37. কাব্যিক ছন্দে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা

【1】

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন

আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাব্যের ছন্দে কথাবার্তা বলেন কিনা সে ব্যাপারে তাকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতেন। আবার কখনো বলতেন- يَأْتِيكَ بِالأَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوَّدِ অর্থাৎ তোমার কাছে এমন ব্যক্তি সুসংবাদ নিয়ে আসেন, যাকে তুমি মজুরী দাও না।[১]

【2】

একবার আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে গেলে এ কবিতা পাঠ করেছিলেন

জুনদুব ইবনে সুফিয়ান আল বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) প্রস্তারাঘাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন তিনি বলেন, هَلْ أَنْتِ إِلا أُصْبُعٌ دَمِيتِ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا لَقِيتِ অর্থাৎ তুমি একটি আঙ্গুল যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, তাও আল্লাহর রাস্তায়, যার প্রতিদান পাবে।[১]

【3】

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওয়াযিন গোত্রের সাথে যুদ্ধের সময় কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন

বারা ইবনে আযিব (রাঃ) এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রণক্ষেত্রে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, না- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পালিয়ে যাননি। বরং দলের কিছুসংখ্যক তাড়াহুড়াপ্রবণ লোক হাওয়াযিনের তীরের আঘাতে টিকতে না পেরে পিছু হটে এসেছিল। (বেশিরভাগ ছিল বনু সুলায়ম-এর লোক এবং মক্কার নও মুসলিম) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। আর লাগাম ছিল আবু সুফইয়ানের হাতে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবৃত্তি করছিলেন- أَنَا النَّبِيُّ لا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ অর্থাৎ আমি মিথ্যা নবী নই, আমি আবদুল মুত্ত্বালিবের (বীর) সন্তান।[১]

【4】

ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে কবিতা আবৃত্তি করতেন

আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করেন তখন ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর সামনে চলছেন এবং বলছেনঃ خَلُّوا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيلِهِ الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلَى تَنْزِيلِهِ ضَرْبًا يُزِيلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيلِهِ وَيُذْهِلُ الْخَلِيلَ عَنْ خَلِيلِهِ অর্থাৎ হে কাফির সন্তানরা! তাঁর চলার পথ ছেড়ে দাও। আজ তাঁকে বাধা দিলে তোমাদেরকে এমন শায়েস্তা করব যে, কাঁধ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং বন্ধুর কথা ভুলে যাবে। উমার (রাঃ) তাকে বললেন, ইবনে রওয়াহা! আল্লাহর হারামে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে কবিতা আবৃত্তি করছ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উমার! তাকে বলতে দাও। কারণ, তার কবিতা ওদের জন্য তীরের আঘাতের চেয়েও অধিক কার্যকর।[১] জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মজলিসে শতাধিক বার বসেছি। আর তাতে তাঁর সাহাবীগণ কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহেলি যুগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আর তিনি কখনো চুপ থাকতেন। আবার কখনো তাদের সাথে মুচকি হাসতেন।[১]

【5】

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শ্রেষ্ঠতম উদ্ধৃতি

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আরব কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বাণী হচ্ছে লাবীদের এই চরণঃ أَلا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلا اللَّهَ بَاطِلٌ অর্থাৎ সাবধান আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল।[১]

【6】

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুসলিম কবির কবিতাও শ্রবণ করতেন

আমর ইবনে শারদ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি বাহনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে বসা ছিলাম। তারপর আমি তাঁকে উমাইয়্যা ইবনে আবূ-সালত বিরচিত একশ’ চরণ বিশিষ্ট একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনালাম। কবিতা শেষ হলে তিনি আমাকে বললেন, আরো শোনাও। এরপর তিনি বললেন, সে ইসলাম গ্রহণের কাছাকাছি এসে গেছে।[১]

【7】

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিতা আবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে হাসসান (রাঃ)[১] এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার তৈরি করেছিলেন

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান ইবেন সাবিত (রাঃ) এর জন্য মসজিদে একটি মিম্বার স্থাপন করেছিলেন যেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসার কবিতা পাঠ করেন অথবা তিনি বলেছেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হতে কাফিরদের নিন্দাবাদের উত্তর দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ! রূহুল কুদস [জিবরীল (আঃ)] দ্বারা হাসসানকে সাহায্য করেন যতক্ষণ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রশংসা করবে কিংবা কাফিরদের নিন্দার উত্তর দেবে।[2]