হল এবং মাটি সমান করে দেওয়া হল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে তাসবীহ পাঠ করলেন; আমরাও তাঁর সাথে দীর্ঘ সময় তাসবীহ পাঠ করলাম। অতঃপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরাও তাকবীর বললাম। এ সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কেন এরূপ তাসবীহ ও তাকবীর বললেন? তিনি বললেন, এই নেক ব্যক্তির কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এতে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে মাহমূদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে।