2. ফাযায়িলে কালেমা

【1】

ইসলাম গ্রহণ ও ঈমান আনার ফাযীলাত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহাতীতভাবে এই বাক্য দু’টির ওপর ঈমান আনবে, সে আল্লাহ্‌র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না। ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন: হে খাত্তাবের পূত্র ! যাও, লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, কেবলমাত্র ঈমানদার লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করলাম : শুনে রাখো, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [১] ‘উক্ববাহ্ ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রেখে মারা যাবে, তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যকার যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করো।” (আহমাদ হা/৯৭- শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদীসটি হাসান লিগাইরিহি। এর শাওয়াদিহ বর্ণনা রয়েছে) সুফিয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন যা আপনার পরে বা আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আমি জিজ্ঞেস করবো না। তিনি (সাঃ) বললেন : তুমি বলো : আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এরই উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।” (সহীহ মুসলিম হা/১৬৮) ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তাঁর বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য” - তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে, প্রবেশ করাবেন। আবূ বুরদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। এক, ঐ ব্যক্তি যে আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত নিজের নাবীর (আ) উপর ঈমান এনেছে আবার মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপরও ঈমান এনেছে। দুই, ঐ ক্রীদাস যে মহান আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি স্বীয় মুনিবের হকও আদায় করে। তিন, ঐ ব্যক্তি যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। আর সে তাকে উত্তম আদব শিখিয়েছে এবং উত্তমরূপে ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। মাঈয (রাঃ) নাবী (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সকল আমলের মধ্যে সর্বোত্তম ‘আমল কোনটি? তিনি (সাঃ) বললেন : আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা, যিনি একক। এরপর আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা, অতঃপর কবুল হাজ্জ। এ ‘আমলগুলো ও অন্যান্য আমলের মধ্যে ফাযীলাতের দিক দিয়ে এই পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে যে পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্বের মাঝে।” [১] ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। [১] বর্ণনাকারী “নাবী (সাঃ) বলেন: যে কোন বান্দা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেন। তখন মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিব না? তিনি (সাঃ) বললেন, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করে থাকবে (‘আমল ছেড়ে দেবে)। অতঃপর মু’আয (রাঃ) স্বীয় মৃত্যুর সময় (ইলম গোপন করার গুনাহের ভয়ে) এ হাদীস বর্ণনা করেন।” আবূ ‘আমরাহ আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল। আর আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি- যে কোন বান্দা এ (কালেমা) দু’টির প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এ দুটো অবশ্যই তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে কোন ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, সে খাঁটি অন্তরে এই সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল”- আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। [১] আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো যে, সে আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ও মুখলেস ছিল, যিনি অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নেই, এবং সলাত ক্বায়িম করেছে, যাকাত দিয়েছে। সে তো এরূপ অবস্থায় বিদায় নিলো যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তষ্ট। এটাই হলো আল্লাহর দ্বীন, যা নিয়ে রাসূলগণ আগমন করেছিলেন এবং তাদের রবের পক্ষ হতে প্রচার করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা কিছু সংখ্যক মুশরিক লোক যারা মুশরিক অবস্থায় ব্যাপকহারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং যেনা-বাভিচারে লিপ্ত হয়েছে তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো : আপনি যা বলেন এবং যে দিকে আহ্বান করেন তা খুবই উত্তম। তবে আমাদেরকে বলুন, অতীত জীবনে আমরা যে সমস্ত মন্দ কাজ করেছি তা মুছে যাবে কিনা? (তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো)। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “যে সমস্ত লোক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ মানেনা, আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যেনা করে না। যারা ঐসব কাজে লিপ্ত হবে তারা নিজেদের পাপের প্রতিফল পাবে”- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান : ৬৮)। আরো অবতীর্ণ হলো : “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছো, তারা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি তো ক্ষমাশীল”- (সূরাহ্ আয-যুমার : ৫৩) ‘আমার ইবনু ‘আবাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা অত্যন্ত বৃদ্ধ একটি লোক তার লাঠির উপর ভর করে নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! (কাফির অবস্থায়) আমি বহু ওয়াদা ভঙ্গ করেছি এবং অসংখ্য পাপ কাজ করেছি, সুতরাং আমার ক্ষমার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি (সাঃ) জবাবে বললেন : তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই? লোকটি বললো, হ্যাঁ, আর আমি এ সাক্ষ্যও দেই যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। নাবী (সাঃ) বললেন : তাহলে তো তোমার সমস্ত ওয়াদা ভঙ্গ ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। ইবনু শিমাসাহ আল-মাহরী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবছিলেন। তার ছেলে বলতে লাগলো, হে আব্বা, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কি আপনাকে এই সুসংবাদ দেননি? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন, অবশ্যই আমরা যা কিছু পুঁজি সঞ্চয় করেছি তন্মধ্যে “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল”- সবচেয়ে উত্তম সঞ্চয়। আমি আমার জীবনে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছি। (প্রথম পর্যায়) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রতি আমার চেয়ে অধিক বিদ্বেষ পোষণ করতে আর কাউকে দেখিনি। তখন আমার ইচ্ছা ছিল যে, যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে তাঁকে হত্যা করে মনের ঝাল মেটাব। (দ্বিতীয় পর্যায় হলো) অতঃপর যখন আল্লাহ্ আমার অন্তরে ইসলামের প্রেরণা ঢেলে দিলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে বললাম, আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার কাছে বাই’আত করবো। তিনি তাঁর ডান হাত প্রসারিত করলে আমি আমার হাতখানা টেনে নিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আমর! তোমরা কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি কিছু শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন : তুমি কি শর্ত করতে চাও। আমি বললাম, আমি এই শর্ত করতে চাই যে, আমাকে ক্ষমা করা হোক। তিনি বললেন : হে ‘আমর! তুমি জান না ইসলাম পূর্বেকার সমস্ত অপরাধ ধ্বংস করে দেয়? অনুরূপভাবে হিজরাত ও হাজ্জের দ্বারাও পূর্বের সমস্ত অপরাধ ধ্বংস হয়ে যায়? তখন থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ছিলো না। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার এমনি এক প্রভাব ছিলো যে, আমি কখনো তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারতাম না। যদি কেউ আমাকে তাঁর দৈহিক সৌষ্ঠবের বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করতো তাও আমার দ্বারা সম্বব হতো না। যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমি আশা করতে পারতাম যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত। (তৃতীয় পর্যায় হলো) অতঃপর আমার ওপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ন্যাস্ত হলো। আমি অবগত নই যে, এগুলোর মধ্যে আমার অবস্থা কেমন?। [১]

【2】

ইসলাম গ্রহণে অতীতের সৎ ‘আমল নষ্ট হয় না

হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন, জাহিলী যুগে ভাল কাজ মনে করে আমি যে দান-খয়রাত করেছি, দাস মুক্ত করেছি বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেছি, তার জন্য কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : তুমি অতীত জীবনে যে সব সাওয়াবের কাজ করেছো তা সহকারেই তুমি মুসলিম হয়েছো। [১]

【3】

ইসলাম গ্রহণ নিরাপত্তার বিধান দেয়

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলছেন : আমি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহামাদ আল্লাহর রাসূল, সলাত ক্বায়িম করবে এবং যাকাত দিবে। তারা যদি এটা করে তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাদের রক্ত ও সম্পদের নিরাপত্তার ঘোষণা রইল। তবে ইসলামের হাক্ব ব্যতীত। তাদের হিসাব্ আল্লাহর উপর। [১] হাকিম ইবনু হিযাম “আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগে যেসব নেক কাজ করেছি তা কখনো পরিত্যাগ করবো না, বরং ইসলামের মধ্যেও অনুরূপ করবো।” (সহীহ মুসলিম হা/৩৪০) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ “হাকিম হিযাম জাহিলী যুগে একশো দাস মুক্ত করেছেন এবং সওয়ারীর জন্য একশো উট দান করেছিলেন। অতঃপর মুসলিম হওয়ার পরও পুনরায় একশো দাস মুক্ত করেছেন এবং আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য একশো উট দান করেছেন। অতঃপর নাবী (সাঃ)-এর নিকট আসলেন।” হাদীসের বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। (সহীহ মুসলিম হা/১৪১)

【4】

নাবী (সাঃ)- কে না দেখে ঈমান আনার ফাযীলাত

আবূ ‘আবদুল রহমান জুহানী (রাঃ) একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় দুইজন আরোহীকে আসতে দেখা গেলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদেরকে দেখে বললেন, এদেরকে কিন্দা ও মাযহিজ গোত্রের মনে হচ্ছে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো, তখন তাদের সাথে মাযহিজ গোত্রের কিছু লোকও ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দুই আগুন্তুকের মধ্যকার একজন বাই’আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকটবর্তী হলো। যখন তিনি তাঁর (সাঃ) হাত নিজের হাতে নিলেন তখন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনার সাথে সাক্ষ্যৎ করলো এবং আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি (সাঃ) বললেন : তার জন্য সুসংবাদ (মোবারকবাদ)। অতঃপর লোকটি তাঁর হাতের উপর হাত বুলিয়ে বাই’আত গ্রহণ করে চলে গেলো। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি অগ্রসর হলো। সেও বাই’আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর হাত নিজের হাতে রেখে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনাকে না দেখে আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি (সাঃ) বললেন : তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ। অতঃপর এ লোকটিও তাঁর হাতের উপর নিজের হাত বুলিয়ে বাই’আত গ্রহণ করে চলে গেলো। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য একবার সুসংবাদ। আর যে ব্যক্তি আমাকে দেখে নাই, তথাপি আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য সাত বার (বারবার) মোবারকবাদ।” আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমার আকাঙ্খা হয়, যদি আমার ভাইদের সাথে অমার সাক্ষ্য হতো! তখন নাবী (সাঃ)-এর সাহাবীগণ বলেন : আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাঃ) বললেন : “তোমরা তো আমার সাহাবী। আমার ভাই হলো তারা, যারা আমাকে না দেখে আমার উপর ঈমান আনবে।” বর্ণনাকারী একদা কিছু লোক “আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সামনে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহাবীদের ঈমান সম্পর্কে আলোচনা করলো তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে দেখেছেন তাদের সামনে তাঁর সত্যতা একেবারেই সুস্পষ্ট ছিল। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। সবচেয়ে উত্তম ঈমান হলো ঐ ব্যক্তির যে না দেখে ঈমান এনেছে। অতঃপর এর প্রমাণে তিনি এ আয়াত পড়লেন : “আলিফ, লাম-মীম, এটা এমন কিতাব যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মুত্তাকীনদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ, যারা গায়েবের প্রতি ঈমান রাখে।”

【5】

যে ‘আমলের দ্বারা ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়

আনাস (রাঃ) নাবী (সাঃ)- কে বলেছেন। তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে। এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়। [১] ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) - কে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি সন্তুষ্টিচিত্তে আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে নিজের দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) - কে রাসূল হিসেবে মেনে নিয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে। [১]

【6】

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- বলার ফাযীলাত

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] মু’আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এর সাক্ষ্য দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইবনু হিব্বান, আবূ নু’আইম, আহমাদ। এর সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। সিলসিলাহ্ সহীহাহ্ হা/২৩৫৫) ‘ইতবান বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে, ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।” (আহমাদ হা/১৬৪৮২, সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম, বায়হাক্বীর ‘আসমা ওয়াস সিফাত’ ও দূররে মানসুর) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাঃ) তাকে বললেন। লোকদের মাঝে ঘোষণা দাও : “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই”- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বাযযার, সহীহ্ জামিউল সাগীর হা/৮৫১- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। [১] জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী (সাঃ) বলেন : সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এবং সর্বোত্তম দু’আ হলো ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’। [১] ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : নূহ (আঃ) স্বীয় ইন্তিকালের সময় তাঁর দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন : আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করে যাচ্ছি। আমি তোমাদেরকে দু’টি বিষয়ে আদেশ করছি এবং দু’টি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে শির্‌ক এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি। আর যে দুটি বিষয়ে আদেশ করছি তার একটি হলো : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। কেননা সমস্ত আসমান ও যমীন এবং এর মাছে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে (ভারি হবে)। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন (সাত আকাশ ও সাত যমীন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ কালেমাকে রাখা হয় তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে। আর আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি’ (পাঠ করার জন্য), কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবীহ, এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিযিক্ব দেয়া হয়। [১] আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন : একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামাতের দিন আপনার শাফা’আত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : হাদীসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করবে না। (অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন: আমার শাফায়া’আত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ঐ ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরের ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে।’ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে একদিন না একদিন এই কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও ইতিপূর্বে তাকে কিছুটা শাস্তি ভোগ করতে হবে। [১] আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এই কালেমা গ্রহণ করবে যা আমি আমার চাচার (আবূ ত্বালিবের) কাছে পেশ করেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই কালেমা এই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হবে। [১] বর্ণনাকারী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে এই কালেমা তাকে ঐ সময়ে মুক্তি দিবে যখন তার উপর মুসিবত আসবে।” (সিলসিলাহ সহীহাহ্ হা/ ১৯৩২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ (ঈমান) থাকবে। এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে গমের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। অতঃপর এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: মহান আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে সমস্ত হাশরবাসীর সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি ‘আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি এসব ‘আমলনামার কোন কিছুকে অস্বীকার করো। ‘আমলনামা লিখার কাজে নিয়োজিত আমার ফিরিশতারা কি তোমার উপর কোন জুলুম করেছে? সে বলবে, না। অতঃপর প্রশ্ন করা হবে, এ সমস্ত গুনাহের পক্ষে তোমার একটি নেকী আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে, যাতে লিখা থাকবে : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।’ বলা হবে, যাও এটাকে ওজন করে নাও। সে আরজ করবে, এতোগুলো দফতরের মোকাবেলায় এই সামান্য কাগজের টুকরা কি কাজে আসবে। বলা হবে, আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর ঐ দফতরগুলোকে এক পাল্লায় রাখা হবে এবং অপর পাল্লায় কাগজের ঐ টুকরাটি রাখা হবে। তখন দফতরওয়ালা পাল্লাটির মোকাবেলায় ঐ কাগজের টুকরার পাল্লাটি ওজনে ভারি হয়ে যাবে। আসল কথা হলো, আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারি হতে পারে না। [১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন বান্দা এমন নেই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খূলে যায় না। এমনকি এ কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে। [১] হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কাপড়ের কারুকার্য যেমন মুছে যায় তেমনি ইসলামও এক সময় অস্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি লোকেরা এটাও জানবে না যে, সিয়াম কি, সলাত কি, কুরবানী কি এবং সদাক্বাহ কি জিনিস। একটি রাত আসবে যখন অন্তরসমূহ থেকে কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে এবং যমীনের উপর কুরআনের একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। তখন মানুষদের মধ্যে একদল বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অবশিষ্ট থাকবে। তারা বলবে, আমরা আমাদের বাপ-দাদার (পূর্ব পুরুষের) কাছ থেকে এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” শুনেছিলাম, সেজন্য আমরাও এই কালেমা পাঠ করি। তখন সিলাহ্ বিন যুফার হুযাইফাহ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলো, তারা যেহেতু ঐ সময় সলাত, সিয়াম, কুরবানী এবং সদাক্বাহ সম্পর্খে অবহিত থাকবে না, তাহলে এই কালেমা তাদের কী উপকারে আসবে? হুযাইফাহ (রাঃ) কোন জবাব দিলেন না। তিনি একই প্রশ্ন করলেন। প্রতিবারেই (রাঃ) কোন জবাব দিলেন না। অতঃপর তৃতীয়বারের পর (অনুরোধ) করলে তিনি বলেন, হে সিলাহ্! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। [১] মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : যমীনের উপর এমন কোন মাটির ঘর বা তাঁবু অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহ্ ইসলামের কালেমা (হুকুমাত) প্রবেশ না করাবেন। যারা মানবে তাদেরকে কালেমার অধিকারী (অনুসারী) হিসেবে সম্মানিত করবেন এবং যারা মানবে না তাদেরকে অপদস্থ করবেন। অতঃপর তারা (জিযিয়া দিয়ে) মুসলিমদের অধীনস্থ হয়ে থাকবে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ইসলামের স্তুম্ভ পাঁচটি। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া, হাজ্জ্ব করা এবং রমাযানের সওম পালন করা। [১] আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) একদা জিবরীল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলাম কী ? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর সলাত ক্বায়িম করবে ও ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং রামাযানের সিয়াম পালন করবে।” (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আহমাদ)

【7】

মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের ফাযীলাত

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তালকীন করাও। কেননা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরণ করলো যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১] বর্ণনাকারী অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবূ দাঊদ, হাকিম, ইবনু মানদাহ্ ‘আত-তাওহীদ’ এবং আহমাদ। ইমাম হাকিম বলেন : সানাদ সহীহ। ইমাম যাহাবীর মতও তাই। শায়খ আলবানী একে হাসান বলেছেন। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭) বর্ণনাকারী অন্য বর্ণনায় রয়েছে : রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে কোন বান্দা এ কালেমা অন্তরের সাথে সত্য জেনে পাঠ করবে এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যাবে। সেই কালেমা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।” (হাকিম। ইমাম হাকিম বলেন : হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ আত-তারগীব গ্রন্থে) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে দেখি তিনি সাদা কাপড় জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর আবার এসেও তাকে ঘুমন্ত দেখতে পাই। অতঃপর আবার এসে দেখি তিনি জাগ্রত হয়েছেন। ফলে আমি তাঁর পাশে বসে পড়ি। তখন তিনি (সাঃ) বললেন : যে কোন বান্দা এ কথা বলে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং এর উপরই মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা শুনে আবূ যার (রাঃ) বলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ যার (রাঃ) আবার বলেন : যদি সে যেনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ যার নাবী (সাঃ)- কে প্রশ্নটি তিনবার করেন আর প্রতিবারই নাবী (সাঃ) একই জবাব দেন। অতঃপর চতুর্থবারে বললেন, আবূ যারের নাক ধুলো মলিন হোক। [১]

【8】

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”- এর শর্তসমূহ

(১) এ বিষয়ে ইলম থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া সকল গাইরুল্লাহকে অস্বীকার করে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করা এবং এ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “আর জেনে রেখো, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই।” (সূরাহ মুহাম্মাদ : ১৯) == “তবে যারা সজ্ঞানে সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” (সূরাহ যুখরুফ : ৮৬) অর্থাৎ কালেমার সাক্ষ্য, তারা মুখে যা বলে সেটি অন্তর দিয়ে জানে। নাবী (সাঃ) বলেছেন : “যে লোক এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, জীবিত অবস্থায় সে জানত, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম) (২) দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা : কোনরূপ সন্দেহ ছাড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বিশ্বাস অন্তরে পূর্ণভাবে থাকতে হবে। কালেমাকে এমন পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে যাতে সংশয়-সন্দেহ না থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “সত্যিকারের মু’মিন হল তারাই, যারা আল্লাহ্ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং ঈমান আনার পর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না।” (সূরাহ্ আল-হুজুরাত : ১৫)। নাবী (সাঃ) বলেছেন : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর রাসূল। যে লোক এতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম) (৩) কবুল করা : অর্থাৎ অন্তর ও জিহবার দ্বারা স্বীকার করা। মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “তাদেরকে যখন বলা হত, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত : একজন পাগল কবির কথায় আমরা কি আমাদের ইলাহগুলোকে পরিত্যাগ করব?।” (সূরাহ সাফফাত : ৩৫-৩৬) এ আয়াতের তাফসীরে হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : মু’মিনগণ যেমনিভাবে এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করতেন ঠিক তার বিপরীত কাফিররা তা বলতে অস্বীকার করত অহঙ্কারের কারণে। কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে নাবী কারীম (সাঃ) বলেন : “আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। যখন কেউ তা মেনে নিবে ও মুখে উচ্চারণ করবে তখন সাথে সাথে তার জীবন ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের যে হাক্বাসমূহ আছে তা আদায় করতে হবে এবং তার হিসাব নিবেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম) (৪) আত্মসমপর্ণ ও যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ কর।” (সূরাহ্ যুমার : ৫৪)। (৫) সত্যবাদিতা, যা মিথ্যার বিপরীত : তা হল অন্তরে সর্বান্তকরণে কালেমাকে উচ্চারণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সাবধান করে বলেন : === “আলিফ লাম-মীম : লোকেরা কি ভেবে নিয়েছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” (সূরাহ্ আনকাবূত : ১-৩) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যদি কেউ খাটি অন্তরে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তবে আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন।” (সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম) (৬) ইখলাস : তা হচ্ছে নিয়্যাতকে শুদ্ধ করে যাবতীয় শির্‌ক থেকে নিজেকে দূরে রেখে নেক ‘আমল করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : == “তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে ইখলাসের সাথে আল্লাহর আনুগত্যসহ ‘ইবাদাত করতে।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ্ : ৫) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফা’য়াত পাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্বীকার করে।” (সহীহুল বুখারী) == তিনি (সাঃ) আরো বলেছেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন যে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।” (সহীহুল বুখারী) (৭) কালেমা তায়্যিবার প্রতি ভালবাসা পোষণ করা : কালেমার দাবী হলো, যে সকল মু’মিন উপরোক্ত শর্তসমূহ মানবে মানুষ কেবল তাদেরকেই ভালবাসবে এবং যারা তা মানবে না তাদেরকে ঘৃণা করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “মানুষের মাঝে এমন লোকও রয়েছে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে যেমন ভালবাসতে হয় তেমন তাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা প্রকৃত ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা আরো মজবুত।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ১৬৫) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন : “তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে : এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম) (৮) তাগুতের প্রতি কুফরী করা : তাগুত হল ঐ সকল বাতিল ইলাহ্ আল্লাহকে ছাড়া যাদের ‘ইবাদাত করা হয়। সুতরাং কালেমা পাঠকারী তাদেরকে বর্জন করবে, যদিও সে একমাত্র আল্লাহকে রব্ব এবং সত্যিকারের ইলাহ্ বলে স্বীকার করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : === “আর যে লোক তাগুতদের অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে নিশ্চয়ই সে এমন এক শক্ত বন্ধনকে আঁকড়ে ধরল যা ছুটবার নয়।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ২৫৬) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি অন্তর থেকে বলে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যে সকল ইলাহর ‘ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে তার জীবন ও সম্পদ (নষ্ট করা) অন্যের জন্য হারাম।” (সহীহ মুসলিম) ----------- ইয়াহইয়া ইবনু ত্বালহা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইস্তিকালের পর একদা ‘উমার (রাঃ) ত্বালহার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) ত্বালহাকে বিষন্ন দেখে বললেন : কি ব্যাপার, তোমাকে বিষন্ন দেখছি? তোমার চাচাতো ভাইয়ের খিলাফাত কি তোমার অপছন্দ হচ্ছে? ত্বালহা বললেন, না। তবে আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : এমন একটি কালেমা আমি জানি, তা যে কেউ মৃত্যুর সময় পাঠ করলে তার ‘আমলনামার জন্য সেটা নূর হবে এবং এবং নিঃসন্দেহে তার দেহ ও আত্মা মৃত্যুর সময় সেটার দ্বারা স্বস্তি লাভ করবে। কিন্তু উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে তিনিও ইন্তিকাল করেছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। এটা সেই কালেমা যা তিনি তাঁর চাচার কাছে আশা করেছিলেন (অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’)। [১] বর্ণনাকারী অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ত্বালহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তা পাঠ করবে তার মৃত্যুকষ্ট দূর হয়ে যাবে, তার রং মৃত্যুর সময় উজ্জ্বল হতে থাকবে এবং সে আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখতে পাবে।” কিন্তু আমি উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। সেজন্য আমি মনক্ষূন্ন আছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। ত্বালহা (রাঃ) আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কি? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি অবগত আছি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কালেমা আর নেই যা তিনি স্বীয় চাচা আবু ত্বালিবকে মৃত্যুর সময় পেশ করেছিলেন, অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ত্বালহা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম এটাই, আল্লাহর কসম এটাই সেই কালেমা।”

【9】

শির্‌ক না করার ফাযীলাত

মু’আয (রাঃ) একদা আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) পিছনে ঊফাইর নামক গাধার পিঠে সওয়ার ছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে বললেন : হে মু’আয! তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে এবং আল্লাহর উপর বান্দার কি হক রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি (সাঃ) বললেন : বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে- তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার হচ্ছে, যে বান্দা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না তিনি তাকে আযাব দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিবো না? তিনি (সাঃ) বললেন : তাদেরকে এ সুসংবাদ দিও না। কেননা তারা এর উপর নির্ভর করে ‘আমল ছেড়ে দিবে। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূল (সাঃ) বললেন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক ব্যক্তি এসে বললো, যে আল্লাহর রাসূল! কোন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি (সাঃ) বললেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছূতে শরীক না করে মারা গেছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [১] ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মি’রাজ করানো হয় তখন তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন যা সপ্তম আকাশে রয়েছে। যে জিনিস উপরে উঠে তা এখান পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর এখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর যে জিনিস অবতরণ করে তা এখান পর্যন্ত অবতারিত, তারপর এখান থেকে গ্রহণ করা হয়। ঐ গাছের উপর সোনার ফড়িং ছেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এবং সূরাহ্ বাক্বারাহর শেষের দুই আয়াত দেয়া হয়। এবং এটাও দেয়া হয় যে, তার উম্মাতের মদ্যে যারা শির্‌ক করবে না তাদের কবীরাহ গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। [১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে সব অপরাধী আল্লাহর সাথে শির্‌ক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি সম্পর্কে (আল্লাহ্ বলেন) : এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। [১] আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : কেউ একটি নেক ‘আমল করলে এর বিনিময়ে তাকে এর দশগুণ বা আরো অধিক দিবো। কেউ যদি একটি গুনাহ করে তাহলে এর বিনিময়ে কেবল একটি গুনাহ (লিখা) হবে অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। আর কেউ যদি আমার কাছে পৃথিবীর সমান গুনাহসহ উপস্থিত হয় এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাকে তাহলে আমিও ঠিক পৃথিবীর সমান ক্ষমা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে যাবে। [১] ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এরূপ অবস্থায় সাক্ষ্যাৎ করলো যে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার অন্যান্য পাপ তার কোন ক্ষতি করবে না। যেমন কোন ব্যক্তি শির্‌ক করে তাঁর সাথে সাক্ষ্যাৎ করলে সে জাহান্নামে যাবে এবং তার অন্যান্য সাওয়াব তার কোন উপকারে আসবে না। [১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : প্রত্যেক নাবীর বিশেষ একটি দু’আ আছে যা কবুল করা হবে। প্রত্যেক নাবীই তাঁর যে দু’আ আগে ভাগে (দুনিয়াতেই) করে ফেলেছেন। আর আমি আমার সে দু’আ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য (দুনিয়াতে) মুলতবী রেখেছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি শির্‌ক না করে মৃত্যুবরণ করবে, ইনশাআল্লাহ্ সে তা লাভ করবে। [১] আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক বেদুইন নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো : আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। তিনি (সাঃ) বললেন : আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। ফরয সলাত ক্বায়িম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমাযানের সাওম পালন করবে। একথা শুনে লোকটি বললো, সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি এর চেয়ে বেশিও করবো না এবং কমও করবো না। অতঃপর লোকটি যখন চলে যেতে লাগলে নাবী (সাঃ) বললেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হতে চাইলে সে যেন এই লোকটিকে দেখে। [১] বর্ণনাকারী উম্মাতকে শির্‌ক বিবর্জিত ‘ইবাদাত শিক্ষার দায়িত্ব দিয়েই মহান আল্লাহ্ নাবী (সাঃ)- কে নাবী করে পাঠিয়েছেন। যেমন, ‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ আস-সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমি আমার সম্প্রদায়ের ইলাহগুলো থেকে বিমুখ ছিলাম। একদা আমি নাবী (সাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। আমি গোপনে খোঁজ নিয়ে তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন : নাবী। আমি বললাম, নাবী কি? তিনি বললেন : আল্লাহর রাসূল। আমি বললাম, আপনাকে কে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন : মহান আল্লাহ। আমি বললাম, আপনাকে কি দিয়ে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন : “এ আদেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা হবে, রক্ত সংরক্ষণ করতে হবে, রাস্তা নিরাপদ করতে হবে, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং এক আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।” আমি বললাম, আপনাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতো অত্যন্ত ভাল। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে চলছি যে, আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আপনাকে সত্য বলে ঘোষণা করছি। আপনি বলুন, আমি কি আপনার সাথে অবস্থান করবো? তিনি বললেন : তুমি দেখছো যে, আমি যা নিয়ে আগমন করেছি তা লোকেরা অপছন্দ করেছে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের কাছেই থাকো। অতঃপর যখন তুমি আমার সম্পর্কে জানবে যে, আমি আমার অবস্থান থেকে বেরিয়েছি তখন আমার কাছে এসো।”