2. কিতাব সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

【1】

কিতাব সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

রবী’আ জুরাশী (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট কতক ফেরেশতা আসল এবং তাকে বললেন, আপনার চোখ ঘুমাতে থাক, আপনার কান শুনতে থাক, আপনার হৃদয় উপলব্ধি করতে থাক। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অতঃপর আমার চোখ দু’টি ঘুমাল, আমার কান দু’টি শুনল, আমার হৃদয় উপলব্ধি করল। তিনি বলেন, তখন আমাকে বলা হল একজন মহৎ ব্যক্তি ঘর তৈরী করলেন এবং তাতে খানার আয়োজন করলেন। অতঃপর একজন আহবানকারী পাঠালেন। তখন যে ব্যক্তি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারল, খেতে পারল। আর মালিকও তার প্রতি সন্তুষ্ট হল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার আহবানে সাড়া দিল না সে ঘরে প্রবেশ করতে পারল না, খেতেও পারল না এবং মালিকও তার প্রতি সন্তুষ্ট হল না। অতঃপর ফেরেশতা বললেন, মালিক হল আল্লাহ্‌, আহবানকারী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম), ঘর হল ইসলাম এবং খানা হল জান্নাত। তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদিতে ঠেস দিয়ে এ কথা মনে করবে যে, আল্লাহ যা এই কুরআনে হারাম করেছেন তা ব্যতীত আর কিছুই হারাম করেননি। তোমরা জেনে রাখ, আমি কসম করে বলছি, নিশ্চয় আমি তোমাদের অনেক বিষয়ে নির্দেশ করেছি, উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি। আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয় কুরআনের বিষয়ের সমান; বরং তা হতেও অধিক হবে। তোমরা মনে রাখবে যে, অনুমতি ব্যতীত আহলে কিতাব যিম্মিদের বসত ঘরে প্রবেশ করা, তাদের নারীদের প্রহার করা এবং তাদের ফল শস্য খাওয়াকেও তোমাদের জন্য হালাল করিনি। যদি তারা তাদের উপর নির্ধারিত কর আদায় করে দেয়। (অথচ এসব বিষয় কুরআনে নেই)। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমি যা এনেছি তার অধীনে না হবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত হাদীসের সনদে নাঈম ইবনু হাম্মাদ নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম নববী তাকে ছহীহ বললেও তা ভুলবশত হয়েছে। বেলাল ইবনু হারেছ মুযানী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতসমূহ হতে এমন সুন্নাত যিন্দা করবে, যা আমার পর পরিত্যক্ত ছিল, সে ঐ সকল লোকের ছওয়াবের মত ছওয়াব পাবে, যারা তার উপর আমল করবে। অথচ আমলকারীদের ছওয়াবের কোন অংশ কমানো হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গোমরাহীর নতুন পথ সৃষ্টি করবে, যাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল রাযী নন, সে ঐ সকল লোকের গোনাহের পরিমাণ পাবে, যারা তার প্রতি আমল করবে, অথচ তাদের গোনাহের কোন অংশ কমানো হবে না। তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ নামের রাবী ত্রুটিপূর্ণ। ইমাম শাফেঈ ও ইবনু হিব্বান জাল বলেছেন। আমর ইবনু আওফ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দ্বীন হেজাজের দিকে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে এবং দ্বীন হেজাযে আশ্রয় নেবে যেভাবে পার্বত্য মেষ পর্বত শিখরে আশ্রয় নেয়। দ্বীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর ন্যায় যাত্রা শুরু করেছে, আবার প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব সে সকল প্রবাসীর জন্য সুখবর; যারা আমার পর মানুষকে ঐ সমস্ত বিষয়ে সংশোধন করে দিবে যা সুন্নাতকে নষ্ট করে দিয়েছে। তাহক্বীক্ব : উক্ত হাদীছের প্রথমাংশ যঈফ। তবে শেষাংশ ছহীহ। আনাস (রাঃ) একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি যদি এভাবে সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো উপর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না, তবে তাই কর। অতঃপর তিনি বললেন, বৎস! এটা আমার সুন্নাত। সুতরাং যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসে সে আমাকে ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসবে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত বর্ণনায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। খালেদ ইবনু আনাস ও আছেম ইবনু সাঈদ দুইজন অপরিচিত রাবী আছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিভ্রাপ্তির সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে তার জন্য একশ' শহীদের ছওয়াব রয়েছে। তাহক্বীক্ব : নিতান্ত যঈফ। এর সনদে হাসান ইবনু কুতায়বা নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, আবু হাতেম, উকাইলী প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে যঈফ বলেছেন। উল্লেখ্য যে, মানুষের মাঝ থেকে যখন সুন্নাত উঠে যাবে এবং সুন্নাতের উপর টিকতে পারবে না। তখন যে ব্যক্তি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে সে ৫০ জন শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। এই হাদীছ ছহীহ। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাবে এবং সুন্নাতের প্রতি আমল করবে, তার অনিষ্ট হতে মানুষ নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! এরূপ লোকতো আজকাল অনেক। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এরূপ লোক থাকবে। তাহক্কীক্ব : যঈফ। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা এমন যুগে আছ, যে যুগে তোমাদের কেউ যদি তার প্রতি নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশও ছেড়ে দেয়, তবুও সে ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর একটি যুগ আসবে সে যুগে তোমাদের কেউ যদি এক দশমাংশ আমল করে, তবুও সে মুক্তি পাবে। তাহক্কীক্ব : যঈফ। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, তোমরা নিজেদের উপর কঠোরতা আরোপ কর না, আল্লাহ তোমাদের উপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দিবেন। পূর্বে এরূপ কোন সম্প্রদায় নিজেদের উপর কঠোরতা আরোপ করেছিল; ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দিয়েছিলেন; গির্জা ও পাদ্রীদের ধর্মশালায় যে সমস্ত লোক আছে, এরা তাদের উত্তরসূরী। তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ‘রাহবানিয়াত’ কে আবিষ্কার করেছিল, যা আমি তাদের উপর বিধান করিনি। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কুরআন পাঁচভাবে নাযিল হয়েছে : ১. হালাল ২. হারাম ৩. মুহকাম, ৪. মুতাশাবেহ এবং ৫. আমছাল (উপদেশ)। সুতরাং তোমরা হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম মনে করবে। মুতাশাবেহ-এর প্রতি ঈমান আনবে এবং আমছাল দ্বারা উপদেশ গ্ৰহণ করবে। শু’আবুল ঈমানে এসেছে, তোমরা হালালের সাথে আমল করবে, হারাম হতে বেঁচে থাকবে এবং মুহকামের অনুসরণ করবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শরীআতের বিষয় তিন প্রকার : (১) যার হেদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তার অনুসরণ করবে (২) যার গোমরাহী সম্পূর্ণ পরিষ্কার, সুতরাং তা পরিহার করবে এবং (৩) যাতে মতানৈক্য রয়েছে তাকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। সংকলক মুসানাদে আহমাদের উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। কিন্তু সেখানে পাওয়া যায়নি। মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শয়তান মানুষের নেকড়ে বাঘ- ছাগলের নেকড়ের ন্যায়। সে ছাগলের মধ্যে যেটি দলছুট অথবা যেটি অলসতাবশত কিনারায় চলে যায়, সেটাকেই নিয়ে যায়। সুতরাং সাবধান! তোমরা কখনও গিরি পথে যাবে না; জামা’আতের সাথে থাকবে। তাহক্বীক্ব : যঈফ। গুযাইফ ইবনুল হারেছ ছুমালী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখনই কোন সম্প্রদায় একটি বিদ’আত সৃষ্টি করেছে, তখনই একটি সুন্নাত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা একটি বিদ’আত তৈরি করা হতে উত্তম। তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে বাক্বিয়াহ ইবনুল ওয়ালীদ ও আবুবাকর ইবনু আব্দুল্লাহ নামের দুইজন যঈফ রাবী আছে। ইবরাহীম ইবনু মায়সারা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন বিদ'আতীকে সম্মান করল, সে নিশ্চয় ইসলাম ধ্বংসে সাহায্য করল। তাহক্বীক্ক : যঈফ। এর সনদে হাসান ইবনু ইয়াহইয়া নামে পরিত্যক্ত রাবী আছে। ইবনু হিব্বান এটাকে বাতিল হাদীছ বলেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৬২; দ্রঃ তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৮৯-এর টীকা ১/৬৬ পৃঃ।) উল্লেখ্য যে, কোন বিদ’আতীকে আশ্ৰয় দেওয়া যাবে না মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কিতাব শিক্ষা করে, অতঃপর তাতে যা আছে তার অনুসরণ করে, আল্লাহ তাকে দুনিয়ার গোমরাহী হতে বাঁচাবেন এবং আখেরাতে তাকে হিসাবের কষ্ট হতে রক্ষা করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, যে আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করবে, সে দুনিয়াতে গোমরাহ হবে না এবং আখেরাতে হতভাগ্য হবে না। তাহক্বীক্ব : যঈফ। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) কেউ যদি অন্য কারো তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের তরীক্বা অনুসরণ করে, যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছে। কারণ জীবিত ব্যক্তি ফিতনা হতে নিরাপদ নয়। আর তাঁরা হচ্ছেন- রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবীগণ, যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ লোক ছিলেন। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসাবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞান হিসাবে এবং স্বল্পতম ছিলেন কৃত্তিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তাঁর নবীর সাহচর্য এবং আপন দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের মান ও মর্যাদা উপলব্ধি করার চেষ্টা কর, তাদের পদচিহ্নের অনুসরণ করে চল এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক ও চরিত্র আঁকড়ে ধর। তারা সরল সঠিক পথে ছিলেন। তাহক্বীক্ব : যঈফ। জাবের (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার কালাম আল্লাহর কালামকে রহিত করে না; বরং আল্লাহর কালাম আমার কথাকে রহিত করে। এছাড়া আল্লাহর এক কালাম অপর কালামকে রহিত করে। তাহক্বীক্ব : হাদীছটি জাল। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমাদের কালাম সমূহ একটি অপরটিকে রহিত (মানসূখ) করে দেয়, যেভাবে কুরআনের একটি বাণী অপরটিকে রহিত করে। তাহক্বীক্ব : হাদীছটি জাল। আবু ছা’লাবা খুশানী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা কিছু জিনিষকে ফরযরূপে নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলো তোমরা ছাড়বে না। অনুরূপ কিছু বিষয়কে হারাম করে দিয়েছেন সেগুলো করবে না। আর কতগুলোর সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ঐ গুলোর সীমা লঙ্ঘন করবে না। আর কতগুলোর বিষয়ে তিনি ভুলে নয় ইচ্ছাকৃতভাবেই নীরব রয়েছেন, সেগুলো খুঁড়িয়ে বের করবে না। তাহক্বীক্ব : যঈফ।