4. হালাল ও হারাম

【1】

হালাল ও হারাম

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। (এবং সর্বক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার আদেশই তিনি করেছেন। সেই সম্পর্কে) আল্লাহ রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশই করেছেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উল্লেখ করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হস্ত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দো’আ কবুল হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে, কেউ পরওয়া করবে না কি উপায়ে মাল লাভ করল; হারাম না হালাল উপায়ে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬১)। নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হালাল এবং হারাম সুস্পষ্ট, আর ঊভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় বা বস্তু আছে।(যেগুলি হালালের অন্তর্ভুক্ত না হারামের অন্তর্ভুক্ত,) সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে যেই ব্যক্তি সন্দেহের বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং আবরু-ইজ্জত, মান-সম্মান পাক-পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি সন্দেহের কাজে লিপ্ত হবে, সে অচিরেই হারামেও লিপ্ত হয়ে পড়বে। (ফলে তার দ্বীন এবং মান-সম্মান কলুষিত হবে।) যেমন যেই রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার ধারে চরাবে, খুব সম্ভব তার পশু নিষিদ্ধ এলাকার ভিতরেও মুখ ঢুকিয়ে দিবে। তোমরা ম্মরণ রেখো প্রত্যেক বাদশাই নিজ পশুপালের চারণভুমি (নিষিদ্ধ এলাকা) বানিয়ে রাখেন। তদ্রূপ (সকল বাদশাহর বাদশাহ) আল্লাহ তা’আলার চারণভূমি তাঁর হারাম বস্তুসমূহকে নির্ধারিত করে রেখেছেন। ‘মনে রেখো মানুষের দেহের ভিতরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সঠিক থাকলে সমস্ত দেহই সঠিক থাকে। আর সেই অংশের বিকৃতি ঘটলে সম্পূর্ণ দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সেই গোশতের টুকরাটি হল অন্তর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)। রাফে ‘ইবনু খাদীজ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কুকুর বিক্রয়ের মুল্য ঘৃণিত বস্তু, ব্যভিচারের বিনিময়ও অতি জঘন্য, সিঙ্গা লাগানোর মূল্যও ঘৃণিত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬৩)। আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুকুরের মূল্য, যিনাকারীনীর উপার্জন ও গণকের উপার্জন খেতে নিষেধ করেছেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬৪)। আবু হুজায়ফা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন, রক্ত বিক্রয় মূল্য হতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে, ব্যভিচার বা যেনার বিনিময় হতে এবং তিনি লা’নত করেছেন সুদ গ্রহীতার প্রতি ও সুদদাতার প্রতি। তিনি আরও লা’নত করেছেন ঐ ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোন অংশ (নাম বা চিত্র ইত্যাদি) উলকী করে এবং যে উলকী করায়। এতদ্ভিন্ন ছবি অংকনকারীর প্রতিও লা’নত করেছেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬৫)। জাবের (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’ (আহমাদ, দারেমী, বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৭২)। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই বাণীটি আমি ভালভাবে স্মরণ রেখেছি যে, যে কাজে মনে খটকা লাগে, সে কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন কর। সত্য ও শুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্বিধার সৃষ্টি হয় না, মিথ্যা ও অশুদ্ধের ক্ষেত্রেই দ্বিধার সৃষ্টি হয় (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৭৭৩)। আবু উমামা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করিও না, তার মূল্য হারাম। তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। এই শ্রেণীর কার্য যারা করে তাদের সম্পর্কেই পবিত্র কুরআনের এ আয়াত অবর্তীণ হয়েছে, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা রং-তামাশার গাথা (তথা গান) ক্রয় করে (তাদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি রয়েছে)’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)। আয়েশা (রাঃ) আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর একজন গোলাম ছিল। তিনি তার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি তার রাজস্ব হতে খেতেন। একদিন সে কিছু সম্পদ নিয়ে আসে এবং তিনি সেখান হতে কিছু খান। তখন গোলাম তাঁকে বলল, আপনি এ খাদ্য সম্পর্কে কি জানেন? তিনি বললেন এ কেমন খাদ্য? গোলাম বলল, আমি জাহেলী যুগে গণকী করতাম। আমি মানুষকে ধোঁকা দিতাম। ঐ সময়ের এক লোকের সাথে দেখা হলে সে আমাকে এ খাদ্য প্রদান করে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে সব বমন করে দিলেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৮৬)। আবুবকর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)। আনাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাস্তায় পড়া একটি খেজুরের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ‘ছাদাক্বার খেজুর বলে যদি আমার সন্দেহ না হত, নিশ্চয়ই আমি তা খেতাম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮২১)। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা (রাসূলের দৌহিত্র) হাসান ইবনে আলী (রাঃ) যাকাতের একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন (এটা দেখে) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ক্ষ, ক্ষ, যাতে তা সে ফেলে দেয়। অতঃপর বললেন, নানু তুমি জান না! আমরা যে যাকাত খাই না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮২২)।